#এক_পশলা_বৃষ্টি
#পর্ব:১
#লেখনীতে: ইশরাত জাহান ফারিয়া
প্রেগ্ন্যাসি কিট দেখেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলো শোভা। কারণ ফলাফল পজিটিভ। হোস্টেলের অন্যান্য মেয়েরা দৌড়ে এসে ধরলো ওকে। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে চোখেমুখে পানির ছিঁটা দিলো। বেশ খানিকক্ষণ পরে জ্ঞান ফিরলো। সবাই জেঁকে ধরলো কী এমন হয়েছে যার জন্য অজ্ঞান হয়েছে? শোভা কাউকে কিছু বললোনা। কাউকে বলার মতো মুখই নেই ওর। কী। বলবে যে ও মা হতে চলেছে? না এমনটা কখনো কাউকে বলতে পারবেনা।
শোভার অবস্থা দেখে ওর খুব কাছের বান্ধবী মিলি সবাইকে চলে যেতে বললো। সবাই চলে গেলে মিলি ধীরে ধীরে জিজ্ঞেস করলো, ‘কী হয়েছে রে শুভি? বলনা!’
শোভা কেঁদে উঠলো বাচ্চাদের মতো। মিলিকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘আমি মা হতে চলেছি মিলি!’
‘ কীহহ?’
‘ হুম।’
‘ ক কার সাথে…!’
‘ সাদ!’
‘ শুভি তুই এসব কী বলছিস? সাদ মানে আমাদের সাদ ভাইয়া?’
‘ হুম।’
‘ ওনাকে তো কখনো এমন মনে হয়নি? এই শুভি বলনা এসব মিথ্যা? দেখ আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।’
‘ সত্যি? দু’মাস যাবৎ পিরিয়ড বন্ধ। সন্দেহবশত কীট এনে টেস্ট করালাম, এখন পজেটিভ ফলাফল। বল আমি এখন কী করবো?’
‘ ভাবছি আমি।’
মিলি কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। বললো, ‘ভাইয়াকে জানিয়েছিস?’
শোভা মাথা নাড়ালো। মিলি চেঁচিয়ে বললো, ‘তাহলে জানা যে তুই ওনার সন্তানের মা হতে চলেছিস!’
‘ ওনাকে আমি কী করে বলবো। আমার সাহস নেই এই কথা বলার।’
মিলি রেগে গেলো। ‘কেন? এসব করার আগে মনে ছিলো না? এটা তো অবৈধ প্রেমের ফসল..!’
শোভা মিলির দু’হাত জড়িয়ে ধরে বললো, ‘এই অপবাদ দিস না প্লিজ!’
‘ আমি না হয় দেবোনা। সমাজ কী আর চুপ করে থাকবে? তুই এটা কী করলি?’
‘ আমায় মাফ করে দে প্লিজ!’
‘ আমার মাফ করা না করায় কিছু আসে যাবেনা। বাচ্চার বাবাকে বল এখন সে কী করবে! নাকি অন্যদের মতো বেঁকে বসবে। আর তোদের দুজনের পাপের ফলে এই নিষ্পাপ ভ্রুণের জায়গা হবে কোনো ডাস্টবিনে। যেখানে কুকুর ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে!’
শোভা মাথা নিচু করে কাঁদছে। মিলির প্রচুর রাগ হচ্ছে। এই আলাভোলা মেয়েটাও কিনা আজ সবচেয়ে ভয়ংকর ভুলের ফাঁদে পা দিলো। আর সাদ ভাই? ওনি? ছিহ! মিলির ইচ্ছা করছে শোভাকে কুচিকুচি করে কাটতে। রাগটা সামলে ধমকে সাদকে ফোন করতে বললো। কিন্তু শোভা ফোন না করে হাতে নিয়ে বসে রইলো। মাঝে মাঝে হিঁচকি তুলে কাঁদছে। এসব ন্যাকামি দেখে মিলির আরও রাগ হচ্ছে। আগে মনে ছিলো না এসব করলে ফল কী হয়! এখন এসব করার মানে কী!
শোভা অনেক ভেবেচিন্তে ফোন হাতে নিলো। ডায়াল করলো সাদে’র নাম্বারে।
________
অফিসের গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রজেক্ট নিয়ে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত সাদ। প্রচন্ড গরমে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে এসে বসলো সে। মনটা কেমন খচখচ করছে, ঢকঢক করে বরফ গলা ঠান্ডা পানি গিলে নিলো। চোখেমুখে পানি ছিটিয়ে দিয়ে রিল্যাক্স হয়ে বসতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো ওর। নামটা দেখে মুচকি হেসে কল রিসিভ করলো। ‘হুম বলো!’
‘ আ আপনি কোথায়?’
‘ অফিসে। কেন?’
‘ দরকার ছিলো।’
‘ আমার জন্য খাবার নিয়ে আসতে নাকি? শোনো এসবের কোনো দরকার নেই।’
‘ না সেজন্য নয়!’
‘ তাহলে?’
‘ একটা কথা বলার ছিলো!’
‘ বলে ফেলো সুন্দরী।’
শোভার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না। ভাঙ্গা ভাঙ্গা স্বরে বললো, ‘ আ আমি প্রেগন্যান্ট!’
সাদ শব্দ করে হাসলো। বললো, ‘ দুপুরবেলা এসব মজা না করলেই নয়?’
‘ সত্যি বলছি। আমি আপনার সন্তানের মা হতে চলেছি।’
সাদ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। কী করবে এখন সে? শোভাকে বললো, ‘ফোন রাখো!’
শোভা অবাক হয়ে বললো, ‘ মানে? আপনি কিছু বলুন।’
‘ আমি কী বলবো?’
‘ আমি এখন কী করবো?’
‘ সেটা তোমার ব্যাপার। তুমি মা, তুমি বাচ্চা রাখবে নাকি রাখবেনা সেটা একান্তই তোমার উপর ডিপেন্ড করছে।’
‘ সাদ! আপনি বাচ্চার বাবা।’
‘ হুম। আমি তো অস্বীকার করিনি।’
‘ আবার স্বীকারও তো করছেন না।’
‘ তুমি জানো কেন স্বীকার করছিনা।’
‘ এসব রাখুন। বলুন কী করবো। আপনার মতামতের উপর সবকিছু ডিপেন্ড করছে!’
‘ তাহলে শোনো। বাচ্চা যদি রাখতে চাও, তাহলে নো প্রবলেম। আমি ওর সমস্ত খরচ দেবো। আর যদি না রাখতে চাও সেটা সম্পূর্ণ তোমার উপর নির্ভর করছে। তাতেও আমি হ্যাঁ।’
‘ আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি না সাদ!’
‘ না বোঝার মতো কিছু বলিনি। বাচ্চার সমস্ত খরচ আমার, বাট..কখনো আমার ফ্যামিলির সামনে ওর পরিচয় দেওয়া যাবেনা!’
শোভা বজ্রাহত হলো। মানেটা ও খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে। ফোন রেখে দিলো। মিলি জানতে চাইলো কী হয়েছে। শোভা কিছু বললোনা। মুখ ঢেকে বিছানায় শুয়ে রইলো। মিলির আর কিছু বোঝার বাকি রইলোনা। যা ভেবেছিলো তাই, সাদ মেনে নেয়নি। সাদ এরকম কাপুরষ হবে মিলি ভাবতেও পারছেনা। বুক থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। হোস্টেলে থাকার বদৌলতে এরকম অনেক কেস দেখেছে মিলি। ফলাফল ওই সিটি হসপিটালের পেছনের ডাস্টবিনে ছোট ছোট নিষ্পাপ শরীরগুলো, যেগুলো কুকুর খুবলে খুবলে খায়। ভালোবাসার নামে এসব অনাচার আজ মনুষ্যত্বকে নষ্ট করে দিয়েছে। ক্ষণিকের আনন্দ আর জৈবিক চাহিদা মেটাতে মানুষ কত ভুল পথে পা বাড়ায় সেগুলো দেখে মিলি আর কাউকেই বিশ্বাস করতে পারেনা। এসব অনাচার কখন সমাজ থেকে উঠে যাবে তা জানেনা মিলি।
_____
শোভা! মধ্যবিত্ত বাবামায়ের মেজো সন্তান। খুব বড়লোক না হলেও বেশ বড়লোকই। এমনিতে ভালো মেয়ে। বাসায় থেকে পড়াশোনা ঠিকমতো হয়না বলে কলেজের হোস্টেলে থাকে। তাদেরই কলেজের সিনিয়র ছাত্র সাদ চৌধুরী। পড়াশোনা শেষ করে এখন সরকারি চাকরি করছে। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসা, সবার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক , হাসিখুশি ছেলেটা প্রথম দেখায়ই প্রেমে পড়ে শোভার। অমন সুন্দর মেয়ে দেখে তার মাথা ঘুরে যায়। অথচ কেউ টেরই পায়নি এসব। শোভার প্রতি সবসময় আলাদা কেয়ার দেখাতো, একদিন মনের কথা প্রকাশ করে শোভার কাছে। শোভা প্রেম ভালোবাসায় বিশ্বাসী না বলে সাদের কাছ থেকে দূরে থাকে। কিন্তু সাদের পাগলামি দেখে অন্যান্য মেয়েদের মতো শোভাও একসময় স্বীকার করে যে, সে সাদকে ভালোবাসে। একদিন জানতে পারে ওদের দুই পরিবারের মাঝে যুগ যুগ ধরে শত্রুতা লেগে আছে। দুজন দুজনকে হারানোর ভয়ে বিয়ে করে নেয় কাউকে না জানিয়েই, যার ফলে আজ শোভা গর্ভে ধারণ করছে সাদের সন্তান। এসব কথা ওরা দুজন ছাড়া আর কেউ জানেনা। এমনকি মিলিও নয়!
এসব ভেবে শোভা চিন্তা করে কীভাবে বাবামাকে মুখ দেখাবে, অনাগত সন্তানের পরিণতি কী? সাদ তো একপ্রকার বিশ্বাসঘাতকাই করলো। টাকা দিয়ে কী বাবার ভালোবাসা কেনা যায়? তাহলে সাদ কেন বললো এই সন্তানের খরচ ও দেবে, কিন্তু পরিচয় দিতে পারবেনা? এই বিশ্বাস নিয়ে সারাজীবনের জন্য বাঁধা পড়েছিলো বিয়ে নামক বন্ধনে? ছিহ সাদ! ধিক্কার আপনাকে।
চলবে..ইনশাআল্লাহ! ভিনদেশি তারা শেষ হতে চললো বলে, তাই শুরু করা।
চলবে।