এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-১০+১১

0
156

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১০

সূর্যের ফুড়ফুড়ে আলোতে ভরপুর চারপাশ। রোদের তাপে পঞ্চমুুখ পুরো রুম। ফারিশ ঘুমোচ্ছে। গভীর ঘুমে মগ্ন সে। হঠাৎই ঘুমের ঘোরে কারো মুখ ভেসে উঠলো। ফারিশ নড়েচড়ে উঠলো। আবারও কারো মুখ ভাসলো। কেউ তার কাছে এসে বলছে,
“এই যে মিস্টার বখাটে এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছেন কেন?”

ফারিশ চোখ মুখ কুঁচকেই রাগী রাগী কণ্ঠ নিয়ে ঘুমের ঘোরে বললো,“আমি বখাটে নই।”

ফারিশের কথা শুনে মেয়েটি হাসতে হাসতে জবাব দিলো,“উম্! বললেই হলো আপনি বখাটে নন।”

ফারিশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“বলছি না আমি বখাটে নই।”
“মাঝরাতে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে উৎতক্ত কারা করে জানেন বখাটেরা। আপনি একটা বখাটে ছেলে। বুঝেছেন আপনি একটা বখাটে।”

এবার ফারিশের ঘুম ভাঙলো। শোয়া থেকে উঠে রাগী রাগী কণ্ঠে আচমকাই চেঁচিয়ে বলে উঠল,“বলছি না আমি বখাটে নই।”

ফারিশ থতমত খেয়ে গেল কথাটা বলে। আশেপাশে তাকালো। কক্সবাজারের একটা হোটেল রুমে শোয়া ছিল ফারিশ। ফারিশ হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। চুপ করে রইলো অনেকক্ষণ। এই মাত্র কি হলো তার সাথে? তাই ভাবছে। এমন ঘটনা তার সাথে কখনো ঘটে নি। ওই ডাক্তার মেয়েটাকে স্বপ্নে দেখলো ফারিশ। কেন দেখলো! ফারিশের মস্তিষ্ক হঠাৎ এলেমেলো হলো। কি ঘটলো তার সাথে? কেনই বা ঘটলো? প্রশ্ন দুটো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু। ফারিশ চোখ মুখ চেপে বসে রইলো। মেয়েটা বার বার বখাটে বলে তাকে বিরক্ত করছে। এটা তো ঠিক হচ্ছে না। এই বখাটে নামটা ফারিশ কিছুতেই মেনে নিবে না। সময় গড়ালো ফারিশের ফোন বাজলো। ফারিশ ফোনটা তুললো। ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো,
“হ্যালো।”

আদিব খানিকটা ঘাবড়ে গেল। চিন্তিত স্বরে বললো,“কিছু কি হয়েছে ভাই?”

আদিবের কণ্ঠটা কানে ভাসতেই ফারিশ নিশ্চুপ হলো। নিজেকে ধাতস্থ করলো। শান্ত স্বরে বললো,
“না কিছু হয় নি।”

আদিব কিছুটা দমলো। বললো,
“ঠিক আছে। ভাই আগে কোথায় যাবেন? গাছের কাছে নাকি গোডাউনে।”

ফারিশ কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
“গোডাউনে।”
“ঠিক আছে। কতক্ষণে বের হবেন?”
“দু’ঘন্টা পর।”
“আচ্ছা ভাই।”

ফোন কাটলো ফারিশ। তার চোখে মুখে বিস্ময়ের ছোঁয়া। ফারিশ আস্তে করে তার ফোনটা বিছানায় রাখলো। ধীরে ধীরে বিছানা থেকে নামলো। পুরো কক্ষে হাঁটাহাঁটি করলো। কিন্তু তার ভালো লাগছে না। ফারিশ বিরক্ত নিয়ে ফোনটা উঠালো। আদিবকে কল করলো। আদিব তার সোজাসুজি কক্ষেই আছে। আদিব ফোনটা তুলতেই ফারিশ দ্রুত বললো,“রুমে আসো তো আদিব।”

আদিব তিন মিনিটের মাথাতেই দরজায় নক করলো। ফারিশ গিয়ে দরজা খুললো। আদিব হতভম্ব হয়ে বললো,
“কি হয়েছে ভাই?”

ফারিশ তখনকার স্বপ্নটা নিয়ে বলতে নিলো পরমুহূর্তেই থেমে গেল। এটা কি করতে যাচ্ছিল? ফারিশ থেমে গেল আদিব তার দিকে তাকিয়ে। আদিব আবার বললো,“কি হলো ভাই কিছু বলবেন না?”

ফারিশ বাহানা দেয়ার মতো কোনো শব্দ খুঁজে পাচ্ছে না। আদিব আবার বলে, কি হলো ভাই কিছু বলছেন না কেন?”

ফারিশ ফট করে বলে উঠলো,“তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে রেডি হও আমরা বের হবো।”

কথাটা বলেই টাওয়াল হাতে বাথরুমে ঢুকে পড়লো ফারিশ। আর আদিব পুরো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইলো ফারিশের যাওয়ার পানে। বিষয়টা কি হলো? আদিব ঠাহর করতে পারলো না। আদিব ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। মাত্র কি ঘটলো তা যেন এখনো তার মাথায় ঘুরছে। সে তো একটু আগেই যাওয়ার কথা বলতে ফারিশ ভাইকে কল করলো তাহলে ফারিশ ভাইয়ের তাকে দ্বিতীয়বার কল করে রুমে ডেকে এনে ‘বের হবো’ কথাটা বলার মানে কি ছিল!’

আদিবের একটা কল আসলো সে বিস্ময়কর চেহারা নিয়ে ফোনটা তুললো। তারপর ধীর পায়ে ফারিশের কক্ষের দরজাটা হাল্কা চাপিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেল।
—-
লাবনী বিচ থেকে খানিকটা দূরে একটা বড়সড় হোটেলে দাঁড়িয়ে আছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি, চাঁদনী আর আদ্রিতা। ছয়জনই জার্নি করে বেশ ক্লান্ত। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা ছাড়িয়ে। তারা প্রায় ঘন্টা খানেক আগেই পৌঁছেছে কক্সবাজারে কিন্তু ভালো হোটেল না পাওয়ায় বেশ বিপাকে পড়তে হলো তাদের। শেষমেশ বিচ থেকে খানিকটা দূরে এই হোটেলে আসলো। রিসিপশনের লোকটা তাদের তিনটে কক্ষের চাবি দিল চারশো ছয়, চারশো সাত আর চারশো দশ। একটাতে আশরাফ, মৃদুল আর রনি থাকবে। একটাতে চাঁদনী একা আর বাকি একটায় মুনমুন আর আদ্রিতা। তাদের ইচ্ছে ছিল তিন বেড ওয়ালা দুটো রুম নিবে কিন্তু পায় নি। শেষমেশ চাঁদনীকে একা থাকতে হলো। তবে এটা শুধু রাতে ঘুমানোর ক্ষেত্রেই। আদ্রিতার একটা কল আসলো হাসপাতাল থেকে। আদ্রিতা অবাক হয়ে বন্ধুদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতে লাগলো। এদিকে বাকিরা রুমের চাবি নিয়ে রুমে যেতে লাগলো। মুনমুনও আদ্রিতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,“আদু আমাদের রুম নাম্বার হলো চারশো ছয় চারতলায়। তুই কথা শেষ করে আয় আমি যাচ্ছি।”

আদ্রিতাও মুনমুনের কথার পিঠে বললো, আচ্ছা ঠিক আছে।”

মুনমুন চলে গেল। তার বেশ টায়ার্ড লাগছে। রুমে গিয়েই একঘন্টার একটা লম্বা সাওয়ার নিবে।”
—-
“চিন্তা করবেন না স্যার আমি কাজটা সেরেই বাড়ি ফিরবো। আপনি হসপিটালের লোকেশনটা পাঠিয়ে দিবেন।”

আদ্রিতার কথা শুনে অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটিও বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে। আপাতত ইনজয় করো।”

বিনিময়ে মৃদু হাসে আদ্রিতা। বলে,
“আচ্ছা স্যার। আর আপনি চিন্তা করবেন না আমি সার্জারীর কাজটা কমপ্লিট করেই বাড়ি ফিরবো।”
“ঠিক আছে।”

ফোন কাটলো অপরপাশের ব্যক্তিটি। আদ্রিতা শুঁকনো নিশ্বাস ছাড়লো। দু’দিন পর কক্সবাজারের একটা হসপিটালে তার কিছু কাজ পরে গেছে। হয়তো বাড়িটা তাকে একাই ফিরতে হবে। আদ্রিতা তিন মিনিটের মতো দাঁড়িয়ে থেকে রুমে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হলো। তার ব্যাগপত্র মুনমুন নিয়ে গেছে। আদ্রিতা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলো। তার মনে আছে মুনমুন তাকে বলেছিল চারতলায় তাদের রুম। রুম নাম্বার হলো চারশো ছয়। আদ্রিতা দ্বিধাহীন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে লাগলো।

অন্যদিকে ফারিশ নিজের রুমে সাওয়ার নিচ্ছে লাগাতার।’

আদ্রিতা চারতলায় উঠতে উঠতেই হাঁপিয়ে গেল। পা যেন অবশ অবশ লাগছে নিশ্বাসও ভাড়ি হয়ে গেছে। আদ্রিতা ডানদিকে গেল। হঠাৎই চোখ গেল রুম নাম্বার চারশো ছয়ের দিকে। তার চোখ জ্বলজ্বল করে উঠলো ফাইনালি রুমে আসলো। আদ্রিতা দরজায় একবার নক করতেই দরজা খুলে গেল। আদ্রিতা অবাক হলো। মুনমুনের বাচ্চা দরজা না আঁটকেই রুমে বসে আছে। আদ্রিতা দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকলো। ভিতর থেকে দরজা আঁটকে দিল। পুরো রুমে চোখ বুলালো। কিন্তু কোথাও মুনমুনকে পেল না। আদ্রিতা আওয়াজ করলো। বললো,“মুন কোথায় তুই?”

কোনো কথার শব্দ আসলো না। হঠাৎ বাথরুম থেকে পানি পড়ার আওয়াজ আসলো। আদ্রিতা বুঝলো মুনমুন হয়তো গোসল করছে। আদ্রিতা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বললো,“ওহ তুই বাথরুমে।”

আদ্রিতা তার হাতের ফোনটা সামনের ড্রেসিং টেবিলের উপরে রাখলো। তারপর ধপাস করে বিছানার ওপর শুয়ে পড়লো। ফাইনালি শান্তি। প্রায় মিনিট দশেক সময় ওভাবেই গেল। আদ্রিতা উঠে বসলো এবার একটু ফ্রেশ হতে হবে তাকে। তার ব্যাগ-ট্যাগ কোথায় রেখেছে মুনমুন কে জানে! বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ হলো আদ্রিতা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে বলতে নিলো,
“এতক্ষণ ওয়াশরুমে কি ঘুমাচ্ছি..

পুরো কথা শেষ করার আগেই টাওয়াল গায়ে সদ্য গোসল করে বের হওয়া ফারিশকে দেখে তড়িৎ চমকে উঠলো আদ্রিতা। ঘাবড়ে গেল প্রচুর।”

অন্যদিকে,
ফারিশ সেও হতভম্ব। তার রুমে ওই ডাক্তার ম্যাডাম কিভাবে এলো। ফারিশ হতভম্ব হয়ে বললো,
“আপনি এখানে কি করছেন?”

আদ্রিতা খানিকটা ঘাবড়ানোর স্বরে বললো,
“মিস্টার বখাটে আপনি। আপনি এই রুমে কি করছেন?”

মুহুর্তের মধ্যে ফারিশের মাথা গরম হয়ে গেল। এই মেয়ে পেয়েছে তা কি কথায় কথায় তাকে বখাটে বলে কেন! ফারিশ রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে আদ্রিতার দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,“এই মেয়ে সমস্যা কি আপনার কথায় কথায় আমায় ব..

বাকি কথা বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই ভেজালো পায়ে স্লিপ কেটে ফারিশ গিয়ে পড়লো আদ্রিতার গায়ের ওপর। আচমকা বিষয়টা ঘটায় আদ্রিতাও ফারিশের শরীরের ভাড় নিতে না পেরে পড়ে গেল বিছানায়। অতঃপর ধবধবে সাদা বিছানায় ধপাস করে পড়লো আদ্রিতা আর ফারিশ। আদ্রিতা নিচে আর তার ওপর ফারিশ। ঘটনাক্রমে দুজনেই চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো একে অপরের দিকে।’

#চলবে….

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১১

স্তব্ধ হয়ে বিছানায় বসে আছে আদ্রিতা। মাত্র কি ঘটলো সব যেন তার মাথার উপর দিয়ে গেল। আদ্রিতা থমথমে চেহারা নিয়ে সামনে তাকালো।
তার থেকে কিছুটা দূরেই ফারিশ দাঁড়ানো।’

এদিকে,
ফারিশ শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তাকালো আদ্রিতার মুখশ্রীর দিকে। রাগে তার মাথা গজগজ করছে। ইচ্ছে করছে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে কিন্তু মারছে না। কতক্ষণ আগেই ফারিশ আদ্রিতার থেকে উঠে প্যান্ট শার্ট পড়ে নেয়। আদ্রিতা তখনও হতভম্ব হয়ে শুয়ে থাকে। তিনমিনিট আগেই উঠে বসে সঙ্গে দেখে ফারিশের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। তার চুল দিয়ে এখনো পানি গড়িয়ে পড়ছে। ফারিশ মুখ খুললো। অবশিষ্ট শার্টের বোতামটি আঁটকে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,“আপনি এই রুমে কি করছেন? একটা অপরিচিত হোটেল রুমে কেউ এইভাবে ঢুকে পড়ে।”

আদ্রিতা মাথা নিচু করে ফেলে। কি বলবে বুঝতে পারছে না। মুনমুনই তো বলেছিল তারা রুম নাম্বার ৪০৬ মানে 406 এ আছে। আদ্রিতার নিশ্চুপতায় ফারিশ গর্জে উঠলো। ধমকের স্বরে বললো,“কি হলো কথা বলছেন না কেন?”

ফারিশের কণ্ঠস্বরে কেঁপে ওঠে আদ্রিতা। থরথর করে বললো,“বিশ্বাস করুন আমি বুঝতে পারি নি আমি ভেবেছিলাম এটা রুম নাম্বার 406.”

ফারিশ কিছু বলে না কালকে হোটেল রুমে ঢোকার সময় ফারিশ খেয়াল করে নি এটা কয় নাম্বার রুম। আদিবই রুমটুম আগে বুক করে রাখে। এমনকি কাল রাতে আদিবই তার রুমের দরজা খুলে সে শুধু ফোনে কথা বলতে বলতে ভিতরে ঢুকে যায়। রুম নাম্বার আর খেয়াল করে না। ফারিশ আদ্রিতার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বাহিরে যেতে নেয়। যাওয়ার আগে তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,“এক পাও বের হবেন না।”

আদ্রিতা শোনে বিনিময়ে শুধু হা বোধক মাথা নাড়ায়। মুখে কিছু বলে না। ফারিশ দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে রুম নাম্বারের দিকে। তার রুম নাম্বার 408. কিন্তু এইটের উপরের অংশের এক কনার্রের লেখাটা হাল্কা মুছে গেছে। যার কারনে কিছুটা ছিস্কের মতো লাগে। আদ্রিতা একটু ক্লান্তিতে থাকায় বিষয়টা বুঝতে পারে নি। ফারিশ কিছু একটা ভেবে ভিতরে ঢুকলো। অাদ্রিতা তখনও ঠায় বসে। ফারিশ বললো,“চোখে চশমা লাগাচ্ছেন না কেন?”

আদ্রিতা তার ধ্যান থেকে বেরিয়ে এলো। কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে বললো,
“মানে,
“এটা রুম নাম্বার ৪০৮।”

সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলো আদ্রিতা। তড়িৎ বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তবে কি সত্যি তার চোখে সমস্যা হয়েছে! আদ্রিতা কি বলবে বুঝতে পারে না। ফারিশ বলে,“বাসায় গিয়ে চশমা পড়ে নিবেন।”

আদ্রিতা কিছু বলবে তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। মুনমুন কল করেছে। আদ্রিতা এক পলক ফারিশের দিকে তাকিয়ে ফোনটা তুললো। ‘হ্যালো’ বলতেই অপরপাশে থাকা মুনমুন বলে উঠলো,“তুই কি রুম খুঁজে পাস নি আদু নাকি এখনও রুমের দিকে আসিস নি। আমি গোসল করতে যাবো তোর জন্য সেই কখন থেকে বসে আছি তুই আসলে ওয়াশরুমে ঢুকবো। তোর কি খুব দেরি হবে আমি দরজা আঁটকে ওয়াশরুমে যাবো?”

আদ্রিতা বিনিময়ে বলে,
“যাস না আমি আসছি।”
“ঠিক আছে জলদি আয়।”
“হুম আসছি।”

কান থেকে ফোন সরায় আদ্রিতা। থমথমে কণ্ঠে বলে,“আমি খুব দুঃখিত। আমি বুঝতে পারি নি।”

আদ্রিতা এমনভাবে কথাটা বললো যে ফারিশ চেয়েও আর কিছু বলতে পারলো না। ফারিশ বললো,“ঠিক আছে যান।”

আদ্রিতা যেতে নিলো। আবার দাঁড়িয়ে পড়লো। দ্বিধাহীন স্বরে বললো,
“আপনার পিঠের ক্ষতটা কি সেরেছে?”

ফারিশ নির্বিকার ভঙ্গিতে তাকিয়ে থাকে আদ্রিতার দিকে। বলে,
“এত জেনে কি করবেন?”
“আমি একজন ডক্টর। এগুলো জানা আমার অধিকার আছে।”

ফারিশ হাসে। কি নিদারুণ দেখায় সেই হাসি। আদ্রিতার চোখ আটকায় সেই হাসিতে। ছেলেটা চমৎকার হাসে। উজ্জ্বল শ্যামবর্নের পুরুষটি হাসলে আরো দারুণ দেখায়। ফারিশ বলে,
“আমি আপনার পেশেন্ট নই যে অধিকার দেখাবেন।”
“আজ নন ঠিক আছে কিন্তু কিছুদিন আগে তো ছিলেন।”
“আগের দিন ভুলে যান। বর্তমান নিয়ে ভাবুন।”
“বর্তমান নিয়ে ভাববো ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে অতীত ভুলে যাওয়ার কি দরকার।”
“ফারিশ মনে রাখার মতো মানুষই নয়।”
“মনে রাখলে কি খুব ক্ষতি হবে?”
“মৃত্যুও ঘটতে পারে অকালে।”

আদ্রিতা চমকে উঠলো। বললো,
“আচ্ছা ফারিশকে মনে না রাখার কারণটা কি জানা যায়?”

ফারিশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“এত কারন আপনায় বলতে আমি বাধ্য নই।”

আদ্রিতা দমে যায়। এই ছেলের সাথে কথা বলে সে যেন পেরে উঠবে না। আদ্রিতা চলে যেতে নেয়। দরজা পর্যন্ত যেতেই ফারিশ বলে উঠল,
“এই যে শুনুন,

আদ্রিতা দাঁড়িয়ে পড়লো। পিছন ঘুরে শান্ত স্বরে শুধালো,“জি বলুন,”

ফারিশ কেমন একটু করে যেন বললো,“আমার সামনে আর আসবেন না। আপনাকে আমি দেখতে চাই না আর।”

আদ্রিতা কিছু বলে না। এই কথা নতুন কি। এটা তো প্রতিবারই বলে ফারিশ। আদ্রিতা বেরিয়ে যায়। ফারিশ চুপচাপ দাঁড়িয়ে। তার চোখে ভাসলো তখনকার সেই দৃশ্য। বিছানায় লেপ্টে থাকা তার আর আদ্রিতার মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য। ফারিশ তার চোখ বন্ধ করলো। মেয়েটা কেন যেন তাকে শান্তি দিচ্ছে না। বার বার দেখা কেন হচ্ছে?”

কতক্ষণ যেতেই দরজায় নক করলো আদিব। ফারিশের জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। আদিব ফারিশের দিকে তাকিয়ে বললো,“গাড়ি কি বার করবো ভাই? খাবার খেয়েই বের হবেন?”

ফারিশ চমকে উঠলো নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে বললো,
“কি বললে?”
“গাড়ি কি বার করবো ভাই?”
“হুম বার করো।”
“আচ্ছা আপনি খাবারটা খেয়ে নিন আমি বার করছি।”

আদিব খাবারগুলো বিছানার ওপর রেখে চলে যেতে নিলো। ফারিশ তখনও ঠায় দাঁড়িয়ে। কতক্ষণ আগের ঘটনা কিছুতেই মাথা থেকে বের হচ্ছে না। ফারিশ আদিবের দিকে না তাকিয়ে বললো,“আদিব শোনো,”

আদিব দাঁড়িয়ে পড়লো। বললো,“
“জি বলুন ভাই।”
“হোটেল কতৃপক্ষকে বলবে রুম নাম্বার ঠিক করতে।”

আদিব খানিকটা অবাক হয়ে বললো,
“কেন ভাই?”
“আটকে ছয় ভেবে মানুষ ভুল করবে।”
—-
রুমে ঢুকেই আদ্রিতা আয়নার দিকে তাকালো। তার চোখে সত্যি সমস্যা হয়েছে, না হলে এইটের উপরের অংশটি মুছে গিয়ে ছিল সে কেন বুঝতে পারলো না। সত্যি কি চশমা পড়া দরকার তার। আসার সময় সে রুম নাম্বারটা দেখে মিনিটের মাঝে নিজের ভুলটা বুঝতে পারে। আদ্রিতা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। যেদিন থেকে ফারিশ নামক ছেলেটা তার জীবনে এসেছে সেদিন থেকে তার সাথে সব উল্টোপাল্টা ঘটছে।

ফারিশ নামের ছেলেটাকে বড্ড অদ্ভুত লাগে আদ্রিতার। কিছু তো একটা রহস্য আছে ওই ছেলেটার মাঝে যা ফারিশ সবার থেকে লুকাতে চাচ্ছে। কিন্তু কেন? বিখ্যাত ঔষধ কোম্পানির মালিক কেনই বা কিছু লুকাতে চাইবে। কেন নিজেকে আড়াল করতে চাইবে। আদ্রিতা আর ভাবলো না। এই মুহূর্তে তার প্রথম ভাবনা যে ক’দিন তারা কক্সবাজার থাকবে সে ক’দিন রুম নাম্বার ৪০৮ এর ধারেকাছেও যাবে না। কিছুতেই যাবে না।”
—-
বেলা প্রায় দুপুর সাড়ে তিনটার কাছাকাছি। কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত থেকে প্রায় দু’ঘন্টার পথ পেরিয়ে একটা বড়সড় গোডাউন ঘরের একটা চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে ফারিশ। তাকে ঘিরেই দূরে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার লোকজন। সবার হাতেই বড় বড় পিস্তল। ফারিশ নির্বিকার হয়ে বসে। তার সামনেই কিছুটা দূরে চেয়ারের সাথে বাধা অবস্থায় বসে আছে সেই পালিয়ে যাওয়া নতুন ছেলেটি। নাম মোশারফ সুলতান। তাকে মারধর করা হয় নি। তবুও ক্লান্তি আর ভয়ে মোশারফ থরথর করে কাঁপছে।

একটা ছেলে এগিয়ে আসলো ফারিশ তার থেকে একটা সিগারেট নিলো। ছেলেটির হাতের লাইটার দিয়ে সেটা জ্বালালো। দু’ তিনবার ফুঁ উড়িয়ে তার লোকেদের ইশারা করলো মোশারফকে তার একদম সামনে আনতে। দু’জন লোক চেয়ারসহ মোশারফকে উঠিয়ে একদম ফারিশের মুখোমুখি বসালো। মোশারফ আরো ঘাবড়ে গেল। থরথর করে বললো,“আমায় ক্ষমা করে দিন বস। আর এমন হবে না।”

ফারিশ সিগারেটে ধুয়ো উড়ালো। সোজা গিয়ে পড়লো মোশারফের চোখে মুখে। ফারিশ বললো,“তিনটে প্রশ্ন করবো সঠিক উত্তর দিতে পারলে তোর মুক্তি।”

মোশারফ কি বলবে বুঝচ্ছে না। শুধু কাঁপছে। ফারিশ সিগারেটটা মোশারফের সামনে থেকে সরিয়ে বললো,“সমস্ত কিছু প্লান কার ছিল?”

মোশারফ জবাব দিলো,“আমি কিছু জানি না।”

ফারিশ হাসলো। বললো,
“গুড এন্সার।”

কথাটা বলেই মোশারফের ডানহাতে জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরলো ফারিশ। মোশারফ থর থর কাঁপছে। হাতে যন্ত্রণা হচ্ছে প্রচুর। ছটফট করছে মোশারফ। সে আপনাআপনি থর থর করে বলে উঠল,
“এক লোক আমায় শুধু কল করে বলেছিল আমি যেন আপনার ট্রাকে মেয়ে রেখে আপনায় ফাঁসাই বিনিময়ে অনেকগুলো টাকা দিবে।”

ফারিশ সিগারেট সরায়। বলে,
“ওহ আচ্ছা। তা কত দিলো?”
“১০ লাখ দিবে বলেছিল ৫ লাখ পাঠায় বাকি টা..

বলার আগেই আবারও জ্বলন্ত সিগারেট চেপে ধরে ফারিশ। ছেলেটা যন্ত্রণায় কাতরায়। চেঁচিয়ে উঠে ভয়ংকরভাবে। আদিব পিছন ঘুরে যায়। তার এসব একদমই ভালো লাগে না।”

#চলবে….

[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ]

#TanjiL_Mim♥️.গল্পের

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে