এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-১২+১৩

0
151

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১২

অন্ধকার রাত। আকাশে অল্প স্বল্প তাঁরার মেলা।
ঘড়িতে প্রায় রাত দশটা ছাড়িয়ে। সামনেই সমুদ্রের ঢেউয়ের শাঁ শাঁ করে শব্দ শোনা যাচ্ছে। ঘন্টার মতো ঝনঝন করে কতক্ষণ পর পর কানে বাজছে সেই শব্দ। মৃদুল বসে আছে সমুদ্র থেকে খানিকটা দূরে ছাতাযুক্ত চেয়ারে। তার প্রবল মন খারাপ। মৃদুল প্রায় ১৫ মিনিট যাবৎ একটা মেয়েকে লাইন মারার চেষ্টা করছিল কিন্তু ঠিক পনের মিনিট পর মৃদুল বুঝতে পারলো মেয়েটি বিবাহিত সঙ্গে বাচ্চাও আছে। ঠিক দু’মিনিট আগেই মেয়েটি তার স্বামীর হাত ধরে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে ঢ্যাং ঢ্যাং করে চলে গেল। সেই থেকে মৃদুলের মন খারাপ। মৃদুলের সাথে ঘটে যাওয়া এই বিরহের ঘটনা দূর থেকে পুরোটাই দেখেছে আশরাফ, মুনমুন, আদ্রিতা, রনি আর চাঁদনী। তারা মিটমিটিয়ে হাসছে। আদ্রিতা সবাইকে থামিয়ে বললো,“হাসিস না। বেচারা, মেয়েটাকে নিয়ে সিরিয়াস ছিল?”

আদ্রিতার কথা শুনে আশরাফও বললো,“ঠিক বলেছিস। চল যাই, শালার মুডটা ঠিক করতে হবে।”

রনির হাতে ছিল গিটার। সে বললো,“চল ভিন্ন কিছু করি।”

রনির ইশারা বুঝি সবাই বুঝলো। তারা এগিয়ে গেল। মৃদুল তখন সেই রাস্তার পানে তাকানো যে রাস্তা দিয়ে সেই বিবাহিত মেয়েটি চলে গেল।

শুরুতেই রনি গিটার বাজাতে বাজাতে মৃদুলের সামনে গিয়ে বলে উঠল,’লাললালালা লালালালালা’

রনির দেখাদেখি আশরাফও বলে উঠল,
‘লালালালালালালালালালালালালা।’

মৃদুল আচমকাই চমকে উঠে ওদের সবার দিকে তাকালো। সবার মুখ হাসি হাসি। আদ্রিতা আর মুনমুন বসলো মৃদুলের সামনে থাকা আরেকটা ছাতাযুক্ত চেয়ারে। হাতে তালি দিচ্ছে তারা। চাঁদনী মাঝখানে দাঁড়ানো। আশরাফ আর রনি দুজন গিয়ে বসলো মৃদুলের দুপাশে। রনি গিটার বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠল,
‘যদি বারেবারে একই সুরে প্রেম তোমায় কাঁদায়’

রনির পরই আশরাফ বলে উঠল,
‘তবে প্রেমিকা কোথায় আর প্রেমই বা কোথায়?'(আশরাফ)

‘যদি দিশেহারা ইশারাতে প্রেমই ডেকে যায়'(মুনমুন)
‘তবে ইশারা কোথায় আর আশারা কোথায়?'(চাঁদনী)

‘যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা'(রনি)
‘যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা'(আদ্রিতা)

‘যদি মিথ্যে মনে হয় সব পুরোনো কথা'(রনি)
‘যদি চায়ের কাপেতে জমে নীরবতা'(আশরাফ)

তবে বুঝে নিও চাঁদের আলো কত নিরুপায়!(সবাই একসাথে)

‘লাললালালা
লালালালালা
লালালালালালালালালালালালালা।’

মৃদুলের তাল উঠে গেল সবার গান শুনে। সে তার নিজস্ব মুডে চলে এলো। হাসি ফুটে উঠলো মুখে। রনি গভীর ধ্যানে গিটার বাজাতে মগ্ন হলো। কতক্ষণ যেতেই সবাই একসাথে গেয়ে উঠলো আবার,

‘যদি প্রতিদিন সেই রঙিন হাসি ব্যাথা দেয়
যদি সত্যগুলো স্বপ্ন হয়ে শুধু কথা দেয়'(২)

তবে শুনে দেখো প্রেমিকের গানও অসহায়।’

‘লাললালালা
লালালালালা
লালালালালালালালালালালালালা।’

প্রকৃতির বুকে তখন উপচে পড়া ঢেউ। মানুষগুলো তা দেখছিল না কেউ। তাদের দৃষ্টি তখন সমুদ্রের কিনারায় জোট বেঁধে গান ধরা ছ’জন মানুষের দিকে। কি উল্লাস তাদের মাঝে? মনে হচ্ছে পৃথিবীতে দুঃখ বলে কিছু নেই। কিছুই না। দূরের মানবগুলোও তিন জোড়া মানুষের উল্লাসে নিজেরাও উল্লাসিত হচ্ছিল। প্রকৃতি জুড়ে ছুটছিল মিষ্টি বাতাস। আহা! জীবন সুন্দর!’
—–
রাগী রাগী মুখ নিয়ে হোটেলে পা রাখলো ফারিশ। তার তীব্র ক্ষোভ সেই মানুষটা কে তা জানার। কেউ তো আছে যে তার কাজকর্মের কিছুটা হলেও অনেকটা জানে। আর ফারিশকে সেই মানুষটাকে খুঁজে বের করতে হবে। ফারিশের পিছনেই হাঁটছে আদিব। কতক্ষণ আগেই মোশারফকে খুন করে এসেছে ফারিশ। ফারিশের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই অথচ আদিবের বুক দুরুদুরু করছে। জোরে জোরে নিশ্বাসও ফেলছে কতবার। ফারিশের কাছে বেইমানদের জায়গা নেই। তাই অপরাধ করা মানুষটা যতই তার কাছে মিনতি করুক তার ফল মৃত্যুই হয়। ফারিশ বড় বড় পা ফেলে তার রুমের দিকে অগ্রসর হলো। গোডাউনে দেরি হয়ে যাওয়ায় গাছের কাছে যেতে পারে নি ফারিশ। তবে কাল সকালে যাবে ভেবে নিয়েছে। ফারিশ আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
“কাল সকাল সকাল আমরা বের হবো আদিব। দ্রুত খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আদিবও দ্রুত জবাব দিলো,“আচ্ছা ভাই।”

আদিব ফারিশের রুমটা খুলে তার রুমে ঢুকে পড়লো। ফারিশ তার কক্ষে ঢোকার আগে উপরটা চেক করলো। রুম নাম্বার ঠিক করা হয়েছে। ফারিশ ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। তার ভীষণ রাগ লাগছে।’
—-
প্রকৃতি তখন নীরব। সমুদ্র বিলাস করে, গান বাজনা হই-হুল্লোড় করে সাথে সামুদ্রিক মাছ রান্না খেয়ে রাত প্রায় সাড়ে বারোটার দিকে হোটলে ঢুকলো আদ্রিতা, আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। সবাই সবাইকে বাই জানিয়ে দ্রুত রুমে ঢুকে পড়লো। আদ্রিতা আর মুনমুন ঢুকলো রুম নাম্বার ছ’য়ে। আদ্রিতা রুমে যাওয়ার পথে ফারিশের রুমটা দেখেছে। সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়লো ফারিশ আর তার বিছানায় লেপ্টে পড়ার ঘটনা। ছিঃ কি লজ্জার একটা বিষয়। আদ্রিতা হাসলো। লোকটাকে কেন যেন আদ্রিতার ভালো লেগেছে। ভিন্ন রকম কিছু একটা আছে লোকটার মাঝে। রাগটাও প্রবল। এই প্রবল মনের রাগ থাকা মানুষটার মাঝে লুকিয়ে রাখার মতো কি আছে জানতে খুব ইচ্ছে করছে আদ্রিতার। কিন্তু জানার উপায় নেই। আফসোসের নিশ্বাস বেরিয়ে এলো আদ্রিতার।’
—-
অন্ধকার রাতটা তখন খুবই গভীর। ঘড়িতে প্রায় রাত দু’টো ছাড়িয়ে। মুনমুন বিছানায় বেঘোরে ঘুমোচ্ছে আর আদ্রিতা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে। তার ঘুম আসছে না। কেন আসছে না ধরতে পারছে না। রাতটা শীতল। ঠান্ডা ফুড়ফুড়ে বাতাস বইছে চারিপাশে। প্রকৃতিতে শীতের আভাস ঘুরছে। আদ্রিতার গায়ে পাতলা চাদর জড়ানো। বিশাল আকাশটায় এক সুন্দর চাঁদ ছাড়া আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আদ্রিতা মৃদু হাসলো। রাতের এই সময়টা তার খুব ভালো লাগে। কেমন চারপাশ চুপচাপ, ঠান্ডা, কোনো শোরগোল নেই। পুরোই নির্জীব আর নির্জন।

আদ্রিতার এই সময়টায় চারপাশ দেখলে মনে হয়, এই পুরো পৃথিবীতে বুঝি সে একাই আছে।
আদ্রিতার মনে হলো এই মুহুর্তে হাতে এক কাপ কফি থাকলে মন্দ হতো না। কিন্তু হোটেল রুমে এই সময় কফি কই পাবে? আদ্রিতা তার ঘন কালো লম্বা চুলগুলো খুলে দিল। মাথা নাড়িয়ে সেগুলো এলেমেলো করলো। পুরো পিঠ ছুয়ে ফেললো তার চুল। বাতাসে সেগুলো দুলছে। এক শীতল হাওয়া তাকে নাড়িয়ে দিলো। আদ্রিতা রেলিং এ হাত রাখলো। তাকিয়ে রইলো ওই বিশাল আকাশের দিকে মনে মনে বললো,“তুমি এত সুন্দর কেন?”

আদ্রিতা চোখ বুজলো। সাথে সাথে আদ্রিতার সামনে ফারিশের চেহারা ভেসে উঠলো। সে চমকে উঠলো। চোখ খুললো দ্রুত। চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“বজ্জাত ছেলে একটা খালি রাগ দেখায়।”

বেশ কিছু সময় আদ্রিতা একা একা পার করলো। আচমকাই আদ্রিতার নজর গেল তাদেরই হোটেলের এক রুম ছাড়িয়ে তার পরের রুমের বেলকনিতে কেউ বসে আছে তার দিকে। তড়িৎ চমকে উঠলো আদ্রিতা। ভালো মতো খেয়াল করতেই আদ্রিতা বুঝলো বসে থাকা মানুষটা আর কেউ না ফারিশ। আদ্রিতা অবাক হলো লোকটা এখনও ঘুমায় নি।

হাতে সিগারেট নিয়ে তা খেতে খেতে মোবাইল দেখছে ফারিশ। আদ্রিতা দ্রুত ওখান থেকে সরে গেলো। কি জানি তাকে দেখতে পেলে না ফারিশ আবার চেচামেচি শুরু করে দেয়।’

অন্যদিকে,
আদ্রিতা যেতেই ফারিশ তাকালো আদ্রিতার বেলকনিতে। সে অনেক আগেই আদ্রিতাকে লক্ষ্য করেছিল। এতরাতে মেয়েটা সজাগ ভেবে বেশ অবাকও হয়েছে। তবে খুব একটা ভাবে নি। মেয়েটাকে ফারিশ মটেও দেখতে চায় না কিন্তু সেই দেখা হয়েই যায়। যেমন এখন হলো। মেয়েটা না চাইতেও বার বার সামনে আসছে ফারিশের। যেটা ফারিশের মটেও ভালো লাগছে না। ফারিশের কল্পনায় আসলো সকালের ঘটনা। আদ্রিতার সেই ভয়ার্ত মুখশ্রী, কাঁপা কাঁপা কণ্ঠ, গলায় দৃঢ়তা। ফারিশ আনমনা বলে উঠল,
“মেয়েটার চোখ দুটো অসম্ভব সুন্দর।”

কথাটা বলেই ফারিশ চরম ভাবে চমকালো। এটা কি বলে উঠল? সে আবার কবে থেকে মেয়েদের চোখ মুখ দেখতে শুরু করলো। ফারিশ তার মাথা ঝাকড়ালো। এসব কি হচ্ছে তার সাথে?
—-
পরেরদিন খুব সকালে ফারিশ বের হলো তার গাছের উদ্দেশ্যে। তার একটা বিশেষ গাছের বাগান আছে। যে বাগানের কথা খুব কম মানুষই জানে। কক্সবাজার থেকে অনেক অনেক দূরে এক গুপ্তনীয় স্থানে তার বসবাস। বর্তমানে সেই গাছ দেখতেই যাচ্ছে ফারিশ….

#চলবে….

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৩

কক্সবাজার থেকে বেশ খানিকটা দূরে এক বিশাল পপি গাছের বাগান রয়েছে ফারিশের। যে পপি উদ্ভিদ থেকে তৈরি হয় আফিমসহ আরো নানা ধরনের নেশাদ্রব্য। বিশাল একটা জমি ভর্তি করে তৈরি হচ্ছে আফিমের গাছ। ফারিশ এই আফিমের গাছ দিয়েই তৈরি করে ঔষধদ্রব্য। প্রতিবছরই আফিমের ফলন বেশ ভালো হয়। কিন্তু এবার বীজ বপন করা হলেও গাছের সংখ্যা হচ্ছে কম। মাটিতে সমস্যা হয়েছে নাকি অন্যকিছু ধরতে পারছে না কেউ। বিষয়টায় বেশ চিন্তিত ফারিশ।

আফিম গাছের বাগান থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে ফারিশ। দৃষ্টি তার সামনের বাগানের দিকে। ফারিশের পাশেই দাঁড়ানো আদিব। ফারিশ প্রশ্ন করলো,“আলতাব চাচা এখনও আসে নি আদিব?”

আদিব নড়েচড়ে উঠলো। বিচলিত গলায় বললো,
“বুঝচ্ছি না ভাই।”
“ফোন করো তো।”

আদিব শুনলো। দ্রুত একটু দূরে গিয়ে ফোন করলো আলতাব চাচাকে। আলতাব হলো এই বাগানের কৃষক। উনিসহ আরো অনেকেই আফিমের চাষাবাদ করে থাকেন। আজ সবাইকেই দ্রুত এখানে আসার জন্য বলা হয়েছে কিন্তু কেউই এখনো পৌছাতে পারে নি যার জন্য ফারিশের রাগ লাগছে। কিন্তু সে শান্ত। আদিব কল করার দু’সেকেন্ডের মধ্যেই ফোন তুললো আলতাব। থরথর করে বললেন তিনি,
“আদিব বাবা তোমরা আইয়া পড়ছো?”
“হুম চাচা। আপনারা কই?”
“এই তো আমরা রাস্তায়। প্রায় আইয়া পড়ছি।”

আদিব শুনলো। ফারিশকে এক ঝলক দেখে বললো,“তাড়াতাড়ি আহেন চাচা ভাই কিন্তু রেগে যাবেন নয়তো।”

আলতাবও ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,“এই তো আইয়া পড়ছি আমরা।”

ফারিশ আওয়াজ করলো। আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“ওনারা কতদূর আদিব?”

আদিবও কান থেকে ফোন সরিয়ে দ্রুত জবাব দিলো,“এই তো ভাই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই চলে আসবে।”

ফারিশ কিছু বলে না। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সামনের বাগানগুলোর দিকে। নভেম্বর মাস চলছে। আফিমের বীজ গত মাসেই দেয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বীজ ভেঙে এখনও গাছ আসার কোনো নামগন্ধ নেই। অথচ আগের বছরগুলো বীজ দেয়ার দু’সপ্তাহের মাঝেই বীজ ভেঙে গাছ দেখা যায়।

সময় গড়ালো। ঠিক চার মিনিটের মাথাতেই আলতাবদের আগমন ঘটলো। তাদের ভয় লাগছে। এবারের ফসলের করুন অবস্থা দেখে তারাও বেশ অবাক হচ্ছে। আদিব এগিয়ে এলো। ফারিশের সামনে দাঁড়িয়ে বললো,“ভাই আলতাব চাচারা চলে এসেছেন।”

ফারিশ ঘুরে তাকালো। আলতাব এগিয়ে আসলো। ফারিশ শান্ত স্বরে বললো,“কেমন আছেন চাচা?”

আলতাব ধীর স্বরে উত্তর দিলো,
“ভালো বাবা। তুমি?”
“আমিও ভালো। গাছের কি সমস্যা হয়েছে চাচা?”
“আমিও ধরবার পারছি না।”
“ডাক্তার কি ডাকা হয়েছিল?”
“হ কইছে কোনো ভেজাল নাই সপ্তাহ পার হইলেই নাকি গাছ উঠবো।”
“গাছের যত্ন ভালোভাবে নেয়া হচ্ছে তো চাচা?”
“হ বাবা।”
“নতুন কোনো মালি এনেছো এখানে?”
“না সবাই পুরান।”

ফারিশ আর কোনো প্রশ্ন করলো না। এগিয়ে গেল বাকি বাগান পরিচর্যা করা মানুষদের দিকে। কিছুক্ষণ সবাইকে দেখে বললো,“গাছের ফলন ভালো হলে আপনাদের বেতন বারিয়ে দেয়া হবে।”

মালিরা খুশি হলেন। ফারিশ তার চোখে সানগ্লাস পড়লো। আদিবকে উদ্দেশ্য করে বললো,“আদিব চলো।”

আদিব শুনলো সবাইকে বাই জানিয়ে চলে গেল ফারিশের পিছন পিছন। ফারিশ যেতেই সবাই নিশ্বাস নিলো। তারা ভেবেছিল ফারিশ চেচামেচি করবে কিন্তু করলো না ভেবে তাদের শান্তি লাগছে।’
—–
বেলা প্রায় সাড়ে এগারোটা। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে আদ্রিতা। তাকে অনেকবার ডাকা হলেও তার ঘুম ভাঙে নি। শেষমেশ তাকে রেখেই বীচে চলে গেল আশরাফ, মুনমুন,মৃদুল, রনি আর চাঁদনী। আদ্রিতার ফোন বাজলো। ফোনের শব্দে আদ্রিতার ঘুম ভাঙলো। ঘুমের মাঝেই সাঁতরে ফোনটা হাতে নিলো। কোনোমতে কানের কাছে ফোনটা রেখে মিনমিনিয়ে বললো,
“হ্যালো কে?”

সঙ্গে সঙ্গে এক বিশ্রী ভাষায় গালি দিয়ে বললো মৃদুল,
“তুই এখনো ঘুমাচ্ছিস হারামি?”

আদ্রিতার ঘুম উড়ে গেল। শক্তপোক্ত কণ্ঠে বললো,
“সকাল সকাল মেতাচ্ছিস কেন?”
“মেতামু না ছ্যামড়ি তোর জন্য এখনো নাইতে নামি নাই আমি?”
“তোর শরম করে না গোসল করতে যাবি আমারে ডাকিস।”
“বদমাশ মাইয়া সমুদ্রে নামু।”

‘সমুদ্র’ কথাটা কানে আসতেই আদ্রিতার মনে পড়লো তারা কক্সবাজার আছে। আদ্রিতা এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। আশেপাশে তাকিয়ে বললো,
“তোরা আমারে রাইখা সমুদ্রে গেছো গা?”
“তোরে এখন ইচ্ছে করে কি জানিস? হোটেল দিয়া তুইল্লা আইন্না পানিতে চুবাইতে।”
“আরে রেগে যাচ্ছিস কেন?”
“তোকে কতবার ডাকা হয়েছিল জানিস?’
“সত্যি ডাকছিলি।”
“মরার মতো ঘুমাইয়া থাকলে টের পাবি কেমনে। এ এখন বেশি কথা না বইলা তাড়াতাড়ি সমুদ্রে আয়। আমরা অপেক্ষায় আছি।”

আদ্রিতা আদুরে স্বরে বললো,
“আমি ব্রেকফাস্ট করমু না দোস্ত।”
“করা লাগবে।’

আদ্রিতা মোবাইল কানে রেখেই মাথা নাড়ালো। মৃদুল বললো,
“লাগলে, ব্রেকফাস্ট করেই আয়।”
“আচ্ছা তোরা চিল কর আমি আধঘন্টার মধ্যে আসছি।”
“আচ্ছা। দ্রুত আসিস। তুই ওয়াশরুমে ঢোক আমি তোর ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা করছি।”

আদ্রিতা শুনলো। মৃদু হেসে দ্রুত ছুুটলো ওয়াশরুমে। ঠিক আধঘন্টার মধ্যেই হাল্কা তৈরি হয়ে হোটেল থেকে দিয়ে যাওয়া খাবার খেয়ে বীচের উদ্দেশ্যে বের হতে নিলো আদ্রিতা। সিঁড়ি বেয়ে খুব দ্রুতই নামতে লাগলো। তিনতলা বেয়ে নিচে নামতেই তার সঙ্গে দেখা হলো ফারিশের। ফারিশ তখন সিঁড়ি বেয়ে নিজ রুমে যাচ্ছিল। আদ্রিতা ফারিশকে দেখেই থমকে গেল বুকটা কেঁপে গেল হুট করে। আচমকা সামনে চলে আসায় পায়ের গতি কমাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়লো ফারিশের উপর। মাথা ঠেকলো ফারিশের বুকে। ফারিশ তাকে ধরলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিতার থমথমে মুখ। এই লোকটার সাথে সবসময় তার দূর্ঘটনা কেন ঘটে!’

আদিব তখন কেবলই সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে বললো,“ভা..

পুরো কথা বলার আগেই ফারিশ আর আদ্রিতাকে একসাথে দেখে সে চরমভাবে চমকালো। এই মেয়ে এখানে কি করছে! আদিব কোনো কথা না বলেই নিচে নেমে আসলো। তার পায়ের ধ্বনি পেতেই আদ্রিতা সরে গেল। বিচলিত কণ্ঠে বললো,
“আমি খুব দুঃখিত।”

ফারিশের রাগ হলো। ক্ষিপ্ত মেজাজে বললো,
“আপনি ডাক্তার নাকি ঝামেলা? যখন তখন সামনে এসে খালি ঝামেলা করছেন।”

আদ্রিতার গায়ে লাগলো কথাটা। খানিকটা উচ্চ স্বরেই বললো,
“আমি ইচ্ছে করে কোনো কিছুই ঘটাই না বুঝলেন। আপনি হুট করে চলে আসায় ঘাবড়ে গেছিলাম মাত্র।”

ফারিশ আদ্রিতার চোখের দিকে তাকালো। শীতল স্বরে আওড়ালো,
“আপনার ঘাবড়ানো আমার জন্য কতটা অসস্থিকর ব্যাপার তা কি আপনি জানেন ডাক্তার ম্যাডাম?”

আদ্রিতা চমকালো,ভড়কালো,অবাক হলো খুব। অদ্ভুত কণ্ঠে বললো,
“মানে?”

ফারিশ বিব্রত হলো। কি বলে ফেললো! আজকাল মুখের ওপর কন্ট্রোল হচ্ছে না ফারিশের। যখন তখন কিসব বলে ফেলছে বিশেষ করে আদ্রিতার সামনে। ফারিশ থমথমে গলায় বললো,
“কিছু না। সামনে থেকে সরুন।”
“আপনি তো খুব অদ্ভুত মশাই। আপনাকে সাধে আমি বখাটে বলি।”
“শুনুুন এক শব্দ বার বার ভালো লাগে না। কতবার বলবো আমি বখাটে নই।’
“আপনি কি তা তো দেখতেই পাচ্ছি।”
“এত কথা না বলে সামনে থেকে সরুন তো।”

আদ্রিতা সরে গেল। ফারিশ এগিয়ে গেল যাওয়ার আগে বললো,
“এতবার সামনে এসে আমায় বিব্রত করা বন্ধ করুন ডাক্তার ম্যাডাম। আপনাকে আমার ভালো লাগে না। কেন বুঝচ্ছেন না?”

ফারিশ কথাটা বলেই চলে গেল। আদ্রিতা থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তাকিয়ে রইলো ফারিশের যাওয়ার পানে। ছেলেটা এমন কেন! আদ্রিতার রাগ হচ্ছে। বার বার ছেলেটা তাকে ভালো লাগে না বলে অপমান করছে। আশ্চর্য! সে কি একবারও বলেছে ফারিশ প্লিজ আমাকে আপনার ভালো লাগান। নয়তো আমি শান্তি পাচ্ছি না। আর একবার এই ভালো লাগে না বললে ঠাটিয়ে একটা চড় বসিয়ে দিবে আদ্রিতা। চট করেই তার খুব রাগ লাগছে। এত রাগ লাগার কথা না তবুও রাগ লাগছে। আদ্রিতা হন হন করে নিচে নেমে এলো। আদিব তখন নিচতলার একটা চেয়ারে বসা। আদ্রিতাকে যেতে দেখেই আদিব উঠে দাঁড়ালো। চললো উপরে। সে হঠাৎ নিচে কেন নেমে এলো বুঝচ্ছে না। নামার তো কথা ছিল না। ভাবটা এমন ছিল ভাইয়া ভাবি কথা বলছে সেখানে না দাঁড়ানোই উত্তম। আদিব আচমকাই নিজের ভাবনার কথা ভেবে হেঁসে উঠলো। ভাইয়া ভাবি। ভাবা যায় ফারিশ ভাই বিয়ে করেছেন! আধও সম্ভব।
—-
নিজের রুমে পায়চারি করছে ফারিশ। তার অসস্থি হচ্ছে। অস্থির লাগছে। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে বুকে। আদ্রিতা মেয়েটা সামনে এলেই এই অনুভূতি হয় ফারিশের। যেটা তার মটেও লাগে না তাই তো বার বার বলে ‘আমার সামনে আর আসবেন না।আপনাকে আমার ভালো লাগে না। ফারিশ বুকে হাত দিলো। কেমন করে একটু বললো,
“আপনি আমার সামনে এলে আমার বড্ড অসস্থি হয় ডাক্তার ম্যাডাম। আপনাকে আমার ভালো লাগে না। মটেও ভালো লাগে না। তাহলে কেন বার বার উত্ত্যক্ত করছেন আমায়?’

#চলবে….

#TanjiL_Mim♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে