এক পশলা ঝুম বর্ষায় পর্ব-১৬+১৭

0
157

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৬

ঘড়িতে তখন সকাল দশটার কাঁটায় ছুঁই ছুঁই। জানালা চুইয়ে রোদ্দুর আসছে খুব। আদ্রিতা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৈরি করছিল। একটা সাদা রঙের সেলোয়ার-কামিজ পড়েছে। চুলগুলো বেনুনী করা। হাল্কা সাজ আর লাস্ট ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক লাগালো। দরজায় টোকা পড়লো তখনই। আদ্রিতা ওয়াশরুমে থাকা মুনমুনকে আওয়াজ করে বললো,
“মৃদুল ওরা বোধহয় চলে এসেছে মুন, দ্রুত বের হ।”

মুনমুনের কথার আর অপেক্ষা করলো না আদ্রিতা সে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে দরজা খুললো। আশরাফ, মৃদুল, রনি আর চাঁদনী এসেছে একসাথে। আদ্রিতা মিষ্টি হেঁসে বললো,“ভিতরে আয় তোরা। মুন এখনো তৈরি হয় নি।”

মৃদুল বিরক্ত হলো। চোখ মুখ কুঁচকে খাটে বসতে বসতে বললো,“এই মাইয়াডা সব জায়গায় দেরি করে।”

আশরাফ বললো,“প্যারা নাই। এগারোটায় বের হলেও হবে।”

রনি নিশ্বাস ফেলে বললো,“আজকের প্ল্যানটা কি?”
চাঁদনী রনির পাশে বসতে বসতে বললো,“সারাদিন ঘুরবো। ছবি তুলবো। মজা করবো। দেন রাতের বাসে ঢাকা।”

বাসের কথা শুনতেই আদ্রিতার মনে পড়লো কিছু। সে বললো,“আমার কিন্তু আজ যাওয়া হবে না।”

চোখ বড় বড় করে সবাই চাইলো আদ্রিতার দিকে। রনি বললো,
“কেন?”
“কাল আমার একটা সার্জারির কাজ আছে এখানেরই একটা হসপিটাল। তোরা আজ চলে যা। আমি কাল রাতেই ফিরে যাবো ইনশাআল্লাহ।”

সবাই বিস্মিত হয়ে গেল আদ্রিতার কথা শুনে। চাঁদনী শান্ত স্বরে বললো,“তাহলে তুই আমাদের সাথে ফিরছিস না?”

আদ্রিতা মাথা নাড়িয়ে জবাব দিলো,“না।”
আশরাফ চিন্তিত স্বরে বললো,
“একা যাওয়ার দরকার নেই আমরাও না হয় থেকে যাবো।”

আদ্রিতা আশ্বাস দিয়ে বললো,
“আরে সমস্যা নেই আমি একা যেতে পারবো আর তেমন সমস্যা হলে আমি আমার ড্রাইভার আঙ্কেলকে আসতে বলবো। এমনিতেই এতজন একসাথে হসপিটাল বন্ধ দিয়েছি। আরো একদিন দরকার নেই। আমি কাজ সেরেই চলে আসবো। তোরা প্যারা নিস না।”

মৃদুলের কল আসলো হসপিটাল থেকে। মৃদুল এক মিনিট বলে বাহিরে বের হলো। মুনমুন তখন কেবল নিউ ড্রেস পরে বাহিরে বের হলো। চুল তার ভিজা বোঝাই যাচ্ছে সাওয়ার নিয়ে এসেছে। সবার মুড অফ দেখে মুনমুন তার মাথার চুল মুুছতে মুছতে বললো,“কি ব্যাপার তোরা সব চুপচাপ ক্যান?”

রনি তাকালো মুনমুনের দিকে। পরক্ষণেই চোখ সরিয়ে বললো,“তেমন কিছু না আদু আজ আমাদের সাথে ফিরবে না তাই সবার একটু মন খারাপ।”

মুনমুন অবাক হয় না এতে। কারণ আদ্রিতা তাকে কাল রাতে ঘুমানোর আগে এ বিষয়ে বলেছিল। মুনমুন বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বললো,“এতে মন খারাপ করার কি আছে? আমরা আজ রাতে যাবো ও কাল বাদে পরশু তো চলেই আসবে। প্যারা নিস না চিল। আর আদুর ড্রাইভার আঙ্কেল আছে না ওনায় ফোন দিয়ে ডেকে নিবে ব্যাস হয়ে গেল।”

তাও কেউ তেমন কিছু বললো না। আশরাফ টপিক পাল্টে বললো, “বুঝেছি এবার তুই দ্রুত তোর মেকাপ সার আমরা বের হবো। তোরা নাস্তা করেছিস?”

দুজনেই মাথা নাড়িয়ে বললো,“না।”

চাঁদনীও করেনি। অতঃপর সকালের নাস্তা রুমে করারই সিদ্ধান্ত নিলো সবাই। আশরাফ বের হলো সবার জন্য নাস্তা আনতে। চাঁদনীও গেল ওর সাথে। মৃদুল ঢুকলো তখন। মুনমুনকে রেডি হতে দেখে বললো,
“তাড়াতাড়ি কর মাইয়া।”
“হুম করছি। (মুনমুন)

মৃদুল বসলো রনির বসা সামনের বেডে। রনি মৃদুলের চেহারা দেখে জিজ্ঞেস করলো,“কি হয়েছে?”

মৃদুল নিশ্বাস নিয়ে বললো,
“আমাদের তাড়াতাড়ি যাওয়ার জন্য বলছে।”
“ওহ!’ (রনি)
“হুম। এই ডাক্তারি জীবন আর ভালো লাগে না। মেডিকেলের সেই ক্লাস করা দিনগুলোই ভালো ছিল কি সুন্দর সারাদিন আড্ডা। ক্যাফেতে হই হুল্লোড়। ধুর এখন খালি কাজ আর কাজ তাও মরা মানুষের পরিক্ষা নিরীক্ষা করা। দোস্ত বিয়া করমু?”

সবই ঠিক ছিল মৃদুলের শেষ কথা শুনে সবাই হেঁসে ফেললো। আদ্রিতা বললো,
“তোরে মাইয়া দিবো কেডা?”

মৃদুলের তড়িৎ উত্তর,
“তোর মামায়।”

আদ্রিতা চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। বললো,“হ বইসা আছে তো আমার মামায় তার মাইয়া তোরে দেয়ার জন্য।”

মৃদুল চিত হয়ে শুয়ে পড়লো খাটে। আফসোস নিয়ে বললো,“জীবনডাই বেদনার সিঙ্গেল থাকতে থাকতেই জীবন শেষ হইয়া যাইবো মনে হয়। রনি, তুই আর মুন কিন্তু বিয়েটা করে নিতে পারিস।”

মৃদুলের কথায় রনি মুনমুন একে অপরের দিকে চাইলো। চোখাচোখি হলো দুজনের। আদ্রিতা তা দেখে মৃদু হাসলো।”
—-
ফোনে কল আসতেই কাঁচা ঘুম ভাঙলো ফারিশের। খানিকটা বিরক্ত নিয়ে ফোনটা তুললো। আদিব কল করেছে। ফারিশ ফোন তুলে বললো,
“কি হয়েছে আদিব?”

অপরপাশে থাকা আদিব বললো,
“ভাই আজ কি ঢাকায় ফিরবেন? নাকি আরো কিছুদিন থাকবেন।”

ফারিশ কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললো,
“তুমি আজ চলে যাও আদিব ওখানকার অবস্থা কেমন জানাও। আমি কাল বিকালে আসবো। আমার কিছু আজ আছে। আর হ্যা গাড়ি রেখে যেও। তুুমি ফ্লাইটে করে চলে যেও।”
“আচ্ছা ভাই। এখনই বের হবো নাকি বিকেলে যাবো।”
“সেটা তুমি ভেবে নেও। যদি এখন থাকতে ইচ্ছে করে। সমুদ্র ঘুরে দেখতে মন চায়। তাহলে থাকো, বিকেলে যেও। আমি জানি তোমার সমুদ্র পছন্দ। কাজের চক্করে এবার সমুদ্র দেখতে যেতে পারো নি। তাই সমুদ্র দেখে বিকেলে যাও। আমার কাল রাতে ঘুম হয় নি। তাই আর কল করো না কেমন। তবে যাওয়ার আগে মেসেজ দিয়ে যেও।”

আদিবও আর দ্বিধা না করে বললো,
“আচ্ছা ভাই।”

ফোন কাটলো ফারিশ। গায়ের কম্বলটা আরেকটু শক্ত করে চেপে ধরে সে ঘুমালো আবার।”
—-
সমুদ্র সৈকতে তুমুল বেগে ছোটাছুটি করছে আশরাফ, মুনমুন, মৃদুল, রনি, চাঁদনী আর আদ্রিতা। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মতো হৈ-হুল্লোড় করছে তারা। মাঝে মাঝে একসাথে ছবিও তুলছে। সমুদ্রের প্রবল স্রোতটা তাদের বুঝি টানছে। আশেপাশের মানুষও সমুদ্রে নাইবার জন্য লাফালাফি করছে। আশরাফ, মৃদুল আর রনি ছুটলো সমুদ্রে ভিজতে। ফাইনালি মৃদুল তার সমুদ্রের মাঝে চিত হইয়া সমুদ্র বিলাস করার সুযোগ পেল। মুনমুন, চাঁদনী আর আদ্রিতা দাড়িয়ে। তাদের ভেঁজার কথা নেই। পাবলিকলি এভাবে ছেলেমেয়ে গোসলটা করাটা তাদের পছন্দ হচ্ছে না তবে সমুদ্রে গোসল করার ইচ্ছে যে নেই এমনটা নয়। আদ্রিতা তার হাতে থাকা ক্যামেরা দিয়ে মৃদুল ওদের ছবি তুললো। মুনমুন আর চাঁদনীরও তুললো। তারা বাইকে উঠে দূর-দূরান্তে অল্পে ঘুরলো। বাতাসে তাদের চুল উড়ছিল, তবে মন হচ্ছিল শান্ত।’

সমুদ্রের ভিড়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আদিব। সমুদ্র তার দারুণ পছন্দ। আদিব চোখ বন্ধ করলো। প্রবল স্রোত তাকে দারুণভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। আচমকাই পিছন থেকে কেউ এসে ধাক্কা দিতেই আদিব হুমড়ি খেয়ে পড়লো সমুদ্রের ঢেউয়ের মাঝে। আচমকা এমন ঘটনায় মুনমুন, আদ্রিতা আর চাঁদনী তিনজনই চমকে উঠলো। কারণ ধাক্কাটা চাঁদনী দিয়ে ফেলেছে। তাও দৌড়ে এসে পিছলে গিয়ে। আদিবের শরীর ভিজে চৌচির। সে উঠে দাঁড়ালো। কলকলিয়ে মুখে যাওয়া পানিটুকু কুলি করে ফেললো। সামনেই তিনটে মেয়েকে দেখলো। চাঁদনীই নিচের দিকে তাকিয়ে আগে বললো,“আমি খুব দুঃখিত ভুল করে ধাক্কাটা লেগে গেছে।”

আদিব চোখ মুখ কুঁচকে বললো,“ভুল করে। কানা মেয়ে কোথাকার?”

কণ্ঠটা যেন চেনা লাগলো এর আগেও শুনেছে বলে মনে হলো চাঁদনীর। চাঁদনী ছেলেটির দিকে তাকালো সেদিনের হসপিটালের বদমাশ ছেলেটাকে দেখে অবাক হয়ে বললো,“আপনি?”

আদিব বিরক্ত নিয়ে বললো,
“সাবধানে চলাফেরা করতে পারেন না।”
“পারি তো কিন্তু আজ কেন যেন পারি নি।”

আদিবের রাগ লাগলো। তীক্ষ্ণ স্বরে আওড়ালো,
“মজা করছেন আমার সাথে।”
“এখানে মজার কি আছে?”

আদ্রিতা এগিয়ে আসলো। চাঁদনীর এমনিতেও মুখ বেশি চলে। আদ্রিতা বিনয়ের সঙ্গে বললো,
“ভুল করে হয়ে গেছে ভাইয়া আসলে ও পিছলে গিয়েছিল। দেখতে পেলেও উপায় ছিল না।”

আদিব কি বলবে বুঝতে পারে না। আদ্রিতাকে দেখলেই তার ভাবি ডাকতে মন চায়। আদিবকে চুপ থাকতে দেখে চাঁদনী বললো,
“আমরা কি চলে যাবো?”

আদিব একরাশ বিরক্ত নিয়ে বললো,
“না আমাকে আরেকবার ধাক্কা দিয়ে যাবেন।”

চাঁদনী তাই করলো। সে তড়িৎ আরেকবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো আদিবকে। আদিব হতভম্ব হয়ে গেল। চাঁদনী হাসতে হাসতে দৌড়ে পালালো। আদ্রিতা আর মুনমুনও পুরো ভীমড়ি খেল। একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,“ব্যাপারটা কি হলো?”

#চলবে….

#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৭

সমুদ্র থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে চাঁদনী। আদ্রিতাদের থেকে সেই সূদুরে চলে এসেছে সে। চাঁদনীর চোখ মুখ হাসি হাসি। বুকের ভিতরটা বিরতিহীন কাঁপছে। আদিবকে যেদিন প্রথম দেখেছিল সেদিনই তার ভালো লেগেছিল। আজ এই অনাঙ্ক্ষিত দেখা হওয়ার বিষয়টায় খুবই অবাক সঙ্গে খুশি হয়েছে চাঁদনী। ছেলেটাকে রাগাতে ভালো লাগে তার। কেন লাগে পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও একটু আকটু ধরে ফেলেছে চাঁদনী। চাঁদনীর ভাবনার মাঝেই ওর দুই কাঁধে হাত রাখলো দুটো মানুষ। দৃষ্টি তাদের সমুদ্রের স্রোতের দিকে। আদ্রিতা আগে বললো,
“জানিস মুন আজ না কোথাও গিয়ে প্রেমে পড়ার গন্ধ পেলাম।”

আদ্রিতার কথা শুনে মুনমুনও সায় দিয়ে বললো,
“আমিও পেয়েছি বুঝলি।”
“তার মানে ফাইনালি আমাদের চাঁদ আপু কারো প্রেমে পড়েছে।”

মুনমুনও মৃদু হেসে বললো,“মনে তো তাই হচ্ছে।”

চাঁদনী এবার মুখ খুললো। নিজেকে পুরোপুরি ধাতস্থ করে বললো,“তোরা যা ভাবছিস তা কিন্তু মটেও সঠিক নয়।”

আদ্রিতা মুনমুনের দিকে তাকালো। বললো,
“মুন শুনেছিস আমরা যা ভাবছি তা নাকি সঠিক নয়।”
“শুনছি তো আদু। কিন্তু কথা হলো আমরা কি ভাবছি?”
“সে তো চাঁদ আপু জানে।”

চাঁদনী রাগ দেখিয়ে দুজনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,“তোরা একটা যাচ্ছে তাই।”

কথাটা বলেই হনহনিয়ে হেঁটে গেল চাঁদনী এগোতে এগোতে মৃদু হাসলো ঠিকই। আদ্রিতা আর মুনমুনও হাসলো। আদ্রিতা চেঁচিয়ে বললো,
“চাঁদ আপু এখন কি আর আমরা খাই সুজি,

আদ্রিতার কথা পিঠে মুনমুনও চেঁচিয়ে বললো,
“তাই তো চাঁদ পাখি যতই লুকাক আমরা কিন্তু অনেক কিছুই বুঝি।”

হেঁসে উঠলো আদ্রিতা আর মুনমুন। চাঁদনীও তাদের কথোপকথন শুনতে পেয়ে হাসলো খুব। চাঁদনী অনুভব করলো প্রথমবার কারো প্রেমে পড়ার অনুভূতিটা দারুণ।’
—-
রাগে ফুসফুসতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আদিব। ইচ্ছে করছে ওই বদমাশ মেয়েটাকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় বসাতে কিন্তু আফসোস পারছে না। তার সমুদ্র বিলাসের সম্পূর্ণটাই বৃথা গেল। আদিব দ্রুত নিজের রুমে ঢুকে পড়লো এবার আর সমুদ্রে যাবে না। এবার সোজা ঢাকাতে ফিরবে। যাওয়ার পথে ফারিশের রুমটা নজরে এসেছিল আদিবের। সে বুঝেছে ফারিশ ভাই আজ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।’

সন্ধ্যা সাতটা। সারাদিনের হৈ-হুল্লোড় করে হোটেলে ফিরলো আদ্রিতা, চাঁদনী, মুনমুন, আশরাফ, রনি আর মৃদুল। তারা আজ অনেক মজা করেছে। প্রচুর ছবি তোলা, প্রচুর খাওয়া-দাওয়া আর শেষে, শেষ বারের মতো সমুদ্রে পা ভেজানো সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখা। সূর্যাস্তের সময়টা যেন খুবই মুগ্ধনীয় কেটেছে সবার। কি মুগ্ধনীয় পরিবেশখানা। গোল থালার মতো রক্তবর্ণধারণ করা সূর্যটা কি সুন্দর আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছিল। ইস! আমার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দুটো মুহূর্ত হলো সকালের সূর্যোদয় দেখা আর সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বাভাসের এই সূর্যাস্ত দেখা। দারুণ দুটো মুহূর্ত। মৃদুল তাড়া দিয়ে বললো,“অতঃপর কক্সবাজারের ভ্রমন আমাদের এ পর্যন্তই সবাই সবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে আদুদের রুমে আয়। শেষ একটা চা আর নানরুটির ভোজন হবে তারপর সবাই ব্যাক।”

মৃদুলের কথা শুনে সবাই হেঁসে হেঁসেই বললো,“ঠিক আছে।”

আদ্রিতা আর মুনমুন নিজেদের রুমে ঢুকলো। মুনমুন তার ব্যাগপত্র বের করতে করতে বললো,“তারপর তুই থাকছিসই?”

আদ্রিতা খানিকটা মুড অফ করে বললো,
“ইচ্ছে তো ছিল না কিন্তু কি করার।”
“হুম যাক প্যারা নাই। চিল।”
“হুম দেখা হবে। এখন দ্রুত কর।”

মুনমুন দ্রুত তার ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আদ্রিতার একটা কল আসলো। সে দ্রুত কলটা রিসিভ করে চলে গেল ব্যালকনিতে।

আধমরা ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসলো ফারিশ। মাথা ভাড় হয়ে গেছে তার। আজ সারাদিনটাই সে ঘুমিয়ে কাটালো। এত ঘুম হওয়ার কথা ছিল না তাও এত কিভাবে ঘুমালো ভাবছে। হয়তো কাল শেষ রাতের ড্রিংকটা বেশি হয়েছিল। ফারিশ সেই সকালে ঘুমিয়েছে ঘুম ভেঙেছে মাত্র। ফারিশ আশপাশ তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। আদিবের মেসেজ দেখা গেল। ছেলেটা কক্সবাজার থেকে বেরিয়েছে সেই দুপুরেই। ফারিশ মেসেজ দেখেই সোজা চলে গেল ওয়াশরুমে। একটা সাওয়ার নেয়া দরকার।’
—-
“আপনি চিন্তা করবেন না স্যার আমি কাল সকালেই চলে যাবো।”

অপর পাশের ব্যক্তিটিও বললো,
“ঠিক আছে আদ্রিতা। কাজটা সেরে তুমি বিকালেই চলে আসতে পারবে। তোমার গাড়িটা আনিয়ে নিও।”
“জি স্যার।”
“আচ্ছা শোনো লোকেশনটা তোমার ফোনে পাঠিয়ে দিচ্ছি কেমন।”
“আচ্ছা স্যার দেন।”

ফোন কাটলো আদ্রিতা। ফোন কাটার কিছু সময়ের মাঝেই আদ্রিতার ফোনে মেসেজ আসলো। সে দেখলো। আদ্রিতার সার্জারীর কাজটা বিকেল থেকে সরিয়ে সকালে আনা হয়েছে। সকাল দশটায় অপারেশন শুরু করলে সব ঠিক থাকলে দুপুরের মধ্যেই হয়ে যাবে আর দিন থাকতেই বিকেলের মাঝে বাড়ি ফিরতে পারবে আদ্রিতা। বিষয়টা ভালো হয়েছে। আদ্রিতা জোরে একটা নিশ্বাস নিলো। তারপর চলে গেল ভিতরে। ততক্ষণে মুনমুনের গোছগাছ কমপ্লিট। এবার শুধু নিজের রেডি করা বাকি।’

রাত আটটা। মোটামুটি চা আর নানরুটির ভোজন শেষ করে হোটেল গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আশরাফ, মুনমুন, চাঁদনী, মৃদুল,রনি আর আদ্রিতা। আদ্রিতার গায়ে চাঁদর জড়ানো বাহিরে বেশ শীত পড়েছে। আদ্রিতা সবাইকে বিদায় দিতে নিচ পর্যন্ত এসেছে। মৃদুল বললো,
“আদু শোন আজ আর হোটেল থেকে বের হবি না। খাবার দাবার যা আছে ওগুলাই খাবি। একা বের হবি না কেমন।”
“ঠিক আছে।”
“শুধু ঠিক আছে বললে চলবে না। বললাম আমরাও থাকি শুনলি না। আচ্ছা আমি একা থেকে যাই।”

আশরাফের কথা শুনে মিহি হাসলো আদ্রিতা। বললো,“তোরা এত টেনশন নিস না। আমি কাল তাড়াতাড়িই চলে যাবো।”

রনি এগিয়ে এলো। বললো,“তাও বিষয়টা ভালো লাগছে না আমরা চলে যাচ্ছি তুই একা থাকছিস।”

চাঁদনী মুনমুনও বললো,“আমাদেরও ভালো লাগছে না।”

আদ্রিতা কি বলবে ভেবে পায় না। সে আচমকাই সবাইকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। বললো,“তোরা টেনশন নিস না আমি ঠিক সামলে নেবো।”

সবাই খুশি হলো। চাঁদনী বললো,
“ঠিক আছে। সাবধানে থাকিস বোন।”
“হুম থাকবো।”

একটা অটো এসে থামলো সেই মুহূর্তে। আশরাফ এগিয়ে গেল। বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার কথা বললো অটোচালকও রাজি হলো। তারপর একে একে সবাই উঠে বসতে লাগলো অটোতে। মুনমুন আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,“সাবধানে থাকিস কিন্তু আদু আর শোন পারলে চাঁদ আপুর প্রেমিক পুরুষের নাম্বারটা জোগাড় করিস।”

হাসলো অাদ্রিতা। বললো,“দেখি। যা এখন নয়তো বাসে সিট পাবি না।”

অতঃপর আদ্রিতাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল সবাই। যাওয়ার আগে বলে গেছে। ফোনে চার্জ দিয়ে রাখতে তারা কল করবে। আদ্রিতাও হাতের ইশারায় বায় জানিয়ে বলেছে,“আচ্ছা রাখবো।”

দেখতে দেখতে চোখের ইশারায় দূর থেকে সূদুরে চলে গেল মৃদুল ওরা। মাঝে মাঝে আদ্রিতার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়। এমন সুন্দর একটা ফ্রেন্ড সার্কেল পেয়ে।’

আদ্রিতা মৃদু হেঁসে পিছন ফিরতেই ধাক্কা লাগলো ফারিশের সাথে। মাথা ঠেকলো আবারও ফারিচের বুকে। তড়িৎ বুকটা কেঁপে উঠলো আদ্রিতার। ফারিশেরও সেইম অবস্থা। সে মাত্রই কথা বলতে বলতে গেট থেকে বাহিরে বেরিয়ে ছিল। আদ্রিতা মাথা উঁচু করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ঠোঁটে আঙুল দিলো ফারিশ। চুপ করিয়ে দিল তাকে। আদ্রিতার নিবিড় চাহনী। ফারিশ বললো,
“আমি একটু তাড়ায় আছি কথা বলতে চাচ্ছি না প্লিজ।”

কথাটা বলেই আদ্রিতার থেকে নিজেকে সরিয়ে চলে গেল ফারিশ। আদ্রিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই আর কিছু না ভেবে হেঁটে চলে গেল হোটেলের ভিতরে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই কল করলো তার ড্রাইভারের নাম্বারে। প্রথম কলেই ফোন তুললো ড্রাইভার। আদ্রিতা বললো,
“সোহেল আমার গাড়িটা কি ঠিক হয়েছে?”

অপরপ্রান্তে থাকা সোহেলও বললো,
“জি ম্যাডাম। আপনি যাওয়ার একদিন পরই ঠিক করে এনেছি।”
“ঠিক আছে। শোনো কাল তুমি সকাল সকাল কক্সবাজার উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে চলে আসবে। আমি দুপুর দুটো কি আড়াইটার মধ্যে হসপিটাল থেকে বের হবো। লোকেশন আমি পাঠিয়ে দিবো।”
“আচ্ছা ম্যাডাম।”
“হুম তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু।”
“আচ্ছা।”

আদ্রিতা ফোন কাটলো। যাক এবার আর টেনশন নেই। দ্রুত কাজ সেরে চটপট চলে যাবে বাসায়।”
—–
আরেকটা সুন্দর সকাল। আদ্রিতা তার ব্যাগপত্র গুছিয়ে একেবারে হোটেল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলো। একসাথেই হোটেল থেকে বেরিয়ে কাজ সেরে গাড়ি করে চলে যাবে। আদ্রিতা পুরো রুমটা একবার চেক করে হোটেল কতৃপক্ষকে চাবিটা দিয়ে বেরিয়ে পড়লো হোটেল থেকে। টাকাপয়সার মিটমাট কাল রাতেই কমপ্লিট তাদের।’

অন্যদিকে ফারিশও তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো। প্রথমে গাড়ি করে একটা জায়গায় যাবে ফারিশ তারপর দুপুরের দিকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হবে। হোটেলে আর ঢুকবে না তাই সব গুছিয়ে গাছিয়েই বের হচ্ছে। আদ্রিতা বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথাতে ফারিশও বের হলো।’

#চলবে…..

#TanjiL_Mim♥️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে