এক টুকরো আলো পর্ব-৩১+৩২

0
468

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_৩১
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

নিশিকে ফোন করলো ফাবিহা। কথার এক পর্যায়ে জানতে পারলো নিশির বিয়ে। কিন্তু কিছুতেই এত তাড়াতাড়ি বিয়ের কারণ জানতে পারলো না ফাবিহা। নিশি বলল ফ্যামিলি জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।
ফাবিহা ঠিক করলো অন্যদিন নয়, ক্লাস শেষে আজই খালার বাড়ি যাবে।

হলোও তাই। সাজেদা আসবাবপত্রের ধূলোময়লা পরিষ্কার করছেন। পেছন থেকে শুনতে পেল,“খালা কেমন আছো?”

সাজেদা ফাবিহাকে দেখে একটু অবাক হলেন। নিশির কাছে শুনেছিল তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ের পর এভাবে আসবে তিনি ভাবতে পারেননি। হেসে বললেন,“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?”

নিভে এলো ফাবিহা। মুখ ছোটো করে বলল,“এই তো ভালোই আছি।”

“তোর মা আর বাবা কেমন আছেরে?”

“ভালো। শুনলাম নিশির নাকি বিয়ে ঠিক করেছো?”

সাজেদার মুখের হাসি মলিন হয়ে গেল।
“হ্যাঁ।”

“ও তো ছোটো এখনো।”

“১৮ তো হয়েছে।”

“তবুও খালা।”

“ওর ভালোর জন্যই আমরা বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পড়াশোনাও ভালো না। আর বসিয়ে রেখে কী লাভ?”

ফাবিহা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,“ভাবি কোথায়?”

“আছে ঘরে। এতক্ষণ কাজ করছিল।”

“আমি তাহলে দেখা করে আসি।”

“তাসিন আছে ঘরে। আমি বরং ডেকে দিচ্ছি।”

ফাবিহা মাথা নাড়লো।

সাজেদা দরজার কাছে দাঁড়িয়ে হুরাইনকে ডাকলেন। জলদি ঠিক হয়ে বসলো হুরাইন। মাথায় কাপড় দিয়ে বেরিয়ে আসলো।
“জি আম্মা।”

“ফাবিহা এসেছে। ডাকছে তোমায়।”

হুরাইন এসেই হাসিমুখে সালাম দিলো। ফাবিহাও হাসিমুখে সালামের জবাব দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। হুরাইনকে জড়িয়ে ধরতেই দেখলো তাসিন ঘর থেকে বেরিয়ে আসছে। তার দিকে না তাকিয়েই জিজ্ঞেস করলো, “কেমন আছিস?”

ফাবিহা মনে অনেকটা কষ্ট পেল। সে কি এতটাই খা*রা*প হয়ে গিয়েছে? তাসিন তার দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। সেও কোনোভাবে বলল,“ভালো। তুমি কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ। আমি বের হচ্ছি হুরাইন। কিছু লাগবে তোমার?”

“না।”

ফাবিহা খেয়াল করলো তাসিনের আগে খোঁচা খোঁচা দাড়ি ছিল। এখন তারচেয়েও লম্বা দেখাচ্ছে। ফাবিহার দিকে চোখেচোখে না তাকানোর কারণটা ভিন্ন। ফাবিহাও তার জন্য পরনারী। অথচ ফাবিহার বুঝার ভুল। সে ভাবলো তাসিন অন্য কোনো কারণে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে।
হুরাইন ফাবিহাকে বসিয়ে বলল,“আপনি বসুন আপু। আমি একটু আসছি।”

হুরাইনের মতিগতি বুঝতে পেরে ফাবিহা ওর হাত চেপে বলল,“তুমি চুপচাপ বসো তো। আমি এই বাড়ির মেহমান না যে এখন আমাকে আপ্যায়নের জন্য নাস্তা লাগবে।”

সাজেদা রান্নাঘর থেকে বললেন,“তোরা কথা বল। আমি আসছি।”

ফাবিহা হাসিমুখে বলল,“বাবু কেমন আছে?”

হুরাইনের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। মৃদু হেসে বলল,“আলহামদুলিল্লাহ।”

“আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম বাবু আসার কথা শুনে।”

হুরাইন মিটিমিটি হেসে বলল,“আমরা খুশি হচ্ছি কবে?”

ফাবিহা ধপ করে নিভে গেল। বুক চিড়ে বেরয়ে এলো দীর্ঘশ্বাস। বলল,“ডি*ভো*র্স হয়ে গিয়েছে।”

বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে গেল হুরাইন।
“বলেন কী আপু? বিয়ের কত মাস হলো? কীভাবে হলো এসব?”

ফাবিহা বিস্তারিত বলল। কীভাবে তাদের বিয়ে হয়েছে, কতদিন শশুর বাড়ি ছিল। বলতে বলতে ততক্ষণে সাজেদাও এসে পড়েছেন। সব শুনে তিনিও বিস্মিত, ব্যথিত হলেন। নিজেকেও আবার দোষারোপ করা শুরু করলেন। ছেলেকে বিয়ে করাবেন কথা দিয়েও তিনি কথা রাখতে পারেননি। হুরাইন বলল,“বিয়ের আগের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আপনাদের সংসারে অনীহা? দুজনে বসে ঠাণ্ডা মাথায় কথা বলতে পারতেন।”

ফাবিহা বলল,“তোমার কাছে সবকিছু যতটা সহজ মনে হয়, বিষয়টা ততটা সহজ ছিল না।”

“তবুও আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে আপনার স্বামী অনুতপ্ত ছিলেন নিজের কাজ নিয়ে।”

“ তবুও আমি ওকে ক্ষমা করতে পারছি না। ওকে দেখলেই আমার আগের সবকিছু মনে পড়ে যায়।”

“আপনি বলেছেন ওনাকে জে*লেও পাঠিয়েছেন। অনেকটা শা*স্তি তো আপনি সেখানেই দিয়েছেন। আমি বলছি না আপনি তাঁকে জে*লে পাঠিয়ে ভুল কাজ করেছেন। এরপর বিয়ে যেহেতু হয়েছে একবার দু’জনে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে পারতেন। পাহাড়সম পাপ নিয়ে তওবা করলে, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করলে তিনিও মাফ করে দেন। আপনিও ক্ষমা করে একটা সুযোগ দিতে পারতেন।”

ফাবিহা অস্থির হয়ে বলল,“কীভাবে আমি ক্ষ*মা করতাম?”

“উনি অন্যায় করেছেন। আপনিও যথেষ্ট শা*স্তি দিয়েছেন। বিয়েরদিন মাথাও ফাটিয়ে দিয়েছেন। উনি যখন আপনার সাথে খা*রা*প আচরণ করতেন, তখন কি আপনি চুপ থাকতেন?”

“কেন আমি চুপ থাকবো?”

হুরাইন শান্ত গলায় বলল,“শান্ত হোন আপু।”

ফাবিহা শান্ত হয়ে বসল। হুরাইন বলল,“এখন জীবন নিয়ে কী ভেবেছেন?”

“আর কোনোদিন বিয়েই করবো না। একাই কাটিয়ে দেব।”

“এটা খুবই কঠিন। যদি সন্তান থাকতো, তাহলে কিছুটা হলেও সহজ হতো। একা একা জীবন পার করতে গেলে মানুষ আপনার কাছ থেকে সুযোগ নিতে চাইবে। বে*হা*য়া পুরুষেরা বা*জে ইঙ্গিত দিতেও পিছপা হবে না।”

ফাবিহা মাথানিচু করে বলল,“জীবন নিয়ে আমার আর কোনো শখ, আহ্লাদ নেই। যত তাড়াতাড়ি ম*র*তে পারবো, তত তাড়াতাড়ি শান্তি।”

হুরাইন আলতো হেসে বলল,“মৃ*ত্যু*র পর যে শান্তি পাওয়ার আশা করছেন, তার কাজ কতটুকু এগিয়ে যাচ্ছেন?”

ফাবিহা থমকে গেল। আসলেই তো। কিছুই তো করেনি। তাহলে ম*রা*র পর শান্তির আশা করছে কীভাবে? হুরাইন আবারও হেসে বলল,“মৃ*ত্যু সহজ নয় আপু। নিজের মৃ*ত্যু কামনা না করে পরকালের জন্য কিছু করার চেষ্টা করুন। আমি যদি বলি এভাবে চুল খোলা রেখে, পর্দাহীন ভাবে চলাফেরা করাও ইভ*টিজিং এর একটা বড়ো কারণ? আমাদের এলাকায় নাম করা কিছু বখাটে আছে। যারা অন্যান্য মেয়েদের উ*ত্য*ক্ত করলেও পর্দা মেনে চলা মেয়েদের দেখলে দৃষ্টি সরিয়ে নিত। আমার রোজ যাতায়াত ছিলো তাঁদের ঘাটির সামনে দিয়ে। অথচ আমাকে বা আমার বান্ধবীদের উত্যক্ত করার সাহস তাঁরা পায়নি। আপনার ভাইয়ের কথাই বলি। তিনি কেন আমাকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন? অন্য কোনো মেয়েকে পছন্দ হলে নিশ্চয়ই প্রেমের প্রস্তাব দিতো। তাহলে আমার বাবার কাছে কেন বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো?”

ফাবিহা বলল,“কারণ সে জানে তুমি প্রেমের সম্পর্কে জড়াবে না।”

হুরাইন মৃদু হেসে বলল,“আমিও সেটাই বোঝাতে চাচ্ছি। আমি যদি পর্দাহীন চলাফেরা করতাম, উনি আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। রাজি না হলে পেছনে পড়ে থাকতেন। বারবার নিজের অনুভূতি প্রকাশ করতেন। দেখা গেল একদিন তুলে নিয়ে যাওয়ারও সাহস করতেন।”

“তুমি বলতে চাইছো শাবাবের কোনো দোষ নেই? আমার কারণেই আমি উ*ত্য*ক্ত হয়েছি?”

“না। আপনি মেয়ে বলে দো*ষ আপনার, ছেলে মানেই সা*ত*খু*ন মাফ। সেটা আমি বলিনি। চরিত্র এমন একটি দিক, যা মানুষ নিজে কন্ট্রোল করতে পারে। সবকিছু হাতের মুঠো থাকার পরও তিনি বি*প*থে চলেছেন। এখন যেহেতু সুপথে আসতে চাচ্ছেন, আপনার সুযোগ দেওয়া উচিত ছিল।”

“তুমি তাসিন ভাইকে শুদ্ধ পুরুষ পেয়ে গিয়েছো হুরাইন। তাই এসব সহজে বলে দিতে পারছো।”

হুরাইনের ঠোঁটের কোনে হাসি। ফাবিহা তো ঠিকই বলেছে। ফাবিহার দৃষ্টিতে তাসিন একেবারে শুদ্ধ পুরুষ। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ইসলামের চোখে শুদ্ধ পুরুষের সংজ্ঞা ভিন্ন।
ফাবিহা আবার বলল,“বাদ দাও এসব কথা। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। নিশিকে তো দেখছি না।”

সাজেদা বললেন,“আছে ঘরে।”

“আমার কথা শুনে তো এতক্ষণে এসে পড়ার কথা।”

“হয়তো তুই এসে দেখা না করায় রাগ করেছে তোর সাথে।”

“আমি যাচ্ছি ওর কাছে।”

ফাবিহা উঠে চলে গেল। সাজেদা এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলেন তার যাওয়ার পানে। হুরাইন তাঁর দৃষ্টি অনুসরণ করে বলল,“আপনার কি এখনো আফসোস হয় আম্মা? আমি কি সত্যিই আপনার চোখে আপনার ছেলের যোগ্য নই?”

সাজেদা দৃষ্টি ফিরিয়ে বললেন,“আল্লাহ যা চান, তা কেউ খণ্ডাতে পারে না। তবে মেয়েটার মুখের দিকে তাকালে আমার কষ্ট হয়।”

★★★

“কীরে শুয়ে আছিস কেন?”

“তুমি এসেছো কেন এখন? মন ভরেনি তোমার ভাবির সাথে কথা বলে? এখন আমার সাথেও কথা বলা লাগবে?”

ফাবিহা ভ্রু কুঁচকে বলল,“রাগ করছিস কেন?”

“তো নাচবো?”

“না, থাক। এখন বল বিয়ে এত দ্রুত কেন দিচ্ছে? খালাও কিছু বলছেন না, তুইও না।”

নিশি থতমত খেয়ে বলল,“এমনি, আমি শিওর ভাবি মা-বাবা আর ভাইয়ার মাথায় এসব ভূত চাপিয়েছে। নিজে কম বয়সে বিয়ে করছে, এখন আমাকেও পার করতে চাইছে।”

ফাবিহা তাদের পারিবারিক কথায় নাক গলানোর চেষ্টা করলো না। দুজনের অনেকদিন পর অনেক কথা হলো।

উঠে এসে হুরাইন আর সাজেদাকে বলল,“আজ আসছি।”

হুরাইন বলল,“আজ এখানে থাকবেন আপনি। কোনো বাঁধা শুনছি না।”

“না না, অন্যদিন আসবো।”

সাজেদা বললেন,“ সে কি? তুই থাকবি বলে হুরাইন রাতের রান্নার জোগাড় করে ফেলেছে।”

“মা জানলে বকবে।”

“বল বান্ধবীদের বাড়ি আছিস।”

“মা পরে জানতে পারলে…

“এক সময় তো জানবেই। আজ থাক।”

হুরাইন বলল,“মিথ্যা না বলে সত্যিটা বলেই দিন। কতদিন আর রাগ করে থাকবেন?”

“না, আমি বরং চলে যাচ্ছি।”

ফাবিহাকে জোর করেও আটকানো গেল না। সে চলে গেল।

★★★

শাবাব হাসপাতালে আর বাড়িতে যাতায়াত করছে। ভাঙা হাত নিয়েও মায়ের কী কী লাগে, সব কিনে এনে দিচ্ছে।

সুরাইয়া ছেলের একটুখানি হয়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,“তোকে আমি একটা শান্তশিষ্ট মেয়ে বিয়ে করাবো। ওই মেয়ের কথা ভুলে যা।”

শাবাব হেসে বলল,“তুমি এসব কথা কেন বলছো? আমি ওর কথা মনে করছি না। আমাদের দুজনেরই সিদ্ধান্ত ছিল এটা।”

“আমাকে শেখাচ্ছিস? তাহলে এত নাটক করে বিয়েশাদির কী দরকার ছিল?”

শাবাব চুপ করে আছে। ফাবিহাকে মনে করছে না বললেও মনে পড়ে যাচ্ছে।

★★★

ফাবিহা বাড়ি থেকে বের হলো। কয়েকজন তাকে নিয়ে কানাকানি করছে।
ফাবিহা চুপচাপ হেঁটে চলে গেল। অনেকদিন পর সুমন সামনে এসে দাঁড়ালো। তাকে দেখে হাসছে। ফাবিহা পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সুমন বলল,“শুনলাম শাবাব ছেড়ে দিয়েছে! এখন আর তার মধু ভালোলাগে না? তাহলে আমাকে সুযোগ দিয়ে দেখো।”

ফাবিহার রাগ বাড়ছে। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে হেঁটে চলে যাওয়ার চেষ্টা করল। সুমন বলল,“যাবে নাকি আজ রা*তে আমার বাসায়? শাবাবের চেয়ে আমার টাকা বেশি আছে।”

এবার পেছনে হেঁটে এলো ফাবিহা। পা থেকে জুতা খুলে ঠা*স করে একটা মা*রা*র পরই অপমানে সুমন ওর হাত চেপে ধরলো।
“*******, আজ তোর এই তেজ আমি কমিয়েই ছাড়বো। শাবাবের জন্য নয়, তোর এই তেজের কারণেই তুই আমার নজরে পড়েছিস। শাবাবের সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছে ভেবে ভাবলাম ছেড়ে দেই। শাবাব আমার কাছে এসে নত হয়েছে বলেই তোকে ছেড়েছি।
এবার আর ছাড়বো না। কারণ শাবাবের সাথে তোর আর লেনাদেনা নেই।”

ফাবিহা হাত ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলো। পেরে উঠলো না। ফরহাদ কোথা থেকে দৌড়ে এসে বলল,“কী হচ্ছে এসব? ভাইয়ের সাথে আপনার কী কথা হয়েছিল? ভাবির হাত ছাড়েন।”

সুমন বলল,“চুপচাপ এখান থেকে যা। কে তোর ভাবি? শাবাব ওকে ছেড়ে দিয়েছে। ও এখন আর তোর ভাবি নেই।”

ফারহাদ ওর হাত থেকে ফাবিহার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বলল,“ভাবি আপনি যান।”

বুক ধুকপুক করছে ফাবিহার। সুমন গর্জে উঠে আবার ফাবিহাকে খপ করে ধরতে গেল। ফরহার ঝাপটে ধরলো সুমনকে। ফাবিহাকে বলল,“যান ভাবি।”

ফাবিহা কোনো কিছু না ভেবেই ছুটে স্থান ত্যাগ করলো। আর ক্লাসের উদ্দেশ্যে না গিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে ছুটলো। তার চোখেমুখে আতঙ্ক।

সুমন আর ফারহাদের হাতাহাতি লাগলো।

বাড়ি ফিরে ঘরে একা একা কান্নায় ভেঙে পড়লো ফাবিহা। কাঁদতে কাঁদতে হঠাৎ মনে পড়লো সুমনের কথা। শাবাব তার কাছে নত হয়েছিল বলেই সে এতদিন ফাবিহাকে কিছু করেনি। শাবাব কি সত্যিই নিজের কাজে অনুতপ্ত? এতদিন পর আজ প্রথম শাবাবের ব্যাপার তাকে ভাবাচ্ছে।

#চলবে………

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_৩২
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

সাদামাটা আয়োজনে বিয়ে হয়ে গেল নিশির। ফাবিহাও বিয়েতে এসেছে।
বোরকা পরিয়ে কেন নিয়ে যাওয়া হবে? এটা নিয়েও মা আর ভাবির সাথে হম্বিতম্বি করেছে নিশি। বোরকা পরানোর পর আগে আগে ধপধপ করে হেঁটে গেল। মায়ের কাছ থেকেও বিদায় নিলো না। মেয়ের এমন উ*গ্র আচরণে সাজেদা আতঙ্কে আছেন। আবার কী গণ্ডগোল বাঁধিয়ে বসে!

ফাবিহা নিজের বিয়ের কথা মনে করলো। কেমন পরিস্থিতিতে তার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর রা*গ দমন করতে না পেরে কী করেছিল। এটা নিয়ে শাবাব কিছুই বলেনি তাকে। সবকিছুতেই শাবাবকে পাল্টা জবাব দিয়েছে সে। কিছু কিছু সময় চুপ থেকেছে। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো গোপনে।
নিশিকে বিদায় দেওয়ার পরই বাড়িটা ফাঁকা হয়ে গেল। সাজেদার বুক হাহাকার করে উঠছে মেয়ের জন্য। মনমরা হয়ে আছেন। হুরাইন তাঁর ঘাড়ে হাত রেখে বলল,“আপুকে নিয়ে চিন্তা করবেন না আম্মা। ইনশাআল্লাহ ধীরে ধীরে সবটা মানিয়ে নেবেন।”

ফাবিহা আজ থেকে গেল। মাকে সত্যটা বলেই এসেছে এখানে। তিনি আসতেই দিচ্ছিলেন না। তবুও জোরপূর্বক সে এসেছে। সাজেদা ফোন করে দাওয়াত দিয়েছেন নিজের দিকের সবাইকে। ফাবিহার মা-বাবাকেও। তাঁরা কেউই রাগ থেকে আসেননি। হয়তো-বা তিনি নিজে গিয়ে দাওয়াত দিলে আসার সম্ভাবনা ১ শতাংশ হলেও থাকতো। হুরাইন বলেছিল শাশুড়ি যেন নিজে গিয়ে সবটা মিটমাট করে আসেন। সাজেদা বলেছিলেন “ফাবিহার কথা শোনার পর থেকে নিজেকে এখন আরো অপরাধী মনে হয়। কীভাবে আমি তাদের মুখোমুখি হবো?”

রাতের খাবারের সময় হুরাইন সবাইকে ডাকলো। ফাবিহাকে ডাকতে গিয়ে দেখলো সে উদাস হয়ে বসে আছে। হুরাইন ডাকছে, অথচ সে অন্যমনষ্ক।
মৃদু ধাক্কা দিলো হুরাইন। চমক কাটতেই ফাবিহা জিজ্ঞেস করল,“কী হয়েছে?”

“খেতে ডাকছি আপু।”

“ওহ্, আসছি। তুমি যাও।”

হুরাইন দরজা পর্যন্ত গিয়েও আবার ফিরে তাকালো। জিজ্ঞেস করল,“একটা কথা জিজ্ঞেস করার ছিল আপু। জিজ্ঞেস করবো?”

“করো।”

“আপনি কী নিয়ে এতটা মনমরা হয়ে আছেন? সেদিনও আসার পর আপনার চোখমুখ মলিন দেখালো। আজও পুরো দিন একইরকম।”

ফাবিহা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে বলল,“সেটা তুমি বুঝবে না। যার জীবনে ঝড় বয়ে যায়, সেই বুঝে কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।”

হুরাইন বলল,“খেতে আসুন। খাওয়ার পর আপনার কাছে গল্প শুনবো। আপনার জীবনের গল্প। আবার আমার গল্পও শোনাবো।”

ফাবিহা অবাকতার সুরে বলল,“তোমারও গল্প আছে?”

হুরাইন কেবল মুচকি হাসলো। খাওয়াদাওয়ার পর তাসিনের কাছ থেকে এক ঘন্টার সময় নিয়ে ফাবিহার ঘরে চলে এলো হুরাইন। তাকে দেখে ফাবিহা হেসে ফেলে বলল,“ছুটি পেয়েছো তবে।”

“হ্যাঁ।”

“বসো।”

হুরাইন কম্বলের নিচে পা ঢুকিয়ে বসে পড়লো। ফাবিহা বলল,“আউচ, তোমার পা দুটো কী বরফ।”

হুরাইন হেসে ফেললো। বলল,“এবার সত্যি সত্যি বলবেন আপু। কেন এত আপসেট থাকেন আপনি? কাউকে এমন দেখতে আমার ভালোলাগে না।”

ফাবিহা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো হুরাইনের মুখের দিকে। মলিন হেসে বলল,“জানো আমি ভাবতাম সুন্দরী হলেই জীবনে আর কিছুর প্রয়োজন হয় না। সুখ আপনা-আপনি এসে ধরা দেয়। কিন্তু ধীরে ধীরে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হলো। আমি মানসিকভাবে দুর্বল হতে থাকলাম। কিছুতেই আর আগের জায়গায় ফিরে যেতে পারছি না। প্রথমে বিয়ে ভাঙলো। এরমাঝে শাবাবের যন্ত্রণা, বিরক্ত করা থেমে নেই। আমিও অতিষ্ঠ হয়ে ওকে আ*ঘা*ত করেছি। কথা দিয়ে বা হাত দিয়ে। ওকে দমনের নানা চেষ্টা করে ওকে থা*না*য় পাঠানোর পর মনে হলো বাঁচতে পেরেছি। এরপর আমাকে দেখতে এলো। সব ঠিকঠাক থাকার পরও বিয়ে ভেঙে গেল। তারপর জানতে পারলাম শাবাব রয়েছে এর পেছনে। এরপর ও আমার সবগুলো বিয়ে ভাঙে। কিছুদিনের জন্য আমি ফুফুর কাছে চলে গেলাম। সেখান থেকে আসার পর ও যা করেছে, এরপর তো বিয়েই হয়ে গেল। ও আমার বাবাকেও অসম্মান করেছে। ওর বিয়ে ভাঙার কারণে এলাকায় আমি টিকতে পারছিলাম না। লোকে আমায় দেখলেই নানা কথা বলে। বাবা বের হলেই বাবাকে বলে। বিয়ের দু’দিনের মাথায় শাবাবের কী হলো জানি না। আমাকে সরি বলল। আমি শুধু চেয়েছিলাম সম্পর্কটা থেকে মুক্ত হতে। আমার কথা ও মেনেও নিলো। পরদিনই পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে আমাকে যেতে দিলো।
ওর আর ওর বাবার এক্সি*ডেন্টের পর আমি যখন যাই, তখন জানতে পারি ওর বাবা সেদিন আমার কারণেই ওকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। যেহেতু আমাদের শুধু ধর্মীয় ভাবেই বিয়ে হয়েছিল, তাই আর ডিভোর্স পেপার নিয়ে আমরা কেউ মাথা ঘামাইনি। এক্সি*ডেন্টের দিন ওদের আত্মীয়স্বজনরা আমাকে ওখানে থাকার জন্য চাপাচাপি করলেন। তারপর আমিও থেকে গেলাম। ওদের পাশে থাকা হলেও আমার মূল উদ্দেশ্য ছিল শাবাবের মুখ দিয়ে তা*লা*ক শব্দটা বের করা। দুদিন পর ওকে আমি ওকে চাপ দিয়ে ওর বাবা-মা আর আমার বাবার সামনে তা*লা*ক নিয়েছিলাম। এরপর বাড়ি আসলাম। শাবাব আমাকে ছাড় দিলেও সমাজ দিলো না। তারা আগের চেয়ে আরো হিং*স্র হয়ে উঠলো। আরেকটা কথা তো বলতেই ভুলে গেলাম। ভার্সিটিতে শাবাবের শ*ত্রু পক্ষের আরেকজন আছে। যে শাবাবের চেয়ে খা*রা*প। সে আমাকে বিরক্ত করার পাশাপাশি দুইবার রে*প করার চেষ্টায় নেমেছিল। প্রথমবার শাবাবের বাবা আমাকে বাঁচিয়েন। আর সেদিন শাবাবের সাথের একটা ছেলে। তাহলে বলো, এতকিছুর পর আমি কীভাবে স্বাভাবিক থাকি? কীভাবে হাসিমুখে নিয়ে ঘুরি? যেখানে আমার জীবনের ৯০ শতাংশ সমস্যার কারণ শাবাব, সেখানে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে কীভাবে সংসার করি?”

হুরাইন মনোযোগ দিয়ে শুনে বলল,“আপনার সাথে যা হয়েছে, তা সত্যিই অনেক বেদনাদায়ক আর লোমহর্ষক। এখনো আপনি সব সমস্যা কাটিয়ে উঠেননি। সমাজের, তারপর সুমন নাকি কী যেন বললেন! সেই লোকটা তো একেবারে ডেঞ্জা*রাস। আপনি তো সেদিন এতটা বিস্তারিত কিছু বলেননি। আমার মনে হয় আপনার উচিত হবে এখন ভার্সিটিতে না যাওয়া।”

“যাচ্ছি না ওই ঘটনার পর।”

“এই যে এত এত সমস্যা, সব দূর হয়ে যাবে। আল্লাহকে ডাকুন আপু। নামাজ পড়ুন, কুরআন পড়ুন, পর্দা মেনে চলুন। জীবন থেকে সব সমস্যা এমনভাবে দূর হয়ে যাবে, আপনি টেরও পাবেন না। আল্লাহর কাছে সব আছে। শুধু আমরা মানুষেরা তাঁর কাছে চাই না। আমাদের বিয়ের একমাস পেরোনোর পর আমি নিজের জীবনে, সংসার জীবনে অশান্তি দেখলাম। আমার পক্ষে সংসারে মন দেওয়া সম্ভব হচ্ছিলো না। আমার স্বামীর চলাফেরা কিছুতেই আমার সাথে মিলছিলো না। পরনারীর সাথে কথা বলা যেখানে জায়েজ নেই, সেখানে তিনি মেয়েদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতেন। নামাজ নেই, হা*রা*মে লিপ্ত থাকতেন। আমি শুধু আল্লাহর কাছে কেঁদেছি। প্রয়োজনে ওনার সাথে কঠোর হয়েছি। তারপর একদিন আল্লাহর রহমতে তিনি হেদায়াতের পথে হাঁটলেন। যখন দেখলাম তিনি অনুতপ্ত, সঠিক পথে আসতে চায় তখন আমিও তাকে একটা সুযোগ দিলাম। এখন পর্যন্ত সে দ্বীনের পথে হাঁটার চেষ্টা করছে। যদি কোনোদিন আবার সে এই পথ থেকে সরে যায়, আমি তাকে আবার রবের দিকে ফেরানোর চেষ্টা করবো। আমরা চাইলেই কাউকে হেদায়াত দিতে পারি না। আল্লাহ যাকে হেদায়াত দেন, তাকে সুযোগ দেওয়া উচিত। যদি সে সুযোগ না পেয়ে পূর্বের পথে ফিরে যায়, তখন বড়ো গলা করে সে কারণ দেখাতে পারবে “আমি ফেরার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কেউ আমাকে সুযোগ দেয়নি”।
হয়তো আমার কথাগুলো আপনার খা*রা*প লাগছে! আপনি ভাবছেন আপনি পর্দা মেনে চলছেন না বলে আমি ভাবছি আপনি খা*রা*প মেয়ে। না, আপনি খা*রা*প মেয়ে নন। এটা সাময়িক একটা ভুল আপনার। নিজেকে পরিবর্তনের এখনো সুযোগ আছ। আপনি খুবই দামী। তাই নিজেকে আবৃত রাখুন।”

ফাবিহা চুপ করে আছে। তাসিনের মত পুরুষকে পেয়েও হুরাইন সংসারে সন্তুষ্ট ছিল না শুনে অবাক হলো সে। হুরাইন বলল,“আপনাদের কি তিন তা*লা*ক হয়ে গিয়েছে?”

“মানে?”
বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ফাবিহা। হুরাইন বলল,“শরিয়া মোতাবেক তিন তুহুরে তিন তা*লা*ক দিলেই সম্পূর্ণ বিবাহবিচ্ছেদ হয়। যদি এক তা*লা*ক বা দুই তা*লা*ক হয় তবে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে স্বামী-স্ত্রী দুজন আবার এক হতে পারেন। এটা দুজনের মনোমালিন্য দূর করার একটা সুযোগ। দুইবার এই সুযোগ পাওয়া গেলেও তৃতীয়বার আর কোনো সুযোগ থাকে না। আপনার জন্য সহজ করে বলি। যদি তিনবার তা*লা*ক বলা হয়ে যায়, তাহলে আর সুযোগ থাকবে না।”

ফাবিহা চিন্তিত স্বরে বলল,“শাবাব তো এভাবে কিছুই বলেনি, তাহলে কি তিন তা*লা*ক হয়নি?”

“তাহলে আপনার স্বামী চাইলেই তিনমাসের মধ্যে আপনাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। আর আমি বলি কি, সমাজ আর ওই ছেলেটার আ*ত*ঙ্ক থেকে বাঁচতে হলেও আপনার একবার আপনার স্বামীকে সুযোগ দেওয়া উচিত।”

ফাবিহা চিন্তিত স্বরে বসে রইল। অনেকক্ষণ হয়ে যাওয়ায় হুরাইন ঘরে চলে গেল। ফাবিহা ঘুরেফিরে একটা বিষয় নিয়েই পড়ে রইলো। চিন্তা বেড়ে গেল তার। ঘুমাতে হলো গভীর রাত।
ফজরের সময় চোখের পাতা ভারী হয়ে আছে। গভীর নিদ্রায় ডুবে আছে সে। কানের কাছে স্পষ্ট কারো ডাক ভেসে আসছে।
হুরাইন ফাবিহাকে ফজরের জন্য ডাকছে। অনেকক্ষণ থম ধরে শুয়ে থাকার পরও হুরাইন যাচ্ছে না। নাছোড়বান্দার মত ডেকেই যাচ্ছে। ফাবিহা বিরক্ত হয়ে বলল,“এখন যাও, কাল থেকে পড়বো।”

হুরাইন বলল,“এই মুহূর্তে ম*রে গেলে পরের ওয়াক্ত পড়ার সময় পাবেন না। কাল তো বহুদূর। এই অবস্থায় ম*র*তে চান আপনি?”

ফাবিহার মাথায় বিদ্যুৎ খেলে গেল। ভয় ঢুকলো মনে। আর শুয়ে থাকলো না। ঝট করে কম্বল সরিয়ে উঠে পড়লো। হুরাইন চমৎকার হাসলো।
ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ওজু করতে কষ্ট হয়েছে। তবুও ভালোলাগছে। আজ অনভিজ্ঞ দু’হাত তুললো আল্লাহর কাছে। তিনিই সঠিক পথ দেখাবেন।

★★★

বিয়ের দুদিন পর বাবার বাড়ি এসেই নিশির কান্নাকাটি। ওখানের কিছুই তার ভালোলাগছে না। সকালে ঘুমাতে পারে না। খেতে গেলেও সমস্যা। তারা চার জা মিলে এক থালায় খাবার খায়। এতে ওর ঘৃ*ণা হয়। সব অসহ্য লাগে। কীভাবে খায়? যদিও এটা বাধ্যতামূলক না। ও চাইলেই আলাদা খেতে পারে। কিন্তু নতুন বউ বলে কিছু বলতেও পারে না।

ফাবিহা এখন নামাজ পড়ার চেষ্টা করে। পাঁচ ওয়াক্ত পড়তে না পারলেও প্রতিদিন পড়ার চেষ্টা করে। অভ্যাস ধরে রাখার চেষ্টা করে। দুনিয়ার সব চিন্তাভাবনা একপাশে রেখে যখন আল্লাহকে ডাকে, তখন মনে হয় কোনো অশান্তি তার জীবনে নেই। মনে শান্তি অনুভব হয়।

★★★

দেখতে দেখতে দেড়মাস হয়ে গেলেও শাবাবের কাছে সময়টা অনেক বেশিই মনে হচ্ছে। হাতের ব্যান্ডেজ খোলা হয়েছে। বাসায় বাবা অসুস্থ। সে অফিস সামলাচ্ছে। মাঝখানে সবকিছু তাদের অসুস্থতার কারণে থেমে ছিল। ফরহাদকে কল দিল।
“ফাবিহা কি ভার্সিটিতে আসে?”

“না ভাই। সেদিনের পর থেকে আর আসেনি।”

শাবাব ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়লো।
“ঠিক আছে। এখন না আসলেই ভালো। যদি কোনো সমস্যা হয় আমাকে জানাবি। আমার কারণেই তো ওর জীবনে এত সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।”

ফরহাদ ভীত গলায় বলল,“ভাই, আপনি মনে হয় ভাবিরে সত্যি ভালোবাইসা ফালাইছেন!”

শাবাব চোয়াল শক্ত করে বলল,“আমি এসব করছি দায় থেকে। যেহেতু আমার জন্যই ও সুমনের নজরে পড়েছে।”

ফরহাদ নিভে গিয়ে বলল,“আপনি ওরে কিছু করছেন না কেন?”

“তখন তো অসুস্থ ছিলাম। আর এখন তো ওকে ধরার সুযোগই পাচ্ছি না। একবার ধরতে পারলে মে*রে*ই ফেলবো।”
বলতে গিয়ে কপালের রগ দপদপ করে উঠলো শাবাবের। অতঃপর নিজেকে শান্ত করে ইতস্তত করে বলল,“একটা কাজ করতে পারবি ফরহাদ?”

“আপনি শুধু বলেন ভাই।”

শাবাব ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,“একবার খোঁজ নিয়ে দেখবি ফাবিহার কি বিয়ে হয়ে গিয়েছে? মানে আমার জন্য তো বারবার ওর বিয়ে ভেঙে গিয়েছে। নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।”

ফরহাদ মিনমিন করে বলল,“ভাই আমার মনে হয় আপনি গিয়ে নিজ চোখে দেখে এলে ভালো হবে। ভাবি যদি নতুন সংসারে সুখী থাকে, তাহলে আপনার অপরাধবোধও কিছুটা কমবে।”

শাবাব অশান্ত গলায় বলল,“না থাক।”

না থাক বলেও শাবাব রাতে গাড়ি নিয়ে বের হলো। মন উশখুশ করছে। ফাবিহা কি সত্যি সত্যি বিয়ে করে নিয়েছে? ফাবিহার বাড়ির রাস্তায় এসে দাঁড়ানোর সাহস করলো না। আবারও ফিরে গেল। যদি সত্যি ফাবিহা বিয়ে করে থাকে আর সাথে যদি তার হাজবেন্ড থাকে? এটা অন্তত মন সইবে না।

#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে