এক টুকরো আলো পর্ব-২৯+৩০

0
465

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_২৯
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

সকাল থেকে পেটে যন্ত্রণা হচ্ছে। সাজেদাকে জানায়নি হুরাইন। ব্যথা তেমন তীব্র নয়। তবুও ক্ষণে ক্ষণে চোখমুখ মলিন হয়ে বিষিয়ে ওঠে। সাজেদা জহুরি নজরে পরোখ করে জিজ্ঞেস করলেন,“কী হয়েছে তোমার?”

“পেট ব্যথা আম্মা।”

সাজেদা ধমকে উঠে বললেন,“আমাকে জানাওনি কেন? পরে দোষারোপ করার জন্য?”

হুরাইন বলল,“ব্যথা সহ্য করার মত। সেজন্যই জানাইনি আম্মা।”

“তুমি এসবের কী বুঝো? র*ক্ত*ক্ষ*র*ণ হয়?”

“না।”

“যাও বোরকা পরো গিয়ে।”

হুরাইন জিজ্ঞেস করলো,“কেন আম্মা?”

“ডাক্তারের কাছে যাবো।”

“কিন্তু আম্মা…

সাজেদা বিরক্ত হয়ে বললেন,“কথা বাড়িয়ো না। সব সময় তুমি নিজের কথা উপরে রাখার চেষ্টা করো।”

হুরাইন মিনমিন করে বলল,“আম্মা রান্না?”

“রান্না বাকিটা নিশি এসে করে নেবে।”

রান্না শেষের পথে। নিশিরও আসার সময় হয়েছে। তাই সাজেদা তাড়া দিলেন হুরাইনকে। ঝটপট বোরকা পরে বেরিয়ে এসে শাশুড়িকেও তৈরি দেখলো হুরাইন।

ঘরে ঢুকলো নিশি। তাকে রান্না নামানোর কথা বলে হুরাইনকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন সাজেদা। দুজন সিএনজিতে উঠে বসলেন। তাসিনকে কল দিলেন তিনি।

“আসসালামু আলাইকুম মা। বলো।”

“আমার বিকাশে কিছু টাকা পাঠা। হুরাইনকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।”

বিচলিত স্বর শোনা গেল তাসিনের।
“কী হয়েছে মা? সব ঠিক আছে? কোন ডাক্তারের কাছে নিচ্ছো? আমি আসছি।”

ধমক দিলেন সাজেদা।
“তোকে টাকা পাঠাতে বলেছি, টাকা পাঠা। বেশি বুঝিস না।”

হুরাইন পাশ থেকে মা-ছেলের ফোনালাপ শুনে হাসছে মুখ টিপে।
তাসিন নরম হয়ে এলো।
“পাঠাচ্ছি।”

কিছুদূর গিয়ে সিএনজি থেমে গেল। একজন ছেলে যাত্রী পেছনে হুরাইনের পাশে উঠতে নিলো। সাজেদা বাঁধা দিলেন।
“আরে আপনি কোথায় উঠছেন?”

ড্রাইভারকে বললেন,“আপনি লোক নিচ্ছেন কেন পেছনে? আমরা পুরো ভাড়া দেব।”

ড্রাইভার বললেন,“আপনি তো বলেননি আগে।”

“আমি ওঠার সময়ই বলেছি। আপনি খেয়াল করেননি।”

ড্রাইভার সামনে এগিয়ে গেল। হুরাইন স্বস্তির শ্বাস নিলো।
ডাক্তার দেখিয়ে রিপোর্টের জন্য বউ-শাশুড়ি বসে রইল। তাসিন কয়েকবার কল দিয়ে খবর নিয়েছে।
রিপোর্টে সব ঠিকঠাক আছে শুনে সাজেদা হাঁপ ছাড়লেন।
যাওয়ার পথে হুরাইনকে জিজ্ঞেস করলেন,“কিছু খেতে মন চায়? কী খাবে?”

“কিছু খাবো না আম্মা।”

“আরে বলো। এই সময় অনেককিছুই খেতে মন চায়।”

হুরাইন কাচুমাচু করে বলল,“চিপস খেতে মন চায় আম্মা।”

সাজেদা দ্বিরুক্তি না করে হুরাইনের জন্য অনেকগুলো চিপসের প্যাকেট কিনে নিলেন। সিএনজিতে উঠে বসতেই হুরাইন বলল, “আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে আপনি বোধহয় তাকে খুব আদর করতেন, তাই না আম্মা? ফাবিহা আপু থাকলে হয়তো আরো বেশি আদর করতেন।”

সাজেদা চুপ হয়ে গেলেন। হুরাইন আবারও বলল,“আমার কি দোষ আম্মা?”

সাজেদা মুখ খুললেন। থমথমে গলায় বললেন,“দোষ আমার কপালের।”

হুরাইন নিচু স্বরে বলল,“আমি ম*রে গেলে আপনার ছেলে যখন আরেকটা বউ নিয়ে আসবে, তাকে নিশ্চয়ই আদর করবেন। তার তো কোনো দোষ থাকবে না।”

“আল্লাহ মাফ করুন। কী আবোলতাবোল কথা বলছো?”

“মৃ*ত্যু তো যেকোনো সময়ই হতে পারে আম্মা।”

“গাড়িতে বেশি কথা বলা ভালো না। চুপচাপ বসে থাকো।”

হুরাইন চুপ করে গেল। সাজেদা যে নিজের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইছেন সেটা টের পেয়েই ভালোলাগছে তার। এই যে তাকে নিয়ে আজ এতটা উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করলেন, মায়া না থাকলে কি এতটুকু কেউ করে?

বাড়ি আসতেই নিশিকে গাল ফুলিয়ে থাকতে দেখা গেল। তার মেজাজ খা*রা*প হয়ে আছে। চুলার উপর রান্না বসানো ছিল। সেগুলো নামানো, রান্নাঘর পরিষ্কার, আরো কিছু কাজও তাকে করতে হয়েছে। সাজেদার সাথে কথা বলছে থমথমে গলায়। সাজেদা জিজ্ঞেস করলেন,
“কী হয়েছে?”

“কিছু না।”

“কাজ শিখতে হবে না? বিয়ে দিলে কী করবি? তোর ভাবি কি তোর চেয়ে বড়ো? তারও তো বিয়ে হয়েছে। এটুকু কাজেই এত গাল ফোলানো।”

“আমি এখন বিয়ে করছি না যে আমাকে সবকিছু শিখতে হবে।”
ধপধপ করে পা ফেলে চলে গেল সে। সাজেদা তাকিয়ে রইলেন কেবল।

হুরাইন কয়েক প্যাকেট চিপস নিয়ে গেল নিশির জন্য। নিশি রাখলো না। বলল,“আমি প্রেগন্যান্ট না। আপনি খান।”

হুরাইনকে সে যেহেতু পছন্দ করে না, তার দেওয়া জিনিস নেবে কেন? হুরাইন চিপস নিয়ে শাশুড়ির ঘরে বসলো। এক প্যাকেট খুলে শাশুড়ির দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল,“আম্মা খান।”

সাজেদা বললেন,“তুমি খাও। আমি বাচ্চা না।”

হুরাইন বলল,“শুধু বাচ্চাদেরই এসব খেতে ইচ্ছে করে? বড়োদেরও তো খেতে ইচ্ছে করে। খেয়ে দেখুন।”

হুরাইনের জোরাজোরিতে সাজেদা চিপস মুখে দিলেন। ভালোলাগায় বললেন,“বেশ ভালোই তো লাগছে।”

তারপর দুজনে খেতে খেতে কথাবার্তা বলল। বলতে বলতে সাজেদা হেসে উঠছেন। আগে এভাবে সাজেদা হুরাইনের সাথে কথা বলেননি। আজ মনে হচ্ছে দুজনের সম্পর্ক খুব সহজ। হুরাইনকে তাকিয়ে থাকতে দেখে থতমত খেয়ে হাসি বন্ধ করে ফেললেন সাজেদা।

তাসিন অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ একটু জলদি করে ফিরলো। হুরাইন ইসলামিক বই পড়ছে। তাসিন হাতমুখ ধুয়ে পাশে বসে জিজ্ঞেস করল,“এখন পেট ব্যথা করে?”

বইয়ে চোখ রেখে হুরাইন জবাব দিলো,“না।”

“ঔষধ নিয়েছো দুপুরে?”

“হুম।”

“বই রাখো। আমার দিকে তাকাও।”

হুরাইন বই রেখে তাসিনের দিকে তাকালো। পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখে বলল,“তাকিয়েছি। কিছুই তো দেখতে পাচ্ছি না।”

তাসিন রগঢ় করে বলল,“কী দেখতে চাইছো? শার্ট খুলতে হবে?”

হুরাইন চোখমুখ কুঁচকে বলল,“মোটেই না।”

তাসিন পেছনে এসে বসলো। হুরাইনের ঘাড়ে ঠেকলো তার চিবুক। হুরাইনের হাত থেমে গেল। স্থির হয়ে গেল সে। মুহূর্তের মাঝে চুম্বকের স্পর্শের মত ঠোঁটের ছোঁয়া লাগলো। সামান্য কেঁপে উঠলো সে। তাসিন সরে আসলো দ্রুত। নিচে চোখ যেতেই দেখতে পেল চিপসের প্যাকেট পড়ে আছে। প্যাকেট তুলতে তুলতে জিজ্ঞেস করলো,“এগুলো কে ফেলেছে?”

হুরাইন জবাব দিল,“আমি।”

“এসব খাওয়া ভালো না। মুখের রুচি নষ্ট হয়। কে এনে দিয়েছে?”

হুরাইন নিষ্পাপ চাহনি দিয়ে বলল,“আম্মা কিনে দিয়েছে?”

তাসিন অবিশ্বাস্য চোখে তাকালো। মাথা কাত করে চোখের ইশারায় জানতে চাইলো,“সত্যি?”

“হুঁ।”

“বাহ্! শাশুড়িকে দেখছি ইমপ্রেস করে ফেলেছেন।”

হুরাইন ভাব নিয়ে বলল,“আমার সাথে থাকলে কেউ আমাকে আদর না করে থাকতেই পারবে না।”

তাসিন হাসলো। দুষ্টু হেসে বলল,“আমিও।”

হুরাইন লজ্জা পেয়ে কথা কাটানোর জন্য শাসনের সুরে বলল,“আপনি পড়া শেষ করেছেন?”

তাসিন চোখমুখ কুঁচকে বলল,“প্লিজ ম্যাম আমি এখন আপনার ছাত্র নই। এই মুহূর্তে আমি আপনার স্বামী।”

হুরাইন নাটকের সুরে বলল,“ম্যামকে বিয়ে করতে লজ্জা হলো না? আমার তো শুনেই লজ্জা পাচ্ছে।”

তাসিন অবাক হয়েও ক্ষণিকের মাঝে হেসে বলল,“আচ্ছা? লজ্জা হচ্ছে আপনার? আসলে ম্যাম এত সুন্দরী যে আমি বিয়ে না করে পারলাম না। এত সুন্দর করে পড়ান, আমার শুধু ম্যামের কণ্ঠ শুনে যেতেই ইচ্ছে করে। আমার ম্যামও আবার একটু দুষ্টু আছেন। তিনি আবার যখন-তখন চুমু-টুমু দিয়ে বসেন, চেয়ে বসেন।”

হুরাইন অন্যদিকে ফিরে মুখ লুকিয়ে হাসছে। তাসিন বলল,“এদিকে ফিরে হাসুন। আমিও একটু দেখি।”

হুরাইন হাসি বন্ধ করে মুখ কঠিন করে বলল,“আজ জোহরের নামাজ পড়েছেন?”

“জি পড়েছি।”

“কয়জন মেয়ের দিকে তাকিয়েছেন?”

তাসিন ভেবে বলল,“তাকিয়েছি একজনের দিকে। আসলে বারবার চোখ চলে যায়।”

হুরাইনের হাসিখুশি চেহারায় আঁধার নামলো। চোখমুখ শক্ত করে উঠে গেল। ট্রলি খুঁজে নিজের জামাকাপড় বের করছে। সে চলে যাবে বাপের বাড়ি।
তাসিন বুকে আড়াআড়ি দুইহাত গুঁজে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। হুরাইন দ্রুত হাত চালাচ্ছে। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ভয়ঙ্কর রেগে আছে বোঝাই যাচ্ছে। যতক্ষণ না হুরাইনের জামাকাপড় গোছানো হলো ততক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইল তাসিন। বোরকা হাতে নিতেই তাসিন শব্দ করে হেসে ফেললো। হাত থেমে গেল হুরাইনের। তাসিন মুখে হাত চেপে হাসি আড়াল করে বলল,“নিজের বউয়ের দিকে তাকালেও যদি কেউ এভাবে রাগ করে, তাহলে আর কী করার আছে? এভাবেই আমার মত নিরীহ পুরুষেরা অত্যা*চারিত হচ্ছে।”

হুরাইনের রাগ কোথায় যেন পালালো। বোরকা রেখে জামাকাপড় সব আগের জায়গায় রাখতে যাচ্ছিল। তাসিন তাকে রাগানোর জন্য বলল,“বোরকা পরছো না কেন? চলো তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। তুমি না চলে যাবে?”

চোখ পাকিয়ে তাকাল হুরাইন। তাসিন নির্দোষের মত বলল,“আশ্চর্য! আমি কী করলাম?”

হঠাৎ হুরাইন এসে তাকে জড়িয়ে ধরলো। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল তাসিন। বউয়ের মতিগতি সে বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েটা কখন কী করে বসে। মাত্রই তো চোখ রাঙালো। এখন আবার জড়িয়ে ধরেছে।

ঘুমাতে গিয়ে বরফ শীতল হাত দুটো তাসিনের টি-শার্টের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো হুরাইন। তাসিন নির্লিপ্ত রইল। ভ্রু কুঁচকে গেল হুরাইনের। সে তড়িৎ উঠে বসলো। গ্লাসের পানি হাতে ঢেলে হাত ভিজিয়ে আবার কম্বলের নিচে ঢুকলো। ঠাণ্ডা হাত দুটো আবারও টিশার্টের নিচে রাখতে গেলে তাসিন হাত ধরে ফেললো। হুরাইন এক হাত ছাড়িয়ে তাসিনের গলায় চেপে ধরলো। শক্ত করে হাত দুটো নিজের গরম মুঠোয় নিয়ে হুরাইনকে বলল,“ঘুমাও।”

হুরাইন মজা করে বলল,“না ঘুমালে কী করবেন? আরেকটা বিয়ে দিয়ে দেবেন?”

তাসিনের ধারালো নজর দেখে হুরাইন কম্বলের নিচে মুখ লুকিয়ে সরল হয়ে গেল। আর বিন্দুমাত্র নড়চড় করলো না। তা দেখে মৃদু হাসলো তাসিন। মনে মনে বলল,“নিজের সাথেই আরেকবার বিয়ে দেবো।”

★★★

সুরাইয়া হাসপাতালে যাচ্ছে। সাথে শাবাবও বাবাকে দেখার জন্য যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলো। সে এমনিতেই খুঁড়িয়ে হাঁটে, হাত ভাঙা। সুরাইয়া বললেন,“তোর যাওয়ার দরকার নেই। নিয়াজ নিয়ে যাবে আমাকে।”

শাবাব বারন শুনলো না। জামাকাপড় হাতে নিতেই ফাবিহা বলল,“শাবাব আমিও আঙ্কেলকে দেখতে যাব তোমাদের সাথে।”

শাবাব ছোটো করে বলল,“চলো।”

ফাবিহাকে শাবাবের সাথে বের হতে দেখে শাবাবের খালা প্রশ্নাত্মক চোখে তাকালেন। শাবাব বলল,“ফাবিহা আমাদের সাথে যাবে।”

শাবাবের খালা বললেন,“এবার যদি সুমতি হয় তোর বউয়ের।”

ফাবিহা চুপ করে রইল। সকালে নাস্তা বানাতে গিয়েও মহিলা তাকে কথা শুনিয়েছেন। তখনও চুপ করে ছিল। শাবাব খালাকে বলল,“আমাদের দুজনের সিদ্ধান্ত ছিল এটা। আর এখন এসব কথা বাদ দাও খালা।”

বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফাবিহাকে বলল,“তুমি খালার কথায় কিছু মনে কোরো না। দুজনেই মেহমান। দুদিন থেকেই চলে যাবে।”

ফাবিহা বলল,“সমস্যা নেই। তোমার কি হাঁটতে সমস্যা হচ্ছে?”

সমস্যা তো হচ্ছেই। শাবাব মুখে বলল,“না ঠিক আছি আমি।”

তারপর দুজনই নিরব রইল। শাবাব হুট করে ডেকে উঠলো,“ফাবিহা।”

“হুঁ?”

ফাবিহা চোখ তুলে তাকালেও শাবাব চোখে চোখ রাখতে পারলো না। সামনের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলল,“আমাকে ক্ষমা করে দিও। এই অনুরোধটা রেখো!”

ফাবিহা কিছুই বলল না। সবার সাথে গাড়িতে চড়ে বসলো। শাবাব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
সুরাইয়াকে হাসপাতালে রেখে ফিরোজ আলমকে দেখে ফাবিহা আর শাবাব বাড়ি পথে রওনা হলো।

ফাবিহা বলল,“শাবাব একটা প্রশ্ন করি?”

“করো।”

“ধরো আজ থেকে ২০/২৫ বছর পর তোমার মেয়েকে প্রতিনিয়ত কোনো ছেলে উত্যক্ত করছে। মেয়েটা শান্তিতে চলাফেরা করতে পারছে না। যতটা নীচ ব্যবহার করা যায়, ততটাই নীচ ব্যবহার তোমার মেয়ের সাথে করছে। ছেলেটা পরবর্তীতে তোমার মেয়ের কাছে ক্ষমা চাইলো। তুমি বাবা হিসেবে মেয়েকে কী পরামর্শ দেবে?”

শাবাব থমকে গেল। জবাব দিতে পারলো না। সে কখনোই মেয়েকে বলতো না ক্ষমা করে দিতে। বরং ছেলেটার বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে ধরতো। ফাবিহা জবাব চাইলো।
“শাবাব?”

শাবাব অস্থির গলায় বলল,“আমি কখনোই তাকে ক্ষমা করার পরামর্শ দিতাম না।”

ফাবিহা হাসলো। বলল,“তাহলে ভেবে দেখো, আমি তো ভুক্তভোগী। আমি কীভাবে ক্ষমা করে দেই, বলো?
আমি এসব কালো অধ্যায় জীবন থেকে মুছে ফেলতে চাই। ভুলে যেতে চাই সব। নিজের জীবন গুছিয়ে নিতে চাই। কিন্তু কেউ আমাকে শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না। সমাজ, তোমার দেওয়া আঘাত, ভার্সিটি গেলে সুমন, আমি শান্তি পাই না শাবাব। নিজেকে মানসিক রোগী মনে হয়। আমি কীভাবে বেঁচে আছি আমি জানি।”

ফাবিহার চোখে পানি টলমল করছে। তার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলো না শাবাব। তীব্র অপরাধবোধ, লজ্জায় দৃষ্টি বারবার নত হয়ে আসে। ফাবিহার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে দেখলে মনে হয়, সে ক্ষমার অযোগ্য।

দুজনের আর কথা হলো না। খানিকক্ষণ পর ফাবিহা কিছু মনে পড়ার মত করে বলল,“আমার জামা কিনতে হবে। তোমাদের বাড়িতে আমার কোনো জামাকাপড় নেই।”

শাবাব ওকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেল। ফাবিহা দুটো জামা কিনে নিলো। শাবাব দাম দিতে গেলে ফাবিহা বাঁধা দিলো।
“আমার কাছে টাকা আছে। তোমার দিতে হবে না।”

নিজেই দাম চুকিয়ে আগে আগে বেরিয়ে গেল। শাবাব ধীর পায়ে এগিয়ে এলো পেছন পেছন।

#চলবে……

#এক_টুকরো_আলো
#পর্ব_৩০
#জিন্নাত_চৌধুরী_হাবিবা

নিশিকে কয়েকবার খেতে ডাকলো হুরাইন। আসছি বলেও বসে রইল সে। সাজেদা বিরক্ত হয়ে নিজেই মেয়ের ঘরের দিকে গেলেন। কম্বলের নিচে মাথা মুড়ে শুয়ে আছে নিশি। নড়াচড়া উপর দিয়েই টের পেলেন সাজেদা। চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই কম্বল সরিয়ে ফেললেন। অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখে চোখ চড়কগাছ তাঁর। ধড়ফড়িয়ে উঠলো নিশি। কানে হেডফোন থাকায় কারো উপস্থিতি টের পায়নি। হাত-পা থরথর করে কাঁপছে। কষিয়ে মেয়ের গালে চ*ড় বসিয়ে দিলেন সাজেদা। লজ্জায় কিছু বলার মত মুখ রইল না নিশির। সাজেদা অসম্ভব রেগেছেন। আঙ্গুল তুলে চোখ রাঙিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বললেন,“তোর খাওয়া বন্ধ। এই চোখদুটো আমাকে আর দেখাবি না।”

সবাই সন্দেহ করবেন বলে সাজেদা চলে গেলেন দ্রুত। তাসিনের বাবা জিজ্ঞেস করলেন,“কোথায় নিশি?”

সাজেদা বললেন,“ও এখন খাবে না। তোমরা খেয়ে উঠে যাও।”

তাসিন বলল,“সময়ের খাবার সময়ে খাবে না, খাবে কখন? এজন্যই তো এমন শুকিয়ে যাচ্ছে দিনদিন।”

সাজেদা স্বাভাবিকভাবে বললেন,“যখন খিদে পাবে, তখন খাবে। তোরা খা।”

তাসিনের বাবা বললেন,“মেয়েটা এখন কথা শুনতে চায় না। বউমা কতবার ডাকলো।”

দুপুর থেকেই সাজেদাকে চিন্তিত দেখাচ্ছে।
হুরাইন আসর নামাজ পড়ে শাশুড়ির ঘরে গেল। কেমন থম ধরে বসে আছেন তিনি। কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছেন মনে হচ্ছে। চিন্তায় এতটাই মশগুল যে হুরাইনের উপস্থিতি টের পেলেন না। হুরাইন ডাকলো,“আম্মা।”

সাজেদা সাড়া দিলেন না। ফের ডাকলো হুরাইন।
“আম্মা শুনছেন?”

ঘোর কাটার মত চমকে জবাব দিলেন সাজেদা।
“হুঁ?”

“আসর নামাজ পড়েছেন?”

“না, এই তো পড়ব।”

“সময় চলে যাচ্ছে। নামাজ পড়ে ফেলুন।”

“যাচ্ছি” বলে সাজেদা অজু করতে গেলেন। জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আসর নামাজ পড়ে নিলেন। হুরাইন জিজ্ঞেস করল,“আপনি কি কিছু নিয়ে চিন্তিত আম্মা?”

“না তো।”

হুরাইন বুঝলো সাজেদা কিছু বলতে চাইছেন না। তাই সে আর ঘাটালো না। সাজেদা এক এক করে সব হিসাব করতে লাগলেন। ছয়মাস যাবত নিশি যতক্ষণ বাড়ি থাকে নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখে। দিনদিন তার শরীরের অবনতি হচ্ছে। কিছু বললেই বলে “আমি মুটিয়ে যাচ্ছি। তাই ডায়েট করছি।”
অথচ তার খাবার তালিকায় কোনো পরিবর্তন নেই। এভাবে ছেড়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। ছেলে-মেয়েদের কিছু প্রাইভেসি থাকে বলে এতটা স্বাধীনতাও তাঁদের দেওয়া উচিত নয়। একজন সচেতন অভিভাবক হিসেবে মাঝেমাঝে সবকিছুতে খোঁজ নেওয়া উচিত। প্রাইভেসির নাম করে সে এমন কিছু করছে কি না, এমন কিছু দেখছে কি না তাতে নজর রাখা উচিত।

নিশি ঘর থেকে বের হয়নি দুপুর থেকে। কান্নাকাটি করে ভয়ে বসে রইল ঘরে।

রাতে তাসিনের বাবা ঘরে এলে সাজেদা বললেন,“মেয়ের জন্য পাত্র দেখ।”

“হঠাৎ? কিছু হয়েছে?”

“হ্যাঁ, মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে।”

“মেয়ের বিয়ের বয়স হয়েছে তাতো আমি দেখছি। তুমি আর নিশি তো এত দ্রুত বিয়ে দেওয়ার পক্ষে না। তাহলে হঠাৎ কেন তুমি ওর বিয়ের কথা বলছো? নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।”

“কী হবে? মেয়ে বড়ো হয়েছে, বিয়ে দেবে।”

তাসিনের বাবা শান্ত গলায় বললেন,“দেখ সাজেদা, আমি কিন্তু ওর বাবা। সবকিছুরই একটা কারণ আছে। আর কারণ না জেনে আমি মেয়ে কেন বিয়ে দেব? বলো আমাকে। ছেলে ঘটিত ব্যাপার?”

সাজেদা নরম স্বরে বললেন,“না। তবে এমন কিছু, যা তোমায় আমি বলতে পারবো না। শুধু বলবো মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দাও। এই মুহূর্তে এটাই সমাধান।”

তাসিনের বাবা বিরক্ত হয়ে বললেন,“তুমি সমস্যার কথা বললে তো আমরা অন্য সমাধানও খুঁজে বের করতে পারবো।”

“না। তুমি জানলেও আমার সাথে একমত হবে। আমার কথা বুঝার চেষ্টা করো।”

সাজেদার করুণ চাহনি দেখে তাসিনের বাবা কিছুটা স্থির হলেন। অনেকরকম পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করেই বললেন,“আচ্ছা ঘুমাও।”

★★★

তিনদিনের মাথায় নিশির জন্য সম্বন্ধ আসলো। নিয়ে এলেন জনাব আজাদ। পাত্র একজন আলেম। তাসিনের বাবা সাজেদার সাথে কথা বলার পরদিনই জনাব আজাদকে বললেন একটা ভালো, ধার্মিক ছেলের সন্ধান দিতে। পাত্র হাতেই ছিলো। সেও বিয়ের জন্য উপযুক্ত পাত্রী খুঁজছে। তাই দ্রুতই দেখাশোনা।

তাসিন বা সাজেদার আপত্তি নেই। তাসিনও মনে মনে এটাই ভাবছিল। বিয়ে দিলে হয়তো চাপে পড়ে হলেও নিশির চলাফেরায় পরিবর্তন আসবে। আগে তার চোখে এটা স্বাভাবিক চলাফেরা হলেও এখন স্বাভাবিক মনে হয় না। তার চোখেরও পরিবর্তন এসেছে। দুই পক্ষের পরিবার সম্পর্কে তাঁরা খোঁজখবর নিয়েই পাত্রী দেখার কাজে এগিয়েছেন। হুরাইনকে যেভাবে তার দাদির উপস্থিতিতে তাসিন দেখেছিল, ঠিক তেমনই তাসিনের উপস্থিতিতে নিশিকে এক নজর দেখেছে পাত্র। সে জানিয়েছে তার নিশিকে পছন্দ হয়েছে।

পাত্র পক্ষ চলে যাওয়ার পরই নিশি ঘরে এসে কান্নাকাটি জুড়ে দিল। সে কিছুতেই এই ছেলেকে বিয়ে করবে না। ছেলের লম্বা লম্বা দাড়ি তার পছন্দ নয়। তাছাড়া এই পরিবারে বিয়ে হয়ে গেলে সে বন্দী হয়ে যাবে। সাজেদা শাসিয়ে বললেন,“চুপ। তোকে এমন পরিবারে পাঠালে তারাই ঠিক করতে পারবেন।”

নিশি নিজের ক্ষো*ভ ঢাললো হুরাইনের উপর।
“ভাবির কথা ধরেই এসব করছো, তাই না? আমি বুঝি না কেন করছো এসব? কার পাল্লায় পড়েছো তুমি? আমাকে শেখাতে হবে না। আমি দেখছি তো তোমার পরিবর্তন।”

বন্ধ ঘরে নিচু স্বরে মেয়েকে শাসাচ্ছেন সাজেদা।
“তোর লজ্জা করছে না কথা বলতে? আমি কারো কথা কেন ধরতে যাবো? আমার বিবেক নেই? কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হয় আমি জানি না?”

সাজেদা বেরিয়ে এলেন। হুরাইন বলল,“আম্মা একটা কথা বলি?”

সাজেদা মেয়ের ব্যাপার নিয়ে রেগে আছেন। তাই ঝাড়ি দিয়ে বললেন,“বলো।”

হুরাইন মৃদু স্বরে বলল,“আপু দেখলাম কান্নাকাটি করছেন। ওনার মতামত নেওয়া উচিত।”

সাজেদা বললেন,“তোমার বিয়ের সময় তোমার মত ছিল?”

হুরাইন অকপটে বলল,“কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম আমি। তবে আব্বুর সিদ্ধান্ত বলে অমত করিনি। আব্বু কখনো আমাদের জন্য ভুল সিদ্ধান্ত নেননি।”

সাজেদা এবার শান্ত স্বরে বললেন,“ কোনো বাবা-মাই সন্তানের খা*রা*প চায় না। ও কখনো ধার্মিক ছেলে বিয়ের জন্য রাজি হবে না। আর ওর পছন্দ মত বিয়ে হলে ও আরো স্বাধীনতা পেয়ে যাবে। আশা করি তুমি আর এই বিষয়ে কথা বলবে না!”

হুরাইন মাথা নাড়লো। তার বলার সে বলেছে। বাকি তাঁদের মেয়ের জীবনের সিদ্ধান্ত কী নেবে না নেবে তা তাঁদের ব্যাপার।

★★★

হুরাইন কুরআন তেলাওয়াত করছে। পাশেই একটা কায়দা নিয়ে বসে আছে তাসিন। অর্ধেক পর্যন্ত কায়দা তার শেষ। কায়দার সাথে সাথে মদ্দ, গুন্নাহ শিখছে সমানতালে। নিজের পড়া শেষ শেষ করে তাসিনের পড়া ধরলো হুরাইন।
“ইখফার হরফ এবং গুন্নাহ বলুন।”

তাসিন ১৫ টি ইখফার হরফ বলতে পারলেও গুন্নাহ ভুল করলো।

হুরাইন চোখমুখ শক্ত করে একটি চাহনি দিল। তাসিন চোখের পলক ঝাপটালো ঘনঘন। হুরাইন কঠিন স্বরে বলল,“এখন ভালোভাবে শিখে আমাকে পড়া দিবেন। নয়তো রাতে নিচে ঘুমাবেন। কম্বলও পাবেন না।”

তাসিনের অবস্থা ছলছল নয়নে। মনে মনে বলল,“আরে হুজুরের কাছে পড়লেই তো লাভ ছিল। পড়া না পারলে পেছনে দুইটা বেত দিয়ে বসিয়ে দিতেন। এমন শা*স্তি পেতে হতো না।”

হুরাইন আরেকবার হুশিয়ারি দিয়ে বলল,“কী হলো?”

তাসিন আমতা আমতা করে বলল,“এ কেমন শা*স্তি?”

হুরাইন বলল,“শা*স্তি কি কম হয়ে গিয়েছে? আচ্ছা ঠিক আছে। শুধু আজ নয়, একসপ্তাহ আপনি নিচে ঘুমাবেন কম্বল ছাড়া।”

তাসিন কথা না বাড়িয়ে পড়ায় মন দিলো। বিছানা, কম্বল, বউ তিনটাই তার চাই। হুরাইন মাঝেমাঝে জহুরি নজরে দেখছে তাসিন অন্যদিকে তাকিয়ে আছে কি না।

★★★

আজ চলে যাবে ফাবিহা। তাই যাওয়ার আগে ফিরোজ আলমকে একবার দেখে যেতে হাসপাতালে চলে গেলো। তিনি কেবল তাকিয়ে আছেন। কথা বলার মত অবস্থা এখনো তৈরি হয়নি। সুরাইয়া আবারও মুখ ভার করেছেন। আতাউর রহমান হাসপাতালে এলেন মেয়েকে নিয়ে যেতে। শাবাব এখান থেকে বাড়ি চলে যাবে। সুরাইয়ার কাছে গিয়ে ফাবিহা বলল,“আম্মা আমি যাচ্ছি।”

সুরাইয়া মুখ ফিরিয়ে নিলেন। ফাবিহা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।

শাবাব আতাউর রহমানকে একা পেয়ে মাথানিচু করে নিলো। হাত জোড় করে বলল, “আমাকে ক্ষমা করে দেবেন আঙ্কেল। আমি জানি, আমি ক্ষমার অযোগ্য। আপনার সাথেও খুব খা*রা*প ব্যবহার করেছি।”

আতাউর রহমান বললেন,“আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে পরিবর্তন করো।”

ফাবিহা শাবাবের পাশে এসে দাঁড়ালো। নিচু স্বরে বলল,“বলো শাবাব।”

“কী?”

“আমাদের কী কথা হয়েছিল? সুস্থ হলে কী করবে মনে নেই?”

শাবাব অসহায় চোখে তাকালো ফাবিহার দিকে। ফাবিহা অপেক্ষায় আছে শাবাবের মুখে সেই কথাটি শোনার জন্য। শ্বাস টে*নে নিজেকে প্রস্তুত করলো শাবাব। যন্ত্রণা হচ্ছে বুকে। অনেকক্ষণ পর হয়ে যাওয়ার পরও শাবাব সাড়া দিচ্ছে নাদেখে ফাবিহা বলল,“তুমি কি বলবে না?”

শাবাব এগিয়ে গেল সামনে। দুজনের বাবা আর সুরাইয়াকে উপস্থিত রেখে সে রুদ্ধশ্বাসে বলে ফেললো,“আমি ফাবিহাকে মুক্ত করে দিলাম।”

সকলে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। এতদিন তবু একটা সুযোগ ছিল। শাবাব এটা কী করে ফেললো? ফাবিহা ছাড়া সকলেরই চোখমুখের রং পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শাবাব বেরিয়ে গেল। পেছন পেছন ফাবিহাও গেল। চোখের পানি আড়াল করার আগেই দুই ফোঁটা ঝরে পড়লো। ফাবিহার নজর এড়লো না। সে স্তব্ধ হয়ে দেখছে। শাবাবের চোখে পানি সে আশা করেনি। তাদের তো হাসিখুশি সংসার ছিলো না। বলতে গেলে সংসারই হয়নি। তার উপস্থিতি টের পেয়ে শাবাব দ্রুত শার্টের হাতায় চোখ মুছে নিলো। খুঁড়িয়ে হাঁটায় সহজেই ফাবিহা তাকে ধরে ফেলতে পারলো। তবে অস্বস্তিতে ফেলতে চাইলো না বলেই কাঁদার কথা জিজ্ঞেস করলো না। বলল,“ধন্যবাদ শাবাব। ভালো থেকো। পারলে একজন ভালো মানুষ হয়ে যেও।”

শাবাব কেবল চেয়েই রইলো। ফাবিহা বিদায় নিলো,“আসছি।”

উল্টোপথে বাবার কাছে ফিরে গেল ফাবিহা। শাবাব পেছন থেকে দাঁড়িয়ে উপলব্ধি করলো এই দুনিয়াটাই মরিচিকা।
বাবার সাথে বাড়ি যাচ্ছে ফাবিহা। সে একটা সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেল। তবুও কোথাও একটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। জীবনে এতকিছু ঘটে যাওয়াতেই বোধহয় জীবন নিয়ে এই অতৃপ্তি।

হাসপাতাল থেকে বাড়ি গিয়ে ঘরে ঢুকলো শাবাব। আর দরজা খুললো না। একের পর এক সিগারেট ধরাচ্ছে। ফ্লোরে সিগারেটের উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। একবার ফাবিহা যে পাশে ঘুমাতো, বিছানার সে পাশে তাকালো। তারপর তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো। চোখদুটো লাল হয়ে আছে। খালা আর তুলি অনেকবার ডেকে গিয়েছে খাওয়ার জন্য। শাবাব বিরক্ত করতে না করলো।

ফাবিহা শাবাবের বাড়ি থেকে ফিরেছে কাল। আজই ভার্সিটি গেল। সুমনকে এখন আর তার নজরে পড়ছে না। কেবল আজ নয়। গত এক মাস যাবতই সুমন তার পথে আর আসছে না। স্বস্তি পেল সে। আর এসব ভালোলাগছে না। পাড়ায় শান্তি নেই, ভার্সিটিতে নেই। কোথাও শান্তি পাচ্ছে না। এক দিন গিয়ে খালার সাথে দেখা করে আসবে।

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে