#এক কুয়াশার সকাল
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#সূচনা_পর্ব
ব্যাগ থেকে বই বের করতে গিয়ে ব্যাগের চেইন খুলতেই দেখি আমার ব্যাগে রক্তে ভেজা একটা টিশার্ট।আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলাম।সবাই আমার চিৎকারে চুপ হয়ে গেলো।স্যার চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,এই মেয়ে কি হয়েছে তোমার?আমি ভীতু কন্ঠে স্যারকে বললাম,স্যার আমার ব্যাগে কার যেন রক্তে ভেজা টিশার্ট।
স্যার আমার কাছে এসে বললেন,কই দেখিতো।
তোমার ব্যাগে আবার কার টিশার্ট থাকবে।
স্যার সামনে এসে দেখেন আমি সত্যি বলছি,আর টিশার্টে লেগে আছে একদম তাজা রক্ত।
_তোমার ব্যাগে টিশার্ট,আর তুমি বলছো কার যেন টিশার্ট।
আর তোমার ব্যাগে কেউ রাখলো,আর তুমি তা টেরও পেলে না?
এটা কি হয় নাকি?
এই টিশার্ট এখানে এলো কি করে তাহলে?
আমি এত ক্ষণে ভয়ে কান্না করে দিয়েছি।
_সত্যি বলছি স্যার,আমি জানিনা কার টিশার্ট।আর কিভাবে আমার ব্যাগে এলো।
_আচ্ছা ঠিক আছে।
এটা এখন ওই ঝুড়িতে রাখো।আর গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো।
_আমি পারবোনা স্যার এটা ধরতে।
স্যার অন্য একজনকে দিয়ে আমার ব্যাগ থেকে টিশার্ট টা বের করে ঝুড়িতে রাখলেন।
আমি যে ফ্রেশ হতে যাবো আমার হাত পা কাঁপছে।তাই স্যার আমারই এক বান্ধবীকে আমার সাথে পাঠালেন।
_বিশ্বাস কর মুন্নি,আমি জানিনা এই রক্ত মাখা টিশার্ট কিভাবে আমার ব্যাগে এলো।
_আমি বুঝেছিরে,কিন্তু রাখলো টা কে।এটাই আমি ভাবছি।
সেদিনের মত ক্লাস শেষ হলে বাসায় চলে আসি।
বাসায় এসে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ি।
আম্মু খেতে ডাকলেও খেতে যাইনা।
অদ্ভুত একটা শংকা ভয় কাজ করছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে আম্মু আর ডাকেনি।
ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে আম্মুর কাছে গেলাম।
_তোর কি শরীর খারাপ?কি হয়েছে?
_কিছু হয়নি আম্মু।ভালো লাগছেনা।
_না খেয়ে শুয়ে পড়েছিস।বস আমি খাবার নিয়ে আসছি।
আম্মু খাবার আনতে চলে গেলো।
খাবার নিয়ে এসে নিজে হাতে খাইয়ে দিলো।
আম্মুর সাথে কিছু ক্ষণ গল্প করে চলে গেলাম আমার রুমে।
গিয়ে ভাবলাম পড়া টা কমপ্লিট করে ফেলি।
কিন্তু ব্যাগ টা ধরতে ভয় লাগছে।
ভয়ে ভয়ে আবার ব্যাগের চেইন খুললাম।
বই বের করলাম,পড়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙলো আম্মুর চিৎকারে।
দৌড়ে আম্মুর কাছে যেতেই দেখি,
দুইটা গলা কাটা মুরগী পড়ে আছে।
কিন্তু এই সকালে এখানে কে এই দুটোকে ফেলে রেখে গেলো।
_কি হয়েছে আম্মু?
_আমি হঠাৎ ঘর থেকে বেড়ুতেই পায়ের সামনে দেখি এই দুটো লাফাচ্ছে।কে যেন মাত্রই জবাই করে ফেলে রেখে গেছে।
কিছুই বুঝতেছিনা।
কে এমন করলো।
এখন আমার ভয়টা আরো বেড়ে গেলো।
গতকাল আমার সাথে টিশার্টের ঘটনা।
আবার আজ এই মুরগীর ঘটনা।
কিছু একটা রহস্য তো আছেই।
কিছুই ভালো লাগছেনা আমার।
_এত চিন্তা করার কিছু নেই।বাদ দে যা হবার হয়েছে।কেউ বোধয় বজ্জাতপানা করে এমন করেছে।
কিছু ক্ষণ পর আম্মু নাস্তা বানালো।
ছোট বোন এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো নাস্তা খেতে।
নাস্তা করে আমি আমার প্রাইভেট টিচারের বাসায় রওনা দিলাম।
দুইটা স্যারের কাছে দুই সাবজেক্ট পড়ে তারপর আবার স্কুল।
প্রতিদিনের মত সেদিনও প্রাইভেট পড়ে,ক্লাস করে বাসায় চলে আসি।
বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাওয়াদাওয়া করে আম্মু আর ছোট বোনের সাথে গল্প করি।
গল্প করতে করতে রাত হয়ে যায়।
একটু বই বের করে পড়ে তারপর ঘুমিয়ে পরি আমি।
রাত তখন প্রায় ৩ টা।
হঠাৎ এক বিকট শব্দ।
আমি ভয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠি,সাথে আমার বোনও।
আম্মুকে ডাকতেই আম্মু বল্লো,চুপ করে শুয়ে থাকো কোন শব্দ করোনা।
আম্মু জোড়ে জোড়ে বলতে লাগলো,
কে রে কে।
কিন্তু কারো কোন সাড়া শব্দ নেই।
সারারাত নির্ঘুম কাটলো আমাদের।
আম্মু আমাদের দুজনকে ঘুমাতে বল্লেও আমরা জেগেই থাকি।
ছোট আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
শীতের রাত।কিন্তু আমি ভয়ে ঘেমে একাকার।
সকাল হতেই প্রথমে আম্মু বের হলো,বের হয়ে দেখে আমাদের দরজার সামনে দুইটা মাটির কলস ভাঙা।
আর সেইখান থেকে বিশ্রী গন্ধ বের হচ্ছে।
কে বা কারা যেন রাতে এই কলস ফাটিয়ে রেখে গেছে।
আমি আর আমার ছোট বোন আস্তে আস্তে এসে দাঁড়িয়ে দেখি এই অবস্থা।
হঠাৎ আমার বোনের চোখ যায় একটা ছোট্ট কাগজের টুকরোর দিকে।
ও গিয়ে হাত দিয়ে কাগজ টা মাটি থেকে তুলে।
তুলে নিয়ে খুলে কি যেন পড়ে,
পড়েই আমার হাতে কাগজ টা তুলে দেয়।
আমি কাগজ টা হাতে নিতেই দেখি,
ওখানে লিখা-
”প্রতিদিন একটা একটা সারপ্রাইজ পেতে প্রস্তুত থাকো প্রিয়তমা”
আমি কিছুই বুঝলাম না,কে এই ব্যক্তি।
আর কেনই বা এসব করছে।
আম্মু বল্লো,কোন অসভ্য ফাজিল ছেলের কাজ এটা।
তোরা চিন্তা করিস না।
তোদের আব্বুকে আজ ফোন দিয়ে জানাবোনে।
সে তার বন্ধু বান্ধবদের ফোন দিয়ে বললে,তারা খেয়াল রাখবেনে বা খোঁজ করবেনে।
কে করছে এই সব।
আম্মু নাস্তা বানাতে চাইলো।
আমি বললাম,আজ দেরি করে বানাও সমস্যা নেই।
আজ আমি পড়তেও যাবোনা,স্কুলেও যাবোনা।
আম্মু বল্লো,সামনে পরীক্ষা,এসব বাজে চিন্তা মাথায় না রেখে পড়াশোনায় মন দে।
নাস্তা বানাচ্ছি,খেয়ে পড়তে যাবি।
আমার প্রাইভেট একটা সকাল সাত টা থেকে আট টা।
আরেকটা আট টা থেকে নয়টা।
তারপর আমি ওখান থেকেই স্কুলে চলে যাই।
সেই জন্য আম্মু অনেক সকালে উঠে নাস্তা বানায়।
আর আমারো তাড়াতাড়ি করে ঘুম থেকে উঠতে হয়।
সেদিন আবার অনেক কুয়াশা পড়ে।
আর অনেক বেশি শীত।
তার উপর এই ঘটনা।
তাই যেতে ইচ্ছে করছিলোনা পড়তে।
কিন্তু আম্মুর কথায় রেডি হয়ে চলে গেলাম।
রাস্তায় বের হতেই দেখি চারিপাশ কুয়াশার চাদরে ঢাকা।
না আছে একটা রিক্সা আর না আছে কিছু।
কিচ্ছু দেখা যাচ্ছেনা কুয়াশার কারণে আজ।
আর তার উপর কনকনে শীত।
সারা রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি।আজ শুধু প্রাইভেট পড়েই চলে আসবো বাসায়।
স্কুলে যাবোনা।তাই স্কুল ড্রেস পরিনি আজ।হালকা গোলাপী রঙের একটা থ্রি পিস পরেছি।
চোখে একটু কাজল দিয়েছি।কাজল আমার অনেক বেশিই পছন্দ সেই জন্য।আমার ডান হাতে একটা চুড়ি আর বাম হাতে ঘড়ি।
আর কাঁধের এক পাশে ব্যাগ।
তাড়াহুড়ো করে ঘড়িতে সময় দেখছি আর হাঁটছি আমি।সময় দেখে মাথা টা উঁচু করতেই দেখি আমার থেকে একটু দূরে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে।
দেখেই বুকের ভেতর টা ধুকধুক করে উঠেছে।
এত সকালে,এই কুয়াশার মধ্যে কে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ দেখি মানুষ টা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে।
তার গায়ে কালো একটা জ্যাকেট আর
জিন্স প্যান্ট।আর মুখ টা মাফলার দিয়ে ঢাকা।
সে আমার সামনে আসতেই তার চোখ দুটো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
ঘন কালো ভ্রু তার।চোখ দুটো ভাসা ভাসা।
উনি সামনে আসতেই আমি পেছনের দিকে আগাতে থাকি।
আমি পিছপা হচ্ছি দেখে সে আমাকে বলে,
পিছপা কেন হচ্ছো?
আমি তো তোমার জন্যই দাঁড়িয়ে আছি।এই ঘন কুয়াশার মধ্যে তুমি একা একা যেতে ভয় পাবে তাই।
এ কথা শুনে আমি আর এক মুহূর্ত দেরি না করে উলটো পথে দেই দৌড়।
মানে আমার বাসার পথে।
আর সে পেছন পেছন আমাকে ডাকতে থাকে,
এই নিধি এই নিধি তুমি জানো,তোমাকে কাজল পড়লে মারাত্মক লাগে।
আর তুমি যদি এখন না দাঁড়াও।
তাহলে আমি কিন্তু তোমার সাথে তোমার বাসায় চলে আসবো।
চলবে?