#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪৩
#Saji_Afroz
নাস্তা শেষে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুতে চাইলে তার পথ আঁটকায় ইনতিসার। সে বলল, আমার সাথেই তো যাবে নাকি?
-আমি একা আসা যাওয়া করতে পারব।
-গন্তব্য যখন একটাই কেন কষ্ট করবে বলো তো? এসো আমার সঙ্গে।
আজরা আসে। তাদের দিকে তাকিয়ে বলল, দুজনেই তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবে।
ইনতিসার বলল, উহু আজরা! অফিসের মালিক আর হিসাব রক্ষকের এর কাজ নিয়ে আইডিয়া নেই তোমার। তাই যখন তখন এসব বলো। বাসায় বসে সবটা যতটা সহজ মনেহয় ততটা না।
এই বলে ইনতিসার বেরিয়ে যায়। তার পিছু নেয় নাবীহা। আজরা আপনমনে বলল, আসলেই! কেন যে উনার মনমতো হয় না এমন কথাবার্তা বলে বসি আমি!
.
.
.
ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে তাসফিয়া। চোখে তার পানি। তাকে এভাবে দেখে পথ আটকালেন সাজেদা বেগম। জানতে চাইলেন কী হয়েছে। জবাবে সে বলল, আপনার ছেলে আমার সাথে সংসার করতে চায় না। আমি এখানে থেকে কী করব বলেন?
-সে বলেছে তোমাকে?
-মুখে কিছু বলতে হয় না। কর্মকান্ডে বোঝা যায়।
-কী করেছে বলো?
দাঁতে দাঁত চেপে তাসফিয়া বলল, সে এখনো অবধি বিছানায় না শুয়ে পাশে থাকা সোফায় থাকে। এটার মানে কী বোঝায় বলুন?
নিশ্চুপ সাজেদা বেগমকে ঠেলে বেরিয়ে পড়লো তাসফিয়া। সে যাওয়ার পর তিনি চ্যাঁচিয়ে সাজিরকে ডাকলেন। সাজির আসলে তিনি বললেন, নিজের বউকে এতটা অবহেলা করার মানে কী?
-জবরদস্তি বউ বলেই অবহেলা।
-সাজির!
-চিৎকার করো না মা। কী আশা করো তুমি? জোর করে বিয়ে তো দিয়েছ! জোর করে আমার মনটাও অন্য কাউকে দেবে?
-ওহহো! মন! তা বুঝি এখনো নাবীহাতেই আঁটকে আছে সেই মন?
-আছে।
-ওর সাথে কী তুই যোগাযোগ করছিস? তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে বললাম।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে সাজির বলল, তার আমাকে প্রয়োজন নেই আর। দেখা হয়েছিল শপিংমল এ। কথাই বলতে চায় না সে। সে নাকি খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে এবং আমার থেকে ঢের বেশি যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে। দেখেছ তো মা! তুচ্ছতাচ্ছিল্য করলে তুমি তাকে। আর সে কি না ভালো কাউকেই জীবনে পেতে চলেছে।
এই বলে সাজির নিজের রুমে চলে যায়। সাজেদা বেগম রাগান্বিত হয়ে চেয়ে রইলেন তার পথের দিকে।
.
.
.
-আজরা ভাবী তো মানতাশার বান্ধবী। তাকে একটু বল ওকে বোঝাতে! আমি সত্যিই সুন্দরভাবে আবার সবটা শুরু করতে চাই।
ফোনের ওপাশ থেকে আরশানের কথা শুনে ইনতিসার বলল, তোর মেজাজটা ঠিক করতে হবে।
-সবই করব। তুই আমার এই হেল্পটা কর।
-আমি আজরাকে বলব।
ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজাতে ব্যস্ত আজরা। ইনতিসার ফোনে কথা বলছিল। ফোন রাখার পর আজরা বলল, আরশান ভাই নাকি?
-হু। সে বেশ অনুতপ্ত। বলছিল তুমি যেন মানতাশাকে বোঝাও, তার সাথে সবটা ঠিক করে নিতে।
-আচ্ছা।
এরইমধ্যে নাবীহা ও মানতাশা আসলো। আজরা খেতে খেতে কথাটি তুলে। মানতাশা কিছু বলার আগেই নাবীহা বলল, তুই কেন আরশানের পক্ষে বলছিস বল তো? আরশান ওর গায়ে হাত তুলেছে। এটা কোনো ছোটো ব্যাপার না আজরা।
-তাই বলে এত সুন্দর সংসারটা নষ্ট করবে?
-সে যে আবারও এমন করবে না এর গ্যারান্টি কী?
-করবে তার গ্যারান্টি কী?
নাবীহা একটু থেমে বলল, আমি মানতাশাকে একটু সময় দিতে বলছি।
ইনতিসারের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে নাবীহা বলল, কেননা অতি সহজে মূল্যবান কিছু পেয়ে গেলে সেটা মূল্যহীন হতে সময় লাগে না।
ইনতিসার হালকা কেশে বলল, তুমি জোর করো না আজরা।
আজরা অবাক হয় এই ভেবে যে, একটু আগেই ইনতিসার মানতাশাকে বোঝাতে বলল। আবার এখন বলছে জোর না করতে। কেন? নাবীহার যুক্তিই তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হলো বলে? কিন্তু আজরার যুক্তি কী সঠিক নয়! একটা সংসার এত সহজেই সে কীভাবে ভাঙতে দেয়! নাহ, তাকেই কিছু করতে হবে।
.
.
.
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল নাবীহার। পানির পিপাসা পায় তার। কিন্তু জগে পানি নেই। সে খালি জগটা নিয়ে নিচে নেমে রান্নাঘরে আসলো পানি নিতে। জগে পানি ভর্তি করে পেছনে ফিরে কাউকে দেখে চমকে উঠলো সে। কিছু বলতে যাবে তখনি তার মুখ চেপে ধরে ইনতিসার বলল, আমি আমি!
নাবীহা শান্ত হলে তার মুখ ছেড়ে দেয় ইনতিসার। সে বলল, আপনি এখানে?
-তোমাকে আসতে দেখে আসলাম।
-সারাক্ষণ আমায় পাহারা দেন?
-নাহ। পাশেই তো রুম। দরজা খোলার শব্দ শুনে বের হয়ে দেখলাম তুমি।
-তা আমার পিছু নেওয়ার কী প্রয়োজন ছিল?
-একা নিচে নামছ, তোমার কিছু লাগবে কিনা দেখতে এলাম।
-যা লাগবে পেয়ে গেছি।
এই বলে নাবীহা পা বাড়ায়। ইনতিসার তাকে থামিয়ে বলল, এতটা কঠোর না হলেও তো পারো?
নাবীহা তার দিকে তাকিয়ে বলল, আপনি কী চান? আমার বান্ধবীর সংসার আমি নষ্ট করি?
-নিজের জীবনকে সাজাতে বলছি তোমায়। এতে আজরার জীবন নষ্ট হবে না। ও যেমন আছে তেমনি থাকবে। ভালো থাকবে।
-এটাকে ভালো থাকা বলে না। আচ্ছা একটা কথা বলুন তো! ওর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই কী আমার সাথে এসব নাটক করছেন আপনি?
-আমি এমনটা ভাবিওনি কখনোই। তোমাকে আমি ভালোবাসি।
-আমার তো মনে হচ্ছে অন্যকিছু।
-বাচ্চার জন্য হলে সেই তোমাকেই কেন চাইব আমি বলো?
-সে আমি জানিনা। কিন্তু আপনাকে বলব সবুর করতে। আল্লাহ ঠিক আপনাদের কোল আলো করবেন।
এই বলে নাবীহা চলে যায়। ইনতিসার রুমে আসলে দেখলো আজরা জেগে আছে৷ তাকে দেখে কোথায় গেছে প্রশ্ন করলে বলল, শব্দ হয়েছিল বাইরে। দেখতে গেলাম।
-কিসের শব্দ?
-কিছুই খুঁজে পেলাম না।
এই বলে শুয়ে পড়ে ইনতিসার।
.
.
.
সকালের নাস্তা শেষে নাবীহা ও ইনতিসার অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুলো। মানতাশা টিভিতে গান ছেড়ে শুনছে। আজরা এসে টিভি বন্ধ করতেই মানতাশা বলল, কিছু বলবি?
-হু।
-বল?
-আমি চাই তুই একটাবার আরশান ভাই এর সঙ্গে দেখা কর।
তার কথা শুনে বিরক্তভরা কণ্ঠে মানতাশা বলল, এসব ছাড়া আর কী বলবি বল?
-তুই এভাবে নিজের সুন্দর সংসারটাকে শেষ করে দিবি?
-ওহ প্লিজ আজরা! ওটা কোনো সুন্দর সংসার ছিল না। জাহান্নাম ছিল আমার জন্যে।
-কিন্তু তুই যেমন চেয়েছিস তেমনই তো ছিল! তোর ভুলের জন্যই খারাপ হয়েছে তোর সঙ্গে। এটা তুই মানিস না?
এদিকে মাঝপথে নিজের ফোন না পেয়ে বিচলিত হয়ে নাবীহা বলল, আমি ফোন আনতে ভুলে গেছি। বাসার দিকে যাবেন প্লিজ?
ইনতিসার বলল, ব্যাগে দেখেছ ভালো করে?
-জি।
-তবুও আমি ফোন করে দেখি। দেখো ব্যাগের ফাঁকে রয়েছে কিনা।
এই বলে রাস্তার একপাশে গাড়ি থামিয়ে ফোন করলো ইনতিসার। কিন্তু রিং বাজলো না আবার অপরপাশে কেউ রিসিভও করলো না।
নাবীহা বলল, ওরা নিশ্চয় নিচে। তাই শুনছে না।
-তবে চলো। ফোনের প্রয়োজন তো নিশ্চয় রয়েছে।
এই বলে বাসার দিকে গাড়ি ঘুরালো ইনতিসার।
অনেকক্ষণ যাবত বোঝানোর পরেও মানতাশা বুঝতে নারাজ। সে কোনোমতেই আরশানের সঙ্গে দেখা করতে চায় না। একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে বলল সে, তোর চেয়ে নাবীহার বোঝার ক্ষমতা বেশি। তাইতো সে আমার পক্ষে রয়েছে। তুই আমার বান্ধবী হয়ে ওই আরশানের পক্ষেই বলে যাচ্ছিস।
আজরা একটু থেমে বলল-
তুই এমন কারো কথা শুনছিস যার কিনা লাইফে সুখ বলতে কখনো কিছু ছিল, না আছে! সে কিভাবে অন্যের সুখ সহ্য করবে?
আজরার মুখে এমন কথা শুনে চমকালো মানতাশা। সে তো এভাবে কথা বলেনা কখনো! মানতাশা বলল, মানে?
আজরা বলল-
কিছু মনে করিস না। আমি যা বলছি ঠিক কিনা তুই ভেবে দেখ তো? নাবীহা সংসারের মানে কী বুঝবে? তার নিজের কী সংসার হয়েছে এখনো!
-সবকিছুর এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে? এমনিতেই মতামত জানানো যায়না বুঝি? আর ও যথেষ্ট বুদ্ধিমতী মেয়ে।
-আমি যদি ও হিংসুটেও?
-কী বলছিস?
-হু। সে নিজে সুখে নেই। তাই তো আর কারো সুখ হজম হয় না।
-তোর সাথে কিছু করেছে?
-আমি তাকে কতবার বলে এখানে আনতে পেরেছি জানিস? সে আসবেই না। কেন বল তো?
-কেন?
-কারণ আমার সুখ সে দেখতে পারছে না। তাইতো আমাকে বলে মা বাবার কাছে গিয়ে থাকতে। অথচ একটা মাস ইনতিসার একা কিভাবে থাকবে? ভালো চাইলে বলতো ওর কাছেই থাকতে। তাইনা?
-হুম।
-সে নিজে হতদরিদ্র, পরিচয়ের ঠিক নেই, সাজিরও ছেড়ে চলে গেছে। নিজের জীবনের ডিপ্রেশনের শেষ নাই অন্যজনের টা কী বুঝবে? নাহয় তুই এত বড়ো ঘরের বউ। কোথায় তোকে বুঝিয়ে শুনিয়ে পাঠিয়ে দেবে তা না। উল্টাপাল্টা বোঝাচ্ছে। এসব হিংসে নয় তো কী বল?
মানতাশা কিছু বলার আগে আজরা বলল, চুলোয় তরকারি দিয়েছিলাম। দেখে আসি। আমার কথা ভাব তুই।
এই বলে সে চলে যায়। এদিকে মানতাশা দেখলো নাবীহাকে। সে কিছু বলতে যাবে তখনি নাবীহা বলল, ফোনটা রেখে গিয়েছি ভুলে।
উপরে গিয়ে ফোন নিয়ে বেরিয়ে যায় নাবীহা। মানতাশা ভাবতে লাগলো, নিশ্চয় কিছু শোনেনি সে। শুনলে এমন শান্ত থাকার কথা নয়।
অফিসে পোঁছে সোজা ওয়াশরুমে আসলো নাবীহা। পানির কল ছেড়ে দিয়ে মুখে ওড়না চেপে কাঁদতে শুরু করলো সে। নিজের নামে আজরাকে এসব কী বলতে শুনলো সে! আজরা এসব বলতে পারে, নিজের কানে না শুনলে কখনো বিশ্বাস করতো না।
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪৪
#Saji_Afroz
অফিস শেষে নাবীহার জন্য অপেক্ষা করছে ইনতিসার। নাবীহা আসলে সে তাকে গাড়িতে উঠতে বলল। নাবীহা বলল, এখন বাসায় যেতে পারব না আমি।
-কেন?
-আমাদের এক আত্নীয় এর বিয়ে কাল। একটা উপহার নিতে হবে। শপিংমল এ যাব।
-চলো আমিও যাই।
-নাহ। আজরা অপেক্ষা করছে। আপনি বরং বাসায় যান।
-তুমিও চলো। উপহার নিতে আজকাল শপিংমল এ যাওয়া লাগে? অনলাইনে অর্ডার করা যায়।
নাবীহা একথা শুনে বাসায় যেতে রাজি হয়। ইনতিসারের সঙ্গে তার বাসায় আসলো সে।
তারা ফ্রেশ হয়ে এসে নাস্তার টেবিলে বসে খেতে খেতে গল্প জুড়ে দেয়৷ এক পর্যায়ে ইনতিসার নিজের ফোনটা নাবীহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, এই পেইজে দেখো তো কিছু ভালো লাগে কিনা।
মানতাশা অবাক হয়ে বলল, এটা কী হলো ভাইয়া? উপহার শুধু নাবীহাকে দিচ্ছেন?
আজরা চা নিয়ে আসলো। বলল, কী কথা হচ্ছে?
ইনতিসার সব খুলে বলল। তা শুনে আজরা বলল, তোরাও নিজেদের জন্য কিছু পছন্দ করে অর্ডার কর।
মানতাশা খুশি হয়ে বলল, তাই?
-হু।
নাবীহা বলল, প্রয়োজন নেই।
আজরার জোরাজোরিতে নাবীহাকেও একটা পোশাক পছন্দ করতে হলো।
এই আজরাকে দেখলে কে বলবে? তার মনে এতটা ক্ষোভ নাবীহার জন্যে!
রাতে নাবীহা ও মানতাশা ঘুমোতে আসে। নাবীহা ফ্রেশ হয়ে আসলে মানতাশা বলল, একটা কথা বলার ছিল।
-হু বল?
-তুই আজরাকে যতটা সাদাসিধা মনে করিস, সে কিন্তু না!
-কেন?
-ও তোর নামে আমাকে অনেক কথা বলেছে। তুই নাকি আমাদের হিংসা করিস। তাই চাস না আরশানের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ঠিক হোক।
-তাই! আর ওকে কী নিয়ে হিংসা করি?
-এই যে এই ঘরটা তোর হতে পারতো। কিন্তু হয়নি। এটা নিয়ে ভাবছে হয়তো।
অন্যসময় হলে মানতাশার কথা বিশ্বাস করতো না নাবীহা। নিজের কানে সবটা শুনেছে সে। বিশ্বাস কিভাবে না করবে!
মানতাশা বলল, আমার ওর এমন আচরণে খারাপ লাগে। তুই হিংসা কেন করবি? তুই চাইলেই তো তখন ইনতিসার ভাইকে বিয়ে করতে পারতি। প্রস্তাব তোর জন্যই আগে এসেছিল। তাইনা?
নাবীহা শুতে শুতে বলল, লাইট অফ করে ঘুমা। কাল আমার অফিস আছে।
.
.
.
পরেরদিন অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরে আসলো নাবীহা। সে বিয়েতে যাওয়ার জন্যে তৈরী হচ্ছে। তার পোশাক দেখে আজরা বলল, এত হালকা রঙের জামা পরছিস কেন? আয় তোকে আমি আমার থেকে একটা জামা দিই। ওইটা পর।
-তার প্রয়োজন নেই৷ আমি সাদাসিধা পছন্দ করি।
-উহু নাবীহা! আজ তোকে নিজ হাতে আমি সাজাব। দেখবি বেশ কয়েকটা বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে যাবি।
এই বলে আজরা তাকে তৈরী হতে সাহায্য করে। আজরার এমন দুমুখো আচরণের মানে যেন নাবীহা বুঝতে পারছে না। তৈরী হওয়ার পর সে বিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরুলো।
বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেই নাবীহা দেখা পেল সাজিরের। অবশ্য তারা এখানে আসবে এটা স্বাভাবিক। কেননা আত্মীয় তাদেরও৷
তাকে দেখে সাজির কথা বলতে চাইলেও নাবীহা বলল না। পাশ কেটে নিজের মা এর কাছে আসলো সে৷
হঠাৎ আগমন ঘটে সাজেদা বেগমের। তিনি নায়লা খাতুনের হালচাল জিজ্ঞাসা করেন। নায়লা খাতুনও একই কাজ করে বললেন, সাজিরের বউকে দেখছি না যে?
-এটা তো ভাবী তোমার মেয়েই ভালো বলতে পারবে।
নাবীহা অবাক হয়ে বলল, আমি কিভাবে?
-কেন? তুমিই তো সাজিরের মনটা ছটফটে করে দিলে।
-আমি?
-হু। ভালো কাউকে নাকি বিয়ে করছ? তো কই সে ভালো কেউ?
নাবীহার মুখটা মলীন হয়ে যায়। হ্যাঁ, সে এই কথাটা সাজিরকে বলেছিল। কিন্তু যার জন্য বলেছিল সেও তাকে ঠকালো। নিশ্চুপ নাবীহাকে দেখে তার আর বুঝতে বাকি রইলো না, এমন কিছু হচ্ছে না। নায়লা খাতুনও অবাক হয়ে নাবীহাকে বললেন, কই? তুই আমাকে কিছু জানাসনি।
-সময় হলে জানাতাম।
সাজেদা বেগম বললেন-
মিথ্যা কথা কোথাথেকে জানাবে? এমন ভাব করেছে যেন কোটিপতি তাকে বিয়ে করবে। অথচ ওমন বাড়ির কাজের মেয়ে হওয়ার যোগ্যতাও সে রাখেনা। বাপ মা এর পরিচয় এর ঠিক নাই তার আবার বড়ো কথা।
সাজির এসে সাজেদা বেগমকে টানতে টানতে নিয়ে যেতে থাকলো। তিনি তবুও বলে চলেছে-
আসছে ভালো কাউরে বিয়ে করতে! করে দেখা দেখি! এই মেয়ের জন্য আমার ছেলের সংসারে আগুন জ্বলেছে। সেও সুখী হতে পারবে না।
নাবীহা কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে পড়ে বিয়ে বাড়ি থেকে।
এদিকে নাবীহাকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে দেখে আজরা ও মানতাশা নানা প্রশ্ন জুড়ে দেয়। কোনো উত্তর না দিয়ে সে বলল, মাথাটা ধরেছে।
সেই থেকে বিছানায় শুয়ে আছে সে। ইনতিসারের সঙ্গেও তার দেখা হয়নি।
আজ রাতে আবারও জগ খালি দেখে পানি নিতে আসলো নাবীহা। হঠাৎ সে পুরো বাড়িটা হেঁটে হেঁটে দেখতে লাগলো। কী সুন্দর একটা বাড়ি! এত বড়ো যে হেঁটে শেষ করতে সময় লাগছে তার। এই বাড়ির বউ তো সেও হতে পারতো। এটা কী সাজেদা বেগম জানেনা?
মানতাশা ঠিকই বলেছে, এসব তার হত। আজরার না। কেন যে তখন ভালোবাসায় অন্ধবিশ্বাস করেছিল সে!
নিজের উপরে নিজের রাগ হয় নাবীহার। পানির জগ হাতে নিয়েই মেঝেতে বসে পড়লো সে। কাঁদতে লাগলো অঝোর ধারায়!
.
.
.
সকালে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুচ্ছে নাবীহা। মানতাশা তাকে থামিয়ে বলল, আজরা কিছু বলেছে তোকে?
-কী বিষয়ে?
-ওর এক খালাতো ভাই আছেনা? ওর জন্য কথা বলবে ভেবেছে বিয়ের জন্য। সদ্য ডিভোর্স হয়েছে।
নাবীহা কিছু বলার আগেই পেছন থেকে ইনতিসার বলল-
ডিভোর্স হয়েছে এমন কাউকে নাবীহা কেন বিয়ে করবে? আর আজরা ওর বান্ধবী হয়ে এমন একটা প্রস্তাব কিভাবে দিচ্ছে!
আজরা আসলো। সে এসব শুনে বলল-
আসলে আমি বিষয়টা ভেবেছি। এখনো ঠিক করিনি। মানতাশা বলে ফেলল!
ইনতিসার ধমকের সুরে বলল, এমন একটা বিষয় তুমি ভাবো কিভাবে?
আজরা বলল-
আমার খালাতো ভাই এর ডিভোর্স এর পেছনে তার কোনো দোষ নেই! তার ভাগ্য খারাপ যে বউ অন্য কাউকে পছন্দ করতো। বিয়ে হলেও দু’জনের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল না।
আজরা একটু থেমে বলল-
শারীরিক সম্পর্কও। নাবীহার মন ভেঙেছে, তারও ভেঙেছে। এইজন্য আমি প্রস্তাবটা দেব ভাবি। এটা কী দোষ হয়ে গেল আমার?
ইনতিসার কিছু বলতে যাবে তাকে তাড়া দেয় নাবীহা। তারা বেরিয়ে পড়ে।
মানতাশা বলল, ভাইয়ার এমন আচরণ কিন্তু আমার ভালো লাগেনি। তোর কেমন লেগেছে আমি জানিনা।
আজরা কিছু বলল না। সত্যি বলতে তারও আজ ইনতিসারের এসব একটু বাড়াবাড়িই মনে হয়েছে। সে কেন তাদের বান্ধবীদের মাঝে কথা বলল!
গাড়ি চালাচ্ছে ইনতিসার। নাবীহার দিকে চোখ পড়তেই দেখলো, তার দুচোখ ছলছলে। কী হয়েছে জানতে চায় সে। গতকাল বিয়ে বাড়ির ঘটনা খুলে বলল সে। ইনতিসার রাস্তার ধারে এসে গাড়ি থামালো।
সে বলল-
কাল ওসব আজ আবার আজরা ডিভোর্স হয়েছে এমন কারো জন্য প্রস্তাব দিচ্ছে। তুমি এসবের প্রাপ্য নও। আগেই যদি আমার সাথে বিয়েতে রাজি হতে এই দিন তোমার দেখতে হত না।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাবীহা বলল, আমি মানছি সেটা।
নাবীহার দিকে তাকিয়ে ইনতিসার বলল, এখনো খুব বেশি দেরী হয়নি। তাইলে সব ঠিক করতে পারো। বাঁচতে পারো সম্মানের সাথে। বিয়ে করে নাও আমায়?
নাবীহা একটু থেমে বলল-
আর আজরা?
-সে থাকুক তার মতো। আলাদা বাড়িতে রাখব তোমায়।
নাবীহার কানে বাজতে থাকে সাজেদা বেগম ও আজরার বলা কথাগুলো। সে চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল, রাজি হব। কিন্তু শর্ত একটাই।
-কী?
কোনো দ্বিধা ছাড়াই নাবীহা বলল, আজরাকে ডিভোর্স দিতে হবে আপনার।
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৪৫
#Saji_Afroz
নাবীহার কথা শুনে ইনতিসার চমকায়। তার খুশির হওয়ার কথা। কিন্তু সে অবাক হয় এই ভেবে যে, নাবীহা আজরাকে তালাক দিতে বলছে! এমনটা নাবীহা বলবে ইনতিসার ভাবেনি কখনো। তাছাড়া সেও আজরাকে ছেড়ে দেবে এটা ভাবেনি। তাই নাবীহার মুখে এই কথা শুনে কী বলবে ভেবে পায় না সে।
নাবীহা বলল, কী হলো? চুপ যে?
-তুমি আসলেই চাও আমি ওকে ছেড়ে দিই?
-হু। যা হবে একান্তই আমার হবে। সেটার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারব না।
-কিন্তু…
-কী? দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চান?
-এমনটা নয়।
-তবে কেমন? যদি আমাকেই ভালোবাসেন তবে আমাকে নিয়েই থাকুন!
ইনতিসারের কপালে চিন্তার ভাজ দেখে নাবীহা বলল, পারবেন না তো? তবে এসব বাদ দিন। আজরার সঙ্গেই সংসার করুন।
নাবীহা এতদিন পর তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। এখন যদি সে কিছু না বলে, তবে নাবীহা তার মতামত বদলাতে পারে।
ইনতিসার হালকা কেশে বলল, আমার সমস্যা নেই। কিন্তু হুট করে আজরা কী ডিভোর্স এ রাজি হবে? তাই ভাবছিলাম আগে বিয়েটা করে নিই আমরা? পরে সে এমনিতেই ডিভোর্স দিয়ে দেবে।
কোনো ভণিতা ছাড়াই নাবীহা বলল, নাহ! আগে ডিভোর্স হবে তারপর সব হবে। ঠকতে ঠকতে ক্লান্ত আমি। আর ঠকতে চাইনা। আপনি সময় নিন। ভাবুন।
ইনতিসার হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নেড়ে গাড়ি চালানো শুরু করলো।
নাবীহা চোখ জোড়া বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আপন মনে বলল, এইবার নাহয় একটু নিজের জন্যই ভাবলাম!
.
.
.
আজরার সঙ্গে শপিংমল এ আসে মানতাশা। মানতাশারই হঠাৎ বাইরে আসার ইচ্ছে হয়েছে। আবদার করে বসে আজরার কাছে। তাই সে না এসে পারলো না। কিন্তু এখানে যে আরশানের দেখা পেয়ে যাবে ভাবেনি।
তাকে দেখেই আরশান কাছে আসলো। মানতাশা চলে যেতে চাইলে তার পথ আঁটকায় সে। আজরা তাদের কথা বলার সুযোগ দিয়ে দূরে চলে যায়। মূলত আজরাই আরশানকে খবর জানিয়েছে তারা এখানে আসবে।
এদিকে আজরা চলে যাওয়াই তার উপরে রাগ হয় মানতাশার৷ সে আরশানকে বলল, কী চায়?
-তোমাকে চাই।
-আমাকে!
-হুম। সব ভুলে চলে আসো আমার কাছে।
-এত সহজে সব ভুলে যাব?
-সবটা ঠিক করে নেব।
মানতাশা একটু ভেবে বলল-
যেতে পারি। তবে একটা শর্তে।
-কী?
-তোমার ভাবীর সঙ্গে আমি থাকতে পারব না। আর আমার নামে একটা আলাদা ফ্লাট কিনে দিতে হবে। সেখানেই থাকব আমরা। বলো রাজি?
এইবার চুপসে যায় আরশান। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মানতাশা বলল, শর্ত মানতে পারলেই এসো।
মানতাশা হাঁটতে শুরু করে। সে জানে, আরশান কখনোই এটা মানবে না। তাই ওমন কথা সে বলেছে, যাতে করে তাকে আর বিরক্ত না করে আরশান। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সে এজাজকে। পেছনে ফিরে আরশানকে না দেখে সে এজাজের কাছে আসলো। এজাজ তাদের দেখেছে। কিন্তু কোনো কথা সে শুনতে পায়নি। তাই সে বলল, তোমার হাসবেন্ড বুঝি?
-হু।
-কী বলল?
-ওসব ছাড়ো। তুমি এইখানে?
-শপিং করতে আসলাম।
-ওহ!
-ফিরে যাচ্ছ না কেন তার কাছে?
-ইচ্ছেটা মরে গেছে। অতি লোভের শাস্তি পেয়েছি আমি। আরও পেতে চাইনা! এইবার একটু সুখ চাই। কিন্তু আমি জানি, ফিরে গেলে আবারও দু:খের সাগরে ভাসতে হবে।
আজরা আসে। এজাজকে দেখে বলল, কেমন আছেন?
-ভালো। আপনি?
-জি ভালো। চলুন না কোথাও গিয়ে বসি?
আজরার কথাতে তারা কফি খেতে আসে। অসাবধানতার বশত ওয়েটারের কাছ থেকে মানতাশার হাতে গরম কফি পড়ে। সে মুখে শব্দ করে উঠলে ছুটে যায় এজাজ। বোতল থেকে তার হাতে পানি ঢেলে বলল, জ্বলছে?
তার দিকে ছলছলে নয়নে তাকিয়ে রইলো মানতাশা। একটুও বদলায়নি এজাজ। কত বড়ো ধোকা তাকে দিয়েছে মানতাশা। তবুও সে কত সহজে ক্ষমা করে দিয়েছে তাকে। এজাজকে হারানোর এই আফসোস বুঝি আজীবন কাঁদাবে তাকে!
.
.
.
সাজিরের মা বসে রয়েছে তাসফিয়ার বাবার সামনে। তাসফিয়াকে নিতেই এসেছেন তিনি। অনেক বোঝানোর পরেও রাজি হলো না তাসফিয়া। মুখ বাঁকিয়ে ভেতরে চলে গেল সে। সাজেদা বেগম মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বললেন, আমি সাজিরকে পাঠাব। সে নিয়ে যাবে মেয়েকে তার রাগ ভাঙিয়ে।
-আচ্ছা আপা।
সাজেদা বেগম হালকা কেশে বললেন, একটা কথা ছিল যে ভাই।
-জি বলুন?
-সম্পত্তি সাজিরের নামে করার কথা ছিল। কিন্তু তখন তাড়াহুড়োতে বিয়ে হওয়াই এসব করা হয়নি। এখন তো করা যায়?
তিনি কিঞ্চিৎ হেসে বললেন-
ভালোই হলো তখন করিনি। এখন আর সাজিরের নামে করব না। করব আমার মেয়ের নামে। তাকে আপন করে নিতে বলেন, সব এমনিতেই পাবে।
সাজেদা বেগম অবাক হয়ে বললেন, এমন তো কথা ছিল না ভাই!
-আপনার ছেলে আমার মেয়েকে মেনেই নিচ্ছে না। আপনি চান সব ওর নামে করে দিই? তবে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ কোথায়?
তার কথা শুনে সাজেদার মুখ মলীন হয়ে যায়। কী ভেবেছিল আর কী হচ্ছে! এসবের জন্য নাবীহা দায়ী। ওর জন্যেই সাজির সামনের দিকে এগুতে পারছে না।
-কী ভাবছেন? বাসায় গিয়ে ছেলেকে বোঝান। সম্পত্তির প্রয়োজন হলে তাকে বলুন তাসফিয়ার মন জিতে নিতে। বউ এর সবকিছুই তো তার!
-জি আচ্ছা।
.
.
.
-তুই আবার নাবীহাকে কিছু বলিসনি তো?
আজরার কথা শুনে মানতাশা বলল, কী বিষয়ে?
-ওর সম্পর্কে আমি যা বলেছি।
মিথ্যে বলল মানতাশা-
আরেহ না!
-আচ্ছা তুই বল? আমি কী মিথ্যে কিছু বলেছি? আরশান ভাই তোকে কতটা চায়! আজও কত মিনতি করলো।
-যাই বলিস আজরা! ওভাবে তোর চলে যাওয়াটা আমার পছন্দ হয়নি। নাবীহা হলে ওমন করতো না।
-কারণ সে তোর ভালো চাইবেও না।
-তুই চাস ওর ভালো? ডিভোর্স হয়েছে এমন কারো জন্য প্রস্তাব দিতে চেয়েছিস!
-কেন চেয়েছি ব্যাখ্যা করেছি আমি। তাছাড়া তোরা এমন ভাব করছিস যেন আমি ভুল কিছু করলাম। এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব ও পাবে বলে তোর মনেহয়? ভালো চাই বলেই বলেছি আমি।
-সেটা আমি বুঝছি। কিন্তু নাবীহা নিশ্চয় অন্যকিছু ভাবছে।
-তোকে বলেছে নাকি কিছু?
-নাহ!
-বলে থাকলে বলব ও যতটুক ততটুক নিয়েই ভাবতে। ডিভোর্স হলেও ওর চেয়েও ঢের যোগ্য আমার ভাই। আরে ওর ভালো মন্দ বিচার করার ক্ষমতা নেই এখন। মনমানসিকতা ভালো নেই। ওর কোনো পরামর্শ তুই গ্রহণ করবি না।
এই বলে আলমারি থেকে আরও কিছু বাক্স নামালো আজরা। মূলত ইনতিসারের দেওয়া উপহার সামগ্রী বান্ধবীদের দেখাতে নামাচ্ছে সে। নাবীহা ফ্রেশ হয়ে আসবে জানায়। কিন্তু সে যে আড়াল থেকে এসব শুনছে তারা টেরই পায়নি।
নিজেকে সামলে নিয়ে একটু বাদে নাবীহা প্রবেশ করলো। এতসব উপহার দেখে মানতাশা বলল, এত এত সারপ্রাইজ তোকে ইনতিসার ভাই দিয়েছে!
আজরা হেসে বলল-
উনি কারণে অকারণে সারপ্রাইজ গিফট দিতে ভালোবাসেন। এটা তার সুন্দর একটি স্বভাবও বলতে পারিস।
বিছানার উপরে থাকা উপহার সামগ্রীর দিকে তাকিয়ে নাবীহা আপন মনে ভাবলো, সেও এমন রাজকীয় ভাবে থাকতে পারতো। যদি বিয়েটা ইনতিসারের সঙ্গে হত!
নিশ্চুপ নাবীহাকে দেখে আজরা বলল, কী ভাবছিস?
-ভাবছি তুই অনেক ভাগ্যবতী।
-আসলেই। নাহলে কী আর এতসব কিছু পাই?
-এতসব কিছুর জন্য ভাগ্যবতী নাকি ইনতিসারের জন্য?
নাবীহার কথার মানে বুঝতে না পেরে আজরা বলল-
বুঝিনি?
-কিছু না।
আরেকটু থেমে নাবীহা বলল, সারপ্রাইজ তোর খুব পছন্দ তাই না?
-সে আবার কার হবে না!
-সামনে অনেক বড়ো একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তোর জন্যে।
-তাই! কী বল?
-সময় হলেই জানবি।
একটু আগেও ইনতিসারকে বলা কথার জন্যে আফসোস হচ্ছিলো নাবীহার। কিন্তু এখনো আজরার বলা কথাগুলো শুনে সে বুঝতে পারে, যা হচ্ছে তাই ঠিক! এটাই হওয়া উচিত আজরার সঙ্গে। নাবীহা চাইলেই কী করতে পারে সেটা দেখানোর সময় এসেছে। সে কার যোগ্য এটা জানানোর সময় এসেছে। আজরার এই অহংকার তার পতন ঘটাবে। এখন ইনতিসারের অপেক্ষা। তার সিদ্ধান্ত কী হয় এটা জানার অপেক্ষায় রয়েছে নাবীহা।
.
.
.
রাতে স্টাডি রুমে অফিসের কিছু কাজ সেরে ঘুমোতে আসে ইনতিসার। আজরা ঘুমিয়ে গেছে। বিছানায় শুতেই কাশির পরিমাণ বেড়ে গেল ইনতিসারের। সন্ধ্যার পর থেকেই কাশি হয়েছে তার। উঠে পড়লো ইনতিসার। কাশতে কাশতে বারান্দায় চলে আসলো সে। কাশির কারণে মাথাটাও ধরেছে খুব। হাঁটাহাঁটি করলে নিশ্চয় ভালো লাগবে।
খানিক বাদে আজরাকে ট্রে হাতে দেখে চমকে উঠলো সে। আজরা এসে বলল, রঙ চা করে এনেছি। গলায় আরাম পাবেন। সাথে মেডিসিন নিয়ে এলাম৷ খেয়ে নিন।
চা এর কাপটা হাতে নিয়ে ইনতিসার বলল, তুমি তো ঘুম ছিলে।
-ঘুম ছিলাম বলে কী আপনার যন্ত্রণা টের পাব না?
চা শেষ করে মেডিসিন খেয়ে রুমে আসে তারা। আজরা বাম নিয়ে ইনতিসারকে বলল, আপনি শুয়ে পড়ুন। আমি মাথা টিপে দিই। নিশ্চয় মাথাটাও ধরেছে?
হ্যাঁ সূচক ভাবে মাথা নেড়ে শুয়ে পড়ে ইনতিসার। আজরা তার মাথা টিপে দিতে শুরু করলো। ইনতিসার ভাবলো, বলার আগেই কিভাবে সব বুঝে নেয় আজরা!
আরামে চোখ জোড়া লেগে আসে ইনতিসারের।
হঠাৎ ইনতিসারের ঘুম ভেঙে যায়। টের পেল এখনো আজরা মাথা টিপতে ব্যস্ত। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে দেখলো, প্রায় ঘন্টাখানেক হয়ে গেছে। তবুও আজরা থামেনি। ইনতিসার ব্যস্ত হয়ে তার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, এখনো জেগে আছ তুমি? আরে হাত ব্যথা করবে তাও!
-কারণ আপনি আরামে ঘুমোচ্ছেন। তাই কিভাবে থামি বলুন?
-সেরে গেছে মাথাব্যথা।
-মিথ্যে বলছেন।
-উহু! শুয়ে পড়ো।
ইনতিসারকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো আজরা। তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো ইনতিসার। আজরা তার কত খেয়াল রাখে! সত্যিই মেয়েটা তাকে খুব ভালোবাসে।
পরমুহূর্তেই নাবীহার কথা মনে পড়ে ইনতিসারের। আজরাকে তালাক দিতে বলেছিল সে। এতবড়ো অন্যায়টা কিভাবে করবে ইনতিসার! কাকে বেছে নেবে সে? তাকে সে ভালোবাসে? নাকি সে যাকে ভালোবাসে!
.
চলবে