একদিন কাঁদবে তুমিও পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
709

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩৭
#Saji_Afroz

আজ আবারও অফিস শেষে রাদিদের সাথে বেরুলো নাবীহা। ইনতিসার বের হয়ে তাকে না দেখে ফোন করলো। নাবীহা রিসিভ করতেই ইনতিসার বলল, কোথায় তুমি?
-গাড়িতে।
-গাড়ি কেন ঠিক করতে গেলে? তোমাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। বলেছিলাম না?
-কিন্তু আমি বাসায় যাচ্ছি না।
-তবে?

এতকিছু ইনতিসার জিজ্ঞাসা করছে বলে একটু বিরক্ত হলো নাবীহা। সব কথা সবসময় তো আর তাকে বলা যায় না। এটা তার বুঝতে হবে। মানলো সে আজরার স্বামী। আজরা তাকে বলেছে নাবীহার খেয়াল রাখতে। তাই বলে সবসময় নজর বন্দী রাখবে? নাবীহা হালকা কেশে বলল, চিন্তা করবেন না। বাসায় ঠিকমতো চলে যাব আমি।

এই বলে সে ফোন রাখলো। ইনতিসার ঠিকই বুঝতে পারলো, নাবীহা রাদিদের সাথে রয়েছে।

-আজও কী কফি খাবেন?

রাদিদের প্রশ্নে নাবীহা বলল, সেদিন শুধু কফি খাইনি!
-নিজ থেকেও কিছু খাননি।
-তবে কী আমিই অর্ডার দেব আজ?
-জি।
-তার আগে বলুন হঠাৎ এই উপহার?
-কোনো কারণ ছাড়াই।
-কারণ ছাড়া কেউ কাউকে উপহার দেয় নাকি?
-দেয়না বুঝি?
-ঘনিষ্ট কেউ হলে দেয়।
-আমি যদি বলি আপনি আমার জন্য স্পেশাল?

নাবীহা কিছু বলল না। ওয়েটার আসলে খাবার অর্ডার দেয় সে। এরপর রাদিদের দিকে তাকিয়ে বলল, ধন্যবাদ উপহারের জন্যে।
.
.
.
বাসায় আসার পর থেকেই ইনতিসারকে অন্যমনস্ক দেখছে আজরা। কয়েকবার তার কী হয়েছে জানতেও চেয়েছে। কিছু হয়নি বললেও আজরা বেশ বুঝতে পারছে, কোনো বিষয়ে চিন্তিত সে। অফিস থেকে আসার পর থেকেই স্টাডি রুমে বসে রয়েছে ইনতিসার। কয়েক কাপ কফিও ইতিমধ্যে শেষ করেছে। বুয়াকে আবারও কফি নিয়ে যেতে বললে তা আজরা নিয়ে যায়। ইনতিসারের দিকে বাড়িয়ে দিলে মগটি হাতে নেয় সে।
আজরা বলল, কী হয়েছে বলুন তো আপনার?
-কিছু না তো।
-কিছু তো একটা হয়েছে। বলুন না?
-আহ আজরা! কিছুই হয়নি। তুমি যাও রুমে। আমার কাজ আছে।
-না। আমি যাব না। আপনার কী হয়েছে না বলা অবধি আমি যাচ্ছি না। বলুন না আমাকে?

আচমকা হাতে থাকা মগটি ছুড়ে মারলো ইনতিসার। সাথে চ্যাঁচিয়ে বলল, বললাম না যেতে এখান থেকে? এতবার বলা লাগে একটা কথা? আর আমার কী হবে? কী শুনতে চাচ্ছ তুমি!

ইনতিসারের এমন কাণ্ডে হতভম্ব হয়ে যায় আজরা৷ কী বলবে খুঁজে না পেয়ে ছলছল নয়নে সে তাকিয়ে থাকলো ইনতিসারের দিকে। ইনতিসার আবারও বলল, এখনো দাঁড়িয়ে আছ?

আজরা নিজের রুমের দিকে ছুটে যায়। মুখে কাপড় গুজে কাঁদতে থাকলো সে। ইনতিসার তার সাথে এমন ব্যবহার করলো কেন? সন্তান না হওয়ার কারণে সেও কী হতাশায় ভুগছে?
এদিকে এসব ইলারা জামান দেখেছেন। তিনি ইনতিসারের কাছে এসে ধমক দিয়ে বললেন, এসব কোন ধরনের ব্যবহার?

মা কে দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায় ইনতিসার। সে আমতাআমতা করতে থাকে। ইলারা জামান বললেন, আমি কিছু জিজ্ঞাসা করছি তোমাকে?
-আসলে আমি অফিসের একটা বিষয় নিয়ে চিন্তিত। আজরাকে এসব শেয়ার করতে চাইনি। কিন্তু ও নাছোড়বান্দা। টেনশনের জন্য মন মেজাজ ভালো না। সেসবের রাগ ওর উপরে দেখিয়ে ফেললাম।

ইলারা জামান নিজের সামলিয়ে বললেন, এমন যেন আমি আর না দেখি।

তিনি হনহনিয়ে আজরার কাছে এলো। তাকে দেখে চোখের পানি লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজরা। তিনি বললেন, আমি সবটা দেখেছি।

আজরা এইবার তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নার গতি বাড়িয়ে দিলো। সে বলল, আমার বাচ্চা হচ্ছে না বলে কী উনি ডিপ্রেশনে আছেন?
-মোটেও না! আসলে অফিসের কাজে টেনশনে সে। তোমার উপরে রাগ দেখিয়ে ফেললো।

তাকে ছেড়ে আজরা বলল, আমি আরও ভাবলাম…

তাকে থামিয়ে ইলারা জামান বললেন, এই বিষয়টা নিয়ে তুমি এত ভাবছ বলেই সব কিছুর কারণ এটা ভেবে নিচ্ছ। মন ছোটো করো না। আল্লাহ একদিন সহায় হবেন।
.
.
.
মানতাশাকে রুম বন্দী করে রাখা হয়েছে। ফোনটা অবধি নেই তার কাছে। নিয়মিত খাবার রুমে যাচ্ছে। কিন্তু বন্দী রুমে নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে তার।
বাসা থেকে ফোন এসেছে মানতাশার। আরশান ফোন নিয়ে আসে। কড়া ভাবে মানতাশাকে বলল সে, যদি এখানের কিছু জানাও তবে তোমার খবর আছে।
-কী খবর?
-কী খবর! খাবারটাও পাবে না তুমি।
-আমার খাবারের প্রয়োজন নেই। আমি বাসায় যেতে চাই। আমি সংসার করতে চাই না তোমার সাথে।
-এত সহজে তো তোমাকে আমি ছাড়ব না।
-কেন না?
-কারণ তোমাকে আমি ভালোবাসি।

তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে মানতাশা বলল, এসব ভালোবাসা?
-তুমি যদি টাকার জন্য আমাকে ভালোবাসতে পারো তবে আমি কেন তোমাকে বন্দী রেখে নয়?

মানতাশা কিছু বলল না। আরশান তাকে ফোন দেয়। সাথে বলল, যদি কিছু জানাও তবে তোমার নামে বদনাম রটাতে এক মিনিটও ভাববো না আমি।

ভয়ে মানতাশা মা বাবাকে কিছু বলল না। কান্না চেপে বলল, আমি ভালো আছি। অনেক ভালো আছি!
.
.
.
নাবীহার রাগ আজরার উপরে ঝেড়ে নিজেরই খারাপ লাগছে ইনতিসারের৷ সে আজরার কাছে এসে এর জন্য ক্ষমা চায়। আজরা বলল-
আমারই বোঝার উচিত ছিল যে, আপনি ব্যস্ত আছেন। আপনি ক্ষমা চেয়ে আমাকে লজ্জা দেবেন না প্লিজ।

আজরাকে বুকে টেনে নিলো ইনতিসার। আশ্চর্য! আগে ওকে জড়িয়ে ধরলে পৃথিবীর সমস্ত সুখ যেন খুঁজে পেত। কিন্তু এখন! মনের মাঝের অস্থিরতা এখনো বিরাজমান। বুকে আজরাকে রেখে নাবীহার ভাবনায় মগ্ন সে। এমনটা কেন হচ্ছে তার সাথে! সে তো এসব করতে চায় না। কিন্তু দিন দিন যেন বেহায়া হয়ে উঠছে সে। বড্ড বেহায়া!
.
.
.
এভাবে কিছুদিন কেটে যায়। অফিস শেষে প্রায় রাদিদ ও নাবীহা বাইরে বেরুই। নাবীহা বুঝতে পারছে, রাদিদ তাকে পছন্দ করে। আকার ইঙ্গিতে এটাই বুঝিয়েছে সে। কিন্তু নাবীহা? সে কী পছন্দ করে রাদিদকে? উত্তর না! ভালোবাসার উপরে তার আর বিশ্বাস নেই। তবুও কেন রাদিদের সাথে মিশছে সে? এটার উত্তরও যেন সে পেয়ে যায়, সামনে থাকা সাজিরকে দেখে।
শপিং করতে এসেছে সে। সামনেই সাজিরকে দেখতে পায় তার স্ত্রীর সাথে। তারাও শপিং করছে।
নাবীহাকে দেখে সাজির। স্ত্রীকে বলল, তুমি জামা পছন্দ করো। আমি একটা কল এটেন্ড করে আসি।

এই বলে বেরিয়ে সে নাবীহার পিছু নিলো। তাকে ডাকলো। নাবীহা থামতে না চাইলে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় সাজির। নাবীহা বলল, কেন আটকালে আমাকে?
-তোমার সাথে কথা ছিল আমার।
-আমি তো তোমাকে আটকাইনি, তাই সহজেই আমার জীবন থেকে চলে যেতে পেরেছ। এখন আমার পথ আঁটকে কী বলতে চাও তুমি?
-আমার দূর্বলতার কথা বলতে চাই! তোমার বাসায় যাওয়ার সাহস হয়নি। নাম্বারও বদলে ফেলেছ। কিভাবে বলি?
-আমি শুনতে চাইনা। তবে তোমাকে শোনাতে চাই।
-কী?
-আমিও বিয়ে করছি এবং খুব দ্রুত। আর তোমার চেয়েও বেটার কাউকে করব। তোমার মা কে বলে দিও।

এই বলে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায় নাবীহা। এবং সিদ্ধান্ত নেয়, রাদিদ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজি হবে সে। সাজিরের পরিবারকে দেখানোর জন্য হলেও সুখে থাকতে হবে তার!
.
.
.
পরেরদিন অফিসে ইনতিসারের কাছে কিছু ফাইল নিয়ে হাজির হয় নাবীহা। সেসব দেখতে শুরু করলো ইনতিসার। নাবীহা বলল, রাদিদ ছেলেটাকে আপনার কেমন লাগে?

কেন এই কথা জানতে চাচ্ছে বেশ বুঝতে পারলো ইনতিসার। সে বলল, খারাপ না। কেন বলছ? প্রপোজ করেছে বুঝি?

নাবীহা হেসে বলল, এখনো না।
-করতে পারে?
-হয়তোবা।
-রাজি হবে করলে?
-ভাবছি।

বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে ইনতিসারের। মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল, আমি তোমার জন্য ওর চেয়েও ভালো কাউকে আশা করি। এসব বিষয়ে তাড়াহুড়ো করো না যেন।

হ্যাঁ সূচকভাবে মাথা নেড়ে বেরুতে যায় নাবীহা। দরজা খুলতেই দেখা পায় রাদিদের। সেও ফাইল নিয়ে এসেছে ইনতিসার কাছে।
নাবীহা ও রাদিদের চোখাচোখি হতেই দু’জনেই হাসলো। তাদের মুখের এই হাসি স্পষ্ট বলে দিচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি একে অপরকে মনের কথা জানাবে তারা। নাবীহার জন্য খুশি হওয়া উচিত ইনতিসারের। কিন্তু সবকিছু কেন সে সহজে মানতে পারছে না। কেন না!
ইনতিসার সিদ্ধান্ত নেয়, তার থামা উচিত। শেষ করা উচিত সব এখানেই। আগেও পেরেছিল সে। এখনো পারতে হবে। এই ভেবে আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরুলো সে। সোজা চলে যায় শপিংমল এ। ডায়মন্ড এর একটি রিং কিনে নেয় আজরার জন্য। সাথে আরও কিছু শপিং করে। আজরাকে নিয়ে সময় কাটালে হয়তোবা এসব চিন্তা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারবে সে। খুব দ্রুত আবারও আজরাকে নিয়ে দেশের বাইরে যাওয়া প্রয়োজন। সম্পর্ক টাকে আগের মতো করা জরুরি হয়ে উঠেছে খুব বেশি।
.
চলবে

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩৮
#Saji_Afroz

ইনতিসারের পছন্দের খাবার বানাতে ব্যস্ত আজরা। একজন কর্মচারী এসে বলল, আপনাকে স্যার খুঁজছেন।
-চলে এসেছেন উনি? এক মগ কফি দিয়ে আসেন। আমি যাচ্ছি।

এই বলে রান্নায় মনোযোগ দেয় সে। খানিকবাদে নিজের রুমে ফিরে আসে আজরা। খাট ভর্তি প্যাকেট দেখে অবাক হয় সে। ইনতিসার তাকে দেখে বলল, তোমার অপেক্ষাই করছিলাম।
-এত শপিংব্যাগ?
-সব তোমার জন্যে এনেছি।
-হঠাৎ?
-আমার ইচ্ছে হলো তাই। তুমি বলো এতক্ষণ কোথায় ছিলে?
-আপনার পছন্দের খাবার রান্না করছিলাম।
-তোমাকে না করেছি এসব করতে। কেন করো?
-আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই।

আজরার কথা শুনে হেসে ফেললো দু’জনেই। ইনতিসার আজরার হাত ধরে বলল, কেন নিজের হাতকে কষ্ট দাও বলো তো।

এই বলে মুহুর্তের মধ্যেই আজরার হাতে একটি আংটি পরিয়ে দেয় সে। আজরা হেসে বলল, এটা পরানোর জন্যই হাত ধরা হয়েছে? আমি তো ভাবলাম অন্যকিছু।
-অন্যকিছুও।
-কী?

তার হাতের উপর চুমু দিয়ে ইনতিসার বলল, এটার জন্যেও ।
এই বলে আজরাকে জড়িয়ে ধরে সে। আজরা শান্তির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে ভেবেছিল, ইনতিসার তার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এত বেশি ভেবে ফেলেছে যে নিজের উপরেই রাগ হচ্ছে তার। এতবড়ো একটা অফিস সামলাই সে। অনেক বিষয়ে মেজাজের পরিবর্তন আসতে পারে৷ এটা তার বুঝতে হবে। অহেতুক কোনো চিন্তা আর করবে না সে৷ তার ইনতিসার তাকে সবসময় এভাবেই ভালোবাসবে।
.
.
.
আরও কিছুদিন কেটে যায়। ইলারা জামান অনলাইনে কেনাকাটা করছেন। সাথে আজরাও রয়েছে। তিনি বললেন, আমাকে চয়েজ করে দাও। তুমিও নাও যা পছন্দ।
-দেশের বাইরে আপনারা যাচ্ছেন। আপনি দেখুন।
-আরে দেখো তো! তুমি না নিলে আমিও নেব না বললাম।
-আচ্ছা আচ্ছা। দেখছি।

শাশুড়ী ফোনে শাড়ির ছবি দেখছে। আর আজরা তাকিয়ে রয়েছে তার দিকে। একমাসের জন্যে দেশের বাইরে থাকবেন ওর শশুর ও শাশুড়ী। বাসাটা ফাঁকা হয়ে যাবে ভাবতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল ওর। একমাস যে তাদের ছাড়া কিভাবে কাটাবে! তারাও যে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখেছে আজরাকে।

-বেরুচ্ছি আমি।
ইনতিসারকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো আজরা।
ইলারা জামান বললেন, তোরাও আমাদের সাথে যেতে পারতি?
-সবাই চলে গেলে অফিস কে সামলাবে? তাছাড়া আমরা কিছুদিন আগে ঘুরে এলাম।

আজরাও তাল মিলিয়ে বলল, হ্যাঁ মা। উনি ঠিকই বলছেন। আপনাদেরও ঘুরাঘুরি করা প্রয়োজন।

ইলারা জামান বললেন, হু! সুস্থ থাকতে থাকতে মনের সব আশা পূরণ করে নেব।

আজরা বলল, আপনি সবসময় সুস্থ থাকবেন।

ইনতিসার হেসে বিদায় জানিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুলো।
.
.
.
এভাবে একা একা কী দিন পার করা যায়? সেই কবে থেকে রুম বন্দী হয়ে আছে মানতাশা। বিয়ের আগে অন্যরকম একটা জীবন আশা করেছিল সে। অন্যরকম জীবন তো পেলই। কিন্তু যেমনটা আশা করেছিল সম্পূর্ণ তার বিপরীত। যে জীবনে দিনের আলোটাও দেখা যায় না! দিনও এখন তার কাছে অন্ধকারময়!
বুয়া এলো খাবার নিয়ে। এরইমধ্যে তার ফোন বেজে উঠে। হাতে থাকা ফোনটা রিসিভ করে, ভুলক্রমে দরজা বন্ধ না করে চলে গেল সে। অবশ্য তার এমন ভুল হওয়ারই কথা। কারণ সে এই বাড়িতে নতুন এসেছে। নিয়মাবলি মেনে চলতে সবারই সময় লাগে।
মানতাশা এই সুযোগ কাজে লাগাতে চায়। সে আর আরশানের সঙ্গে থাকতে চায় না। মা বাবাকে চাইলেও সব বলতে পারে না সে। যতবারই ফোনে কথা হয়, আরশান পাশে বসে থাকে। কিছু বললে তারা আসার আগেই যদি আরশান তার সাথে খারাপ কিছু করে বসে? এই ভয়েই বলতে পারে না। আজ এই সুযোগ হাত ছাড়া সে করবে না।
গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায় সে দরজার দিকে। খোলা পেতেই আশেপাশে তাকিয়ে বেরিয়ে পড়লো মানতাশা। আজই এই বাড়িতে তার শেষ দিন!
.
.
.
কয়েকদিন যাবত রাদিদের সাথে কথা কম হচ্ছে নাবীহার। অবশ্য রাদিদ নিজেই কথা কম বলছে। আগে বারবার ফোন করতো, বেরুতে বলতো। কিন্তু এখন! অফিস টাইমেও তাকে দেখলে তেমন একটা কথা সে বলে না। আজ কী নাবীহা নিজেই তাকে বেরুতে বলবে? যদিও রাদিদের প্রতি আলাদা কোনো টান সে অনুভব করে না। কিন্তু সাজিরের পরিবারকে দেখানোর জন্য হলেও তার ভালো কাউকে বিয়ে করতে হবে। বিষয়টা জেদের পর্যায়ে চলে গেছে এখন। নাবীহা উঠে পড়ে। রাদিদের কাছে আসে সে। অফিসের করিডরে কয়েক জনের সাথে রাদিদকে দেখতে পায় সে। নাবীহা চলে যেতেও চেয়েও থেমে যায় তাদের কথা শুনে। সাথে সাথেই আড়াল হয়ে যায় সে পুরো কথা শোনার জন্যে।
আফজাল বলল, তুমি ভাই চ্যালেঞ্জ এ হেরেছ। তোমাদের মেলামেশা দেখে ইনতিসার স্যার কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। তার মানে হলো তিনি অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত নন।

রাদিদ বলল, কিন্তু তিনি নাবীহাকে পছন্দ করেন।

শানজিল বলল, যাই বলেন ভাই! আমাদের চ্যালেঞ্জ এ ছিল স্যার যদি এই বিষয় নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া করেন তবে আপনি জিতবেন। যেহেতু করেননি তাই আপনি হেরেছেন। এইবার আমাদের সবাইকে দুই লাখ টাকা দিতেই হবে।

রাদিদ বলল, চাকরির রিস্ক নিয়ে এসব করলাম আমি। টাকা নেবেন আপনারা?

একজন বলল, কথা এমনই ছিল ভাই। জিতলে আমাদের সবার তরফ থেকে আপনি পাঁচ লাখ পেতেন। হেরে দুই লাখ দিতে পারবেন না?
-ওকে ওকে। পাবেন আপনারা।

রাদিদের নিজের উপরে রাগ হয়। সে এই অফিসে আর বেশিদিন থাকবে না। নতুন অফিসে জয়েন দেবে। এই ভেবে চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিল। যাওয়ার আগে পাঁচ লাখ টাকা পেলে মন্দ কী!
ইনতিসার ও নাবীহার মেলামেশা দেখে ভেবেছিল, তাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে। তাই এত টাকার বাজি ধরেছিল সে। কিন্তু হেরে গেল। মাঝখানে পাঁচ লাখ টাকার স্বপ্ন দেখতে গিয়ে তার দুই লাখ টাকা যাচ্ছে।

এদিকে এসব শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো নাবীহা। হাত-পা কাঁপতে শুরু করলো তার। কোনোমতে নিজের চেম্বারে ফিরে আসে। পুরো এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে পান করে। এরপর চেয়ার টেনে ধপাস করে বসে পড়ে তাতে। তার সাথেই কেন সবসময় এমন হয়! কেন!
.
.
.
কয়েকটা ফাইল আনার কথা নাবীহার। এখনো আনলো না। এতক্ষণ সময় লাগার তো কথা না! নাবীহা যথেষ্ট দায়িত্বশীল। তবে আজ এত সময় লাগছে কেন?

নাবীহার কাছে আসলো ইনতিসার নিজেই। তার এমন বেহাল অবস্থা দেখে অবাক হয়ে যায় সে। ইনতিসার বলল, এভাবে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেললে কেন? কী হয়েছে তোমার?

না চাইতেও ইনতিসারের জোরাজোরিতে সবকিছু তাকে খুলে বলল সে। ইনতিসার রাগে হনহনিয়ে সোজা চলে যায় রাদিদের কাছে। চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাকে। নিয়মাবলি পালন করে তাকে বেরুতে বলল ইনতিসার। তার এই কর্মের সাথে যারা জড়িত ছিল তাদেরও নোটিশ পাঠানো হয় চাকরি ছাড়ার। দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় না এদের।

এসব কাজ সেরে নাবীহার কাছে আসে ইনতিসার। কিন্তু এখানে নেই সে। দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলে জানালো, মাত্রই বের হয়েছে সে।

এদিকে অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটে চলেছে নাবীহা। গন্তব্য কোথায় জানা নেই। কী মনে করে যেন হুট করে রাস্তা পার হতে শুরু করলো সে। তার দিকে যে একটি ট্রাক এগিয়ে আসছে সে টেরই পায়নি। হর্ন তার কানে গিয়ে পৌঁছায় না।
আরেকটু হলেই গাড়ির নিচে চাপা পড়তো সে। কারো হ্যাচকা টানে তার বুকে এসে পড়ে নাবীহা। সাথে সাথেই চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো সে। এ আর কেউ নয়। ইনতিসার! সে ব্যস্ত হয়ে তাকে নিয়ে রাস্তার ধারে চলে আসলো। এসেই বলল, তুমি ঠিক আছ নাবীহা?

সে হাউমাউ করে কেঁদে বলল, কেন বাঁচালেন আমায়? মরতেই দিতেন।
-কীসব বলছ!
-ঠিকই বলছি। আমি তো কাউকে ঠকাইনি। তবে কেন আমার সাথেই এসব হয়! বোধহয় আমার বেঁচে থাকাটাই একটা ভুল। মরে যাওয়াই ভালো।

এই বলে আবারও রাস্তার দিকে যেতে চায় নাবীহা। তাকে থামিয়ে ইনতিসার প্রায় চ্যাঁচিয়ে বলল, বাঁচবে তুমি। বাঁচতে তোমাকে হবেই। অন্তত আমার জন্য! কারণ আমি এখনো…

কথাটি বলে নিজেই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় ইনতিসার। নাবীহাও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। বাকি কথা যেন বুঝতে পেরেছে সে। তাই বিস্ময় এর শেষ সীমানায় চলে যায় নাবীহা।
ইনতিসার বলল, কারণ…

তাকে থামিয়ে নাবীহা বলল, থামুন! আমি কিছু শুনতে চাই না।
-নাবীহা?
-প্লিজ থামুন!

ইনতিসার থেমে যায়। নাবীহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, আমি ঠিক আছি। বাসায় যাব।
-আমি পৌঁছে দিই?
-তার কোনো দরকার নেই।

এই বলে নাবীহা চলে যেতে চেয়েও থামলো। পেছনে ফিরে বলল, আজকে যেটা বলতে চেয়েছেন সেটা আর কোনোদিনও বলবেন না। চেষ্টাও করবেন না। প্রতারণার আগুন যে কত ভয়াবহ হয়, নিজে তাতে না জ্বললে অন্যের কষ্ট অনুভব যায় না। আজরাকে সেই কষ্ট আপনি দেবেন না।

এই বলে নাবীহা চলে যায়। ইনতিসারের চোখ বেয়ে পড়তে থাকে পানি। নিজের মনকে যে আজ কোনোভাবেই আঁটকাতে পারলো না সে!
.
চলবে

#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩৯
#Saji_Afroz

মালিহার ফোন পেয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরে আসে আরশান। মালিহার মুখে সবটা শুনে রাগান্বিত হয়ে পড়ে সে। সকল কর্মচারীকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যে মেয়েটি খাবার নিয়ে গিয়েছিল সে সব স্বীকার করে নেয়। আরশান তাকে বলল, এখানে আর কাজ করার প্রয়োজন নেই তোমার। আসতে পারো তুমি। পুরা মাসের বেতন নিয়ে চলে যাও।

মেয়েটি ভয়ে একটি কথাও বলল না। মালিহার কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে চলে গেল সে। দারোয়ানকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলল, ঘোমটা দেওয়া একজন বের হইছিল। আমি জিজ্ঞেস করছিলাম কে সে। বলছিল বুয়া।

মালিহা বলল, এখানে কোনো বুয়া ঘোমটা দিয়ে আসে?
-আমি এটা জিজ্ঞেস করছিলাম। সে বলল, মুখে নাকি এলার্জি হইছে হুট করে তাই ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে।

আরশান সবাইকে যেতে বলে। এরপর মালিহাকে বলল, আর কোথায় যাবে সে? নিশ্চয় বাবার বাড়িতে গেছে।

মালিহা বলল, যদি সব বলে দেয়?
-প্রমাণ তো করতে পারবে না।
-হু। বড় জোর ডিভোর্স পেপার পাঠাবে। ও পাঠানোর আগেই তুমি নাহয় পাঠিয়ে দাও। শিক্ষা হবে তার।

সে কথার কোনো উত্তর দিলো না আরশান। হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যায় সে।

এদিকে মরিয়ম বেগম ও দিদার আলম বেশ চিন্তিত। হুটহাট মানতাশা চলে এসেছে। তার মলীন চেহারা দেখে কী হয়েছে জানতে চেয়েছিল তারা। কিন্তু সে কিছুই জানায়নি। বরং আরশানকেও যেন কিছু জিজ্ঞাসা না করে এই বলে নিজের রুমে চলে যায় সে। সেই থেকে রুম বন্ধ করে বসে রয়েছে মানতাশা। কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছে না তারা।

মানতাশা ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। লম্বা একটা নি:শ্বাস ফেলে সে। একটা কাজ না করলে যেন শান্তির নি:শ্বাস টুকু নিতে পারছে না। মানতাশা রুম থেকে বেরিয়ে মা এর ফোনটি নিয়ে আসে৷ অনেক দিন পর ডায়াল নাম্বারে একটি নাম্বার তুললো সে। আর সেটি হলো এজাজের। তার নাম্বারে ডায়াল করতে হাত কাঁপছে। একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে ফোন করলো এজাজকে।

-আমেরিকা! উফফ ভাইয়া! আমি ভাবতেও পারছি না যে, আমার ভাই আমেরিকা যাবে।

বোন এলিজার কথা শুনে মৃদু হেসে এজাজ বলল, আমিও কী ভেবেছিলাম এমনকিছু!

পাশ থেকে মা আসমা আক্তার বললেন, কেউ একজন আমার ছেলেকে অযোগ্য মনে করেছিল। তাই আল্লাহ দু-হাত ভরে আমার ছেলেকে সুখ দিচ্ছে।

এই আনন্দে মিষ্টি মুখ করতে থাকে তারা। এজাজের ফোন বেজে উঠলে হাতে নেয় সে। ফোন নাম্বারটি চিনতে ভুল হলো না তার। মানতাশার মা এর ফোন নাম্বার। মানতাশা বেশ কয়েকবার সেই ফোন নাম্বার থেকে তার সাথে কথা বলেছিল।
হঠাৎ মরিয়ম বেগম ফোন দিচ্ছেন কেন? মানতাশা ঠিক আছে তো?
এজাজ নিজের রুমে এসে ফোন রিসিভ করলো। সালাম জানাতে গেলে মানতাশার কান্নাজড়িত কন্ঠস্বর শুনে থেমে গেল সে। ওপাশ থেকে ভাঙা গলায় মানতাশা বলল, এজাজ?

এতদিন পর মানতাশার কণ্ঠস্বর শুনে বুকটা ধুক করে উঠলো এজাজের। সাথে মানতাশার এমন ভাঙা গলা শুনেও বিষন্ন হয়ে পড়ে মুহুর্তেই৷ এজাজ বলল, কী হয়েছে? তোমার কণ্ঠ এমন শোনাচ্ছে কেন? সব ঠিক আছে তো?
-কিচ্ছু ঠিক নেই এজাজ। কিচ্ছু না!

এই বলে কাঁদতে থাকলো মানতাশা। এজাজ ব্যস্ত হয়ে বলল, আগে শান্ত হও প্লিজ!

মানতাশা নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-
আমি যে অন্যায় তোমার সাথে করেছিলাম সেটার শাস্তি পাচ্ছি। আমি ভালো নেই। তিলে তিলে মরে যাচ্ছি। অনেক কষ্ট হচ্ছে আমার।
-আরশান? সে কী করেছে তোমার সাথে?
-যা করেছে তাই আমার প্রাপ্য ছিল৷ আমি শুধু তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে ফোন দিলাম। আমায় ক্ষমা করে দিও।

এই বলে ফোনের লাইন কেটে দিলো মানতাশা। পেছনে ফিরে মা কে দেখে জড়িয়ে ধরলো সে। মরিয়ম বেগম বললেন, এসব সত্যি? কী করেছে আরশান তোর সঙ্গে?

মা কে সব খুলে বলে মানতাশা। তিনিও সব শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন। সাথে বললেন, এই ভয়ই আমি পেয়েছিলাম। দেখলি তো মা! কাউকে ঠকিয়ে ভালো থাকা যায় না। এজাজের মন ভাঙার শাস্তি পাচ্ছিস তুই।
.
.
.
-কফি খাবেন তো?

আজরার প্রশ্ন শুনে ইনতিসার বলল, হু। আমি স্টাডি রুমে যাচ্ছি। কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিও। কাজ আছে কিছু।

এই বলে ইনতিসার স্টাডি রুমে আসলো। চেয়ার টেনে বসে পড়লো সে। আজ যা হয়েছে তা কী ঠিক হয়েছে? নিজের আবেগকে কোনো মতেই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি সে। রাখবেই বা কিভাবে! তার ভালোবাসার মানুষটাকে আর কত কষ্ট পেতে দেখবে সে? ভালোবাসা! এই ভেবে নিজেই থমকে গেল সে। দাঁড়িয়ে পড়ে ইনতিসার। সারারুমে পায়চারি করে ছটফট করতে থাকলো সে। হ্যাঁ, নাবীহাই তো তার ভালোবাসা। প্রথম ভালোবাসা। কিন্তু আজরা? আজরা কী কেবল দায়িত্ব? কাকে বেছে নেবে সে জীবনে? নাবীহার কষ্ট যে সে সহ্য করতে পারছে না। সুন্দর একটা জীবন সেও পেত, যদি সে ইনতিসারের জীবনে থাকতো।
অনেক তো চেষ্টা করেছে সে, আজরার সাথে ভালো থাকতে। কিন্তু বারবার মন নাবীহাতে গিয়েই আঁটকে যায়। আর কত নিজেকে সামলাবে সে? আর কত! কিন্তু এসব করে আজরার প্রতি অন্যায় করছে না সে?
আবারও গভীর ভাবনায় মগ্ন হয়ে পড়ে ইনতিসার।
মানুষ নিজের ভালোবাসাকে পেতে কত কিছুই না করে। সে নাহয় এই অন্যায় টাও করলো!
আজ তো নাবীহার সামনে সত্যিটা চলেই এসেছে। ইনতিসারের জীবনে নাবীহা চলে আসলেই হয়! কিন্তু সেটা কী সম্ভব? নাবীহা কাল থেকে অফিসে আবার আসবে তো?
.
.
.
অফিসে না আসতে চেয়েও আসতে হলো নাবীহাকে।।কারণ সে নিরুপায়। ইনতিসার তাদের কাছ থেকে টাকা পায়। আর এইদিকে সংসারও তার সামলাতে হচ্ছে। জহিরের ক্ষতি তো সে করতে পারবে না! তাই সবটা বিবেচনা করে অফিসে আসলো নাবীহা।
নাবীহার কাছে আসলো ইনতিসার। তাকে দেখে শান্তি পায় সে। নাবীহা বলল, আমি ফাইল নিয়ে যাচ্ছিলাম এখুনি।
-আমায় দিয়ে দাও।
-জি।

নাবীহা ফাইল গোছাতে শুরু করে। ইনতিসার বলল, আমি কিন্তু কালকের বিষয়ে সিরিয়াস।

নাবীহা ভেবেছিল ইনতিসার মুখ ফসকে কাল সেকথা বললেও, আজ আর এসব বিষয়ে কথা তুলবে না। বরং লজ্জিত হবে। কিন্তু ইনতিসারের এমন আচরণে অবাক হয় সে। নাবীহা বলল, কীসব বলছেন ভেবে বলছেন তো? আপনার কাছ থেকে এটা আশা করিনি আমি। আপনার সাথে আমার সময় কাটাতে ভালো লাগতো মানে এই না যে আমি আপনাকে ভালোবাসি৷ সে তো আমি ডিপ্রেশনে ছিলাম বলে ঘুরতে ভালো লাগতো। আজরাও বলেছিল যখন যা লাগবে আপনাকে বলতে। কিন্তু এসবের যে অন্য মানে বের করবেন তা আমি বুঝিনি।
-আমার কথাটা অন্তত শোনো!
-কী বলবেন আপনি?
-ভালো আমি তোমাকেই বাসতাম। কিন্তু তুমি রাজি না হওয়াতে আজরাকে বিয়ে করতে হয় আমার।
-বিয়ে তো হয়েছেই?
-কিন্তু ভালোবাসা নেই।
-আপনার তরফ থেকে নেই। ও তো আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসে।
-কিন্তু আমি তোমাকে।
-আপনি আজরাকে ঠকাতে চান?
-নিজেকেও আর কত ঠকাব বলো?

নিশ্চুপ হয়ে যায় নাবীহা। তার ফোন বেজে উঠে। মরিয়ম বেগম ফোন করেছেন। সে ফোন রিসিভ করে। ওপাশ থেকে মরিয়ম বেগম তাকে বাসায় আসতে বলল। নাবীহা বলল, কিভাবে আসি এখন? আমি যে অফিসে আন্টি।

ইনতিসার সেকথা শুনে বলল, যাও। সমস্যা নেই।

নাবীহা আসবে বলে ফোন রাখলো। বেরুনোর সময় বলল সে, এসব চিন্তাভাবনা মাথা থেকে যত তাড়াতাড়ি ঝেড়ে ফেলবেন ততই ভালো।

এই বলে নাবীহা চলে যায়। ইনতিসার বিড়বিড়িয়ে বলল- বেহায়ার তালিকায় যখন নাম তুলেই ফেলেছি, আরও বেহায়া হয়ে দেখাব৷ এতে যদি তোমাকে পাওয়া যায়। মন্দ কী!

.
.
.
মানতাশার কাছে সবটা শুনে বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে যায় নাবীহা। সে বলল, এতকিছু ঘটে গেল আর আমাকে তুই জানালি না?

মরিয়ম বেগম বললেন, সে কী আমরাও জানতাম! তোমাদের ডাকলাম। যাতে করে কথা বলে ওর মনটা ভালো হয় একটু।
-আজরাও আসবে?

বলতে বলতে আজরা চলে আসে। মরিয়ম বেগম চা, নাস্তা আনতে রান্নাঘরের দিকে যান। এদিকে কেন যেন আজরার চোখের দিকে তাকাতে পারছে না নাবীহা। তাকে দেখলেই ইনতিসারের বলা কথাগুলো মনে পড়ছে। তাদের তিন বান্ধবীর সাথেই এসব ঘটছে কেন!

তারা মানতাশাকে শান্তনা দেয়। আজরা বলল, আমি ইনতিসারকে আরশানের সাথে কথা বলতে পারব।

মানতাশা বলল, কী বলবি তুই? আমি ও বাড়ি ফিরে যাব না আর। পারলে আমার ডিভোর্স পেপারটা নিয়ে দিয়ে আসিস।
-মাথা গরম করিস না মানতাশা। বৈবাহিক সম্পর্ক এত ঠুংকো না যে হুট করেই ইতি টানবি।
-তাই বলে মার খেয়েও সংসার করতে হবে?
-আরশান ভাই যেভাবে চায় সেভাবে চলে দেখতি!
-ওর ভাবীর গোলাম হয়ে?

আজরা একটু থেমে বলল, এসবের জন্যই তোর সংসার ভাঙনের পথে। সংসারের ক্ষেত্রে মেয়েদের ধৈর্যশীল হতে হয়।
-তোর সাথে এমন হলে কী করতি?
-জেদ না করে স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করতাম।

নাবীহা বলল, আর স্বামী পর নারীর প্রতি আসক্ত হলে?

আজরা তার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। নাবীহা আমতাআমতা করে বলল, এক্ষেত্রে কী করা উচিত জানতে চাইলাম। বা তুই হলে কী করতি?
-নিজের প্রতি আবার আসক্ত করতে চেষ্টা করতাম।
-না হলে?
-না হলে অবধি আমি ভাবতাম না। চেষ্টা থাকতো অব্যাহত। আর এসব কেন জিজ্ঞাসা করছিস বল তো! আরশান ভাই তো এমন না।

ক্ষীণস্বরে নাবীহা বলল, এমনেই!

এদিকে দিদার আলমের সামনে বসে রয়েছে এজাজ। মানতাশার সাথে দেখা করতে এসেছে সে। দিদার আলমের কাছে সব শুনে বলল, আপনারা এখনো এই বিষয়ে কিছু বলছেন না কেন আরশানকে?
-মানতাশা তা চায় না। আমিও নিশ্চুপ আছি। আরশান কী করতে চায় দেখছি। এরপর নিশ্চয় বলব।
-হু।

একটু থেমে তিনি বললেন, তোমার অভিশাপ লেগেছে নিশ্চয়। অবশ্য ওরই দোষ। ওকে পারলে ক্ষমা করে দিও বাবা।
-এমন কিছু না আঙ্কেল! আমি কোনো রাগ পুষিয়ে রাখিনি। ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু মানতাশার ফোন পেয়ে না এসে পারলাম না। আমি কী একটাবার ওর সাথে দেখা করতে পারি? আমি যে ওর প্রতি কোনো অভিমান জমিয়ে রাখিনি তা জানাতে চাই।
.
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে