#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২৮
#Saji_Afroz
কমিউনিটির সেন্টারের সাজ ঘরে চুপচাপ বসে রয়েছে মানতাশা। আরশানের আচরণে তার ভীষণ কান্না পেয়েছিল। তাই সবার কাছ থেকে লুকিয়ে এখানে চলে আসে সে। কিছুক্ষণ চোখের পানি ফেলার পর নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টায় লিপ্ত হয়ে পড়ে মানতাশা। হঠাৎ কারো কণ্ঠস্বর শুনে পেছনে ফিরে তাকালো সে। নাবীহাকে দেখে বলল, ওহ তুই!
-তোকে খুঁজতে খুঁজতে এখানে এলাম৷ কী করছিস এইখানে?
-সাজ ঠিক আছে কিনা দেখতে এলাম।
-অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে?
মানতাশা কী বলবে ভেবে পায় না। নাবীহা বলল, কিছু লুকোচ্ছিস? সব ঠিক আছে তো?
জবাবে মানতাশা বলল, আরে হ্যাঁ সবই ঠিক আছে।
এই বলে সে দাঁড়িয়ে পড়ে। নাবীহার হাত ধরে বলল, চল যাওয়া যাক।
নিজের দূর্বলতার কথা কাউকে বলে নিজেকে ছোটো করতে চায়না মানতাশা। পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সাহস তার রয়েছে।
আরশানের এমন আচরণের যোগ্য জবাব সেও দেবে। সময় এর অপেক্ষা…
.
.
.
বাসায় যাচ্ছে এজাজ। হঠাৎ তার পথ আটকায় পাড়ার কয়েকজন বন্ধু। তাদের মধ্যে তারেক নামের একজন বলল, শুনলাম মানতাশার নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে?
এজাজ শান্তস্বরে বলল, হুম।
শাইয়েদ নামের একজন বলল, বেশ বিত্তবান নাকি তার বর?
-হবে হয়তো।
-মেয়েদের স্বভাব ই এমন। টাকা ওয়ালা পেলে পুরান সম্পর্কটা ছিন্ন করে।
নিশ্চুপ এজাজকে দেখে তারেক বলল, এমনটা হতে দিলি কেন?
-কাউকে জোর করে আঁটকে রাখা যায়?
-অবশ্যই যায়। তোদের পারসোনাল ক্লোজ ছবি ছিল না? ওসব নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে পারতি।
-ওমন মেয়ে মানতাশা নয়।
-কেমন মেয়ে বোঝা হয়ে গেছে। নাহলে তোর মতো ছেলেকে ছেড়ে দিতো?
দীর্ঘ একটা শ্বাস ফেলে এজাজ বলল, ভাগ্য আমার সহায় হয়নি।
-এখনো তুই ওর দোষ দিচ্ছিস না? আমি হলে বিয়ে কীভাবে করে দেখে নিতাম। সব ছেড়ে দিতাম নেটে।
এইবার খানিকটা বিরক্ত হয়ে এজাজ বলল, বললাম না ওমন মেয়ে ও নয়! আর মানুষ বিয়ের পরেও সম্পর্ক ছেদ করে। সেখানে মাত্র আমাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল! কাউকে জোর করে রাখা যায় না, যদি না সে থাকতে চায়। এতে মনের সুখ মেলে না। অশান্তিই হয় কেবল। থাক না সে তার মতো!
এই বলে এজাজ নিজের বাড়ির দিকে চলে যায়।
শাইয়েদ বলল-
কী পরিমাণ ভালোবাসলে ধোকা খাওয়ার পরেও ছেলেটা মেয়েটির সম্পর্কে কোনো বাজে কথা বলতে পারে না, এটা এজাজকে না দেখলে বুঝতাম না। দেখবি মানতাশা সুখী হবে না। অন্তত এজাজকে কাঁদানোর কারণে হলেও!
.
.
.
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে।
নাবীহাও জহিরকে নিয়ে বের হয়ে গাড়ি দেখতে থাকে। আজরা এসে বলল, এত রাতে গাড়ি কই পাবি?
-আসলেই পাচ্ছি না।
-আমাকে না বলে এখানে এলি কেন?
-তোদের কষ্ট দিতে ইচ্ছে করছিল না।
ইনতিসার এসে বলল, বাসায় নামিয়ে দিচ্ছি আমি। বসুন প্লিজ।
নাবীহাও চুপচাপ উঠে বসে গাড়িতে। আজরা বলল, কালও আমি নিয়ে যাব তোকে। সময় মতো তৈরী হয়ে থাকিস।
কথানুযায়ী বিয়ের দিনও নাবীহা ও জহিরকে গাড়িতে তুলে নেয় আজরা। কমিউনিটি সেন্টারে তারা পোঁছে মেহমানদের আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ মানতাশার আত্মীয় স্বজন বেশিরভাগই চেনে তাদের। এক পর্যায়ে মানতাশা চলে আসে পার্লার থেকে। তার ভারী লেহেঙ্গা পরে হাঁটতে অসুবিধা হয়। সাথে সাথেই সেদিকে এগিয়ে যায় নাবীহা ও আজরা। দু’জনে তাকে স্টেজে উঠতে সাহায্য করে। এরপর তিন বান্ধবী ছবি তুলতে থাকে।
এই দৃশ্য দেখে মুচকি হাসে ইনতিসার। আজরা প্রায় নাবীহা ও মানতাশার গল্প শোনায় তাকে। মানতাশার জীবন সুন্দর হতে চলেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু নাবীহা? আদৌ কী সুখের দেখা মেলবে তার জীবনে?
এই ভেবে দীর্ঘ শ্বাস ফেললো ইনতিসার। সে চায় নাবীহার মুখেও হাসি থাকুক।
এটা ভাবতেই সাজিরকে চোখে পড়লো তার। তাকে দেখে নাবীহা স্টেজ থেকে নেমে আসে। একগাল হেসে সে বলল, তুমি?
-হু আমি।
-কাল এলে না। ফোনও রিসিভ করোনি আর।
-আজ তো এসেছি।
সাজির নাবীহার হাত ধরে তাতে একটি বেলী ফুলের বালা পরিয়ে দেয়। নাবীহা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে সাজিরের দিকে। সাজির বলল, মানতাশার বিয়ের ড্রেসটা ভারী সুন্দর।
-তাইনা?
-হু। কিন্তু তোমাকে এত টাকার ড্রেস দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। বেনারসি শাড়ি চলবে?
-দৌঁড়াবে!
-তবে বলে কবে শপিং করতে যাবে?
নাবীহা আরও অবাক হয়ে বলল, মানে?
-মানে বলো কখন বিয়ের শপিং করতে যাবে? বিয়েটা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি। কী বলো?
নাবীহা কী বলবে ভেবে পায় না।
সাজির আবারও জিজ্ঞাসা করলে সে বলল, আমাদের না বিয়ে আরও পরে করার কথা ছিল?
-হুম। কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি করতে চাই। এখন তো নাফিসা আপুও নেই। তোমাদের তিন জনের দায়িত্ব কী আমি নিতে পারব না! ভরসা নেই আমার উপর?
-তা নয়। কিন্তু আমি বোঝা হয়ে তোমার কাছে থাকতে চাইনা।
-কী যে বলো না! তুমি তো আমার রাণী।
এই বলে হাসলো সাজির ও নাবীহা।
এদিকে আরশান চলে আসে। স্টেজে উঠে আসে ভাবীর সাথে। মানতাশার কাজিনরা মালা পরাতে আসে আরশানকে। এখানেই ঘটে বিপত্তি। আরশান টাকা দিলে সে টাকা তারা নেয় না। আরও বেশি দাবি করে।
মালিহা হেসে বলল, আরে গেইটেও দিলো তো তোমাদের টাকা। এতটুক নিয়েই খুশি থাকো।
মানতাশার ফুফাতো বোন বলল, না না হবে না! মালার টাকা বেশি দিতে হয়। আরও না দিলে আপুর হাত থেকে মালা পরতে দেব না আমরা।
মালিহা বলল, মালা না পরিয়েই চলে যাব তবে।
-টাকার ভয়ে পালাবেন? তবে কী কিপটে নাম দেব আপনাদের?
এই বল হেসে উঠে সবাই।
মানতাশাও হেসে তাদের টাকা দিতে বলল আরশানকে। সাথে বলল, শালিকাদের উজার করে টাকা দিলেই তো ভালো দুলাভাই হবেন।
মালিহা বলল, নাহলে?
-নাহলে আর কী! কিপটে…
সবাই হাসতে থাকলেও মালিহার মুখে হাসি নেই৷ সে আরশানকে ফিসফিস করে বলল, এখুনি দেখছি তোমার বউ খরচ করা শুরু করেছে!
.
.
.
সাজেদা বেগমের মেজাজ প্রচন্ড খারাপ। তাসফিয়ার বিষয়ে কিছু কথা কানে এসেছে তার। এই মেয়ে নাকি আগেও একটা বিয়ে করেছিল নিজের পছন্দে। পালিয়ে গিয়েছিল সে। সাতদিন পর ফিরে আসে। এরপর ডিভোর্স হয়ে যায়। একথা তেমন কেউ জানে না। তাসফিয়ার আপন কেউই জানিয়েছে সাজেদা বেগমকে। এসব শুনে সে তাসফিয়ার বাবাকে ফোন দেন। তিনিও সব স্বীকার করেন।
সাথে বললেন, মেয়ের ভুল ছিল সেটি। ও নিজেও মানে তা। তাইতো এখন আমাদের সিদ্ধান্তকে মেনে নিচ্ছে।
-কিন্তু ওর যে আগে বিয়ে হয়েছে এটা তো মিথ্যে নয়। ওমন একটা মেয়েকে কেন আমার ছেলের বউ করব!
-প্লিজ এমনটি বলবেন না! আমার সবকিছু আমি সাজিরের নামে করে দেব।
একথা শুনে থেমে যান সাজেদা বেগম।
তাসফিয়ার বাবা বললেন, হ্যাঁ! শুধু একথা সাজিরকেও জানাবেন না। আসলে আমি চাই আমার মেয়েটা ভালো কাউকে নিয়ে সুখে থাকুক। কিন্তু ওর অতীত থাকার কারণে অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়ার সাহস পাচ্ছিলাম না। এই যে প্রথম সাজিরের জন্যই প্রস্তাব দিলাম। আপনিও জেনে গেলেন! যাক ভালোই হলো। এখন সব জেনেও যদি আমার মেয়েটাকে পুত্রবধূ করে নেন চিরকৃতজ্ঞ থাকব। বিনিময়ে আমার সমস্ত কিছু সাজিরের নামে লিখে দেব। প্লিজ বিষয়টা ভেবে দেখবেন।
ফোন রেখে আবারও চিন্তিত হয়ে পড়লেন সাজেদা বেগম। এই মুহুর্তে কী করা উচিত তার?
.
চলবে
.
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২৯
#Saji_Afroz
বাসর ঘরে বসে রয়েছে মানতাশা। প্রায় দুই ঘন্টার বেশি সে এখানে একা বসে রয়েছে। সেই যে কাজের মেয়ে তাকে বসিয়ে রেখে গেছে, আর কারো খবর নেই৷
যদিও বাইরে থেকে হাসি ঠাট্টার শব্দ শোনা যাচ্ছে৷ কিন্তু রুমের মাঝে যে একটা নতুন বউ রয়েছে সেই খেয়াল কারো আছে?
মানতাশা বিরক্ত হয়৷ অনেক আগেই সে ঘুমিয়ে যেত। কিন্তু আজ আরশানের কাছ থেকে নিশ্চয় কোনো ভালো উপহার সে পাবে। বাসর রাতে প্রত্যেক স্বামীই তো নিজের স্ত্রীকে কোনো উপহার দেয়। আর আরশান এত টাকার মালিক। নিশ্চয় দামী কিছুই পাবে। এই ভেবে লম্বা ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে মানতাশা। কিন্তু সময় অতিবাহিত হতে থাকলেও আসেনা আরশান। মানতাশার দুচোখ কখন যে লেগে এসেছে টেরই পায়নি৷ নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে সে। আরশানের ডাকেই ঘুম ভাঙে তার৷ চোখ জোড়া কচলাতে কচলাতে উঠে পড়লো সে৷ সে কিছু বলতে যাবে তখনি আরশান বলল, সামান্য ভদ্রতাও দেখছি তোমার মধ্যে বিদ্যমান নেই।
মানতাশা খানিকটা অবাক হয়ে বলল, মানে?
-স্বামী আসার আগেই নতুন বউ এভাবে ঘুমিয়ে পড়লে?
-আমি অনেকক্ষণ যাবত জেগে ছিলাম। আপনি না আসাতে…
-আবার তর্কও করছ দেখছি!
মানতাশা নিশ্চুপ হয়ে যায়। আরশান কী কারণে তার উপরে রেগে আছে বুঝতে পারলো না সে। মানতাশার পাশ থেকে একটি বালিশ নিয়ে বিছানার পাশে থাকা ডিভাইন এর দিকে এগিয়ে যায় আরশান। ওখানেই শুয়ে পড়ে সে।
কী ভেবেছিল এই রাত নিয়ে আর কী হচ্ছে তার সাথে! ভাবতেই বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো মানতাশার।
.
.
.
সকালে পরিবারের সকলের সঙ্গে নাস্তা করতে বসেছে সাজির। এক পর্যায়ে বলল সে, ভাবছি বিয়েটা করে নেব। নাবীহার বাড়ি যাওয়া উচিত। বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার জন্যে।
সাজেদা বেগম কোনো ভণিতা ছাড়াই বললেন, আমরা কেউই এই বিয়েতে রাজি নই।
-এখন এসব নিয়ে কথা বলার সময় নেই। হাসি খুশিতে বিয়েটা সম্পন্ন করো।
-কীসের বিয়ে? মা বাবাকে ছাড়া যদি বিয়ে করতে চাস তো করে নে!
খাবার ছেড়ে উঠে পড়লো সাজির। সবার উদ্দেশ্যে সে বলল, বেশ! আমার জানানোর প্রয়োজন ছিল জানিয়েছি। বাকিটা আমি বুঝে নেব।
এই বলে বেরিয়ে যায় সাজির। সাজেদা বেগম স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন, দেখেছ ছেলের কাণ্ড?
-আমি তোমার কাণ্ড দেখছি! হঠাৎ তোমার কী হলো যে নিজের ভাই এর মেয়ের সাথে এমন করছ?
পাশে সানজিদা ছিল বলে আর কথা আগালেন না সাজেদা বেগম। রাগে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে যান তিনি। ভাবেন আজ রাতে ঠান্ডা মাথায় সাজিরকে বোঝাবেন, তিনি যা করছেন সাজিরের ভালোর জন্যই করছেন।
এদিকে আজ সাজির অফিসে যায় না। নাবীহাকে নিয়ে বের হয় সে। শপিংমল এ এসে তাকে লাল রঙের একটি বেনারসি নিয়ে দেয়। সাথে শাড়ির সাথে মিলিয়ে প্রয়োজনীয় গহনা। নিজের জন্য একটি সাদা পাঞ্জাবি নেয় সাজির। সে নাবীহাকে বলল, তোমার হয়তো মানতাশা ও আজরার মতো বিয়ে করার শখ আছে তাইনা?
-আমার কথা ছাড়ো। তোমারও নিশ্চয় অনেক ইচ্ছে আছে। আমার তরফ থেকে কী করতে পারি বলো?
-সুন্দর করে বউ সাজবে। এতটুকুই! আর হ্যাঁ, বিয়েটা সাদামাটা হলেও বউ ভাতটা কিন্তু সুন্দর হবে। আমাদের আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব সকলেই থাকবে।
-এসবের প্রয়োজন নেই!
-সেটা আমি বুঝব। এইবার বউ ভাতের জন্যও একটা শাড়ি পছন্দ করো তো দেখি!
সাজিরের পছন্দে গোলাপি রঙের একটি কাতান শাড়ি কিনে নেয় নাবীহা। কেনাকাটা শেষে রেস্টুরেন্ট থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নাবীহার বাড়ি ফিরে আসে তারা। সাজির বলল, কালই কাজি নিয়ে আসব আমি৷ রেডি থেকো।
নাবীহা অবাক হয়ে বলল, কালই মানে?
-কাল মানে কাল! আর হ্যাঁ, আমার পরিবার থেকে কেউ আসবে না।
আরও অবাক হয়ে নাবীহা বলল, কীসব বলছ? ফুফুরা আসবেন না কেন?
-ওটা সারপ্রাইজ থাক না! কাল বিয়েটা সেরে নিই বাকি কথা পরে বলব। বাসায় কাউকে কিছু বলতে যেও না যেন! মামীকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব তোমার।
এই বলে নাবীহাকে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ে সাজির। সব কিছু যেন নাবীহার মাথার উপর দিয়ে গেল৷ এত তাড়াহুড়ো করে নিজের পরিবার কেও না জানিয়ে কেন বিয়ে করতে চায়ছে সাজির!
.
.
.
রিসিপশনে একা স্টেজে বসে আছে মানতাশা। আরশান এখনো আসেনি। অফিসে আছে সে। বিয়ের পরের দিনই কেন তাকে অফিসে যেতে হলো বুঝলো না মানতাশা।
আজরা বলল, হ্যাঁ রে মনু? কাল কী কী হলো রে?
মানতাশা মুচকি হাসে। নাবীহাও হাসলে আজরা বলল, আজ তোকে একটু বেশিই খুশি মনে হচ্ছে?
-হু। খুশিই তো।
-কেন?
-কারণ কাল আমার আর সাজিরের বিয়ে।
একথা শুনে দুই বান্ধবী অবাক হয়ে যায়। নাবীহা বলল, কোনো আয়োজন ছাড়াই। তবুও আমি চাই তোরা দু’জনে আসবি। তোদের ছাড়া আমার এত সুন্দর দিনটা পরিপূর্ণতা লাভ করবে না।
দু’জনেই আসবে বলে জানালো তাকে।
আরশান আসলে অনুষ্ঠান শুরু হয়। চারদিকে চাকচিক্যের কমতি না থাকার কারণে বর কনের অন্ধকার মুখ গুলো সবার নজর এড়ালো।
.
.
.
আজ নাবীহার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন! কারণ আজ তার ও সাজিরের বিয়ে। প্রিয় মানুষটির সাথে বিয়ে তার। এই দিনটা নিয়ে তার কত স্বপ্নই ছিল। যাক, মানুষটাকে পেলেই জীবন ধন্য হবে।
সাজিরের দেওয়া লাল বেনারসিটি পরে তৈরী হয়েছে নাবীহা। তাকে তৈরী হতে সাহায্য করেছে আজরা। মানতাশা এখনো আসেনি। নাবীহা বলল, আরেকবার ওকে ফোন করে দেখবি?
আরশান বাড়িতে নেই। তাকে গত রাতে বলা হয়নি নাবীহার বিয়ের কথা। এখন বেশ কয়েকবার ফোন করেও তাকে পাচ্ছে না মানতাশা৷ তাই সে মালিহার কাছে এসে বলল, আমি একটু বেরুচ্ছি।
মালিহা ভ্রু কুচকে বলল, সে কী! কোথায় যাচ্ছ?
-আজ আমার বান্ধবীর বিয়ে।
-নতুন বউ হয়েও কী তোমার বেরুতে হবে? এটা আমি হতে দিতে পারি না।
মানতাশা অবাক হয়ে বলল, কেন?
-ঘরে মেহমান রয়েছে। তারা জানলে কী বলবে! যাও নিজের রুমে। সন্ধ্যায় আরশানের সাথে নিজের বাড়ি যেও।
মানতাশার প্রচন্ড রাগ হয়। সে নিজেকে সামলাতে না পেরে বলে বসলো, বিয়ের পরের দিনই বর অফিসে গেলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বউ তার বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়েতে যেতে পারবে না। অদ্ভুত না?
মানতাশার কাছে এমন কিছু আশা করেনি মালিহা। মানতাশা ঘরের বাইরে বেরিয়ে যায়। মালিহা তার পথের দিকে তাকিয়ে বলল, এই মেয়েকে দমিয়ে রাখা সহজ না। তবে কঠিনও না! ডানা কীভাবে কাটতে হয় আমি ভালোই জানি।
.
.
.
মানতাশাও চলে আসে। তাকে দেখে ভীষণ খুশি হয় নাবীহা। কাজি আসলে দুই বান্ধবী নাবীহাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো।
নাবীহাকে দেখে তার দিকে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকে সাজির৷ মানতাশা আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বলল, তাকানোর সময় অনেক। আগে বিয়েটা তো করে নিন!
সাজির হেসে কাজিকে বিয়ে পড়াতে বলল। কাজি বিয়ে পড়ানো শুরু করলে সেখানে উপস্থিত হোন সাজেদা বেগম। এসব নিজের চোখে দেখেও তিনি যেন বিশ্বাস করতে পারছেন না। হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন তিনি। প্রলাপ করতে করতে বললেন, আমার ছেলে আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে নিচ্ছে! আয়হায়! আমি আজকে এখানে না আসলে এসব তো জানতামই না।
সাথে তিনি নায়লা খাতুনকেও দোষারোপ করতে থাকেন তাকে এসব গোপন করার জন্যে।
নায়লা খাতুন বললেন, সাজিরই নিষেধ করেছিল।
-ও না করলেই তুমি বলবে না ভাবী? ছেলেটা তো আমার নাকি?
নায়লা খাতুন শান্তনা দিতে চাইলে তাকে ধাক্কা মেরে বসেন সাজেদা বেগম। নাবীহা চ্যাঁচিয়ে বলল, মা ঠিক আছ!
মানতাশা ও আজরা তাকে মেঝে থেকে উঠতে সাহায্য করলো।
সাজির মা এর কাছে এসে বলল, কীসব করছ তুমি?
-তুই এখুনি আমার সাথে যাবি৷
-আমি যাব না।
-তোকে যেতেই হবে।
আজরা বলল, আন্টি প্লিজ রাগ করবেন না। ওদের বিয়ে তো এমনিতেই হত তাইনা? নিশ্চয় সাজির ভাই আপনাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছে।
-ওদের বিয়ে হত না। কখনোই হত না।
-মানে?
সাজির মা কে থামিয়ে বলল, মা তুমি প্লিজ যাও!
-আমি যাই আর তুই অঘটন ঘটানোর জন্যে?
মানতাশা একটু রেগে বলল, নাবীহাকে বিয়ে করলে অঘটন ঘটবে! এখন বুঝতে পারছি কেন সাজির ভাই এভাবে বিয়ে করছে। কারণ আপনি ওদের বিয়ে হোক তা চান না।
-হু, এটাই সত্যি।
নাবীহা ছলছল নয়নে বলল, কেন ফুফু? কী করেছি আমি?
-আমাকে ফুফু ডাকবি না। আমি তোর ফুফু না।
সাজির বলল, মা থামো প্লিজ!
-কেন? ওর সত্যিটা জানার প্রয়োজন।
নাবীবা বলল, কী সত্যি?
-এটাই যে তোকে কুড়িয়ে পেয়েছিল আমার ভাই। আমি তোর ফুফু নই। আমি নাফিসা আর জহিরের ফুফু।
নায়লা খাতুন দুকানে হাত চেপে কেঁদে উঠলেন। নাবীহা নিজের জায়গায় শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
এদিকে সাজিরকে তার সাথে যাওয়ার জন্যে জোরাজোরি করছেন সাজেদা বেগম। নাহলে তিনি আত্নহত্যা করবেন জানালেন। সাজির বাধ্য বিয়ে ভেঙে মা এর সাথে চলে যায়। কারণ সাজেদা বেগম কারো কথা শুনতে রাজি নন।
এদিকে পাথরের মতো শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো নাবীহা। কোন সত্যিটা মেনে নেবে সে? বিয়ে ভাঙার নাকি সে এই বাড়ির মেয়েই নয়!
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_৩০
#Saji_Afroz
নায়লা খাতুনের মুখে সবটা শুনে বিস্ময় এর শেষ পর্যায়ে চলে যায় নাবীহা। নায়লা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে বললেন, পেটে না রাখলেও অন্তরে স্থান দিয়েছি তোকে। আমার মেয়েই তুই। ওসব কথাতে কান দিস না।
নাবীহা কোনো জবাব দেয় না। চুপচাপ সে নিজের রুমে চলে যায়। ভেতর থেকে দরজাটা আঁটকে মেঝেতে ধপাস করে বসে পড়ে সে৷ নায়লা খাতুন এসে দরজায় কড়া নাড়তে নাড়তে অস্থির হয়ে উঠলেন। তাকে সামলাতে ব্যস্ত আজরা ও মানতাশা। কোনোমতে তাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়৷
নায়লা খাতুন বললেন, কেন আমাকে এখানে নিয়ে এলে তোমরা? ও যদি কোনো অঘটন ঘটিয়ে বসে!
আজরা বলল, নাবীহা অনেক স্ট্রং। ও এমন কোনো পদক্ষেপ নেবে না৷ ও এখন একা থাকতে চায়। আমাদের উচিত ওকে ওর মতো করে এই সময়টা পার করতে দেওয়া। আপনি অস্থির হবেন না আন্টি।
তিনি প্রলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, কেন সাজেদা এমনটা করলো! আমার মেয়ের বুকে আগুন কেন ধরালো সে!
মানতাশার ফোন বেজে উঠলো। অনেকক্ষণ ধরে আরশান তাকে ফোন করে চলেছে। একবার সে রিসিভ করে বলেছেও বান্ধবীর বিয়েতে এসেছে। আরশান তাকে তৎক্ষনাৎ বাসায় যেতে বললেও যায়নি সে। এরপর আর রিসিভই করেনি। এখনো আরশানের ফোন রিসিভ করলো না সে। কিন্তু আরশানের মেসেজ চোখে পড়তেই খানিকটা ঘাবড়ে যায় মানতাশা। আরশান লিখেছে-
এখুনি বাসায় না আসলে কিন্তু খারাপ কিছু হবে। তুমি চাও আমি ওখানে এসে তামাশা করি?
এখানের অবস্থা এমনিতেও ভালো নেই। আর বিগড়াতে চায় না মানতাশা। তাই সে আজরাকে বিদায় জানিয়ে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে পড়লো।
বের হতেই ইনতিসারের দেখা পায় সে। ইনতিসার তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে বলল, আজরাকে নিতে আসলাম।
ও বলেছিল এই সময়ে আসতে। বিয়ে শেষ নিশ্চয়?
-বিয়ে হয়নি।
-সে কী! কেন?
-আসলে আমি তাড়াহুড়োয় আছি। আজরার কাছেই নাহয় জেনে নেবেন।
এই বলে দ্রুত বেগে চলে যেতে থাকে মানতাশা। আর আপনমনে ভাবছে, ইনতিসারকে নিয়ে কী ভেবেছিল আর কী হলো! আজরাকে পছন্দ না করে বিয়ে করেও আজ তারা কত সুখী৷ অথচ সে!
দীর্ঘ একটা নি:শ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসে মানতাশা।
.
.
.
-কাজটা কী তুমি ঠিক করলে?
সাজিরের করা প্রশ্নে উচ্চস্বরে সাজেদা বেগম জবাব দিলেন, তুই কী করেছিস? আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করতে গেছিস।
সানজিদা অবাক হয়ে বলল, কী বলছ মা?
-অবাক হয়েছিস তাইনা? আমিও হয়েছি।
সাজির প্রায় চ্যাঁচিয়ে বলল, আর কীইবা করতাম আমি! বলো কী করতাম! তোমরা কেউ সাপোর্ট করছিলে আমাদের? করোনি তো৷ তাই ওমন পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।
-অন্যায় করে বড় গলায় কথা বলছিস? এই দিন দেখার জন্য পেটে ধরেছিলাম।
-তুমি করোনি অন্যায়? নাবীহাকে বলার কী প্রয়োজন ছিল যে সে ও বাড়ির মেয়ে নয়।
-যাতে ও ওর স্থান বুঝতে পারে।
-তোমারও ওর স্থান বোঝা উচিত।
-আচ্ছা তাই! কোথায়?
নিজের বুকের দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে সাজির বলল, এখানে। আর সারাজীবন এখানেই থাকবে।
এই বলে সে নিজের রুমে চলে যায়। দরজা বন্ধ করে ফোন করে নাবীহাকে। কিন্তু সে রিসিভ করলো না। না জানে মেয়েটি কী অবস্থাতে আছে এখন! ওকে এভাবে রেখে আসা উচিত হয়নি। কিন্তু না আসলেও যে সাজেদা বেগম আরও বেশি হাঙ্গামা করতো। এতে অশান্তি হত আরও বেশি। এসব ভেবেই আসতে বাধ্য হয়েছে সে।
.
.
.
বাসায় প্রবেশ করে মা ও বাবাকে দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় মানতাশা। ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে। কিন্তু তাদের মুখে অন্ধকার দেখে সন্দেহ জাগলো তার মনে। মা, বাবা এখানে আসার তো কথা ছিল না। বরং আজ তারই যাওয়ার কথা৷ হঠাৎ এখানে কেন তারা?
সে তাদের প্রশ্ন করার আগেই মরিয়ম বেগম বললেন, এসব কী শুনছি?
-কী শুনছ মা?
-মালিহার সাথে বেয়াদবি করে তুই নাকি বাইরে গেছিস?
মানতাশা মাথায় হাত রেখে বলল,উনি এসব বললে আর তোমরা বিশ্বাস করলে?
দিদার আলম বললেন, আসলি তো বাইরে থেকেই। তার মানে মিথ্যে বলছেন না তিনি।
-এমনটা নয় বাবা!
-তবে কেমনটা? বিয়ের পরের দিনই কেন তোর বাইরে যেতে হলো?
-কারণ আজ নাবীহার বিয়ে ছিল।
-নাবীহার বিয়ে!
মালিহা এসে বলল, আপনারাই জানেন না আজ ওর বেস্ট ফ্রেন্ড এর বিয়ে ছিল!
তারা নিশ্চুপ। মানতাশা বলল, হুট করেই ঠিক হয়েছে। আর খুব ছোটখাটো ভাবে আয়োজন হয়েছে। আমি আমার বান্ধবীর বিয়েতে গিয়েছি বলে মা বাবাকে ডেকে বিচার দেবেন? এটা কেমন অভদ্রতা! এমন বড়ো ঘরের বউ থেকে এসব আশা করা যায় না।
-থামো মানতাশা!
পেছনে ফিরে আরশানকে দেখে নিশ্চুপ হয়ে যায় মানতাশা। সে ভেবেছিল, আরশান অফিসে।
আরশান এসে তার মা বাবার উদ্দেশ্যে বলল, সবার সামনে ওর এমন ব্যবহার! এতে এটাই প্রমাণিত যে ভাবি মিথ্যে বলছেন না।
মানতাশা কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে আরশান বলল, কথা না বাড়িয়ে মা বাবার সাথে চলে যাও। এমনিতেও আজ যাওয়ার কথা তোমার।
দিদার আলম বললেন, বাবা তুমি যাবে না?
-নাহ।
-বাসার মেহমানরা কী ভাববে! আজ একসাথে যাওয়ার কথা তোমাদের। তারা ওয়েট করবে।
-আমি যাব না। আর এটাই মানতাশার শাস্তি। পরিস্থিতি সেই মোকাবিলা করবে।
কোনো কথা না বলে ব্যাগ আনতে নিজের রুমে যায় মানতাশা। মালিহার উপরে প্রচন্ড রাগ হয় তার। আরশান না থাকলে আরও কয়েকটা কথা শুনিয়ে দিতো তাকে।
.
.
.
আজরার কাছে সবটা শুনে ইনতিসারের মুখটা মলীন হয়ে গেল। সে বলল, নাবীহা এখন কোথায়?
-রুম বন্দী করে রেখেছে নিজেকে।
-এভাবে একা রুমে…
তাকে থামিয়ে আজরা বলল, ওমন কিছু করবে না সে।
ইনতিসার আর কিছু বলল না। আজরা বলল, আজ আমি এখানে থাকি? যদি আপনি কিছু মনে না করেন!
-নিশ্চয়! কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমায় বলবে।
-ঠিক আছে।
ইনতিসার চলে গেলে আজরা জহিরের কাছে যায়। সে আজরাকে দেখে বলল, আমার আপু সত্যিই কী আমার আপু নয়?
-এমনটা ভেবো না! সে তোমার আপু ছিল, তোমার আপুই আছে।
গাড়িতে উঠেছে ইনতিসার বেশ কিছুক্ষণ হলো। তবুও গাড়ি ছাড়তে পারলো না সে। ভেবেছিল নাবীহার জীবনে এবার বুঝি সুখের দেখা মিলবে! কিন্তু এমনটা হলো না। আবারও আরো একটি ধাক্কা খেলো সে। একটি! নাকি দু’টি? নাকি নিজের সত্যটা জেনে জীবনের সবচেয়ে বড়ো ধাক্কা খেলো সে!
.
.
.
রাত হয়ে যায়। যে যার রুমে রয়েছে। আজরা রান্নাঘরে আসে। হরেক রকমের রান্না দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে। শুনেছে এসব রান্না নাবীহা ও নায়লা খাতুন মিলে করেছিল সাজিরের জন্য।
আজ কত খুশিতে সবাই একসাথে রাতের খাবার খেতো। অথচ…
এসব মাথা থেকে ঝেড়ে সব খাবার গরম করে ডাইনিং টেবিলে সাজালো আজরা। এরপর নায়লা খাতুন ও জহিরকে নিয়ে এলো। নায়লা খাতুন খেতে না চাইলে তাকে জোর করে খাইয়ে দেয় আজরা। এরপর তাকে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে বিছানায় শুতে সাহায্য করে। সে বলল, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আন্টি। নাবীহাকে আমি দেখছি। তাকেও খাইয়ে দেব আমি।
-তাহলে আমি নিশ্চিতে ঘুমোতে পারব বলছ?
-একদম।
এরপর নাবীহার রুমের সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ে আজরা। সাড়া না পেলে বলল সে, সেই কবে থেকে ভারী শাড়ি পরে আছি। তোর থেকে একটা জামা তো দিবি নাকি?
এইবার দরজা খুলে দেয় নাবীহা। তাকে দেখে আজরার বুকটা ধুক করে উঠলেও নিজেকে সামলে নেয় সে। কী অবস্থা হয়ে গেল মুহুর্তেই তার! কান্না করে চোখ, মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে।
ভেতরে এসে বলল আজরা, দে জামা?
-ওয়ারড্রবে আছে। যেটা ইচ্ছে হয় পরে নে।
আজরা একটা জামা নিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। আরেকটা জামা বের করে নাবীহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, তুইও ফ্রেশ হয়ে আয়।
-তুই যাসনি?
-গেলে আমার ভুত আছে এখানে?
আচমকা আজরাকে জড়িয়ে ধরে নাবীহা। হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে সে। তাকে শান্তনা দিয়ে আজরা বলল, সব ঠিক হয়ে যাবে। চিন্তা করিস না।
-কী ঠিক হবে? আমি আমার আসল মা বাবার পরিচয় জানতে পারব?
-কী দরকার! যারা তোকে ছেড়ে গেছে তাদের নিয়ে ভাবার দরকার নেই তো। যারা আছে তাদের নিয়েই ভাব না!
আজরাকে ছেড়ে নাবীহা বলল, আমার ভেতরে কী বয়ে যাচ্ছে কাউকে বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই।
-আমি বুঝছি।
-বুঝছিস না।
-ওকে মানলাম! এখন আমার কথাও মানতে হবে। ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে কিছু।
-আমার খিদে নেই।
নাবীহাকে এক প্রকার জোরজবরদস্তি করেই খাওয়ালো আজরা। এরপর দুই বান্ধবী বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে। নাবীহাকে সারারাত শান্তনা দিতে থাকে আজরা। তাকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয় সে।
ভালোই হলো আজ এখানে থেকে গেছে সে। আরও ভালো হত যদি মানতাশাও থাকতো। কিন্তু নতুন বউ বলে এটা সম্ভব ছিল না।
তার কথা মনে হতেই আজরা ভাবলো, তখন এত তাড়াহুড়ো করে চলে গেল কেন মেয়েটা? কাল সকালেই একটা খবর নেওয়া উচিত
.
.
.
সকাল সকাল সাজেদা বেগমকে বেরুতে দেখে তার পথ আটকায় সানজিদা। সে বলল, কোথায় যাচ্ছ মা তুমি?
-জানতে পারবি সব। আর হ্যাঁ, আমি বাইরে থেকে সাজিরের রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছি। খেয়াল রাখবি সে যেন বেরুতে না পারে।
এই বলে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যান তিনি। সানজিদার মনে একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। কী করতে চলেছেন তার মা!
.
চলব