#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২২
#Saji_Afroz
-মেয়ে কেমন দেখলে তোমরা?
স্বামী আশফাকুল হোসাইনের প্রশ্নে মালিহা মুমতাজ জবাব দিলেন, দেখতে মিষ্টি।
-কিন্তু আমি আরশানের জন্য অন্য কিছু ভেবেছিলাম। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে আমাদের সাথে মানিয়ে নিতে পারবে তো? আমি কী বলতে চাইছি নিশ্চয় বুঝছ? এমন ঘরের মেয়ে যদি এখানে এসে রাজ করবে ভাবে? তার চেয়ে আমাদের মতোই কাউকে পছন্দ করতো আরশান! উচ্চবিত্ত পরিবারের মেয়ের ওসব চাহিদা থাকতো না। সহজেই আমাদের কালচারাল বুঝতো।
-ধনীর ঘরের মেয়ে আনলেই যে খাপ খাওয়াতে পারবে এমনটা নয়৷ আসলে আচরণ উচ্চবিত্ত, নিম্নবিত্ত এসবের উপরে নির্ভর করে না। করে শিক্ষার উপরে! তারা শিক্ষিত মানুষ। আশাকরি এডজাস্ট করতে পারবে।
-সেই ভালো! আমার ভাই এর খেয়াল রেখে ওকে খুশিতে রাখলেই হলো। আর আমাদেরও যেন সম্মান করে।
-ওত ভেবো না তো। সব ঠিক হবে।
-তবে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করো?
-হ্যাঁ করব।
মরিয়ম বেগমের সাথে ফোনের মাধ্যমেই মালিহা মুমতাজ তার সিদ্ধান্ত জানালেন। এবং বিয়ের দিন তারিখও ঠিক করলেন।
কাল থেকেই শপিং শুরু করবেন জানালেন তারা। যেহেতু দশ দিন পরেই বিয়ে!
এদিকে মানতাশার খুশি দেখে কে! সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে মোবাইলে গান ছেডে সারারুম জুড়ে নাচতে শুরু করে।
মেয়ের এত খুশি দেখেও দিদার আলম খুশি হতে পারছেন না। অজানা এক আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাকে।
তবুও তিনি নিশ্চুপ ভাবে সব আয়োজন করার জন্য মনস্থির করেছেন। প্রথমেই তিনি বিয়ের কার্ড বানানোর জন্য বেরিয়েছেন। হাতে সময় বেশি নেই!
-মানতাশার আশা তবে পূরণ হতে চলেছে। যাক, আমি অনেক বেশি খুশি হয়েছি তার জন্যে। শুধু এজাজ ভাই এর জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে। উনি জানলে নিশ্চয় কষ্ট পাবেন।
নাবীহার কথা শুনে আজরা বলল, সে তো অবশ্যই! উনি তো আর মানতাশার মতো আবেগের বশে ভালোবাসেননি। যাক, এখন এসব বলে লাভ নেই। শুধু মন থেকে চাচ্ছি, উনাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তি যেন মানতাশা না পায়।
-হুম।
মানতাশার বিষয়ে কথা বলা শেষে ফোন রাখে নাবীহা। তার ছোটো ভাই এসে বলল, আপু তুমি কী চাকরি টা পাওনি?
যেখানে ইন্টারভিউ দিয়েছিল সেখান থেকে নাবীহা কে ডাকা হয়নি। সে হতাশ হয়ে বলল, নাহ!
জহির মন খারাপ করে বলল, তবে কী আমি ভালো কোনো কলেজে পড়তে পারব না?
জহির নিঃসন্দেহে ছাত্র ভালো। ভালো কলেজে পড়ার ইচ্ছে তার। সাইন্স নিয়ে পড়াশোনা করতে গেলে আরও বেশি খরচা রয়েছে। টিউশনি ছাড়া এত কঠিন পড়া আয়ত্ত্ব করা সম্ভব না।
নাফিসার মতে, জহির কে সাইন্স এ না পড়ানো শ্রেয়। সংসার খরচ সামলাবে নাকি তার পেছনে ব্যয় করবে তারা? কিন্তু নাবীহা তা চায়না। সে চায় ভাইটা অন্তত নিজের আশা পূরণ করতে পারুক।
নাবীহা তাকে শান্তনা দিয়ে বলল, তোদের ফর্ম এপ্লাই করতে আরও কিছুদিন সময় আছে না? এর ভেতরে আমি নিশ্চয় কোনো ব্যবস্থা করে ফেলব। আরেকটু সময় দে ভাই।
জহির কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তার মলীন মুখ নিয়ে বের হওয়াটা নাবীহার মনে ঝড় তুলে দেয়।
জানেনা, ভাই এর আশা সে পূরণ করতে পারবে কিনা!
আজ আরশান ও তার ভাবীর সাথে শপিং এ এসেছে মানতাশা। আজকে শুধু বিয়ের কাপড়ই ঘুরেফিরে কিনবে ঠিক করেছেন মালিহা মুমতাজ। শহরের সবচেয়ে বড়ো শপিংমল এ এসেছে তারা।
মালিহা তার পরিচিত এক দোকানে নিয়ে আসে মানতাশা কে। তাকে কাপড় পছন্দ করতে বলা হয়। কিন্তু এত এত লেহেঙ্গার মাঝেও মানতাশা নিজের জন্য পছন্দ করতে সক্ষম হয় না। তার মতে, এই দোকানের কালেকশন ভালো নয়। আরশান হেসে বলল, দোকানের অভাব নেই! অন্য একটাই ট্রাই করি চলো?
তারা অন্য দোকানে যায়। সেখানেও একই অবস্থা হয়! এভাবে বেশ কয়েকটা দোকান ঘোরার পর মালিহা খানিকটা অবাক হয়েই বললেন, শহরের বেস্ট শপিংমলের বেস্ট দোকানের বেস্ট কালেকশন গুলো দেখানো হচ্ছে তোমাকে। তারপরেও কেন পছন্দ হচ্ছে না বুঝলাম না!
মানতাশা বলল, আমি ইন্ডিয়ার নায়িকা দের যেসব পরতে দেখি ওমন তো পাচ্ছি না ভাবী! বিয়ে একবারই করব। মনের মতো না হলে হয়?
মালিহা হেসে বললেন, যেসব দেখছ সেসব ওগুলার চেয়েও কম নয়! আরেকটা দোকান আছে। এসো৷ ওখানে নিশ্চয় পছন্দ হবে তোমার।
মালিহার সাথে মানতাশা গেলেও সে লেহেঙ্গা দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করলো না। তবুও মালিহা নিজেই দেখতে থাকেন। এবং একটি তার খুব বেশি পছন্দও হয়। এটি মানতাশা কে বলতেই সে বলল, এসব হবে না! আমি বরং ডিজাইনার দিয়ে বানাব। এতে খরচ বেশি হলেও আমার মনমতো তো হবে!
মানতাশার ফোন এলে সে একটু দূরে যায়। আরশান তার ভাবী কে বলল, মেয়েদের এই এক শপিং নিয়ে কত বাহানা!
-এটা ইচ্ছাকৃত বাহানা আরশান।
আরশান অবাক হয়ে বলল, মানে?
-সে এখন থেকেই নিজের দাপট প্রতিষ্ঠিত করতে চায়ছে। ডিজাইনার দিয়েই যদি বানাবে তবে আমাকে আনলো কেন? এটা কী এক ধরনের অপমান হলো না! আগে বললে কী আমরা রাজি হতাম না? এভাবে হয়রানির কী প্রয়োজন? তোমারও কাজ আছে। তুমি একজন বিজনেসম্যান। ওর এটা বুঝতে হবে। আমার কিন্তু মানতাশার এই কাজটি মোটেও পছন্দ হয়নি।
মানতাশা এসে বলল, গতকাল এক ফ্রেন্ড কে বলেছিলাম ভালো কোনো ডিজাইনের সন্ধান পেলে জানাতে। সেই ফোন দিয়েছে…
তাকে থামিয়ে আরশান একটু গম্ভীর হয়ে বলল, ভাবী এখন যে লেহেঙ্গা চয়েজ করেছে সেটা তোমাকে মানাবে। আমি চাই তুমি সেটাই পরো।
-কিন্তু…
-কোনো কিন্তু না! হবু বর হিসেবে এতটুকু আমি চাইতেই পারি?
আরশানের গলার স্বর শুনে মানতাশা দ্বিতীয় কোনো কথা বলার সাহস পেল না। আড়চোখে তাকালো সে মালিহা মুমতাজের দিকে। তিনি আরশান কে বললেন, বাদ দাও। ওর যদি…
-বিয়েটা শুধু ওর নয়! আমাদের বউ কে নিশ্চয় আমরা খারাপ লাগুক তা চাইবো না? এটা পরেই বিয়ে করবে ও। আমার ভাবীর পছন্দ সবার থেকে বেস্ট!
মালিহা মুমতাজ প্রশান্তির হাসি হাসলেন। এদিকে মানতাশা নিশ্চুপ ভাবে তাকিয়ে রয়েছে আরশানের দিকে। নিজের বিয়েতেই সে পছন্দের লেহেঙ্গা পরতে পারবে না, শুধুমাত্র মালিহা চান না বলে?
লেহেঙ্গা নিয়ে বাসায় ফিরে আসে মানতাশা। মরিয়ম বেগম লেহেঙ্গাটি দেখে বেশ প্রশংসা করলেন। দাম শুনে অনেক বেশি অবাক হয়ে তিনি বললেন, কী বলছিস! লাখ টাকার লেহেঙ্গা এটা? অবশ্য দেখেই বোঝা যাচ্ছে এর দাম এমনি হবে।
মানতাশার গম্ভীরমুখ দেখে তিনি কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবেন, ঠিক তখনি হাসনার আগমন ঘটে। সে লেহেঙ্গাটির দিকে হিংসাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মরিয়ম বেগম তাদের জন্য নাস্তা আনতে গেলে হাসনা বলল, তোর কথা ছিল ইনতিসার কে পটানো। তা না করে বিয়ে করে নিচ্ছিস অন্য কাউকে?
-তাকে পটালে কী তোরা আমাকে লাখ টাকা দিতি?
এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত হাসনা ছিল না। মানতাশা এমনিতেই রেগে আছে হাসনার কথা শুনে আরও বেশি রাগ হয় তার। সে আরও বলল, পাগল নাকি! আমার বিয়ে শুনেও এসব বলছিস তুই?
-তার মানে চ্যালেঞ্জ এ হেরে গেছিস তুই?
-হু। এইবার তুই গিয়ে পটা। খুশি?
মানতাশার কথাবার্তা সুবিধার মনে না হওয়াই হাসনা বেরিয়ে যায়। মানতাশা ভাবে আরশানের কথা। প্রথম দিনেই তার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দিলো না সে। কাজটা মোটেও ঠিক করেনি আরশান।
এদিকে মানতাশার জন্য খুশি হলেও নাবীহার জন্য চিন্তিত আজরা। তার পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে অজানা নয় তার। যদিও সাজির রয়েছে ওদিকটা সামলানোর জন্য। কিন্তু সেও নতুন জব করছে। শুনেছে তার নিজেরই অনেক দেনা রয়েছে। সেসব পরিশোধ না করে পুরোপুরি ভাবে নাবীহাদের সাহায্য সে কীভাবে করবে?
ইনতিসার কে বলে কী নাবীহার জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করবে আজরা?
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২৩
#Saji_Afroz
ক্লান্ত ভারাক্রান্ত শরীর নিয়ে অফিস শেষে বাসায় আসে ইনতিসার। আজ জরুরী মিটিং থাকার কারণে ধকল গেছে অনেকটা শরীরের উপরে।
অফিস থেকে এসেই সোজা নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায় ইনতিসার। রুমে এসে আজরা কে পেল না সে।এরপর সে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেল। ফ্রেশ হওয়া শেষে এসে দেখলো, আজরা ট্রা তে নাস্তা সাজিয়ে নিয়ে এসেছে।
ইনতিসার বলল, আমি এসেছি তুমি জানো?
-হু। খবর পেয়েছি।
ট্রে এর দিকে তাকিয়ে ইনতিসার বলল, তুমি কেন এসব কষ্ট করে আনতে গেলে?
-কারণ এসব আমি বানিয়েছি।
-কেন করো বলো তো এসব! কোনো প্রয়োজন নেই।
এই বলে আজরার হাত থেকে ট্রে টা নিয়ে বিছানার উপরে রাখে ইনতিসার। আজরা বলল, আমার রান্না বুঝি মজা হয় না?
-অনেক বেশি হয়। কিন্তু আমি চাইনা তুমি কষ্ট করো৷ বুঝেছ?
-আমার সময় কাটে না। তাই এসব করি।
-ঘুরে বেড়াও, টিভি দেখো, ঘুমাও! যা খুশি করতে পারো তুমি। বই পড়বে বই?
-উহু! আপনি এইবার বেশি বেশি করছেন কিন্তু। যদি বলেন আমার রান্না ভালো না, তবেই আমি এসব আর করব না।
পায়েসের বাটিটা হাতে নিয়ে ইনতিসার বলল, এতবড়ো মিথ্যেটা বলতে পারলাম না বলে দুঃখিত।
এই বলে খাওয়া শুরু করলো সে।
ইনতিসার খেতে খেতে বলল, মানতাশার বিয়েটা তবে আরশানের সাথেই হতে চলেছে।
-হ্যাঁ। জানো? ওর বরাবরই এমন কাউকে বিয়ে করার ইচ্ছে ছিল।
-কেমন?
-বড়ো ঘরের বউ হওয়ার ইচ্ছে।
-ওহ!
আজরা একটু অন্যমনস্ক হয়ে যায়। যা বুঝতে পেরে ইনতিসার বলল, কী হলো?
-আমিও ভালো আছি, মানতাশাও ভালো থাকবে। কিন্তু নাবীহা….
একটু থেমে আজরা আবারও বলতে শুরু করলো, ও অনেক কষ্টে আছে। বাবা মারা গেছে। বোনের ডিভোর্স হয়ে গেছে। আজকে জহিরের জন্য টেনশন করছিল অনেক। কলেজে এডমিশন নেবে কিনা ও! আর ওর হবু বরও সবে জয়েন করেছে জব এ। তার কাছেও সেভাবে সহায়তা পাচ্ছে না সে।
আজরা খেয়াল করলো, ইনতিসার খাওয়াতেই ব্যস্ত রয়েছে। সে বলল, শুনছেন আপনি?
-হু। ভালো কাউকেই বিয়ে করলে পারে। পাত্র দেখব নাকি?
-কী যে বলেন না! সাজির ভাইকে ভীষণ ভালোবাসে সে।
-তবে কী করতে বলছ?
-একটা জবের ব্যবস্থা যদি আপনি করে দিতেন!
ইনতিসার একটু ভেবে বলল, ওর ডিটেইলস আমাকে দিও। দেখছি কী করা যায়!
আজরা খুশি হয়ে সাথে সাথেই ফোন দেয় নাবীহা কে। তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে আজরা বলল, ইনতিসার কে তোর চাকরীর বিষয়ে বলেছিলাম। ডিটেইলস চেয়েছে তোর।
নাবীহা একটু অবাক হয়ে বলল, কিন্তু আমি তো তোকে কিছু করতে বলিনি।
-তা বলিসনি! কিন্তু আমি তো বুঝছি, একটা ভালো চাকরির প্রয়োজন তোর।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলে নাবীহা বলল, তুই আমার জন্য এতটা ভেবেছিস তাতেই আমি খুশি হয়েছি রে। কিন্তু আমি ইনতিসার ভাইকে ঝামেলায় ফেলতে চাচ্ছি না।
-কোনো ঝামেলা…
আজরা কে থামিয়ে নাবীহা বলল, আজরা! প্লিজ এ নিয়ে আর কথা বলিস না।
ব্যক্তিটা ইনতিসার বলে হয়তো নাবীহা রাজি হলো না। কেন হলো না এটাও আজরা ভালোভাবে বুঝেছে। কিন্তু এই সময়ে নিজের কথাটা একটু ভাবতে পারতো নাবীহা!
ফোন রেখে আজরা বলল, আসলে ও নাকি একটা ইন্টারভিউ দিয়েছে। ওখানে জব হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। না হলে জানাবে বলল।
আজরা যে মিথ্যে বলছে তা বেশ বুঝতে পারলো ইনতিসার।
ফোনের ওপাশ থেকে যে নাবীহা না করেছে তা আজরা না বললেও ইনতিসারের বুঝতে কষ্ট হলো না। তবে ইনতিসার একটা বিষয়ে এখনো জানে না। আর তা হলো, আজরা কী তার আর নাবীহার বিষয়টা জানতো?
.
.
.
-আরে হাসনা তুই?
ফোন রাখার পর হাসনা কে দেখে অনেকটা অবাক হয়েই নাবীহা এই প্রশ্নটি করেছে। কারণ হাসনা সচারাচর তার বাসায় আসে না।
হাসনা ভেতরে এসে বলল, তোকে দেখতে এলাম।
তার সাথে বিছানার উপরে বসতে বসতে নাবীহা বলল, বেশ ভালো করেছিস।
-আমি মানতাশার বাসায়ও গিয়েছিলাম। এত দামি দামি জিনিসপত্র দিলো না ওর হবু বর? ওসব দেখে কি যে ভালো লাগলো!
-শপিং শুরু করেছে মানতাশা?
-সে কী! তোকে জানায়নি?
-হয়তো সময় পায়নি।
-নাকি নজর দিবি বলে?
-কীসব বলছিস!
-আজরার সাথে তো ভালোই কথা হয় তার। আসলে দু’জনে একই স্ট্যাটাস এর বউ বলে কথা! তোকে ওদের সাথে মানানসই না লাগাটা স্বাভাবিক।
-এমন কিছু নয়!
-আচ্ছা ছাড় ওসব! বল আর কী খবর তোর?
-চলছে কোনো রকম। একটু বস তুই। চা নিয়ে আসি।
এই বলে নাবীহা রান্নাঘরে যায়।
নাবীহা কে এসব বলতে পেরে অনেকটা মন হালকা হলো হাসনার। সে কোনোমতেই এই তিন বান্ধবীর ঘনিষ্ঠতা হজম করতে পারে না। কারণ তার সম্পর্ক শেষ হওয়ার পেছনে এদের হাত রয়েছে।
হাসনা জুবায়ের নামক এক ছেলেকে ভালোবাসতো। ছেলেটি বিবাহিত, যা গোপন করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে হাসনা তা জানার পরেও ছেলেটি কে বিয়ে করতে চায়। সে সাহায্য চায় আজরার কাছে। বিয়ের সাক্ষী হিসেবে তাকে থাকতে বলা হয়। কিন্তু আজরা রাজি হয় না। সাথে তাকে জ্ঞান দিতে থাকে অন্যের সংসার নষ্ট না করার জন্যে। হাসনা কথা না শুনলে আজরা মানতাশা ও নাবীহার সাহায্যে ছেলেটির আগের বউকে খুঁজে বের করে। এবং তাকে সব জানিয়ে দেয়। যার কারণে ছেলেটি হাসনার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য হয়। নাবীহারা তাদের এই কাজের জন্য হাসনার কাছে ক্ষমা চায় সাথে তাকে শান্তনা দেয় এই বলে যে, তার ভালোর জন্যই এসব করেছিল তারা। কিন্তু আদৌ কী তার ভালো হয়েছে? বরং ওদের জন্য ভালোবাসার মানুষকে হারিয়েছে সে। আর তাইতো এত ক্ষোভ তার! আর তাই এদের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক তা সে চায়না কিছুতেই!
.
.
.
দু’দিন বাদে নাবীহার বাসায় বিয়ের কার্ড নিয়ে হাজির হয় মানতাশা। কার্ড পেয়ে খুশি হয়ে নাবীহা বলল, অনেক সুন্দর হয়েছে এটি।
-তাইনা? বাবার পছন্দ।
বাবার কথা উঠতেই অন্ধকার নেমে আসে নাবীহার মুখে। তার বাবার কথা মনে পড়ে গেল। তিনিও নাবীহা ও সাজিরের বিয়ে নিয়ে কত খুশি ছিলেন!
প্রত্যেকটা বাবা-ই তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন। আশা করেন সংসার জীবনে প্রবেশের মাধ্যমে মেয়েটি ভালো থাকবে। তাই তো ঘটা করে আয়োজন করতে নিজের কষ্টের টাকা খরচ করতে দু’বার ভাবেন না। নাফিসার বিয়েতে তাদের বাবা কোনো কমতি রাখেননি। তবুও টিকলো না তার সংসার। আর বিচ্ছদের এই সংবাদেই প্রাণ হারান তাদের বাবা!
আজ মানতাশার বাবাও কত খুশি নিশ্চয়! মন থেকে চায় সে, মানতাশার বাবা যেন আজীবন নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।
নাবীহা কে চুপচাপ দেখে মানতাশা বলল, বিয়ের শপিং প্রায় শেষ। কবে দেখতে যাবি বল?
নাবীহা কিছু বলার আগে মানতাশার ফোন বেজে উঠে।
স্ক্রিনে ভেসে উঠেছে আরশানের নাম। যা দেখে সে বলল, আরশান ফোন করেছে।
-কথা বল।
খুশি মনে মানতাশা ফোন রিসিভ করলেও ওপাশ থেকে আরশানের কথা শুনে হাসি গায়েব হয়ে যায় তার।
আরশান বলেছে, তুমি নাকি বাসায় নেই? অথচ আমার ভাবী তোমাকে নিষেধ করেছিল বেরুতে! বিয়ে ঠিক হওয়ার পর একা বেরুনো উচিত নয়। এসব জানানোর পরেও একা বের হলে কেন তুমি?
কথাগুলো ভালোভাবে বললেও পারতো আরশান। কিন্তু সে তা না করে গম্ভীরভাবে বলাতে মানতাশা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে নাবীহার দিকে তাকিয়ে আমতাআমতা করতে থাকে।
আরশান বলল, যেখানে আছ সেখান থেকে এখুনি বের হয়ে বাসায় গিয়ে ফোন দাও আমাকে।
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় আরশান। নাবীহা বলল, কিছু হয়েছে কী?
মানতাশা মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে বলল, বিয়ে ঠিক হলে নাকি একা বের হওয়া ঠিক না। অদ্ভুত!
-অনেকে অনেক কিছুই মানে। তারা যদি তোকে নিষেধ করে তবে বের হবি না!
-আমি তো বান্ধবীর বাসায়ই এলাম!
-বাইরে মানে বাইরে!
মানতাশা অন্যমনস্ক হয়ে যায়। আরশানের এমন আচরণ কেন সে সহ্য করছে? ও বিত্তবান বলে? হ্যাঁ, এটা অস্বীকার করার কিছু নেই!
ব্যাপার না, বিয়েটা হোক একবার। টাকার কাছে এসব কিছুই না! সে যে টাকা দিয়েই সুখ করতে চায়। স্বামীর ভালোবাসায় নয়!
.
.
.
টিভি তে বসে কার্টুন দেখছে আজরা। ইনতিসার মা এর রুমে গিয়েছিল কথা বলতে। কখন যে এসে আজরার পাশে দাঁড়িয়ে আছে খেয়ালই করেনি সে!
হঠাৎ ইনতিসারের হাসির শব্দ শুনে চমকায় আজরা। তার দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে কেন হাসছে!
পরক্ষণেই কারণ বুঝতে পেরে চ্যানেল সরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে আজরা। ইনতিসার বলল, আরে থাক থাক! কত মনোযোগ দিয়ে দেখছিলে!
আজরা নরমস্বরে বলল, আমার না বেশ ভালো লাগে!
তার পাশে বসে ইনতিসার বলল, ভালোই হলো৷ আমার সংসারে অশান্তি কম হবে।
-কীভাবে?
-মায়েরা সিরিয়াল দেখার জন্য বাচ্চাদের নাকি টিভি দেখতে দেয় না? এতে করে বাচ্চারা তাদের জ্বালাতন করে। আর মা রাও বকে। এখন আমার ঘরে হবে উলটো। মা আর বাচ্চা একসাথে বসে টিভি দেখবে!
-ঠিকই বলেছেন! ইশ! সেই সময় যে কবে আসবে!
কথাটি বলে জিভে কামড় বসালো আজরা। ইনতিসার তাকে কাছে টেনে বলল, লাগবে নাকি?
-কী?
-কার্টুন দেখার সঙ্গী?
আজরা তার বুকে মুখ লুকিয়ে বলল, হু। লাগবে তো।
তাকে পরম আবেশে জড়িয়ে ধরে ইনতিসার বলল, আমারও লাগবে।
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২৪
#Saji_Afroz
আরশানের আচরণে হতাশ মানতাশা। বান্ধবীর বাসায়ই তো গিয়েছিল সে, তাই বলে এভাবে নিষেধ করবে! আর আরশানই বা কীভাবে জানলো যে সে বের হয়েছে?
মা এর কাছে এসে মানতাশা বলল, আরশান কী তোমাকে ফোন করেছিল?
-না তো। তবে ওর ভাবী করেছিল। তোর সাথেও কথা বলতে চেয়েছিল। কিন্তু তুই ছিলিস না। কেন বল তো?
এইবার সবটা স্পষ্ট মানতাশার কাছে। মা কে এসব বলল না সে। শুধু বলল, না এমনিতেই!
এই বলে নিজের রুমে ফিরে আসে মানতাশা। মালিহা মুমতাজের উপরে মেজাজ খারাপ হলো তার। মহিলাটি কী এই বিয়েতে খুশি না?
.
.
.
নাফিসার রুমে আসে নাবীহা। নাফিসা ফোনে কারো সাথে কথা বলছিল। নাবীহা কে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে তাড়াহুড়োয় ফোন রেখে দেয় সে। এরপর আমতাআমতা করে বলল, তুই?
নাবীহা তার পাশে এসে বসে বলল, ভুত দেখার মতো চমকে গেছ যে?
-হুট করে দেখে আসলেই ভুত দেখেছি ভেবেছিলাম।
নাবীহা হেসে বলল, আমার চেহারাও কী ভুতের মতো হয়ে গেছে রে আপু?
-হুশ! আমার বোন দেখতে মাশাআল্লাহ।
-যেটা বলতে এসেছিলাম। শুনেছি কাগজে কলমে ডিভোর্স হতে চলেছে তোমাদের?
-হ্যাঁ৷ পেপার রেডি সব।
-উনি টাকার ব্যাপারে কী বলল?
-সব একসাথে দিতে পারবে না। কিছু দেবে। বাকি গুলো মাসে মাসে পরিশোধ করবে জানিয়েছে। সবটা হয়েছে মামার সহযোগিতায়। নাহলে একটা টাকাও পেতাম না। উনিই আইনের আশ্রয় নিয়ে এসব সক্ষম করতে পেরেছেন।
-যাক ভালো।
-ভালো একটা এমাউন্ট পাব। জহিরের পড়াশোনা আর তোর বিয়ে নিয়ে আপাতত চিন্তা করতে হবে না।
-আমার বিয়ের থেকেও জহিরের বিষয়ে বেশি চিন্তিত ছিলাম আমি। তবে এসব টাকা হাতে পেতেও তো সময় লাগবে তাইনা? এখনো চিন্তা শেষ হয়নি!
-এখনই তো ওর টিউশনি করতে হচ্ছে না। আগে এডমিশন এর কাজটা সেরে ফেলি। বই কেনা, টিচার রাখা, টিউশনি সেসব নাহয় আরেকটু পরে থেকেই শুরু করুক।
-ঠিক বলেছ আপু। ততদিনে আমিও কোনো ব্যবস্থা করতে পারি কিনা দেখছি!
এই বলে নাবীহা নিজের রুমে চলে যায়। নাফিসার ফোন বাজছে। সে রিসিভ করে বলল, হুট করে কেটে দিয়েছি মানে বুঝবে না যে কেউ আসছে? ডিভোর্স হওয়ার আগে বাসায় বা কেউ কিছু জানুক আমি চাইনা। বুঝেছ?
.
.
.
আরশানের ফোনে ভোরে ঘুম ভাঙে মানতাশার। গতকাল কর্কশভাবে কথা বলার কারণে মানতাশাকে দুঃখিত বলেছিল সে। যার কারণে মানতাশার রাগও গায়েব হয়ে যায়। আজ এত সকাল সকাল তার ফোন দেখে রিসিভ করে মানতাশা বলল, সকাল সকাল মিস করছেন বুঝি?
-আরে আর বলো না! ভাবী সিড়ি থেকে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছে।
-সে কী! খুব বেশি নাকি?
-পা মচকে গেছে। তেমন মেজর কিছু না।
-ওহ!
-তুমি ফোন করে খবর নিও তার।
-কী খবর?
-কী খবর মানে? তোমার একটা দায়িত্ব আছে না? তোমার হবু বরের ভাবী অসুস্থ, তাকে ফোন করে শরীর কেমন জিজ্ঞাসা করবে। এই আরকি!
-কিন্তু আপনিই তো বললেন, পা মচকে গেছে শুধু।
-তার মানে ফোন দেবে না?
সামান্য পা মচকে গেছে! এইজন্য সকাল সকাল তাকে ফোন করে বিরক্ত করছে আরশান।
মানতাশা খুব বেশি বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করলো না। শুধু বলল, দেব।
-ওকে। আমি অফিসের উদ্দেশ্যে বেরুলাম। রাখছি এখন।
আরশান ফোন রাখার পরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখে নেয় মানতাশা। ভাবলো সকাল দশটার দিকে নাহয় ফোন দেবে সে। এই ভেবে আবারও শুয়ে পড়ে মানতাশা। আর বেঘোরে ঘুমিয়ে যায় সে।
ঘুম ভাঙে তার আরশানের ফোনে। ঘুমঘুম কণ্ঠে রিসিভ করে বলল, হ্যালো?
আরশান বলল, ভাবী কে ফোন করোনি তুমি?
মানতাশা এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখলো, এখন সময় সকাল এগারোটা! এত দেরী হয়ে গেছে সে টেরই পায়নি। সে আমতাআমতা করে বলল, মাত্র ফোন দিচ্ছিলাম।
-একটা ফোন দিতে এতক্ষণ লাগে? আসলে তুমি আমার কথা গুরুত্বই দাওনি মানতাশা।
-বিষয়টা এমন নয়।
-তবে কেমন?
-আসলে আমি ভেবেছি ওত সকালে ফোন করলে উনি বিরক্তবোধ করবেন।
-এখন ক’টা বাজে?
-আমি মাত্রই করতাম!
-সেটা তোমার কণ্ঠস্বর বলে দিচ্ছে। ঘুমাও তুমি।
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় আরশান।
মরিয়ম বেগম কখন যে পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন টেরই পায়নি সে।
তিনি বললেন, আরশান কী রাগ দেখালো কোনো বিষয়ে?
মানতাশা এসব মা কে বলতেই তিনি বললেন, ওর রাগ করাটা স্বাভাবিক। একটা ফোনই তো করতে বলেছে!
-তুমিও তার পক্ষ নাও!
তিনি একটু ভেবে বললেন, তৈরী হয়ে নে। মালিহা কে দেখে আসি।
মানতাশা ভ্রু কুচকে বলল, এতটাও অসুস্থ না।
-তবুও যাওয়া উচিত। আরশান খুশি হবে।
আরশানের বাড়ি দেখা হয়নি মানতাশার। এই সুযোগে বাড়িটা দেখা হয়ে যাবে ভেবে সেও রাজি হয়ে যায়।
চটজলদি ফ্রেশ হয়ে মা মেয়ে বেরিয়ে পড়ে আরশানের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
নিজের রুমে শুয়ে আছে মালিহা মুমতাজ। একজন বুয়া এসে বলল, আরশান স্যারের হবু শশুর বাড়ির লোক এসেছেন।
তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, কে?
– দু’জন মহিলা। একজন নিজেকে স্যারের হবু শাশুড়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন। বললেন আপনাকে দেখতে এসেছে।
-আমাকে দেখতে?
-সিড়ি থেকে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন তাই!
-ওহ!
যদিও খুব বেশি ব্যথা তিনি পাননি। তবুও হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। তাই তিনি বুয়ার সাহায্যে উপর থেকে নিচে নেমে আসলেন।
ড্রয়িংরুমে এসে মরিয়ম বেগমের পাশে মানতাশা কে দেখে মেজাজ সামান্য খারাপ হলেও নিজেকে সামলানেন। তাকে দেখে মরিয়ম বেগম এসে তাকে সোফায় বসতে সহযোগিতা করতে চাইলেন।
মালিহা বললেন, ব্যস্ত হবেন না! আপনারা বসুন?
তারা বসে একে অপরের হালচাল জিজ্ঞাসা করে কথাবার্তা বলতে লাগলেন। আর মানতাশা চারদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে থাকলো।
আজরার বাড়ির চেয়ে কোনো অংশে কম নয় এটিও! বরং চাকচিক্যের দিক থেকে এই বাড়িটায় বেশি সুন্দর। এমন একটা বাড়ির বউ হবে ভাবতে এখানেই নাচতে মন চায়ছে তার!
আচ্ছা? আরশানের রুমটা কেমন? নিশ্চয় অনেক বড়ো হবে!
বুয়ার দিকে তাকিয়ে মানতাশা বলল, ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন ছিল আমার। একটু দেখিয়ে দেবে?
-নিশ্চয়! আসুন ম্যাম।
মানতাশা তার সাথে এগিয়ে যায় ঠিকই। কিন্তু নিচের কোনো ওয়াশরুমে না গিয়ে সে বলল, আরশানের রুমটা কোনদিকে? আমি ওটাতেই যেতে চাই।
-স্যার তার রুমে কারও প্রবেশ পছন্দ করেন না ম্যাম।
-আমি তার হবু বউ।
বুয়া আর কথা না বাড়িয়ে তাকে নিয়ে উপরে যায়।
আরশানের রুমে মানতাশা একাই প্রবেশ করে৷ এত গোছালো সুন্দর রুম দেখে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় সে। সারারুম পায়চারি করে এটা সেটা ঘেটেঘুটে দেখে।
খানিকক্ষণ বাদে সে বেরিয়ে বুয়ার সাথে নিচে নেমে আসে।
মালিহা তাদের দেখে বললেন, এতক্ষণ লাগলো যে?
বুয়া বলল, ম্যাম স্যারের রুমের ওয়াশরুম ইউজ করেছিলেন তাই।
মানতাশা আমতাআমতা করে বলল, আসলে ভাবলাম একেবারে উনার রুমটা দেখে আসি!
তাকে কিছু না বলে বুয়ার দিকে তাকিয়ে মালিহা বললেন, এটা করার আগে পারমিশনের প্রয়োজন ছিল তোমার৷ ওর সাথে এখনো আরশানের বিয়েটা হয়নি। তুমি জানো না? আরশান তার রুমে কারো যাওয়াটা কতটা অপছন্দ করে?
বুয়া মাথা নিচু করে বলল, দুঃখিত ম্যাম!
তার কথা শুনে মরিয়ম বেগম ও মানতাশা একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলেন। এরপর অন্য একজন বুয়া এসে হরেক রকমের নাস্তা রাখলেন তাদের সামনে। মালিহা নাস্তা নিতে বললে তারা কী করবে ভেবে পায় না। কারণ এমন কথা শোনার পর গলা দিয়ে কী সহজে খাবার নামবে?
মালিহা নরমস্বরে তাদের বললেন, আপনারা এসেছেন আমি খুশি হয়েছি। তবে আরও বেশি খুশি হতাম আপনি একা বা মানতাশার বাবাকে সাথে নিয়ে আসলে। বিয়ের আগে মানতাশার এখানে আসাটা আমি পছন্দ করিনি।
মরিয়ম বেগম সংকোচ নিয়ে বললেন, আপনাকে দেখতে চেয়েছে মেয়েটা।
-সে ভিডিও কলেও দেখা যেত! আধুনিক যুগ এখন। যাক, আমার কথাতে কিছু মনে নেবেন না। প্রথম দিনেই বলেছিলাম, আভিজাত্য থাকলেও নিয়ম রীতি মেনে চলার চেষ্টা করি আমরা৷ আর মানতাশাকেও এসব মানতে হবে।
-জি জি৷ অবশ্যই!
বেশিক্ষণ বসলেন না তারা। এ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সি.এন.জি তে উঠে বসলেন। মানতাশা আশা করেছিল, মালিহা অন্তত তাদের গাড়ি করে বাড়ি পাঠাবে তাদের। সেটাও হলো না। মানতাশার মা বেশ অপমানবোধ করলেন। তিনি মানতাশা কে বললেন, তুই কী আরেকবার এই বিষয়ে ভেবে দেখবি?
-কোন বিষয়ে?
-আরশানকে বিয়ের বিষয়ে?
মা কেন এই কথাটি বলছেন বেশ বুঝতে পারলো সে। তার ফোন বেজে উঠলে ব্যাগ থেকে তা বের করে। দেখলো আরশানের ফোন। ভেবেছে এখানে আসাতে আরশান তাকে ধন্যবাদ জানাবে। কিন্তু হলো এর উল্টো। আরশান ওপাশ থেকে বলছে-
কী দরকার ছিল আমার বাসায় যাওয়ার? কিছু করার আগে একবার আমার সাথে কথা বলতে পারোনি? যেটা করতে বলেছি সেটা করোনি। আর যেটার প্রয়োজন ছিল না সেটা করেছ। তুমি আসলেই আমার মাথা ঠান্ডা রাখতে দেবে না কখনো! ধুর…
এই বলে ফোন রাখে আরশান। মানতাশার মুখে নেমে আসে অন্ধকার।
ইনতিসার আজরা কে পছন্দ না করেও এমন খারপ ব্যবহার করেনি। অথচ আরশান! আসলেই কী সে আরেকবার ভেবে দেখবে এ নিয়ে!
.
.
.
আজ সকাল থেকেই আজরার কিছু ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে কোথাও থেকে ঘুরে এলে ভালো হত। আর একথা সে ইনতিসার কে জানায়। সাথে বলে, সে ফ্রি হলে পরে যেন কোথাও ঘুরতে নিয়ে যায়। এভাবে শুয়ে বসে তার সময় কাটেনা!
বিকালে বসে বসে টিভি দেখছে আজরা। হঠাৎ ইনতিসারের আগমনে চমকে উঠলো সে। তাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়ে আজরা৷ আনন্দিত হয়ে বলল, আপনি?
-হু আমি! তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও।
-মানে?
-মানে আমরা ঘুরতে যাব।
-আমি চেয়েছি বলে অফিস থেকে এভাবে চলে আসবেন?
-অফিসটা আমার ম্যাম!
-তবুও…
-উহু! যাবে এখন? নাকি অফিসেই ফিরে যাব?
আজরা হেসে ড্রয়ার খুলে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে যায়। ফ্রেশ হয়ে কালো রঙের সালোয়ার কামিজটি পরে বেরিয়ে আসে।
সে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে সাজতে শুরু করলে ইনতিসার এসে বলল, না সাজলেই অনেক বেশি ভালো দেখায় তোমাকে।
তার কথা শুনে আজরা আর সাজলো না। শুধু চুলটা আঁচড়ে নিয়ে ইনতিসারের হাত ধরে বলল, চলুন?
-চলো।
-কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?
-সারপ্রাইজ থাক সেটা?
ইনতিসারের দিকে তাকিয়ে হাসলো আজরা।
আর আপনমনে বলল সে, আগের ইনতিসারের সাথে এই ইনতিসারের কোনো মিল নেই। এমন একজন কেই তো জীবনে চেয়েছিলাম আমি!
ইনতিসার যেন সবসময়ই এমন থাকে।
.
চলবে