#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_১৯
#Saji_Afroz
নাবীহার বাসা থেকে নিজ বাড়িতে ফিরে আসলো মানতাশা। একবার ভেবেছিল আজরার কাছে যাবে সে। কিন্তু এই সময়ে গেলে ইনতিসার কে পাবে না ভেবে আর যাওয়া হলো না।
বাসায় এসে কলিংবেল চাপতেই দরজা খুলে দিলেন মরিয়ম বেগম। যেন দরজার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি! তাকে দেখে মানতাশা ভেতরে প্রবেশ করতে করতে বলল, আরেহ! মা কী আমায় স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছিলে নাকি?
-প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
ড্রয়িংরুমে সোফার উপরে বসে দিদার আলম কেও তার দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখলো মানতাশা। এইবার একটু ঘাবড়ায় সে। মা কে কী হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বললেন, তোর খুশির জন্য এজাজ কে আমরা মেনে নিয়েছি। কী এমন হলো যে ও কে তুই বিয়ে করবি না বলে জানিয়েছিস?
এইবার সবটা স্পষ্ট হলো মানতাশার কাছে। সে বিরক্ত হয়ে বলল, এজাজ সব বলে দিয়েছে?
-ইচ্ছেকৃত ভাবে নয়। ওর বাসায় যেতে চেয়েছিলাম আমরা তাই বলেছে।
-তোমরাও না! ওর বাসায় যাওয়া কী প্রয়োজন?
এইবার মুখ খুললেন দিদার আলম। তিনি ধমকের সুরে বললেন, তোমার মা এর প্রশ্নের উত্তর দাও তুমি।
এখন রাগ দেখিয়ে লাভ নেই জানে মানতাশা। সে বাবার পাশে এসে বসে বলল, আসলে আমি তখন আবেগে পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু আমি এই সম্পর্ক টা থেকে বেরুনোর চেষ্টা করছিলাম। তাই তোমাদেরও জানাইনি। মা জেনে যায়। এরপর হুটহাট এসব ঘটে। আমি চাইনি দুই পরিবার এতটা ঘনিষ্ঠ হোক।
-এর কারণ?
-কারণ জীবন একটাই! সিদ্ধান্ত বদলানো যেতেই পারে। পরে আফসোস করার চেয়েও এখুনি সব ঠিক করা শ্রেয় নয় কী?
-কী বলতে চাচ্ছ তুমি?
-বাবা আমার লাইফে আমি ইনতিসারের মতো কাউকে চাই।
-ইনতিসার?
-আজরার স্বামী। তার মতো ধনী কাউকে। যার কাছে কিনা সব আবদার পূরণ করা সম্ভব হবে। এজাজ আমার সব ইচ্ছে পূরণ করার ক্ষমতা রাখে না। তোমরা ইনতিসারের মতো কাউকে এনে দাও। আমি বিয়েতে রাজি হয়ে যাব।
এই বলে মানতাশা নিজের রুমে চলে যায়। মরিয়ম বেগম বললেন, দেখেছ মেয়ের কাণ্ড? সে অন্যের মন ভেঙে ধনী পরিবারের বউ হওয়ার স্বপ্ন দেখছে! আরে সবার কপাল কী আজরার মতো হবে?
দিদার আলম শান্তস্বরে বললেন, ওর চোখে আমি লোভ দেখছি। এজাজের জন্যে সেখানে কোনো ভালোবাসা নেই। এজাজ ভালো ছেলে। জোর করে কিছু চাপিয়ে সম্পর্কটা আমরা ঠিক রাখতে পারব না। সম্পর্কের শুরুটা ওরাই করেছে তো? শেষ টাও ওদেরই বুঝতে দাও।
-তুমিও এটা বলছ?
-আর কী করার আছে? মেরে ধরে মেয়ে বিয়ে দেব?
এইবার নিশ্চুপ হয়ে যান মরিয়ম বেগম। কিন্তু পরক্ষণেই মেয়ের রুমের দিকে তাকিয়ে চ্যাঁচিয়ে বললেন, আমার এমন খারাপ লাগছে না জানি ওদের কেমন লাগছে! এতগুলা মানুষ কে কষ্ট দিয়ে তুই সুখী হতে পারবি তো? পরে না আবার পস্তাতে হয় দেখিস!
.
.
.
আসমা আক্তার ছেলের কথা ভেবে ভেঙে পড়েছেন। চোখের পানি যেন তার থামতেই চাচ্ছে না। এলিজা মা কে অনেকক্ষণ ধরে শান্তনার বাণী শুনিয়েও ব্যর্থ হয়। এইবার সে খানিকটা রাগ নিয়েই বলল, আগেই বলেছিলাম মেয়েটার মুখে আমি খুশি ভাবটা দেখিনি। আমার কথা তখন বিশ্বাস করলে না তো?
আসমা আক্তার নরমসুরে বললেন, ছেলের খুশির জন্য তার পছন্দকেই তো গুরুত্ব দিতে চেয়েছি। আমার একমাত্র ছেলেটার মনটা ভেঙে ওই মেয়ে কী নিজেকে সুখী করতে পারবে ভেবেছে? কখনোই না। খুব তাড়াতাড়ি এর ফল পাবে সে।
.
.
.
আজ সকালে নাবীহার ঘুম ভাঙলো আজরার ডাকে। সে চোখ খুলে পাশে বসা আজরা কে দেখে চমকে উঠলো। চটজলদি উঠে পড়লো সে। অবাক হয়ে বলল, তুই এত সকালে?
-সারপ্রাইজ!
নাবীহা জড়িয়ে ধরে আজরা কে। আজরা কে কাছে পেয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে উঠলো সে। চোখ বেয়ে পানি পড়ছে তার। আজরা তা বুঝতে পেরে তাকে শান্তনা দিলো। নাবীহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, ছাড় ওসব। তোর কথা বল। কেমন চলছে দিন কাল? ইনতিসার ভাই ভালো আছেন?
-আছে। সংসারও ভালো চলছে। সে আমাকে নামিয়ে দিয়ে অফিস গেছে। তাই সকাল সকাল বেরুলাম। এখান থেকে মা এর বাসায় যাব।
-তুই খুশি আছিস দেখে অনেক ভালো লাগছে রে।
আজরা হেসে বলল, তোর জন্যে একটা উপহার এনেছি।
প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে আজরার দিকে তাকালো নাবীহা। সে ব্যাগ থেকে একটি বাক্স বের করে নাবীহার দিকে এগিয়ে দেয়। হাতে নিয়ে দেখলো, একটি ফোনের বাক্স এটি। বাক্সটি খুলে এত দামি ফোন দেখে নাবীহা বলল, এটা আমার জন্যে?
-হ্যাঁ। বিয়ের পর তোদের তো কিছুই দিতে পারলাম না। ভাবলাম প্রয়োজনীয় জিনিসই দিই। মানতাশার জন্য ব্রান্ডের ঘড়ি নিয়েছি। তোর ফোনের প্রয়োজন ছিল তাই ফোন নিয়েছি।
নাবীহা মৃদু হেসে বলল, ধন্যবাদ। কিন্তু এত টাকা খরচ করার প্রয়োজন ছিল না। সাজিরও কিন্তু আমায় একটি ফোন দিয়েছে। তাছাড়া আমি তোকে এত দামি উপহার কখনোই দিতে পারব না।
-রিটার্ন গিফট পাওয়ার জন্যে দিয়েছি নাকি? তাছাড়া তুই যা দিবি সেটাই আমার জন্য মূল্যবান হবে।
নাবীহা হাসলো। ফোনটা ঘেটেঘুটে দেখছে সে।
আজরা জানতো, নাবীহা এটি নিতে চাইবে না। তাই মানতাশার জন্যেও দামি ঘড়ি নিয়েছে সে। যাতে করে নাবীহার জন্য এই ফোনটি গ্রহণ করা সহজতর হয়।
এখানে বসেই আজরা ফোন দেয় মানতাশা কে। তাকে জানায় সে নাবীহার বাসায় আছে। সেও যেন আসে। কিন্তু মানতাশা জানালো, সে এখন আসতে পারবে না। বাসায় গিয়ে দেখা করবে তার সাথে। আজরা তাকে সেখানেই আসতে বলে ফোন রাখে।
নাবীহা বলল, মানতাশা এজাজের সাথে সম্পর্ক শেষ করেছে।
আজরা অনেকখানি অবাক হয়ে বলল, কী বলছিস?
-হ্যাঁ রে।
-কিন্তু কেন?
-ওর মনে হচ্ছে এজাজ ওর যোগ্য নয়। ধনী পরিবারের বউ হতে চায় সে।
-এতদিন পর সে এটা উপলব্ধি করতে পারছে? এজাজ ভাই কতটা কষ্ট পেয়েছে ভাব একবার!
-আমিও এটা ভাবছি। উনি কীভাবে নিজেকে স্থির রাখছেন কী জানি!
-মানতাশার যে ছেলে মানুষী স্বভাব রয়েছে তা আমরা বুঝি। কিন্তু এটা কী ছেলে মানুষী হলো? রীতিমতো অন্যায় করছে সে অন্য জনের প্রতি। আজ দেখা হোক ওর সাথে, বোঝাব আমি।
-লাভ নেই! তোকে উলটো জ্ঞান দেবে।
-দেখা যাক!
.
.
.
মানতাশা ফোন দেয় ইনতিসার কে। তার নাম্বার চিনে ইনতিসার রিসিভ করে বলল, হ্যালো? কেমন আছ?
-এই তো ভালো। আপনি কেমন আছেন?
-ভালোই। তা আজও কী আজরা কে ফোনে পাচ্ছ না?
মানতাশা হেসে বলল, তা নয়। আজ আজরার সাথে দেখা করতে যাব ওর বাসায়। আপনি যাবেন কিনা জানার জন্যে ফোন দিলাম।
-আমাকে কী প্রয়োজন?
-বারেহ! দুলাভাই তো। আপনার পছন্দের খাবার বানিয়ে নিয়ে যাব। এইজন্য আরকি…
-তার প্রয়োজন নেই। এমনেই এসো। আমি আজরা কে নিতে সন্ধ্যার দিকে যাব।
-আরে বলুন না আপনার পছন্দের খাবার কী?
-তুমি বরং তোমার বান্ধবীর পছন্দের খাবার নিয়ে যাও? আর হ্যাঁ, আমি একটু ব্যস্ত আছি। রাখছি কেমন।
এই বলে ফোনের লাইন কেটে দেয় ইনতিসার। একটু পরেই মিটিং আছে তার। প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
এদিকে মানতাশা বিকাল থেকেই সাজগোজ শুরু করে দেয়। হাসনার দেওয়া চ্যালেঞ্জ এ তাকে জিততেই হবে। নাহলে বন্ধু মহলে নাকটা কাটা যাবে।
তাকে এভাবে সাজতে দেখে মরিয়ম বেগম বললেন, কোথাও যাওয়া হচ্ছে শুনি?
-আজরার বাসায়।
-আজরার বাসায় যেতে এত সাজগোজ?
-কেন? আমার কী সাজতে মানা?
-তোকে দেখে একটুও মনে হচ্ছে না, প্রিয় কারো সাথে বিচ্ছেদ হয়েছে তোর!
মানতাশা সহজ ভাবে উত্তর দিলো, বিচ্ছেদ টা আমি করেছি। ভুলে গেলে নাকি?
আর কোনো কথা মরিয়ম বেগম বললেন না। মানতাশা তৈরী হয়ে বেরিয়ে গেল।
.
.
.
কলিংবেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুললেন আজিজা বানু। মানতাশা কে এভাবে দেখেই ভ্রু কুচকালেন তিনি। মানতাশা তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে ভেতরে গেল। আজরা তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে বলল, মাশাআল্লাহ মাশাআল্লাহ! তোকে তো দেখতে দারুণ লাগছে রে।
দুই বান্ধবী মজে উঠে আড্ডায়। সন্ধ্যা হলে আজিজা বানু এসে আজরার দিকে তাকিয়ে বললেন, এসব কী পরে আছিস? জামাটা বদলে একটু সেজেগুজে নে। জামাই আসবে একটু বাদে।
-তোমার জামাই যেন আমাকে আগে দেখেনি?
-মেয়েদের সবসময় স্বামীর জন্য পরিপাটি হয়ে থাকা ভালো। এতে করে অন্যদিকে চোখ যায় না।
এই বলে তিনি মানতাশার দিকে তাকালেন। মূলত সুন্দরী মানতাশা কে দেখে তিনি চিন্তিত। আজকালকার ছেলেদের উপরে ভরসা করা যায়? বউ এর বান্ধবীর উপরেও কুনজর দেওয়ার আগে একবার ভাবে না তারা।
আর কিছু মেয়েও কম না! বিবাহিত পুরুষ দেরও তারা ছাড়ে না।
কলিংবেলের শব্দ শুনে তিনি আজরা কে তাড়া দিয়ে বললেন, তৈরী হয়ে আয়। দরজা আমি খুলছি। নিশ্চয় জামাই এসেছে।
তার ধারণা সঠিক হলো। ইনতিসার এসেছে। সাথে রয়েছে তার এক বন্ধু। আজিজা বানু তাদের ড্রয়িংরুমে বসালেন।
খানিকবাদে ট্রে হাতে আজরা হাজির হয় মানতাশা কে নিয়ে।
ইনতিসার তার বন্ধুর সাথে আজরা ও মানতাশা কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলল, ও বিয়েতে আসতে পারেনি। তোমাকে দেখতে চাইছিল। তাই নিয়ে আসলাম।
-ভালো করেছেন খুব।
-জানো তো আজরা? ও আমার মতোই ব্যবসায়ী। সামনে আমরা একটা নতুন ব্যবসা দু’জনে একসাথে করতে যাচ্ছি। ইনভেস্ট করে দু’জনে বন্ধু থেকে পার্টনার হব।
একথা শুনে ছেলেটির দিকে আরও একবার ভালোভাবে নজর বুলালো মানতাশা। দেখতেও খারাপ না সে। তবে সে কী বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?
ভেতর থেকে আজিজা বানু আজরা কে ডাকলে সে মানতাশা কে নিয়ে সেদিকে এগিয়ে যায়।
তারা যেতেই আরশান নামক ছেলেটা ইনতিসারের উদ্দেশ্যে বলল, ভাবীর সাথে মেয়েটি কে যেন বলেছিস?
-তার বান্ধবী।
-সিঙ্গেল?
-নট শিওর! কেন?
মুচকি হাসলো আরশান। ইনতিসারও হেসে বলল, ওহহো! পাত্রী হিসেবে দেখবি নাকি?
-মন্দ না। কিন্তু তুই তো জানিস আমার সবকিছু ভাবী ঠিক করে। তার সাথে আলোচনা করা প্রয়োজন।
-নিশ্চয়!
-তবে এর আগে ওর ব্যাপারে আজরা ভাবীর থেকে আরও কিছু জানা প্রয়োজন।
.
চলবে
#একদিন_কাঁদবে_তুমিও
#পর্ব_২০_২১
#Saji_Afroz
আজিজা বানু চা নিতে ডেকেছেন আজরা কে। সে ট্রে হাতে চা নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসলো। মানতাশার ফোন আসাতে সে আজরার রুমে গিয়ে বসে।
আজরা কে একা পেয়ে ইনতিসার বলল, মানতাশার কী কারো সাথে সম্পর্ক রয়েছে?
আজরা একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো, কেন?
ইনতিসার হেসে আরশানের দিকে তাকালো। আরশান লজ্জা পেয়ে বলল, আমার সামনেই এসব বলতে হচ্ছে তোর?
আজরাও দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে বলল, পছন্দ হয়েছে নাকি আমার বান্ধবী কে?
আরশান বলল, প্রথম দেখাতে ভালোলাগা বলতে পারেন। কিন্তু এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। উনার সম্পর্কে জানতে চাই৷ আর আমার ভাবী এসব নিয়ে কথা বলবেন। উনিই আমার সব দেখাশোনা করেন কিনা!
এজাজের কথা ভেবে একটু চিন্তিত হয় আজরা। তবে নাবীহার কাছে শুনেছে, তার সাথে সম্পর্ক শেষ করেছে মানতাশা। তাই সে বলল, মানতাশা মেয়ে ভালো। ওদের পরিবারও ভালো। আপনি চাইলে ভাবীকে জানাতে পারেন। ভাবীর পছন্দ হলে নাহয় মানতাশা কে জানাব।
-আমি কী ওর একটা ছবি পেতে পারি?
-নিশ্চয়। আমি আপনার বন্ধুর ফোনে ছবিসহ ওর ডিটেইলস পাঠিয়ে দিচ্ছি। ওখান থেকে নিয়েন।
-শিওর।
এইবার আজরা কে তাড়া দিয়ে ইনতিসার বলল, তৈরী হয়ে নাও? বাসায় চলো।
-আজ থাকি এখানে? মা খুব করে বলছিল। আপনিও থাকুন না?
-আমার আজ মিটিং এর কাজ গুলো বাসায় বসে ঠান্ডা মাথায় সামাল দিতে হবে। আজ সম্ভব নয়। তবে তুমি থাকো৷ আমরা চা শেষ করে উঠি।
-সে কী! অন্তত ডিনারটা করে যান?
-আজ থাক। কাজের চাপ আছে!
চা শেষ করে বাড়ির সকলের সাথে দেখা করে ইনতিসার ও আরশান বেরিয়ে পড়ে।
.
.
.
আজরা নিজের রুমে এসে দেখলো, মানতাশা হাবসি হালুয়া খেতে ব্যস্ত। আজরা তার পাশে বসতেই মানতাশা বলল, দুলাভাই এত দামি দামি মিষ্টি এনেছেন! সবই আমার ফেভারিট।
-আরো এনে দিই?
-এখন না। আগে এসব শেষ করি।
আজরা একটু থেমে জিজ্ঞাসা করলো, এজাজ ভাই এর সাথে সম্পর্ক শেষ করলি কেন?
মিষ্টির বাটিটা দেখিয়ে মানতাশা বলল, এমন মজাদার খাবার খাওয়ার জন্যে।
-এসব কী উনি খাওয়াতে পারতো না?
-বেতন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হত।
-কী বলছিস এসব? টাকা পয়সাই কী সব জীবনে?
খানিকটা অভিমানী সুরে মানতাশা বলল, নিজে তো ঠিকই ধনী বিয়ে করেছিস। আমিও এমন সুখে থাকি তুই চাস না?
-কেন চাইব না? আমার তো আর কারো সাথে সম্পর্ক ছিল না। ইনতিসারই আমার জীবনে প্রথম। সেই আমার ভাগ্যে ছিল।
-আর আমার ভাগ্য আমি নিজে গড়ে নেব। আমারও তোর মতো একটা জীবন দরকার।
এই বলে খাওয়াতে মনোযোগ দেয় মানতাশা। আজরা বলল, যা করছিস ভেবে করছিস তো? পরে না আবার এজাজ ভাই এর জন্য পস্তাতে হয়?
ফিক করে হেসে মানতাশা বলল, পাগল হলে আরকি!
তাকে এখন আর কিছু বুঝিয়ে লাভ নেই তা বুঝতে পারলো আজরা।
মানতাশা দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো, হ্যাঁ রে আজরা? আজ ভাইয়ার পাশে যে বন্ধুটি ছিল উনি কী বিবাহিত নাকি অবিবাহিত?
-জানি না রে।
এখুনি তাকে আরশানের কথা বলল না আজরা। তার ভাবী কী জানায় সেই অপেক্ষা করাই শ্রেয়। আশা দিয়ে যদি ফল পাওয়া না যায়? তাছাড়া এজাজ কে নিয়ে আরেকটু ভাবার সময়ও পাক মানতাশা। এই ভেবে সে বলল, এজাজ ভাই কে নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখিস তুই। মানুষটা কিন্তু ভালো!
.
.
.
নাবীহার হাতে দামী ফোন দেখে সাজির বলল, এটা কার ফোন?
জবাবে নাবীহা বলল, আমার।
-নতুন ফোন কবে নিলে?
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে নাবীহা বলল, এত দামী ফোন কেনার ক্ষমতা আমার আছে নাকি?
-তবে?
-আজরা উপহার দিয়েছে।
একটু থেমে সাজির বলল, ওকে বলোনি আমি ফোন দিয়েছি তোমাকে? আর নতুনও একটা কেনার ব্যবস্থা করছি?
-বলেছিলাম। কিন্তু ও শোনেনি।
-ও দিয়েছে নাকি ওর স্বামী?
প্রশ্নটা শুনে নাবীহা খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল, টাকা ওর জামাই দেবে নিশ্চয়? সে তো আর উপার্জন করে না। তুমি এ নিয়ে এত প্রশ্ন করছ কেন বুঝলাম না? বান্ধবীর উপহার কী বান্ধবী নেয় না?
-তাই বলে এত দামী?
-ওদের কাছে এসব ব্যাপার না।
সাজিরের মুখে অন্ধকার নেমে আসে যা বুঝতে পারে নাবীহা। বিষয়টা হয়তো সে পছন্দ করছে না। কেন? টাকা টা ইনতিসারের বলে? কিন্তু উপহার টা তো আজরার দেওয়া। সহজ বিষয়টাকে জটিল করে দেখার তো কিছু নেই!
নিজের মাথা ঠিক রেখে নাবীহা বলল, তুমি যদি বিষয়টা অপছন্দ করো তবে সমস্যা নেই। আমি এটা দিয়ে দেব আজরা কে।
এই কথাটি শুনে মনের মাঝে শান্তি অনুভব করলো সাজির। সে বলল, না না! আমি এটা বলছি না। ওমন একটা ফোন আমার দেওয়ার ক্ষমতা নেই বলে মন খারাপ হয়েছিল।
সাজিরের হাতের উপরে হাত রেখে নাবীহা বলল,তুমি আমার সাথে আছ এটাই তো অনেক! আর সবার সময় সবসময় একই রকম হয় না। কে বলতে পারে? এর চেয়েও দামী ফোন কেনার সক্ষমতা অর্জন করবে তুমি?
নাবীহার হাত শক্ত করে ধরে সাজির বলল, তুমি পাশে থাকলে সবই সম্ভব হবে। আমরা দু’জনে মিলে অনেক দূর এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।
.
.
.
মালিহা মুমতাজ…
বিত্তশালী পরিবারের মেয়ে তিনি। তাকে ভালোবেসে আরশানের বড়ো ভাই আশফাকুল হোসাইন বিয়ে করেছিলেন।
আশফাকুলের বয়সের সাথে অনেকটা ব্যবধান রয়েছে আরশানের।
মালিহা যখন এই বাড়িতে বউ হয়ে আসেন, তখন কেবল শাশুড়ী জীবিত ছিলেন। তার কাছেই শুনেছেন, আশফাকুল হওয়ার অনেক বছর পর আরশানের জন্ম হয়। তারা ভেবেছিলেন হয়তো আর সন্তান হবে না তাদের।
মালিহা ও আশফাকুলও সমবয়সী। একইসাথে পড়াশোনা করতো তারা। আর সেখান থেকেই গড়ে উঠে প্রেমের সম্পর্ক। মেধাবী ছাত্রী হওয়াই সংসার সামলানোর সাথে ব্যবসার হালও ধরেন তিনি। দুই দিকে ভালোই সামাল দিতেন মালিহা।
শাশুড়ীর মৃত্যুর পর আরশান কে তিনি আগলে রেখেছেন। তাকে বড়ো বোনের মতো দেখলেও মা মারা যাওয়ার পর তার জায়গাটাও দখল করে নেন মালিহা। নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসেন তিনি আরশান কে।
আরশান মালিহার রুমে কড়া নাড়ে। তিনি টিভি দেখতে ব্যস্ত ছিলেন। আরশান কে দেখে ভেতরে আসতে বললেন। ভেতরে এসে তিনি বললেন, একটা গুড নিউজ আছে ভাবী মা।
-গুড নিউজ! কী?
-আমার একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিন্তু…
-কিন্তু?
-তোমার পছন্দ না হলে আমারও অপছন্দ হয়ে যাবে।
মালিহা হেসে বললেন, তাই! তা হুট করে মেয়ে পছন্দ হলো কীভাবে?
আরশান সব খুলে বলে মানতাশার সম্পর্কে। এরপর তার ছবি দেখায় মালিহা কে। মালিহা দেখে বললেন, মেয়ে সরাসরিও এমন তো? নাকি ফিল্টার সুন্দরী?
-সরাসরিই এমন।
তিনি একটু থেমে বললেন, তবে তো মাশাআল্লাহ! কিন্তু…
-কী?
-আমাদের স্ট্যাটাস এর সাথে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না। আমার ইচ্ছে ছিল আমাদের মতোই কোনো ধনী পরিবারের মেয়ে কে বউ হিসেবে আনব। যে কিনা আমাদের কালচারাল সহজেই বুঝবে। এরা তো মধ্যবিত্ত। খাপ খাওয়াতে পারবে কী?
-ইনতিসারও কিন্তু মধ্যবিত্ত বিয়ে করেছে। ভাবী কে দেখলাম বেশ ভালোই! তার বান্ধবী মানতাশা। ওকে তো আরও বেশি স্মার্ট মনে হয়েছে আমার।
মালিহা কী যেন চিন্তা করে বললেন, ঠিক আছে! তোমার যদি ভালো লাগে তবে আমরা একদিন যাই ওদের বাসায়?
উচ্ছসিত হয়ে আরশান বলল, সত্যি?
-হু। কেন নয়? তোমার পছন্দ সঠিক হলে অবশ্যই গুরুত্ব দেব আমি।
-তবে আমি ইনতিসার কে আজরা ভাবীর সাথে কথা বলতে বলব?
-শিওর!
আরশান খুশি মনে নিজের রুমে চলে যায়। মালিহা তার পথের দিকে তাকিয়ে থাকেন। ভেবেছিলেন তিনি নিজে পছন্দ করে আরশানের বউ আনবেন। ব্যাপার না! এখনো সবই তার হাতে রয়েছে। তার সিদ্ধান্ত কে গুরুত্ব আরশান দেবে, এটা তিনি ভালোভাবেই জানেন।
.
.
.
রাত হয়ে গেছে, মানতাশা এখনো ঘরে ফেরেনি।
দিদার আলম খানিকটা রেগে মরিয়ম বেগমের উদ্দেশ্যে বললেন, সন্ধ্যার পর বাইরে থাকা ভালো মেয়ের কাজ না।
-আজরার বাসায় আছে সে।
-সারাদিন থাকতে পারেনি? এত বড়ো একটা কাণ্ড ঘটালো সে। তবুও কোনো আফসোস নেই।
সাথে সাথেই কলিংবেলের শব্দ শুনতে পায় তারা। দরজা খুলে মানতাশার দেখা পায়। সে ভেতরে এসে কিছু বলার আগে দিদার আলমের কাছে একটি ফোন আসে। পাড়ার এক বন্ধু মানতাশার জন্য প্রস্তাব দিয়ে কথা বলছে। ছেলে চাকরি করে শুনে তিনি আর কথা আগালেন না। ফোন রেখে বললেন, আমার মেয়ের তো ধনী কাউকে পছন্দ। এসবের সাথে কথা বলে লাভ আছে?
মানতাশা বাবার পাশে বসে আজরার দেওয়া ঘড়িটি দেখিয়ে বলল, এমন আশা না করলে এতসব দামী জিনিস নেব কীভাবে?
-এটা কে দিয়েছে?
-আজরা। আমারও কী ইচ্ছে জানো বাবা? ওর মতো গাড়ি, বাড়ি থাকবে এমন কাউকে বিয়ে করতে। যে ঘরে আমি থাকব মহারানীর মতো। বাড়ির কাজ করবে কাজের মেয়েরা। আমি শুধু খাওয়া,দাওয়া, শপিং, দেশ বিদেশে ঘুরাফিরা এসব করেই দিন অতিবাহিত করব। এমনই ইচ্ছে আমার!
মরিয়ম বেগম বললেন, জেগে জেগে এত স্বপ্ন দেখা ভালো না।
-আশা করা তো ভালো? আমি আশা করছি। নিশ্চয় পূরণ হবে। আর এমন কাউকে না পেলে বিয়েই করব না আমি।
এই বলে নিজের রুমে চলে যায় মানতাশা৷ মরিয়ম বেগম হতাশ হয়ে বললেন, মেয়ের মাথায় এই কেমন ভুত চাপলো! এমন ছেলে কোথা থেকে আমদানি করব আমরা?
.
আরশান দেরী করলো না। সে ইনতিসার কে ফোন করে এসব জানালো। সাথে বলল, আজরা যেন মানতাশার পরিবারের সাথে কথা বলে এই বিষয়ে।
তার সাথে কথা বলা শেষে আজরা কে ফোন দেয় ইনতিসার। এসব জানিয়ে বলল, সে যেন দুই পরিবারের মধ্যে সাক্ষাতের একটা ব্যবস্থা করে।
আজরা সম্মতি জানিয়ে ফোন রাখলেও চিন্তার ভাজ পড়ে তার কপালে।
এজাজের সাথে মানতাশার বিচ্ছেদ হয়েছে বেশি দিন হয়নি৷ এই মুহুর্তে হুট করে নতুন সম্পর্কে তার আগানোটা কী ঠিক হবে? তাছাড়া এজাজ বিষয়টা কীভাবে নিচ্ছে? সে কী মানতাশা কে ফেরাতে কোনো চেষ্টা করছে না?
অনেক ভেবে আজরা একটা সিদ্ধান্ত নেয়। আর তা হলো এজাজের সাথে কথা বলা। পরবর্তীতে এজাজ যদি মানতাশা কে ফিরে পেতে চায়? ঝামেলা হওয়ার আগেই কথা বলে নেওয়া ভালো। এই ভেবে এজাজ কে ফোন দেয় আজরা৷ তার নাম্বার চিনতে অসুবিধা হলো না এজাজের। একবার রিং হতেই রিসিভ করলো সে। আজরা তাকে সালাম জানিয়ে কেমন আছে জিজ্ঞাসা করতেই বলল,
ওয়াআলাইকুম আসসালাম। আমি আর ভালো! তোমার বান্ধবী থাকতে দিলো কই?
নিশ্চয় জেনেছ সবটা?
-শুনেছি। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আপনি নিজেকে শক্ত রাখুন।
-তা তো রাখছি।
-মানতাশা সম্পর্কটা শেষ করেছে। টিকিয়ে রাখার জন্য আপনি কিছু করছেন না?
-কী করব বলো? আমাকে ও ভালোবাসেই না। যে সম্পর্কে ভালোবাসা নেই তা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে লাভ কী বলো?
-এখন সে যদি অন্য কাউকে বিয়ে করে নেয়?
-তার জীবন। যা খুশি করুক। আমার কোনো মাথাব্যথা নেই। তবে হ্যাঁ, ওকে আমি মন থেকে ভালোবেসেছিলাম। তাই অভিশাপ দেব না। মন থেকে চাইবো, ওর আশা যেন পূরণ হয়। তোমার মতো ধনী পরিবারের বউ যেন সে হতে পারে!
এজাজের সাথে কথা বলে আজরা বুঝলো, তাদের সম্পর্কটা ঠিক হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। মানতাশা তো চায় না, সাথে এজাজও নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়েছে।
যদিও আজরার খারাপ লাগছে। কিন্তু সে চাইলেও কিছু করার নেই। এতে মানতাশার মনে হতে পারে সে তার ভালো চায়না!
এজাজের সাথে কথা বলা শেষেই নাবীহার ফোন আসে। আজরা রিসিভ করে তার হালচাল জিজ্ঞাসা করে। কথার এক পর্যায়ে নাবীহা বলল, তোর কণ্ঠস্বর এমন কেন শোনাচ্ছে? সব ঠিক আছে তো?
আজরা বলল, এজাজ ভাই এর সাথে কথা বললাম। তিনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন রে।
-স্বাভাবিক। মানতাশার এটা করা একেবারেই উচিত হয়নি।
-ইনতিসারের এক বন্ধু আজ মানতাশা কে দেখে পছন্দ করেছে। সে মানতাশার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিতে বলেছে৷ ও যেমন চায় ছেলেটা ঠিক তেমন।
-ধনী?
-হ্যাঁ। আমি কী করব বুঝতে পারছি না।
-তোকে প্রস্তাব দিতে বলেছে যখন দিবি। মানলাম সে এজাজ ভাইকে ঠকিয়েছে। কিন্তু এখন কোনো সম্পর্ক তার সাথে তো নেই। তাইনা?
-আমিও এটা ভাবছিলাম। কিন্তু এজাজ ভাই এর জন্য খারাপ লাগা কাজ করছে বলে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না।
-মানতাশা ও আন্টিকে জানা সব।
-ঠিক আছে।
আজরা ফোন দেয় মানতাশা কে৷ সে শুয়ে শুয়ে ইউটিউবে ধনী পরিবারের ব্লগ দেখছিল। আজরার ফোন পেয়ে রিসিভ করে বলল, কীরে? মাত্রই তো তোর বাসা থেকে এলাম। মিস করছিস নাকি?
সে কথার জবাব না দিয়ে আজরা বলল, আমার একটা কথার স্পষ্ট জবাব দে মানতাশা। তুই এজাজ ভাই কে ভালোবাসিস কিনা?
খুব সহজ ভাবেই মানতাশা বলল, বাসি না। দেখ আজরা! এসব নিয়ে জ্ঞান দিয়ে আমার মাথাটা খাস না তুই।
-জ্ঞান দিতে নয়। প্রস্তাব দিতে ফোন করেছি। তাই ক্লিয়ার হয়ে নিলাম।
-কীসের প্রস্তাব?
-আরশানের পরিবার তোর পরিবারের সাথে দেখা করতে চায়।
-কেন?
-আরশানের তোকে পছন্দ হয়েছে তাই।
একথা শুনেও যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে মানতাশার।
সে একলাফে শোয়া থেকে উঠে বসে বলল, সত্যি?
-হু। আন্টিকে ফোনটা দে। আমি কথা বলে দিন তারিখ ঠিক করি।
মানতাশা কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। জেগে জেগে দেখা স্বপ্ন এত তাড়াতাড়ি পূরণ হতে চলেছে তার! খুশিতে আত্মহারা হয়ে মা এর কাছে যায় সে। আজরার ফোন তাকে দেয়।
আজরা তাকে সব খুলে বলে। তিনিও বেশ অবাক হোন।
মরিয়ম বেগম জানান, আমার কোনো সমস্যা নেই। তারা কখন আসতে চায় জানালেই হবে।
আজরা ফোন রাখতেই মানতাশা মা কে জড়িয়ে ধরে বলল, দেখেছ তো মা? আমার আশা পূরণ হতে চলেছে!
তাকে নিশ্চুপ দেখে মানতাশা বলল, তুমি কী খুশি হওনি?
তিনি বললেন, একজন কে কষ্ট দিয়ে তোর কপালে সুখ কীভাবে জুটবে ভাবছি!
মানতাশা বিরক্তির সুরে বলল,
মা হয়ে যদি এসব ভাবো তুমি? ধুর….
এখন আয়োজন করো তো। ওরা যেন আমাদের আয়োজনে খুশি হয়ে যায়।
এই বলে রুমে আসে মানতাশা। আরশানের চেহারাটা মনে করে আপনমনে হাসলো সে। ছেলেটাও দেখতেও বেশ সুদর্শন। ভালোই হলো, এজাজের সাথে সম্পর্কের ইতি টেনে। নাহলে এমন একটা ভালো প্রস্তাব কী সে পেত?
.
.
.
একদিন পরেই মালিহা মুমতাজ আরশান কে নিয়ে মানতাশা দের বাড়িতে আসে। সাথে আছে ইনতিসার ও আজরা৷
মানতাশা নিজেকে যতটুক সম্ভব পরিপাটি করে রেখেছে। কেননা সে চায়না, কিছুতেই এই প্রস্তাবটি হাত ছাড়া হোক!
এই বাড়িতে এসে মালিহা মুমতাজের খুব একটা ভালো লাগলো না। সবকিছুই তার কাছে সাধারণ মনে হচ্ছে। আরশানের মুখের দিকে তাকিয়ে তার কেমন লাগছে বোঝার চেষ্টা করলো সে। আরশানের কুচকানো ভ্রু দেখে বুঝতে বাকি রইলো না, সেও খুব একটা খুশি নয়। যেটা স্বাভাবিক! কোথায় তাদের পরিবেশ আর কোথায় এদের! আকাশ-পাতাল তফাত।
মরিয়ম বেগম ও দিদার আলমের সাথে কথা বলছেন মালিহা। ইনতিসার ও আরশান নিজেদের মধ্যে কথা বলতে ব্যস্ত।
খানিকবাদে মানতাশা কে নিয়ে উপস্থিত হয় আজরা৷ মানতাশা কে দেখে আরশান পলকহীনভাবে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। ওর মুখের দিকে তাকালে যেন বাকিসব কিছু ভুলে থাকা সম্ভব!
মানতাশা এসে সালাম জানায় মালিহা কে। তার পাশে বসানো হয় মানতাশা কে। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন, রান্না বান্না জানো তো?
একথা শুনে সকলে অবাক চোখে তাকালেন তার দিকে। বিষয়টা এমন যে, এতবড়ো ঘরের বউ হয়ে এমন প্রশ্ন করছে কেন?
মালিহা হেসে বললেন, আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েকজন কাজের লোক থাকার পরেও নিজেদের কাজ নিজেরা করি। রান্না তো আমিই করি। আরশানও বাইরের কারো রান্না খেতে অভ্যস্ত নয়। তাই জিজ্ঞাসা করলাম।
আজরা বলল, এটাই ভালো! আমার শাশুড়ী নিষেধ করার পরেও আমার কাজ আমিই সামলাই। কেন করব না বলেন? নিজেরই তো সংসার। আমার বান্ধবীও করবে। যদিও ও ঘরের কাজ সব পারে না তবে শিখে নেবে। কী বলিস মানতাশা?
“কাজ আর আমি! এমন হলে তো এজাজ কেই বিয়ে করতে পারতাম। যাক, ব্যাপার না! একবার বিয়েটা করে নিই। এরপর এসব কোনো ব্যাপার না। ভাবীকে কে পাত্তা দিচ্ছে! আরশান কে হাতের মুঠোতে রাখলেই চলবে।”
মনে মনে এসব আওড়িয়ে মানতাশা বলল, নিশ্চয়!
মানতাশার সাথে আরও কিছুক্ষণ কথা বলে মালিহা বললেন, আমার মনেহয় আরশান ও মানতাশা কে আলাদা কথা বলতে দেওয়া উচিত। ওরাও একে অপর সম্পর্কে জেনে নিক?
মরিয়ম বেগম থেকে সম্মতি নিয়ে আজরা তাদের নিয়ে ছাদে আসে। দু’জন কে কথা বলতে বলে সে নিচে নেমে যায়।
মানতাশা সম্পর্কে মোটামুটি সবটুকুই আরশান জেনেছে। গত রাতে ভাবী বারবার একটা কথা জিজ্ঞাসা করে নিতে বলেছিল। আর তা হলো, মানতাশার কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা। ভাবীর মতে এই যুগের প্রেমের সম্পর্ক বড়োই অশ্লীল হয়ে থাকে। তাই ওমন মেয়ে বিয়ে না করাই উত্তম।
আরশান এই প্রশ্নটি মানতাশা কে করতেই তার মুখে অন্ধকার নেমে আসে। কিন্তু সে আরশান কে কিছু বুঝতে দেয় না। হাসতে হাসতে বলল, না না! এসব আমার দ্বারা কখনো হয়নি। ইচ্ছে ছিল বিয়ের পরেই স্বামীর সাথে সব হবে।
এদিকে মালিহা মরিয়ম বেগম দের এমন একটি কথা বললেন, যা শুনে তারা চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তিনি বললেন, আরশান খুবই রোগ চটা একটি ছেলে। সব তার মন মতো হওয়া চায়। যদি না হয় তবে সে চরম মাত্রায় রেগে যায়। তাই এই বিষয়ে আগেই জানিয়ে রাখলাম।
ইনতিসারও তার সাথে সহমত পোষণ করে বলল, বিষয়টা আমিও খেয়াল করেছি। তবে আমার সাথে তো কিছু করেনি। রাগ বেশি মানেই যে সবসময় রাগ দেখায় এমন না।
মালিহা হেসে বললেন, ওই যে তার মন মতো না হলে দেখায়!
এই প্রস্তাবে মোটেও খুশি নন দিদার আলম। তবুও মুখে হাসি নিয়ে বসে রয়েছেন তিনি। এমন বড়ো ঘরে মেয়ে বিয়ে দিয়ে তাদের সাথে খাপ খাওয়াতে পারবেন তো তারা? আর মানতাশা? সেই বা সব সামাল দিতে পারবে তো!
.
.
.
বাসায় এসে মালিহার কাছে আরশান জানতে চাইলো, মানতাশা কে তার কেমন লেগেছে?
জবাবে মালিহা বলল, ভালোই। এখন তুমি যা সিদ্ধান্ত নেবে তাই হবে।
-তুমি কী চাও ভাবী?
-তোমার চাওয়াই আমার চাওয়া!
-তবে বিয়েটা করেই ফেলি! কী বলো?
-মেয়ের পরিবারের সাথে কথা বলব তবে।
আরশান হেসে নিজের রুমের দিকে যায়।
মানতাশাদের ঘরে বসেই মালিহা ঠিক করেছে, এই বিয়েতে সে রাজি হবে। এতে করে তারও যে ফায়দা রয়েছে। উঁচু ঘরের মেয়ে বউ হয়ে আসলে কী তার আয়ত্তে থাকতো সব? এখন মানতাশা কে সহজেই দাবিয়ে রাখতে পারবেন তিনি। শুধুমাত্র এসব ভেবেই বিয়েতে রাজি হয়ে যান মালিহা মুমতাজ!
এই সংসার তার। সংসারের সবকিছু তার হিসাবেই চলবে।
.
.
চলবে