#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২১
‘ জ্বি এখানে কি করতে এসেছেন?’ প্রশ্ন করে উঠলো একজন গার্ড।এমন প্রশ্নে ইলফা ঘাবড়ে গেলো তাও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলে,
‘ আমি এখানের রোগিকে চেক-আপ করতে এসেছি।
গার্ডটি ভ্রু-কুচকে বলে,
‘ কিন্তু আপনি তো এখানের নার্স না?এখানের জন্যে আমাদের স্যার নিজ তাগিদে নার্স আর ডাক্তার নির্ধারন করে গেছেন একমাত্র তারাই এখানে আসতে পারবে।’
ইলফা বুকটা ধুপপুক করছে।ভয়ে কলিজার পানি শুকিয়ে এসেছে।ঘাবড়ানো কন্ঠ অনেকটা স্বাভাবিক রেখে বলার চেষ্টা করে,
‘ এখানের একজন নার্স অসুস্থ সে সিকলিভ নিয়েছে।তাই তার বদলে আমাকে দেওয়া হয়েছে। সো লেট মি গো প্লিজ।আমার আরো অনেক কাজ আছে।’
গার্ডটি সন্দেহপ্রবন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেই ইলফা ঢুকতে দিলো।ভীতরে ঢুকতে পেরে বিশ্বজয়ী হাসি দিলো ইলফা।সে নার্স-এর ছদ্মবেশে এসেছে প্রাহির মা’কে এখান থেকে কিডন্যাপ করার জন্যে।ইলফা চিন্তিত হয়ে পরলো।মনে মনে বলে,
‘ এখানে এসে তো পরলাম কিন্তু আমি এই মহিলাকে নিয়ে বের হবো কিভাবে এই রুম থেকে।’
মনে মনে চিন্তা করতে করতে হঠাৎ ওর মাথায় একটা বুদ্ধি এসে গেলো।আস্তে করে প্রাহির মা’র কাছে গিয়ে উনার শরীর থেকে চিকিৎসারত সব খুলে ফেলে।বহু কষ্টে স্ট্রেকচারে উঠিয়ে দরজার দিকে অগ্রসর হলো।অতঃপর দরজায় টোকা দিতেই গার্ডটি দরজা খুলে দিলো। প্রাহির মা’কে এই অবস্থায় দেখে গার্ডটি রাগমিশ্রিত কন্ঠে বলে,
‘ হচ্ছে কি এসব? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন উনাকে?এই অনুমতি কে দিয়েছে আপনাকে।’
এইভাবে ধমকানোর কারনে ইলফার রাগ মাথা চরা দিয়ে উঠছে।তবুও নিজের রাগ দমন করে বলে,
‘ উনার সিটিস্ক্যান করানো হবে তাই স্যার উনাকে নিয়ে যেতে বলেছেন।’
‘ আচ্ছা তাই না-কি ইলফা?’ হঠাৎ অর্থ’র শান্ত আর গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে আত্মা কেঁপে উঠলো ইলফার।অর্থ চোখের মাধ্যমে কিছু ইশারা করতেই স্ট্রেকচার থাকা মহিলাটি উঠে বসলো।আকস্মিক এমন হওয়ায় ভয় পেয়ে যায় ইলফা।দ্রুত সরে যায় সেখান থেকে।তুতলিয়ে বলে,
‘ সে-কি ইনি উঠে বসছেন কিভাবে?উনি তো কোমায় আছেন তাহলে উনি নড়চড় করছেন কিভাবে?’
অর্থ শান্ত কন্ঠ বলে,
‘ কারন ইনি আম্মু নন।ইনি আমার আন্ডারে কাজ করা একজন মহিলা গার্ড।’
এরমাঝেই অর্থ’র পাশে এসে দাঁড়ায় প্রাহি।প্রাহি এসে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে পর পর চারটা থাপ্পর মারে।রাগে চিৎকার করে বলে,
‘ তোর সাহস হলো কিভাবে আমার আম্মুকে কিডন্যাপ করার পরিকল্পনা করার। তোকে তো জানে মেরে দিবো আমি।’
থাপ্পর খেয়ে ছিটকে স্ট্রেকচারের উপরে গিয়ে পরে ইলফা।স্ট্রেকচার সরে গিয়ে ও ধপ করে ফ্লোরে পরে যায়।ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠে।ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে বলে,
‘ তোমরা কিভাবে জানলে এতো কিছু?তোমাদের তো জানার কথা নাহ?’
হঠাৎ আরাফের কন্ঠস্বর,
‘ তুই হয়তো ভুলে গেছিস আমিও তোদের বাড়িতে ছিলাম।আমি ২৪ ঘন্টা তোর উপর নজর রেখেছি।তুই কি কি প্লানিং করেছিস তা আমিই অর্থকে সব ইনফোরমেশন দিয়েছি। তোর মতো শয়তানকে আমার বোন বলতেও ঘৃনা হচ্ছে।ছিঃ! এতোটা জঘন্য তুই।শেষে কিনা এতো নিচে নামলি?’
‘ চুপ থাকো।বোন বলতে বলেছে কে হ্যা?আমি কারো বোন না।আর আজ তো এইসব শেষ হবেই।হয় অর্থ আমার হবে নয়তো কারো নয়।’ কথাগুলো শেষ করে লুকানো পিস্তলটা বের করে উঠে দাঁড়ালো ইলফা।সবার দিকে পিস্তল তাক করে বলে,
‘ এই মেয়েকে মারলেও তুমি আমার হবে না।এর থেকে ভালো আমি তোমাকেই মেরে দেই।তুমি আমার হবে না তো কারো হবে নাহ!’
পাগলের মতো হাসতে লাগলো কথাগুলো বলে ইলফা।তারপর হাসি থামিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে গুলি চালিয়ে দিতেই।প্রাহি দৌড়ে গিয়ে অর্থকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় কিন্তু নিজে বাঁচতে পারে নাহ।গুলিটা একেবারে প্রাহির ডানহাতের বাহুতে গিয়ে আঘাত করে।জোড়ে আর্তনাদ করে উঠে প্রাহি।অর্থ ‘ প্রাহিইইইইইইইইই!’ বলে চিৎকার করে উঠে প্রাহিকে তাড়াতাড়ি নিজের বাহুতে জড়িয়ে বেয়। এদিকে ইলফা হতভম্ভ রাগের মাথায় ও আজ জীবনের প্রথম কারো জান নেওয়ার চেষ্টা করেছে।রাগে ওর হুঁশ ছিলো না।ও তো শুধু ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করেছিলো।আর পিস্তলটা জয় ওকে দিয়েছিলো বলেছিলো এটা নকল যদি ও ধরা পরে যায় তাহলে এই নকল পিস্তল দেখিয়ে সবাইকে ভয় দেখিয়ে ও যেন পালাতে পারে।কিন্তু জয় যে এতোবড় একটা বিশ্বাসঘাতকতা করবে ওর সাথে ও ভাবতেও পারিনি এটা তো সত্যিকারের পিস্তল।ইলফার হাত জোড়া থরথর করে কেঁপে উঠে।হাত থেকে পরে যায় পিস্তলটি।এই সুযোগে মেয়ে গার্ডটি ইলফার ঘারের পিছনে আঘাত করে দেয়।যার ফলে ইলফা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।কিন্তু যা হওয়ার তাতো হয়েই গিয়েছে। প্রাহিকে নিজের বাহুতে নিয়ে চিৎকার করছে অর্থ,
‘ এটা কি করলে তুমি?কেন আমাকে সরিয়ে সামন্ব আসলে প্রাহি?এ কি করে বসলে? ডাক্তার! ডাক্তার জলদি আসুন।আমার প্রাহির চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন।ওর কিছু হলে আমি সব ধ্বংস করে দিবো।’
প্রাহি জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে।ব্যাথায় পুরো শরীরটা যেন অবশ হয়ে যাচ্ছে।এতো যন্ত্রনা হচ্ছে।প্রাহি ভাঙ্গা গলায় বলে,
‘ আ..আমার কি..ছু হয়নি।জাস্ট এক..একটু লেগেছে।আমি ঠি..ঠিক আছি।’
প্রাহির চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসছে।অর্থ প্রাহিকে কোলে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছে আর চিৎকার করছে।ডাক্তার আসতেই তিনি প্রাহিকে অপারেশন রুমে নিয়ে গেলেন। হাত থেকে গুলি বাহির করতে হবে জলদি।অর্থ ধপ করে চেয়ারে বসে পরেছে।এদিকে আরাফ গার্ডদের ইলফাকে নিয়ে যেতে বলে অর্থ’র কাছে আসে।আরাফের আজ নিজেকে অপরাধী লাগছে।ওর মাধ্যমেই তো এই মেয়েটা অর্থ’র সাথে পরিচিত হয়েছিলো আজ যদি ওর আর অর্থ’র মাঝে বন্ধুত্ব না হতো তাহলে আজ এই পরিনতি হতো না।আরাফ অর্থ’র পাশে বসলো।মাথা নিচু করে অপরাধীর ন্যায় বলে,
‘ আমাকে ক্ষমা করে দে বন্ধু।আজ আমার কারনেই তোর সাথে এমনটা হয়েছে।না আমার সাথে তোর পরিচয় হতো না আমরা বন্ধু হতাম।আর না ইলফা তোকে চিনতো।আমি এইসব কিছুর জন্যে দায়ি।আমাকে ক্ষমা কর বন্ধু।’
অর্থ রাগি চোখে তাকালো।সারা মুখশ্রী রাগের কারনে লালাভ আভায় ছেয়ে গেছে।অর্থ চোঁয়াল শক্ত করে বলে,
‘ আর একবার নিজেকে অপরাধী বললে থাপড়ে তোর গাল লাল করে দিবো।আজ তোর কারনেই আম্মুকে আমরা বাচাঁতে সক্ষম হয়েছি।তুই আমার জীবনে ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমি বলে বুঝাতে পারবো না।আমি নিজের মনের বহিঃপ্রকাশ ঠিকঠাক করতে পারি না।কিন্তু তোকে ছাড়া আমার একদম চলে না। বুঝেছিস?তুই আমার বেষ্টফ্রেন্ড আমার ভাই।তাই আর কখনো যেন এইসব কথা মুখে না আসে তোর।ওয়ার্নিং না আদেশ দিলাম!’
আরাফ অর্থকে জড়িয়ে ধরে।ধরা কন্ঠে বলে,
‘ দোস্ত।তুই চিন্তা করিস না একদম।প্রাহি ঠিক হয়ে যাবে। ওর কিছু হবে না।’
কিন্তু বন্ধুর কথায় কি মন মানে?ওর বুকে ঠিক কতোটা রক্তক্ষরণ হচ্ছে প্রাহিকে এই অবস্থায় দেখে তা ও কাউকে দেখাতে পারছে না।মেয়েটার আঘাতে যেন ওর কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে।এইযে অর্থ’র নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।মনে হচ্ছে দমটা বুঝি এই এক্ষুনি বেড়িয়ে আসবে।বুকের ভীতরটা জ্বলে পুরে যাচ্ছে।কেন এমন হয়?কেন মেয়েটার বিন্দুমাত্র কষ্ট ও সহ্য করতে পারেনা।কেন এতো বুকে ব্যাথা করে? কেন মেয়েটার চোখের পানি ওর হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হয় বাজেভাবে?তবে কি ও ভালোবাসে প্রাহিকে?ভালোবাসা কি তবে এটাকেই বলে?ভালোবাসা হচ্ছে পাগলামি। স্বাভাবিক বুদ্ধি হারিয়ে পাগল হয়ে যাওয়ার নামই ভালোবাসা।
ভালোবাসা হচ্ছে অস্বাভাবিক উদারতা। নিজের সবকিছু অন্যকে বিলিয়ে দিয়ে গরীব হয়ে থাকতে ইচ্ছে করার নামই ভালোবাসা।
ভালোবাসা হচ্ছে বিসর্জন। অন্যের খুশির জন্য নিজের ইচ্ছা, পছন্দকে বিসর্জন দেয়ার নাম ভালোবাসা।
ভালোবাসা হচ্ছে অপেক্ষা। সবসময় কারো পথ চেয়ে অপেক্ষা করার নাম ভালোবাসা।
ভালোবাসা হচ্ছে কারো কষ্ট নিজেকে পাগল পাগল মনে হওয়া।তার বিষাধটুকু নিজের মাঝে সুষে নেওয়ার আপ্রান চেষ্টা।
ভালোবাসা হচ্ছে ধৈর্য।
ভালোবাসা হচ্ছে বিশ্বাস।
আসলে ভালোবাসার সংজ্ঞাটা অনেক বিশাল। এটাকে কখনোই লিখে পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করা যায় না। এটা একটা অনুভূতি। যা হৃদয়ের অনেক গভীরে অনুভূত হয়। অনুভব করার মাধ্যমেই একে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারা।
আর অর্থ তা খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করেছে।অর্থ বুঝেছে ও ভালোবাসে প্রাহিকে। অসম্ভব ভালোবাসে মেয়েটাকে ও।তার কোন সীমা নেই।সীমাহিন ভালোবাসা যাকে বলে।
#চলবে_____________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ২২
নিস্তব্ধ হাসপাতালের কেভিনে প্রাহির হাত ধরে বসে আছে অর্থ।গুলি বের করে দেওয়া হয়েছে প্রাহির হাত থেকে।অনেকটা রক্ত ঝরেছে প্রাহির শরীর থেকে।ঘুমের মেডিসিন ইঞ্জেক্ট করায় ঘুমোচ্ছে প্রাহি।জ্ঞান ফিরলেই রিলিজ দিয়ে দেওয়া হবে হাসপাতাল থেকে।তবে আজ রাতে জ্ঞান নাও ফিরতে পারে জানিয়েছেন ডাক্তার।অর্থ করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে প্রাহির দিকে।ভীতরটা জ্বলে পুড়ে খাঁক হয়ে যাচ্ছে প্রাহির এমন ফ্যাকাশে মুখশ্রী দেখে। অস্থিরতা ক্রমশ গ্রাস করে নিচ্ছে ওকে।অর্থ গভীর কন্ঠে বলে,
‘ তোমার সব কষ্ট আমার হোক।তোমার সব যন্ত্রনা আমার হোক।তোমার বিষাদ তোমার দুঃখ আমার হোক।আর আমার সমস্ত সুখ যেন তোমার হয়।জলদি জেগে উঠো প্রাহি।এইভাবে তোমাকে দেখতে আমার মোটেও ভালো লাগছে না।আমার হৃদয়টা ঠিক কতোটা ব্যাকুল হয়ে আছে তোমার জন্যে তুমি কি বুঝতে পারছো না?’
প্রাহি নিশ্চুম।সেযে অর্থ’র কথা কিছুই শুনেনি।অর্থ’র হৃদয়টা যে ওর জন্যে ছটফট করে যাচ্ছে ক্রমাগত তাতো কিছুই জানলো না মেয়েটা।কি সুন্দর ঘুমোচ্ছে সে।অর্থ আরো করুণ চাহনী নিক্ষেপ করে তাকিয়ে রইলো প্রাহির দিকে।এদিকে ক্রমাগত ভাইব্রেট করে শব্দ তুলে যাচ্ছে ওর ফোন।অবিরত বেজে চলেছে ওটা।শেষে না পেরে ক্লান্ত হাতে ফোনটা তুলে অর্থ।রায়হানা বেগম ফোন করেছেন,
‘ হ্যালো মা!’
রায়হানা ব্যাকুল কন্ঠে বলেন,
‘ বাবা তুই কোথায়?রাত একটা বাজতে চললো।তুই আর প্রাহি কোথায় আছিস?’
অর্থ’র ক্লান্ত কন্ঠে,
‘ মা টেন্সন করো না আমরা ঠিক আছি।আম্মুর কিছু চেক-আপ আছে।আজ নাও ফিরতে পারি।কারন বিদেশ থেকে ভালো একজন ডাক্তার এসেছেন তার মাধ্যমেই এখন থেকে আম্মুর চিকিৎসা হবে।’
মিথ্যে বললো অর্থ।কিন্তু মায়ের মন কি এতো সহজে মানে?
‘ আব্বা,এমন শোনাচ্ছে কেন তোর কন্ঠ?কি হয়েছে আব্বা তোর?বেয়ানের কি শরীর বেশি খারাপ তোর বাবা আর আমি কি আসবো?’
অর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
‘ মা,এতো অস্থির হওয়ার মতো কিছু হয়নি।তিনি ঠিক আছেন।শুধু উনাকে কিছু চেক-আপ করানো হবে।তাই আমি আর প্রাহি আজ রাতটা এখানেই থাকবো মা।আর তুমি নিজের দিকে ধ্যান দিয়েছো?তোমার নিজেরই তো শরীর ভালো নেই।বুকের ব্যাথা নিয়ে তুমি এতো দূর জার্নি করবে কিভাবে মা?আর এতো রাত হয়েছে ঘুমাও নি কেন?বাবাও নিশ্চয়ই জেগে?’
‘ তোদের জন্যে চিন্তা হচ্ছিলো।সন্তানের চিন্তায় কি বাবা মা’র ঘুম আসে আব্বা।যাক, সাবধানে থাকিস।কাল জলদি ফিরিস।মনটা কেমন যেন করছে তোর আর প্রাহির জন্যে আব্বা।ভালো থাকিস।আর বেয়ানের সম্পর্কে ভালোমন্দ জানাস কেমন?রাখছি।আর হ্যা! খেয়েছিস?’
‘ হ্যা মা খেয়েছি।তুমিও খেয়ে নেও।আমি জানি তুমি এখনো খাওনি।’
রায়হানা হাসলেন ছেলের কথায়,
‘ আচ্ছা আব্বা খাবো।রাখি এখন!’
‘ আল্লাহ্ হাফেজ।’
রায়হানা ফোন রাখতেই অর্থ আবারও একই ভঙিতে বসে রইলো প্রাহির হাত ধরে।এর মাঝে দরজা ঠেলে প্রবেশ করে আরাফ।হাতে খাবারের প্যাকেট।অর্থ’র কাছে গিয়ে খাবারটা এগিয়ে দিয়ে বলে,
‘ কতোক্ষন না খেয়ে থাকবি?কিছু খেয়ে নেহ অর্থ।এইভাবে না খেয়ে থাকলে তো তুই অসুস্থ হয়ে যাবি।তুই অসুস্থ হলে প্রাহির সেবা করবে কে হ্যা?’
অর্থ শান্ত চোখে তাকালো।আরাফ দেখলো ওই চোখে ঠিক কতোটা কাতরতা,অস্থিরতা,কষ্ট লুকানো রয়েছে নিজের প্রিয় মানুষটিকে এই অবস্থায় দেখে। আরাফের নিজেরও এমন লাগে হিয়ার কিছু হলে।আরাফ হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,
‘ অল্প কিছু খেয়ে নেহ।জোড় করবো না।শুধু বলবো প্রাহির জন্যে হলেও তোকে খেতে হবে।মেয়েটাকে তো তোকেই এখন থেকে দেখাশোনা করতে হবে।’
আরাফ বেরিয়ে গেলো।তবে পুরোপুরি গেলো না।দরজা হালকা ফাকা করে উঁকি দিতেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো।অর্থ খাচ্ছে।যাক তার কথা তাহলে কাজে দিয়েছে।আরাফ গিয়ে চেয়ারে হেলাম দিয়ে চোখ বুঝলো।সারাদিনে ওর শরীরেও কম ধকল যায়নি।সেই রাজশাহী থেকে জার্ণি করে এখানে আসা,ঢাকা শহরের জ্যামে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা।তার উপর কিসব ঘটে গেলো।মন মানুষিকতা একদম ভালো নেই ওর।কয়েকদিন ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি ইলফার উপর নজর রাখার কারনে।এখন আর শরীরটা চলছে না।চোখে ঘুম নেমে আসছে।চোখ বুঝতেই হিয়ার মায়াবি মুখটা ভেসে উঠলো।মুখে হাসি ফুটে উঠতেই পরক্ষনে তা আবার নিভে গেলো।কাজের কারনে মেয়েটাকে ঠিকঠাক সময় দিতে পারছে না।আজ দু’দিন যাবত ফোন করে না আরাফ।মূলত সময় পায়নি একটুও।অভিমান জমেছে ওর প্রেয়সীর মনে।সমস্যা নেই কাল তো যাচ্ছেই ওর প্রেয়সীর কাছে কাল সব অভিমান নিজের ভালোবাসা দিয়ে ভেঙ্গে দিবে।
________________
রাত চারটা বেজে ছত্রিশ মিনিটে জ্ঞান ফিরে আসে প্রাহি।আধো আধোভাবে নিজের নয়ন জোড়া খুলে ঝাপসা দৃষ্টিতে চারপাশ তাকায়।মুহূর্তেই নজরে আসে অর্থ’র ঘুমন্ত ক্লান্ত মুখশ্রী।লোকটা কিভাবে ঘুমাচ্ছে।ঘুমন্ত অবস্থাতেও কাউকে এতোটা সুন্দর লাগতে পারে কিভাবে?এইযে প্রাহি মাঝে মাঝে কতোরাত ঘুমায় না।লোকটার ঘুমন্ত চেহারা যেদিন চোখে পরবে সেদিন আর ঘুমাতে পারেনা ও।নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে অর্থ’র দিকে।প্রাহি বহু কষ্টে একটু উঠে বসার চেষ্টা করতে হাতে ব্যাথা পায় ও।হালকা আর্তনাদ করতেই ধরফরিয়ে ঘুম থেকে জেগে উঠে অর্থ।প্রাহি ব্যাথাতুর চাহনী,আর মুখশ্রী লক্ষ্য করতেই অস্থির হয়ে উঠে অর্থ,
‘ কি হয়েছে প্রাহি?কোথায় ব্যাথা পেয়েছো?আর কখন জাগলে তুমি?আমাকে ডাক দিবে না?এইভাবে উঠতে গেলে কেন?পেলে তো ব্যাথা?আমি কি ডাক্তার ডাকবো?বেশি ব্যাথা করছে?’
প্রাহি অর্থ’র মুখে হাত দিয়ে দিলো।থেমে গেলো অর্থ’র ক্রমাগত আওড়ানো বুলিগুলো।প্রাহি দূর্বল কন্ঠে বলে,
‘ হুসসসস! এতো অস্থির হওয়ার কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি বুঝেছেন?’
অর্থ করুনভাবে তাকালো।মুখ হতে প্রাহির হাতটা সরিয়ে দিয়ে নিজের দুহাতের মুঠোয় তা ভরে নিলো।বললো,
‘ এইভাবে আমাকে এতোটা কষ্টের মাঝে না রাখলেও পারতে।কেন এইভাবে নিজের জীবন ঝুকিতে দিয়েছিলে আমার জন্যে।তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে কি করতাম প্রাহি?উপরওয়ালা আমাদের উপর রহম করায় অল্পতেই বেঁচে গিয়েছো।তবুও জানো ঠিক কতোটা বাজেভাবে গুলিটা গেঁথেছে তোমার হাতে?কতোটা ব্লিডিং হয়েছে।আজ আরাফ না থাকলে আমি যে কি করতাম আমি নিজেও জানি না।ব্লাড পাওয়া যাচ্ছিলো না তোমার।আরাফ এটা শুনতেই দ্রুত বলে ওর রক্ত আর তোমার রক্ত সেম।তাই যেন যতো রক্ত লাগে ওর থেকে নিতে।এই ছেলেটাকে আমি কিভাবে যে ধন্যবাদ দিবো বলে বুঝাতে পারবো না।আর কখনো এমন করবে না প্রাহি।নিজের প্রান দিয়ে আমাকে বাঁচাতে আসবে না।আমি তাহলে তোমাকে কখনই ক্ষমা করবো না।’
অর্থ’র মুখ হতে নিশ্রিত প্রতিটা বাক্য ঠিক কতোটা ব্যাকুলতায় ভরপুর তা খুব করে বুঝতে পারছে প্রাহি।লোকটা যে ওর জন্যে ঠিক এতোটা পাগলামি করবে কখনো ভাবতেও পারিনি ও।প্রশান্তিতে মন ভরে উঠে প্রাহির।লোকটাকে ও ভালোবাসে।তাকে বাচাঁতে একবার কেন?হাজার বার প্রাহি নিজের জীবন দিতে রাজি।প্রাহি মনেপ্রানে চায় শুধু সে ভালো থাকুক।অর্থ’র ব্যাকুল কন্ঠ,
‘ খুদা পায়নি?কিছু খাবে?’
প্রাহি মাথা নাড়ালো তার আসলেই অনেক খিদে পেয়েছে।সেই সন্ধ্যায় হালকা কিছু নাস্তা করেছিলো ও।ডিনারও করেনি।অর্থ দ্রুত পায়ে উঠে দাড়ালো।প্রাহির দুগালে হাত রেখে বলে,
‘ সুয়ে থাকো।আমি খাবার নিয়ে আসছি কেমন?কোন সমস্যা হলে বামহাতটা দিয়ে একটু কষ্ট করে আমাকে ফোন দিও কেমন?’
প্রাহি ঘার কাত করে সম্মতি দিতেই অর্থ চলে গেলো দ্রুত পায়ে।তারপর কিছুক্ষন বাদেই সে খাবার নিয়ে হাজির।এতো দ্রুত কিভাবে গেলো লোকটা?প্রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অর্থ’র দিক।অর্থ খাবার গুলো সাজিয়ে।প্রাহি উঠে বসিয়ে দিলো ভালোভাবে।তারপর নিজ হাতে প্রাহিকে খাইয়ে দিতে লাগলো আর প্রাহি খাচ্ছে আর মনভরে দেখতে লাগলো ওর স্বামির পাগলামিগুলো।
#চলবে_________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।