একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব-৪৩+৪৪

0
1197

#একথোকা_কৃষ্ণচূড়া_এবং_আপনি
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৪৩+৪৪
-‘ কে তুই?’

অর্থ’র করা প্রশ্নে হাসলো ব্যাক্তিটি।তারপর অর্থ’র কাছে এসে ওর কানে কানে ধীর আওয়াজে আওড়ালো,

-‘ ফিহা কে মনে আছে?’

ফিহা নামটা শুনে আশ্চর্য হয়ে তাকালো অর্থ ব্যাক্তিটির দিকে।এক আকাশসম বিষ্ময় নিয়ে প্রশ্ন করলো,

-‘ ফিহা তুই চিনিস কিভাবে?’

প্রশ্নটা শোনা মাত্রই ঘর কাঁপিয়ে হাসলো ব্যাক্তিটি।তারপর হঠাৎ হাসি থামিয়ে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করলো অর্থ’র দিকে।কন্ঠে হিংস্রতা এনে বলে,

-‘ ফিহাকে আমার থেকে ভালো কে চিনবে বল?আমার একমাত্র কলিজার টুকরো বোনকে।আমি ভাই হয়ে চিনবো নাহ?এটা তোর নিহাতই বোকামি প্রশ্ন হয়ে গেলো।’

অর্থ যেন অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে এসব শুনে।হঠাৎ ব্যাক্তিটির চোখজোড়া ছলছল করে উঠে।অর্থ’র দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললো,

-‘কেন করলি আমার বোনের সাথে?কেন আমার বোনটাকে এইভাবে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিলি?’

অর্থ ওর কথার মানে বুঝতে না পেরে বললো,

-‘ মানে কি বলতে চাইছিস?ফিহাকে মৃত্যুর মুখে মানে?’

ব্যাক্তিটি অর্থ’র গালে সজোড়ে ঘুশি মারলো। সাথে সাথে অর্থ’র ঠোঁট ফেটে রক্ত গড়িয়ে পরলো।ব্যাক্তিটি চিৎকার করে বলে,

-‘ আমার বোনটা আর নেই।আমার বোনটা আর বেঁচে।তুই মেরে ফেলেছিস আমার বোনটাকে।তোর কারনে আমার বোনটা বেঁচে নাই।আমি ফিহাদ বেঁচে থাকতে তোকে কিভাবে শান্তিতে থাকতে দেই বল?যেখানে তুই আমার বোনের থেকে ওর পুরো দুনিয়াটাই কেরে নিয়েছিস।অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছিস আমার বোনটাকে।’

-‘ মানে আমি কিভাবে ওকে মেরেছি?ফিহাকে আমি মারতে যাবো কেন?তোর নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে।ছেড়ে দে আমায়।তোর এইসব ফাউল কথা শোনার টাইম নেই আমার।’

অর্থ’র কথায় ফিহাদ যেন আরো হিংস্র হয়ে উঠলো।কেমন যেন উন্মাদ হয়ে বলে,

-‘ তুই ওকে মারিস নি।কিন্তু তোর কারনেই আমার বোনটা নিজেকে নিজে শেষ করে দিয়েছে।সুইসাইড করেছে আমার বোনটা।তোর কাছে ভালোবাসার ভিক্ষা পর্যন্ত চেয়েছিলো।কিন্তু তুই ওকে বার বার ফিরিয়ে দিলি।সহ্য করতে না পেরে আমার বোনটা আত্ম*হত্যা করে।তাহলে তুই তো ওর মৃত্যুর কারন বল।তোর কারনেই আমার বোনটা আমার কাছে নেই।সেই তোকে আমি এইভাবে বেঁচে থাকতে দেই বল?তিলে তিলে মারবো তোকে।আমার বোনের প্রতিটা কষ্টের হিসাব তোর রক্ত দিয়ে শোধ করবো।’

ফিহাদের কথায় মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরে অর্থ’র।ফিহার মতো ম্যাচিউর্ড মেয়ে যে এইভাবে ওর কারনে সুই*সাইড করবে কাশ্মিনকালেও ভাবিনি অর্থ।সাউথ কোরিয়ায় একই ইউনিভার্সিটিতে পড়তো অর্থ,আরাফ আর ফিহা।বেশ ভালো বন্ধুত্ব ছিলো ওদের মাঝে।কিন্তু ফিহা অর্থকে ভালোবাসতো অনেক।ইনিয়ে বিনিয়ে অনেকবার অর্থকে বোঝাতে চেয়েছে যে ও অর্থকে ভালোবাসে।কিন্তু অর্থ বুঝেও না বুঝার ভান ধরে থাকতো।ও চাইতো না ফিহাকে সরাসরি না করে দিয়ে ওদের মাঝের বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে।কারন জোড় করে কখনো ভালোবাসা হয়না।কিন্তু একদিন ফিহা অর্থকে প্রোপোজ করে।অর্থ এইবার সরাসরি মানা করে দেয়।ফিহা অনেক কান্নাকাটি করে।অর্থ খুব সুন্দরভাবে ফিহা বুঝিয়ে শুনিয়ে থামায়।তারপর বেশ কিছু দিন ফিহা ইউনিভার্সিটিতে আসেনি।অর্থ আর আরাফ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ফিহা সেই ইউনিভার্সিটি থেকে টিসি নিয়ে চলে গেছে।বেশ অবাক হয়েছিলো অর্থ আর আরাফ।ওরা দুজন মিলে অনেক খুজে ফিহাকে কিন্তু কোথায় পায়নি।আস্তে আস্তে সময় পেরুতে থাকে ফিহাকেও ওরা ভুলে যায়।ভুলে যায় বললে ভুল হবে মনের কোন একজায়গায় থেকে যায় ফিহা।কিন্তু অর্থ এটা জানতো না যে ফিহা ওর রিজেক্টে এইভাবে নিজের জীবন দিয়ে দিবে।অর্থ কাঁপা কন্ঠে বলে,

-‘ এটা কিভাবে পারলো করতে ফিহা?আমি ওকে কতোভাবে বুঝিয়েছি।শেষমেষ ও কিভাবে নিজের জীবনটা দিয়ে দিলো?’

ফিহাদ তাচ্ছিল্য হেসে জবাব দিলো,

-‘ ভালোবাসার কাছে সবাই হেরে যায় অর্থ।যেমন আমার বোনটাও হেরে গেছে না পেরেছে তোকে জোর করতে আর না পেরেছে নিজেকে বুঝাতে।এই দুইয়ের মাঝে আটকে গিয়ে আমার বোনটা মানুষিকভাবে ভেঙ্গে পরে।যার কারনে ও নিজের জীবনটায় বিলীন করে দিলো।’

অর্থ’র অনেক কষ্ট লাগছে ফিহার জন্যে।কিন্তু ওরও কিছু করার নেই।ও তো আর নিজের মনের বিরুদ্ধে যেতে পারবে নাহ?যেখানে ফিহার প্রতি কোন ভালোবাসাই ছিলো না তাহলে কি বলতো ফিহাকে?ফিহা বলেছিলো অর্থ’র ভালোবাসা ওর লাগবে না।ওর একার ভালোবাসাতেই হবে।কিন্তু আদৌ তা হয়?সব তো আবেগের কথা।হয়তো ফিহার কারনে অর্থ ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে ফিহাকে বিয়ে করলো।অর্থ’র মনে ফিহার জন্যে মায়া জন্মালো।কিন্তু তা কতোদিন? একসময় না একসময়।ফিহা নিজেও চাইবে অর্থ’ ওকে ভালোবাসুক।কিন্তু তা তো অর্থ পারবে না।অর্থ জানতো ও হাজার চেষ্টা করলেও ও পারবে না ফিহাকে ভালোবাসতে।মায়া জন্মাতে পারে।কিন্তু ভালোবাসা না।তাই তো ফিহাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ওর জীবনটা নষ্ট করতে চায়নি।কিন্তু যার সুন্দর জীবন উপভোগ করার জন্যে এসব করলো অর্থ।সেই কিনা নিজের জীবন খুইয়ে দিলো।অর্থ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।নিজের কাছে ও আজ নিজেই অপরাধী হয়ে গিয়েছে।ফিহা ওর বেষ্টফ্রেন্ড ছিলো। ওকে বোনের মতো স্নেহ করতো অর্থ।তার মৃ*ত্যুর কথা শুনে অর্থ হৃদয়টা যেন খান খান হয়ে গিয়েছে।অর্থ অপরাধীর ন্যায় বলে,

-‘ আমি আমার দোষ স্বিকার করলাম।তুমি যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নেবো।কিন্তু তার আগে প্লিজ আমার প্রাহিকে ছেড়ে দেও।ওর তো কোন দোষ নেই।প্লিজ ও বেচারি অনেক অসুস্থ।প্লিজ ওকে ছেড়ে দেও।’

ফিহাদের মুখে হিংস্রতা ফুটে উঠলো।শয়তানি হাসি দিয়ে বলে,

-‘ তা কি করে হয় বলতো অর্থ?এতো সহজে তো তোকে মারতে পারিনা আমি।আমার বোন যেমন ভালোবাসা না পেয়ে দিনের পর দিন ছটফট করেছে।আজ ঠিক তেমনভাবেই তুই ছটফট করবি।তোর ভালোবাসার জন্যে।আর আমি তা দেখে তৃপ্তি পাবো।মানতে হবে তোর পছন্দ আছে।মেয়েটা বড্ড সুন্দরী।অনেক হট আর সেক্সি ফিগার ওর।পুরাই মাথা নষ্ট করে দেওয়ার মতো।যদি আমি তোর বউয়ের সাথে….!’

কিছু ইশারা করেই বাঁকা হাসলো ফিহাদ।এতোক্ষন সব সহ্য করলেও প্রাহির সম্পর্কে এসব শুনে অর্থ’র মাথায় রক্ত উঠে গেলো।গর্জন করে উঠলো,

-‘ জা*নোয়ার মুখ সামলে কথা বল।যেই মুখ দিয়ে তুই আমার প্রাহির সম্পর্কে এসব বলছিস আমি তোর সেই মুখ ভেঙ্গে ফেলবো। তুই চোখ দিয়ে ওর দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছিস তোর সেই চোখ আমি উপরে ফেলবো।’

ফিহাদ হাসলো অর্থ’র কথায়।তারপর বলে,

-‘ তাহলে তাই করা উচিত দেখি তুই কি করতে পারিস।’

অর্থ চিৎকার করতে লাগলো ফিহাদের কথায়।বার বার ফিহাদকে বলছে প্রাহিকে ছেড়ে দিতে।কিন্তু ফিহাদ সেদিকে ভ্রু-ক্ষেপ করলো না।একজন গার্ডকে ডাক দিলো।ফিহাদের ডাকে সাথে সাথে একজন গার্ড আসলো।ফিহাদ তাকে বললো,

-‘ এখানে প্রজেক্টর চালু করো।একেবারে এই অর্থ’র মুখোমুখি।আজ ওর বউয়ের সাথে আমি বাসর করবো।আর তা লাইভ টেলিকাস্টে দেখবে এই অর্থ।’

বলেই ফিহাদ চলে গেলো।আর গার্ডটি প্রজেক্টর চালু করতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।অর্থ চিৎকার করছে,

-‘ ওকে কিছু করবি না তুই কু***বাচ্চা।আমার প্রাহির গায়ে যদি একটা ফুলের টোকা পরে তাহলে তোকে আমি মেরে ফেলবো।সাহস থাকলে আমার হাতের বাধন খুলে দে।দেখি তোর কতো সাহস আমার সামনে আমার প্রাহিকে স্পর্শ করার।তোকে জ্যান্ত পুতে ফেলবো আমি ফিহাদ।’

এতো চিৎকার করেও লাভ হলো না।হঠাৎ প্রজেক্টরে লাইভ চালু হলো।সেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।প্রাহি কেঁদে কেঁদে বারবার বলছে দরজা খুলে দিতে।অর্থর এতে যেন মনে হলো কেউ ওর হৃৎপিন্ড বরাবর ছুরি চালিয়ে দিয়েছে।অসহায় আজ ও।চেয়েও কিছু করতে পারছে না।প্রাহির বুক ফাটা আর্তনাদগুলো অর্থ বুকটা ঝাঝড়া করে দিচ্ছে।একসময় এই শক্তপোক্ত মানুষটা নিজেদ প্রিয়তমার এমন আর্তনাদ সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেললো।অর্থ ধরা গলায় বলে,

-‘ আমাকে ক্ষমা করো প্রাহি।আজ আমি ব্যর্থ।তোমার স্বামি ব্যর্থ।কিছু একটা করো খোদা।এইভাবে তুমি আমাদের সাথে অন্যায় হতে দিতে পারো না।খোদা রক্ষা করো আমার প্রাহিকে।’

হঠাৎ বাহিরে শোরগোল শোনা গেলো।সাথে পুলিশের গাড়ির আওয়াজ।সাথে সাথে দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করলো আরাফ আর হেমন্ত। অর্থ চিৎকার করলো,

-‘ আমাকে তাড়াতাড়ি খুলে দে তোরা।আমার প্রাহি ওখানে ছটফট করছে।হেমন্ত তুই প্রাহির কাছে যা দ্রুত।’

হেমন্ত ভাইয়ের কথায় একছুট লাগানো।হেমন্ত’র মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে প্রাহির কান্নায়।এদিকে আরাফ অর্থ’র বাধঁন খুলে দিতেই অর্থ উঠে দাড়ালো।আরাফ বললো,

-‘ তুই যা আমি এদিকে সামলে নিবো।’

আরাফের কথায় অর্থ’ও ছুটলো প্রাহির কাছে।

—————-

এদিকে কাঁদতে কাঁদতে প্রাহিদ দম আটকে আসছে।কিভাবে নিজেকে রক্ষা করবে ও।কিভাবে নিজের ইজ্জত রক্ষা করবে।ফিহাদ বাঁকা হেসে বলে,

-‘ কাছো আসো।অর্থ তোমাকে যেই সুখ দেয় তার থেকে দ্বিগুন সুখ আমি দেবো।কাছে আসো জলদি।’

প্রাহি চোখ মুছে শক্ত কন্ঠে বলে,

-‘ বেচে থাকতে আমি জীবনেও তোর কাছে আসবো না।আমার সব আমার অর্থ’র।তোর মতো কুকুর কোনদিন আমাকে পাবি না।দরকার পরলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।’

প্রাহি দৌড়ে অন্যদিকে যেতে নিতেই।ফিহাদ এসে দৌড়ে এসে প্রাহির হাত ধরে ওকে বিছানায় ফেলে দিলো।তারপর প্রাহির সাথে জোরজবরদস্তি শুরু করে দিলো।প্রাহি বার বার বাধা দিচ্ছে ফিহাদকে।এর ফলে পেটে চাপ লাগে প্রাহির। সাথে সাথে চিৎকার করে উঠলো প্রাহি।ফিহাদ এতে যেন ঘাবড়ে গেলো। দ্রুত সরে গেলো প্রাহির উপর থেকে।প্রাহি পেটে হাত দিয়ে আর্তনাদ করছে।পেটে বেশ ভালোই চাপ লেগেছে।ফিহাদ ঘাবড়ে গিয়ে কিছু বলবে তার আগেই দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করলো হেমন্ত।এসেই প্রাহিকে ব্যাথায় কাতরাতে দেখে হেমন্ত’র চিৎকার করে উঠলো,

-‘ প্রাহিইইই!’

তারপর রাগে দৌড়ে গিয়ে ফিহাদকে মারতে লাগলো এলো পাথারি।এর মাঝে অর্থও এসে পরেছে।প্রাহি নিভু নিভু চোখে অর্থকে দেখে কাতর কন্ঠে ডাকলো,

-‘ অর্থ।আমার বাচ্চা…! বাচান প্লিজ।’

অর্থ স্তব্ধ বিমূঢ় হয়ে গিয়েছে প্রাহির অবস্থা দেখে।হেমন্ত চিৎকার করে উঠলো,

-‘ ভাই প্রাহিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি তুমি হাসপাতালে যাও।এদিকটা আমি আর আরাফ ভাই সামলে নিবো।প্লিজ ভাই জলদি।’

হেমন্ত’র কথায় অর্থ’র হুশ আসে।ও দ্রুত পায়ে প্রাহির কাছে এসে প্রাহিকে কোলে তুলে নিলো।

-‘ প্রাহি, এই প্রাহি চোখ খুলো কিছু হবেনা তোমার আর আমাদের বাচ্চার।তুমি একটু চোখ খুলে রাখো প্লিজ।’

অর্থ প্রাহিকে নিয়ে বাহিরে আসতেই আরাফ অবাক হয়ে গিয়েছে।ততোক্ষনে হিয়াজ আর হিয়ান্ত শিকদারও এখানে এসে পৌছেছে।ছেলের বউয়ের এই অবস্থা দেখে হিয়াজ শিকদারের মাথায় হাত।তিনি দ্রুত বলেন,

-‘ বাবা তুই বউমাকে নিয়া গাড়ির পিছনে বস।আমি ড্রাইভ করছি।’

অর্থ’র চোখে পানি টলমল করছে।কিছু বলবে তারও কোন জো নেই।অর্থ প্রাহিকে নিয়ে পিছনের সিটে বসে পরলো।হিয়াজ শিকদার জলদি গাড়ি স্টার্ট করে।হাসপাতালের উদ্দেশ্যে ছুটলেন।

-‘ প্রাহি! কিছু হবে না তোমার।এইতো আমরা এসে পরেছি।’

প্রাহি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

-‘ প্লিজ অর্থ আমাদের বাচ্চার যেন কিছু না হয়,প্লিজ।আমি মরে যাবো অর্থ ওর কিছু হলে।’

-‘ কিছু হবে না দেখো।’

গাড়ি হাসপাতালের সামনে থামতেই অর্থ প্রাহিকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালের ভীতরে প্রবেশ করলো।চিৎকার করে ডাক্তারদের ডাকতে লাগলো।ডাক্তার আসতেই তাড়াতাড়ি প্রাহিকে নিয়ে গেলেন তারা।অর্থ চেয়ারে বসে পরলো।হিয়াজ ততোক্ষনে বাড়িতে ফোন দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছেন তারা আসছেন কিছুক্ষনের মাঝেই।হিয়াশ শিকদার ছেলের কাধে হাত দিলেন।অর্থ লাল চোখজোড়া নিয়ে বাবার দিকে তাকালো।ধরা গলায় বললো,

-‘ বাবা প্রাহির কিছু হলে আমি ঠিক থাকবো না বাবা।’

-‘ চিন্তা করিস না বাবা। ওর কিছু হবে নাহ।’

এর মাঝে হাসপাতালে প্রবেশ করলো রায়হানা, হেনা আর ইশি, হিয়া।তারা তো প্রাহির অবস্থার কথা শুনে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছেন।কিছুতেই তাদের শান্ত করা যাচ্ছে না।প্রায় ঘন্টাখানিক পর ডাক্তার বেড়িয়ে আসতেই অর্থ অস্থির কন্ঠে বলে,

-‘ ডাক্তার আমার প্রাহি?আমার বাচ্চা?’

ডাক্তার বললেন,

-‘ দেখুন মিষ্টার আপনার ওয়াইফ আর বাচ্চা একটুর জন্যে বেঁচে গেছেন।পেটে বেশ চাপ লেগেছে।আর একটু দেরি করলেই বাচ্চাটাকে হারাতে হতো আপনাদের।এতোটা বেখায়ালি হলেন কিভাবে আপনারা?এখন থেকে উনাকে প্রোপার রেস্টে রাখবেন।কারন পেটে চাপ লাগায় বাচ্চার পজিসব বদলে গেছে।বেশ কষ্ট করতে হবে আপনার ওয়াইফের বাকি কয়েকটামাস।এবোরশন করানোও যাবে না।কারন আপনার ওয়াইফের কন্ডিশন ভালো না।উনিও মারাও যেতে পারেন।তাই আমি তা করলাম নাহ।প্লিজ আপনারা উনার খেয়াল রাখবেন।’

ডাক্তারের বলা প্রতিটা বাক্য যেন অর্থ’র হৃদয়টা চুরমার করে দিলো।মেয়েটার কিছু হলে অর্থ কি করতো?বা ওদের বাচ্চাটার কিছু হলে কিভাবে সামলাতো প্রাহিকে।অর্থ তাও উপরওয়ালার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া জানালো ওর প্রাহি আর ওদের বাচ্চা ঠিক আছে।বাকিটা অর্থ সামলে নিবে।যতো কষ্ট হোক অর্থ সবসময় প্রাহির পাশে থাকবে।
__________
আরাফ আর হেমন্ত এসে পৌছেছে হাসপাতালে এসেই প্রাহির কথা জিজ্ঞেস করায় অর্থ জানালো প্রাহি ঠিক আছে।অর্থকে এইবার জিজ্ঞেস করলো।কে এই ছেলে কেন অর্থ’র সাথে এমন করলো।অর্থ সব বিস্তারিত সব বললো সবাইকে।আরাফ সব শুনে অবাক হয়ে বলে,

-‘ এইটা ফিহার ভাই?আর ফিহা তোকে না পেয়ে আত্মহত্যা করায় এমন করলো এই সাইকোটা?এখানে তোর দোষ কোথায়?’

অর্থ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,

-‘ সে একজন ভাই।তাই বোনের মৃত্যুর শোকে সাইকো হয়ে গিয়েছে ও।আমাকে মারার জন্যে উঠেপরে লেগেছে।কিন্তু আমাকে মেরে ফেললেও আমি কিছু বলতাম না।কিন্তু ও আমার প্রাহির সাথে যা করেছে তার জন্যে আমি ওকে নিজ হাতে শাস্তি দিবো।ওই জা*নোয়ারকে আমি নিজ হাতে না মারলে শান্তি পাবো না।’

আরাফ গম্ভীর কন্ঠে বললো,

-‘ আর তুই কি জানিস?প্রাহির মা বাবাকে মারার পিছনে কার হাত ছিলো?ওই ফিহাদের।তোর আর তোর ফ্যামিলির পিছনে ওই ফিহাদ চব্বিশঘন্টা লোক লাগিয়ে রাখতো।যখন জানলো হেমন্ত প্রাহিকে তোর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্যে প্লান করছে।তাই ও প্রাহিকে সরিয়ে দেওয়ার জন্যে সেই এক্সিডেন্ট করিয়েছে।ফিহাদ বলছে তোর স্ত্রী হওয়ার অধিকার একমাত্র ওর বোনের।তার বোনের জায়গা ও অন্যকাউকে কোনদিন দিবে না নিতে।জয়কেও ও মেরেছে।জয়ের প্রয়োজন শেষ হয়ে গিয়েছিলো তাই সরিয়ে দিয়েছে ওকে পথ থেক। ফিহাদ পুরাই একটা মানষিক ভারসাম্যহীন লোক।ওর বোনের মৃত্যুর পর পুরো পাগল হয়ে গিয়েছে বোধহয়।’

সবাই হতাশার নিশ্বাস ছাড়লো।প্রতিশোধ মানুষকে ঠিক কতোটা নিচে নামিয়ে দেয়।যে মানুষকে খুন করার জন্যে একবারও তাদের হাত কাঁপে নাহ।

এর মাঝে নার্স এসে জানালো প্রাহির জ্ঞান ফিরেছে।অর্থ কথাটা শোনা মাত্রই দৌড়ে গেলো প্রাহির কাছে।দরজা ঠেলে অর্থ কেভিনে প্রবেশ করতেই।প্রাহি ঝাপ্সা চোখে তাকালো।অর্থকে দেখে দূর্বল হাসি দিলো।দূর্বল কন্ঠে ডাকলো,

-‘ এদিকে আসুন।’

প্রাহি ডাকতেই অর্থ প্রাহির কাছে গিয়ে।প্রাহির সারা মুখশ্রীতে পাগলের মতো চুমু দিলো।তারপর বলে,

-‘ তুমি ঠিক আছো?’

প্রাহি থেমে থেমে বলে,

-‘ আ…আমি ঠিক আছি।আপনি অস্থির হবেন না।আপনি ঠিক আছেন?’

-‘ আমি একদম ঠিক আছি!’

প্রাহি প্রশ্ন করলো,

-‘ ওই লোকটা কে অর্থ।ওই লোকটা এমন কেন করলো আমাদের সাথে?’

অর্থ প্রাহির কপালে চুমু দিলো।প্রাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-‘ এখন না পরে বলবো তোমায়।তুমি এখন রেস্ট নেও।’

-‘ নাহ! আপনি আমাকে এখনই বলেন!’

অর্থ হার মানলো প্রাহির কাছে অতঃপর প্রাহিকে সব খুলে বললো।প্রাহির মা বাবাকেও যে ফিহাদ মেরেছে আর জয়কেও যে এই ফিহাদ মেরেছে তাও বললো।সব শুনে প্রাহি কান্নায় ভেঙ্গে পরলো।অর্থকে প্রাহিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলো।বাড়ির সবাই একে একে প্রাহির সাথে দেখা করলো।প্রাহি একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরলো।প্রাহি ঘুমিয়ে যেতে অর্থ ইশি আর হিয়াকে ওর খেয়াল রাখতে বলে।আরাফ আর হেমন্তকে নিয়ে বেড়িয়ে পরলো।শেষ জরুরি কাজটা সেরে আসতে হবে।তা এখনো বাকি।অর্থ তা না করতে পারলে শান্তি পাবে নাহ।তাই সেই উদ্দেশ্যে রওনা হলো ওরা।

#চলবে_________________

ভুলগুলো ক্ষমা করবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে