#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃদিশা_মনি
আহিল তার অফিসের কিছু জরুরি কাজে সিলেট যেতে চলেছে আজ। যাওয়ার পথে তুষার এবং প্রান্তির সাথে দেখা হয়ে যায় তার। প্রান্তির কোলে তার দুই মাস বয়সী ছেলে প্রান্ত। আহিলকে দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে প্রান্তি। প্রান্তকে আহিলের কোলে তুলে দিয়ে ব্যথিত স্বরে বলে,
“আমার ছেলেটা জন্মের পর থেকে নিজের খালামনিকে দেখলোই না। কি ভাগ্য ওর! প্রেয়ার অভিমান, রাগ, দুঃখ কি এতটাই বেশি? প্রান্তকে জন্ম দিতে গিয়ে তো আমি মরেই যাচ্ছিলাম৷ যদি আমি মরে যেতাম তাহলে তো ও আমাকেও আর দেখতে পেতো না কখনো। এসব কিছুর জন্য আমি প্রেয়াকে কখনো ক্ষমা করবো না।”
তুষার প্রান্তির উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“থাক না এসব কথা। আমি তো এটা বুঝি না আহিলের সাথে দেখা হলেই তুমি কেন শুধু প্রেয়ার কথা তোলো। ঐ স্বার্থপর মেয়েটার কথা বলে ছেলেটাকে আর কত কষ্ট দেবে? তোমার বোনের জন্য তিন বছর ধরে ছেলেটা কতই না কষ্টের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।”
“আমি আমার বোনের ভুল আছে। কিন্তু তবুও আহিলের সাথে যদি ওর সম্পর্ক ঠিক থাকতো তাহলে তো এমন হতো না।”
প্রান্তির কথা শুনে আহিল কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় না। তাদের সাথে কিছু টুকটাক কথা বলে সিলেটের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেয়। গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করার সময় প্রান্তির বলা কথা গুলো মনে করে সে। হালকা হেসে বলে,
“সত্যিই হয়তোবা আমি নিজের দোষেই প্রেয়াকে হারিয়ে ফেলেছি। তবে ভাগ্য যদি আরো একবার আমাকে সুযোগ দেয়, যদি আবার প্রেয়াকে আমার জীবনকে ফিরিয়ে দেয় তাহলে আমি ওকে আর হারিয়ে যেতে দেব না। নিজের প্রণয় বন্ধনে আবদ্ধ করে রাখব। কিন্তু আমার মনে হয়না ভাগ্য আমাকে সেই সু্যোগটা আর দেবে। আমি তো এটাও জানি না প্রেয়ার সাথে এই জীবনে আর কোনদিন দেখা হবে কিনা। ভাগ্য কি আমার উপর আর সদয় হবে না?”
এসব ভাবনায় মত্ত থেকেই ড্রাইভ করে চলেছিল সে।
★★★
প্রেয়া বর্তমানে সিলেটের একটি হোস্টেলে অবস্থান করে। এখানে তার রুমমেট প্রেরণা নামের একটি মেয়ে। গত তিন বছর থেকেই তারা রুমমেট। যার ফলে তাদের মধ্যে সম্পর্কটা অনেক গভীর। প্রেয়ার জীবনের কোন কথাই প্রেরণার কাছে অজানা নয়। প্রেয়ার অতীত নিয়ে প্রেরণার কাছে সব কথাই খোলাশা করেছে সে৷ তবে প্রেয়ার চাপা স্বভাবের কারণে টানা তিন বছর একসাথে থাকার পরেও মাত্র এক মাস আগেই সব জানতে পারল প্রেরণা। তার আগে তো সে পরিবার নিয়ে কোন কথাই বলতে চাইত না। এই প্রসঙ্গে কথা উঠলে সে কথাই ঘুরিয়ে দিত।
রাতে প্রেয়া ও প্রেরণা ঘুমানোর আগে গল্পগুজব করছিল। কথায় কথায় প্রেরণা হঠাৎ বলে ওঠে,
“আচ্ছা প্রেয়া একটা প্রশ্ন করব উত্তর দিবা?”
“হ্যাঁ, বলো।”
“এই কথাটা কিছুদিন ধরেই আমার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। আজ আর থাকতে পারলাম না তাই করছি। তুমি আবার কিছু মনে করো না।”
“না। কিছু মনে করব না। তুমি নিশ্চিত মনে প্রশ্নটা করতে পারো প্রেরণা।”
“বলছিলাম যে, তুমি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কি ভাবছ?”
“ভবিষ্যৎ বলতে?”
“আজীবন কি এভাবে একাই কা ‘টিয়ে দেবে? তোমার তো পরিবার, আত্নীয়, স্বজন সব আছে। তোমার কি ইচ্ছা করে না তাদের কাছে ফিরতে?”
প্রেয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
“আমি শুধু বর্তমান নিয়েই থাকতে চাই প্রেরণা। অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার মতো কিছু নেই৷ অতীতে যা হবার হয়ে গেছে আর ভবিষ্যতেও যা হবার তাই হবে।”
“ও তাই!”
“হুম।”
“আচ্ছা, ধরো কোন একদিন তোমার অতীত তোমার সামনে এসে দাঁড়াল তখন তুমি কি করবে?”
“আমি অতীতকে এড়িয়ে যাব।”
“সেটা কি এতই সহজ?”
“সহজ না হলে সহজ করে নেব। আমার সেই ক্ষমতা আছে।”
“সেটা সময়ই বলে দেবে।”
★★★
আকাশে ঘন মেঘের ঘনঘটা। যেকোন সময় মেঘ চিরে বৃষ্টি এসে ধরা দিতে পারে ধরিত্রীর বুকে। বৃষ্টির আবাহনী বার্তা দিচ্ছে মেঘের তর্জন, গর্জন।
প্রেয়া সবেমাত্র একজন ছাত্রীকে টিউশনি করিয়ে হোস্টেলে ফেরার জন্য রওনা দিলো। আসার সময় আকাশ পরিস্কার থাকায় ছাতাও সাথে আনে নি সে। তাই এখন বেশ চিন্তায় পড়তে হলো তাকে। এখান থেকে তার হোস্টেল বেশ খানিকটা দূরে। আজ পরিবহন ধর্মঘট থাকায় রাস্তায় কোন যানবাহনও পাওয়া যাবে না। তাই এত দূর হেটে যাবে কিভাবে সেই নিয়েই ভাবনায় ব্যস্ত ছিল সে। সে যখন এমন ভাবনায় ব্যস্ত ছিল সেই সময় যেন তার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবিভূত হলো আকাশ। আকাশ হলো প্রেয়া যে ছাত্রীকে পড়াতে আসে তার বড় ভাই। আকাশরা বেশ বড়লোক। তাদের বড় গাড়িও আছে। আকাশ বেশ বুঝল প্রেয়ার পরিস্থিতি। তাই সে আগ বাড়িয়ে প্রশ্ন করল,
“May i help you?”
“আপনি আমায় কিভাবে সাহায্য করবেন?”
“আমার গাড়িতে করে আপনাকে আপনার হোস্টেলে পৌঁছে দিতে পারি।”
আকাশের প্রস্তাবে কি জবাব দেওয়া উচিৎ সেটা নিয়েই চিন্তায় ব্যস্ত ছিল প্রেয়া। আকাশের চাহনি বেশ অনেক দিন থেকে খেয়াল করছে সে। এই ছেলেটার মনে যে তাকে নিয়ে অন্যরকম অনুভূতি আছে সেটাও বেশ বুঝতে পারে সে। তাই যথাসম্ভব চেষ্টা করে আকাশকে এড়িয়ে যেতে। কিন্তু এখন এই পরিস্থিতিতে আকাশের প্রস্তাব মেনে না নিলে তাকে বেশ বেকায়দায় পড়তে হতে পারে। তাই সে বলে,
“আমি আপনার সাহায্য নিতে রাজি আছি কিন্তু একটা শর্ত আছে।”
“ব্যাপারটা তো দারুণ ইন্টারেস্টিং। মানে আপনাকে সাহায্যও করব আমি আবার শর্তও মানব আমি!”
“আরে খুব একটা কঠিন শর্ত নয়। আমার শর্ত এটাই যে, আমি পিছনের সিটে বসব।”
“কেন? সামনে বসলে কি সমস্যা? সামনে বসলে কি আমি আপনাকে গিলে খাব?”
“উফ! আপনি এত প্রশ্ন করেন কেন? আমার শর্ত মেনে নিন না।”
“আপনি আমায় ফোর্স করতে পারেন না।”
প্রেয়া আর কিছু না বলে বিরক্তিকর দৃষ্টিতে তাকায়। আকাশ মৃদু হেসে নিজের গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলে,
“উঠুন।”
প্রেয়া উঠে বসে পড়ে পেছনের সিটে৷ আকাশ সামনের সিটে বসে ড্রাইভ করতে শুরু করে।
★★★
আহিল রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে। একেই বৃষ্টি তার উপর এই সময়ই তার গাড়িতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সিলেটে পৌঁছে তাই ভারী বিপদে পড়তে হলো তাকে। বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে এলো। এমন সময় আহিল হঠাৎ খেয়াল করল তার সামনে একটি গাড়ি এসে থামলো।তৎক্ষণাৎ গাড়ি থেকে একটি মেয়ে নেমে রাস্তার মাঝে বমি করতে লাগল। আহিল প্রথমে সেদিকে পাত্তা দিলো না। একটু পর সেদিক পানে তাকাতেই বিস্ময়ে তার চোখ বড় হয়ে গেল। সে অস্ফুটস্বরে বলে উঠল,
“প্রেয়া…”
আহিল প্রেয়াকে দেখে এতটাই অবাক যে আবেগের বহিঃপ্রকাশ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সে দৌড়ে প্রেয়ার কাছে যায় এমন সময় আকাশ গাড়ি থেকে নেমে প্রেয়ার পাশে এসে দাঁড়ায়। আহিল থেমে যায়। প্রেয়া চোখ তুলে তাকাতেই আজ দীর্ঘ ৩ বছর পর দুজন একে অপরকে দেখতে থাকে।
চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️