একতরফা ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
687

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

প্রেয়া বাড়ি ত্যাগ করে আশ্রয় নেয় ডাক্তার আকরাম খানের বাড়িতে৷ আকরাম খান প্রেয়াকে নিজের মেয়ের মতোনই দেখেন। তবে প্রেয়ার কাছে মনে হয় ঢাকায় থাকলে আহিলরা তাকে খুব সহজেই খুঁজে পাবে। তাই সে যত দ্রুত সম্ভব দূরে কোথাও চলে যেতে চায়। প্রেয়া তার ইচ্ছার কথা ড়াক্তার আকরাম খানকে জানাতেই তিনি কিছুটা চিন্তায় পড়ে গিয়ে বলেন,
“তুমি একা একটা মেয়ে, শহর থেকে বাইরে গিয়ে একা কিভাবে থাকবে?”

“আমি কোনভাবে ম্যানেজ করে নেব। আপনি শুধু আমার এই শহর থেকে দূরে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন।”

আকরাম খান ভাবনায় পড়ে যান। এইভাবে একটা মেয়েকে দূরে কোথাও পাঠাতে মোটেই তার মন সায় দিচ্ছিল না। কিন্তু প্রেয়াও নাছোড়বান্দা। সে ঠিক করেই নিয়েছে এই শহর সে আজই ত্যাগ করবে। আর কোন উপায়ন্তর না পেয়ে আকরাম খান ঠিক করেন প্রেয়াকে সিলেটে পাঠাবেন। আকরাম খানের পৈত্রিক বসতবাড়ি সিলেটে। নিজের মেয়ের মৃত্যুর পর তিনি সিলেটে তার মেয়ের স্মরণে একটি অনাথ আশ্রম তৈরি করেছেন। আকরাম খান সিদ্ধান্ত নেন সেই অনাথ আশ্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেবেন প্রেয়াকে। সাথে তিনি সিলেটের স্থানীয় একটি প্রাইভেট ভার্সিটিতে প্রেয়ার এডমিশনের ব্যবস্থাও করে দিলেন। অতঃপর প্রেয়ার উদ্দ্যেশ্যে বললেন,
“সাবধানে থেকো। আজ থেকে তোমার নতুন জীবন শুরু হলো।”

প্রেয়া সামান্য হেসে বলল,
“আমি নিজের নতুন জীবনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করব। এই নতুন জীবনটা যেমনই হোক, আশাবাদী আমার অতীতের জীবন থেকে ভালো হবে।”

★★★
আহিল প্রেয়ার রুমে এসে তাকে না দেখতে পেয়ে ভীষণ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কি করবে কিছু ভেবে পায়না। আশেপাশে খুঁজেও যখন প্রেয়াকে খুঁজে পায়না তখন তার মনে ভয় বাসা বাধে। এমন সময় তার হাতে এসে পড়ে প্রেয়ার লেখা সেই চিঠি। যেখানে প্রেয়া লিখেছে সে দূরে কোথাও চলে যাবে এবং আহিল যেন তার খোঁজ না করে। প্রেয়ার এই চিঠিটা পেয়েই আহিল স্তম্ভিত হয়ে যায়। উদ্ভ্রান্তের মতো গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায় প্রেয়াকে খুঁজতে। কিন্তু কোন লাভ পায়না। আহিল কি করবে কিছু বুঝতে পারে না। এই প্রথম সে উপলব্ধি করতে পারে প্রেয়ার প্রতি তার মনে কি ধরনের অনুভূতি রয়েছে। এই অনুভূতি কেবল মায়া বা দয়া হতে পারে না। এটা আরো তীব্র অনুভূতি। প্রেয়াকে হারানোর ভয়ে কেঁদেই ফেলে আহিল। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতে থাকে যেন সে প্রেয়াকে খুঁজে পায়।

প্রেয়াকে খুঁজে না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে আহিল বাড়িতে ফিরে আসে। আহিলকে অগোছালো অবস্থায় বাড়িতে ফিরতে দেখে রাহেলা বেগম তার কাছে গিয়ে বলেন,
“কি হয়েছে আহিল? তোকে এমন লাগছে কেন?”

আহিল হতাশ স্বরে বলে,
“প্রেয়া কোথাও চলে গেছে মা। আমি ওকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা।”

রাহেলা বেগম তো এই কথাটা শুনে মনে মনে ভীষণ খুশি হন। এটাই তো চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আহিলের সামনে নিজের সেই খুশি প্রকাশ না করে অবাক হওয়ার ভান করে বলেন,
“সে কি কথা? কোথায় গেল মেয়েটা?”

আহিল নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইল। গরম আজহারুল আহমেদও সেখানে উপস্থিত হন। প্রেয়াকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা শুনে তিনি বেজায় চটে যান। এমনিতেই নিজের ভাইয়ের মৃত্যুতে তিনি চরম শোকাহত তার উপর এই খবরটা তাকে আরো আহত করল। তার সব রাগ গিয়ে পড়ল আহিলের উপর। তিনি আহিলের উদ্দ্যেশ্যে রাগী গলায় বলেন,
“কেমন স্বামী তুমি যে নিজের স্ত্রীর খেয়াল রাখতে পারো না? আমি কিছু শুনতে চাই না তুমি যত তাড়াতাড়ি পারো যেখান থেকে পারো প্রেয়াকে নিয়ে এসো। ওর যদি কোন ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। তোমার জন্য মেয়েটা অনেক কষ্ট সহ্য করেছে আর নয়।”

রাহেলা বেগম প্রতিবাদ করে বলেন,
“তুমি আমার ছেলেকে দোষ দিতে পারো না। ঐ প্রেয়াই তো নিজের ইচ্ছায় আমার ছেলেকে বিয়ে করেছে। আহিলের কি দোষ? আর এখনও তো ও নিজের ইচ্ছাতেই চলে গেছে।”

“চলে গেছে না বলো চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। তোমার গুণধর ছেলের জন্যই প্রেয়া সব ছেড়ে চলে গেছে।”

আহিলের আর ভালো লাগছিল না এসব কথা শুনে। সে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নেয়। রাহেলা বেগম পিছন থেকে বলে ওঠেন,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই আহিল?”

আহিল তখন বলে,
“আমি প্রেয়াকে খুঁজে আনতে যাচ্ছি আম্মু। আর আব্বু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি যতদিন না পর্যন্ত প্রেয়াকে খুঁজে পাব ততক্ষণ এই বাড়িতে আমি পা রাখবো না।”

রাহেলা বেগমের মাথায় হাত চলে যায়। তিনি বলে ওঠেন,
“এসব তুই কি বলছিস আহিল? ও গো তুমি আটকাও তোমার ছেলেকে। ও কোথায় খুঁজবে ঐ মেয়েকে? যে নিজে থেকে চলে যায় তাকে কি কখনো খুঁজে পাওয়া যায়?”

আহিল আর বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। আহিল সোজা চলে যায় তুষারদের বাড়িতে। কারণ তার মনে হয় প্রেয়া প্রান্তির কাছে থাকতে পারে। আর যদি নাও থাকে তাহলেও হয়তো প্রান্তি প্রেয়ার কোথায় আছে সেই ব্যাপারে জানতে পারে।

তুষারদের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায় আহিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই তুলি এসে দরজা খুলে দেয়। আহিলকে দেখে সে বলে,
“ভাইয়া তুমি হঠাৎ এই সময়! কোন সমস্যা হয়েছে কি?”

আহিল ভেতরে প্রবেশ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে তুলিকে শুধায়,
“আচ্ছা প্রেয়া কি তোমাদের বাড়িতে এসেছে?”

“কই নাতো। প্রেয়া তো আসেনি। কেন, প্রেয়া কি বাড়িতে নেই?”

আহিল কোন উত্তর না দিয়ে উলটো বলে,
“তুমি প্লিজ প্রান্তিকে ডাকো। আমার ওর সাথে জরুরি কথা আছে।”

ততক্ষণে তুষার ও প্রান্তিও সেখানে এসে উপস্থিত হয়। প্রান্তি আহিলকে শুধায়,
“কি জানতে চাও তুমি?”

আহিল কাতর কন্ঠে বলে,
“আসলে প্রেয়া…..ও এই চিঠিটা লিখে বাড়ি থেকে চলে গেছে। আমি ওকে অনেক খুঁজেছি কিন্তু কোথাও পাইনি…তাই আমি ভাবলাম যদি তুমি ওর ব্যাপারে কিছু জানো।”

প্রান্তি চিঠিটা হাতে নিয়ে বলে,
“আমি কিছুই জানি না। আমার বোনটা হঠাৎ কোথায় চলে গেল? আমার খুব ভয় হচ্ছে। এমনিতেই আমি আমার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছি। এখন নিজের বোনকে হারাতে চাই না।”

বলেই কেঁদে ফেলে সে। তুষার প্রান্তিকে শান্ত হতে বলে। অতঃপর আহিলকে প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা, প্রেয়া কি ওর সাথে ফোন নিয়ে যায়নি?”

“না। ও ফোন বাসাতেই রেখে গেছে।”

তুষার প্রান্তির হাত থেকে প্রেয়ার লেখা চিঠিটা হাতে নেয়। চিঠিটা মনযোগ দিয়ে পড়ে বলে,
“আমার মনে হচ্ছে প্রেয়া শহর থেকে বাইরে কোথাও যাওয়ার প্ল্যান করছে।”

প্রান্তির কান্নার বেগ বাড়ে। সে বলে,
“তাহলে কি ওকে আর খুঁজে পাবো না?”

“কেন পারবোনা? আমার মনে হয় ও এখনও শহর ছেড়ে কোথাও যায়নি। আহিল তুমি একটা কাজ করো তুমি কির বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখ আর আমি কমলাপুর রেলস্টেশনে খুঁজে দেখছি। ভাগ্য ভালো থাকলে ওকে পেলেও পেতে পারি।”

আহিলও তুষারের সাথে সম্মতি জানায়। অতঃপর দুজনেই নিজেদের গন্তব্যে রওনা দেয়।

★★★
ডাক্তার আকরাম খানের সাথে সিলেটগামী একটি বাসের উদ্দ্যেশ্যে বাস স্ট্যান্ডে এসেছে প্রেয়া। আকরাম খান প্রেয়াকে বাস কাউন্টারে নিয়ে এসে বলে,
“এই নাও তোমার টিকেট। সাবধানে দিও। আর এই বাটন ফোনটা সাথে রাখো। এর মাধ্যমে আমার সাথে যোগাযোগ করবে। পৌঁছে কিন্তু কল দেবে।”

প্রেয়া আবেগাপ্লুত হয়ে বলে,
“আপনার এই অবদান আমি কখনো ভুলব না আঙ্কেল।”

“কোন ব্যাপার না, মা।”

প্রেয়া মৃদু হেসে বাসে উঠে বসে। একটু পরেই বাসটা রওনা দেবে। সে অপেক্ষা করতে থাকে বাসটা ছাড়ার।

★★★
দীর্ঘক্ষণ জ্যামে আটকে থাকার পর অবশেষে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছায় আহিল৷ সে বাস স্ট্যান্ডে পৌছাতেই দেখতে পায় একটি বাস এখনই স্টার্ট দেবে। সে দ্রুত গিয়ে বাসটিতে উঠে পড়ে। তারপর খুঁজতে থাকে প্রেয়াকে। হঠাৎ করেই সে চমকে গিয়ে বলে ওঠে…

চলবে ইনশাআল্লাহ ❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে