একতরফা ভালোবাসা পর্ব-০৩

0
695

#একতরফা_ভালোবাসা
#পর্বঃ৩
#লেখিকাঃদিশা_মনি

“আমি আহিল ভাইকে বিয়ে করতে রাজি আছি আব্বু। তুমি বিয়ের আয়োজন করতে পারো।”

প্রান্তির মুখে হঠাৎ এমন অবিশ্বাস্য কথা শুনে চমকে উঠলেন পিয়াল আহমেদ। একটু আগেই নিজের রুমে এসে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এমন সময় হঠাৎ করে প্রান্তি তার রুমে এসে এমন কথা বলল।

পিয়াল আহমেদ হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। যেই মেয়ে আজ দুপুরবেলা সবার সামনে বিয়েতে আপত্তি জানালো রাত হতে না হতেই তার এমন পরিবর্তন মেনে নেওয়া বেশ মুশকিল। পিয়াল আহমেদ সামান্য কেশে গম্ভীর স্বরে বললেন,
“তোমার মতিগতি তো কিছু বুঝছি না প্রান্তি। এই দুপুরে বললে তুমি বিয়েটা করতে চাওনা আবার এখন এসে বলছ তুমি বিয়েতে রাজি!”

“আমি অনেক ভেবে দেখলাম যে বিয়েটা করাই ভালো হবে।”

“হুম। একদম ঠিক ভেবেছ তুমি। আমি তোমার বাবা হই প্রান্তি। আমি তো যা সিদ্ধান্ত নেব তোমার ভালোর জন্যই তাই না? আহিলের মতো এত ভালো পাত্র আর কোথায় পাবো তোমার জন্য? যাইহোক তোমার যখন আর আপত্তি নেই তখন আমি ভাইয়ার সাথে এই নিয়ে কথা বলব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তোমাদের চার হাত এক করতে চাই।”

প্রান্তি স্লান হেসে পিয়াল আহমেদের রুম থেকে বেরিয়ে এলো।

★★★
আহিল তার বাবা আজহারুল আহমেদ ও মা রাহেলা বেগমকে সাথে নিয়ে উপস্থিত হয়েছে প্রান্তিদের বাড়িতে। পিয়াল আহমেদের আমন্ত্রণেই অবশ্য আজ তাদের এখানে আসা। পিয়াল আহমেদ মূলত প্রান্তির মতামতের প্রেক্ষিতেই তাদের ডেকেছেন৷ পাশাপাশি তুষারের মা তাহেরা বেগমও উপস্থিত আছেন। সবাই মিলে আজ ঠিক করেছেন বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করবেন।

প্রেয়া অসুস্থ থাকায় সে এখন বিশ্রাম নিচ্ছিল। বাড়িতে ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা সম্পর্কেই সে অবগত নয়। তুষারের ছোট বোন তুলি প্রান্তিকে সাজিয়ে দিচ্ছিল। তুলি প্রান্তির গোমড়া মুখ দেখে বলে,
“আপি তোমাকে এমন লাগছে কেন? এই বিয়েটা নিয়ে কি তুমি খুশি নও?”

প্রান্তি ভাবলেশহীন ভাবে উত্তর দিলো,
“অখুশি হওয়ার কি কোন কারণ রয়েছে?”

“না, সেটা নয়। কিন্তু তোমার মুখটা বেশ গম্ভীর লাগছে।”

“তেমন কিছু না।”

তুলি প্রেয়ার সমবয়সী। শুধু তাই নয় দুজনে একই সাথে লেখাপড়া করছে, কাজিন হওয়ার পাশাপাশি বেস্ট ফ্রেন্ডও। তাই দুজনে একে অপরের ব্যাপারে প্রায় সব খোঁজ খবর রাখে। তুলি এটাও জানে যে, প্রেয়া আহিলকে ভালোবাসে। প্রেয়া অবশ্য নিজে থেকে কখনো তুলিকে কিছু বলে নি। বরাবরই মেয়েটা নিজের মনের কথা কারো সাথে ভাগ করে নেওয়া থেকে বিরত থাকে। হোক সে নিজের বাবা, বোন কিংবা বন্ধু। একদিন তুলির হাতে প্রেয়ার ডায়েরিটা পড়ে গেছিল। তখনই কৌতুহলবশত ডায়েরিটা পড়ে সে সব জানতে পারে। পরবর্তীতে প্রেয়াকে এই নিয়ে বলতেই প্রেয়া কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তুলির সামনে হাতজোড় করে অনুরোধ করে যেন সে এসব কথা গোপন রাখে, কাউকে যেন না বলে। এটার প্রমিসও করিয়ে নেয়। কিন্তু আজকের মুহুর্তে দাঁড়িয়ে তুলির মনে হলো এই প্রমিস রক্ষা করার থেকে বেশি জরুরি প্রান্তিকে সবটা খুলে বলা। প্রান্তি যদি একবার জানতে পারে তার আদরের বোন আহিলকে ভালোবাসে তাহলে নিশ্চয়ই সে কখনো এই বিয়েটা করতে চাইবে না। এমন ভাবতে থেকে তুলি প্রান্তিকে বলে,
“আপি তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা বলার ছিল। কথাগুলো খুব আর্জেন্ট। তোমার কাছে কি একটু সময় হবে কথা গুলো শোনার?”

প্রান্তি কিছু বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ করে রাহেলা ও তাহেরা বেগম সেখানে এসে উপস্থিত হন। রাহেলা বেগম তো প্রান্তিকে ছোটবেলা থেকেই ভীষণ পছন্দ করেন। অনেক আগে থেকেই তিনি প্রান্তিকে নিজের ছেলের বউ করতে চান। এখন তার সেই ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে। ভেবেই তো তিনি পারলে আনন্দে এখনই নাচতে শুরু করেন। রাহেলা বেগম খুশি মনে এগিয়ে এসে প্রান্তির সামনে এসে মৃদু হেসে বলেন,
“বাহ, কি সুন্দর লাগছে আমার হবু বৌমাকে। কারো নজর না লাগুক।”

প্রান্তি জোরপূর্বক হাসি দেয়। কিন্তু তার বুক ফে/টে কান্না পাচ্ছিল যা সে প্রকাশ করতে ব্যর্থ! তাহেরা বেগমও প্রান্তির প্রশংসা করে বলেন,
“সত্যি কিন্তু তোকে অনেক সুন্দর লাগছে রে। একদম ছোট ভাবির মতো। জানিস তোর চেহারা না অনেকটা তোর মায়ের মতোই হয়েছে। ছোট ভাবিও তোর মতো উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের ছিলেন। আর প্রেয়া তো একদম ভাইয়ার চেহারা পেয়েছে। ধবধবে ফর্সা, ঠিক যেন একটা পুতুল।”

রাহেলা বেগমও সমর্থন জানিয়ে বলেন,
“ঠিক বলেছ তুমি। প্রেয়াকে একদম পুতুলের মতোই লাগে। দেখলেই মন চায় আদর করে দেই। তবে আমাদের প্রান্তিও কোন অংশে কম নয় বলো?”

“সেটা আর বলতে। দুই বোনই আগুন সুন্দরী হয়েছে একদম। তুমি তো বড় রত্নটাকে নিয়ে যাচ্ছ এখন আমার ইচ্ছা কি জানো? প্রেয়াকে আমার তুষারের বউ করার।”

তাহেরা বেগমের কথা শুনে প্রান্তির ব্যকুল হৃদয়ে হঠাৎ করে ঝড় ওঠে। তবে সে নিজেই নিজেকে বুঝ দিয়ে বলে,
“যা হচ্ছে ভালোই হচ্ছে। তুষার ভাইও তো এটাই চান। আমার ভালোবাসা পূর্ণতা না পাক অন্তত আমার ভালোবাসার মানুষটার ভালোবাসা তো পূর্ণতা পাবে।”

রাহেলা বেগম প্রান্তির কাধে হাত দিয়ে বলেন,
“চলো প্রান্তি। নিচে সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমরা ঠিক করেছি আজই তোমাদের আকদ হবে।”

রাহেলা বেগমের কথা শুনে প্রান্তি, তুলি দুজনেই হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইল। প্রান্তি চমকে উঠে বলল,
“আকদ মানে? আমি তো জানতাম আজ বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করার কথা হবে!”

“হ্যাঁ, তোমাদের অনুষ্ঠান করে কবে বিয়ে হবে সেটা তো আজ ঠিক হবে। কিন্তু তোমার বাবা আর আমার স্বামী মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আজ তোমাদের আকদ করিয়ে রাখবেন।”

প্রান্তি বুঝে উঠতে পারে না তার করণীয় কি। এত জলদি এত ধাক্কা সে কিভাবে নেবে। তবে সে ভালোই বুঝতে পারছে এসব পিয়াল আহমেদেরই পরিকল্পনা। প্রান্তি যেকোন মুহুর্তে নিজের মত বদলে ফেলতে পারে জন্য হয়তো তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রান্তি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল। বিয়ে আজ হোক কাল হোক করতেই হবে৷ তাই এই নিয়ে আর কোন তর্ক করতে চাইল না সে। প্রচণ্ড স্বাধীনচেতা মেয়েটা আজ নিজের ভালোবাসার মানুষের মনে অন্য নারীর বাস জানতে পেরে এতটাই ভেঙে পড়ল যে নিজের জীবনকেও অন্যের হাতে তুলে দিল৷ সে ভেবেই নিল জীবনকে খড়কুটোর মতো ভাসিয়ে দেবে। স্রোত তাকে যেদিকে নিয়ে যায় সে সেদিকেই যাবে।

তাহেরা বেগম তুলিকে আদেশ দিয়ে বললেন,
“এই তুলি যা তো প্রেয়াকে বসার ঘরে নিয়ে যা। মেয়েটা তো এখনো জানে না নিজের বোনের বিয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই খুব খুশি হবে আর অবাকও। আমরা প্রান্তিকে নিয়ে যাচ্ছি।”

★★★
তুলি হন্তদন্ত হয়ে প্রেয়ার রুমে যায়। প্রেয়া অসুস্থ শরীর নিয়ে বেশ ক্লান্ত থাকায় এতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিল৷ সবেমাত্র তার ঘুম ভাঙল। এরমধ্যে তুলি এসে তাকে একপ্রকার টেনে তুলল। হতবিহ্বল প্রেয়া কিছু বুঝতে পারল না। চকিতে তাকালো তুলির দিকে। তুলি হাফাতে হাফাতে প্রেয়ার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“যদি তুই নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে চিরকালের মতো হারাতে না চাস তাহলে এক্ষুনি বসার ঘরে যা।”

প্রেয়া অবাক হয়ে শুধায়,
“মানে? তোর কথা ঠিক বুঝলাম না।”

“এখন এত কিছু বোঝার সময় নেই। তুই দ্রুত বসার ঘরে যা। আজ প্রান্তি আপি আর আহিল ভাইয়ার আকদ পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

তুলির কথাটা কর্ণগোচর হতেই প্রেয়া হতবাক হয়ে গেল। তার মস্তিষ্কে বড়সড় একটা ধাক্কা এলো। প্রেয়া আর কিছু ভাবতে পারল না। ত্বরিত ছুট লাগালো। অসুস্থ, দূর্বল শরীর নিয়েই বসার ঘরের উদ্দ্যেশ্যে রওনা দিলো।

বসার ঘরে উপস্থিত হয়েই চিৎকার করে সবার উদ্দ্যেশ্যে বলল,
“এই বিয়ে হতে পারে না। তোমরা বন্ধ করো এসব।”

চলবে ইনশাআল্লাহ ✨❤️

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে