একজোড়া চড়ুই পর্ব- ২০(শেষ পর্ব)

0
1869

একজোড়া চড়ুই?️?️
#পর্ব_২০(শেষ পর্ব)
#Writer_Afnan_Lara
?
আমি এখন খাগড়াছড়িতে যাওয়ার পথে যে উদয়পুর পড়ে সেখানে দাঁড়িয়ে আছি,আমার যে নতুন বিয়ে করা বউ আছেন উনি আবারও শাপলা চুরি করতে গেছেন,এমন একটা বিল যেখানে বিনা মৌসুমেও শাপলা থাকবেই,আর আমার বউ ও কম না,শাড়ী পরা অবস্থাতেই ফুল চুরি করতে চলে গেছে
আমি যাইনি কারণ চুরি করে সেটার ভাগিদার হতে চাইনা
বিলের মালিক ওরে ধরলে আমি বলবো “এই মেয়েটাকে আমি চিনি না,তবে এটা বলতে পারি মেয়েটা পাগলা গারত থেকে ছাড়া পেয়ে এদিকে আসছে”
ভাবতে ভাবতে দেখলাম শাপলার একটা আড়া এদিকে ছুটে আসতেছে,যে হাতে নিয়ে আসতেছে তাকেই দেখা যাচ্ছে না,শাপলা আর শাপলা মনে হয় পুরো বিলটাই তুলে আনতেছে
এই মেয়েকে নিয়ে আমি আর পারনো না
.
দৌড়ান দৌড়ান,থুক্কু!বাইক স্টার্ট করেন
.
ছোঁয়া দুম করে এসে বাইকে উঠে পড়েছে
শ্রাবণ কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না শেষে কোনোমতে বাইকটা স্টার্ট দিয়েই দিলো
.
ছোঁয়া শাপলা একটা ২টা আনতা পুরা বিল উঠায় আনছো কেন?
.
আরে এই বিলের শাপলা নাকি শরৎকাল থেকে শীতকাল পর্যন্ত সময়ে ফোটে,অন্য সিজনে ফোটে না,তো আমি আর পাবো না তাই সব তুলে আনছি আর লোকটার জন্য মায়া হলো তাই পার্সটা রেখে চলে আসছি
.
কিহ!!কত টাকা ছিল ওখানে?
.
৫০০,পুরো শাপলার দাম আজ পর্যন্ত যত গুলো চুরি করেছিলাম
.
এটা ভালো করেছো!আই লাইক ইট

সাজেক যাওয়ার প্ল্যান ক্যানচেল হলো কারণ হচ্ছে ছোঁয়া চায় আগে সে খাগড়াছড়িতে তার জামাইর বাসায় যাবে,বউ বউ হয়ে সংসার করবে কদিন
বিয়ের পর কেমন যেন ফিল্মি টাইপ হয়ে গেছে মেয়েটা বুঝতে পারি না আমি
এই তো সোফায় বসে আছি সেই কখন থেকে আর উনি ঢং করে কোমড় দুলিয়ে রান্নাঘরে কি উদ্ভট রান্না করেই যাচ্ছে,আমাকে বসিয়ে রেখেছে,রান্নাঘরে যাওয়া নাকি নিষেধ
১ঘন্টা ধরে আমার রান্নাঘরকে উল্টায় পাল্টায় হাতে একটা চকলেট কেক নিয়ে বের হয়েছেন উনি,সারা গায়ে গালে চকলেট লেপটে নিয়ে আসতেছে,আমি ওর হাতের কেকের দিকে না তাকিয়ে ওর চেহারার অবস্থা দেখে হাসতেছি
বেছে বেছে একটা ম্যাচিউর বয়সের বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছি
মন্দ কি?বেশ ভালো আছি,তাকে নিয়েই আমার দিন চলছে
একদিন এক কান্ড কারখানা করে বসে থাকে,একদিন পা ভেঙ্গেছে তো ঐদিন হাত ভেঙ্গেছে আবার এমন ও হয় একদিনে দুটোই ভেঙ্গেছে,বাঁদরের মত লাফালাফি করবে একা বাসায়
আমি স্কুল থেকে এসে দেখি পুরো বাসা কেয়ামত বানিয়ে রেখেছে,সেও স্কুলে যায় তবে আমার আগেই তার কাজ শেষ হয়ে যায়,আমার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ক্লাস করাতে হয় আর তাকে ২টা ক্লাস করালেই ছুটি
বাসায় এসে হুদাই লাফালাফি করে,দুনিয়ার নাম না জানা রান্না করে আমাকে জাঁতি ধরে খাওয়াবে,ভালো হয়,তেমন খারাপ হয় না,যদি খারাপ বলি তো শেষ সেদিন আর ডিনার জুটবে না
লাফালাফি করতে গিয়ে হাত পা ভাঙ্গলে ২দিন ধরে রুমে আটকায় রাখি তাও এই অভ্যাস ঠিক হয় না ওর
যদি তার বাচ্চা হলে যায় আর কি
তাও এক বিপদ!বাচ্চা কি করে বাচ্চাকে সামলাবে,সে নিজেই তো বাচ্চা
চুরি তো আছেই,বাসার মালিকের বউ যত আচার রোদে দেয় তার ৫০% ছোঁয়া সাবাড় করে আর গালি খেতে হয় আমাকে
এর কারণে ওর জন্য আনা আচার শেষ হলেই আবার কিনে রাখতে হয়,চুরি কি শুধু আচার নাকি??
হাত দিয়ে পাশের বাসার বারান্দার ফুল ছিঁড়ে নিয়ে এসে মাথায় লাগিয়ে সংয়ের মত পুরো বাসায় ঘুরঘুর করবে আর আমি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলে গলায় ঝুলে পড়বে
বকতেও পারি না!কারণ ওকে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি
ওর রুপে নয় ওর স্বভাবে আমি মুগ্ধ,আর কি লাগে?রুপ?আমি তো ওকে অপ্সরীর চাইতেও সুন্দরী দেখি
যখন গোসল করে বের হয় ঠিক তখন,আবার যখন আচার চকলেট সারা মুখে লেপটিয়ে খিলখিল করে হাসে ঠিক তখন
আবার যখন রান্না করে টেবিলে এনে রাখে মুচকি হেসে চেয়ে বলে”রান্না কেমন হয়েছে”ঠিক তখন
মোট কথা সারাক্ষণই ওকে আমার ভাল্লাগে
অভ্র ভাইয়াকে একটা থ্যাংকস অবশ্যই দিব,ছোঁয়াকে রিজেক্ট করে সাদা চামড়াকে বিয়ে করার জন্য
কারণ উনি ওকে ছাড়ার ফলেই তো আমি ওকে পেয়েছি!আমি যে সাদা চামড়ার পিছনে দৌড়াইনি আর তাই আমি শ্যামবর্ণের মেয়েটির মাঝে অনেক কিছু খুঁজে পাই
এজ লাইক মিস্ট্রি বক্স
একদিন এক বিষয় জানি ওর সম্পর্কে
তখন মুগ্ধ হয়ে হাসি
সামান্য এক ডজন চুড়ি পেয়েও লাফিয়ে উঠে সে,কয়েক মাস বাদেই গিয়ে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঘুরে আসি,,৭/৮দিন থাকাও হয়,মানে ছুটি পেলেই দুজনে এক দৌড়ে নারায়ণগঞ্জ চলে যাই
মা তো ছোঁয়া বলতে পাগল,ছোঁয়া একবার গেলে পরেরবার খাগড়াছড়িতে ফিরতে অনেক কষ্ট হয়ে যায়
আমি আসার সময় আগে মা কাঁদতো আর এখন ছোঁয়া আমার সাথে চলে আসে বলে কাঁদে
মানে শ্যামবর্ণের মেয়েদের মধ্যে একটা জাদু থাকে,তারা রুপ দিয়ে না পারলেও তাদের মনের সৌন্দর্যতা দিয়ে আপনাকে পাগল করেই ছাড়বে
আগে জানতাম কালো শ্যামলা মেয়েদের প্রশংসা খালি উপন্যাসের পাতায় পাতায় রচিত হয় তবে এটা ভুল
পৃথিবীতে যত স্বামী আছেন যারা শ্যামবর্ণ বা কালো মেয়েকে বিয়ে করেছেন তাদের মধ্যে ৯১% কিন্তু আমার মতোই
স্ত্রীর মনের ভেতরের সৌনন্দর্যটা তারা দেখে আর মনে মনে বলে “ভাই আমি জিতসি”
আমিও বলি আমি জিতসি!!সবই তো পেলাম
ওদিকে ইতি আর রিয়ান,ভালোই আছে তবে মাঝে মাঝে শুনি ছোঁয়াকে ফোন করে বলে রিয়ান ওকে এটা বলে খোঁচা দিয়েছে,ওটা বলে খোঁচা দিয়েছে
কিন্তু ছোঁয়াকে কখনও বলতে দেখিনি কারণ আমি ওকে খোঁচা দিই না,দিতে হয় না, সে নিজে সারাদিন এমন উদ্ভট কাজ করে আমাকে ব্যস্ত রাখে যে খোঁচা দেওয়ার সময় কই??
আমার আবার এত সাহস নাই,সামান্য যদি বলি রান্না মোটামুটি তো ডিনার জুটে না,জুটে না বলতে আমার জন্য রেডি করে রেখে দেয় টেবিলে,নিজে খাবে না এই আর কি
তো সে না খেলে আমি কি করে খাই?তাই সহজ ভাষায় আমার ও খাবার জোটে না সেদিন
এরকম বাচ্চামো সবার মধ্যে থাকে না,কচিতওচিত থাকে
আর আমি পাইয়া গেলাম,এখন ঠেলা সামলাও আবার মুগ্ধতাও নাও
দেখতে দেখতে কখন যে ৩টা বছর কেটে গেছে!বুঝতেই পারিনি
আজ আমি হসপিটালের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে
আমার বাচ্চা বউ!! মা ডাক শুনবে আজ থেকে,৩টা বছর ধরে ওর থেকে আমি বাচ্চামোটা ছাড়িয়েছি,তবে কতটুকু পেরেছি জানি না বাট এখন সে তার সন্তানকে সামলাতে পারবে,একটু ম্যাচিউরিটি এসেছে তার মধ্যে,এন্ড আই এম প্রাউড অফ ইট
আপনাদের সাথে এখন পরিচয় করিয়ে দিব আমার একমাত্র মেয়ে স্পর্শির সাথে
ছোঁয়ার মেয়ে স্পর্শি
আমার আর ছোঁয়ার সম্পূর্ণ গল্পটা অনেকদিন ধরে তৈরি করলাম
আমার চোখে ছোঁয়ার গল্প আর ছোঁয়ার ডাইরি থেকে আমার গল্প
নাম দিলাম একজোড়া চড়ুই,আমি আর সে মিলে
কারণ “নুহাশ পল্লী”এর গাছের সেই একজোড়া চড়ুই থেকেই আমাদের অনুভবতা প্রকাশিত হয়েছিল
থ্যাংকস টু দেম
ছোঁয়া তার জীবনে অবহেলা ছাড়া কিছুই পায়নি অথচ আমি তাকে অবহেলা করার মতন কোনো অবজেক্ট খুঁজেই পায়নি,অন্তত এখনও না,কখনও ও না
ভালোবাসার মানুষের সব কিছু ভালো,তাই আগে মানুষকে ভালোবাসতে শিখুন তার পর তার সব কিছু ভাল্লাগবে,পারলে আপনার শত্রু কেও ভালোবাসুন,তার সব ভাল্লাগবে আপনার কাছে
তার পর সে এসব দেখে টাসকি খেয়ে বলবে”এর সাথে শত্রুতামি করে কি লাভ এ দেখি আমার দিকে লাভলি ফেস নিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকাইয়া আছে”
হাহা!!
যাই হোক এখন যখন আমি লিখতেছি তখন আমার কন্যা আমার গলায় ঝুলে এ বি সি ডি পড়তেছে
আর তার মা দেওয়ালে অংকন করতেছেন,মনে হয় কোনো গাছ আঁকতেছেন,চোখে চশমা,মাঝে মাঝে পিছন ফিরে আমাদের দিকে চেয়ে হাসতেছে
ও একটা কথা!!তার এক হাতে তুলি আর আরেক হাতে চোরাইকৃত আচার,আজ আবার বাসার মালিকের বউ এসে চিল্লাচিল্লি করবে
আর আমার কন্যা কোমড়ে হাত দিয়ে বলবে”তো কিছে””!
তার মাকে কেউ কিছু বললে এটাই বলে!এমনকি আমিও কিছু বলতে পারি না,আমাকেও এটা বলে
তো কিছে?মানে সে বুঝাতে চাচ্ছে মা এমনটা করেছে তো কি হয়েছে,দরকার হলে আরও করবে
মা যেমন তেমনই তার মেয়ে,আমি তো মনে হয় নদীর জলে ভেসে এসেছি
যাচ্ছে দিন ভালোই,বিধাতা যাই করেন ভালোর জন্যই করেন
মিতুল আমার সাথে চিট না করলে আমি এমন সুখই পেতাম না হয়ত!সবাইকে ধন্যবাদ দিতে হয়,মাঝে মাঝে কেউ ছেড়ে যাওয়া মানে নতুন কিছুর আগমনবার্তা
আমার সাথেও সেটা হলো,রজনীগন্ধা চোরের সাথে বিয়ে
অবশ্য পরে জানতে পেরেছে সেদিন ছোঁয়া ফুলগুলো চুরি করেনি করেছিল ইতি
তাও চোর নিয়ে ঘটনা ঘটায় আজ ছোঁয়াকে বউ বানাতে তো পারলাম
আপনাদের বলছি রুপকে নয় মনকে ভালোবাসুন,সংসারে রুপ আপনার কোনো কাজে আসবে না তবে মন অগণিত কাজে আসবে
একটা সময় রুপ দেখতে দেখতে আপনার একঘেয়েমি এসে যাবে যে সুন্দর মন রয়েছে সেটাতে একঘেয়েমিতা কখনওই আসবে না বরং মুগ্ধতা ক্রমশ বেড়েই যাবে
তফাৎটা যদি বুঝতে শিখেন তো ভাই আপনিও জিতছেন
মন সুন্দর আলা সাদা চামড়ার মানুষ ও আছে
তাই গায়ের রঙ এক পাশে রেখে মনটাকে প্রাধান্য দিবেন তাহলেই জীবনটা সুন্দরতম হয়ে যাবে
ছোঁয়া বললো আমাকে নিয়ে কিছু কথা-
আমি প্রতিদিন ঘুম থেকে জলদি উঠে মুখ ধুয়ে এসে শ্রাবণের সামনে দাঁড়াতাম যেন শ্রাবণ আমার ঘুম থেকে উঠা তৈলাক্ত চেহারা দেখে কিছু বলার সুযোগ না পায়
তো একদিন ধরা খাইলাম,সেদিন আমার খুব জ্বর ছিল সকালে উঠতে পারিনি
চোখ যখন খুললাম তখন সকাল ৯টা বাজে
সে হাসিমুখে হাতে রুটি ভাজি নিয়ে এসে আমার পাশে রেখে গেলো তারপর একটা মগ আর রুমাল এনে আমার সারা মুখটা মুছিয়ে দিয়ে নিজের হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো
সে কি দেখলো না আমাকে কেমন বিচ্ছিরি লাগছিলো?
দেখলো,মুছেও দিলো তবে তার এতদিকে মন নেই তার মন আমাকে কি করে সে সুস্থ করে তুলবে,আমার শরীর খারাপ এই দিকটার দিকেই সে নজর রেখেছিল এর বাইরে আমাকে কেমন লাগছিল এটা তার কাছে ফ্যাক্ট ছিল না
এর বাইরেও একদিন আমাকে সে সকালবেলা উঠে মুখ ধুতে যাওয়ার সময় হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল
জিজ্ঞেস করায় আমি বাধ্য হয়ে তাকে সত্যিটা বললাম
তারপর থেকে সে রাতে শোয়ার সময় আমার হাতটা তার হাতের সাথে বেঁধে ঘুমাতো,আমি বাঁধনটা খুলতে নিলেই সে জেগে যেতো ঘুম থেকে,এমন করে ১মাস কাটিয়েছে পরে আমি বুঝলাম এরে রুপের দোহায় দেওয়া ইম্পসিবল এ শুধু আমাকেই ভালোবাসে,আমি বিচ্ছিরি লাগি কিংবা সুন্দরি তাতে ওর কিছু যায় আসেনা,যেদিন এটা বুঝতে পারলাম সেদিন থেকে সে রাতে হাতের বাঁধন লাগিয়ে দিতো না
মানুষের চাকরির ধরন নির্দেশ করে না সে কেমন মানুষ বা তার যোগ্যতা কতদূর
একজন কারখানার শ্রমিক ও সেই চিন্তাধারা রাখতে পারে যেমনটা একজন বিসিএস ক্যাডার ভাবে
তফাৎ হলো লেভেলের
এই তফাৎটা আপনি বের করবেন না
সবার আগে মনটা দেখবেন তারপর বাকিসব দেখবেন
ভালো চাকরি শ্রাবণ ও করতো,তার বউকে নিজের কামাইতে খাওয়ার যোগ্যতা সে রাখে
রইলো কথা বিসিএস ক্যাডারের,সেও সুখে রাখবে
তাই বলে এই নয় যে একজনের যোগ্যতা দেখতে পেয়ে আপনি আরেকজনের যোগ্যতাকে নিচু চোখে দেখতে পারেন না
যারা মানুষের মন দেখে তার যোগ্যতা জাজ করে তারাই জীবনে সুখে থাকতে পারে এটাই নোট করে রাখবেন
♥♥♥♥♥♥সমাপ্ত♥♥♥♥♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে