একজন মা – ফারহানা তাবাসসুম

0
607

#গল্পপোকা_ছোটগল্প_প্রতিযোগিতা_আগস্ট_২০২০
একজন_মা
ফারহানা_তাবাসসুম

বিয়ের পর যখন প্রথম পিরিয়ড মিসিং হয়। তার কয়েক দিন পর প্রেগন্যান্সি টেস্ট করি। আর প্রেগন্যান্সি টেস্ট যখন পজিটিভ হয়। তখন প্রথম খুশির মুহুর্ত এনেছিলি তুই।তোর বাবা আমাকে সেইদিন হোটেলে নিয়ে গিয়ে পেট ভরে মিষ্টি খাইয়ে ছিল তুই আমার গর্ভে আসছিস শুনে। তারপর থেকে তোর বাবা আমাকে অনেক কেয়ার করতো।কারন তোকে এই পৃথিবীতে আনতে হবে যে আমাকে। আমাকে অনেক আদরে রাখতো তোর বাবা যেন তোর কোন ক্ষতি না হয়।প্রথম প্রথম অনেক খারাপ লাগতো কিছু খেতে পারতামনা। সব বমি করেছি।প্রায় ৬ মাস যখন হয় ঠিক তখন থেকেই ব্যথা পেতাম পেটে । কিন্তু অনেক খুশি আমাদের পরিবারের সবাই। যে আমার প্রথম সন্তান আসবে কিছুদিন পর এই পৃথিবীতে। আমার পেটে তোর অবস্থানটা বুঝতে পারতাম। তোর বাবা আমার পেটে কান দিয়ে তোকে ডাকতো আর তুই তখন নড়ে উঠতি।আর তোর বাবা খুব খুশি হতো আর আমাকে বলতো দেখেছো আমার সন্তান এত সকালেই আমার কথা শোনে। মাঝে মাঝে তুই আমার পেটে পা দিয়ে লাথি মারতি,অনেক ব্যথা পেতাম। কিন্তু তোকে এই পৃথিবীতে আনার জন্য এই ব্যথাটাকে সামান্য মনে করেছি।এভাবে প্রায় ১০ মাস পর একদিন প্রচন্ড প্রসব ব্যথা উঠে। এত ব্যথা যে আমি সহ্য করতে পারি না। অনেক চিৎকার করেছি কিন্তু গ্রামের মানুষ বলেছিল যে সন্তান প্রসব করতে নাকি এই ব্যথা কিছুই না। কিন্তু আমার মনে হচ্ছিল যে আমি বিষ খেয়ে মরে যাই। সেই ব্যথা এতটাই অসহ্য ছিল যে আমি অজ্ঞান হয়েছিলাম। এভাবে প্রায় ২-৩ ঘন্টা পরও যখন বাচ্চা প্রসব হয়নি। তখন সাথে সাথে আমাকে নিয়ে যায় হাসপাতালে।
ডা: আমাকে দেখেই বলে সিজার করতে হবে।তোর বাবা ডা: কে বলেছে যত টাকাই লাগুক না কেন আমার স্ত্রী সন্তানকে বাঁচান। আমি ইঞ্জেসন সুঁচ ভয় পেতাম। কিন্তু সেইদিন তোকে এই পৃথিবীতে আনার জন্য যেন কোন ভয়ই লাগেনি আমার। আমাকে সিজার রুমে নিয়ে যায়। সেখানে অনেক ধরনের কাচি আর ব্লেড ছিল দেখেই ভয় লাগে।কিন্তু তোর জন্য যেন মনে হচ্ছিল আমি মারা গেলেও যেন তুই ভালভাবে এই পৃথিবীতে আসিস।আমাকে অজ্ঞান করে রাখে। প্রায় ২ ঘন্টা পরে আমার জ্ঞান ফেরে। তারপর আমি সবাইকে বলি আমার সন্তান কই।আমি তোকে দেখার জন্য পাগল হয়ে যাই।
কিছুক্ষন পর তোর মুখটা দেখে যেন আমার সব ব্যথা আর কষ্ট দূর হয়ে গিয়েছিলো।তোকে দেখার পর মনে হচ্ছিল যেন আমি পৃথিবীতে একমাত্র সুখী মানুষ। আমার মত খুশি আর কেউ নেই। তোকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনি। তোর বাবা আমাদের এলাকার সবাইকে মিষ্টি খাওয়ায়।আমি কয়েকদিন হাঁটা চলা করতে পারিনি। এমনকি ডা: আমাকে ভারি কাজ করতে বারন করেছে।তুই ছোট ছিলি বিছানায় প্রস্রাব- পায়খানা করতি সেগুলো পরিস্কার করেছি।তোর ৩ বছর না হওয়া পযন্ত আমি একদিনও ঘুমাইনি ভাল ভাবে। একটু পর পর জেগে উঠতাম। তোর যখন অসুখ হতো আমি ঘুমাতাম না। তোকে সারা রাত কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। একদিন ঠিক রাত ১২ টার দিকে তোর পেট ফুলে যায় হঠাৎ করে। আমি আর তোর বাবা সেই রাতেই তোকে নিয়ে যাই হাসপাতালে। সেই রাতে ঘুমাই নাই আমি আর তোর বাবা। যখন ঈদ আসতো তোকে আমরা ঈদের জন্য অনেককিছু কিনে দিতাম। একবার তোকে শুধু ১ টি-শার্ট দিয়েছিলাম সে জন্য আমাদের অনেক মন খারাপ ছিল।এমনকি আমরা সেই ঈদে বাড়ি থেকে বাহির হইনি পর্যন্ত। তোকে আর কিছু দিতে পারিনি বলে। এভাবে চলছিল আমাদের জীবন। এর মাঝে এই পৃথিবীতে চলে আসলো তোর ছোট বোন।এদিকে তুইও বড় হলি। তোর বোন ও আস্তে আস্তে বড় হলো। যে দিন তুই একজন নামিদামী ব্যাবসায়ী হয়েছিলি। সেইদিনে যে কত্তটা খুশি লাগছিলো তোকে বুঝাতে পারবো না। তুই আমার ছেলে তাই গর্ব হয়েছিল। তোর বোনের বিয়েটা তো তুই দিয়েছিলি অনেক ভালকরে। তোকেও বিয়ে করিয়েছি তো অনেক ভালোভাবে। তুই তো ভালই সুখে চলছিলি। হঠাৎ তোর বাবা মারা যাওয়ার পর আমি কেন তোর কাছে বোঝা হয়ে গেলাম রে বাবা। আমার এখন বয়স হয়েছে তাই তেমন কাজ করতে পারি না। তাই বলে কি আমি তোদের সাথে থাকতে পারি না। আমি কি তোর আর তোর বউ এর সাথে থাকার যোগ্য না।আজ তুই দেশ জুড়ে নাম করেছিস,কত নতুন আত্মীয় হয়েছে কত দাস-দাসী লালন পালন করিস তোর বাড়িতে কতজনকে দিয়েছিস ঠাই। শুধু আমার হল ঠাই এই বৃদ্ধাশ্রমে।এই বুড়ির ঠাই তোর ওই বড় অট্টালিকাতে হলোনা। কেন তুই আমাকে এই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেলি। আমি যে তোকে না দেখে থাকতে পারি না।কই তুই যখন আমাকে কষ্ট দিছিলি তখন তো আমি তোকে কোন জায়গায় রাখি নি।বরং বুকে জড়িয়ে রাখতাম তোই যেন কষ্ট না পাস। তাহলে আমাকে তোর আড়ালে রাখলি কেন। তুই হয়তো বুঝবি না এই বুড়ির মনটা যে নাতিদের সাথে খেলাধুলা করতে মন চায়। তুই আমার এই মনের কথা বুঝলিনা বাবা।তবুও ভাবি যে আমার ছেলেটা আমাকে ছাড়া ভালো আছে। থাকুক না ভালই।কারন তুই ভালো থাকলে তাতেই আমি অনেক খুশি থাকি। তবে মাঝে মাঝে একটু আমার সাথে দেখা করে যাস।তুই খুশিতে থাকলে যে তোর মা ও খুশি থাকে বাবা। কিন্তু শুনে রাখ বাবা।দোয়া করি তুই আরো বড় হবি।আর তোকে যেন তোর ছেলে মেয়েরা এই রকম না করে। না হলে যে তুই সহ্য করতে পারবি না বৃদ্ধাশ্রমের কষ্ট। আর তুই কষ্টে থাকলে যে আমিও কষ্টে থাকবো বাবা মরে গেলেও। আর আমি মারা গেলে যেন আমাকে মাটি দেওয়ার জন্য হইলেও আসিস বাবা।আর বউ মাকে বলিস যেন ভাল থাকে, সবসময় যেন তোকে ভালবাসে।আর আমি যে দিন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো সেইদিন যেন বউমা আমাকে গোসল করিয়ে দেয়। কারন বউমা সেইদিন যদি বুঝে আমার ভিতরের কথা।তবে ভালোবাসি তোকে আমারে নিয়ে ভাবিস না, তুই ভালো থাকলে বুঝবি আমি ভালো আছি।
.
(বৃদ্ধাশ্রমের একজন মায়ের কষ্টের কথা বুঝি তার সন্তান দেখতে পাই নি।কিন্তু যে ডাইরিতে লেখেছিলো এই কথা গুলো। তখন সেই ডাইরিটাও হয়তো চোখের পানি আটকে রাঁখতে পারে নি)
.
হে সন্তান বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার আগে
মায়ের দুধের দামটা দিয়েই রেখে এসো।

“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে