#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৫
#Arshi_Ayat
প্রণয় এখনো বুঝতে পারছে না বিয়েটা কার সাথে হয়েছে ওর!জ্বী একটু আগে কোনো একটা মেয়ের সাথে প্রণয়ের বিয়ে হয়েছে।প্রণয় বিয়ের ব্যাপার একটু জানে না।তাকে একপ্রকার জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে।আর এর পিছনে হাত হলো তার কামিনা বন্ধুদের সাথে বাবা মা ও যোগ দিয়েছে।ওরা প্রণয়কে না জানিয়েই বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে।তারপর দুপুরের দিকে জোরাজোরি করে মেয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।প্রণয় চলে আসতে চাইলে ওর মা ওকে আটকেছে।পুরোটা সময় ও বোবার মতো চুপ ছিলো।এখনো মাথায় কিছু ঢুকছে না আসলে বিয়েটা কার সাথে হয়েছে।মেয়ের চেহারাও এখনো দেখেনি প্রণয়।এমনিতেই মনটা ভালো নেই।আজ অরুণীর বিয়ে হয়ে গেছে। তার ওপর এমন কিছু একদম নিতে পারছে না প্রণয়।এখন আবার বন্ধুরা জোরাজোরি করছে বাসর ঘরে যাওয়ার জন্য।বাসর ঘরে কি হবে?অসহ্য লাগছে সবকিছু।প্রণয় বাসর ঘরে যাবে না বলে বসে রইলো।কিন্তু ওর নাছোড়বান্দা বন্ধুরাও উঠে পড়ে লেগেছে যে করেই হোক প্রণয়কে বাসর ঘরে পাঠাবেই।
ফারদিন প্রণয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলল”শালা আর কতক্ষণ বসে থাকবি?ভাবি অপেক্ষা করছে তো।”
“ফারদিন বিরক্ত করিস না।তোরা জানতি আমার লাইফে আর ভালোবাসা আসবে না।তবুও এমন কেনো করলি?একটাবার আমাকে জানালে এমন হতো না।”
“আমরা ভালোই করছি।আর এখন তুই বাসর ঘরে যাবি মানে যাবিই।” তুর্য ধমকে বলল।
তারপর প্রণয়কে ঠেলেঠুলে ওর রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দিলো।প্রণয় মনেমনে বন্ধুদের ইচ্ছামতো গালি দিয়ে সামনে তাকাতেই দেখলো অরুণী বিছানায় বসে আছে।এটা কি করে সম্ভব?অরুণীও অবাক। এবার দুজনেই একসাথে ইয়া জোরে বাড়ি কাপিয়ে চিৎকার দিলো।ওদের চিৎকারে প্রণয়ের বাবা মা বন্ধুরাও চলে এলো।প্রণয়ের মা বলল”কি হলো চিল্লাচ্ছিস কেনো?”
প্রণয় তোতলাতে তোতলাতে বলল”ম,মা ও এখানে কেনো?”
প্রণয়ের বাবা উত্তরে বলল”গাধা ও তোর বউ।তাই এখানে।”
“এটা কি করে সম্ভব?ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে।” প্রণয় বিষ্ময়ে জবাব দিলো।
“হ্যাঁ ওর বিয়ে হয়েছে তোর সাথে।” ফারদিন বলল।
প্রণয় আর অরুণী দুজনই অবাক।ওরা কেউই জানতো না।আজ ওদেরই বিয়ে।প্রণয় আবার প্রশ্ন করলে”কিভাবে?”
এবার তুর্য হেসে বলল”এটা আঙ্কেল আন্টি আর আমাদের প্ল্যান ছিলো।আমরা ধরে নিয়েছিলাম শেষ পর্যন্ত অরুণী তোকে একসেপ্ট করবে না এবং সেই দুঃখে তুই দেবদাস হবি তাই আমরা ভাবলাম অন্যভাবে চেষ্টা করা যাক।তারপর তোর ব্যাপারে আঙ্কলে আন্টিকে জানাই।আঙ্কলে আন্টি অরুণীদের বাসায় যায় ওকে দেখতে।তারপর ওখানেই কথা পাকাপাকি করে ফেলে।আর ওইদিন যাতে তোরা দুইজন এটা না জানতে পারিস সেইজন্য আমরা তোকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বাসা থেকে বের করে নিয়ে যাই।এর পর এতদিন তলেতলে সব হচ্ছিলো কিন্তু তুই জানতি না আর ওদিকে অরুণী জানলেও কে ওর বর হবে এটা জানতো না।আর আজকের কাহিনি তো তুই জানিসই।”
পুরো কাহিনী বলার পর প্রণয় মনেমনে খুশী হলেও মুখে প্রকাশ করলো না অরুণীর রিঅ্যাকশন দেখার জন্য কিন্তু অরুণী কোনো রিয়াকশন করলো না চুপচাপ বসে রইলো।
ওদেরকে ঘরে রেখে সবাই বের হয়ে যাওয়ার পর প্রণয় পাঁচ মিনিট চুপ থেকে বলল”ওজু করে আসো।”
অরুণী বিছানা থেকে নেমে ওজু করে আসলো তারপর প্রণয় গিয়ে ওজু করে ফ্রেশ হয়ে আসলো।দুজনে একসাথে নামাজ শেষ করার পর অরুণী বলল”শুয়ে পড়ুন।আমি সোফায় শোব।”
“না তুমি খাটে শোও।আমি সোফায় শুতে পারবো।”
“আচ্ছা।আর শুনুন।ভাব্বেন না আমি আপনার ওপর রেগে আছি অথবা বিয়েটা মানি নি।আমি বিয়েটা মন থেকেই মেনেছি।আল্লাহর কালাম পড়ে আমাদের বিয়ে হয়েছে তাই না মানার কিছু নেই হতে পারে কাকতালীয় ভাবে আমাদের বিয়েটা হয়েছে তবে সম্পর্কটা হালাল।তাই আমি এই সম্পর্ক কোনো রকম দুঃখী নই।শুধু সম্পর্কে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য একটু সময় চাইছি।”
প্রণয় অরুণীর কথায় মুচকি হাসি দিয়ে বলল”শুয়ে পড়ুন মতো মিসেস অরুণী।সকালে একসাথে নামাজ পড়বো।”
অরুণী আর প্রণয় মুচকি হেসে শুয়ে পড়লো।
———————
প্রিয়ম বাসায় এসে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে।আজকের মতো বেইজ্জতি জীবনেও হয় নি সে।এদিকে পায়েল চৌধুরী নিচে বসে মাথায় হাত দিয়ে বলল”ছিহঃকতোটা বেয়াদব মেয়ে নিজের বাবা মায়ের সম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে পালিয়েছে।আরেকটা ছেলের সাথে।এমন মেয়ে আমার হলে কেটে দু টুকরো করে ফেলতাম।”
“পায়েল এবার থামো।মেয়েকে হয়তো জোর করে বিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাই এমন করেছে।”
“এমন হলে আমাদের বললেই পারতো।”
“হয়েছে এখন বাদ দাও।ওপরে গিয়ে প্রিয়ম ডাক দাও।ছেলেটা কখন থেকে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।”
“আমি কয়েকবার গিয়ে দরজা ধাক্কিয়েছি।কিন্তু ও খোলে নি।”
“আবার যাও।কখন থেকে না খেয়ে আছে।”
“যাচ্ছি”
এটা বলেই পায়েল চৌধুরী প্রিয়মের রুমে কড়া নাড়া শুরু করলো।প্রিয়ম দরজা খুলছে না।পায়েল চৌধুরী বাইরে থেকে বলছে”বাবু দরজা খোল।শোন!দরজাটা খোল।তোর বাবা আমি না খেয়ে আছি।আয় একসাথে খাবো।”
“তোমরা খেয়ে নাও মা।আমি খাবো না।”
“তুই না খেলে আমরাও খাবো না।”
মায়ের কথা শুনে প্রিয়ম বিরক্ত হয়ে বলল”আচ্ছা টেবিলে খাবার দাও।আমি আসছি।”
পায়েল চৌধুরী নিচে চলে গেলো খাবার বাড়তে আর প্রিয়ম শেরওয়ানি খুলে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো।তিনজনে একসাথে খাওয়া শুরু করতেই পায়েল চৌধুরী বললেন”বাবু মন খারাপ করিস না।তোকে আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো।”
“মা আর বিয়ের কথা বলবে না।আমার শিক্ষা হয়ে গেছে।আমি বিয়েই করবো না।সিঙ্গেলই মরবো।”প্রিয়ম রেগে জবাব দিলো।
প্রিয়মের কথায় ওর বাবা মা চুপ হয়ে গেলো।বোঝাই যাচ্ছে মেজাজ গরম হয়ে আছে।এই অবস্থায় কথা না বলাই ভালো
প্রিয়ম খাওয়া শেষ করে চলে গেলো নিজের রুমে।প্রিয়ম যাওয়ার পর প্রিয়মের বাবা বলল” এখন আর বিয়ের কথা তুলো না।”
“হ্যাঁ এটাই ঠিক হবে।”
“আচ্ছা মেয়েটার নাম যেনো কি ছিলো?ভুলে গেছি।” রাহাত চৌধুরী বললেন।
“নাহার।” পায়েল চৌধুরী বিরক্ত নিয়ে বলল।
“ও,আচ্ছা নাহারের মাকে কাল কল দিয়ে বলে দিয়ো আমাদের গহনা গুলো যেনো ফেরত দেয়।”
“তুমি কইরো।আমি পারবো না।” এটা বলে পায়েল চৌধুরী মুখ ভেঙচিয়ে চলে গেলো।
.
.
————
প্রণয় ঘুম থেকে উঠে দেখে অরুণী ঘুমিয়ে আছে।প্রণয় অরুণীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ডাকতে লাগলো”অরুনী!ওঠো।নামাজ পড়তে হবে।”
দুই তিনবার ডাকার পর অরুণী উঠে ফ্রেশ হয়ে আসলো তারপর দুজনে নামাজ পড়া শেষ করে সোফায় বসলো।প্রণয় অরুণীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল”আমি তোমাকে অরু বলে ডাকি?”
“ডাকুন।”
“হাঁটতে যাবে আমার সাথে?”
“আজ?আজ তো ঘরে অনেক মেহমান।কেউ দেখলে কি বলবে?”
“আচ্ছা তাহলে ছাঁদে চলো।”
“চলুন।”
অরুণী আর প্রণয় দুজনে ছাদের কিনারায় দাড়িয়ে রইলো সূর্য ওঠার অপেক্ষায়।এইদিনটার অপেক্ষা প্রণয় গত তিনবছর ধরে করছিলো! অবশেষে আজ পূর্ণ হলো।এবার থেকে জীবনের প্রত্যেকটা মুহুর্ত যেনো অরুণীর সাথে কাটে মনে মনে সেটাই চাইছে প্রণয়।
সূর্যের সোনালী আলো দুজন কপোত কপোতীর চোখে মুখে পড়ছে।আর তার উজ্জ্বল আলোতা তাদের চেহারা খুশি ঝলমল করছে।অরুণী মুচকি হেসে প্রণয়ের দিকে চেয়ে মনে মনে বলল”আমার তাকদিরে আপনিই ছিলেন এটা জানলে কখনোই আপনাকে কষ্ট দিতাম না তবে এবার থেকে সবসময় আপনার হাসি খুশির কারণ হয়ে থাকবো!
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)