#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ১৩
#Arshi_Ayat
দুদিন অরুণী ভার্সিটিতে যায় নি। আত্মীয় স্বজন অনেকেই ছিলো তাই আর যাওয়া হয় নি।আজ যেতে হবে একটা প্রেজেন্টেশন জমা দিতে হবে তাই।অরুণী রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো।
——————–
সাত আটবার হয়ে গেছে ফারাদিন প্রণয়কে কল করছে।কিন্তু প্রণয়ের খবর নাই।দুইদিন ধরে ভার্সিটিতে আসছে না।সারাদিন বাসায় বসে থাকে।একটা মেয়ের জন্য জীবন দিবে নাকি?ফারদিনের রাগ হচ্ছে।ফারদিন রাগে কটমট করছে।ওর চেহারার দিকে চেয়ে মিনহা বলল”কি রে কি হইছে তোর?এমন এ্যানাকন্ডার মতো ফোসফোস করছিস কেন?”
“প্রণয় ফোন ধরে না।আল্লাহই জানে কি করে।”
“আচ্ছা আরেকবার দে।এবার না ধরলে ওর বাসায় যাবো।”
“আচ্ছা।”
ফারদিন আরেকবার ফোন করতেই প্রণয় ফোন ধরলো।প্রণয় ফোন রিসিভ করতেই ফারদিন বলল”কি রে কই তুই?এতোবার ফোন দিলাম রিসিভ করিস নাই কেনো?”
“ফোন দিচ্ছিস কেনো সেটা বল?” প্রণয় থমথমে গলায় বলল।
“তুই ভার্সিটিতে আয়।”
“ভাল্লাগছে না।আসবো না।”
“আসলেই ভাল্লাগবে।তাড়াতাড়ি আয়।”
“আচ্ছা আসছি।”
“আচ্ছা।”
ফারদিন ফোন রেখে দিয়ে মিনহাকে বলল”প্রণয় আসছে।”
“প্রণয় অনেক কষ্ট পাচ্ছে রে।”
“হুম,তোরা মেয়েরা খালি কষ্ট দেস।”
“আমি আবার কি করলাম?”
“কি করিস নাই সেটা বল?কতোদিন ধরে বলতেছি চল বিয়েটা করে ফেলি।তোর তো কোনো আমল ই নাই।”
“এখন কিসের বিয়ে।পরীক্ষা শেষ হোক তারপর হলেই তো ভালো হয়।”
“তো এখন করতে সমস্যা কই?পরীক্ষার পরে করলেও আমাকে করবি।এখন করলেও আমাকে করবি।যেই লাউ সেই কদু।”
“হুম বুঝছি।”
“কি বুঝলি?”
“তুই একটা কদু।” এটা বলেই মিনহা হাসা শুরু করলো।ফারদিন ওর পিঠে কিল দিতে যাবে তার আগেই তুর্য এসে বলল”কি রে প্রণয়,সাথী ওরা আসে নি?”
“প্রণয় আসছে।আর সাথী এখনও আসে নি সিলেট থেকে।” ফারদিন বলল।
ফারদিন বলতে বলতেই প্রণয় চলে এলো।প্রণয় এসে ওদের সাথে বসতেই মিনহা বলল”প্রণয় তোর হায়াত আছে।আমার দাদি বলে যদি কারো নাম নেওয়ার সাথে সাথে সে হাজির হয়ে যায় তাহলে নাকি তার দীর্ঘ হায়াত আছে।”
“আমার আবার হায়াত!” কথাটা প্রণয় বিড়বিড় করে বললেও ওরা শুনতে পেলো।তুর্য প্রণয়ের কাঁধে হাত রেখে বলল”ছাড় তো!অনেকদিন তুই গান করিস না।আমাদের সবার জন্য আজকে গাইতে হবে।”
“না রে মুড ঠিক নেই।ভালো লাগছে না।”
“আরে তুই ওর কথা শুনছিস কেনো?তুই গিয়ে গিটারটা নিয়ে আয়।” ফারদিন তুর্যকে এটা বলতেই তুর্য চলে গেলো গিটার আনতে।
প্রণয় বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে বলল “বাড়াবাড়ি হচ্ছে কিন্তু ফারদিন।”
“হ্যাঁ তো কি হইছে?বাড়াবাড়ি আমরা করবো না তো কে করবে?”
প্রণয় আর কিছু বলল না।তুর্য গিটার এনে প্রণয়ের হাতে দিলো।প্রণয় গিটারে সুর তুলে গাওয়া শুরু করলো।
“এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম
বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দিবো তার সুরভী
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কি’বা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”
গানটা শেষ করে প্রণয় চোখ খুলতেই সবাই করতালি দিলো।ক্লাসমেট আর জুনিয়র রা তো মুগ্ধ।প্রণয় সবার দিকে তাকিয়ে একটু হেসে উঠে গেলো।এই হাসির অর্থ আর এই গান কাকে উদ্দেশ্য করা সেটা আর কেউ না জানলেও ওর বন্ধুরা জানে।দূরে দাড়িয়ে অরুণীও প্রণয়ের গান শুনছিলো।কি আশ্চর্য তাই না! গানটা যার জন্য গাওয়া হয়েছে তার মন ছুতে না পারলেও বাকি সবার মন ছুয়ে গেছে।
অরুণী ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে যেতে নিলে পিছন থেকে প্রণয় বলল”
“ওহে,কি করিলে বলো পাইবো তোমারে,
রাখিবো আখিতে আখিতে।”
অরুণী পিছনে তাকিয়ে দেখলো প্রণয় ওর পিছনে এসে দাড়িয়েছে।অরুণী ওর বাম হাতের অনামিকা আঙ্গুলটা তুলে ওর সামনে ধরে বলল”কাল আংটি বদল হয়ে গেছে।আর কিছুতেই পাওয়া সম্ভব না।”
প্রণয় মলিন হেসে বলল”সারাজীবনের জন্য অন্যকারো হয়ে যাচ্ছো।চাইলেই পারতে আমার হতে।আচ্ছা আমার মধ্যে কিসের কমতি ছিলো যে ভালোবাসা তো দূরের কথা করুণাও হলো না।করুণা করে হলেও কখনো ভালো করে কথা বলতে!কী পাপ করেছিলাম আমি যে আমাকে কষ্ট পেতে হচ্ছে!”
প্রণয় শার্টের হাতায় চোখ মুছে বলল”একটু রিকুয়েষ্ট করবো রাখবে?কখনো তো কোনো আবদার রাখো নি।এই আবদারটা রাখো প্লিজ”
“বলুন।”
“আজ আমার সাথে একটু থাকবে?আজই শেষ।এরপর আর আমি তোমাকে কোনোদিন বিরক্ত করবো না।”
অরুণী একটু ভেবে বলল”চলুন।”
—————-
রুহি সেই সকাল থেকে কাগজটা হাতে নিয়ে বসে আছে।কোনো অনুভূতি কাজ করছে না।মাথাটা ফাঁকা হয়ে গেছে।
সকালে যখন রুহি নাস্তা করছিলো তখন কুরিয়ারের একজন লোক এসে দিয়ে গেলো এটা।রুহি খাম খুলতেই দেখতে পেলো ডিভোর্স পেপার।সেই তখন থেকেই এটা নিয়ে বসে আছে নিজের রুমে।
রুহি পেপারটা টেবিলের ওপর রেখে ওয়াশরুমে গিয়ে মুখ ধুয়ে আসলো।তারপর একটা কলম নিয়ে কাগজ টায় সাইন করে দিলো।এটাই বাকি ছিলো আজ এটাও হয়ে গেলো।রুহি কাগজে সাইন করে কাগজটা নিয়ে বাইরে এসে মায়ের হাতে কাগজটা দিয়ে বলল”এটা বাবাকে দিয়ে দিও।বলে দিও পোস্ট অফিসে দিয়ে আসতে।”
“সাইন করেছিস?”
“হ্যাঁ।”
বলেই রুহি নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।জানালার কাছে গিয়ে দাড়িয়ে রইলো আপন দৃষ্টি মেলে।নিজেকে একলা লাগছে আজকাল।মনে হচ্ছে চারপাশে কেউ নেই!কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।খেতে ইচ্ছে করে না।ঘুমাতেও ইচ্ছে করে না।মন শুধু শান্তি চায়!কিন্তু হায়,শান্তি যে কোথাও নেই!
————————
আকাশ নাতাশার কেবিনে এসে দেখলো ও কিছু একটা লিখছে।আকাশকে দেখে বলল”বসো।”
আকাশ বসতেই নাতাশা বলল”ডিভোর্স লেটার পাঠিয়েছো?”
“হ্যাঁ আজই পাঠালাম।”
“গুড।”
“তাহলে আমরা বিয়ে কবে করছি?”
“আরে এতো চাপ নিচ্ছো কেন?করবো তো বিয়ে।এতো জলদি কেনো?”
“আর কতো সময় লাগবে নাতাশা?অনেকদিন ধরে তুমি এগুলো বলছে।এবার বিয়ে করতে হবে।”
“ঠিকাছে তুমি তোমার বাবা মাকে আমার বাসায় পাঠিয়ো।আব্বু আম্মু মেনে নিলে বিয়ে হবে।”
“মানে কি?আব্বু আম্মু না মানার কথা আসছে কেন?আর না মানলে কি তুমি আমায় বিয়ে করতে পারবে না?”
“না।”
আকাশের রাগ উঠছে খুব।আকাশ রেগে কেবিন থেকে বের হতেই নাতাশা হাসতে লাগলো
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)