#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্বঃ০৭
#Arshi_Ayat
সারাদিন আকাশ লকাপে ছিলো।নাতাশা বা অন্যকেউ আসে নি তাকে ছাড়াতে।আকাশের রাগ লাগছে প্রচন্ড।এই রুহির জন্য সব হয়েছে।রাগে মাথার ভেতরের রগ গুলো দপদপ করছে।আকাশ সামনে তাকিয়ে দেখলো প্রিয়ম চা খাচ্ছে আর কি একটা ফাইল ঘাঁটছে।আকাশে প্রিয়মের দিকে চেয়ে দাত কিড়মিড়িয়ে বলল”এই শালা যদি আজ ওইখানে না থাকতো তাহলে ওই মা** বাচ্চা যে কই যাইতো।”
আকাশের প্রচুর আফসোস হচ্ছে।আর এখনতো কাউকে খবরও দিতে পারছে না।কতক্ষণ আর এখানে থাকবে!এখন প্রায় বিকেল।আজকে সারাদিনে কিছু খাওয়াও হয় নি।ইশ!যদি একবার নাতাশাকে ফোন করা যেত!এগুলোই মনে মনে ভাবছে আকাশ।
——————
রুহি আর অরুণী রিকশা করে ঘুরছে।দুজনেরই রিকশায় ঘুরতে ভালো লাগে।শেষ বিকেলের উচ্ছল বাতাসে অরুণীর চুলগুলো উড়ছে।পাশে রুহির চুলগুলো খোপায় থাকার কারণে তার চুলগুলো উড়ছে না।অরুণী এটা দেখে চুপিচুপি রুহির খোপাটা খুলে দিলো।রুহি ভ্রু কুচকে বলল”খোঁপা খুললি কেনো?”
“আমার চুল একা উড়বে কেনো?তোর গুলিও আমার গুলোর সাথে উড়বে।”
রুহি বিরক্ত কন্ঠে বলল”অরু খোপাটা দে চুল বাঁধবো।”
অরুণী অনুরোধের সুরে বলল”প্লিজ”
অরুণীর অনুরোধে রুহি আর চুল বাধলো না।এবার দুজনের চুলই লাগামহীন ভাবে উড়ছে।রাস্তার পাশে ফুচকার দোকান দেখে অরুণী রিকশা থামিয়ে রিকশা থেকে নেমে বলল”ফুচকা খাবি?”
“হুম,চল।”এই বলে রুহিও রিকশা থেকে নামলো।ওরা রিকশা ওয়ালার ভাড়া মিটিয়ে দিলো।এখন দুজনে ফুচকে খেয়ে আশেপাশে একটু ঘুরবে।
অরুণী ফুচকার দোকানে গিয়ে বলল” মামা দুইপ্লেট ফুচকা দেন।একটায় ঝাল বেশি আরেকটায় কম দিবেন।”
অরুণীর অর্ডার দেওয়া শেষ হতেই কে যেনো বলল”মামা আমাদের পাঁচ প্লেট ফুচকা দেন।ঝাল ইচ্ছামতো দিবেন।”
অরুণী ঘুরে যেই বলবে তাড়াতাড়ি দিতে তখনই দেখলে প্রণয় দাড়িয়ে আছে।প্রণয়ও অরুণীকে দেখে কিছুটা অবাক হলো।যে মেয়ে এতো গম্ভীর হয়ে থাকে সে যে ফুচকাও খেতে পারে তা প্রণয়ের জানা ছিলো না।কিন্তু ও দুইপ্লেট কার জন্য নিচ্ছে?প্রণয় পাশে খেয়াল করতেই দেখলো একটা ছেলে পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রণয়ের জায়গা থেকে দেখলে মনে হয় ওরা দুজন একসাথে কিন্তু না ছেলেটা ফুচকার জন্য দাড়িয়েছে আর অরুণী ছেলেটার পিছনে দাড়ানো রুহির জন্য আরেক প্লেট নিচ্ছিলো যা প্রণয় বুঝতে পারে নি।প্রণয়ের এই প্রথম রাগ হলো অরুণীর ওপর।এর আগে অরুণীর ব্যাবহারে কষ্ট হতো,অভিমান হতো কিন্তু কখনো রাগ হয় নি এই প্রথমবার প্রণয়ের রাগ হলো।প্রণয় কিছু না বলে একটু দূরে দাড়ানোর ওর বন্ধুদের কাছে গিয়ে দাড়ালো।বন্ধুরা দেখেই বুঝতে পারলে ওর কিছু হয়েছে।তা নাহলে ও এমন গাল ফুলিয়ে রাখারা মানুষ না।সাথী জিজ্ঞেস করলো”কি রে ভাই!এভাবে গাল ফুলিয়ে রেখেছিস কেনো?”
প্রণয় মন খারাপ করে বলল”জানিস আগে ভাবতাম অরুণী বোধহয় ভালোবাসা বিশ্বাস করে না।এইজন্যই এমন করে কিন্তু আজ পরিস্কার ওর বয়ফ্রেন্ড আছে বলেই ও এমন করে।”
প্রণয়ের কথা শুনে ফারদিন,সাথী,মিনহা,তুর্য সবার মুখ হা হয়ে গেছে।কেউই বিশ্বাস করতে পারছে না।মিনহা প্রণয়কে বলল”তুই কিভাবে জানলি যে ওর বয়ফ্রেন্ড আছে।”
“ওই যে ফুচকার দোকানে দাড়িয়ে দুজনে ফুচকা খাচ্ছে।”
“কিহ!”ফারদিন বিষ্ময়ে বলল।
প্রণয় বন্ধুদের এমন রিয়েকশন দেখে বলল” বিশ্বাস হচ্ছে না চল তোদের দেখাই।”
প্রণয় ওদের নিয়ে ফুচকার দোকানের সামনে যেতেই দেখলো অরুণী আর আরেকটা মেয়ে একসাথে দাড়িয়ে হাসাহাসি করতে করতে ফুচকা খাচ্ছে।আশেপাশে কোনো ছেলে নেই।এই দৃশ্য দেখে বন্ধুরা প্রণয়ের দিকে যেভাবে চাইলো তা দেখেই প্রণয় ঢোক গিলে বলল”বিশ্বাস কর আমি একটু আগেই দেখেছি।কিন্তু! ”
ফারদিন হতাশ গলায় বলল”দোস্ত তোকে ডাক্তার দেখাতে হবে তুই মেয়েকে ছেলে দেখিস।”
সাথী ভয় পাওয়ার ভান করে বলল”এই প্রণয় তুই আমাদের কে কি ঠিক ঠাক দেখতে পাচ্ছিস?নাকি আমাদেরও উল্টা পাল্টা দেখছিস?”
“প্রণয় মনে হয় তুই ভুল দেখেছিস।হয়তো যে ছেলেটি অরুণীর সাথে দাড়িয়েছিলো ও ওর কেউ না।হয়তো ফুচকা কিনার জন্য দাড়িয়েছিলো।”
তুর্যের কথায় সবাই সমর্থন করলো আর প্রণয়ও নিজের বলদামি ধরতে পেরে আবুল মার্কা হাসি দিলো ওর হাসি দেখে ওর বন্ধুরাও হেসে দিলো।হাসতে হাসতে মিনহা বলল”যা কথা বলে আয়।”
“না রে।এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না।তার ওপর এখন দেখেই বোঝা যাচ্ছে মুড ভালো।তাই এখন গিয়ে মুডটা খারাপ করার কোনো দরকার নেই।”
তারপর পাঁচজন মিলে ফুচকা খাওয়া শুরু করলো।এদিকে রুহি আর অরুণী ফুচকা খাওয়া শেষ করে ফুটপাত ধরে হাটতে লাগলো দুজনে দুজনের হাত ধরে।
কিছুদূর যেতেই ছোটখাটো একটা মেলা দেখতে পেলো।দুজনেই মেলায় গেলো।মেলায় কিছুক্ষণ ঘুরে বেরিয়ে এলো।এতক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।বাসায় ফেরা উচিত।অরুণী রুহিকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজের বাসায় চলে গেলো।
———————-
প্রিয়ম একটা ফাইল দেখছিলো খুব মনোযোগ দিয়ে।হঠাৎ নাতাশা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বলল”আকাশা কেথায়?”
নাতাশা আচমকা কথার আক্রমনে প্রিয়মের মনোযোগ নষ্ট হলো সে বিরক্তিতে মুখ কুচকে সামনের দিকে চাইতেই দেখলো একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।প্রিয়ম চেয়ার দেখিয়ে বলল”বসুন।”
“বসতে আসি নি।আগে বলুন আকাশ কোথায়?”
“আপনার আর আমার মাথার ওপরে।” প্রিয়ম একটু মজা করে উত্তর দিলো।কেনো যেনো প্রিয়মের নাতাশাকে ক্ষেপাতে মন চাইছে।নাতাশার বিষয়ে সব তথ্যই নিয়েছে প্রিয়ম।
প্রিয়মের মন হেঁয়ালিপূর্ণ কথা শুনে রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে নাতাশার।নাতাশা বিরক্তি কন্ঠে বলল”আমি হেয়ালি একদম পছন্দ করি না।আপনি বলবেন আকাশ কোথায়?”
“বললামই তো।”
“আপনি আমাকে চেনেন না।আমি চাইলে এই মুহুর্তে আপনাকে চাকুরীচ্যুত করতে পারি।”
প্রিয়ম কিছুটা ভয় পাওয়ার ভান করে বলল”ওহ!আমি ভয় পেয়েছি।প্লিজ আমার চাকরী খাবেন না।”
এটা বলে একটা বিদঘুটে হাসি দিয়ে বলল”মিস নাতাশা হাসান।আপনাকে আমার চেনার প্রয়োজন নেই।আর আমার চাকরী আপনি পারলে খেয়ে দেখান।উপরন্তু আপনাকে এখন আমি জেলে পুরতে পারি।”
“কেনো?”
“এই যে জেলে বসে আমাকে থ্রেড দেওয়ার অপরাধে।”
“এসব বাদ দিন এখন বলুন আকাশকে কখন ছাড়বেন?”
“উকিল নিয়ে আসুন।”
“ওর ওপর কি অভিযোগ আনা হয়েছে?”
“নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগ।”
“কোনো প্রমাণ ছাড়াই এরেস্ট করেছেন কেনো?’
“প্রমাণ যখন আমি নিজে তখন এক্সট্রা প্রমানের প্রয়োজন নেই।”
নাতাশা দাঁত কিড়মিড় করে উঠে বাইরে গিয়ে ওর উকিল বন্ধুকে কল করে আসতে বলল।
————————
রুহি বাসায় ঢুকেই দেখলো একটা মহিলা বসে আছে সোফায়।মুখোমুখি সোফায় ওর মা ও বসে আছে।মহিলাটা রুহিকে দেখে বলল”তুমিই রুহি?”
রুহি নিজের মায়ের দিকে এক পলক চেয়ে বলল”হ্যাঁ।”
“বসো।”
রুহি ওর মায়ের পাশেই বসে পড়লো।মহিলাটা রুহিকে বলল”মাথা গরম করলে হবে না।স্বামীকে বোঝাও।জানো তো মেয়েদের বিয়ের পর স্বামীই সব।স্বামী মারুক কাটুক স্বামীর বাড়িই আপন।আর স্বামী রাগ করলে রাগ ভাঙাতে হয়।”
রুহির প্রচন্ড রাগ হলো।তবুও সামলে নিয়ে বলল”কিন্তু পরকিয়া করলে কি করবো?”
“আরে ছেলে মানুষ একটু এমনই।আর তোমার সমস্যা কি? ছেলেরা দুই বিয়ে করতেই পারে।তোমারে ঠিকমতো ভরণপোষণ দিতে পারলেই তো চলে।”
“হ্যাঁ ছেলেরা পরকিয়া করতে পারবে,বউ পেটাতে পারবে,বাচ্চা নষ্ট করতে পারবে কিন্তু মেয়েদের প্রতিবাদ করা যাবে না।মুখবুজে সহ্য করতে হবে।তারপর এমন সহ্য করতে করতে একসময় কবরে চলে যাবে।এই হলো মেয়েদের জীবন।কেনো?সবসময় সেক্রিফাইস মেয়েরাই কেনো করবে?আর আপনাদের মতো মায়েদের জন্য আমাদের মতো মেয়েরা এসব অত্যাচার সহ্য করতে হয়।কারণ বিয়ের আগে বলে দেওয়া হয় জামাই যেভাবে বলবে সেভাবে চলবি।জামাইর সেবা করবি।কেনো?সবসময় আমরাই কেনো ওদের কথামতো চলবো?ওদের সেবা করবো?আমরাও তো মানুষ আমাদেরও তো আদর যত্ন পেতে ইচ্ছে করে।কিন্তু…
রুহি আর কিছু বলতে পারলো না কান্না করে দিলো।তারপর দ্রুত একহাত দিয়ে চোখের পানি মুছে বলল”আমাকে যা জ্ঞান গুলো দিলেন সেগুলো আপনার মেয়েকে দিয়েন।এই জ্ঞানের আমার প্রয়োজন নেই।” কথাগুলো বলে রুহি হনহন করে উঠে চলে গেলো।
রুহির কথাগুলো শুনে মহিলার অপমানে মুখ কালো হয়ে গেলো।তাই সেখানে আর বসে না থেকে চলে গেলেন।মহিলাটা যেতেই রুহির মা রুহির কাছে গিয়ে দেখেন রুহি বালিশে মুখ গুঁজে আছেন।
রুনা বেগম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মেয়ের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
চলবে….
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।)