#এই মন তোমাকে দিলাম (চতুর্থ পর্ব)
#ঈপ্সিতা মিত্র
কথাটা শুনে স্পন্দন এবার সঙ্গে সঙ্গেই বললো,
——” হিয়া প্লিজ! আমরা কাজ করি একসাথে। এর বাইরে আর কিছুই না।”
এটা শুনে হিয়া কিরকম বেসামাল হয়েই বললো,
——” শুধু কাজ! সারা ইউনিভার্সিটি তোমাদের নিয়ে কথা বলে। আর সুচেতাদি তো মনে হয় ম্যাগনেট এর মতন সঙ্গে থাকে তোমার! এক সেকেন্ডের জন্যও ছাড়ে না।”
এই কথায় স্পন্দন এবার বেশ রেগেই বললো,
——” হিয়া জাস্ট স্টপ ওকে! সুচেতার ব্যাপারে যা ইচ্ছে তাই বলবি না তুই! কতটা চিনিস তুই সুচেতা কে? ও কি লেভেলের ডিভোটেড নিজের কাজের প্রতি, তোর কোন আইডিয়া আছে!”
এই কথায় হিয়ার ধৈর্য্য যেন কেমন শেষ হয়ে গেল হঠাৎ। ও আর নিজের রাগটাকে আড়াল না করে বললো,
——-” সুচেতাদির ব্যাপারে এত সেনসিটিভ তুমি? মানে ওকে কিছু বললে এত খারাপ লাগে তোমার! মানে সত্যি, কদিন এসেই কতটা নিজের জায়গা করে নিয়েছে মেয়েটা তোমার লাইফে! তাই আর বাকি কেউ ইম্পর্টেন্ট ই না। কারোর আর কোন দাম নেই তোমার কাছে!”
কথাগুলো কিরকম এক নিঃশ্বাসে বলেছিল হিয়া। আর তখনই ফোনটা হঠাৎ বেজে উঠেছিল স্পন্দনের। স্ক্রিনে সুচেতার নাম্বার। স্পন্দন এটা দেখে ফোনটা ধরে অল্প কথায় বলেছিল,
——-” আমি পরে কথা বলছি তোমার সাথে সুচেতা। এখন একটু ব্যাস্ত আছি।”
কথাটা বলেই ও ফোনটা রাখতে যাচ্ছিল, কিন্তু এই মুহূর্তে হঠাৎ হিয়ার যেন সব ধৈর্য্য শেষ হয়ে গেছিল কেমন। ও রাগে ভীষণ অস্থির হয়েই স্পন্দনের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলেছিল সুচেতা কে,
——-” হ্যালো, আমি হিয়া বলছি। তুমি কি একটা সেকেন্ডও একা ছাড়তে পারো না স্পন্দনকে! তোমার কি চব্বিশ ঘণ্টা ওকে দরকার! সারাক্ষণ স্পন্দনের আসে পাশে না ঘুরলে হচ্ছে না! এতটা ভালোবেসে ফেলেছ না কি ওকে?”
কথাগুলো কেমন ঘোরের মধ্যে বলেছিল ও। কিন্তু স্পন্দন তাড়াতাড়ি হিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বেশ চেঁচিয়ে বলে উঠেছিল,
——” জাস্ট শাট আপ… চুপ কর তুই।”
কথাটা বলেই ও সুচেতার ফোনটা কেটে দিয়েছিল সঙ্গে সঙ্গে। তারপর প্রচণ্ড রেগে বলেছিল হিয়াকে,
——-” তুই কি মনে করিসটা কি নিজেকে! যাকে যা খুশি তাই বলে দিবি! আসলে আমারই ভুল। আমিই তোকে তোর লিমিটটা বোঝাইনি কখনো। আমি ভাবতে পারিনি আসলে যে তুই লোকের সাথে এতটা মিসবিহেভ করতে পারিস! এন্ড আই হেট ইউ ফর দিজ.. আর সুচেতার মতন ব্রিলিয়ান্ট, এডুকেটেড একটা মেয়ের সাথে কথা বলার আগে দশবার ভাববি। তোর জন্য আজ আমি খুব ছোট হয়ে গেলাম ওর কাছে! রিয়ালি.. এন্ড আই উইল নেভার ফরগিভ ইউ ফর দিজ..”
কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই স্পন্দন আর দাঁড়ালো না এই মুহূর্তে। ছাদটাকে খালি করে দিয়ে চলে গেল হিয়ার সামনে থেকে। কিন্তু হিয়া এক পা ও এগোতে পারলো না এখন! মনে হলো হঠাৎ নিজের জায়গাটা বুঝে গেছে ও। স্পন্দনের সামনে সত্যিই আজ নিজের লিমিট ক্রস করে দিয়েছিল মনে হয়! তাই নিজের ভালোবাসার জন্য এতটা ছোট হতে হলো ওকে। তবে আর না। এতগুলো বছর ধরে যেইভাবে এই ছেলেটাকে নিজের মনে আগলে রেখেছে, সেটা আজ শেষ। আর এইভাবে এক তরফা ভালোবাসবে না হিয়া! আর স্পন্দনের জন্য অপেক্ষা করবে না নিজে থেকে। যে ওর না, যে এতদিনেও হিয়ার মন বোঝেনি, তাকে আর নতুন করে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করবে না হিয়া। আর আজকের ভুলটাও শুধরে নেবে ও। নিজে গিয়ে ক্ষমা চাইবে সুচেতার কাছে।
<৭>
সেদিন এই ভাবনার ভিড়েই রাতটা কেটেছিল হিয়ার। পরেরদিন তাই ইউনিভার্সিটির ক্লাস শেষে ও দেখা করেছিল সুচেতার সাথে। সুচেতা সেই সময় ক্যান্টিনে এসেছিল লাঞ্চ করার জন্য। সঙ্গে ল্যাবের অনেকেই ছিল। সেই সময় হিয়া ওকে খুঁজতে খুঁজতে এসেছিল ক্যান্টিনে। আজ হিয়া নিজে থেকে সুচেতার কাছে গিয়ে বলেছিল,
——” সুচেতাদি, একটু শুনবে। তোমার সাথে কথা আছে কিছু!”
এই কথায় সুচেতা বেশ গম্ভীর হয়ে বলেছিল,
—–” আমার সাথে কথা! কিন্তু আমি তো তোমাকে সেই স্ট্যান্ডার্ডের মনে করি না, যার সাথে গিয়ে আলাদা করে কথা বলা যায়! যা বলার, এখানেই বলো। সবার সামনে।”
কথাগুলো ইচ্ছে করেই বেশ জোরে বলেছিল সুচেতা সেদিন। আসলে কাল রাতে ফোনে যেই অপমানটা পেয়েছে ও, সেটাই ফেরৎ দিচ্ছিল হিয়াকে, আরো বেশি তীব্র ভাবে।
কিন্তু হিয়া এই মুহূর্তে বেশ থমকেই বলেছিল,
——-” আই এম সরি সুচেতাদি। কাল আমি যেইভাবে তোমার সাথে বিহেভ করেছি! ওইভাবে কথা বলা উচিত হয়নি আমার। রিয়ালি সরি.. এটাই বলার ছিল।”
কথাগুলো সবার সামনেই বলেছিল হিয়া। এই সময় ক্যান্টিনের অনেকেই নিজের খাওয়া থামিয়ে এই তামাশা টা দেখছিল বসে বসে। তখনই সুচেতা বেশ তীক্ষ্ণ স্বরে বললো,
——-” আসলে কি বলো তো, কারোর কথাবার্তা শুনে তার স্ট্যান্ডার্ড, এডুকেশন, কালচার, এইসব বোঝা যায়। আর কাল তোমার কথা শুনেই আমি বুঝেছি তুমি ঠিক কি টাইপের! আর এই লোক দেখানো সরিটা, তুমি নিজের কাছেই রাখো। এইসব নাটক প্লিজ আর আমার সামনে করতে এসো না। ওকে, নাও লিভ..”
কথাটা শুনে হিয়া আর কোন উত্তর দিল না ঠিক! আসলে এই মুহূর্তে আশেপাশের লোকজন ওরই দিকে তাকিয়েছিল হাঁ করে। সবাই দেখছিল হিয়াকে নিয়ে এই তামাশাটা। সুচেতা যেইভাবে ছোট করলো, অপমান করলো আজ হিয়া কে, সেটা খোরাক ছাড়া আর কি! তাই সবাই মজা নিচ্ছিল এই সিনটার। হিয়া এটা বুঝে আর দাঁড়াতে পারলো না এখানে! তাড়াতাড়ি ক্যান্টিনের দরজার দিকে ফিরলো, কোনভাবে সবার সামনে থেকে নিজেকে আড়াল করে বেরোনোর জন্য। কিন্তু তখনই হঠাৎ স্থির হয়ে গেল যেন! ওর ঠিক পিছনে স্পন্দন দাঁড়িয়ে। হিয়ার দিকে কিরকম নিস্পলক ভাবে তাকিয়ে আছে ও। হয়তো শুনেছে এতক্ষণ ধরে সুচেতার কথাগুলো! কিন্তু হিয়ার আর এই ছেলেটার সাথে কোন কথা নেই আজ। আসলে কিরকম লজ্জা লাগছে যেন নিজের ওপর! নিজের এক তরফা ফিলিংস গুলোর জন্য এইভাবে সবার সামনে, স্পন্দনের সামনে এতটা ছোট হতে হলো ওকে! কাল স্পন্দন, আর আজ সুচেতা, দুজনেই যেন খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিল ওর লিমিট, ওর স্ট্যান্ডার্ড কি! তাই আর এক সেকেন্ডও এখানে না দাঁড়িয়ে হিয়া জোরে পা চালালো। তারপর স্পন্দনকে অদেখা করেই বেরিয়ে গেল ক্যান্টিন থেকে। কিন্তু স্পন্দন এবার সুচেতার কাছে এসে দাঁড়ালো ভীষণ স্থির ভাবে। সুচেতা এই মুহূর্তে ওকে দেখে কিরকম এলোমেলো হয়েই বললো,
——-” তুমি! তুমি কখন এলে! তুমি তো ন্যাশনাল লাইব্রেরী গেছিলে? ”
এই কথায় স্পন্দন এবার বেশ কঠিন স্বরেই বলে উঠলো,
——-” হ্যাঁ, গেছিলাম। কিন্তু ঠিক সময়েই ফিরে এসেছি। নইলে তোমার এই বিহেভিয়ারটা দেখতে পেতাম না! হিয়া তোমার কাছে নিজে থেকে শুধু সরি বলতে এসেছিল, আর তুমি হিয়াকে এইভাবে ইনসাল্ট করলে সবার সামনে! এতটা ছোট করলে! সিরিয়াসলি শেম অন ইউ..”
কথাগুলো বলে স্পন্দন আর কিছু শোনার অপেক্ষা করেনি সেইদিন। প্রচণ্ড রাগে বেরিয়ে এসেছিল ক্যান্টিন থেকে। কিন্তু আজ ও বাইরে এসে হিয়াকে খুঁজছিল চারিদিকে। আসলে কাল রাগের মাথায় অনেক কিছু বলে ফেলেছে! তার ওপর সুচেতাও সবার সামনে এইভাবে ইনসাল্ট করলো মেয়েটাকে! সত্যি, হিয়া প্রচণ্ড হার্ট হয়েছে এইসবে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই ক্যাম্পাসের এদিক ওদিক ঘুরছিল ও, হিয়ার খোঁজে। তখনই হঠাৎ চোখে পড়লো একটা চেনা মুখ! যদিও মেয়েটার নাম জানে না ও। তবে হিয়ার সঙ্গে দেখেছে অনেকবার। ওদেরই ক্লাসের হবে! কথাটা ভেবেই স্পন্দন নিজে থেকে মেয়েটার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করেছিল,
——-” হিয়া তোমাদের সাথেই পড়ে না? জানো ও কোথায়?”
এই কথায় মেয়েটা সহজভাবেই বলেছিল,
——” হিয়া তো বেরিয়ে গেছে ক্যাম্পাস থেকে। এই কিছুক্ষণ আগেই বাস ধরবে বলে গেল!”
কথাটা শুনে স্পন্দন আর কিছু বললো না ওকে। শুধু কেমন ফাঁকা লাগলো যেন ভেতরটা আজ! হিয়ার সাথে এই মুহূর্তে দেখা হবে না, এটা ভেবে। আসলে হিয়া ওর সেই আট বছর আগের বন্ধু। শুধু বন্ধুই না, স্পন্দন ওর গার্জেনও বলা যায়! সম্পর্কটা ওদের অনেক পুরনো। তাই হয়তো হিয়ার একটা অধিকারবোধ আছে ওর ওপর! সেই জন্য কাল জন্মদিনে স্পন্দনের অপেক্ষা করছিল সারাদিন ধরে! তাই ওকে অতো রাতে দেখে রিয়্যাক্ট করে ফেলেছে মেয়েটা কিছু না ভেবে। এমনকি ও তো পায়েসও বানিয়ে দিয়ে গিয়েছিল সেই সকাল সকাল! তারপরও স্পন্দন ওকে একটা মেসেজ অব্দি করেনি সারাদিনে! সেই জন্যই হয়তো রেগে ছিল খুব। স্পন্দনের কথাগুলো মনে হলো হঠাৎ। আর নিজের ওপরই রাগ হলো কেমন। মনে হলো হিয়ার নরম মনে অনেক বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে! আর একটু বুঝে কথা বলা উচিত ছিল কাল।
<৮>
বুঝে কথা বলা, মেপে চলার অভ্যেস যে হিয়ারও করা উচিত, এটা আজ ভীষণ ভাবে মনে হচ্ছে ওর। ক্যান্টিনে সবার সামনে সুচেতার বলা কথাগুলো কানে বাজছে যেন বার বার! মনে হচ্ছে ওই অপমান থেকে, ওই শব্দ গুলো থেকে পালিয়ে যেতে হবে দূরে কোথাও! সেদিন এই ভাবনার ভিড়েই হিয়া ব্যাগ গোছাচ্ছিল নিজের। আসলে এখন কদিন স্পন্দনের মুখোমুখিও হতে চায় না ও! কিন্তু একই পাড়ায় থাকলে সেটা অসম্ভব। তাই কদিনের জন্য নিজের সব থেকে কাছের মানুষের ঠিকানায় চলে যাবে হিয়া; মাসির বাড়ি। সেই মতন মা বাবাকেও বলা হয়ে গেছিল সকালে।
আসলে নিউ আলিপুরের ফ্ল্যাটটায় সুকন্যা, মানে হিয়ার মাসি একাই থাকে। বিয়ে করেননি উনি। চাকরি থেকেও এই আগের বছর রিটায়ার করে গেছে! এখন শুধু ফ্ল্যাটের ছাদে বাগান করাটাই একমাত্র হবি। সেটা নিয়েই বেশির ভাগ সময়টা কেটে যায়। তবে এই সুকন্যার সব থেকে কাছের মানুষ হলো হিয়া। হিয়া জন্ম থেকেই ওর নিজের মেয়ের মতন। তাই হিয়ার ছোট বড় আবদার মেটানো, হিয়াকে এনে নিজের কাছে রেখে দেওয়া, এইসব করতো সুকন্যা প্রথম থেকেই। যাইহোক, হিয়া আজ সেই মাসির কাছে এসেছিল যখন, তখন সন্ধ্যে নেমে গেছে শহরে। তবে সুকন্যার আজ হিয়াকে দেখে একটু অন্য রকম লেগেছিল যেন! ওই হাসি খুশি মেয়েটার বদলে কেমন থমকে থাকা হিয়া এসেছে আজ ওর কাছে! কথাটা ভেবেই ও রাতের দিকে গেছিল হিয়ার ঘরে। আসলে এই ফ্ল্যাটে একটা ঘর অনেক বছর ধরেই হিয়ার জন্য রাখা। যাইহোক, হিয়া আজ এই ঘরে অন্ধকারের ভিড়ে বসেছিল চুপচাপ। আসলে সকালের অপমানটা, কালকে স্পন্দনের কথাগুলো, কেমন বার বার মনে পড়ছে ওর! সেই জন্যই চুপ হয়ে আছে ভীষণভাবে। এইসবই ভাবছিল, তখনই সুকন্যা ওর কাছে এসে বললো,
——” কি হয়েছে তোর? আমাকে কি বলবি!”
এই প্রশ্নে হিয়া যেন নিজের চিন্তার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো হঠাৎ! তারপর কিছুটা গুছিয়ে নিয়ে বললো, ——-” কি হবে আমার! কি যে বলছো! কিছু হয়নি তো।”
এই কথায় সুকন্যা বেশ দৃর গলায় বললো,
——” মাসি আমি তোর। ছোট থেকে চিনি। খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি কিছু তো একটা হয়েছে, সেই জন্য এইভাবে মুখ কালো করে বসে আছিস। স্পন্দন কিছু বলেছে?”
সব কথার মাঝে এই শেষ কথাটায় হিয়া যেন কিছুটা এলোমেলো হয়ে বললো,
——-” স্পন্দন! ওই নামটা কোথা থেকে এলো! আর আমার সাথে ওর সম্পর্ক কি যে ওর জন্য আমার মন খারাপ হবে!”
কথাগুলো যেন নিজের মনকে বিশ্বাস করানোর জন্যই বললো হিয়া। তবে এইসব শুনে সুকন্যা এবার বেশ কনফিডেন্সের সাথেই বললো,
——-” বুঝতে পেরেছি। তার মানে স্পন্দনের সাথেই!”
ওর কথাটাকে শেষ হতে না দিয়েই হিয়া এবার বললো বেশ রেগে,
——-” মাসি প্লিজ! আমি এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না।”
এটা শুনে সুকন্যা খুব অবাক হয়ে বললো,
——” কি বলছিস! কথা বলতে চাস না! কিন্তু আগে তো শুধু ওই একজনের গল্পই করতিস সারাক্ষণ আমার কাছে এসে।”
কথাটায় হিয়া এবার কেমন স্থির স্বরে বললো,
——” ভুল করতাম। আর করবো না।”
না, এই কথাটা শুনে সুকন্যাও আর কোন কথা বাড়ায়নি এই ব্যাপারে নিজে থেকে। আসলে হিয়ার থমকে থাকা গলার আওয়াজই বলে দিচ্ছিল সবটা! কিছু একটা বদলে গেছে হিয়ার মনে। তাই এইভাবে একা হয়ে গেছে মেয়েটা!
কিন্তু সেদিনের পর আরেকজনও একা হয়ে গেছিল হঠাৎ। আসলে স্পন্দন ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরে সোজা গেছিল হিয়াদের বাড়ি। কিন্তু সেখানে গিয়ে শুনেছিল হিয়া নেই। মাসির বাড়ি গেছে। এখন কদিন ওখানেই থাকবে! কথাটা শুনে কিরকম ফাঁকা লেগেছিল যেন স্পন্দনের। ও তখনি হিয়ার নাম্বারটা ডায়েল করেছিল ফোনে। আজ যেইভাবে সুচেতা ওর সাথে কথা বলেছে সবার সামনে, তার জন্য হিয়া হার্ট হয়েছে হয়তো খুব। তার ওপরে কাল স্পন্দনের ব্যবহারেও তো খারাপ লেগেছে ওর! কথাগুলো ভেবেই ফোন করছিল স্পন্দন হিয়াকে। কিন্তু আজ আর ফোনটা ধরলো না কেউ! কয়েকবার রিং হয়ে কেটে গেল নিজে থেকে! তারপর স্পন্দন আরেকবার ফোন করতেই শুনতে পেল মোবাইলটা সুইচ অফ হয়ে গেছে। সেই মুহূর্তে স্পন্দন বুঝলো হিয়া ইচ্ছে করেই বন্ধ করে দিয়েছে মোবাইল, যাতে পুরোপুরি ভাবে কথাহিন হয়ে থাকা যায় স্পন্দনের সাথে।
সেদিনের পর স্পন্দন রোজই ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে হিয়ার। কিন্তু সেখানেও মেয়েটার দেখা পায়নি ও। তবে দুটো তিনটে দিনের পর স্পন্দনের সত্যিই কেমন অস্থির লাগতে শুরু করলো যেন! হিয়া কিরকম অদৃশ্য হয়ে গেছে হঠাৎ ওর কাছ থেকে, নিজের সমস্ত কথা, সমস্ত গল্প, রাগ অভিমান নিয়ে। কথাগুলো যেন ভীষণ ভাবে মনে হতে শুরু করলো স্পন্দনের, আর চারিদিকটা খালি হয়ে যেতে থাকলো রোজ একটু একটু করে।
চলবে,,