#ঋতুর_স্মৃতি
#সিজন_২
#পর্ব_০৭_শেষ
#Jechi_Jahan
আজ আমার দ্বিতীয় বার বিয়ে হচ্ছে তাও ঘরোয়া ভাবে।আগেরবার বিয়েতে মত ছিলো না কিন্তু এবারে মত আছে।বাবা আগের বিয়েতে কোনো কমতি রাখেনি কিন্তু এবার বাবা এমন ঘরোয়া বিয়ে দেখে খুব কষ্ট পাচ্ছে।
আমি-বাবা তুমি কি খুশি নও???
বাবা-খুব খুশি আমি।(কান্না করে)
আমি-বাবা তোমার মনে আছে?আমার যখন ১৮ বছর ছিল তখন আমি তোমাকে একবার বলে ছিলাম যে আমি তোমার ছেলে আমি তোমাকে ছাড়া কোথাও যাবোনা।(কান্না করে)
বাবা-হুম মনে আছে।(আমাকে জরিয়ে ধরে)
হঠাৎ রনি আর রানি দৌড়ে রুমে এসে হাঁপায়।
আমি-কি হয়েছে তোমাদের?(কাছে গিয়ে)
রনি-মা মা রানি নাকি আমার বোন?
আমি-(রনি এটা কেনো বললো)হুম তোমার বোন তো যেতেহু একি স্কুলে পড়ো।
রনি-না মা ও বলছে ও নাকি আমারই বোন।
আমি-কি???(অবাক হয়ে)
রানি-তুমিই আমার মা।(আমাকে জরিয়ে ধরে)
আমি-তাই???কিন্তু তোমারতো মা আছে।
রানি-না ওটা আমার মা না।
আমি-কে বলেছে তোমাকে?
রানি-বাবা বলেছে।
আমি-তোমাকে বলেছে?
রানি-না!!!বাবাকে বলতে শুনেছি।
আমি-রানি কবে শুনেছো তুমি এটা?
রানি-কালকে রাতে।
আমি-তোমার বাবা এখন কোথায়??
রনি-মা আঙ্কেল নিচে আছে।
আমি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি নিচে চলে গেলাম।আর নিচে গিয়ে দেখলাম রবিন আর রাহাত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।আমিও ওখানে ওদের সামনে গেলাম।
রবিন-হাই বউ!!!
আমি-হাই(রাহাতকে জ্বালানোর ধান্দা)
রাহাত-তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
আমি-তোমার সাথে কিছু কথা আছে?
রবিন-কিসের ব্যাপারে???
আমি-রানির ব্যাপারে।রাহাত উপরে চলো।
রাহাত-ওয়েট রানির ব্যাপারে কি কথা বলবে?
আমি-আগে চলো।
আমরা দুই জন এবার বাবার কাছে গেলাম।আর রুমে যেতেই দেখলাম রানি রাহাত এর দিকে তাকিয়ে বাবার পেছনে লুকিয়ে গেছে।এবার রাহাত এর দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাহাত কেমন অসহায় দৃষ্টিতে রানির দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি-রাহাত!!!
রাহাত-হুম।
আমি-তুমি নাকি… রনি,রানি বাইরে খেলতে যাও।
রনি-ওকে আম্মু বলে রানি সহ চলে গেল।
রাহাত-হুম কি বলছিলে?
আমি-তুমি নাকি কালকে রাতে কাকে বলেছো যে রানি তোমার মেয়ে নয়???
রাহাত-কা কাকে বললো?(ঘাবড়ে গিয়ে)
আমি-মিথ্যে বলোনা।(রেগে)
রাহাত-আমি কাওকেই বলিনি।
আমি-তাহলে কি রানি মিথ্যা বলছে.(রেগে)
রাহাত-কি বলেছে রানি তোমাকে?
আমি-সেটা তোমার জানার বিষয় নয়?আগে বলো কালকে কি এমন সত্যি জেনেছো যে রানি কে নিজের মেয়ে বলে মানলেনা।
রাহাত-তুমি এসব কি করে জানো?
আমি-আমি ৫ বছর আগের ঋতু নই রাহাত।
রাহাত-ঋতু তুমি আমাকে ভুল বুঝোনা।
আমি-আগে তুমি সত্যি টা বলো।
রাহাত-তুমি রিহাকে দিয়ে যাওয়ার পর আমি রিহা কে জিজ্ঞেস করি যে আর কি কি সত্যি আমাদের থেকে লুকানো হয়েছে?
আমি-তো রিহা কি বললো?
রাহাত-রিহা কিছুই বলতে চাচ্ছিলো না।পরে আমি আরো জোর করায় সত্যি কথা বলে।
আমি-কি সত্যি?
রাহাত-এই যে রিহা মরার নাটক করেছে ঠিকই কিন্তু যে কারণটা তোমাকে বলেছে সে কারণে না।
আমি-মানে?
রাহাত-জানো সেদিন রিহার বাচ্চাটা মারা যায়।
আমি-কি!!!তাহলে রানি?
রাহাত-হুম সেদিন ওর বাচ্চাটা সত্যিই মারা যায়।আর বাচ্চাটা মরার খবর শুনে ও ভয় পেয়ে যায়। কারণ ওকে তো বাচ্চার জন্যই আমার সাথে বিয়ে দেওয়া হয়েছে।আর ও ভাবে হয়তো তোমার মতো ওকেও বের করে দিবে তাই ও ডাক্তার এর হাতে পায়ে ধরে বিষয়টা জানাতে বারণ করে।
বাবা-এতকিছু হয়ে গেলো?
আমি-তাহলে রানি?
রাহাত-সেদিন নাকি হাসপাতালে একজন পাগল পেসেন্ট আসে।যেহেতু জানো দেশের অবস্থা ভালো না তাই পাগল টা।
আমি-বুঝেছি!!!তারপর???
রাহাত-পাগলটা বাচ্চা জন্ম দিতে গিয়েই মারা যায়।আর এই খবরটা রিহার কাছে এলে ও বাচ্চাটাকে ওর বাচ্চা হিসেবে নিয়ে নেয়।
আমি-এতোকিছু একা কিভাবে করলো?
রাহাত-ডাক্তার ওর চেনা তাই করতে পেরেছে।
আমি-আচ্ছা পাগলটার বাচ্চা যে নেই সেটা কেও বুঝতে পারেনি?
রাহাত-না!!!কারণ ওখানে রিহার বাচ্চা ছিল?
বাবা-এতোকিছু করার পরও চলে গেলো কেন?
রাহাত-রানিকে মেনে নিতে পারেনি তাই।
আমি-তো…..
হঠাৎ দরজায় কেও জোরে জোরে ধাক্কাতে লাগল
আমি গিয়ে দরজা খুললে দেখি রবিন দাঁড়িয়ে।
আমি-কি হয়েছে রবিন?
রবিন-বাবা কাজী এসে গেছে।
বাবা-আসছি ঋতু চল।
বাড়ীতে বিয়েটা ঘরোয়া হচ্ছে কিন্তু শুধু আমার পরিবার,রবিনের পরিবার,আর রাহাতের পরিবার।
সবাই মিলে টোটাল ১২,১৩ জন মানুষ হবে।নিচে আসার পর সব নিয়মকানুন মেনে আমাদের বিয়ে হয়ে যায়।
রবিন-তোমাকে বউ হিসেবে পাবো কখনও ভাবতে পারিনি ঋতু।(কানের কাছে ফিসফিস করে)
আমি-আর ভাবতে হবেনা।(আস্তে করে)
রাহাত-Congratulations Ritu & Robin…..
রবিন-ধন্যবাদ রাহাত!!!তবে রাহাত একটা কথা বলতেই হবে আপনাকে।
রাহাত-কি???
রবিন-যে আপনি হিরে চিনতে ভুল করে ফেলে ছেন।আরেকটা কথা বলতেই হবে যে আমি সেই ১২ বছর পরে হলেও ওই একই হিরাকেই পেলাম।
রাহাত-হয়তো তুমিই ওর ভাগ্যে ছিলে।
রাতে আমি রনিকে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছি আর ভাবছি। রানি যেমন সত্যিটা জেনেছে রনিকে ও কি সত্যি টা জানিয়ে দিলে ভালো হবে?
রনি-মা কি হয়েছে?
আমি-রনি তুমি এই আম্মু,মা আর ঠিক করবেনা?
রনি-যেটাই ডাকি মা তো তুমিই।
রবিন-হুম কিন্তু বাবা দুইটা।
রনি-কি বাবা???
রবিন-হুম রনি তুমি জানো তোমার বাবা দুইটা।
রনি-না আমার বাবা তুমি।
রবিন-আমিতো কিন্তু আরো একজন আছে।
আমি-রবিন কি করছো?
রনি-কে???
****সকালে****
আমি সবাইকে নাস্তা দিচ্ছিলাম।তখন হুট করে রানি বাসায় ডুকেই আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে।রানির পেছন পেছন রাহাত,রিহাও আসে।
রাহাত-রানি প্লিজ আসো বাবা।
রানি-না আমি যাবোনা।
রিহা-রানি প্লিজ আসো আমাদের সাথে।
রানি-না তোমরা আমার বাবা মা না।
রাহাত-তাহলে কে তোমার বাবা মা?
রানি-ঋতু মা।
আমি-রানি কে বলেছে আমি তোমার মা?
রানি-কালকে আমি ওই আন্টির(রিহাকে)ফোনে আমার ছোট বেলার চবি দেখেছি।আমি বাবার কোলে আর তুমি আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে।ওই চবিতে তখন কোথায় আন্টিটা ছিলোনা।আর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে কাঁদছিলো আমি আসায় বাবা খুশি হয়নি।আমার আসল বাবা হলে তো কাঁদতো না খুশি হতো।
আমি-রিহা ওমন সময় কেনো চবি তুলে ছিলে?
রিহা-আমি চলে যাচ্ছিলাম তাই।
আমি-বাহ!!!যাকে মেয়ে মানোনা বলে চলে যাচ্ছিলে তারই চবি তুলে নিয়ে যাচ্ছিলে।ওয়াও
রিহা-আমিতো…..
আমি-থাক আর কিছু বলতে হবে না।কেমন মানুষ তোমরা যে একটা ছোট মেয়ে কেও ছাড়লেনা।তোমাদের এমন কর্মকাণ্ডের জন্য মেয়েটা তো তোমাদের ভয় পাচ্ছে।কি রাহাত খুব তো বাচ্চার জন্য আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলে আর এখন বাচ্চাকেই সামলাতে পারছোনা।
রাহাত-ঋতু তুমি….
আমি-কি আমি??? তোমরা তো স্বার্থের পাগল স্বার্থ ছাড়া কিছুই বুঝোনা।রানি মনে হয় তোমাদের সাথে থাকতে চায়না।তো আমিও এখন স্বার্থের পাগল হই কি বলো রাহাত।
রিহা-মানে???
আমি-রানি তুমি কাদের কাছে থাকতে চাও?
রানি-না ওরা আমার বাবা মা না।
আমি-তাহলে কাদের কাছে থাকবে?
রানি-তোমাদের কাছে।
আমি-শুনেছো তোমরা ও আমাদের সাথে থাকতে চায়।এবার আমি আরো বিভিন্ন ধরনের কথা শুনিয়ে ওদের চলে যেতে বললাম।ওরাও এবার চলে যাওয়ার সময় রনি বলে উঠলো।
রনি-আব্বু দাঁড়াও।
রাহাত দাঁড়িয়ে যায় আর পিছনে ফিরে দেখে রনি।
রাহাত-রনি!!!
রনি-বসো বসো।(রাহাতের সামনে গিয়ে)
রাহাত বসলে রনি রাহাতকে জরিয়ে ধরে আর কপালে একটা চুমু দিয়ে বলে।
রনি-তুমি নাকি আমার আরেক বাবা তাই আমি তোমাকে বাবা ডাকলাম আর তুমি কান্না করছিলে তাই চুমুও দিলাম।
রাহাত এবার রনিকে ধরে আরো কাঁদতে লাগলো।এক পর্যায়ে রাহাত কান্না থামিয়ে দেয় আর আমাদের বিদায় জানিয়ে রিহা সহ চলে যায়।
রবিন-ঋতু দেখেছো ওরা ওদের কর্মের ফল পেল।
আমি-আগে শুধু শুনেছি আর এখন বিশ্বাস ও করছি যে প্রকৃতি কাওকে ছাড়েনা।
রবিন-রানি আমাদের চার জনের মাঝে কারোরই মেয়ে না।কিন্তু ও ভালো বাবা-মা পেয়েছে।
আমি-আজই রনির রাহাতকে বাবা ডাকার প্রথম দিন এবং শেষ দিন।
রবিন-হুম!!!আর রনির এই বাবা ডাকটাই হয়তো রাহাতের কাছে তোমার স্মৃতি হয়ে থাকবে।যেটা ওর মতে ওর #ঋতুর_স্মৃতি।
“””” সমাপ্ত “”””