উধয়রনী পর্ব-২৫ + বোনাস পর্ব

0
97

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-২৫||

৪৫।
আহি চট্টগ্রামে ফিরেছে দুই দিন হচ্ছে। এই দুই দিনে আহি একবারো ক্যাম্পাসে যায় নি। কিন্তু আজ তাকে যেতেই হবে। এই মাসে অনেকগুলো ক্লাস বাদ দিয়ে ফেলেছে সে। আগামী সপ্তাহ থেকে ক্লাস টেস্ট শুরু হবে। তাই বাধ্য হয়েই সে ক্যাম্পাসে চলে এলো। আহি ক্লাসে ঢুকতেই আফিফের মুখোমুখি হলো। এতোদিন পর আহিকে দেখে আফিফও চমকে উঠলো।
এদিকে আহি আফিফকে দেখে আবার দুর্বল হয়ে পড়লো। সে এক দৃষ্টিতে আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে। আহির এমন চাহনি দেখে আফিফ তাকে পাশ কেটে চলে যেতেই আহির ঘোর কাটলো। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেঞ্চে এসে বসলো।

(***)

আহি ক্লাস চলাকালীন সময়ে একটু পর পর আফিফের দিকে তাকাচ্ছে। আফিফের চোখ-মুখ লাল হয়ে আছে। যদিও আজ রোদ উঠেছে। তবুও বাতাবরণে মিষ্টি হাওয়ার ছোটাছুটি চলছে। আফিফ কি তবে অসুস্থ? আহির মন ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। সে চোখ বন্ধ করে নিজের বেঞ্চে বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
“ভীষণ অস্থির লাগছে আমার। তুমি আমার পাশে থেকেও কেন এতো দূরে? ইচ্ছে করছে যত্নের সাথে তোমার রক্তিম গালটি ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু এই স্পর্শটাও অনুভব করা ছাড়া উপায় নেই।”

ক্লাস শেষ হতেই আফিফ বেরিয়ে পড়লো। লাঞ্চ টাইম শেষে আবার দুই ঘন্টার ক্লাস। আহি আফিফের পিছু পিছু বেরিয়ে এলো। উদ্দেশ্য ক্যান্টিনে গিয়ে দুপুরের খাবার খাওয়া৷ আফিফও ক্যান্টিনেই এসেছে। সে খাবার নিয়ে কোণায় গিয়ে বসে পড়লো। আহিও খাবার নিয়ে আফিফের পাশের চেয়ারে এসে বসলো। আফিফ আহিকে তার পাশের চেয়ারে বসতে দেখেই ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। আহি বলল,
“আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনার অস্থির লাগছে! আপনি কি অসুস্থ?”

আফিফ ক্ষীণ কন্ঠে বললো, “হুম।”

“কি হয়েছে?”

“হালকা জ্বর।”

আফিফের জ্বর এসেছে শুনেই আহি হাত এগিয়ে দিতে গিয়েই থেমে গেলো। আফিফ দেখেও যেন দেখলো না। সে চুপচাপ খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আহিও ইতস্ততবোধ নিয়ে খেতে লাগলো। মনে মনে বলল,
“কি দরকার ছিল আফিফের পাশে এসে বসার?”

পরক্ষণেই আহি ভাবলো,
“এটা সৌজন্যমূলক প্রশ্ন! এখানে এতো ভাবাভাবির কিছুই নেই। পরিচিত একজন মানুষকে অসুস্থ দেখলে, যে-কেউ পাশে বসে কথা বলবেই।”

আহি এবার নীরবতা কাটিয়ে বলল,
“অফিস আর ক্লাস একসাথে কীভাবে সামলাচ্ছেন?”

“আমি যেই সেক্টরে কাজ করি, ওখানে আপতত ট্রেনিং চলছে। কয়েক মাস পর চাকরি স্থায়ী হবে। ততোদিনে ক্লাস কর‍তে অসুবিধে হবে না।”

“যখন রেগুলার অফিস করতে হবে তখন?”

“হয়তো ক্লাস গ্যাপ হবে। তখন শুধু পরীক্ষাটাই দিতে আসবো।”

আহি গালে হাত দিয়ে আফিফের কথা শুনছে। এতো বছরের এক তরফা ভালোবাসা, আর এই প্রথম আহি আফিফের মুখোমুখি বসে আছে আর কথা বলছে। মুহূর্তটি আহির কাছে ভীষণ সুন্দর মনে হচ্ছে। যদিও আফিফের সাথে আগেও অনেকবার কথা হয়েছিল তার। কিন্তু এই প্রথম বসে শান্তভাবে কথা বলছে। আহি মনে মনে ভাবছে,
“যদি তোমার স্থায়ী শ্রোতা হতে পারতাম। তুমি বর্ষণের মতো তোমার একের পর এক বাক্য ঝরাতে। আর আমি মুগ্ধ হয়ে সেই বাক্যের স্রোতে নিজেকে ভাসিয়ে দিতাম।”

আফিফ গলা খাঁকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“অনেক দিন ক্লাসে আসো নি!”

আহি মুচকি হেসে বলল, “সিলেট গিয়েছিলাম।”

হঠাৎ পেছন থেকে পদ্মের কন্ঠ শুনে আফিফ আর আহি দু’জনই অবাক হলো। আহি পদ্মকে দেখে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পদ্ম আহির কাছে এসে বলল,
“কেমন আছিস?”

“আমি তো ভালোই। দেখছি, তোর বর অসুস্থ অনেক।”

“হ্যাঁ, ওর জন্যই তো এলাম।”

পদ্ম আফিফের পাশে বসেই একটা টিফিনবক্স রেখে বলল,
“নাস্তাও করেন নি, আবার লাঞ্চ বক্সটাও না নিয়ে চলে এসেছেন। এখনো রাগ করে আছেন?”

আহি ভ্রূ কুঁচকে তাদের দিকে তাকালো। আফিফ এক নজর আহির দিকে তাকাতেই আহি তার প্লেট হাতে নিয়ে চলে যেতে নিবে তখনই পদ্ম বলল,
“আহি, তুইও বসতে পারবি।”

আহি শুকনো হেসে বলল,
“আরেহ না। আমি ক্লাসে উনাকে অসুস্থ দেখলাম, ভাবলাম খেতে খেতে জিজ্ঞেস করি কি হয়েছে। তাই বসা। এখন তো প্রাইভেসি দিতে হবে।”

পদ্ম বলল,
“এমন কিছুই বলবো না। বসতে পারিস।”

আফিফ পদ্মের হাত ধরে আটকালো। আহি বিষয়টা খেয়াল করতেই তাড়াতাড়ি চলে এলো।

(***)

উল্টোদিকে ফিরে বসেছে আহি। পদ্ম না হয় সৌজন্যমূলক ভাবে বসতে বলেছিল। আহি তো কখনোই তাদের মাঝখানে বসতো না। তাহলে কেন শুধু শুধু পদ্মের হাত ধরে থামাতে হলো আফিফের? বিষয়টা আহির ভীষণ খারাপ লেগেছে। এই মুহূর্তে আহির চোখ দু’টি ছলছল করছে। সে একসাথে খাচ্ছে আর কাঁদছে। আর মনে মনে ভাবছে,
“আমি আর কখনোই নিজ থেকে তোমার সাথে কথা বলতে যাবো না, আফিফ।”

আহি খাওয়া শেষ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে পেছনে তাকাতেই দেখলো পদ্ম আফিফের মুখে লেগে থাকা খাবারগুলো টিস্যু দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। আহির বুকটা কেমন যেন কাঁপতে লাগলো। সে হাত ধুয়ে নিচে নামতেই তার মনে হলো গলায় কি যেন আটকে আছে। কয়েক পা এগিয়ে সে দৌঁড়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো, আর গলগল করে বমি করে দিলো। প্রায় মিনিট দশেক পর আহি দুর্বল শরীরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েই দেখলো পদ্ম আর আহি ক্যান্টিন থেকে নামছে। আর পদ্ম আফিফের হাত ধরে রেখেছে। আহি জানে এই হাত ধরার অধিকার পদ্মেরই। কিন্তু তার মনটা তবুও মানছে না। এতোদিন সে ভালোই ছিল। কিন্তু একাকীত্ব আর আফিফের ভাবনা তাকে আবার রোগী বানিয়ে দিয়েছে। এরপর আহি আর পরের ক্লাসগুলো না করেই বাসায় চলে এলো।

বাসায় এসেই আহি বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো। নিজের বুকে হাত রেখে বলল,
“বাঁচার জন্য আমার হাতে দুইটা রাস্তা খোলা আছে। এক, আফিফকে ভুলে যাওয়া। দুই, আফিফকে ভুলে থাকার জন্য যা যা কর‍তে হয় সবটাই করা। কিন্তু আমি আফিফকে ভুলে থাকতেই পারছি না। ক্লাসে ওকে দেখা, বাসায় সারাদিন একা একা বসে ওকে ভাবা। যখন মায়ের সাথে ছিলাম, আমি একটুও আফিফকে মনে করে কষ্ট পাই নি। তাহলে আফিফকে ভোলার জন্য আমার মায়ের সাথেই থাকতে হবে। যেটা এই মুহূর্তে মোটেও সম্ভব না। তাহলে আমার হাতে আর একটাই পথ খোলা, সেটা হলো আফিফকেই ভুলে যাওয়া। যেটা আমি পারছি না। কীভাবে ভুলবো আমি ওকে?”

হঠাৎ আহির মনে পড়লো কেউ একজন তাকে বলেছিল,
“মানুষের মন জানালার মতো। জানালা খুলে দিলে যেমন মিষ্টি হাওয়া প্রবেশ করে, তেমনি বন্ধ রাখলে গুমোট বাতাবরণের সৃষ্টি হয়। জীবনটাও ঠিক তেমন। মনের জানালা খুলে দিবেন, সুখ-দুঃখ অন্যের সাথে ভাগ করে নিবেন, তবেই স্বস্তি পাবেন। আর বন্ধ রাখবেন তো নিজেকেই ধীরে ধীরে হত্যা করবেন।”

কথাটি আহির মনে পড়তেই সে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আলমারি খুলে তার হ্যান্ডব্যাগটা বের করলো। এরপর ব্যাগ ঘেঁটে সেই কার্ডটি বের করলো, যেটা সেই প্লেনে থাকা আগন্তুকটি তাকে দিয়েছিল। কার্ডের উপর লেখা, নায়ীব তামজিদ, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। জামালখানেই তার চেম্বার। আহি এবার রাদকে ফোন করলো। রাদ হ্যালো বলতেই আহি বলল,
“আমি ডাক্তার দেখাতে চাই।”

“হ্যাঁ!”

“আমি ট্রিটমেন্ট শুরু করবো ভাবছি।”

রাদ আনন্দিত কন্ঠে বলল,
“আমি সত্যিই তোর ডিসিশনে অনেক খুশি। ফাইনালি তুই ওই তেলাপোকাকে ভুলে থাকার জন্য একটা স্টেপ তো নিচ্ছিস! আচ্ছা, আমি দেখছি কোন ডাক্তার ভালো হবে।”

“রাদ, আমি আজই যাবো। বাবা দেশে আসার আগেই আমি ডাক্তার দেখিয়ে ফেলতে চাই। আমার কাছে একজন সাইকায়াট্রিস্টের নম্বর আছে। জামালখান বসে। চল সেখানেই যাই।”

“ওকে, আজ সন্ধ্যায় বসবে তো?”

“হ্যাঁ।”

“ওকে, ডান।”

আহি ফোন কেটে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আফিফের ছবি হাতে নিয়ে বলল,
“তোমাকে তো আমি কখনোই ভুলবো না, এআর। কিন্তু আমি চাই না, আমার ভালোবাসা দুর্বল হোক। আমি জুলিয়েট হতে চাই না। এমন প্রেমিকা হতে চাই, যে তার ভালোবাসার মানুষকে স্মৃতিতে রেখেও ভালো থাকবে। তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা আমার দুর্বলতা না হোক, আমার শক্তি হোক। যেটা এতোদিন আমি শক্তি ভেবেছি, সেটাই আমার দুর্বলতা ছিল। তোমাকে দেখার পর থেকে আমি আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছি। তোমার আর পদ্মের কাছাকাছি আসা আমাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমি এখনো শক্ত হতে পারি নি। অন্তত তোমার সুখের জন্য আমি শক্ত হবো। আমি চাই না, পদ্ম কখনো জানুক, তুমিই আমার এআর।”

চলবে-

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব||

৪৬।
নায়ীবের চেম্বারে এসে বসলো আহি। রাদ তার পাশেই বসে আছে। আর নায়ীব উলটো দিকে ঘুরে বসে আছে। আহি একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো। রুমটির দেয়ালের রঙটি আহিকে খুব আকর্ষণ করেছে। ঈষৎ হলুদাভ। মেঝেতে ফ্যাকাশে বেগুনি রঙয়ের কার্পেট। যেটাকে সাধারণ ভাষায় ল্যাভেন্ডার কালার বলা হয়। ছাদের রঙটি বাদামি বর্ণের। রুমটির একপাশে একটা আরামদায়ক চেয়ার আছে। যার সামনা-সামনি একটা টুল। পাশে একটা ল্যাম্প আর খালি ফুলের টব। টবটিতে ফুল না থাকায় আহি ভীষণ অবাক হলো।
রুমটির দেয়ালে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আঁকা ছবি ঝুলছে। মাথার উপর বিভিন্ন রঙের বাতি। বাইরে হালকা বৃষ্টি হওয়ায় প্রকৃতি শীতল এবং স্নিগ্ধ। তবে রুমটির বাতাবরণে নাতিশীতোষ্ণ ভাব আছে।

দরজার কাছেই নায়ীবের চেয়ার আর টেবিল। আর তার উল্টো দিকে রোগীদের বসার জন্য দু’টি চেয়ার রাখা, যেই দু’টিতে এই মুহূর্তে আহি আর রাদ বসে আছে। নায়ীব তামজিদ এবার চেয়ার ঘুরিয়ে আহি আর রাদের দিকে ফিরলো। সে টেবিলে দুই হাত রেখে মিষ্টি হেসে আহির দিকে তাকালো। আহি শুকনো হাসি ফেরত দিলো। রাদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই নায়ীব বলল,
“মিস, আপনাকে আমি আগে কোথাও দেখেছি।”

আহি মাথা নেড়ে বলল, “হ্যাঁ।”

নায়ীব সেকেন্ড খানিক ভেবে বলল,
“আমাদের ইউকে থেকে ফেরার পথে দেখা হয়েছিল।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বললো, “আপনার মনে আছে?”

“আমি সহজে কারো চেহারা ভুলতে পারি না। আর এটা তো মাত্র কয়েক মাস আগের কথা।”

নায়ীব এবার রাদের দিকে তাকালো। রাদ বলল,
“আমি আহির ফ্রেন্ড।”

নায়ীব টেবিলের উপর থেকে একটা কলম নিয়ে তার ডায়েরী খুললো। তারপর আহিকে জিজ্ঞেস করলো,
“আপনার নামটা?”

“ওয়াসিকা কবির।”

“সবাই কি নামে ডাকে?”

“আহি!”

নায়ীব ভ্রূ কুঁচকে এক নজর আহির দিকে তাকালো। মনে হচ্ছে নামটা সে কোথায় যেন শুনেছে। নায়ীব আবার জিজ্ঞেস করলো,
“বাসায় কে কে থাকে?”

“বাবা, মা আর আমি।”

“তথ্যগুলো দিতে ভুল করবেন না। বাসায় কি আর কেউ থাকে না?”

“হ্যাঁ, একজন খালা থাকেন, আর তার মেয়ে চুনিও থাকে। তারা আমাদের বাসায় কাজ করে।”

“আপনার বাবা আর মায়ের সম্পর্ক কেমন?”

“আমার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে। যিনি আছেন, তিনি বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী।”

নায়ীব ভ্রূ কুঁচকে কিছু একটা ভাবলো। তারপর জিজ্ঞেস করলো,
“কি কর‍তে ভালোবাসেন?”

“কিছুই না।”

রাদ আহির দিকে তাকালো। নায়ীব রাদের দিকে তাকিয়ে বলল, “কোনো শখ?”

“আহি ভালো ছবি আঁকতে পারে। কিন্তু এখন আঁকে না।”

নায়ীব এবার আহিকে জিজ্ঞেস করলো, “প্রিয় রং?”

“সাদা।”

নায়ীব টেবিলের নিচ থেকে একটা সাদা রঙের কৃত্রিম ফুল বের করে তার কলম দানিতে রাখলো। আহি সেই ফুলটির দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। নায়ীব আহির চোখের দিকে তাকিয়ে ফুলটি সরিয়ে নিয়ে বলল,
“আপনার প্রিয় রং কি?”

আহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ল্যাভেন্ডার।”

নায়ীব মুচকি হাসলো। কার্পেটের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার খুব কাছের একজন মানুষের প্রিয় রঙও কিন্তু ল্যাভেন্ডার।”

আহি অন্যমনস্ক হয়ে বলল, “আমারও।”

“তাহলে সাদা রং কেন বলেছিলেন?”

“জানি না।”

নায়ীব মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো, “প্রিয় ফুল?”

“অলকানন্দা।”

নায়ীব তার পাশে থাকা বেল বক্সে চাপ দিতেই সেকেন্ড খানিক পর তার সহকারী ভেতরে ঢুকলো। নায়ীব বলল,
“কয়েকটা অলকানন্দা ফুল নিয়ে আসো।”

আহি নায়ীবের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো। এবার নায়ীব চেয়ার ছেড়ে উঠে একটা পর্দা টেনে দিলো মাঝখানে। ধূসর রঙের পর্দা। তারপর রাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আপনি এখানেই বসুন। আমার মিস ওয়াসিকার সাথে একা কথা বলা উচিত।”

আহি এবার উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলো। তারপর নায়ীব তাকে ইশারায় সেই আরামদায়ক চেয়ারটিতে বসতে বলল। আহি সেই চেয়ারে বসতেই নায়ীব পেছনের বাতিটা জ্বালিয়ে দিলো। হালকা অন্ধকারে কিছু আলো এসে পড়ছে পাশে থাকা টেবিলটির উপর। সেই আলোতে নায়ীব আর আহি একে অপরকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু আশেপাশে সবকিছুই অস্বচ্ছ হয়ে আছে। এদিকে নায়ীবের সহকারীটি কয়েকটা অলকানন্দা ফুল নিয়ে আসতেই নায়ীব ফুলগুলো নিয়ে খালি দানিটিতে রাখলো। আহি সেই ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। নায়ীব এবার বলল,
“তুমি মনে করবে আমি তোমার বন্ধু। বন্ধু ভেবেই কোনো ইতস্তত ভাব ছাড়াই আমার সব প্রশ্নের উত্তর দেবে। এবার বলো, কেন এসেছো আমার কাছে? এই মুহূর্তে তোমার জীবন নিয়ে কেমন অভিজ্ঞতা হচ্ছে?”

আহি কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমার জীবনে অনেক সমস্যা। বাবার সাথে আমার বনিবনা হয় না। বাবার স্ত্রী আমাকে মানসিক চাপে রেখেছে। জোর করে তাদের পছন্দের ছেলের সাথে আমাকে বিয়ে দিতে চাইছে। আর ছেলেটাও একদম ভালো নয়। আর বাবা আমাকে আমার আসল মায়ের সাথেই দেখা করতে দেয় না। বাবা অনেক প্রভাবশালী। সে একপ্রকার আমাকে জিম্মি করে রেখেছে। চব্বিশ বছর চলছে আমার। এখনো আমি আমার ইচ্ছেই মায়ের সাথে থাকতে পারি না, দেখা কর‍তে পারি না। আর এই সিচুয়েশন থেকে এতো সহজে আমি মুক্তি পাবো না, সেটা আমি জানি। কিন্তু আসল সমস্যা এই বিষয় নয়। আমার আসল সমস্যা, আর এখানে আসার কারণ আমি একজনকে খুব ভালোবাসি। তাকে ভুলতে পারছি না। সে প্রতিনিয়ত আমার চোখের সামনে ঘুরাঘুরি করছে।”

“তাকে বলেছো?”

“হ্যাঁ, সে জানে।”

“তাহলে তোমাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কারণ?”

“বিয়ে করে ফেলেছিল।”

“তাহলে তো সে দুর্ভাগা। তোমার মতো মিষ্টি মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছে।”

“সে তো আমাকে কখনোই ভালোবাসে নি।”

“নাম কি তার?”

“বলতে পারবো না।”

“ঠিক আছে, তার এমন একটা নাম দাও, যেটাতে শুধু তুমিই তাকে চেনো। শুধু তুমিই তার এই ছদ্মনামটি জানো।”

“অলকানন্দ।”

নায়ীব এবার অলকানন্দা ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তাহলে এই ফুলগুলো তার পছন্দের?”

“হ্যাঁ।”

“সাদা রঙটিও তার পছন্দের?”

“হ্যাঁ।”

“তোমার প্রিয় ফুল কি?”

“কাঠগোলাপ!”

“দেখি বলো, ক’দিন পর নিজের প্রিয় ফুলের নাম নিয়েছো?”

আহির চোখে অশ্রু ভীড় করতে লাগলো। নায়ীব বলল,
“আগে নিজেকে ভালোবাসতে শেখো, তারপর তোমার ভালোবাসা তোমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে। তুমি তো তার পছন্দের ভীড়ে ডুবে আছো। তোমার প্রথম কাজ এসব পছন্দ একেবারে ভুলে না গিয়ে তোমার পছন্দগুলো সেখানে জায়গা দেওয়া।”

আহি মলিন মুখে নায়ীবের দিকে তাকালো। নায়ীব এবার জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার বারান্দায় বাগান আছে?”

“হ্যাঁ।”

“নিশ্চয় সব অলকানন্দার চারা লাগিয়ে রেখেছো।”

আহি ক্ষীণ কন্ঠে বললো, “হ্যাঁ।”

“কাল নার্সারিতে গিয়ে গোলাপ আর কাঠগোলাপের চারা এনে লাগিয়ে দেবে। বাসার ছাদেও একই গাছ লাগাবে। অলকানন্দার পাশাপাশি যাতে কাঠগোলাপেরও জায়গা হয়।”

নায়ীব উঠে গিয়ে কোথা থেকে কিছু কৃত্রিম কাঠগোলাপ এনে সামনে থাকা টেবিলের উপর ছড়িয়ে দিলো। আহি তা দেখে মুচকি হাসলো। নায়ীব এবার বলল,

“তোমার ভালোবাসার গল্পটা শুনাও আমাকে। আমি ভীষণ আগ্রহী। অলকানন্দকে কখন দেখেছো? কখন বুঝেছো তুমি তাকে ভালোবাসো? তোমার সব অনুভূতি আজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাকে শোনাবে।”

আহি চোখ বন্ধ করলো। তার মনে পড়ে গেলো সেই বৃষ্টি ভেজা সকাল, ভেজা সাদা শার্টের সেই আফিফের শ্রান্ত চেহারা, তার এলোমেলো চুল, তার নাম জানার অনুভূতি, তার আঁকা ছবিগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা, প্রথম তার স্কেচ করা, সেই স্কেচ বানিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখা, টিফিনের টাকা জমিয়ে তার জন্য ডায়েরী কেনা, রাস্তায় বসে তাকে প্রথম সেই ডায়েরীতে স্থান দেওয়া, প্রতি সপ্তাহে আফিফকে দেখে বাসায় এসে আফিফের স্কেচ করে অনুভূতির কথাটাও ডায়েরীতে লেখা, আফিফকে দেখে প্রথম নামাজ ধরা, প্রতিদিন তার পিছু নেওয়া, ঝড়-ঝঞ্ঝা সব উপেক্ষা করে আফিফকে এক নজর দেখার জন্য কখনো ওর বাসার সামনে, কখনো বা এক কোমড় পানি ঠেলে চারুশিল্পে ক্লাস করতে যাওয়া, আফিফের খাওয়া আর স্পর্শ করা প্রতিটি বস্তু সংগ্রহে রাখা, তার ছেঁড়া স্যান্ডেলটি এখনো যত্নের সাথে বক্সে তুলে রাখা, আফিফের জন্য ভাস্কর্য বানানো, এরপর তাকে বেনামী চিরকুট দেওয়া, তার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাওয়া, আফিফের এক্সিভিশনে তার ছবি আঁকা, পরবর্তীতে তাকে দেখতে না চেয়ে সেই কার্ডের কালো বাটনে চাপ দেওয়া, আফিফের পারিবারিক জটিলতা, তারপর আড়াই বছর পর পদ্মকে ভালোবেসে বিয়ে করা, সেই বর্ষার রাতের তার ব্রেইন স্ট্রোক করা। আহি প্রতিটি অংশ নায়ীবকে শোনালো। নায়ীব সব শুনে স্থির দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে আছে। আর আহি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। রুমটি নিরিবিলি থাকায়, আহির সব কথায় রাদের কানে পৌঁছেছে।

আহি কথা বলা শেষ করেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। নায়ীব এবার সামনে এসে রাদের দিকে তাকালো। নায়ীবকে দেখে রাদ তার চোখ মুছতে লাগলো। নায়ীব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আহিকে বলল,
“মিস, তুমি বাইরে গিয়ে বসো।”

আহি বাইরে যেতেই নায়ীব রাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আপনি কাল সকালে মিস ওয়াসিকাকে আমার কাছে নিয়ে আসবেন। আমি চেম্বারে তার ট্রিটমেন্ট করবো না। অন্য জায়গায় যেতে হবে। আমার মনে হচ্ছে তার রিকোভার করতে অনেক সময় লাগবে। এটাকে আমরা ভালোবাসা বলতে পারি না। এটা ভালোবাসা হলে তাকে এখানে আনতেই হতো না। এটা আমাদের ভাষায় রোগ, সাধারণের ভাষায় আসক্তি। নেশা ছাড়াতে যেমন অনেক সময় লাগে, তেমনি তার অতীত থেকে তাকে বের কর‍তে অনেক সময় লাগবে। তার মধ্যে যুক্ত আছে তার পারিবারিক জটিলতা। নিশ্চয় আপনি তার ভালো বন্ধু, তাই আপনি এমন অবস্থায় তার পাশে আছেন। সাজেস্ট করবো, তাকে নিয়ে ঘুর‍তে যান। আপতত সেই ছেলেটার কাছ থেকে মিস ওয়াসিকার দূরত্ব রাখতে হবে।”

রাদ বলল,
“ওরা একই সাথে মাস্টার্স করছে। আর আমি অন্য ডিপার্টমেন্টে।”

“সেকশন থাকলে চেঞ্জ করার ব্যবস্থা করুন। আর এক বছর অনেক সময়। যার জন্য মিস. ওয়াসিকার এমন পরিণতি সে কিন্তু এসব জানে। আর সে জানে তাই মিস. ওয়াসিকা আরো বেশি কষ্ট পাচ্ছে। না জানলে তাকে ফেইস কর‍তে এতো কষ্ট হতো না। কিন্তু আমার মনে হয়, তাকে ফেইস করতে হবে। দূরত্ব রাখাটা ঠিক হবে না।”

(***)

রাদ বেরিয়ে আসতেই আহি রাদের কাছে এসে বলল,
“ডাক্তার কি বলেছে? আমি সুস্থ হয়ে যাবো তো!”

রাদ শুকনো হেসে আহির গালে আলতো হাত রেখে বলল,
“তোকে আমি সুস্থ করেই ছাড়বো। এখন শুধু মন পরিবর্তন করিস না। মিস্টার নায়ীব কাল তোর সাথে আবার দেখা করবেন। উনি যা যা বলবেন, তোকে তা তা মেনে চলতে হবে। আর কালকে ক্লাস করতে হবে না।”

আহি রাদের হাত শক্ত করে ধরে কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমি আফিফকে এখনো সেভাবেই ভালোবাসি, যেমনটা আগে ভালোবাসতাম। ডক্টর নায়ীবকে যখন আমি সব বলছিলাম, মনে হচ্ছিল আফিফ আমার পাশেই আছে। আমি হাত বাড়ালেই ওকে ছুঁয়ে দিতে পারবো।”

রাদ আহির হাতটা নিজের বুকের উপর রেখে বলল,
“আপতত আমাকে ছুঁয়ে দে। মনে করিস না এসব। চল এখন, ফুচকা খাওয়াবো তোকে। আজ রাত ন’টা পর্যন্ত রিকশা নিয়ে রাতের শহর দেখবো।”

আহি রাদের হাত ধরে বলল,
“আমার সমুদ্র দেখতে ইচ্ছে করছে।”

“পতেঙ্গা যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে যাবে। এতো রাতে সুন্দরী মেয়ে নিয়ে আমি যেখানে সেখানে যেতে পারবো না। আমি কিন্তু বডি বিল্ডার নই।”

আহি মুচকি হেসে রাদের গাল টেনে দিলো। এরপর রাতে ঘুরাঘুরি করে বাইরে খাওয়া-দাওয়া সেরেই আহি বাসায় ফিরলো।

(***)

সকাল সকাল কলিংবেল বাজতেই আহি নিচে নেমে এলো। মুনিয়া খালা দরজা খুলতেই দেখলেন রাদ দাঁড়িয়ে আছে।

আহি বলল, “তুই!”

রাদ হাতে থাকা বড় একটা পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। আহি জিজ্ঞেস করলো,
“কি এগুলো?”

“তোর বারান্দায় নিয়ে চল।”

আহি রাদকে নিজের ঘরে নিয়ে এলো। রাদ প্রথম আহির ঘরে ঢুকেছে। পরিপাটি ঘর। আশেপাশে কাগজ দিয়ে মুড়ানো ক্যানভাস মেঝেতে রাখা। রাদ এক নজর আহির দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে এলো। বারান্দায় আসতেই রাদ ভ্রূ কুঁচকে আহির দিকে তাকালো। আহি মাথা নিচু করে নিলো। রাদ আহির বারান্দায় বসে পড়লো। নিজ হাতে অলকানন্দা গাছগুলো সরিয়ে দুই টবে ভাগ করে লাগালো। বেশিরভাগই ফেলে দিলো। আহি আটকাতে যাবে তখনই রাদ বলল,
“আজ থেকে আমার কথা শুনতে তুই বাধ্য।”

আহি চুপ করে রইলো। রাদ এবার নতুন করে মাটি দিয়ে টবগুলোতে কাঠগোলাপের ডাল আর চারা রোপণ করে দিলো। চুনিও মনোযোগ দিয়ে রাদের কাজ দেখছে। রাদ চুনিকে দেখে বলল,
“পানি নিয়ে আসো, গাছে দেবো।”

চুনি বাধ্য মেয়ের মতো এক মগ পানি আনলো। রাদ নতুন চারাগুলোতে পানি ছিটিয়ে দিলো। এরপর হাত মুখ ধুয়ে চলে যেতে নেবে তখনই আহি বলল,
“নাস্তা করবি না?”

“বাইরে করবো।”

“চল, একসাথেই করি। এমনিতেই তো বেরুতে হবে।”

“তাহলে তৈরী হয়ে নে। বাইরেই করি।”

আহি ভালো একটা জামা পরে বেরিয়ে এলো। রাদ আর আহি ছোট একটা রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা সেরে ফুটপাত ধরে অনেকক্ষণ হাঁটলো। আহি রাদের হাত ধরে রেখেছে। রাদ আহির দিকে তাকিয়ে আছে। আহি বলল,
“তুই আমার জন্য এতোকিছু কেন করছিস?”

রাদ মনে মনে বলল, “ভালোবাসি তাই।”

আহি রাদের দিকে তাকাতেই রাদ বলল,
“তোর জন্য আমি অনেক কিছুই করবো। কিন্তু কারণ বলবো না। শুধু এইটুকু মাথায় রাখিস, আমি তোর মুখে হাসি দেখতে চাই। বন্ধুর মুখে হাসি দেখতেই ভালো লাগে। বিপদে তো বন্ধুরাই পাশে থাকে।”

(***)

আহি আর রাদ নায়ীবের চেম্বারে আসতেই নায়ীব উঠে দাঁড়ালো আর বলল,
“তোমাদের অপেক্ষায় ছিলাম।”

আহি বলল, “আমরা কোথায় যাচ্ছি?”

“একটা পার্কে যাচ্ছি।”

নায়ীব আহির সাথে বাটারফ্লাই পার্কে চলে এলো। রাদও তাদের সাথেই আছে। কিন্তু সে কিছুটা দূরত্ব রেখেছে। নায়ীব আহিকে নিয়ে ঝিলের পাশে এসে বসলো। আহি এক দৃষ্টিতে ঝিলের অস্বচ্ছ পানির দিকে তাকিয়ে আছে। নায়ীব আহির দিকে ঘুরে বসে বলল,
“কাল সারারাত আমি অনেক ভাবলাম। ভেবে একটা উত্তরই বের হলো। তোমার সেই অলকানন্দ সেই কার্ডের প্রতিত্তোরে ব্ল্যাক বাটনে চাপ দিয়েছিল। সে কিন্তু জানতো না তোমার আসক্তি কোন পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। পয়েন্ট ওয়ান, সে তোমার চিরকুট পেয়েছে। তোমার ভাষ্যমতে সে চিরকুট দেখে কখনোই বিরক্ত হয় নি। সেই চিরকুটগুলো পড়ার সময় তুমি তার ঠোঁটে অদৃশ্য হাসি দেখেছিলে। এমনকি সে এক্সিভিশনে তোমার কথায় অংশ নিয়েছিল, আর তোমার দেওয়া ছবিটিই এঁকেছিল। এই পয়েন্ট থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, সে তোমাকে পছন্দ করতো। হয়তো সে এটা নিজেও বুঝতে পারে নি। নয়তো অন্য কোনো কারণ হতে পারে। দ্বিতীয় পয়েন্ট তুমি তাকে এক জোড়া স্যান্ডেল কিনে দিয়েছিল। আর সেই জোড়া সে সবসময় পায়ে দিয়ে আসতো। এর দুইটা কারণ থাকতে পারে। এক, সে তোমার দেওয়া জিনিসটা আগলে রেখেছে। দুই, তার আসলেই আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। তৃতীয় পয়েন্ট তার এক্সিডেন্টের পুরো খরচ তোমার মা দিয়েছিল। এই পয়েন্টটা হয়তো তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তোমাকে ভালো রাখা তার সামর্থ্যের মধ্যে নেই।”

আহি মাথা নেড়ে বলল,
“আমি তাকে চেয়েছিলাম। তার কাছ থেকে অন্য কিছু চাই নি।”

“সেটা তো শুধু তুমিই জানো। সে তো জানে না। তবে এটা একটা সম্পর্কে বাঁধা হওয়ার মুখ্য কারণ নাও হতে পারে। তার পারিবারিক অবস্থা শুনে মনে হচ্ছে, তোমাকে তার জীবনে না আসতে দেওয়ার কারণ পদ্মের প্রতি ভালোবাসা কখনোই ছিল না। অন্য কোনো কারণ আছে। হয়তো পদ্ম তার জীবনে তখন এসেছে, যখন সে ধরে নিয়েছিল, তুমি তার জীবনে কোথাও নেই। তোমাকে মনে না রাখাটাই তার জীবনের ব্যর্থতা বা সার্থকতা।”

“আমি আপনার কথাটা বুঝতে পারছি না।”

“আচ্ছা, অলকানন্দের কথাটা না হয় বাদ দাও। আসি তোমার বিষয়ে। তোমার এই ইমোশনসগুলো কখন তোমাকে আঘাত করে?”

“যখন আমি একা থাকি। নিজের ঘরে থাকি। সেই ঘরে বসেই তো ডায়েরী লিখতাম, ভাস্কর্যটাও সেখানে ছিল, তার ছবিও এঁকেছি সেখানে বসে।”

“এটা তোমার ভুল ধারণা ওয়াসিকা। যদি তোমার ঘরটাই তোমাকে ইমোশনাল করার পেছনে দায়ী থাকতো, তাহলে তুমি ইউকে গিয়ে একই সিচুয়েশনে থাকতে না।”

“তাহলে এর জন্য দায়ী আমার মন? আমি মনকে কীভাবে হারাবো?”

“এটা তোমার অতিরিক্ত ভালোবাসা। ভালোবাসার একটা সীমা আছে। সীমা ছাড়িয়ে গেলে ওটাকে ভালোবাসা বলা যায় না। তুমি অনেক ধৈর্যশীল, তোমার মন-মানসিকতা ভালো, নয়তো তোমার এই সীমাহীন ভালোবাসার সাইড ইফেক্ট কি জানো?”

“কি?”

“এর সাইড ইফেক্ট হলো। তুমি পদ্মের জীবনের একটা অভিশাপ। তুমি নিজের নিয়ন্ত্রণ হারালেই পদ্মের জীবনে ঝড় নেমে আসবে।”

আহি বিচলিত হতেই নায়ীব বলল,
“রিল্যাক্স ওয়াসিকা। আমি তোমাকে আয়না দেখাচ্ছি। তোমার আয়নায়, তুমি সাদা মনের মানুষ। তাই তোমার আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছো। যেমন, সিগারেট আসক্ত অনেক মানুষ সন্তানদের জন্য নিজের আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বাইরে গিয়ে সিগারেট খেয়ে আসে। প্যাকেটগুলো বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে রাখে। যাতে তার সন্তানের কোনো ক্ষতি না হয়। তুমিও ঠিক তেমনি। পদ্মকে তুমি ভালোবাসো বলেই তুমি তোমার অনুভূতি আড়াল করে রেখেছো। তুমি বাইরে এসে, একা বসে কাঁদছো। তাদের একসাথে দেখলে খেতে পারো না, তোমার অস্থির লাগে এসব তোমাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। তোমার আসক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে একদম মাথা ঠান্ডা রেখে। আমি তোমাকে কিছু এক্সপেরিমেন্ট কর‍তে দেবো। রাদকে ডেকে আনো। তোমাদের দু’জনকেই শুনতে হবে।”

আহি রাদকে ডেকে আনতেই নায়ীব বলল,
“ওয়াসিকার ভালোর জন্য কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে হবে।”

রাদ ভ্রূ কুঁচকে বললো, “কেমন এক্সপেরিমেন্ট?”

“ট্যুর।”

আহি অবাক দৃষ্টিতে নায়ীবের দিকে তাকালো। নায়ীব আহিকে আশ্বস্ত করে মুচকি হেসে বলল,
“সাতদিনের এক্সপেরিমেন্ট। তোমরা বন্ধুরা মিলে একটা ট্যুর দিবে। এবং সেখানে অবশ্যই যাতে পদ্ম আর সেই ছেলেটি উপস্থিত থাকে। সাতদিনে সাতটি ভাগের রিপোর্ট আসবে। ওয়াসিকা কি অনুভব করছে? ও কি পরিমাণ দুর্বল হচ্ছে? ওর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কতোটুকু? এটাই এক্সপেরিমেন্টের বিষয়। রিপোর্ট আমি রাদের কাছ থেকেই নিবো। রিপোর্ট অনুসারে আমি তোমাকে মেডিসিন দিতে পারবো। এখন আমি কিছুই দিতে চাচ্ছি না। কারণ তুমি নিজেকে আড়াল করে রেখেছো। তোমাকে সত্যের মুখোমুখি হতে হবে। সিচুয়েশনটা ফেইস কর‍তে হবে। এখন তুমি যতোই পালাতে থাকবে, ততোই তোমাকে অতীত জাকড়ে ধরবে। তুমি সত্যটা মেনে নিয়ে এর মুখোমুখি হও, দেখবে ধীরে ধীরে তোমার কাছে সব সহজ হয়ে যাবে।”

আহি রাদের দিকে তাকালো। নায়ীব এবার বলল,
“তোমাকে আজ বাইরে এনেছি। একটা জিনিস লক্ষ্য করেছো?”

আহি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নায়ীবের দিকে তাকালো। নায়ীব বলল,
“তোমার চোখে এক বিন্দু অশ্রুও ভীড় করে নি। কিন্তু কাল তুমি কান্না করেছো। এর কারণ কি?”

“কি?”

“চার দেয়ালে আটকে থেকে তুমি ওকে ভুলতে পারবে না। বাইরে বের হও। ঘুরো। বাসায় বসে থেকো না। ক্লাস শেষ, বাইরে বসে ছবি আঁকো, ক্রিয়েটিভ কাজে যোগ দাও। লাইব্রেরীতে গিয়ে পড়ো। শপিং করতে যাও। যা ইচ্ছে করো, কিন্তু চার দেয়ালের বাইরে বের হয়ে করো। আপতত এটাই সাজেস্ট করবো। আর এক্সপেরিমেন্ট যতো দ্রুত সম্ভব করে ফেলো।”

নায়ীব কথাগুলো বলেই আহি আর রাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আহি রাদের হাত ধরে বলল,
“এক্সপেরিমেন্টটা করা কি খুব জরুরি?”

“হ্যাঁ, অবশ্যই।”

“আফিফ কি আমাদের সাথে বাইরে যেতে চাইবে?”

“না। কিন্তু পদ্মের কারণে ও যেতে বাধ্য হবে। এখন পুষ্পকে বলেই সব ঠিক কর‍তে হবে।”

আহি ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“পুষ্পকে বলিস না যে এআরই আফিফ।”

“আরেহ, কখনো বলবো না।”

রাদ আহির হাত আলতো ছুঁয়ে দিয়ে বলল,
“আমি তোকে কারো কাছে হারতে দেবো না। তোকে সব জয় করতে হবে। আবেগ, কষ্ট সব।”

“শুধু ভালোবাসাটায় অসমাপ্ত থেকে যাবে। তাকে জয় করা কখনোই সম্ভব না।”

“জীবনে কিছু না কিছু অপূর্ণ থেকে যায়।”

আহি দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, “যদি সব জয় করতে পারতাম।”

চলবে-

#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||আংশিক পর্ব||

৪৭।
মিসেস লাবণি এবং রিজওয়ান কবির আজই দেশে ফিরেছেন। বাসায় ঢুকতেই আহিকে দেখে তারা দু’জনই অবাক হলেন। আহি বাগানে বসে চুনিকে ইংরেজি শিখাচ্ছে। রিজওয়ান কবির বললেন,
“নতুন কাজ নিয়েছো না-কি!”

“হ্যাঁ বাবা। ভাবছি এভাবেই সময় পার করবো।”

“ভালো। তাজওয়ারের অফিসে গিয়েও বসতে পারো। কাজ শিখতে পারো। আফটার অল বিয়ের পর তোমাকে সেই বিজনেসটা সামলাতে হবে।”

আহি ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“সরি, আমি কারো বিজনেস সামলাতে পারবো না। যা করবো নিজের জন্য করবো।”

“ওটা তোমারই বিজনেস।”

আহি বিরক্তমুখে রিজওয়ান কবিরের দিকে তাকাতেই মিসেস লাবণি বলল,
“আহা, এসেছি একটু বিশ্রাম নেই। তোমাদের বাবা-মেয়ের বাগবিতণ্ডার জন্য অনেক সময় পরে আছে।”

মিসেস লাবণি আর রিজওয়ান কবির চলে যেতেই চুনি চাপা স্বরে বলল,
“আফা, একটা ইংরাজি কও তো।”

“কীসের?”

“একটা ডাইনি আইসা বুইড়া খাটাশের মাথা খাইছে। এহন বুইড়া খাটাশ খালি ঘ্যানরঘ্যানর করে।”

আহি চোখ ছোট করে বলল, “বুইড়া খাটাশটা কে?”

“বড় সাহেব।”

চুনি কথাটি বলেই দাঁত দিয়ে জিহ্বায় কামড় খেয়ে বলল,
“আফা, বইলা দিও না। আমারে আবার বিয়া দিবো না। আম্মা তো কইছে, বড় সাহেব বিয়া দিলে ধুমধামে আমার বিয়া হইবো। ওই যে টিভিতে দেহায়, বউ এত্তো লম্বা গহনা গলায় ঝুলাইয়া রাখে, চারপাশে বাত্তি জ্বলে, টুসটাস বাজি ফুটে, জামাই আসে ঘোড়ায় চইড়া। আহা কি সুন্দর বিয়া!”

“তুমিও সেভাবেই বিয়ে করবে না-কি?”

“হ, আফা। বহুত শখ আমার। কিন্তু আমার কি টাহা আছে? আম্মাও তো কই, ওভাবে আমাগো বিয়া অয় না।”

আহি চুনির থুতনিতে হাত রেখে বলল,
“তোমার বিয়ে ওভাবেই হবে।”

“সত্যি আফা?”

“হুম, একদম সত্যি।”

“এহন কও তো ডাইনি ইংরাজি কি হইবো।”

“উইচ।”

“আজকে থেইকা কমু, উইচ কাম, ইট বুইড়া খাটাশ হেড।”

আহি শব্দ করে হাসলো। আর বলল,
“তোমার এই ইংরেজির ভাংচুরগুলো আমার শুধরে দিতে ইচ্ছে করে না। খুব ভালো লাগে শুনতে।”

“আরো দু’একটা কমু?”

“বলো।”

“মিস চাঁদনী শাদি ধুমধাম সাউন্ড। ভেরি বিউটিফুল ইদার ওদার।”

আহি মুখ চেপে হাসছে। চুনির সাথে গল্প করেই আহির ভালো সময় কাটছে। ডাক্তার নায়ীবের পরামর্শে কাজ দিচ্ছে ভালোই।

(***)

গোসল সেরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো পদ্ম। আফিফ বিছানায় বসে ফাইল দেখছে। পদ্ম তার ভেজা চুল ঝাঁকাতেই পানির ছিঁটে আফিফের মুখে এসে পড়লো। আফিফ পদ্মের দিকে তাকাতেই পদ্ম লাজুক হাসলো। আফিফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“হাসছো কেন?”

পদ্ম আফিফের কথায় ঠোঁট ফুলিয়ে তার দিকে ফিরে বলল,
“আনরোমান্টিক বর একটা। আপনি কিছুই বুঝেন না।”

আফিফ মুচকি হেসে পদ্মের দিকে হাত এগিয়ে দিতেই পদ্ম আফিফের কোলে এসে বসে পড়লো। আফিফ ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“বেশি রোমান্টিক হয়ে যাচ্ছো মনে হচ্ছে।”

“হুম, একটা কথা বলি?”

“বলো।”

“বিয়ের পর আমরা তো হানিমুনে যাই নি।”

“গিয়েছিলাম তো।”

“কোথায়? কক্সবাজার গিয়েছিলাম। তাও আবার আপনার কাজে।”

“তখন চাকরি তো ছিলো না। এখন চাকরি হয়েছে। আমরা খুব শীঘ্রই আবার যাবো।”

পদ্ম অভিমানী সুরে বলল,
“চার বছর সংসার করেছি। শহর আর গ্রামের বাইরে আমি কোথাও পা রাখি নি।”

“তোমার ইচ্ছে পূরণ করতে পারছি না, তাই সরি। একটু অপেক্ষা করো, পদ্মফুল।”

“অপেক্ষা কেন করবো? সুযোগ তো চলেই এসেছে।”

“কেমন সুযোগ?”

“পুষ্প ফোন করেছিলো। বলেছে একসাথে ঘুরতে যাবে।”

“কোথায়?”

“কক্সাবাজার।”

“তুমি তো গিয়েছিলে ওখানে!”

“আপনি বুঝতে পারছেন না। আমি, পুষ্প, আহি, আমরা তো কখনো একসাথে যাই নি। আমার খুব ইচ্ছে ফ্রেন্ডদের সাথে কিছুদিন ঘুরবো। কিন্তু তখন বয়স কম ছিল, মা অনুমতি দেয় নি। এখন যদি আপনি সহ যান, তাহলে তো হলোই। আমাদের হানিমুনও হবে, ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরাও হবে।”

আফিফ কিছু বলতে যাবে তখনই পদ্ম অনুনয়ের সুরে বলল,
“প্লিজ। না করবেন না। আমি সত্যিই যেতে চাই। আমারও তো ইচ্ছে হয় ঘুরতে।”

আফিফ পদ্মের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
“অফিস থেকে ছুটি নিতে হবে।”

“নিতে হবে না। আপনার কোম্পানিতে এমপ্লয়িদের শরৎকালীন ছুটি দেয়। ওটাতেই আমরা যাচ্ছি।”

“তোমাকে কে বলেছে শরৎকালীন ছুটি আছে?”

“আহি বললো।”

“ও কীভাবে জানে?”

“সেটা তো আমি জানি না। হয়তো খোঁজ নিয়েছে। আর ওর বাবা তো অনেক বড় ব্যবসায়ী। হয়তো সব কোম্পানিতেই দেয়।”

আফিফের মনে খটকা লাগলো। আহি কি ইচ্ছে করে এমন সময়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে যাতে আফিফও উপস্থিত থাকতে পারে? না-কি পদ্মের জন্যই সে খোঁজ নিয়েছিল?

(***)

বিকেলে রাদ আর আহি রিকশা নিয়ে ঘুরছিলো। হঠাৎ একটা গাড়ি তাদের রিকশার সামনে এসে থামলো। আহি ভ্রূ কুঁচকে গাড়িটির দিকে তাকালো। তখনই গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো তাজওয়ার খান। সে রিকশার কাছে এসেই আহিকে টেনে নামালো। রাদ তেড়ে এসে বলল,
“এসব কেমন অসভ্যতা?”

তাজওয়ার শীতল কণ্ঠে বলল,
“অসভ্য লোকের প্রেমিকাকে নিয়ে সভ্য মানুষের উন্মুক্ত ঘোরাফেরা খুব একটা সভ্যতার লক্ষণও নয়।”

তাজওয়ার আহিকে টেনে নিজের কাছে এনে বলল,
“পাব্লিক প্লেসে তোমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করলে নিশ্চয় তুমি খুশি হবে না।”

তাজওয়ারের কথা শুনে রাদের হাত মুঠো হয়ে গেলো। আহি করুণ দৃষ্টিতে রাদের দিকে তাকালো। তাজওয়ার বলল,
“সুইটহার্ট, গাড়িতে উঠো।”

রাদ আহির হাত ধরে বলল, “আহি, চল।”

তাজওয়ার দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আহির হাত ছাড়ো, নয়তো পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে তোমার পরিচয় আর থাকবে না?”

রাদও দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “কি করবি তুই?”

তাজওয়ার তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল,
“তুই? হুহ। বেশি কিছু না, তোমাকে আত্মাদের জগতে পাঠিয়ে দেবো। ভূত হয়ে যাবে, ভূত।”

তাজওয়ার বিশ্রীভাবে হাসলো। আহি রাদের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“রাদ তুই যা। আমাদের বন্ধুত্ব দেখে অনেকে মনে করে অন্যকিছু। সবাই তো আর বন্ধুত্বের সীমারেখা জানে না। একসাথে ঘুরলেই যে প্রেমিক-প্রেমিকা হয় না, এটা এমন কুৎসিত মনের মানুষকে বোঝাতে পারবো না আমি। তুই যা, রাদ। শুধু শুধু ঝামেলা করিস না।”

রাদ আহির কারণে যেতে বাধ্য হলো। রাদ চলে যেতেই আহি তাজওয়ারের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এবার আমার হাতটা ছাড়ো।”

তাজওয়ার আহির হাত ছাড়তেই, আহি রাস্তার পাশ থেকে একটা ইট কুঁড়িয়ে এনে তাজওয়ারের গাড়ির গ্লাসে ছুঁড়ে দিলো। সাথে সাথেই পেছনের গ্লাসটা ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেলো। ড্রাইভারও তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে এলো। আহি বাঁকা হেসে আরেকটা ইট উঠিয়ে সামনের গ্লাসটিও ভেঙে দিলো। তাজওয়ার রাগী দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকিয়ে রইলো। আহি তাজওয়ারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলল,
“ডিয়ার উড বি হাব্বি, আমি তোমার ভাঙা গাড়িতে উঠতে পারবো না। তবে তুমি যদি চাও আমরা একসাথে যেতে পারি।”

আহি একটা রিকশা দেখিয়ে বলল,
“ওই যে রিকশা দেখছো, ওটা করে। অনেক তো গাড়ি চালিয়ে আমাকে শহর ঘুরিয়ে দেখিয়েছো। এবার রিকশা চালিয়ে আমাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসো।”

“আই হেইট দিস আহি।”

আহি গালে হাত দিয়ে বলল,
“ওপস, তাহলে ভ্যান গাড়ি চালাবে? আচ্ছা চলো, আমরা লোকাল বাসে উঠি। তুমি দাঁড়িয়ে থাকবে, আর আমি বসে বসে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকবো। তুমি ধাক্কা খাবে, আর আমি সিনেমা দেখবো। সিনেমার নাম হবে বিজনেস টাইকুনের একদিনের লোকাল বাস।”

আহি কথাটি বলেই শব্দ করে হাসলো। তাজওয়ার তার ড্রাইভারকে বলল,
“এখনই আরেকটা গাড়ি নিয়ে আসতে বলো।”

আহি বলল,
“ওপস, আমি থাকতে তুমি গাড়িতে উঠতে পারবে না, মিস্টার খান। রাস্তায় ইট কিন্তু আরো আছে।”

তাজওয়ার বলল,
“যাও তুমি যেখানে যাওয়ার। আমি আটকাচ্ছি না।”

আহি হেসে বলল,
“তাজওয়ার খান দেখছি তার প্রেমিকার চেয়ে বিলাসিতাকেই বেশি ভালোবাসে। একদিন কি আমার আবদার রাখা যায় না?”

“ইয়েস আহি। আই লাভ মাই রেপুটেশন। আমি তোমার জন্য রিকশা চালাতে পারবো না। কিন্তু তুমি চাইলে লাখের বেশি রিকশা কিনে তোমার নামে লিখে দিতে পারবো।”

আহি এবার শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমি সেই প্রেমিকের প্রেয়সী হতে চাই, যে আমার নামে টাকা নয়, হৃদয় লিখে দেবে।”

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে