উত্তরাধিকার (পর্বঃ-১৪)

0
1264

উত্তরাধিকার (পর্বঃ-১৪)
লেখাঃ-মোর্শেদা রুবি
************************
আজ প্রিয়ন্তী তার নতুন সংসারে চলে গেলো!
স্বেচ্ছায়….আগ্রহে….ভালোবেসে।
শাজিয়ার মনের আকাশে মেঘের ঘনঘটা।একমাত্র আদরের মেয়ের জীবনের এমন করুন পরিণতি তিনি আশা করেননি।
মেয়েটার হঠাৎ করে এবরশন হয়ে যাওয়ার পর থেকেই ও কেমন যেন বদলে গেছে।
তাঁর মন বলছে ফারিকের কিছু একটা সমস্যা হয়েছে এবং সেটা প্রিয়ন্তী জানে।
সব জেনে শুনেও ফারিককেই বিয়ে করলো মেয়েটা।
বুকে পাথরচাপা দিয়ে তিনি মেয়েকে বিদায় দিলেন।
কিছুদিন আগেও তার বাড়ীটা দুই ছেলেমেয়ে দিয়ে গমগম করতো কিন্তু এখন চারিদিকে এক অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা।
শাজিয়া মন খারাপ করে শুয়ে রইলেন!
এমন সময় প্রান্তিকের ফোন এলো।প্রিয়ন্তী চলে যাবার পর থেকে তাঁর মনটা খারাপ ছিলো।ছেলের ফোন পেয়ে তার মনটা ভালো হয়ে গেলো!
-“কি রে বাবা,মায়ের কথা মনে পড়লো?”
-“তোমার কথা প্রতিদিনই মনে পড়ে মা।
কি করছিলে?”
-“এই তো শুয়েছিলাম।তোর খবর বল্!”
-“আমি আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।তোমরা সবাই কেমন আছো?”
-“ভালোই!এদিকে তোর শ্বশুড়বাড়ী থেকে দাওয়াত এসেছিলো।তোর বাবা আর আমাকে যেতে বলেছে।কিসব যেন ওরশ না কি!”
-“তোমরা গিয়েছিলে?”
-“ন্…না রে যেতে আর পারলাম কই!”শাজিয়া ইতস্তত করতে লাগলেন!
-“যাওনি, খুব ভালো করেছো!”
-“কেন?প্রথমেও দেখলাম ওদের এসব নিয়ে তুই আপত্তি করেছিস!কেন রে?”
-“শোনো মা,কুরআন হাদীসে প্রকৃত মুখলিস বান্দাদের সাহচর্য্য অর্জনের সাধারন একটি নির্দেশ দেয়া হয়েছে!এই নির্দেশের আলোকে মুত্তাকী লোকদের সঙ্গ লাভ একটি নফল ইবাদত।আর এটা যে কোনো মুত্তাকী মুখলিস বান্দার সাথে বসলেই এই ইবাদতের সাওয়াব পাওয়া হবে।সাহাবী গণ থেকে শুরু করে তাবেয়ী,তাবে-তাবেয়ীগণ উন্মুক্তভাবেই এসব পালন করেছেন।কখনোই তারা এই ইবাদত পালন করতে কোনো শাইখের সাহচর্য্য নির্দিষ্ট করে নেননি। এখন তাঁদের সুন্নাত ফলো না করে মনগড়াভাবে কুরআন হাদীসের অর্থব্যখ্যা দাঁড় করালে তো খিলাফে সুন্নাতের মধ্যে পড়ে যাবো।বর্তমানে নিজস্ব পীর-মুর্শিদকে এমনভাবে ফলো করা হচ্ছে যে,পীরের কথায় ওঠা বসা জীবন চালানো সব করা হচ্ছে।এটা তো কেবল গোটা পৃথিবীতে একজনকে অনুসরন করেই করতে বলা হয়েছিললো।আর তিনি হলেন রাসুল সাঃ!
তিনি ছাড়া কোনো মানুষই নির্ভুল-নিষ্কলুষ না তা তিনি যত বড় বুজুর্গই হোন না কেন!
অথচ অবস্থাটা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, পীরের মুরীদ হলেই সে পুলসেরাত পার আর পীরের মুরীদ না হলে সে যত বড় ইবাদত গুজারই হোক না কেন সে গুনাহগার।
আসলে,এসব কিছু স্বার্থান্বেষী লোকের ধান্ধা ফিকির ছাড়া আর কিছুই না।হাজারো মুরীদ আমি এমন দেখেছি যারা সুন্নতের পাবন্দী তো দুরের কথা,নামাজ রোজাটাও ঠিকমতো করেনা অথচ তাদের ধারনা তারা মুক্তিপ্রাপ্ত।এরা ফরয বাদ দিয়ে নফল নিয়ে টানাটানি করে বুঝলে?ব্যপারটা এমন হলোনা,সারা গায়ে মলমূত্র মেখে নাকে খানিকটা আতর লাগিয়ে নেয়া!
ইমাম সারহিন্দী রাঃ তো বলেছেন-“সকল পীরের হাকীকি পীর তো স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাঃ)! ★{এহইয়াউস সুনান-(ডঃআঃজাহা
ঙ্গীর রাঃ) পৃঃনং-৪৮৮-৪৯০}★
শাজিয়া ক্ষীণ কন্ঠে বললেন-“বাবা,আমা
কে এতসব বলে লাভ আছে?আমি কি এসব বুঝি?”
-“বোঝা উচিত।পাশ কাটালে তো হবেনা।বাঁচতে হলে জানতে হবে! আচ্ছা,প্রিয়ন্তী কোথায়…ওকে দাও!
শাজিয়া কিছুটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন তারপর ধীরে ধীরে বললেন-“ওকে তো তোর বড়মামার ওখানে পাঠিয়ে দিয়েছি!”
-“ওহ্,তা হঠাৎ?”
শাজিয়া বুঝলেন, ছেলের কাছে এই সত্যটা বেশিদিন চেপে রাখা সম্ভব হবেনা।আজ হোক কাল হোক সে জানবেই।তাকে সব জানিয়ে দেয়াই ভালো!
শাজিয়া যথাসম্ভব গুছিয়ে প্রিয়ন্তী বা ফারিককে অপরাধী না করে দুজনের ভালোবাসার দোহাই দেখিয়ে বিষয়টাকে উপস্থাপন করার চেষ্টা করলেন কেবল প্রেগন্যান্সি আর এবরশনের বিষয়টা চেপে গেলেন!
সব শুনে প্রান্তিক কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো-“ওর ডিভোর্সের ইদ্দত শেষ হয়েছিলো?”
-“ইদ্দত?এটা কি?”
-“মানে তিন মাস পার হয়েছিলো?”
-“গুনে তো দেখিনি!”
প্রান্তিক ছোট্ট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“ইদ্দত হলো স্বামী হতে স্ত্রীর বিচ্ছেদের পর একটি নির্দিষ্ট সময়কাল যাবৎ স্ত্রী’র নিজেকে অপেক্ষা করিয়ে রাখার সময়টাই ইদ্দত।এটি এক ধরনের ইবাদত।ইদ্দত দুই ধরনের হয়।
একটি তালাকের ইদ্দত অপরটি বিধবাদের ইদ্দত।
যখন কোনো স্বামী স্ত্রীর মাঝে তালাক হয়ে যায় তখন স্ত্রীকে তিনমাস তেরো দিন ইদ্দত পালন করতে হয়,তখন সে অন্যত্র বিয়ে করতে পারেনা।তিনমাস তেরোদিন পার হবার পর সে স্বাধীন।
আর বিধবাদের ইদ্দত চারমাস দশদিন,বিধবা গর্ভবতী থাকলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত!ইদ্দত পালনের সময় স্ত্রী’কে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়!”
-“কি জানি,এতোসব তো জানিনা বাবা ?”
-“না জানার জন্য তো এতবড় একটি ইবাদত থেকে বঞ্চিত হলে আর কিছু গুনাহ কামাই করলে!আমাকে জানালে কি ক্ষতিটা হতো? এতো লুকোচুরি করলে কেন,বুঝলাম না!!প্রিয়ন্তীও আমাকে ঘুণাক্ষরেও কিছু বললোনা।তাছাড়া ফারিকের সাথে ও কতটা সুখী হবে সেটাও একটা বিরাট প্রশ্ন!”
বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর শাজিয়া ফোন রেখে ভাবনায় পড়লেন।
প্রান্তিকের কথা মিথ্যে না কিন্তু……!
আচ্ছা,প্রিয়ন্তী কি পৌঁছেছে?
ওখানে সবকিছু ঠিক আছে তো!



প্রচুর ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ফিরলো রাফিজ।স্কুলে বাচ্চা পড়ানো যে এতো কঠিন কাজ তা রাফিজের আগে জানা ছিলোনা।
টানা চারঘন্টা কাজ করে একেবারে দুপুর দুটোয় বাড়ী ফিরেছে!
বেলা ছেলেকে দেখে অবাক হলেন-“কি রে,তুই সেই যে সকালে বেরিয়েছিস,আর এখন ফিরলি।গোসল সেরে ভাত খেয়ে নে!আমি ময়নাকে টেবিলে খাবার দিতে বলি!”
সত্যি, আজ রাফিজের ক্ষিধে লেগেছে।
খেতে বসে সে ভাবছে কাল আবার যেতে হবে।সার্টিফিকেট গুলো নিয়ে যাবার কথা বলে দিয়েছে প্রিন্সিপ্যাল।
তবে নাযিয়াতের সাথে দেখা হবে একথা ভাবলেই ক্লান্তিটা একদম কেটে যায়!ভাগ্য ভালো থাকলে কাল দেখা হয়েও যেতে পারে।
এক অদ্ভুত উত্তেজনা বিরাজ করছে রাফিজের মনে।
আজ প্রায় দেড় বছর পর নাযিয়াতের সাথে দেখা হতে যাচ্ছে।
নাযিয়াত ওকে দেখলে কি বলবে?রেগে যাবে? কেঁদে ফেলবে?নাকি হেসে দেবে খুশিতে!

পরদিন আর গাড়ী নিলোনা রাফিজ।
একটা রিক্সা ডেকে তাতে উঠে পড়লো রাফিজ।
এমনিতেই সেদিন দারোয়ান ওকে গাড়ী চালাতে দেখে নানান প্রশ্ন শুরু করেছিলো! রাফিজ কোনোরকম কাটিয়ে দিয়েছে।তাই
আজ একেবারে সাধারন বেশে চলেছে স্কুলে!
আজ ছাত্ররা রাফিজকে দেখে ওরাই আগে সালাম দিলো।
রাফিজ ওদের সাথে যখন কথা বলছে তখন এক ছাত্র এসে রাফিজের হাতে একটা টকটকা লাল গোলাপ দিয়ে বললো-“স্যার, এটা আমাদের গাছের গোলাপ!আজ সকালেই ফুটেছে!তাই আপনার জন্যই নিয়ে এসেছি।
ফুলটা হাতে নিয়ে হাসলো রাফিজ।ভাবছে, ছাত্র পড়ানোর এই এক মজা।তাদের আনুগত্যের পাশাপাশি তাদের নিখাদ ভালোবাসাটাও মেলে।
রাফিজের হঠাৎ কি মনে হতেই ফুলটা ছেলেটার হাতে দিয়ে বললো-
“ফুলটা তোমাদের মিস্ কে দিও!উনি খুশি হবেন।সুন্দর জিনিস সুন্দর মানুষের জন্য!”
সাথে সাথেই ছেলেমেয়েরা চেঁচিয়ে উঠলো-আপনিও তো অনেক সুন্দর স্যার।আমাদের কত আদর করেন!”
এরই মাঝে স্কুলের বুয়া এসে জানালো-
–“প্রিন্সিপ্যাল স্যার রাফিজকে ডাকছেন!”
রাফিজ ওদের শান্ত হয়ে বসতে বলে বেরিয়ে গেলো!বারান্দা দিয়ে হাঁটার সময় ওর পাশ দিয়ে এক মহিলা গেলো।
সে রাফিজের দিকে কিছুটা অবাক হয়েই তাকিয়েছিলো।
এমন লম্বা চওড়া হ্যান্ডসাম লোকটা স্কুলে চাকরী করতে এসেছে?
গালে চাপ দাঁড়ী থাকায় ওনাকে একদম হলিউডি সুপারষ্টার ওমর ফারুকের মতো লাগছে।এঁকে কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীর জিএম টিএম হলে বেশ মানাতো!টিচার হিসেবে একদম বেমানান।
প্রিন্সিপ্যাল তাহলে এনার কথাই বলেছিলো?
বাহ্,দারুন গুড লুকিং তো!
ভেবে ভেবে অবিবাহিতা মিস নাযিয়াত শিহরিত হলেন!
ক্লাসে ঢুকতেই বাচ্চারা সব দাঁড়ালো।মিস ওদের সবাইকে বসতে বলে নিজের ব্যাগটা খুললেন কলম বের করার জন্য!
তখন এক ছাত্র এগিয়ে এসে ফুলটা মিসের দিকে বাড়িয়ে ধরলো-“মিস,এটা আপনার জন্য!”
মিস নাযিয়াত আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে বললেন-“ওয়াও…কি সুন্দর।এটা আমার জন্যে?”
পেছন থেকে আরেক ছেলে বলে উঠলো-“নো মিস,ও এটা নতুন স্যারকে দিয়েছিলো।স্যার আপনাকে দিতে বলেছে!”
মিস বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন-“আমাকে?”
-“জ্বী,স্যার বলেছেন, এটা তোমাদের মিসকে দিও….সুন্দর ফুল সুন্দর মানুষের জন্য!”
মিস নাযিয়াত আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়লেন।ওর বুঝতে কষ্ট হলোনা যে,ঐ হ্যান্ডসাম লোকটা ওকে বাচ্চাদের মাধ্যমে ইঙ্গিতে প্রপোজ করেছে।ওয়াও…দারুন।না চাইতেই মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি!
এরই মধ্যে ছেলেগুলো ফিসফাস শুরু করেছে।নাযিয়াত মিস সবাইকে থামতে বলে ওদের একজনকে দাঁড় করালেন-“কি হলো ফিসফাস করছো কেন?”
একটা ত্যাঁদোড় টাইপ ছেলে আরেকটাকে দেখিয়ে বলে উঠলো-“মিস্,ও না বলে কি…!”
-“কি বলেছে বলো আমাকে?”
-“ও বলে কি,নতুন স্যার নাযিয়াত মিসের প্রেমে পড়েছে!”
-“হোয়াট?সবগুলোর পিঠের ছাল তুলে ফেলবো!তোমরা প্রেমের কি বোঝো?”
নাযিয়াত খুব বেশী রাগতে গিয়েও পারলেন না।ক্লাস ফোরের বাচ্চা গুলো একটু বেশীই পাকনা।এ নিয়ে কয়েকবারই হৈ চৈ হয়েছে।একবার এক পিচ্চি মেয়েকে এক পিচ্চি ছেলে নাকি প্রপোজ করেছিলো।বিষয়টা প্রিন্সিপ্যাল পর্যন্ত গড়িয়েছিলো।
প্রিন্সিপ্যাল আর কি করবেন,দুজনের বাবা মাকে ডেকে ছেলেমেয়েদের সামনে হিন্দী সিরিয়াল দেখতে এবং বিদেশী কার্টুনগুলো দেখাতে বারন করে দিলেন।ওসব কার্টুনের পশুপাখি গুলোও প্রেম করে!ওরাই আমাদের বাচ্চাগুলোকে হাতে ধরে এসব শেখাচ্ছে!
কিন্তু কে শোনে কার কথা।যেই কে সেই।
সেই ছেলে এখনো ঐ মেয়ের হোমওয়ার্কের খাতা নিজে গিয়ে তুলে আনে আবার টিচারের দেখা শেষ হলে ঐ মেয়েটির টেবিলে পৌঁছে দেয়!মেয়েটিও বেশ মজা নেয়।
আজকালকার বাচ্চা গুলো অল্প বয়সেই কেমন ম্যাচিওরডদের মতো ভাবসাব।
নাযিয়াত নিজেকে সামলে নিলো।এদের সামনে ভাবাবেগে ভেসে যাওয়া চলবেনা।সে গম্ভীর মুখে ক্লাস শেষ করলো।
মাঝখানে অফ পিরিয়ডে রাফিজ যখন বসে বাচ্চাদের খাতা দেখছিলো তখন ওর পাশ থেকে কেউ একজন বললো-“থ্যাংকস!”
রাফিজ চমকে তাকালো-“জ্বী…?”
-“তখনকার চমৎকার ফুলের জন্য ধন্যবাদ।”
মিষ্টি হেসে বললো লেডি টিচার।
রাফিজ মনে মনে প্রমাদ গুনলো।সর্বনাশ..
.ফুলটা এর হাতে পড়েছে?এর নাম কি নাযিয়াত নাকি ?”
রাফিজ ফ্যাকাশে হেসে বললো-“ন্..না..ঐ ইয়ে বাচ্চারা….!”
-“আপনি বুঝি নতুন জয়েন্ট করেছেন?”
-“জ্বী!”আড়ষ্ট কন্ঠে উত্তর দিলো রাফিজ।
মহিলা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে।রাফিজ হঠাৎ বলে উঠলো-
–“আপনার নামটা যেন কি?”
আবারও মিষ্টি হাসি-
–“নাযিয়াত!আমার নাম নাযিয়াত।আর আপনার নাম রাফিজ…তাই না?প্রিন্সিপ্যা
ল ম্যামের কাছে শুনেছি!চমৎকার রোম্যান্টিক নাম তো আপনার!”
রাফিজ তাকে পাত্তা না দিয়ে কাজে মুখ ডুবালো।নিজের আবেগতাড়িত সিদ্ধান্তের জন্য ওর রাগ হচ্ছে!
না জেনে বুঝে শুধু “উম্মুল রণ” দেখেই এখানে ঝোঁকের মাথায় চাকরী নেয়াটা চরম বোকামী হয়ে গেছে।
এই মেয়েটির নাম নাযিয়াত!!
ওহ্, এটা তাহলে ওর নাযিয়াত এটা নয়!!!নাহ্,কাল থেকে আসা বন্ধ করে দিতে হবে।অযথা এসে লাভ কি?
হঠাৎ একটা কথা মনে পড়ায় মুখ তুলে বললো-“আচ্ছা,আপনার বাচ্চাটা যে অসুস্থ শুনলাম,সে এখন কেমন আছে?”
-“কিহ্ ?বাচ্চা?ইয়াল্লাহ্….হিহিহি….করে খিলখিল শব্দে হেসে উঠলো মেয়েটা।
রাফিজ মনে মনে রাগ দমন করলো,মেয়েটার ঢংটা একটু বেশীই হয়ে যাচ্ছে!একেবারে চোখে পড়ার মতো!
কিন্তু আজকের দিনটা সহ্য না করে উপায় নেই।
নাযিয়াত হাসি শেষে বললো–
-“আমার তো এখনো বিয়েই হয়নি!বাচ্চা….
আল্লাহ্…হিহিহি….বলে দাঁতে জিভ কাটলো মেয়েটি!
–“না,ঐ দিন,প্রিন্সিপ্যাল বললেন কিনা, তাই ভাবলাম….!”
বলে রাফিজ কথা শেষ করেছে এমন ভঙ্গিতে কাজে মন দিতে চেষ্টা করলো!
কিন্তু এরপরে মেয়েটি হেসে যা বললো তাতে রাফিজের হার্ট প্রবল শব্দে বিট করতে শুরু করলো!মেয়েটি বললো-
-“আরে ও তো আমাদের আরেক নাযিয়াত! মানে আমাদের দুজনের নামই নাযিয়াত।ঊনি বিবাহিত,ওনারই ছোট্ট একটা বাবু আছে !”
রাফিজ কাজ ভুলে মেয়েটির দিকে তাকালো।ও আরো কিছু প্রশ্ন করতে চায় কিন্তু মেয়েটি কি না কি ভাববে….তাই সাহস করতে পারছেনা।
তাছাড়া সে একই ভুল দু’বার করতে চায়না!নাযিয়াত নামটা শুনেই গোলাপ দিতে বলাটা ছিলো ওর প্রথম ভুল!এবারের নাযিয়াতও যে ওর নাযিয়াতই হবে,না দেখে নিশ্চিত না হয়ে আর একপাও সে এগুবে না!
রাফিজ কাগজপত্র গুছিয়ে উঠে গেলো।যদিও ওর ক্লাস শুরু হতে আরো দশ মিনিট বাকী।তবু এখানে এই মহিলার সাথে টাইম স্পেন্ড করা মানে নিজেকে আরো বড় ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়া!দরকার হলে ক্লাসে গিয়ে বসে থাকবে তবু এর সাথে টিচার্স রুমে একা বসাটা বিপজ্জনক মনে হলো রাফিজের।

পরদিন বিরসমুখে টিচার্সরুমে প্রবেশ করলো রাফিজ।অন্যান্য কয়েকজন টিচার বসে আছে।রাফিজ অভ্যাসবশতঃ সবার দিকে একবার নজর বুলালো!নাহ্,ওর নাযিয়াত এখানে নেই।তারমানে ওর ধারনাই ঠিক।নাযিয়াতের ব্যপারে ভুল করে ফেলেছে সে।ওর নাযিয়াত এখানে নেই।তবু রণ’র আম্মুটাকে দেখলে মনটা স্বস্তি পেতো!নিশ্চিন্ত হতে পারতো।
এখান থেকে চলে গেলেও মনের মধ্যে একটা খটকা থেকে যাবে ওর!
ওর জানতেই হবে রণ’র আম্মুটা কি আসলেই ওর নাযিয়াত না কি অন্য কেউ।
রাফিজ ক্লাসে রওনা দেবার জন্য রুম ছেড়ে বেরুতেই হঠাৎ ওর নিজের জায়গাতেই জমে স্থির হয়ে গেলো!
ওর প্রানভোমরা,ওর প্রিয়তমা ধীরপায়ে হেঁটে এদিকেই আসছে।আবায়ার ঢোলা হাতের ভেতর থেকে কালো রিষ্ট ওয়াচ পড়া বাঁ হাতের কব্জিটা উঁকি দিচ্ছে।
বাম হাতে কতগুলো খাতা ধরা ওর।
মাথায় কালো হিজাব, নাকে নিকাব ওকে অনন্যা করে তুলেছে।ওর হাঁটার ছন্দে ছন্দে শাড়ীর কুঁচিগুলো একবার বাম দিকে আরেকবার ডানদিকে আছড়ে পড়ছে।
রাফিজের হার্টবিট দ্বিগুন হলো।
আহা!
মায়াবন বিহারিনী হরিনী!
গহন স্বপন সঞ্চারিনী!
পরের দু লাইন ওর জন্যে না!
ভাবলো রাফিজ।
এই হরিনী ওর একার।
*
নাযিয়াত রাফিজের কাছ দিয়ে যাবার সময় তাকালো তো না’ই বরং নিকাবটা আরেকটু টেনে নাকের অনেকটা উপরে তুলে ফেললো!
তবু রাফিজের চিনতে এতটুকু ভুল হলোনা যে এটা নাযিয়াত।
নাযিয়াতের গোটা প্রোফাইল ওর মুখস্ত।
নাযিয়াত পরপুরুষের দিকে না তাকানোর অভ্যাস থেকেই রাফিজকে দেখেনি।
তাকালে দেখতে পেতো একজোড়া তৃষিত চোখ অনুক্ষণ ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে!
এখন পেয়ে কেমন তা তা থৈ থৈ করে নাচছে চোখজোড়া!
রাফিজ অপাঙ্গে ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ালো-
“আমারি বধূয়া আন বাড়ী যায়
আমারই আঙিনা দিয়া!
ক্যামোনে বাঁধিবো হিয়া….!”
….
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে