Monday, October 6, 2025







আড়ালে তুমি পর্ব – ৭

#আড়ালে তুমি
পর্ব ৭
লেখকঃ শাহরিয়ার কবির নীল

ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিলার নম্বর থেকে ফোন আসলো। প্রথমবার কেটে দিলাম। তারপর দিলো তখন ধরে আস্তে করে বললাম

আমিঃ ক্লাসে আছি একটু পরে ফোন দাও

ওপাশ থেকেঃ বাবা আমি আমি তোমার শাশুড়ী । শিলা হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে গেছে। অনেক্ষন হলো জ্ঞান ফিরছেনা। তাই আমি ওকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো।( কেঁদে)

কথাটা শুনে আমার অনেক ভয় হলো। শিলা তো সুস্থই ছিলো। হঠাৎ ওর কি হলো? কোনো খারাপ কিছু হয়নি তো? না না এসব আমি কি ভাবছি? ওর কিছু হতে পারেনা।

আমি আর দেরি না করে হাসাপাতালে দিকে চললাম। ১০ মিনিট পর পৌছালো। তারপর ফোন দিলে শাশুড়ী বলে ওনারা নিচ তলায় ১১৯ নম্বর রুমে আছে। আমি দৌড়ে চলে গেলাম। কেবিনে ঢুকে দেখি শিলা অজ্ঞান হয়ে আছে আর ওর পাশে বসে আমার শাশুড়ী কান্না করছে আর ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আমিঃ মা কি হয়েছে ওর?

শাশুড়ীঃ জানিনা বাবা। সব কিছু ঠিক ছিলো। আমরা টিভি দেখছিলাম। এমনি বসে থাকতে ভালো লাগছিলোনা তাই ওকে কফি বানাতে পাঠাই৷ অনেকক্ষণ পর ফিরে না আসলে আমি দেখতে যায়৷ গিয়ে দেখি ও ফ্লোরে পড়ে আছে। আমি তাড়াহুড়ো করে আমাদের গার্ড ডেকে ওকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ( কান্না করছেন)

আমিঃ মা ডাক্তার কি বললো?

শাশুড়ীঃ টেস্ট করতে দিয়েছি রিপোর্ট একটু পর পাবো।

আমিঃ আপনি শান্ত হন মা। কিছু হবেনা শিলার।

আমিও ওর পাশে বসলাম। আমি কিছু বলতে পারছিনা তবে ভিতরটা পুড়ে যাচ্ছে। একটু পর একজন নার্স এসে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে গেলেন। গিয়ে আমি জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ ডাক্তার সাহেব আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

ডাক্তারঃ উনি ঠিক আছেন তবে..

আমিঃ তবে কি স্যার বলুন প্লিজ।

ডাক্তারঃ একটা সমস্যা হয়েছে। তবে তার জন্য সবাইকে মিষ্টি খাওয়াতে হবে।

আমিঃ এটা কেমন ধরনের মজা? আমার স্ত্রী অসুস্থ আর আপনি মিষ্টি খেতে চাইছেন?

ডাক্তারঃ তো এমন খুশির খবরে মিষ্টি খাওয়াবেন না?

আমিঃ মানে?

ডাক্তারঃ মানে আপনাদের ঘরে নতুন সদস্য আসছে

আমিঃ মমমম মানে আআআমি বাবা হতে চলছি?

ডাক্তারঃ জ্বী।

কথাটা শুনে আমি অনেক অনেক অনেক বেশি খুশি হলাম৷ আজ যেনো আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ। তবে এমনটা তো চাইনি আমরা। আগে সেটেল হয়ে বাচ্চা নিতাম। আমি শিলাকে গিয়ে কি বলবো? তারপরও আমি গিয়ে শাশুড়ীর সামনে দাঁড়ালাম।

শাশুড়ীঃ বাবা কি বললেন ডাক্তার?

আমিঃ শিলা মা হতে চলেছে।

শাশুড়ীঃ তার মানে আমি নানী হবো? ( তার মুখে খুশি স্পস্ট)

এরই মাঝে শিলার জ্ঞান আসলো। জ্ঞান আসতেই শিলা প্রথমে জিজ্ঞেস করলো

শিলাঃ আমি এখানে কেনো? আমি তো বাড়িতে ছিলাম।

শাশুড়ীঃ তুই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলি তাই তোকে এখানে নিয়ে এসেছি।

শিলাঃ কি হয়েছে আমার?

শাশুড়ীঃ তোর কিছু হয়নি তবে আমি নানী হতে চলেছি।

শিলাঃ সত্যিইইইইই ( অনেক বেশি খুশি হলো)

শিলার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখে আমিও কিছুটা খুশি হলাম। তবে শিলার জন্য টেনসন হচ্ছে। এতো ভালো স্টুডেন্ট যদি এখন বাচ্চা নেয় তাহলে যদি ওর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়?

ওকে নিয়ে বাড়িতে আসলাম। রাতে ঘুমানোর সময় ও আমাকে জিজ্ঞেস করলো

শিলাঃ নীল তুমি খুশি হওনি?

আমিঃ খুশি অনেক হয়েছি তবে তোমার জন্য চিন্তা হচ্ছে।।

শিলাঃ কেনো?

আমিঃ এখন বাচ্চা নিলে যদি তোমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়?

শিলাঃ হলে হবে তাতে সমস্যা কি?

আমিঃ আমি তো তোমার সব কেড়ে নিলাম৷ তোমার পরিবার সব। এখন যদি তোমার পড়াশোনাও শেষ হয় তখন?

শিলাঃ কিচ্ছু হবেনা। আমি সব চালিয়ে যাবো।

আমিঃ কিভাবে?

শিলাঃ ওটা আমি দেখে নিবো।

আমিঃ জানো আমি আজ অনেক খুশি হয়েছি৷ তুমি আমার জন্য সব করলে। আজ আমাকে বাবা হবার খুশিও দিলে।

শিলাঃ পাগল তোমার জন্যই তো আমার সব।

তারপর ওর কপালে চুমুু দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। কিছুদিন পর শাশুড়ী চলে গেলো। আমি আর শিলা আগের মতো ভার্সিরি যাওয়া শুরু করলাম।

সময় চলতে থাকলো তার নিজের গতীতে। ৭ মাস পার হয়ে গেলো। ভাগ্য ভালো সেমিস্টার ফাইনাল হয়ে গিয়েছিলো।তাই এখন ওর সাথে থাকতে পারবো। আমি বেশির ভাগ সময় ওর সাথে থাকি৷ আর মাঝে মাঝে ভার্সিটির গেলেও ওর দরকারী সব ওর পাশে রেখে আসি। এর মাঝে শাশুড়ী এসেছিলেন ২ বার। অনেকদিন থেকে গেছন৷ তিনি এখনও পারেন নি শশুরের রাগ ভাঙ্গাতে।

সময়গুলো অনেক দ্রুত চলে গেলো। এখন ৯ মাস ২৫ দিন চলছে। ডাক্তার বলে দিয়েছেন যেকোনে সময় পেইন উঠতে পারে তাই সব সময় যাতে ওর পাশে থাকি। হঠাৎ দুপুরের দিকে শিলার পেইন উঠে। আমি পাশে ছিলাম। ওর গোঙ্গানির আওয়াজ শুনে উঠে দেখি অনেক ছটফট করছে।

আমিঃ শিলা কি হয়েছে তোমার? এরকম করছো কেনো?

শিলাঃ নীল অনেক ব্যাথা করছে গো। আস্তে আস্তে বাড়ছে।

আমি বুঝলাম ওর পেইন উঠেছে। আমি দেরি না করে না নাহিদ ভাইকে ফোন করে এম্বুলেন্স পাঠাতে বললাম। সেই সাথে তিনি একজন গাইনি ডাক্তার ঠিক করলেন।

একটু পর এম্বুলেন্স আসলো। ওকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম আর শাশুড়ীকে ফোন দিয়ে বললাম। হাসাপাতে পৌছে দেখি আদিবা আর নাহিদ ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। সাথে সাথে ওকে নামিয়ে পর্যবেক্ষনে রাখা হলো। ডাক্তার ওর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে গেলেন৷ তিনি বেরিয়ে আসলে আমি জিজ্ঞেস করলাম

আমিঃ ম্যাম আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

ডাক্তারঃ উনি ঠিক আছেন। বাচ্চার পজিশন ঠিক আছে সাথে সব স্বাভাবিক আছে৷ তবে O+ রক্ত লাগতে পারে আপনি ব্যবস্থা করে রাখুন। আর নর্মাল ডিলেভেরি হবে কোনো ঝুকি নাই।

একটু হালকা হলেও ভায় হচ্ছে। একটু পর শাশুড়ীও আসলেন৷

শাশুড়ীঃ বাবা শিলা কেমন আছে?

আমিঃ মা টেনসনের কোনো কারণ নাই ও একদম সুস্থ আছে। আপনি বসুন ডাক্তার সব কিছুর ব্যবস্থা করছেন।

একটু পর ডাক্তার ভিতরে গেলন। রুম সাউন্ডপ্রুফ হবার কারণে শিলার চিৎকার শোনা যাচ্ছেনা৷ অনেকক্ষন পর একজন নার্স আমার বাচ্চাকে নিয়ে বেরিয়ে এলো।

নার্সঃ অভিনন্দন আপনার ঘরে ছেলে এসেছে।

আমিঃ আপু শিলা কেমন আছে?

নার্সঃ ওনি ঠিক আছেন৷ ওনাকে অজ্ঞান করে রাখা হয়েছে। তবে ১ ব্যাগ রক্ত লাগবে। আপনি আমার সাথে আসুন।

আমি ওনার সাথে গিয়ে এক ব্যাগ রক্ত দিয়ে আসলাম৷ এসে দেখি আমার শাশুড়ী আমার ছেলেকে কোলে নিয়ে আছে। একটু পর আদিবা নিলো। আমি ডাক্তারের সাথে দেখা করতে গেলাম৷

আমিঃ ম্যাম ওর সব ঠিক আছে?

ডাক্তারঃ হুম সব স্বাভাবিক আছে। একটু পর জ্ঞান আসবে।

আমিঃ ধন্যবাদ ডাক্তার।

ডাক্তারঃ ধন্যবাদ কেনো? এটাই আমার কাজ। আর আপনার স্ত্রী অনেক শক্ত মেয়ে। হয়তো আপনাদের ভালোবাসার কারণে নিজেকে এতোটা শক্ত রাখতে পেরেছিলো।

আমিঃ ম্যাম আমি ওকে দেখে আসি

আমি ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে শিলার কেবিনে গেলাম। আমার শাশুড়ী আর আদিবা বসে আছে। ৩০ মিনিট পর ওর জ্ঞান ফিরলো। আমার শাশুড়ী ছেলেকে ওর পাশে শুইয়ে দিয়ে বাইরে গেলেন। আমি থাকলাম ভিতরে। শিলা আমার ছেলের কপালে চুমু দিয়ে ওর বুকে হাত দিয়ে থাকলো।

আমিঃ শিলা তুমি ঠিক আছো?

শিলাঃ আমার আবার কি হবে? একদম ঠিক আছি আমি৷ এই বাবুকে দেখেছো? একদম তোমার মতো হয়েছে।

আমিঃ দেখতে হবেনা ছেলে কার?

শিলাঃ আমার আর কার?

আমিঃ তোমার আর আমার। ( বলে ওর কাপলে চুমু দিলাম)

নরমাল ডেলিভারি হওয়াতে খুব তাড়াতাড়ি বিকভার করলো। ২ দিন পরেই ওকে বাড়ি নিয়ে আসলাম। শাশুড়ী আসতে পারলেন না। তবে আমি পাশে থাকি সব সময়।

আমার ছোট সংসারে আরও খুশি নিয়ে আসলো আমা ছেলে। আমার ছেলে নাম রাখলাম রিফাত কবির। ১০ দিন পর আমার শাশুড়ী এসে দেখে গেলেন৷ আরও ১ মাস এভাবে গেলো। এই ১ মাস ভার্সিটি যেতে পারেনি শিলা। শাশুড়ী তার বাসা থেকে একজন কাজের মেয়েকে পাঠালো। আমি ভার্সিটি গেলে ওর শিলার খেয়াল রাখতো।

অনেক সুখে, ভালোবাসায়, দুষ্টুমিতে আমাদের দিন চলছিলো। তবে কথায় আছেনা বেশি সুখ কারও কপালে সইনা। আমার সাথেও যে এমনটা হবে আমি বুঝতে পারিনি৷

আমার ছেলের বয়স তখন ৩ মাস। আমি রিফাতকে নিয়ে ছিলামা পাশে শিলা ছিলো। হঠাৎ তার মোবাইলে একটা কল আসে। ও অন্য ঘরে গিয়ে আড়ালে কথা বলে ৩০ মিনিট। রুমে এসে ওকে জিজ্ঞেস করলে বলে তার মা ফোন দিয়েছিলো।

পরেরদিন কাজের মেয়েটা আসেনা। শিলা নাকি সেদিন ভার্সিটি যাবে। ওর যাওয়া নাকি জরুরি ছিলো আমি সিফাতের কাছ থাকলাম। সকাল ৯ঃ৩০ এ ও বের হয়। সাধারণত ক্লাস শেষ হয় দুপুর ২ঃ৩০টার সময়। বাড়ি ফিরতে ২ঃ৪৫ বাজার কথা৷ দেখতে দেখতে ৪ টা বেজে যায়। এবার আমি ওকে ফোন দিলাম। দেখি ওর ফোন বন্ধ। এবার আমি টেনসনে পড়ে গেলাম৷ একের পর এক কল দিতে থাকলাম তবে ফোন বন্ধ।।

রাত ৯ টা আমার ছেলেটা কেঁদে একাকার করে দিয়েছে। কাঁদছে ও তবে আঘাত আমাকে লাগছে। আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা যে শিলা কোথায় যেতে পারে। শাশুড়ী নম্বরে ফোন দিলে সেটাও বন্ধ পায়। রাতটা আমি কিছুতেই চোখের পাতা বন্ধ করতে পারলাম না। আমার ছেলেকে ফিডার দিয়ে চুপ করিয়েছি।

সকাল হলে আমি আদিবা ফোন দিয়ে সব খুলে বলি। একটু পর ওরাও আমার এখানে হাজির। তন্ন তন্ন করে খুজতে থাকি ওকে। তবে ওর কোনো খোজ পাইনা। আদিবা ওদের বাড়িতে গিয়েছিলো তবে আমার শশুরের নাকি কোনো রকম রিয়্যাকশন দেখতে পাননি। তিনি সাফ জানিয়ে ছিলেন যে তার ব্যপারে কেউ কিছু জানেনা। এমনকি এটাও বলেছে যে আমি যদি ওখানে যায় তবে আমাকে আর ছেলেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করা হবে।

এরপর দিন গেলো, মাস গেলো, কেটে গেলো এক বছর। তবুও শিলার কোনো খোজ পেলাম না। আমার ছেলেটাও বড় হচ্ছিলো। কোনো রকমে ওর খেলাল রাখতাম। ২ মাস ওই বাসায় থাকার পর আর্থিক কারণে সেটা ছাড়তে হয়। তারপর একটা হোটেলে কাজ করি। আমার ছেলেকে আমি সেই কাপড়ের মালিকের বউ আমি চাচি বলতাম ওদের কাছে রেখে আসি। উনিও আমার ছেলেকে অনেক আদর করতেন। ওনার ছেলে এখন বড় চাকরি করছেন। বিয়ে করেনি এখনও৷ আমি কাজ করতাম আর মাঝে মাঝে ভার্সিটি যেতাম। রেজাল্ট আগের তুলানায় খারাপ হতে থাকে। তবে চলার মতে।

অনার্স শেষ করার ইচ্ছা না থাকলেও ভাইয়ের অনেক বুঝানোর পর আমি নিজের উপর জোর দেই। একবার ফেইল করায় ১ বছর পিছিয়ে পড়ি।
তারপরও কোনো রকমে অনার্স শেষ করি। এর মাঝে ভাইয়ের বিয়ে হয়। রিফাত ও বড় হতে থাকে। তবে ছোট থেকেই ওর মধ্যে কোনো চঞ্চলতা ছিলোনা৷ সব সময় গোমরা হয়ে বসে থাকতো। ওকে এক জায়গায় বসিয়ে রাখতে ওভাবেই থেকে যেতো। ক্ষুধা লাগলে কান্না করতো।

৫ বছর কেটে গেলো। আমি কোনো জবের জন্য এপ্লাই করিনি। রুচিও ছিলোনা। আমার ছেলেটা এখন মাঝে মাঝে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করে। ভাইয়ের একটা ছেলে হয়েছে। তবে চাচি এখনও অনেক ভালোবাসে আমার ছেলেকে। হাজার হলেও ছোট থেকে দেখে রেখেছেন৷ আর কোনোদিন শিলা বা শাশুড়ীর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। ওদের মোবাইল নম্বর আর খোলা পাইনি৷

তবে বিপদ যেনো আমার জন্যই অপেক্ষা করে থাকে। যে হোটেলে কাজ করতাম একদিন সেখানে পুলিশ রেইড মারে আর অবৈধ নারী ব্যসসার কেইস করা হয়। ব্যাস সেটাও বন্ধ হয়ে গেলো।

এবার আমি চাকরির প্রয়োজন মনে করলাম৷ জমানো ছিলো প্রায় ৩০ হাজার মতো। ভাই বললো ঢাকাতে যেতে কারণ আমার রেজাল্ট চলার মতো ওখানে গিয়ে নাকি কোনো কোম্পানিতে জব পেতে পারি।

তারপর আমি ঢাকা আসি৷ ২ মাস চেষ্টা করেও কোনো কুল কিনারা পেলাম না। অবশেষে আমি এই অফিসে এসে চাকরি পাই৷ আর তারপরের সব কিছু তো তোমরা জানোই

★বর্তমান★

আমার অতীতের কাহিনী বলা শেষ হলো। আমি নিচ দিকে মাথা করে কাঁদছি৷ পুরনো কথাগুলো অনেক বেশি কষ্ট দেয়। একটু পর মাথা তুলে দেখি ভাই আর আপুও কান্না করছে।

আমিঃ কি হলো তোমাদের? তোমরা কান্না করছো কেনো?

রফিক ভাইঃ এতো কিছু কিভাবে সহ্য করে আছিস তুই ভাই?

বর্নাঃ জানিনা তুমি কিভাবে কষ্টের মাঝেও টিকে আছো।

আমিঃ হয়তো নিজেকে শেষ করে দিতাম। তবে ছেলেটার জন্য সব কষ্ট মাটি চাপা দিয়েছি।

বর্ণাঃ শিলার সাথে আর যোগাযোগ হয়নি?

আমিঃ না। ৫ বছরে প্রতিটা দিন আমি ওকে ফোন দিয়েছি। তবে পাইনি। এখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি।

রফিক ভাইঃ তোমার শশুর বাড়ির লোকের সাথে কথা হয়নি?

আমিঃ আমি চেষ্টা করিনি৷ সেদিন খোজ নিয়ে জেনেছিলাম শিলা ভার্সিটিও যায়নি। জানিনা সে কোথায় চলে গেলো আমাদের একা রেখে। এখন সব আশা ছেড়ে দিয়েছি। মাঝে মাঝে মনেহয় ও আমার থেকেও ভালো কাউকে পেয়েছে। তবে ও আমাকে কথা দিয়েছিলো কোনোদিন আমার হাত থেকে হাত সরাবেনা৷ তবে কিসের জন্য ও চলে গেলো?
আজও আমি জানিনা তার চলে যাবার কারণ। মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলি ” আমাকে একা রেখে কোথায় চলে গেলা তুমি? #আড়ালে_তুমি রয়ে গেলে আমাকে একা ফেলে।

কথাগুলো বলেই কাঁদতে লাগলাম। রফিক ভাই আর বর্ণা আপু আমাকে শান্তনা দিতে লাগলেন।

রফিক ভাইঃ নিজেকে শক্ত কর ভাই। তোর ছেলেটার জন্য তোকে সব কিছু জোর করে ভুলতা হবে।

বর্নাঃ আসলে আমাদেরই ভুল হয়েছে। কি দরকার ছিলো ওর অতীত জানতে চাওয়ার? জানো রফিক অতীত অনেক বেশি কষ্ট দেয়। মনটা টুকরো টুকরো করে দেয় অতীত।

রফিকঃ নীল ভাই যা শুয়ে পড়। অনেক রাত হলো। যা ভাই শুয়ে পড়।

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩ টা বাজে। আমি ওদের বিদায় দিয়ে রিফাতের পাশে শুয়ে পড়লাম।
আজকে কিছুতেই ঘুম আসছেনা। অনেক্ষন ছটফট করার পর ঘুমিয়ে গেলাম।

পরেরদিন ছুটি থাকায় অনেক্ষন ঘুমালাম। এমনিতেই রাতে ঘুমাতে দেরি হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি রিফাত পাশে নেই৷ আমি উঠে পাশের রুম, বাথরুম সব জায়গায় দেখলাম তবে কোথাও নেই। এরকম ভাবে হারিয়ে জাওয়ার সাথে আমি আগে থেকেই পরিচিত তাই মনে সেই ভয় ঢুকে গেলো। কিন্তু তখনি মনে পড়লো হয়তো রিফাত রফিক ভাইয়ের বাসায় যেতে পারে। আমিও তাড়াতাড়ি গেলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। রিফাত বর্না আপুর সাথে বসে দুষ্টুমি করছে। আমাকে দেখে বর্না আপু বললো

বর্না আপুঃ কি ব্যাপার নীল তুমি?

আমিঃ আসলে আপু রিফাতকে দেখতে না পেয়ে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

বর্ন আপুঃ আচ্ছা৷ তুমি তো অনেক দেরি করে উঠলে। রিফাত অনেক আগে উঠেছে। ওর ক্ষুধা লেগেছিলো কিন্তু তুমি তো ঘুমাচ্ছিলে তাই ও আমাদের এখানে চলে এসেছে। আমি ওকে খাইয়ে দিয়েছি।

আমিঃ তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়ে দিলাম আপু

বর্না আপুঃ এক থাপ্পড় দিবো। রিফাতকে আমি সব সময় নিজের ছেলের চোখে দেখি। ওর জন্য সামান্য কাজটুকু করতে আমার কষ্ট হবে? আমাকে মনেহয় তুমি আপন ভাবতে পারোনা।

আমিঃ আরে আপু এরকম ভাবে বলছো কেনো? আমিতো ভেবেছিলাম তোমাদের ঘুম থেকে জাগিয়েছে তাই বললাম।

বর্না আপুঃ ঘুম থেকে জাগালেই বা কি সমস্যা?

আমিঃ আচ্ছা বাদ দাও তো। রফিক ভাই কই?

বর্না আপুঃ ও তো বাইরে গেলো বাজার করতে। আজকে দুপুরে একটু ভালো খাবার রান্না করবো তাই মাংস আর দই আনতে পাঠিয়েছি।

আমিঃ তাহলে আজকে অনেক মজা হবে৷

বর্না আপুঃ এখন খেয়ে নাও। আমরা খেয়ে নিয়েছি। মা এখনও খাইনি তুমি ওনাকে সাথে নিয়ে খেয়ে নাও।

আমিঃ আচ্ছা। আন্টি কই?

বর্না আপুঃ ঘরে আছে। তুমি টেবিলে বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি।

আমি গিয়ে টেবিলে বসলাম। একটু পর আন্টি আসলো।

আন্টিঃ বাবা আজকে এতো দেরি করে খেতে আসলে কেনো?

আমিঃ আসলে আন্টি উঠতে দেরি হয়ে গেছে তাই আজকে দেরি হলো।

আন্টিঃ বাবা আর কতোদিন এভাবে বসে থাকবে? একটা বিয়ে করে নাও।

আমিঃ না আন্টি। সৎ মা কোনোদিনও আমার ছেলেকে ভালো রাখতে পারবেনা। এমনিতেই আপনি আছেন, রফিক ভাই আছে আর বর্না আপু আছে সবাই মিলে একসাথে ওকে বড় করবো। আর বাকি জীবনটাও ওকে নিয়ে কাটিয়ে দিবো।

বর্না আপু খাবার নিয়ে আসলো। আমরা খেয়ে নিলাম। খাওয়া শেষ হবার পরই রফিক ভাই আসলো।

রফিক ভাইঃ কিরে তুই এখন খেতে বসেছিস?

আমিঃ কাল রাতে তো তুমিই জাগিয়ে রাখলে আর এখন তুমি জিজ্ঞেস করছো?

রফিক ভাইঃ তা অবশ্য ঠিক। দুপুরে আজকে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া হবে। এখন কোথাও যাবি?

আমিঃ না। এখন আবার কোথায় যাবো?

রফিক ভাইঃ আচ্ছা বিকালে তো কোনো কাজ নাই তোর তাই না?

আমিঃ তুমি জানোনা অফিস ছাড়া আমার আর কোনো কাজ থাকেনা?

রফিক ভাইঃ জানিতো। তাও তো থাকতে পারে তাইনা?

আমিঃ কিছু বলবে?

রফিক ভাইঃ বিকালে ঘুরতে গেলে কেমন হয়?

আমিঃ আইডিয়াটা খারাপ না। ঘুরে আসা যায়। আপু কে বলে দেখো।

রফিক ভাইঃ ও এমনিই রাজি হয়ে যাবে।

আমিঃ তাহলে চলো আজকে ঘুরেই আসি।

রফিক ভাইঃ বিকালে রেডি থাকিস।

আমিঃ আচ্ছা।

আমি আমার ফ্ল্যাটে চলে এলাম৷ রিফাত ওখানেই খেলছে। এখন একটু চঞ্চল হয়েছে। আমি রুমে গিয়ে ফোন টিপছিলাম৷ কখন যে ঘুমিয়ে গেছি মনে নেয়। উঠে দেখি দুপুর হয়ে আসছে। আমি তাড়াতাড়ি গোসল করে রফিক ভাইয়ের সাথে গল্প করত গেলাম। আপু আর আন্টি রান্নার কাজ করছে।

দুপুরে খেতে বসলাম। আমি আপুদের সাথেই খাই। রফিক ভাই আর আন্টি আমাকে রান্না করতে দিবেনা। কি আর করার বিনা কষ্টে খেতে পাচ্ছি এতো ভেবে কি লাভ। খাওয়া শেষ করে রিফাতকে নিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আমি ইউটিউবে ভিডিও দেখে সময় পার করছিলাম। আর ঘুমাবেই বা কতো?

বিকালে উঠে আমি রেডি হয়ে রফিক ভাইদের সাথে ঘুরতে গেলাম। একটা পার্কে এলাম আমরা। অনেকক্ষন ঘুরলাম। দিনটা একটু আনন্দেই কাটলো। কাল থেকে আমার অফিস যেতে হবে।

আজ থেকে আবার অফিস শুরু হলো। অফিসের কেউ জানেনা যে রফিক ভাই আর বর্না আপুর বিয়ে হয়েছে। রফিক ভাই সিনিয়র অফিসার হওয়ায় তাকে অনেক কাজ করতে হয়৷ বর্না আপু নতুন হওয়ায় তার কাজ কম সাথে আমারও। আমরা একে অপরকে সাহায্য করে কাজ করি৷ একসাথেই লাঞ্চ করি আর যাওয়া আসা করি। রফিক ভাই আর বর্না আপু দজনেই আমাকে নিজের ভাই ভাবে।

একদিন অফিসে কাজ করছি। কাজ বেশি না থাকায় আমি বর্না আপুর সাথে কথা বলছিলাম। তখন পিয়ন এসে বললো আমাকে নাকি ম্যাম ডেকেছেন। আমিও গেলাম উনার কেবিনে।

আমিঃ আসবো?

শিলা ম্যামঃ আসো আসো। তা তোমার কাজ কেমন চলছে?

আমিঃ জ্বী ম্যাম ভালোই চলছে।

শিলা ম্যামঃ কাজের পাশাপাশি তো ভালোই মিস বর্নার সাথে তো ভালোই কথা বলো।

আমিঃ কাজ না থাকলে টুকটাক বলি আরকি।

শিলা ম্যামঃ তা তোমাদের মধ্যে কিছু চলছে নাকি?

আমিঃ কি বুঝাতে চাইছেন ম্যাম?

শিলা ম্যামঃ বুঝোনা? প্রেম ভালোবাসা কিছু চলছে নাকি?

আমিঃ ম্যাম উনি আমার বোনের মতো। আমিও ওনাকে নিজের বোনের মতোই মনে করি। তার চেয়ে বড় কথা উনি রফিক ভাইয়ের সহধর্মিণী। আমি উনাকে নিজের বোনের চোখে দেখি আর উনিও আমাকে নিজের ভাইয়ের মতোই ভালোবাসে।

শিলা ম্যামঃ কিহহ? রফিক সাহেব বিয়ে করেছেন? কই কাউকে তো কিছু বলেনি?

আমিঃ ম্যাম পার্সোনাল কিছু ইস্যু ছিলো তাই কাউকে বলা হয়নি।

শিলা ম্যামঃ বিয়ের কয়দিন হলো?

আমিঃ বেশি না কয়েকদিন মাত্র।

শিলা ম্যামঃ এবার বুঝলাম তাদের একসাথে ছুটি নেওয়ার কারণ।

আমিঃ ঠিক ভাবছেন। বিয়ের জন্যই উনি ছুটি নিয়েছেন।

শিলা ম্যামঃ সরি আমি অন্য কিছু ভাবছিলাম। কিছু মনে করবেন না।

আমিঃ ম্যাম কিছু কাজ আছে?

শিলা ম্যামঃ না। এখন যেতে পারো।

আমি ম্যামের কেবিন থেকে চলে এলাম৷ অফিস শেষ করে আমি একটু মার্কেট গেলাম৷ আমার আর রিফাতের জন্য কিছু জামা কাপড় কিনতে হবে৷ আমি রফিক ভাইকে বলেছি যাতে রিফাতকে নিয়ে চলে যায় বাড়ি।

মার্কেটে গিয়ে অফিসের জন্য নতুন পোশাক, জুতা আর যাবতীয় কিছু জিনিস কিনলাম। রিফাতের জন্য টি-শার্ট, প্যান্ট কিলনাম সাথে ওর জন্য কিছু চকলেট নিলাম।

মার্কেট থেকে বের হচ্ছিলাম। এমন সময় একটা মেয়ের সাথে ধাক্কা লাগলো। আমি ওনাকে সরি বলতে যাবো তখনি ওনার দিকে চোখ পড়লো। আমি তো তাকে দেখে অবাক। এটাতো তৃপ্তি। পাশে একজন সুদর্শন ছেলে আছে আমার বয়সি হবে।

তৃপ্তিঃ সরি ভাইয়া আমি দেখতে পাইনি।

ছেলেটা আমাকে আমার জিনিসগুলো তুলে দিলো। আসলে আমাকে চিনতে না পারার কারণ এখহ আমি দাড়ি বড় আছে।

ছেলেটাঃ সরি ভাইয়া। কিছু মনে করবেন না।

আমিঃ কিছু মনে করবোনা মানে? দেখে চলতে পারেন না? ( একটু নাটক করছি)

তৃপ্তিঃ আর অন্যমনস্ক্য হয়ে থাকবোনা। প্লিজ ক্ষমা করে দিন।

আমিঃ ক্ষমা করতে পারি তবে আমার থেকে কফি খেলা হবে।

তৃপ্তিঃ এটা কেমন কথা ভাইয়া ভুল করলাম আমি আর আপনি কফি খাওয়াবেন?

আমিঃ তুমি আমাকে চিনতে পারোনি তৃপ্তি?

তৃপ্তিঃ আপনি আমার নাম কিভাবে জানলেন?( অবাক হয়ে)

আমিঃ এখন তো ডাক্তার হয়ে গিয়েছো। এখন কিভাবে এই এতিমকে চিনবে। ( একটু ন্যাকামু করে)

তৃপ্তিঃ ওয়েট ওয়েট তুমি নীল?

আমিঃ তাহলে এতোক্ষণে চিনতে পারলে?

তৃপ্তিঃ এতোদিন পর তোমাকে দেখে চিনতে পারিনি৷ কি হাল করেছো নিজের?

আমিঃ কি করবো বলো গুছিয়ে দেওয়ার মানুষটাউ তো আর নেই।

ছেলেটাঃ তৃপ্তি তুমি ইনাকে চিনো?

তৃপ্তিঃ আরে এটাই তো নীল যার কথা তোমাকে বলেছিলাম।

ছেলেটাঃ আপনি তাহলে নীল? তৃপ্তির মুখে অনেকবার আপনার কথা শুনেছি। তা কেমন আছেন আপনি?

আমিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভাইয়া চলছে কোনো রকমে। আপনি কেমন আছেন?

ছেকেটাঃ আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি।

তৃপ্তিঃ নীল ইনি আমার হাসবেন্ড আকাশ শিকদার।

আমিঃ বুঝতে পেরেছি আমি৷ চলুন ভাইয়া কফি খেয়ে আসি।

ওদের নিয়ে একটা কফিশপে গেলাম। কফি খেতে খেতে কথা বলছি

তৃপ্তিঃ তা তুমি ঢাকা কখন এলে?

আমিঃ হলো কয়েক মাস মতো। তোমার তো রংপুরে থাকার কথা।

তৃপ্তিঃ আসলে রাকিবের পোস্টিং তো ঢাকাতে হয়েছিল তাই আমিও ঢাকাতে চলে এসেছি। গত বছর বিয়ে করেছি।

আমিঃ ওহ। আদিবার কথা জানো?.

তৃপ্তিঃ তুমি চলে আসার পর ওরা অনেক খুজেছে তোমাকে। কিন্তু তোমাকে পাইনি। আর ফোনও বন্ধ পেয়েছে।

আমিঃ আসলে আমি সিম পরিবর্তন করে নিয়েছিলাম।

তৃপ্তিঃ আচ্ছা তোমার নম্বটা দাও তো।

আমিঃ ০১৭৩৮******।

তৃপ্তিঃ আচ্ছা নীল আজকে আসি তাহলে। পরে আবার কথা হবে।

আমিঃ আচ্ছা। ভাইয়া আবার দেখা হবে।

রাকিবঃ আচ্ছা। ভালো থাকবেন।

অনেকদিন পর দেখে ভালোই লাগলো। জানি শিলার কথা তুলেনি কারণ আমি কষ্ট পেতে পারি ভেবে। আমি বাড়ি ফিরে এলাম।

এভাবেই ২ মাস পার হলো। আজকে ডেস্কে বসে একা কাজ করছিলাম৷ একটু পরে ম্যাম আমাদের সকলকে উদ্দেশ্য করে বললেন

ম্যামঃ আমি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সবাই একটু আমার কথায় ফোকাস করুন।

আমরা সকালে কাজ ফেলে ম্যামের দিকে কথায় কান দিলাম

ম্যামঃ আপনাদের সকলের উদ্দেশ্য আমি বলতে চাই সামনে সপ্তাহে আমাদের অফিস থেকে বক্সবাজারের ৫ দিনের ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যারা যেতে আগ্রহী তারা কালকের মধ্যে কনফার্ম করবেন। আর ফ্যামিলি এলাও না। জাস্ট অফিসের মেম্বাররা এলাউড। আশা করি কালকের মধ্যে সবাই জানিয়ে দিবেন।

সবাই খুশি হলেও আমি, রফিক ভাই, বর্না আপু খুশি হতে পারলাম না। কারণ ফ্যামিলি এলাউ না হলে আমি আমার ছেলেকে নিতে পারবোনা৷ আর রফিক ভাই তার শাশুড়ীকে নিতে পারবেন না। মনে মনে এখনি ঠিক হয়ে গেলো আমাদের যাওয়া হবেনা।

অফিস শেষে বাসায় এলাম৷ খাওয়া শেষে রফিক ভাই বললেন

রফিক ভাইঃ নীল তুই কি ট্যুরে যাবি?

আমিঃ ফ্যামিলি যেহেতু এলাউ না তাহলে যাওয়ার প্রশ্নই উঠেনা।

রফিক ভাইঃ হ্যারে। আমি তো মাকে রেখে কোনো মতেই যেতে পারবোনা।

আমিঃ আর তোমরা না গেলে আমিও যাবোনা৷

রফিক ভাইঃ ভালোই হবে এই কদিন ছুটি কাটাতে পারবো।

আমিঃ হুম। জমিয়ে আড্ডা দিতে পারবো।

রাতটা পার করে আজকে অফিস গেলাম। বিকালের মধ্যে সবাইকে জানাতে হবে৷ আমি এসে কাজই করছিলাম। তখন আবার ম্যামের ডাক পড়লো

আমিঃ আসবো?

ম্যামঃ আসো। তা তুমি তো কিছু বললেনা।

আমিঃ আমার যাওয়া হবেনা ম্যাম। আমি আমার ছেলেকে রেখে যেতে পারবোনা।

ম্যামঃ সাথে নিয়ে নাও। সমস্যা কি?

আমিঃ তারপরও যেতে পারবোনা। রফিক ভাইও যাবেনা আর বর্ণা আপুও যাবেনা৷ ওরা না গেলে আমিও যাবোনা।

ম্যামঃ ওনারা যাবেননা কেনো?

আমিঃ কারণ বর্ণা আপুর মাকে একা রেখে যেতে পারবেন না তারা।

ম্যামঃ আচ্ছা কি আর বলবো তাহলে।

মনটা খারাপ হলো আমার। কারণ প্রথম বার কোথাও ঘুরার সুযোগ পেলেও হাতছাড়া হয়ে গেলো।
আমি ডেস্কে ফিরে এসে কাজে মন দিলাম। একটু পর একটা আননোন নম্বর থেকে কল আসলো। আমি পিক করলাম

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?

ওপাশ থেকেঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আমি তৃপ্তি বলছি।

আমিঃ আচ্ছা তা কেমন আছো?

তৃপ্তিঃ আলহামদুলিল্লাহ। আচ্ছা আজকে অফিস শেষে দেখা করতে পারবা?

আমিঃ হুম। কোথায় আসতে হবে?

তৃপ্তিঃ সেন্ট্রাল পার্কের পাশে ” lovers cafe” তে চলে আসবা তাহলে।

আমিঃ আচ্ছা আমি চলে আসবো।

একটু পর অফিস শেষ হলো। আমি রফিক ভাইকে বলে দিলাম যাতে রিফাতকে নিয়ে বাসায় চলে যায়। আর আমি তৃপ্তির দেওয়া ঠিকানায় গেলাম।

১৫ মিনিট লাগলো পৌছাতে। ক্যাফে খুজে পেতেও কোনো সমস্যা হয়নি। আমি ক্যাফেতে প্রবেশ করে ওদের খুজছিলাম। একটু পর ওদের দেখলাম। তবে উল্টো দিকে ফিরে ওদের সাথে আরও দুইজন বসে আছে। আমি গিয়ে ওদের হ্যালো বলতেই উল্টো দিকে চেয়ে থাকা দুইজন আমার দিকে ফিরে তাকালো।

তবে ওদের দেখে আমি অনেক বেশি অবাক হলাম। আমি ওদের আমি এখানে দেখবো তা আশা করিনি। কারণ আমি যাদের দেখলাম তারা হলো……………

চলবে…………………..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ