#আস্থা
পর্ব ৫+৬
Farzana Akter Mithila
গাড়ি এক্সিডেন্ট তার আরফান,আন্নি,শিমলা জায়গায় মারা যায় আর তার বাবা আইসিইউতে আছে তার অবস্থাও ভালো না
আইরার চিতকার দিয়ে উঠে
আল্লাহ আমার সাথে কেন এমন করলে সব কিছু আমার থেকে কেড়ে নিলে কেন আল্লাহ আমি কি দোষ করেছিলাম
রাবেয়াঃ মারে তুই শান্ত হও তোকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই তবুও বলছি একটু শান্ত হও তুই নিজেও অসুস্থ
আইরাঃ ভাইয়া ভাবি মামনি কোথায়??
রাবেয়াঃ ওদের কে লাশ ঘরে রাখা হয়েছে
আইরাঃ আমাকে নিয়ে যাবে
রাবেয়াঃ তুই নিজেকে একবার দেখ তোর কি অবস্থা এই অবস্থায় তোকে কোথাও নিয়ে যেতে পারব না
আইরা নিজের দিকে তাকালো
হাতে ক্যানোল লাগানো রক্ত যাচ্ছে বেড থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই তার
মাথায় ব্যথা অনুভব করতে আস্তে আস্তে মাথায় হাত দিয়ে বুজলো মাথায় ব্যান্ডেজ করা আর মাথা কোন চুল নেই
আইরা শান্ত স্বরে বলল
আমার চুল কি কেটে ফেলেছে আন্টি??
রাবেয়াঃ হ্যাঁ রে মা তোর মাথার অনেক জায়গায় কেটে গেছে তাই চুল কাটতে হয়েছে
আইরাঃ ভালোই হইছে চুল কেটে ফেলেছে
রাবেয়াঃ কেন রে মা চুল গুলো কি দোষ করেছিল
আইরাঃ আমি তো নিজেকে সামলাতে পারতাম না মামনি আর ভাবি আমার সব করে দিত আমার চুল আছড়ে দিত তেল দিয়ে দিত
ওরা তো আল্লাহর কাছে চলে গেছে
রাবেয়া আইরার কথার কোন উত্তর না দিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠল
এখন থেকে নিজেকে সামলাতে শেখো আইরা
পরিচিত কণ্ঠ শুনে আইরা দরজার দিকে তাকালো
আইরাঃ রায়েদ ভাইয়া আপনি
রায়েদঃ হুম আমি
রাবেয়াঃ তুই কখন আসলি??
একবারও আমাকে জানালি তুই আসবি
রায়েদঃ সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম আম্মু কিন্তু আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেছি
রাবেয়াঃ কোথা থেকে কি হয়ে গেলো
রায়েদঃ আমি সব শুনেছি আম্মু
আইরাঃ পাপা এখন কেমন আছে
রায়েদঃঅবস্থা ভালো নয় আইরা যেকোনো সময় কিছু হয়ে যেতে পারে
আইরাঃ ভাইয়া আমাকে একটু পাপার কাছে নিয়ে যাবেন??
রায়েদঃ এই অবস্থা তুমি যেতে পারবেনা
আইরাঃ আমি পারব
রায়েদঃ আচ্ছা আমি দেখছি
হঠাৎ নার্স এসে রায়েদ কে বলল আপনাদের পেশেন্ট আইরা নামের কাউকে খুজছে ওনাকে আনার ব্যবস্থা করুন পেশেন্ট এর অবস্থা খুব খারাপ
আইরা পাপা বলে চিতকার দিয়ে ক্যানোল খুলে উঠে গেলেই পড়ে গেল
রায়েদঃ আইরা সাবধানে আমি নিয়ে যাচ্ছি তোমাকে
সিস্টার একটা হুইলচেয়ার এর ব্যবস্থা করুন
নার্সঃ ওকে স্যার
রায়েদ হুইলচেয়ারে করে আইরাকে আইসিইউতে নিয়ে গেল
আইরা কে দেখে মহিন একটু শান্ত হল
ডক্টরঃ আপনি আইরা?
আইরাঃ জি
ডক্টরঃ আপনারা কথা বলুন তবে পেশেন্ট কি বেশি কিছু বলতে দিয়েন না
রায়েদঃ ওকে ডক্টর
আইরাঃ পাপা
মহিনঃ তো তোর কু খুব লেগেছে
আইরাঃ না পাপা আমার কোথাও লাগেনি।
মহিনঃ আ আ আমাকে তো তোর মাআ মনি ডাকছে যে যেতে হবে আ আ আমার কাছে সময় খুব কম তু তু তুই নিজের খেয়াল রা রাখিস
আইরাঃ পাপা তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা আমি কি নিয়ে বাচবো তুমি চলে গেলে আমি যে একদম একা হয়ে যাব পাপা প্লিজ তুমি যেওনা
মহিনঃ রা রা রায়ে( উত্তেজিত হয়ে)
রায়েদঃ আংকেল আমি আছি আপনি উত্তেজিত হয়েন না
মহিন কিছু বলতে পারছেনা
হাত এগিয়ে আইরার হাত ধরতে গেলে আইরা মহিন এর হাত ধরে বলে পাপা তুমি আমাকে ছেড়ে যেওনা প্লিজ পাপা
মহিন আইরার হাত রায়েদ এর হাতে দিয়ে আবার বলতে চেষ্টা করল
মহিনঃ আ আজিজ আ আ আমার মেয়েটাকে তু তুই নি নিজ কা কাছে রা রাখিস ওর তো তো তোয়া চা ছাড়া আ আর কে কেউ নেই
আজিজ বুজতে পারল মহিন কি বলতে চাচ্ছে
আজিজঃ দোস্ত তুই সুস্থ হয়ে আয় একবার তোর মেয়েটা আমি আমার বাসায় নিয়ে আসব ধুমধাম করে তোর চিন্তা করতে হবেনা
মহিনঃ রা রা য়েদ তু তুই আই আরা কে বি বি বিয়ে করি স ও ওকে কখনো ক ক কষ্ট দিস না বাআ বা
আ আমাকে মা মাফ ক-এর দিস মা আ
রা রা য়েদ কে নিয়ে ভা লও থা
আর কিছু বলতে পারেনা মহিন
শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে চলে গিয়েছে সে
আইরাঃ পাপায়ায়ায়া
বলেই সেন্সলেস হয়ে যায়
আজিজ রায়েদ কে জড়িয়ে কান্না করে দেই নিজেক সামলাতে পারছেনা
রায়েদঃ আব্বু তুমি শান্ত হও তুমি ভেঙে পড়লে আমি আইরা কে সামলাবো কি করে বল??
আজিজ কান্না থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা
পারবে কি করে তার প্রান প্রিয় বন্ধু তার চোখের সামনে চলে গেল
আজিজ এর মহিন ছাড়া এই শহরে অন্য কেউ নেই
মহিন এর তাই
ছোট বেলাই মা বাবা কে হারিয়ে এতিম খানায় একসাথে বড় হয় আজিজ মহিন সেই ছোট থেকেই তাদের এই বন্ধুত্ব সেই বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন করে মহিন চলে গেছে এটা সে মানতে পারছেনা
অন্যদিকে
আইরা পাপা পাপা বলেই চিতকার করে উঠতে আবার সেন্সলেস হয়ে যাচ্ছে
রায়েদ রিয়াদ কে ফোন করে বলল দাফন এর সব ব্যবস্থা করতে
রাবেয়া বেগম আইরা পাশে বসে কান্না করছে
শিমলা আর সে ছিল বেস্টফ্রেন্ড। বেস্টফ্রেন্ড কে হারিয়ে সে নিস্তব্ধ হয়ে আছে
১দিনের ব্যবধানে কি হয়ে গেলো
আইরার জ্ঞান ফেরার পর একদম চুপ হয়ে গেছে কোন কথা বলছেনা
আজিজঃ ডক্টর আইরার কি অবস্থা এখন
ডক্টরঃ এখন ও বিপদ মুক্ত কিন্তু ওকে মানসিক ভাবে ভাল রাখতে হবে।মানসিক ভাবে অনেক ভেঙে পড়ছে
আজিজঃ এক সাথে মেয়েটা সব হারায়ে ফেলছে মানসিক ভাবে কি করে ভাল থাকবে
ডক্টরঃ ওকে আনন্দের মধ্যে রাখবেন সব সময়।
আজিজঃ ওকে কি বাসায় নিয়ে যাওয়া যাবে
ডক্টরঃ এই অবস্থায় কিভাবে
রিয়াদঃ স্যার আমি ওর খেয়াল রাখব কিন্তু ওকে
এখন বাসায় নিয়ে যেতে হবে
আসর বাদ এর পরিবারের দাফন
ডক্টরঃ তুমি যেহেতু আছো তাহলে প্রব্লেম নেই।নিয়ে যাও আর কোন প্রব্লেম হলে আমাকে জানিও
রিয়াদঃ ওকে স্যার
আহমেদ ম্যানশন
আইরা এখনো ঘুম নিলা পাশে বসে আছে
কিছুসময় পর আইরা পাপা বলে চিতকার করে উঠলো
আইরাঃ ভাবি আমার পাপা কোথায় মামনি ভাইয়া ভাবি কোথায়
নিলাঃ বাগানে
আইরাঃ আমাকে নিয়ে চল
নিলাঃ চল
নিলা ধরে ধরে আইরাকে বাগানে নিয়ে যাচ্ছে
আইরা কে এই অবস্থায় দেখে রায়ানের বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ওঠে
রায়ান মনে মনে বলল
আর এই অবস্থার জন্য একমাত্র আমি দায়ী আমার জন্য এমন হলো
কিন্তু ওদের গাড়ির ব্রেক কিভাবে ফেল করল
রায়ান এর কাধে মিতু হাত রেখে বলল পারলে আমাকে মাফ করে দিও আমার জন্য এসব হয়েছে
রায়ানঃ তোমার জন্য মানে
মিতুঃ হুম আমার জন্য রায়ান
রায়ানঃ সব খুলে বল
মিতুঃ আইরাকে আব্বু মেরে ফেলতে চেয়েছিল যাতে ও আমার আর তোমার মাঝে না আসে।কালকে যখন ওরা যাবে তার কিছু সময় আগে আব্বু গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে দেয়
মিতুর কথা শুনে
রায়ান মিতু কে চেপে ধরে দেয়াল এর সাথে
রায়ানঃ কেন করলে তোমরা এমন?? কেন করলে?? আমার ভুলের শাস্তি আমাকে দিতে।আমি তো আমার ভুলের জন্য তোমাকে বিয়ে করেছি তাহলে কেন এমন করলে
আইরা আর ওর ফ্যামিলি তো কোন দোষ করেনি মিতু কেন মারলে ওদের
মিতুঃ আব্বু এমন করবে আমি জানতাম না সকালে আম্মু ফোন করে বলেছে আমাকে।
রায়ান মিতুকে ছেড়ে দিয়ে বাগানে চলে যায় গিয়ে দেখে আইরা একধ্যানে লাশ গুলো দেখে যাচ্ছে এই দেখায় তার শেষ দেখা আর কখনো তার আপন মানুষ গুলোকে দেখতে পারবেনা
লাশ গুলো নিয়ে যাচ্ছে আর আইরা সবার দিকে তাকিয়ে আছে
দাফন শেষে সবাই বাসায় ফিরেছে
কারোর মুখে কোন কথা নেই সবাই চুপ করে বসে আছে
আইরা ঘিরে
ছাদে রায়ান একা একা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে হঠাৎ কেউ কাধে হাত দিতেই পিছেনে ফিরে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল রায়ান
রায়েদঃ সত্যি কি তুই মিতুকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিস রায়ান?? বড় ভাইয়ার থেকে যতটুক শুনেছি তাতে আমার বিশ্বাস হচ্ছেনা তুই আইরার সাথে টাইম পাস করেছিস
রায়ান চুপ
রায়েদঃ কি জন্য মিতুকে বিয়ে করলি আমাকে বল রায়ান
রায়ান বলতে শুরু করল
২মাস আগে একটা কাজে মামাদের বাসায় যায় আমি
৫দিন ছিলাম আমি
কিছু দিন আগে মিতু আমাকে ফোন করে ওদের বাসায় যেতে বলে
আমি ওদের বাসায় গিয়ে দেখি বাসায় কেউ নেই তখন মিতু আমাকে বলে
একদিন রাতে নাকি আমি নেশা করে মিতুর সাথে খারাপ কিছু করেছি আর মিতু প্রেগন্যান্ট কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি কারন আমি কখনো নেশা করিনি
মিতু আমাকে বলে আমি জানি তোমার কিছু মনে নেই এটা দেখো
মিতুর ফোনে একটা ভিডিও দেখে আমি কাপতে থাকি এটা কি করে সম্ভব বুজতে পারিনি আমি
মিতু তখন বলে ওকে যদি আমি বিয়ে না করি তবে ও সুইসাইড করবে
আমার কাছে ওকে বিয়ে করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না ভাইয়া নিজের ভুলের মাশুল যে আইরাকে এই ভাবে দিতে হবে আমি কখনো কল্পনা করতে পারিনি
রায়েদঃ আমি ভাবতে পারছিনা কিছু
রায়ানঃ আমি জানি আমি ভুল করেছি কিন্তু আমার ভুলের জন্য আইরা ওর পরিবারকে হারিয়েছে ভাইয়া
রায়েদঃ মানে
রায়ানঃ গাড়ির ব্রেক নষ্ট ছিল না নষ্ট করা হয়েছে
রায়েদঃ কি বলছিস তুই
রায়ানঃ হ্যা ভাইয়া এসব মিতুর বাবা করেছে
রায়েদঃ মামা এসব করেছে কিন্তু কেন
রায়ানঃ আইরা যাতে আমার জীবনে আর কখনো না আসে
রায়েদঃ আমি উনাকে ছাড়বনা
রায়ানঃ আমি পুলিশ কে ইনফর্ম করেছি ওরা আসছে
রায়েদঃ নিচে চল
লিভিং রুমে
পুলিশকে দেখে সবাই অবাক হয়ে যায় এত রাতে পুলিশ কেন
পুলিশঃ স্যার ক্রিমিনাল কে
রায়ান মিতুর বাবার দিকে দেখিয়ে দিয়ে বলে উনি
কেউ কিছু বুজতে পারছেনা কি হচ্ছে
পুলিশ মিতুর আব্বুকে এরেস্ট করে
পুলিশঃ স্যার ওনার শাস্তির জন্য প্রুফ লাগবে
রায়ানঃ হুম আমি প্রুফ দিচ্ছি
বলে রায়ান নিজের রুম গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে আসে
রায়ানঃ এই ফূটেজে স্পষ্ট দেখতে পারবেন উনি গাড়ির ব্রেক নষ্ট করছে
আর এই অডিও রেকর্ড এ যথেষ্ট
পুলিশঃ জি স্যার, কালকে একটু অফিসে আসবেন প্লিজ যদিও এখন আপনাকে অফিসে আসা ঠিক না তবুও একটু আসবেন প্লিজ
রায়ানঃ আচ্ছা আমি যাব উনার শাস্তির জন্য যা করা লাগে আমি করব উনাকে নিয়ে যায়
পুলিশ মিতুর আব্বুকে নিয়ে চলে যায়।
মিতুর আব্বুর পাওয়ার থাকায় মাত্র ২ বছর জেলে হয় তার
সময় কারোর জন্য থেমে থাকেনা
দেখতে দেখতে ৪ মাস পেরিয়ে গেছে
এত বড় বাড়িতে আইরা আর ২ জন কাজের লোক থাকে আজিজ আইরাকে নিজের কাছে রাখতে চেয়েছিলেন কিন্তু আইরা থাকেনি এই ৪ মাসে সে একবার আহমেদ ম্যানশন এ যায়নি এই ৪মাসে অনেক বদলে গেছে আইরা এখন নিজেকে সামলাতে পারে সব কাজ করতে পারে এককথায় সংসারী মেয়ে হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছে সেদিনের রায়ানের কথা গুলো আজ ও তার কানে বাজে সেই কথার ভিত্তিতেই তার পরিবর্তন। মাঝেমধ্যে আহমেদ ফ্যামিলির সবাই আসে। রায়েদ এসসে আইরার সাথে সময় কাটায়।প্রথম দিকে বিরক্ত হলেও এখন নরমাল হয়ে গেছে
আজিজঃ মা তুই ঠিক আছিস তো?? তোর কিছু হইনি তো
আইরাঃ না আংকেল আমি একদম ঠিক আছি এতো অস্থির হইয়োনা
আজিজঃ এত রাতে কল দিলে টেনশন হইনা এত বার বললাম আমার বাসায় থাক থাকলি না
আইরাঃ এবার থাকব
আজিজঃ সত্যি মা? আমি আসব তোকে নিতে?
আইরাঃ এখন না কালকে এসো।আর সাথে সবাইকে নিয়ে আসবে
আমি এখন তোমার পরিবারর যোগ্য হয়ে গেছি।তোমার আপত্তি না থাকলে আমি কালকে রায়েদ কে বিয়ে করতে চায়।
আজিজঃ আমার কোন আপত্তি নেই কিন্তু রায়েদ
আইরাঃ উনি রাজি আছে কালকে সবাই কে নিয়ে তারাতাড়ি চলে এসো আমি একা কয়দিক দেখবো বলতো
আজিজঃ তোর কালকে কিছু করতে হবেনা সব আমি করব আচ্ছা মা ঘুমিয়ে পড় কালকে দেখা হবে
সকালে
সবাই বসে আছে আইরা আর রায়েদ পাশাপাশি
আইরার সামনে রায়ান বসা
কাজি বিয়ে পড়াচ্ছে আইরা রায়ানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে কবুল বলল
রায়ান এর কতটা কষ্ট পাচ্ছে সেটা আইরা বেশ বুজতে পারছে
আইরা ছোট করে নিশ্বাস নিল
সে এখন রায়েদ এর বউ তার সব থেকে বড় পরিচয় সে মিসেস রায়েদ আহমেদ
আহমেদ ফ্যামিলির সবাই খুশি হলেও রায়ান খুশি হতে পারেনি নিজের ভালোবাসার মানুষ টাকে ভাইয়ের বউ হিসাবে কেউ মানতে পারেনা কিন্তু রায়ানের কিছু করার নেই তাকে মানতে হবে
আহমেদ ম্যানশন
৪ মাস হয়ে গেলেও মিতুর মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে না এটা নিয়ে রাবেয়া তাকে জিজ্ঞেস করতেই ঘাবড়ে যায় মিতু।কিছু না বলে এড়িয়ে যায় এই ব্যাপার
কিছু দিন পর রায়ান মিতুকে নিয়ে ডক্টর এর কাছে গিয়ে জানতে পারে মিতু প্রেগন্যান্ট না
কথা টা শুনে রাগী চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে
গাড়িতে
রায়ানঃ বাচ্চা কোথায় মিতু??
মিতুঃ,,,,,
রায়ানঃ বাচ্চা কোথায় 😤😤😤
মিতুঃ আ আ আসলে আমি প্রেগন্যান্ট না
রায়ানঃ তাহলে কেন সেদিন মিথ্যা বলছিলে??
মিতুঃ তোমাকে পাওয়ার জন্য
রায়ানঃ মানে
মিতুঃ হুম আমি তোমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি কিন্তু তুমি আইরা ভাবিকে ভালোবাসতে
কোনভাবে আমি তোমাদের আলাদা করতে না পেরে মিথ্যে নাটক করি
সেই রাতে তোমাকে খাবার এর সাথে নেশার ওষুধ আমি মিশিয়ে ভিডিও টা করি আমাকে মাফ করে দাও রায়ান আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য এসব করেছি প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও
রায়ানঃ ছি মিতু তুমি এতটা নিচু মনের মানুষ আমার ভাবতে ঘৃনা হচ্ছে
মিতুঃ আমি যা করেছি শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য রায়ান
রায়ান কিছু না বলে বাসায় চলে আসে
লিভিং রুমে
রায়ানঃ বড় ভাবি
নিলাঃ হুম বল
রায়ানঃ ডির্ভোস পেপার রেডি কর
নিলাঃ কি বলছো এসব কার ডিভোর্স
রায়ানঃ আমার আর মিতুর
সবাই হতবাক রায়ানের কথা শুনে
আজিজঃ তোমার যখন যা মন চায় তাই করবে তখন
রায়ানঃ না আব্বু আমাকে মাফ করে দিও আমার জন্য এত কিছু হয়েছে কিন্তু এমন নিচু মনের একটা মেয়ের সাথে আমি থাকতে পারবনা
রায়ান সবাইকে সব বলল
রাবেয়া মিতুর গালে ঠাস করে চড় মারল
রায়ানঃ এর পরের কি তোমরা বলবে ওর সাথে থাকতে
আইরা সব কিছু শুনেও কিছু বলছেনা চুপ করে সব দেখছে
অন্যদিকে রায়েদ ভাবছে আইরা কি রায়ান এর কাছে ফিরে যাবে
রায়েদ চাইনা মিতু রায়ান আলাদা হোক সে আইরাকে হারাতে চায়না
রায়েদঃ ও যা করেছে তার ক্ষমা হয়না কিন্তু ও সব তোর জন্য করেছে। আর ওকে তো তুই বিয়ে করেছিস রায়ান বিয়ে টা ছেলেখেলা নয়
রায়ানঃ ভাইয়া আমি জানি বিয়ে কোন ছেলেখেলা নয় কিন্তু ওর মত প্রতারক এর সাথে কিভাবে থাকব আমি
আইরাঃ রায়ান তোমাকে মিতু ভালোবাসে বলেই এসব করেছে আর ওকে ডিভোর্স দিলেই আগের মত কিছু হবেনা
ওকে মাফ করে দিয়ে ওকে নিয়ে হ্যাপি থাকো
রায়ানঃ ওকে মাফ করব কি করে আইরা?? ও আমাকে তোমাকে আলাদা করে দিয়েছে।আমি আজো তোমাকে ভালোবাসি আইরা
রায়ান এর কথা শুনে রায়েদ আরও ভয় পেয়ে যায়
আইরাঃ আইরা নয় ভাবি বল।ভুলে যেওনা আমি তোমার ভাইয়ের বিবাহিত স্ত্রী।আর ওকে ডিভোর্স দিলে কি আমাকে পাবে?? কখনো না আমার একাকী জীবন যে আমার সাথে ছিল আমার পাশে ছিল আমাকে সার্পোট করেছে তাকে আমি কখনো ছাড়বনা।
রায়ানঃ আইরা
আইরাঃ হুম রায়ান আমি রায়েদ এর সাথে অনেক ভালো আছি তুমিও মিতুকে নিয়ে ভালো থাকো
রায়েদ আইরার কথা শুনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলল
কিন্তু আইরা মুখে রায়ান কে মিতু কে ক্ষমা করতে বললেও নিজে ক্ষমা করতে পারবেনা
দিন যেতে থাকল
আইরাকে সবাই খুব ভালো বাসে কিন্তু আইরা মিতুকে সহ্য করতে পারেনা এটা রায়েদ বুজে সিদ্ধান্ত নেই সে কানাডা চলে যাবে আইরা কে নিয়ে
বাসার সবার আপত্তি থাকলেও আইরার কথা ভেবে সবাই রাজি হয়ে যায়
পাসপোর্ট ভিসা কম্পলিট করে রায়েদ আইরা কানাডা পাড়ি দেই
বর্তমানে
আর ভাবতে পারছেনা আইরা
পাশে তাকাতেই রায়েদের ঘুমন্ত চেহারা দেখে ভাবে পাপা ভুল মানুষের হাতে আমাকে দিয়ে যায়নি পাপার শেষ কথা রাখতেই রায়েদ কে বিয়ে করেছিলাম কিন্তু আমি ওর প্যারসোনাল্টি আমাকে বাধ্য করেছে ওকে ভালোবাসতে
কিন্তু রায়ান এর জায়গায় রায়ান রয়ে গেছে
প্রথম ভালবাসা হয়তো কখনো ভোলা যায়না
চলবে।