আশিকি Part-14

0
2047

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Fahmida_Shabnam
#Part_14

আমাল আর সানার ভালোবাসার চার বছর পূর্ন হয়েছে। এই চার বছরে খুনসুটি ঝগড়া যেমন ছিল তার থেকেও বেশি ভালোবাসা ছিল। আমালের প্রতিটা নিঃশ্বাসে সানার নাম আর সানার প্রতিটা হার্টবিটে শুধুই আমাল।

ম্যাসেজ এর টুং শব্দে ঘুম ভেঙে গেল সানার। ঘুম ঘুম চোখে ম্যাসেজ ওপেন করতেই ঠোঁটে হাসি ফুঁটে উঠলো ওর।

ফোনটা বেড সাইডে রেখে উঠে জানালার সামনে চলে গেল সানাহ। নিচে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে দেখে চোখ সরাতে ইচ্ছে করছে না ওর।

নিচের মানুষটি ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকেই।

গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আমাল এতক্ষন। হোয়াইট টি শার্ট ব্লাক জ্যাকেট আর হোয়াইট প্যান্ট সব মিলিয়ে যে কাউকে ঘায়েল করে দেওয়ার মত।

সানাহ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমাল ওকে ইশারায় জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে। সানাহ মাথা ঝাকিয়ে বলল কিছু না।

সানাহ আমালকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলল ও পাঁচ মিনিটে রেডি হয়ে নিচে আসছে। আমাল নিজের হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল ফাস্ট।

সানাহ রুমে এসে কাবার্ড খুলে আমালের সাথে ম্যাচিং করে একটা হোয়াইট অ্যান্ড ব্লাক কম্বিনেশন এর কুর্তি আর জিন্স বের করে রেডি হয়ে নিল।

এটা সানার রেগুলার রুটিন। আমালের ম্যাসেজ টোনে ওর ঘুম ভাঙানো, প্রতিদিন ওর জন্য আমালের নিচে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা আর আমালের সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস আপ করা। এই তিনটা জিনিস যেন সানার রেগুলার রুটিন।

সানাহ রেডি হয়ে নিচে নেমে আসতেই আমাল গাড়ির দরজা খুলে দিলো। সানাহ আমালের দিকে তাকিয়ে একটা স্মাইল দিয়ে বসে পরলো। আমাল দরজা বন্ধ করে ঘুরে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পরলো।

আমালঃ তোমাকে একদম পরীর মতো লাগছে লাভ( ড্রাইভ করতে করতে)

সানাহঃ আর তোমাকে একদম জ্বিনের মতো লাগছে ( মজা করে)

আমাল সাথে সাথে গাড়ি ব্রেক করে সানার দিকে ফিরলো। তারপর নাক ফুলিয়ে বলল,,,

আমালঃ বেবি হোয়াট ডু ইউ মিন বাই জ্বীন??

সানাহঃ মেয়েদের পরী লাগলে ছেলেদের তো জ্বীনের মতোই লাগবে ( হাসতে হাসতে) লজিক আমাল,,,

আমালঃ এসব লজিক তোমার কাছেই পেলাম। ( ড্রাইভ শুরু করে)

সানাহ ব্যাগ থেকে ব‌ই বের করে পড়তে শুরু করে আর আমাল ওকে দেখে মুচকি মুচকি হাসছে।

সানাহঃ আমাল তোমার প্রিপারেশন কেমন?? ( আমালের দিকে ফিরে)

আমালঃ কিসের প্রিপারেশন জান( ড্রাইভ করতে করতে)

সানাহঃ আজকে আমাদের এক্সাম আমাল। ( রেগে চিল্লিয়ে)

আমাল সানার কথায় হচকিয়ে যায়। তারপর আমতা আমতা করে বলে,,,

আমালঃ অ অনেক ভালো প্রিপারেশন জান,,, একশতে একশ পাবো দেখ।

সানাহঃ আচ্ছা আমাল ক্যামেস্ট্রি এর সব পয়েন্ট ভালো করে পড়েছো তো।

আমালঃ ভালো মানে এতো ভালো করে পড়েছি যে লেকচারার রা অবাক হয়ে যাবে আমার অ্যন্সার দেখে।

সানাহ রেগে কটমট করতে করতে আমালকে বলল,,

সানাহঃ মার্কেটিং এ ক্যামেস্ট্রি থাকে আজ প্রথম বার শুনলাম। ( রাগে গজগজ করতে করতে)

আমাল বেচারা নিজেই নিজের কথায় ফেসে গেল। বেচারাতো জানেই না আজকে কি এক্সাম পড়বে কি ঘোড়ার ডিম।

আমাল ভয়ে প্লাস অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো সানার দিকে। সানাহ রেগে ব‌ই দিয়ে আমালকে বারি দিল,,,

আমালঃ আউচচচ্ জান আস্তে ব্যথা পাচাচি তো। ( হাত ডলতে ডলতে)

সানাহঃ ব্যাথা পাওয়ার জন্যই দিয়েছি। সামনে তাকিয়ে চুপচাপ ড্রাইভ করো। আমি পয়েন্ট গুলো তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছি এগুলো কেয়ারফুলি শুনবে আর মনে রাখবে।

আমালঃ ওকেই ম্যাডাম ( মুখ ফুলিয়ে)

সানাহ পয়েন্ট বাই পয়েন্ট আমালকে বুঝাচ্ছে আর আমাল ড্রাইভ করার ফাঁকে শুনছে। আমালের ধ্যান পড়ার উপর নেই ও তো সানার কথা শুনছে। সানার ব‌ই পড়ানোর মাঝেও আমাল অন্য একটা ফিলিং অনুভব করে।এই চার বছর সানাহ আমালকে শুধু একজন লাভার হিসেবে না একজন টিচার হিসেবেও গার্ড করেছে। আমালের ছোট থেকে ছোট বিষয় গুলোও সানাহ খেয়াল রেখেছে।

আমাল আর সানাহ কলেজে পৌঁছে গাড়ি পার্ক করে ক্লাসে চলে আসে।

আবিদঃ হাই গাইজজ,,,

সানাহ আমালঃ হাই

আমাল আবিদকে জড়িয়ে ধরতেই আবিদ বলল,,,

আবিদঃ ভালোই তো আমাল গার্লফ্রেন্ড এর সাথে টিচার ফ্রি পেয়েছিস,,, তোর ফি বেঁচে গেল,, ( হাসতে হাসতে)

আমাল আবিদকে সরিয়ে বলল।

আমালঃ নে নে তুইও মজা নে। লুক সান তোমার জন্য আমার প্রেস্টিজ এর টায়ার ফুসসস হয়ে গেল। ( ন্যাকা কান্না করে)

সানাহঃ আমি না থাকলে পরিক্ষায় ডাব্বা মারতা তখন কি প্রেস্টিজ এর হাওয়া লিক হতো না, ( চোখ বাকিয়ে)

আমালঃ নো বেবি। আমি আমাল খান। আমার ড্যাডের এতো বড় বড় হোটেল বিজনেস সব‌ই তো আমার। তাই আমি ডাব্বা মারলেও নো টেনশন।

সানাঃ তোমার এই ডায়লগ চার বছর ধরে শুনছি। নিজের ড্যাডের উপর ডিপেন্ড না করে নিজের উপর ডিপেন্ড করতে শেখ আমাল।

আমালঃ স্যরি,,,

আবিদঃ প্রফেসর ম্যাম আসছে অল দ্যা বেস্ট বোথ অফ ইউ।

আবিদ ওর সিটে গিয়ে বসে পড়ে আর আমাল সানাহ ওদেরটায়। সানাহ সেকেন্ড বেঞ্চে আর আমালের সিট সানার পেছনে থার্ড বেঞ্চে পরেছে।

ম্যাম এসে সবাইকে পেপার দিয়ে এক্সাম স্টার্ট করেন।

সানার মোস্ট অফ প্রশ্ন কমন পড়েছে তাই ও ননস্টপ লিখেই যাচ্ছে। কিন্তু আমাল!! বেচারা প্রশ্নের দিকে তাকিয়ে একটা কথাই ভাবছে,,,

” তুই আমার লাভ স্টোরির সবচেয়ে বড় ভিলেন ”

আমালের পেছনের সিটে আবিদ বসেছে। আমাল আর আবিদ দুজনেই একে অপরের খাতা কপি করে লিখছে। দুজনের অস্থাই সেম।

আমাল একটু সামনের দিকে এগিয়ে এসে সানাহকে ফিসফিসিয়ে বলল।

আমালঃ বেবিইইই স্যরি আমি এবার সত্যিই ডাব্বা মারবো।

সানাহ আমালের কথায় লিখা স্টপ করে পেছনের দিকে না ঘুরেই বলল।

সানাহঃ চুপচাপ আমার খাতা কপি করো মুখ থেকে একটাও ওয়ার্ড বের করবে না।( রেগে ফিসফিসিয়ে বলল)

সানাহ একটু সরে বসতেই আমাল সানার খাতা দেখে কপি করে লিখা শুরু করল।

হঠাৎ ম্যাম এসে সানার খাতা ছো মেরে নিয়ে নিলেন। আমাল আর সানাহ ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে গেল।

ম্যামঃ এখানে কি প্রেমলিলা চলছে। এটা এক্সাম হল তোমাদের প্রেম দেখানোর জায়গা না।

সানাহঃ মিস একচুয়ালি…….

ম্যামঃ Shut Upppppp… (ধমক দিয়ে)

সানাহকে ধমক দেওয়ায় আমাল রাগে নিজের হাতের মুঠো বন্ধ করে নিল। তারপর নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে করতে বলল।

আমালঃ ম্যাম যা বলার আমাকে বলেন। সানার এখানে কোন ফল্ট নেই আমিই ওকে বলেছিলাম একটু হেল্প করতে।

ম্যামঃ সেটাতো বলবেই। পুরো কলেজ যানে তোমাদের দুজনের প্রেমের কাহিনী।এটা এক্সাম হল তোমাদের প্রেমের ক্লাব না যে নিজেদের ভালোবাসার প্রদর্শনী করবে।

এখানে সবাই নিজের যোগ্যতা দিয়ে পাস করে।আর তুমি ( সানাহকে উদ্দেশ করে) কি ভাবো নিজেকে। ভেবেছো নিজের বয়ফ্রেন্ড কে পাস করিয়ে দিয়ে মহান হয়ে যাবে। এসব চলবে না আমার ক্লাসে। গেট আউট ফ্রম মাই ক্লাস। তোমার এক্সাম দেওয়ার দরকার নেই গোও।

সানাহ নিচের দিকে তাকিয়েই ব্যাগ নিয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। সবার চোখ এড়োলেও সানার চোখের পানি আমালের চোখ এড়োলো না। ওর ভেতরটা রাগে ফেটে যাচ্ছে।

আমাল কাউকে কিছু না বলেই বের হয়ে যায় ক্লাস থেকে।

After some time….

সানাহ এখনো বসে কান্না করছে। আবিদ আর বাকি বন্ধুরা মিলে সানাহকে বুঝাচ্ছে তাও সে নীরবে কান্না করেই যাচ্ছে।

ছোট থেকে বড় হয়েছে এই পর্যন্ত সানার আম্মু আব্বুও ওকে ধমক দেয় নি। আর আমাল!! ওতো সব সময় সানাহকে আগলে রাখে সানার সব কথাই আমালের জন‌্য আজ্ঞাকারী।

আমাল তখন ক্লাস থেকে বেরিয়েছে এখনও ফিরে নি। কোথায় গিয়েছে কেউ যানে না। আবিদ অনেক বার কল করা সত্ত্বেও আমাল কল রিসিভ করে নি। সানার এই মুহুর্তে আমালকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কিন্তু আমাল‌ই এখন ওর পাশে নেই তাই আরো বেশি খারাপ লাগছে সানার।

হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মুখ তুলল সানাহ। আমাল দু হাটু ভাজ করে ওর সামনে কান ধরে ইনোসেন্ট ফেস করে বসে আছে। সানাহ জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমালের দিকে তাকালো।

আমালঃ আ’ম স্যরি লাভ। আমার জন্য তোমাকে এতো কথা শুনতে হলো এতো ইনসাল্ট হতে হলো। আমি প্রমিস করেছিলাম তোমাকে যে কখনো তোমার চোখে পানি আসতে দিবো না কিন্তু আজ আমার কারনেই তোমার চোখে পানি। আ’ম স্যরি সানাহ…. আই প্রমিস এখন থেকে ভালো করে স্টাডি করবো অ্যান্ড নিজের যোগ্যতায় পাস করবো দেখ। প্লিজ স্টপ ক্রাইং আমি তোমার চোখে পানি সহ্য করতে পারি না তুমি জানো। তুমি প্লিজ আমাকে বকো মারো তাও রাগ করে থেকো না জান।

আমালের এমন ইনোসেন্ট ফেস দেখে সানাহ আর না হেসে পারলো না।

সানাহ আমালের হাত ওর কান থেকে সরিয়ে বলল।

সানাহঃ আমি তোমার উপর রেগে ন‌ই আমাল। মিসের কথায় একটু খারাপ লাগছিল বাট এখন তোমার কথায় সেই খারাপ লাগা টুকুও গায়েব হয়ে গিয়েছে।

আমাল কখনো সানার কান্নার কারন হতে পারে না কজ সানার সব খুশি সব হাসির পেছনে একজন‌ই আর সে হলো সানার আমাল। ( আমালের নাক টেনে)

আমাল উঠে সানাহকে জড়িয়ে ধরে বলল।

আমালঃ আই লাভ ইউ লাভভ

সানাহঃ আই লাভ ইউ টু,,,

আবিদ মুহুর্ত টাকে নিজের ফোনের ক্যামেরায় এতক্ষন বন্দী করছিল। ওদের দেখে আবিদ শুধু একটা কথাই বলল।

আবিদঃ You both r made for each other…..

হঠাৎ করেই ওদের ক্লাসের একটা ছেলে এসে বলতে শুরু করল

ছেলেটিঃ হেই গাইজ একটা ব্রেকিং নিউজ শুনেছো তোমরা।

আবিদঃ কি হলো আবার??

ছেলেটিঃ প্রিন্সিপাল স্যার রিনা ম্যাডাম কে কলেজ থেকে রাস্টিগেট করে দিয়েছে।

ছেলেটির কথায় আবিদ সানাহ সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে যায়।

সানাহঃ কিহ!! কিন্তু কেন??

ছেলেটিঃ সেটা জানি না বাট প্রিন্সিপাল স্যার সবার সামনে ম্যাডাম কে অনেক কথা শুনিয়েছেন প্লাস কলেজ থেকে রাস্টিগেট করে দিয়েছেন। বেচারী কান্না করতে করতে বেরিয়ে গিয়েছেন কলেজ থেকে।

সানাহ বুঝতে পারছে না কিভাবে কি হলো। আবিদের চোখ তৎখনাথ আমালের দিকে গেল।আমালের ফেসে এক অদ্ভুত হাসি। এই হাসির মানেটা আবিদ ভালো করেই বুঝে। আবিদ বুঝতে পারছে কাজটা কে করিয়েছে। এই চার বছরে এমনটা অনেক বার হয়েছে। সানাহ কে কোন ছেলে খারাপ নজরে দেখলে বা যদি কেউ তাকে কিছু বললে দ্বিতীয় দিন তাকে আর কলেজের ধারের কাছেও দেখা যায় নি।

আমালঃ let it be Sanah. ওনার বিষয়ে ভেবে আমাদের কাজ নেই। তুমি আমার সাথে চলো। আজকে ড্যাড তোমাকে দেখতে এসেছে কানাডা থেকে।

সানাহঃ কিন্তু আমাল মিস হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে।

আমালঃ উনি তোমাকে যেটা দিয়েছে আমি তাকে সেটাই রিটার্ন করেছি জান। ( মনে মনে) বাদ দাও তো। উনি যেটা ডিসার্ভ করেন সেটাই পেয়েছেন। রাইট আবিদ?? ( আবিদের দিকে ডেভিল স্মাইল দিয়ে তাকিয়ে)

আবিদঃ আব হ্যাঁ হ্যাঁ আমাল ইজ রাইট। ( হাসার চেষ্টা করে)

আমালঃ লুক আবিদও এটা বলছে। নাও কাম এভাবেই অনেক লেইট হয়ে গিয়েছে তার জন্য।

সানাহঃ হ্যাঁ চলো। ( অন্যমনস্ক হয়ে)

To be continued….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে