আশিকি Part-07

0
1979

❤#আশিকি❤
#Madness_Of_Love
#Writer_Sanjana_Fahmida_Shabnam
#Part_7

আমাল আর সানাহ এক‌ই ভাবে বসে আছে। দুজনের পিঠ ঠেকে আছে দরজার দু দিকে। হঠাৎ অনেক জোরে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আমাল চোখ বন্ধ করে আছে। বৃষ্টির পানি ভিজিয়ে দিচ্ছে আমালকে। আমাল চোখ বন্ধ করেই সানাহকে প্রথম দেখার মুহূর্ত টা মনে করছে।

Royal Blue City Club….

উফফফ এই বৃষ্টি আই জাস্ট হেইট দিস,,, ড্রাইভারটাও আসছে না সেই কখন কল করেছি। আজকে ওর চাকরীর শেষ দিন ( আমাল)

আমাল ক্লাবের বাইরে বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বৃষ্টির ফোঁটা আমালের উপর ছিটকে আসছে আর আমাল এতে আরো বেশি বিরক্ত হচ্ছে। অপেক্ষা ও বৃষ্টি এই দু’টোই একদম পছন্দ না আমালের। একতো ও গাড়ির জন্য অপেক্ষা
করছে তার উপর এই বৃষ্টি আমালের রাগ যেন সপ্তম আসমানে উঠে যাচ্ছে।

ফ্রেন্ডদের সাথে গত রাতে ক্লাবে পার্টি করতে এসেছিল আমাল। যদি জানতো যে সকালে বৃষ্টির দেখা মিলবে তাহলে কখনোই আসতো না ও। সারা রাত পার্টি করে এখন সকাল সাতটা বাজে। প্রচন্ড রকমের ঘুম পাচ্ছে আমালের। তাই রাগটা আরো চরে বসেছে ওর মাথায়।

বাড়ি যাওয়ার জন্য ড্রাইভার কে কল করেছে আমাল,,,, পনের মিনিট হয়ে গেছে সেও আসছে না।

আমালঃ ড্রাইভার কে বলেছিলাম কোথাও যেতে না। বাট তাও চলে গেছে এখন আসতে বলেছি লেট করছে,,, he have to pay for this….আজকে ওর চাকরীর শেষ দিন। ( রেগে)

হঠাৎ একটা মিউজিক এর টোন কানে আসলো আমালের।

সামনে একটা পার্ক আছে সেখান থেকে আসছে টোনটা। কেন যেন আমালের মন বারবার সেখানে টানছে ওকে।

আমালঃ এই বৃষ্টির মধ্যে কিসের মিউজিক চলছে ওখানে??

আমালের মনে কৌতুহল জাগছে বিষয়টা নিয়ে। হঠাৎ হার্ট টাও অদ্ভুত রকম ভাবে বিট করতে শুরু করেছে। নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে আমাল এই বৃষ্টির মধ্যেই নেমে পরে। দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে পার্কটার দিকে আমাল। ভিজে কাক ভেজা হয়ে গেছে ও। আমাল যত‌ই এগোচ্ছে তত‌ই ওর হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে।

কিছুদূর যেতেই অনেক গুলো বাচ্চা দেখতে পেলো ও। সবাই লাফিয়ে লাফিয়ে নাচছে। তাদের মাঝে একজনকে দেখে হৃদয়ের গতি থেমে গেল আমালের। চোখের পলক পরছে না। মুখ থেকে অটোমেটিকলি বেরিয়ে আসে ” ওয়াও “।

সাদা ফ্রক ভিজে শরীরের সাথে লেপটে গেছে। চুল গুলো পানিতে ভিজে পিঠে ছড়িয়ে আছে। কানের ঝুমকা গুলোও যেন গানের তালে তালে দুলছে। মেয়েটাকে কোন অপ্সরীর থেকে কম লাগছে না আমালের কাছে।

মেয়েটাকে অনেক গুলো বাচ্চারা ঘিরে আছে। তাদের মাঝেই মেয়েটা গানের তালে নাচছে।

Julfo se bandh liye baadal…
Sine pe se udne laga aachal….

Mujhse naina mila kei…
Mousom hone lage paagal….

Sabhse hoke befikr….
Nachu main aaj…
Cham cham cham cham cham cham….
Cham cham cham cham cham….
Main nachu aaj….
Cham cham cham cham cham cham
Cham cham cham cham cham….

আমাল যেন হারিয়ে যাচ্ছে তার মাঝে। মেয়েটার চোখের এক্সপ্রেশন ঠোঁটের হাসি সব কিছুই আমালের বুকে গেথে যাচ্ছে। মেয়েটাকে এক কথায় মায়াবিনী লাগছে।

পলক পরছে না আমালের। মেয়েটা বাচ্চাদের সাথে মন খুলে আসছে। একটা বাচ্চাকে কোলে তুলে মেয়েটা তাকে আদর করছে। মেয়েটা বাচ্চাদের আদর করে তাদের হাত নাড়িয়ে বিদায় দিতে দিতে পিছিয়ে যায়।

হঠাৎ আমালের খেয়াল হলো মেয়েটা তো চলে যাচ্ছে। আমাল তারাহুরা করে মেয়েটার পিছনে দৌড়ে যায়। কিন্তু মেয়েটাকে পায়না ও।

আমাল আবার দৌড়ে বাচ্চাগুলোর কাছে চলে আসে তারপর একটা বাচ্চাকে জিঙ্গেস করে,,,

আমালঃ তোমার নাম কি বাবু??

বাচ্চাটিঃ সোহান।

আমালঃ নাইস নেম সোহান। আচ্ছা সোহান একটু আগে যেই আপুটি এখানে ছিল তার নাম কি আর কোথায় থাকে,,,

সোহানঃ জানিনা ভাইয়া আপুটি একটু আসলো মজা করলো তারপর চলে গেল। নাম বলে নি,,,

আমালঃ ওহ আপুটি কি প্রতিদিন এখানে আসে??

সোহানঃ নাহ আজকে প্রথম দেখলাম,,, আমি আসি বাইইই।

আমাল অসহায় ভাবে বসে আছে ওখানেই। তাহলে কি হারিয়ে ফেলল ও ওর মায়াবিনীকে।

In Present….

ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আমালের। এক সময় এই বৃষ্টি ওর কাছে অসহ্য লাগতো আর এখন!! এখন বৃষ্টি বলতেই সানাহ আর সানাহ বলতেই ভালোবাসা।

ঠান্ডায় শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে আমালের। মাথাটা প্রচন্ড রকম ভারী হয়ে আসছে। বন্ধ চোখ খুলতে পারছে না ও। ধীরে ধীরে মাথাটা ফ্লোরে নুইয়ে পরে আমালের।

হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল সানার। কান্না করতে করতে কখন দরজায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পরেছিল কোন খেয়াল নেই ওর।

বাইরে থেকে এখন আর বৃষ্টির আওয়াজ আসছে না। তার মানে বৃষ্টি থেমে গেছে। হঠাৎ দেয়াল ঘড়ির দিকে চোখ যেতেই আতকে উঠে সানাহ। ভোর চারটা বাজে।

আমাল কি তাহলে এখনো বাইরে আছে। সানাহ হন্তদন্ত করে উঠে দরজা খুলল। দরজা খুলতেই ফ্লোরে পরে থাকা আমালকে দেখে বুক কেঁপে উঠলো ওর।

সানাহঃ আ আ আমালললললল

সানাহ আমালের পাশে বসে ওর মাথা নিজের কোলে রেখে ওকে ডাকতে শুরু করল।

সানাহঃ আ আমাল? আমার কি হয়েছে তোমার?? Amaal plz get up. চোখ খুলো প্লিজ ?

সানাহ আমালের গালে হাত রাখতেই চমকে উঠলো। ওর শরীর আগুনের মতো গরম হয়ে আছে। বারবার কেঁপে উঠছে আমাল।

সানাহ আমালকে কোন রকমে তুলে ভিতরে নিয়ে আসে। তারপর ওকে বেডে শুইয়ে দেয়। সানাহ কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।

আমালের পুরো শরীর ভেজা। শীতে বারবার কেঁপে উঠছে ও। সানাহ আমালের জুতা খুলে ভালোভাবে ওকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দেয়।

হঠাৎ দরজায় সানার আম্মুর ডাক শোনা গেল।

রাহেলাঃ সানু দরজা খোল। কি হয়েছে সানাহ ভিতরে,,,,

সানাহ দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। সানাহকে দেখে রাহেলা ঘাবরে যান। কান্না করতে করতে চেহারার অবস্থা নাজেহাল হয়ে গেছে। এখন শুধু ফোপাচ্ছে।

রাহেলাঃ কি হয়েছে সানাহ??

সানাহঃ আ আম্মু আ আ আমাল,,,

রাহেলাঃ আমাল? আমাল কি সানাহ??

সানাহঃ আম্মু আমাল,,?বেডের দিকে ইশারা করে বলল।

রাহেলা ভিতরে তাকিয়ে দেখলো আমাল বেডে শুয়ে আছে সেন্সলেস হয়ে।

রাহেলা হন্তদন্ত করে ভিতরে ঢুকে আমালের পাশে বসলেন।

সানাহ ফোঁপাতে ফোঁপাতে রাহেলাকে সব বলল।

কিছুক্ষন বাদে ডক্টর এসে আমালকে চেক করে গেল। ঔষধ আর ইঞ্জেকশন দিয়ে গেছে আমালকে।

ডাক্তার বলেছে বেশিক্ষন বৃষ্টিতে ভেজার কারনে সেন্সলেস হয়ে গেছে ও। জ্বর যেন বেশিক্ষন লাস্টিং না করে তার জন্য ইঞ্জেকশন আর ঔষধ দিয়ে গেছে।

সানাহ পুরো সময় আমালের হাত ধরে ওর পাশে বসেছিল।

রাহেলা সব কিছুই গভীর ভাবে লক্ষ করছেন কিছু বলছেন না।

ডক্টর চলে যেতেই রাহেলা সানার পাশে বসে ওকে বলল।

রাহেলাঃ আমাল কি তাহলে সেই ছেলেটিই সানু,,,

সানাহ অসহায় চোখে ওর আম্মুর দিকে তাকালো। রাহেলার যা বুঝার উনি বুঝে গেছেন। হঠাৎ সানাহ আমালের হাত ছেড়ে রুম থেকে বের হয়ে যায়। রাহেলার গভীর দৃষ্টিতে আমালকে এক পলক দেখে সানার পেছনে চলে যান।

To be continued….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে