#আলো_থেকে_অন্ধকার
Part:-11
Writer:-#Esrat_jahan_Esha
-কিসের ছবি?
-এই যে তোমার আর তুহিনের ছবি।
– আমার আর তুহিনের ছবি? আমি তো ঐ ছেলের সাথে ভালো করে কথাই বলিনি ছবি তুল্লাম কখন।
-এখানে কি হচ্ছে এসব মান সম্মান যা আছে তাও কি শেষ করবে নাকি?
– না বাবা আপনার মেয়ে আপনার মান সম্মান নিয়ে খেলা করছে।
– কি আজে বাজে কথা বলছ?
– এই যে দেখুন আর এত দিন আপনারা আমার নামে খারাপ খারাপ কথা বলছেন অনেক সহ্য করছি আর না।
জায়েদের ঘরে চিল্লা চিল্লির খবর শুনে এলাকার প্রায় লোকই এসে জমা হয়েছে। সবাইকে লিমা ছবি গুলো দেখাচ্ছে আর বলছে এখনো বলবেন আমি দোষী।
রেহানা ভাবি- আরে হ্যা এ তো সুমি একটা ছেলের সাথে অনেক গুলো ছবি।
সুমি মাথা নিচু করে আছে। কি হচ্ছে এসব নিজের কাছেই অবিশ্বাস্য লাগছে।
– তোরে আগেই বলছিলাম এই মেয়ের সাথে চলিস না। তাও তুই কথা সুনলি না এ তোর ভাবি? এটা হল গিরগিটি সময় মত রং বদলায়,।
– সুমি তুই আমার মেয়ে হয়ে এগুলো করতে পারলি? আর তুই না বলে কেন ঘর থেকে বের হলি?
-বিশ্বাস কর বাবা আমি এসব এর কিছু জানিনা না। ভাবি আমাকে ফাঁসাচ্ছে।
– ঐ সুমি মিথ্যা কেন বলছ? তোমাকে আমি কেন ফাঁসাব আর এই ছবি গুলো কি মিথ্যা? আমার কাছে যথেষ্ট প্রমান আছে।
ঘরে এখন আর কোনো কথা নেই সবাই চুপ করে আছে। কি বা বলবে বলার জন্য প্রতিবেশী যথেষ্ট। তারা শুধু কোনো ভাবে একটা কথা জানতে পারে তাহলে সেটা নিয়া গবেষণায় ব্যস্ত সত্য মিথ্যার যাচাই করার প্রয়োজন মনে করে না।
প্রতিবেশীঃ- হ্যা রে সুমি তোকে তো ভালো মেয়ে জানতাম শেষে তুইও কিনা। আহারে ভালো মেয়েই নাই।
– একদম পর্দা করে পর্দার গোর্দায় বেশি। কত রং ঢং দেখব।
– কই রে এত দিন তলে তলে এগুলা করতি? নামাজ রোজা কইরা কি করলি। তার চেয়ে এমনি চলাফেরা ভালো।
– আপনারা যে যা বলার আমাকে বলেন। কিন্তু কিছু হইলেই পর্দা নামাজ রোজা নিয়া কথা তুলেন কেন? সমস্যা কি আপনাদের? সত্য মিথ্যা আগে যাচাই করেন তারপর একজনের নামে এসব কথা বলবেন।
আমি যদি দোষ করেও থাকি তাহলে আমাকে বলেন যে আমি খারাপ তারমানে এই নয় সবাই খারাপ।
– চোরের মার বড় গলা। এই সবাই চলো সত্য কখনো চাপা থাকে না সে যতই ভালো সাজুক দেখছ বেড়িয়ে গেছে সব কুকির্তি
সবাই যে যার বাড়িতে চলে যায়।
জায়েদঃ- লিমা আমার বোন এগুলো কখনোই করতে পারে না। তুমি শুধু শুধু ওকে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছ।
– হো আমি মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছি না আপনারা আমার সংসার নষ্ট করার জন্য মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। বললেই পারতেন আমাকে আর ভালো না। তাহলেই আমার ছেলেকে নিয়ে চলে যেতাম। আমার ছেলে আছে স্বামী আছে তাদের ছেড়ে আমি একটা ছেলের সাথে ইটিস পিটিস করব এতটাও খারাপ না।
জায়েদ কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারল না। কিছু বলার নাই একদিকে বউ অন্যদিকে বোন। কাকে কি বলবে। তাও জায়েদ নিজেকে সামলাতে না পেরে লিমা কে একটা থাপ্পড় লাগিয়ে দেয় দ্বিতীয় থাপ্পড় দেয় সুমির গালে।
– লিমা কোনটা সত্যি কোনটা মিথ্যা সেটা পড়েই প্রমান হবে। আর সুমি সত্যি যদি তুই এমন করো তাহলে ঐ ছেলের সাথেই তোকে বিয়ে দিব না হলে কখনো আমাদের চোখের সামনে আসবি না।
আমার মনে একটা ভয় তৈরি হল আসলেই যদি তুহিন কে এনে সুমির সাথে বিয়ে দেয় তাহলে কি হবে? এটা কখনো হতে পারে না।
এখন এই টেনশন করব না। তবে ছবি গুলো এডিট করে রাখা হয়েছে বুদ্ধি মানের কাজ।
ফ্লাসব্যাক,,,,,,
-আচ্ছা তুহিন সুমি যদি কখনো বুঝতে পারে তোমার সাথে আমি দেখা করতে আসি তাহলে তো অশান্তি হবে। তখন কি করব।
– এটা তো একটা চিন্তার বিষয় আচ্ছা ভেবে দেখি কি করা যায়৷
– হুমম ভাবো ভাবো।
– পেয়ে গেছি
– কি?
– আমি যেভাবে যেভাবে বলব তুমি সেই ভাবে সেই ভাবে আমার সাথে ছবি তুলবে।
– কেন?
– কোনো কথা না আগেই বলছি।
ওকে।
তারপর তুহিনের সাথে ১০-১২ টা ছবি তুলি ওর কথামত।
– আচ্ছা সুমি ছবি আছে?
– হুমম আছে ওর ২-৩ টা পিক
-দাও।
পরবর্তী দিন,,
– এটা কে সুমি? ওর সাথে ছবি তুললে কখন?
– হুমম কি বুঝতে পারনি। আরে কালকে তোমার ছবির উপর এডিট করে ওর ফেইজ লাগিয়েছি।
– ওহ্হ আচ্ছা।
– কখনো সমস্যায় পড়লে সোজা এই পিক গুলো দেখিয়ে দিবে।
– ওকে।
আমার কাজ শেষ লিমা। এখন এক ঢিলে ২ পাখি। সুমিকে আমি বিয়ে করব আর তোমার ঘরে বসবাস করে তোমাকেও শেষ করব। সব আমার হবে সব আমার হবে। হা হা হা ( তুহিন মনে মনে)
,,,,,,,,
সাকিল বোনের এমন পরিস্থিতি শুনে মাদ্রাসা থেকে বাড়িতে আসে। এসে দেখে সুমি অনেক কান্না করছে।
– আপু তুই কান্না করিস না।
– সাকিল আমার ছোট ভাই বিশ্বাস কর আমি ঐ ছেলের সাথে কখনো কথা বলিনি তাও এই ছবি কিভাবে কি আমি বুঝি না।
– আপু তুমি এইভাবে ভেংগে পড় না। ধৈর্য ধারন কর। তুমি কি ভুলে গেছ মা আয়েশা (রা) কথা? তাকেও কিন্ত কিছু মুনাফিকেরা মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল। তুমি সুরা নূর এর শানে নুজুল দেখছ??
-নাহ। কি ছিল সেখানে?
– তাহলে শোনো,,,,,,,
سُوۡرَۃٌ اَنۡزَلۡنٰہَا وَفَرَضۡنٰہَا وَاَنۡزَلۡنَا فِیۡہَاۤ اٰیٰتٍۭ بَیِّنٰتٍ لَّعَلَّکُمۡ تَذَکَّرُوۡنَ
এটা একটা সূরা যা আমি নাযিল করেছি, এবং দায়িত্বে অপরিহার্য করেছি। এতে আমি সুস্পষ্ট আয়াতসমূহ অবতীর্ণ করেছি, যাতে তোমরা স্মরণ রাখ।
,,,,,
রাসূলে কারীম (ছঃ) এর অভ্যাস ছিল যে, তিনি প্রবাসে যাওয়ার সময় উম্মুল মু’মিনীনেদর নামে লটারী করতেন, লটারীতে যার নাম উঠত তাঁকে সাথে নিয়ে যেতেন । তদানুসারে পঞ্চম হিজরী সনে জঙ্গে মুরাইসীতে যাওয়ার সময় হযরত আয়েশা সিদ্দীকার নাম লটারীতে উঠে যায় । তিনি হুযূর (ছঃ)-এর সঙ্গে গেলেন । সফর থেকে ফেরার সময় মদীনার অদূরে প্রাতে বিশ্রাম করার জ্ন্য অবস্থান করেন । হযরত আয়েশা (রাঃ) প্রাকৃতিক প্রয়োজন মেটাতে গেলে তথায় তাঁর গলার হার হারিয়ে যায় । তিনি তৎক্ষণাৎ হারের সন্ধানে সে দিকে যান, তা খুঁজে আনতে কিছুক্ষণ দেরি হয় । এদিকে তাঁর ফিরে আসার পূর্বেই যাত্রীরা রওয়ানা হয়ে যায় এবং আয়েশা (রাঃ)-এর উষ্ট্র চালকও তাঁর উষ্ট্রারোহণের দোলনাটি উটের পিঠে উঠিয়ে দিলেন ।
আয়েশা (রাঃ) ছিলেন হালকা পাতলা, তাই বন্ধ দোলনা উত্তোলনকালে তিনি হযরত আয়েশার অবস্থান সম্বন্ধে কিছু অনুভব করতে পারেন নি । আর হযরত আয়েশা (রাঃ) ফিরে এসে দেখতে পান শূণ্য মাঠ প্রান্তর এবং নিস্তব্ধ জঙ্গল । অবশেষে তিনি এ ধারণায় সেখানে অবস্থান করলেন যে, তাঁর দোলনা শূণ্য দেখলে নিশ্চয় কেউ তাঁর সন্ধান করতে আসবে । এ অভিযানে পশ্চাতে কিছু রয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করতে এসে হযরত সফ্ওয়ান ইবনে মো’আত্তল কিছু দূর হতে মানবাকৃতির ন্যায় এক প্রতিচ্ছায়া দেখতে পেলেন । নিকটে এসে দেখলেন তা স্বয়ং হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) । আর হযরত আয়েশা (রাঃ) ও পর পুরুষের আগমন দেখে নিজের মুখমণ্ডল আবৃত করে ফেললেন । হযরত সফওয়ান (রাঃ) তখন দ্রুত গতিতে উট হতে অবতরণ করে হযরত আয়েশাকে উটের পিঠে সওয়ার করিয়ে দিলেন এবং তিনি লাগাম ধরে আগে আগে চলতে লাগলেন । ঘটনা তো ছিল এ পর্যন্ত; কিন্তু মুনাফিকরা একে ভিত্তি করে নানা অপবাদ রটাতে লাগল এবং পূর্ণ এক মাস পর্যন্ত গোপন চর্চা চলল । এর প্রধান নায়ক ছিল মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ ইবনে উবাই । রাসূল (ছঃ) যখন এতদবিষয়ে জানতে পারলেন তখন অত্যন্ত বিমর্ষ হয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে পৃথক থাকার ভাব ধারণ করলেন, মুখে কিছু বললেন না । হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নিকটও এ অকথ্য বৃত্তান্তের সংবাদ পৌঁছল । রাসূল (ছঃ)ও আপন সতী স্বাধ্বী স্ত্রী সম্বন্ধে সম্ভাব্য অনুসন্ধান চালিয়ে নিষ্কলঙ্কতারই প্রমাণ পান ।
অবশেষে উম্মতের দিশারী হযরত মুহাম্মদ (ছঃ) বিবি আয়েশার পিত্রালয়ে যান এবং বললেন, তোমার সম্বন্ধে আমি এমন সংবাদ পেয়েছি । কিন্তু এটি যদি মানুষের পক্ষ হতে এক অপবাদ মাত্র হয়, প্রকৃতপক্ষে তুমি নিষ্পাপ হও, তবে শীঘ্রই আল্লাহ পাক তোমার নিষ্কলঙ্কতা নাযিল করবেন । আর যদি অপবাদ না হয়ে বাস্তবতার কিছু থাকে, তবে মানুষ তো ভুল-ত্রুটিরই প্রতীক, তোমার গোনাহ্ মাফের জ্ন্য তওবা করা উচিত । এতদশ্রবণে হযরত আয়েশা (রাঃ) শুধু এতটুকু বললেন, আমি হযরত ইউসুফ (আঃ) এর পিতার ন্যায় কেবল বলে চুপ থাকা ব্যতীত আর কি-ই বা করতে পারি । এমতাবস্থায় আল্লাহ তা’লা স্বতঃস্ফূর্তভাবে আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) নির্মল চরিত্রবতী হওয়ার ওপর পূর্ণ দু’রুকূ বিবরণ নাযিল করেন ।
এ আপদের বেড়াজালে অনেক লোকই ফেঁসেছিল । কতিপয় মুসলমান তো এ ঘটনা শুনার সাথে সাথেই মিথ্যা বলে উড়িয়ে দেয় আর কেউ কেউ নীরবতা পালন করে আর কেউ কেউ হাসির মাধ্যমে তার আলোচনা করছিল আর কেউ কেউ অনুতাপমূলক বলাবলি করছিল । অতএব, যারা এক একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদ বলে স্পষ্টভাবে ইনকার করেছিল, তারা ব্যতীত অন্যান্য সকলকে অভিযুক্ত করা হয় এবং মিথ্যা অপবাদে মানহানিকারীদেরকে শাস্তিস্বরূপ আশিটি করে দোররা লাগান হয় । মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই যে এ অপবাদের আবিষ্কারক, বিধর্মচারণ, মুনাফিক এবং নবী কারীম (ছঃ)-এর সাথে শত্রুতার কারণে সে পূর্ব থেকেই জাহান্নামী । আর এ অপবাদের জন্য আরো অধিক আযাবের যোগ্য হয়েছে ।
—আন নূর – ১
– আপু তুমি নামাজে আল্লাহর কাছে বিচার দাও নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে হিফাজত করবে তোমার মানসম্মান তোমাকে উওম ভাবে ফিরিয়ে দিবে।
আর ভাইয়ার সাথে আমি কথা বলব। ভাবির নাটক অনেক সহ্য করছি আর না।
– ভাইয়া তোমার সাথে আমার একান্ত কথা আছে। তুমি মায়ের ঘরে আসো।
– আমিও যাব।
– ভাইয়া তুমি একা আসো আর ঐ মহিলা যেন ভাই বোনে কথার মাঝে যেন আড়ি না পাতে।
জায়েদ সাকিলের সাথে চলে গেল মায়ের ঘরে। আমার অনেক জেদ লাগল এহহ আসছে কি এমন কথা বলবে। যা যা তোরা যাই যা কর গিয়ে কখনো নির্দোষ প্রমান করতে পারবি না।
লিমা বাদে আর সবাই একসাথে বসে আছে। সুমি সবার সামনে মাথা নিচু করে বসে আছে।
– বাবা -মা তোমরা কি কিছু বলবে আপুর বিষয়?
চলবে,,,,,,,,,,,
( আসসালামু আলাইকুম,,। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)