আলো থেকে অন্ধকার পর্ব-০৯

0
912

#আলো_থেকে_অন্ধকার
Part:-09
Writer:-#Esrat_jahan_Esha

-সকাল সকাল আমি সুমির ঘরে গেলাম। সুমি সুমি কি কর?
– এইতো নামাজ পরে বসে আছি। তুমি এত সকাল সকাল?
– আরে সারারাত তো ঘুমাতে পারিনি। তাই তো সকাল সকাল তোমার ঘরে চলে আসছি।
– কেন? কোনো সমস্যা?
– আরে না সমস্যা না। আমি না চিন্তা করছি একটা বিজনেস করব। মানের আমরা কাজ শিখে একটা দোকান দিব। তারপর সেখানে ব্যবসা করব কাপুরের আর আমরা নিজেরা জামা কাপর তৈরি করব। আস্তে আস্তে আমাদের ব্যবসাটা অনেক বড়ো হবে। অনেক টাকা পয়সা হবে আমাদের। কি বল?
– এত চিন্তা ভাবনা তুমি করে ফেলেছ?
– হুমম কেন তোমার এমন ইচ্ছে হয় না?
– হুমম হয়ত নিজে ঘরে বসে পর্দার সাথে কিছু করি। যাতে আমি নিজেও ইনকাম করতে পারি আর সাথে আমার মত আরো মেয়েদের সাখানে কাজ দিতে পারি। গরিব দুঃখিদের সাহায্য করতে পারি।

– আচ্ছা যাই হোক তোমার স্বপ্ন আর আমার স্বপ্ন মিলিয়ে এক করে পুরুন করব কি বল?
– হুমম সেটা না হয় পড়ে দেখা যাবে আগে তো আমরা কাজ টা শিখি।

– হুমম। টেনশন নিও না। শিখে যাব।
– তা তোমার ঐ বন্ধুর সাথে কথা হইছে?
– হুমম সে বলছে ৩-৪ পর জানাবে।
– ওকে।

অনেক ক্ষন সুমির সাথে কথা বলে আমি সুমির ঘর থেকে চলে যাই। মনে আমার সারাদিন এই কথাই ঘুর পাক খাচ্ছে তুহিন কতো ভালো আমাকে নিয়ে কত টেনশন ছেলেটার। আসলেই ও আমার ভালো বন্ধু।
আচ্ছা তুহিন কে আমার প্লান এর কথা জানালে কেমন হয়। ও আমাকে আরো ভালো বুদ্ধি দিতে পারবে৷ এখন তাহলে ফোন দিব। না থাক কয়েকদিন পড়ে না হয় এ বিষয় বলব।
তারপর নিজের কাজে মন দিলাম।

________

-সুমি দেখ তুই তোর ভাবির কথায় নাচিস না। আমার কেমন যেন ভালো লাগে না।
– মা তুমি শুধু শুধু টেনশন কর ভাবি অনেক ভালো হয়ে গেছে।
– প্রয়োজনে তোকে ব্যবহার করছে।
-মা বাদ দেও না। ভাবি তো তোমার মেয়ের মত যা হইছে ভুলে যাও তো মা। মনে মনে এই রকম খারাপ ধারণা পোষণ করে রেখ না।
-তুই তোর বাবার সাথে একটু কথা বলে দেখতি তোর বাবা কি বলে।
– মা দেখ বাবা কে তো পরেও জানানো যাবে তাইনা? এখন কিছু বল না বাবা আবার এটা নিয়ে অতিরিক্ত জিজ্ঞেসাবাদ করবে তারপর শেষে যেতেও দিবে না আরো বকাঝকা করবে।
– আচ্ছা তুই যা ভালো বুঝ তাই কর। কিন্তু লিমাকে এই প্রজেক্ট শুরু হইছে এর কথা কে বল্ল?
– মা ভালো কথা মনে করছ। সবই ঠিক আছে কিন্তু আমার মনেও এই একই প্রশ্ন।
– বুঝলাম না। এত না পেচিয়ে সোজা করে বল।
– মা যে এই খবর দিছে সে একজন ছেলে। সে নাকি ভাবির বন্ধু আর ভাইয়াও এ বিষয় কিছু জানে না।
– কি বলিস তোর ভাবির ছেলে বন্ধু?
– হ্যা মা,,, আর তাদের কথা শুনে মনে হয় তাদের মধ্যে আগে কোনো সম্পর্ক ছিল।
– তোকে আগেই বলেছিলাম ওর ভিতরে কোনো গন্ডগোল আছে। ওর ভিতর সাপের বিষের মত। ও আমার ছেলেটাকে শেষ করে দিছে আমার ছেলে আর আগের মত নাই। এখন তোকেও শেষ করতে চায়।
– ওফফ মা কি শুরু করলা?
– মা রে মা তুই ওর সাথে আর যাস না। কথায় আছে
____সৎ সংঙ্গে সর্গ বাস
_____অসৎ সংঙ্গে সর্বনাশ

তুই তোর ভাবিকে বিশ্বাস করিস না করের মেয়ে ঘরে থাক তোর কিছু হলে তোর বাবা আমাকে মেরে ফেলবে। তোর জন্য ছেলে দেখতাছে হঠাৎ করে দেখবি তোর বিয়ে হয়ে গেছে। তুই ওর সাথে মিশিস না।
-মা শুধু শুধু টেনশন কর না তো। কিছু হবে না। কাজ শিখব আর ঐ ছেলে কে আর ভাবির সাথে কিসের সম্পর্ক সব আমাকে জানতে হবে। ভাবি যদি খারাপ হয় তাহলে তো ভাইয়া শেষ হয়ে যাবে।

সুমির চিন্তা ভাবনা এমন হয়ে পরে যে ভাবি এখন যাই করুক আগে কাজটা শিখি ভালো কাজ পারলে সার্টিফিকেট সেলাই মেশিন সবই তো পাব। ভাবি তো আর কোথাও চলে যাচ্ছে না। কাজ টা শিখে ভাবিকে ধরব। ভাবির ব্যপারে ভাইয়ার কাছে সব পরে জানাব।

-কিরে কি ভাবছিস?
– মা তুমি টেনশন করো না। কিছু হবে না। আর ভাবির উপর খেয়াল রাখা দরকার। সুতরাং এখন ভাবির ছায়া হয়ে থাকতে হবে।
– আচ্ছা তাও মা তুই সাবধানে থাকিস। দোয়া করি আল্লাহ তোর মনের আশা পুরন করুন ( আমিন)

_______

– আচ্ছা ভাবি কিছু জানতে পেরেছ?
– হুমম ৩-৪ দিন পরেই শুরু হবে।
– সবাইকে নিবে?
– সেটা গেলেই জানতে পারব।

তারপর সুমির সাথে আমার অনেক ক্ষন কথা হয়। মায়ের ডাকে সুমি রান্না ঘরে চলে যায় আমিও এই সুজুকে তুহিন কে ফোন দেই।
– হ্যালো তুহিন
– হুমম লিমা বল।
– কবে থেকে কাজ শিখানো হবে?
– ১তারিখ থেকে।
– ওহ্হ আচ্ছা তাহলে তো ৪ দিন পর তাহলে আমার অনুমান ঠিক আছে। আচ্ছা কতদিনের কোর্স এটা?
– ৩ মাসের কোর্স।
– ওহ্হ আচ্ছা।
– তুমি কি তোমার জামাইকে বলছিলে তোমার এই কাজের কথা?
– না বলিনি।
– বল দেখ কি বলে।
– কি বলবে? যেতে দিবে না।
– কেন? দিবে না সে তোমার সব কথা শুনতে বাধ্য।
– আরে না কয়েক দিন ধরে কেমন যেন একটু পরিবর্তন আসছে।
– মানে কি?
– মানে সে আগের মতই আচরণ করে। কয়েকদিন আগে আমাকে বলে লিমা আমার যেন কেমন কেমন লাগে আমার মনে হয় আমি স্বাভাবিক না। আর নামাজেও কেমন যেন অমনোযোগী হয়ে গেছি।
আর তার মধ্যে সেই আগের মত স্বাভাবিকতা ফুটে উঠে।
– কি বল এসব আচ্ছা তুমি কি সেই তাবিজ ভিজিয়ে পানি পড়া খাওয়াও না?
– কয়েকদিন আমার খাওয়াতে মনে নেই।
-উফফ ডেম তুমি আজকে থেকে আবার শুরু করো।
– আচ্ছা মাই ডিয়ার।
_____

জানিস মিম আমি আগে সত্যি তুহিন কে অনেক ভালোবাসতাম আর তুহিন আমাকে ভালোবাসত আমি মনে করতাম ইউসুফ জুলেখার প্রেম এর মত। আর তুহিনের সাথে যোগাযোগ হওয়ার পর ওকে বন্ধু ভাবতাম কিন্তু জিবীন শেষ হবে বুঝতে পারিনি।

-আচ্ছা লঘিমা ইউসুফ জুলেখা কি আসলেই প্রেম করেছিল?
– আরে মিম না। এটা একটা মিথ্যা ধারনা। আমি অবশ্য সব কিছু হারানোর পর জানতে পারি। কিন্তু পবিত্র কুরআনে স্পষ্ট এর ব্যাখা আছে।

– আচ্ছা লঘিমা কি ব্যাখা আছে একটু ক্লিয়ার কর তো।
– ওকে তাহলে শোন_____

“যারা প্রেমের রেফারেন্স এ ইউসুপ, জোলাইখা কে টানেন তাদের জন্য এই রেফারেন্স।

ইউসুফ আঃ কেন কারারুদ্ধ হলেন? কারণ তিনি তো ছিলেন নিরপরাধ?

এটা আছে পবিত্র কুর’আনে>>

(Yusuf 12:32)

قَالَتْ فَذَٰلِكُنَّ ٱلَّذِى لُمْتُنَّنِى فِيهِۖ وَلَقَدْ رَٰوَدتُّهُۥ عَن نَّفْسِهِۦ فَٱسْتَعْصَمَۖ وَلَئِن لَّمْ يَفْعَلْ مَآ ءَامُرُهُۥ لَيُسْجَنَنَّ وَلَيَكُونًا مِّنَ ٱلصَّٰغِرِينَ

(আযীযের স্ত্রী যুলাইখা) বললো> এই সেই (ইউসুফ) যার সম্বন্ধে তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করেছ! আমি তো তার কাছে যৌন-মিলন কামনা করেছি; কিন্তু সে নিজেকে পবিত্র রেখেছে! আমি তাকে যা আদেশ করি, সে যদি তা না করে, তাহলে অবশ্যই সে কারারুদ্ধ হবে এবং লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
(অধ্যায় ১২,, সুরা ইউসুফ,, আয়াত ৩২)

এই আয়াত থেকে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, মূলত আযীযের স্ত্রী #যুলাইখার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় তার আক্রোশের কারণেই #ইউসুফ আঃ #কারারুদ্ধ হয়েছিলেন!

এছাড়াও ইউসুফ আঃ দোয়া করেছিলেন ★

(Yusuf 12:33)

قَالَ رَبِّ ٱلسِّجْنُ أَحَبُّ إِلَىَّ مِمَّا يَدْعُونَنِىٓ إِلَيْهِۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّى كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ ٱلْجَٰهِلِينَ

ইউসুফ আঃ বলেছিলেন>>হে আমার প্রতিপালক! এই মহিলারা আমাকে যার প্রতি আহ্বান করছে তা অপেক্ষা কারাগার আমার কাছে অধিক প্রিয়! আপনি যদি তাদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন তাহলে আমি তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। [১]

[১] ইউসুফ (আঃ) মনে মনে উক্ত দু’আ করেছিলেন। কারণ বিপদ-আপদে মুমিনের জন্য দু’আ একটি হাতিয়ার! হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে>> “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা ৭ ব্যক্তিকে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে স্থান দেবেন! তাদের মধ্যে একজন হ’ল সেই ব্যক্তি, যাকে একজন সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত নারী কু-কর্ম করার জন্য আহ্বান করে। কিন্তু সে তাকে এই বলে উত্তর দেয় যে, আমি আল্লাহকে ভয় করি (৩) যেটা অত্র সুরার ২৩ নাম্বার আয়াতেই আছে। এবং আল্লাহ তা’আলা তাকে কারাগৃহ থেকে স্ব-সন্মানে মুক্তও করেন যেটা ১০০ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত আছে।

ইনশাআল্লাহ ইউসুফ আঃ কিয়ামতের দিন তাদের অন্তর্ভুক্ত হবেন যাঁরা মহান আল্লাহর আরশের ছায়ার নিচে স্থান পাবেন।

(৩)
সহীহ আল-বুখারী হা/৬৬০
সহীহ মুসলিম হা/১০৩১
সুনান আত-তিরমিযী হা/২৩৯১
মুসনাদে আহমাদ হা/৯৬৬৫

#বিঃদ্রঃ ইউসুফ আঃ এর সাথে জুলেখার বিয়ে হয়ে ছিলো এটা মিথ্যাচার। আর সঠিক নামটি হবে #যুলাইখা ,, জুলেখা নয়! তবে বাংলাভাষীরা #জুলেখা নামেই জানে! কিন্তু আমি নামটি #যুলাইখা ব্যবহার করলাম! কারণ আমি পবিত্র কুর’আন ও বিশুদ্ধ তাফসীর উপেক্ষা করে নামের বিকৃতি ঘটাতে পারিনা।

আশাকরি ইউসুফ জুলেখা নিয়ে যে বানোয়াট ধারনা চিল কিছু ভন্ড বেহায়া প্রেমিকদের কাছে তার কিছুটা হলেও অবসান হবে।

– ওহ্হ আচ্ছা আমিও তো এতে দিন ভুল জানতাম।

– আচ্ছা তারপর কি হয়েছিল?

আমি জায়েদ সাহেব কে রাতে আবার সরবত করে তাবিজ ভিজিয়ে পানি পড়া খাইয়ে দেই। তখন সে আমার দিকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,,,,,,,

( আসসালামু আলাইকুম।ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে