#আলো_থেকে_অন্ধকার
Part:-06
Writer:- #Esrat_jahan_Esha
সংসারের প্রতি আমার মন উঠে গেল। আমার না আছে বাচ্চার প্রতি খেয়াল না আছে নিজের সংসারকে টিকিয়ে রাখার ইচ্ছে।
সারাদিন শুধু তুহিনের কথা মনে পড়ে। এখন আমার জায়েদ কেও সহ্য হয় না। তাই তার থেকে বিছানাই আলাদা করে নিয়েছি।
– লিমা লিমা কই তুমি লিমা
– কি হইছে এভাবে ডাকতাছেন কেন?
– এভাবে সব সময় ধমক দিয়ে কথা বল কেন? তোমার মাঝে এমন পরিবর্তন কেন হইছে?
– ওহ্হ তাই এখন আর আমাকে ভালো লাগে না। আমি খারাপ যেটা আপনার মা বলে? কি তাই নাকি?
– নাহ আমি এমন ভাবে কিছু বলিনি সরি।
– এইযে শুনেন আমি ঘরের কোনো কাজ করতে পারব না।
– মানে
– পারব না মানে পারব না।
– তাহলে কে করবে?
আমি মাথা ঠান্ডা করে বল্লাম শুনেন শ্বশুর শাশুড়ির সাথে অনেক অন্যায় করেছি। আমরা তার চেয়ে আবার আগের মত হয়ে যাই সবাই মিলে একসাথে থাকি।
– না লিমা থাক যারা আমার সংসার ভাংতে চায় তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে লাভ নাই। আমরা তো এমনিতেই ভালো আছি।
– না থাক তাদের সাথে আরেকবার সব কিছু ঠিক করে নেই।
– আচ্ছা তুমি যা ভালো মনে কর।
– তুমি গিয়ে মায়ের পায়ে পড়বে। আর বলবে মা আমরা ভুল করছি আমাদের ক্ষমা করে দাও। মা আমরা আবার একসাথে থাকি। সবাই মিলে আবার একক পরিবার হয়ে যাই।
– আমি তাহলে যাচ্ছি।
তারপর আমি তুহিন কে ফোন দিলাম
– হ্যা তুমি যেভাবে বলছ আমি ঠিক সেইভাবেই করেছি। সবার সাথে আবার মিল করার কথা বলেছি। জায়েদ বলছে আজকেই সব ঠিক করে নিবে।
– আচ্ছা এখন তো তোমার কোনো সমস্যা নাই।
– মানে।
– মানে তুমি বুঝ না। এই যে এখন তোমার কোনো কাজ করা লাগবে না ছেলে নিয়াও কোনো টেনশন নাই৷ এখন তুমি স্বাধীন ইচ্ছে মত যেখানে খুশি যেতে পারবে।
– ওহ্হ ঠিকি তো তোমার মাথায় অনেক বুদ্ধি।
– আচ্ছা শোনো সবার সাথে ভালো ব্যবহার করবে। এমন ভাব নিবে তুমি খুব ভালো মেয়ে।
– কেন আমি কি খারাপ?
– আরে না তা বলিনি।
– শোন ২-৩ দিন পর আমার সাথে দেখা করবে।
– আচ্ছা আচ্ছা করব খুশি তো এবার।
– হুমম অনেক খুশি।
– আচ্ছা এখন রাখি।
– ওকে ডিয়ার
_________
– মা প্লিজ আমাদের ক্ষমা করে দাও আমরা ভুল করছি। আমরা আবার একসাথে থাকি মা আমাদের ক্ষমা কর।
– দেখ খোকা যা হইছে হইছে কারো ঘরে আমরা আগুন লাগাতে যাব না।
– মা দেখ ভুল করেছি ক্ষমা কর।
– কেন এখন ক্ষমা চাচ্ছ কেন? ব্যবসায় লস হইছে হাজার হাজার টাকা ধার দেনা করে এখন আবার আসছ আদিক্ষেতা দেখাতে? শোন জায়েদ আমি তোর বাবা কখনো কারো কাছে হাত পাতিনি। দরকার হয় না খেয়ে থেকেছি কিন্তু তাও ধার দেনা এত্ত করি নাই।
গায়ে খেটে পরিশ্রম করে রক্ত পানি করে ব্যবসাকে এত দূর দার করিয়েছি। ভেবেছিলাম ২ ছেলেকে নিয়ে আস্তে আস্তে ব্যবসাটাকে এগিয়ে নিয়ে যাব। কিন্তু তুমি সেটা করলে না বউয়ের কথা মত নিজের সবকিছু ভাগ করে নিয়ে চলে গেছ। একজন মা কখনো সন্তানের খারাপ চায় না।
– বাবা দেখ লিমার কোনো দোষ নেই সব দোষ আমার। যা করার আমি করেছি। আর যা বলতে চাও আমাকে বল।
– হুমম তা তো বুঝি কার দোষ আর কার দোষ না। (বাবা)
– ঐ মেয়ে কি দিয়ে যে আমার ছেলেটাকে এইভাবে নিজের কাছে বস করে রেখেছে। আল্লাহ ভালো জানে৷ (মা)
আমি দেখলাম সবাই খুব খেপা তাই আর জায়েদ এর আশায় না থেকে নিজেই গিয়ে শ্বশুর শাশুড়ির পায়ে ধরে পড়লাম।
– মা আমি ভুল করেছি আমাকে ক্ষমা করুন আমি আর কখনো এমন ভুল করব না। আমাকে ক্ষমা করে দিন।
শ্বশুর শাশুড়ির কোনো সারা শব্দ নেই তারা পাথরের মত দাড়িয়ে আছে। তারপর পাশ থেকে সুমিকে জরিয়ে ধরে বলি। প্লিজ সুমি আমাকে ক্ষমা কর আমিতো তোমার ভাবি। আমি অনেক ভুল করছি তোমরা ক্ষমা কর না প্লিজ।
পাশ থেকে সাকিল এসে বল্লো তা এখানে আবার কি নতুন নাটক শুরু হইছে? একটা দিন কি শান্তিতে থাকতে পারব না। বুঝলাম না আমরা তো আর কারো সংসারে গিয়ে হস্তক্ষেপ করি না তাও কেন আমাদের সাথে ঝগড়া করে? ঘরে অশান্তির সৃষ্টি করে।
জায়েদ কে গিয়ে বল্লাম ছোট ভাইকে বুঝাও।
– সাকিল আমি আর তোর ভাবি অনেক অন্যায় করেছি। প্লিজ ক্ষমা করে দে। আমি তোকে ঐ দিন মেরেছি তাই না রে ভাই আমাকে ক্ষমা কর।
সাকিল হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
– এই কি সেই ভাই যে ২ দিন আগেও আমাকে দেখলে বলত গায়ে আগুন জ্বলে। আমাকে নাকি ভাই পরিচয় দিতে লজ্জা করে। কত কথা আজ সেই ভাইয়ের আবার কি হল।
কেউ আমাদের ক্ষমা করতে রাজি না। আমি আলিফ কে সামনে নিয়ে বল্লাম তোমরা আলিফের মূখের দিকে তাকিয়ে আমাদের ক্ষমা কর।
পরে সবাই আমাদের ক্ষমা করে। আমরা একসাথে সবাই মিলে আবার আগের মত হয়ে যাই।
৫-৬ দিন চলে গেল কেউ তেমন কথা বলে না। তাই আমি সুমির কাছে গেলাম গিয়ে সুমি আমার উপর রেগে আছ। তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।
– নাহ ভাবি আমি রেগে নেই। এমনি
– আচ্ছা চল আজকে আমরা সবাই লুডু খেলব কি বল?
– অনিচ্ছা সত্যেও সুমি বল্লো আচ্ছা চলো ভাবি।
– আচ্ছা ভাইয়া কে ডেকে আন আমি সাকিল কে ডেকে আনি।
-আচ্ছা।
___
– এই যে চলেন আমরা আজকে লুডু খেলব।
– কাদের সাথে?
– সুমি সাকিল আপনি আমি।
– আমি ওদের সাথে খেলব না।
– কেন?
– শোন তোমার জন্য আমি শুধু এক হয়েছি না হলে কখনো আমি এক হতাম না। সব গুলো খারাপ আমার সংসার ভাংতে চায় তুমি কেন ওদের সাথে মিলতে গেলে? বুঝিনা (একটু রাগ নিয়ে)
-আরে গাধা তুই যদি এখন সবার সাথে না মেশ তাহলে খাবি কি? ব্যবসা তো অর্ধেক শেষ করছ কয়দিন পর ফকির হয়ে যাবি। তারপর আমার কি হবে? (মনেমনে) আরে বাদ দেন যা হওয়ার হইছে।
– নাহ আমি যাব না।
– আমি যেতে বলছি আর যেন একটা কথাও না বাড়ে।( চোখ গরম দিয়ে)
– চলো।
-সাকিল এদিকে আয়।
– কোথায়?
– ওরে এখন বল্লে তো ও আসবে না। তার চেয়ে টেনে নিয়ে যাই ( মনে মনে) আরে চল তো।
– কই নিয়ে যাচ্ছিস আমায়। আপু ছেড়ে দে তুই একটা পত্নি শাঁকচুন্নি ছাড় আমাকে।
সুমি টানতে টানতে মায়ের রুমে নিয়ে আসে। মা সবার হাসি মুখ দেখে খুশি। সে আলিফ কে নিয়ে খেলা করছে। আর বলছে কতদিন পর আমাদের ঘরে আবার সুখ ফিরে এল তাই না দাদু নাই
সাকিল আমাদের দেখে মুখ কালো করে বলে।
– আপু এখানে কেন আনলি?
– আরে সবাই মিলে লুডু খেলব।
-কি?
– ওমন করছিস কেন।
– তা ভাইয়া তুমি কি কুরআন হাদিস সব ভুলে গেছ?
– কেন কি বলতে চাস তুই?
– ভাইয়া তুমি যান না? লুডু খেলা হারাম।
জায়েদ একটু ভুরু কুচকে তাকায় বলে আসলেই আমার মনে নেই। তুই একটু খুলে বল তো।
– লুডু খেলা দাবা খেলা এগুলো হারাম।
দাবা, লুডু ও ক্যারাম (অথবা ক্যারোম) আমাদের সমাজে প্রচলিত তিনটি খেলার নাম। তিনটিই গুটি দিয়ে খেলা হয়। পাশা খেলা এগুলোর সমগোত্রীয় খেলা। এসকল খেলাগুলোর উৎপত্তি ভারতীয় উপমহাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ায়। এ সকল খেলাগুলো সম্পূর্ণ হারাম। চাই তা জুয়ার দ্বারা হোক কিংবা জুয়া ছাড়া এমনিই হোক না কেন। সর্বাবস্থায় হারাম। হাদীসে কঠোরভাবে এ খেলাগুলো থেকে বিরত থাকার নির্দেশ এসেছে। যেমন,
حَدَّثَنِي عَنْ مَالِكٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ مَيْسَرَةَ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ أبِي هِنْدٍ, عَنْ أبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللَّهَ وَرَسُولَهُ
অর্থাৎ আবূ মূসা আশআরী (রা.) হতে বর্ণিত, “যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেললো, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্য হলো।”
[মুয়াত্তা মালিক, হা. ৭৬৯; সুনান আবূ দাউদ, হা. ৪৯৩৮]
وَحَدَّثَنِي عَنْ مَالِكٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ : أَنَّهُ كَانَ إِذَا وَجَدَ أَحَداً مِنْ أَهْلِهِ يَلْعَبُ بِالنَّرْدِ ضَرَبَهُ وَكَسَرَهَا
অর্থাৎ “আব্দল্লাহ ইবনে উমর (রা.) যদি তাঁর পরিবারের কাউকে দাবা বা পাশা খেলা দেখতেন, তাহলে তাকে মারতেন এবং দাবা ভেঙে ফেলতেন।”
[মুয়াত্তা মালিক; আওজাযুল মাসালেক, শায়খুল হাদীস যাকারিয়া কন্ধলভী, ১৭/৫৩]
সহীহ মুসলিমের হাদীসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি পাশা বা দাবা খেললো সে যেন তার হাত শুকরের মাংস ও রক্তে ডুবালো।”
عن أبيه أن النبي صلى الله عليه وسلم قال من لعب بالنردشير فكأنما صبغ يده في لحم خنزير ودمه
[সহীহ মুসলিম, হা. ২২৬০; সুনানে আবূ দাউদ, হা. ৪৯৩৯; সুনানে ইবনে মাজাহ, হা. ৩৭৬৩; সুনানুল কুবরা, নাসায়ী; তালখীসুল হাবীর, খ. ৪, পৃ. ৬৩]
শায়খুল ইসলাম আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন,
“ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল (রহ.) বলেন, “দাবা বা পাশা খেলোয়ারকে সালাম দিবে না, কেননা সে প্রকাশ্যে জঘন্য পাপে লিপ্ত।”
[মজমউল ফাতাওয়া, ৩২/২৪৫]
*দাবা-লুডু-ক্যারাম একই খেলা*
ইমাম আবূ হানীফা (রহ.)’র ছাত্র ইমাম মুহাম্মাদ ইবনুল হাসান (রহ.) বলেন,
قَالَ مُحَمَّدٌ: لا خَيْرَ بِاللَّعِبِ كُلِّهَا مِنَ النَّرْدِ، وَالشِّطْرَنْجِ، وَغَيْرِ ذَلِكَ
অর্থাৎ “পাশা, শতরঞ্জ (দাবা) ও এরকম অন্যান্য খেলা খেলে কোনো কল্যাণ নেই ।”
[মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, হা. ৯০৫ এর আলোচনায়, প্র. মাকতাবাতুল ইলমিয়া]
সুতরাং এটি পরিষ্কার যে, দাবা-লুডু-ক্যারাম সব একই খেলা। এগুলো সব হারাম। আলী (রা.) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “দাবা অনারবদের জুয়া খেলা।” এর দ্বারা দাবাসহ গুটি দিয়ে খেলা অন্যান্য অনারবীয় খেলাগুলো অর্থাৎ লুডু, ক্যারামও হারাম প্রমাণিত হচ্ছে। কেননা এগুলো অনারবীয় এবং এগুলো গুটি দিয়ে খেলা হয়।
ফুকাহায়ে কেরামগণ বলেছেন, পাশা বা দাবার ন্যায় গুটি দিয়ে খেলা অন্যান্য খেলাগুলোও হারাম।
[আল মুগনী, ১৩/১৫৪, ১৫৫; আল ফুরূ’ ৬/৫৭৩; আল ইনসাফ, ১২/৫২, ৫৩]
সুতরাং পাশা, দাবা, লুডু ও ক্যারাম এসকল হারাম খেলা থেকে আমরা নিজেরা ত বিরত থাকবোই, অন্যদেরও বিরত রাখবো
এদের যাই করি তাই নিষেধ এর জন্যই এদের আমার ভালো লাগে না উফফ( মনে মন)
– ওহ্হ হে এটা তো আমি জানি। ইদানীং কেন জেন এগুলো সব ভুলে যাই।
শ্বাশুড়ি মা একটু সন্দেহের চোখে তাকাল। যে তার ছেলে আসলেই সব কিছু ভুলে যাচ্ছে আগের মত নামাজ রোজা এসবের প্রতি কেমন যেন উদাসীন।
আমি তারাতারি করে বল্লাম তাহলে কি আমরা কিছু খেলব না???
সুমি বলে হুম আমরা খাতা কলমে খেলি।
– ভাবি চলো আমরা চোর পুলিশ খেলি।
– আচ্ছা চলো।
– যা তো সাকিল গিয়ে খাতা কলম নিয়ে আয়।
– আপু তুই সব সময় আমাকে বল কেন তুই খারাপ খারাপ খারাপ। পত্নি শাঁকচুন্নি।
– হো তোর গালি দেওয়া হইছে তাহলে এখন যা।
– যাই যাই।
সবাই মিলে অনেক মজা করলাম।
১৫ দিন এর মত আমরা খুব সুখেই ছিলাম। তারপর আবার অশান্তি শুরু হল।
তুহিন ফোন দিয়ে বল্লো কি লিমা,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,
( আসসালামু আলাইকুম। কেমন হইছে জানাবেন। ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।দোয়া করবেন সবাই)