আলো থেকে অন্ধকার পর্ব-০৪

0
1037

#আলো_থেকে_অন্ধকার
Part:-04
writer:-#Esrat_jahan_Esha

সুমি এই সুমি কই তুই?
– জ্বি ভাইয়া আমি তো মায়ের ঘরে আছি।
– আচ্ছা আমি আসছি৷
জায়েদ ঘরে গিয়ে দেখল আলিফকে ( রামিম নাম টা নাকি ভালো না তাই অনেকই নাম চেন্জ করতে বলছে তাই পরিবর্তন করে আলিফ দিলাম) নিয়ে সুমি খেলা করছে। পাশে মাও বসে আছে।

– সুমি তোর সাথে আমার কথা ছিল। কিন্তু তুই রাগ করবি না। বোঝার চেষ্টা করবি।
– জ্বি ভাইয়া বল তোমার কথায় আমি কি কখনো রাগ করছি। আমি জানি তুমি আমাকে অনেক ভালোবাসো।
– তুই তোর ভাবি কে কি বলেছিস?
– ভাইয়া আমি তো,,,,,,
আমিও মায়ের রুমে গিয়ে দাড়ালাম। আমাকে দেখে আমার মূখের দিকে তাকিয়ে আছে। জায়েদ আমাকে দেখে আবার সুমি কে জিজ্ঞেস করল।
– কিরে কিছু বলছিস না কেন? তুই তোর ভাবিকে নাকি বলছ কার সাথে প্রেম করে তার জন্য নাকি আলিফের খেয়াল রাখে না। fb imo এগুলো নাকি চালাতে মানা করছ? সে নাকি ঘরের কোনো কাজ করে না?

সুমি ওর ভাইয়ার অবাক দৃষ্টিতে মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।
– ভাইয়া এগুলো আমি কখন বল্লাম?

আমার মনে ভয় হতে লাগল সুমি যদি ওর ভাইকে কিছু বলে তাহলে। সাথে সাথে বল্লাম। থাক ছোট মানুষ কি বলতে কি বলেছে। বাদ দেন ও খুব ভয় পেয়ে গেছে। আর আমার ননদ কে এইভাবে দেখতে ভালো লাগে না।
– দেখ তোর ভাবি তোকে কত ভালোবাসে তাও তুই তোর ভাবিকে ঐসব কথা কেন বল্লি??
শোন বড়দের সাথে কখনো এভাবে কথা বলতে হয় না। তুই না আমার বোন আমি আশা করিনা তুই এতো খারাপ ভাবে একজন মানুষকে বলতে পারস তাও তোর নিজের ভাবি। যে তোকে কতই না ভালোবাসে।

সুমির শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছে আর ওর ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে গিয়েও যেন চুপ হয়ে গেছে।
– যা ভাবির কাছে গিয়ে ক্ষমা চাও।
– ভাইয়া,,,
– আমি কি বলছি?
সুমি আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার মনে হয় ওর চোখ দিয়ে আমাকে এটাই বুঝাতে চাইছে ভাবি তুমি এটা কিভাবে পারলে? তোমাকে তো খুব ভালোবাসি। আর এগুলো তো কিছুই তোমাকে বল্লাম না। যদি ক্ষমা চাওয়ার হয় তাহলে তো তোমার চাওয়ার কথা।

সুমি চোখে তখন স্পষ্ট আমার জন্য একরাশ ঘৃণা দেখতে পেয়েছি চোখ নামিয়ে বল্লো।

– দুঃখীত তোমার মোবাইল ধরার জন্য। আর কখনো তোমার মোবাইল ধরব না। যা বলছি তাতে যদি তুমি কষ্ট পাও আমাকে মাফ করে দিবা।

জায়েদ ওর কথার ধরন শুনে চমকে উঠে মোবাইল ধরার জন্য?

আমি তারাতারি সুমি কে জরিয়ে ধরি আর বলি আমি কিছু মনে করিনি। আর তুমি মোবাইল কেন ধরবে না হুমম। তুমি যখন তখন আমার ফোন ধরবে।
তারপর কানের কাছে মূখ নিয়ে বল্লাম কখনো অন্যের ব্যপারে নাক গলাবে না।

তারপর সবাই মিলে কতক্ষণ কথা বলি। সুমিকে খেয়াল করলাম মুখ কালো করে সবার মূখের দিকে তাকিয়ে আছে।

আমরা আলিফ কে নিয়ে চলে যাই।

★★★
সুমি তুই কি সত্যি তোর ভাবিকে এগুলো বলছিস?
– মা বিশ্বাস কর এইরকম কোনো কথায় হয় নি। আর মা আমি দোষী না। যদি কেউ দোষী হয় তাহলে ভাবি দোষী।
– কি হইছিল?
– মা আমি ভাবির ঘরে গিয়েছিলাম ভাবির মোবাইলে ছবি তোলার জন্য। কিন্তু ভাবির ফোনে একটা মেসেজ আসল জান পরে কখন অনলাইনে আসবে?
– আমি sms টা দেখে ভিতরে গিয়ে দেখি সে আমার ভাই না। অন্য কোনো ছেলের সাথে নানা রকম কথা। তার মধ্যে এমন একটা sms ছিল দেখ তুমি আমার কাছে ফিরে এসো কবে আসবে বল? আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি তোমাকে অনেক সূখে রাখব।

সাথে সাথে ভাবি আমার থেকে মোবাইল টেনে নিল। আর বল্লো তুমি আমার মোবাইল কেন ধরেছ? ভাবি আমি ছবি তুলতে এসছি কিন্তু ভাবি ছেলেটা কে যার সাথে তুমি কথা বল। আমার ভাইয়ের সংসার নষ্ট কর না।
তারপর ভাবি আমাকে অনেক বকাঝকা করছে। আর ভাবি বলছে আমার বিয়ে হয় না কেন। আমি নাকি ভাইয়ার টাকা সব খেয়ে ফেলি।

– মা বিশ্বাস কর আমি ঐ sms গুলো দেখিছি তার জন্য ভাবি আমার সাথে এমন করল।
– যাই হোক বাদ দে হয়ত কোনো ফ্রেন্ড মন খারাপ করিস না। তোর ভাইয়াকে যা বুঝানো হয়েছে তাই সে বুঝছে। হয়ত একদিন বুঝতে পারবে৷

সুমি ওর মাকে ধরে কান্না শুরু করে।
★★★
ওহ্হ যাক সুমিকে উচিৎ শিক্ষা দেওয়া গেল। আর কখনো আমার মোবাইলে হাত দিবে না।
– কি হলো মন খারাপ করে বসে আছ কেন?
– সুমি আমার আদরের বোন কখনো ওর সাথে এমন ভাবে কথা বলিনি।
– এহহ গা একদম জ্বলে যায়(মনে মনে) আচ্ছা শোন মন খারাপ কর না। যা হবার তা হয়েছে আর ও রাগ করে নেই। ও ওর ভুল বুঝতে পেরেছে।
– হুমম।
– আচ্ছা আপনি খেয়ে আসুন আমি আলিফ কে ঘুম পারাই নেই।
-কেন তুমি খাবে না?
– নাহ আমার আজ খেতে ভালো লাগছে না। আপনি খেয়ে আসুন।
– তুমি না খেয়ে থাকবে তা হবে না।
– তুমি আলিফ কে ঘুম পারাও আমি তোমার খাবার নিয়ে আসছি। আজকে আমি তোমাকে খাইয়ে দিব।
– আচ্ছা ( মুচকি হাসে)

জায়েদ খেতে যাওয়ার পর।
আমি তুহিন কে sms করলাম
– তুহিন আজকে আমার ননদি তোমার sms গুলো পড়েছে। অনেক কষ্টে আমার স্বামীকে ম্যানেজ করছি।
– ওহ্হ। তা কোনো সমস্যা হয় নাই তো?
– নাহ কোনো সমস্যা হয় নি। তবে উনি যদি কখনো আমাকে ভুল বুঝে তারপর মোবাইল অফ করে দেয়।
– শোন তুমি তোমার স্বামীকে বস করে নাও।
– বস করব মানে?
– আমি তোমাকে কিছু তাবিজ এনে দিব যাতে সে তোমার কথায় উঠবে আর বসবে।
– কি বল এইসব এটা কিভাবে সম্ভব?
– তা তোমার ভাবতে হবে না। আমি দেখছি ওকে। তবে আমাকে কিছু টাকা দিতে হবে এর জন্য। এখন আমার কাছে টাকা পয়সা নেই।
– কত টাকা লাগবে?
– ১০,০০০ মত দাও।
– এত টাকা কই পাবো?
– আরে শোন তোমার সুখের জন্য বলছি। খারাপ চাইনা তোমার। তোমার স্বামীকে বস করলে তোমার কথায় উঠবে বসবে। তোমার কথা সব বিশ্বাস করবে। তারপর তোমার শ্বশুর শাশুড়ির ননদ তাদের। কথা বিশ্বাস তো দূরে থাক কথায় ভালোভাবে শুনবে না। সব তোমার কথা তেই হবে।
– আচ্ছা তুমি কর। যত টাকা লাগে দিব। পরে কতা হবে।
– ওকে।
★★★
লিমা তুই এত বড় জঘন্য কাজ করতে পারলি কিভাবে?
– দেখ মিম তখন আমার মাথায় কাজ করেনি। আমি কি করব বল। আমি শয়তানের ধোঁকায় পরে করেছি।
– শয়তানের ধোকা? আরে ঐ তাবিজ গুলো ছিল কুফ্ফারি কালাম। যাকে আমরা ব্ল্যাক মাজিক/ কালোজাদু বলি।
তুই জানিস এটা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা। আর আল্লাহ শিরক কারীদের কখনো ক্ষমা করেন না।
শিরক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার মানা, আল্লাহর অস্তিত্ব ও গুণরাজিকে কাউকে শরীক করে নেয়া। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত মানুষ বিভিন্নভাবে খোদার খোদায়ীত্বে শরীক বানিয়েছে। মানুষ কখনও একাধিক খোদা বানিয়েছে। কখনও খোদাকে বিভিন্নভাবে বিভক্ত করেছে। আবার কখনও বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তি ও বস্তুকে খোদা বানিয়েছে। কখনও নিজেরাই মূর্তি তৈরি করে তার পূঁজা করেছে। আবার কখনও কখনও শক্তিশালী মানুষকে খোদার মর্যাদা দিয়েছে।

শিরক সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন- ‘আল্লাহর সঙ্গে শরীক করো না। নিশ্চিত জেনে রেখো শিরক হচ্ছে অতি বড় জুলুম।’ (লুকমান ১৩)

‘নিশ্চয় জেনো, আল্লাহর সঙ্গে শরীক বানানোর যে পাপ তা তিনি ক্ষমা করেন না। এ ছাড়া অন্য যে কোন পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেবেন। বস্তুত যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরীক করে, সে তো উদ্ভাবন করে নিয়েছে এক গুরুতর মিথ্যা।’ (নিসা ৪৮)

‘আল্লাহ তো একমাত্র ইলাহ। সন্তানাদি থেকে তিনি সম্পূর্ণ পবিত্র। আসমান ও যমিনে যা কিছু আছে সবই তো তাঁর।’(নিসা ১৭১)

‘যে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকেও ডাকে। তার সমর্থনে তার হাতে কোন দলিল প্রমাণ নেই। তার হিসাব-নিকাশ হবে আল্লাহর নিকট। এ ধরনের কাফেররা কিছুতেই কল্যাণ ও সফলতা লাভ করতে পারে না।’ (মুমিনুন ১১৭)

‘লোকেরা তাঁর কতিপয় বান্দাকে তাঁর অংশ মনে করে নিয়েছে। প্রকৃত কথা এই যে, মানুষ সুস্পষ্টরূপে অকৃতজ্ঞ।’ (যুখরুফ ১৫)

‘তিনি তো আসমান ও যমিনের উদ্ভাবক। কি করে তাঁর সন্তান হতে পারে অথচ তার তো জীবন সঙ্গিনিই কেউ নেই? তিনি সব জিনিস সৃষ্টি করেছেন।’ (আনআম ১০১)

‘তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব ও ইবাদত করো। আর অন্য কোন কিছুকেই তাঁর সঙ্গে শরীক করো না।’ (নিসা ৩৬)

‘অতএব যে ব্যক্তি তার রবের সঙ্গে সাক্ষাত লাভের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে সে যেন নিষ্ঠার সঙ্গে সৎকর্ম সম্পাদন করতে থাকে আর তার রবের দাসত্ব, ইবাদ-বন্দেগিতে যেন অপর কাউকেও শরীক না করে।’ (কাহাফ ১১০)

শিরক সম্পর্কে হাদীস : হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন নবী করীম (সা.) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে এমন অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে যে, সে তাঁর সঙ্গে শিরক করে না, সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে। আর যে তাঁর সঙ্গে শিরক করা অবস্থায় সাক্ষাৎ করবে, সে জাহান্নামে যাবে।’ (মুসলিম)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন, কবীরা গোনাহ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, কাউকে হত্যা করা ও মিথ্যা শপথ করা। (বুখারী)

হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ হতে বিরত থাকবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে সাতটি পাপ কি কি? তিনি বললেন, এগুলো হল- আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করা, যাদু করা, শরীয়তের অনুমোদন ব্যতিরেকে কাউকে হত্যা করা, সুদ খাওয়া, এতিমের মাল আত্মসাৎ করা, জিহাদের ময়দান হতে পলায়ন করা এবং অচেতন পবিত্র ঈমানদার মহিলাদের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের মিথ্যা অভিযোগ আনা। (বুখারী-মুসলিম)

– তুই এগুলো কিভাবে জানলি?
– সেটা যখন আমার ঘটনা তোকে বলব তখন তোকে বলব কিভাবে জানি।
তবে তুই যা করছ এটাও ঠিক না। কি হইছিল তোর যে এই রকম জঘন্য কাজ করতে পারলি?
– তুই এভাবে বলিস না। আমি এত কিছু বুঝতে পারিনি রে।
আমি ভুল করছি সুমির সাথে ঐ রকম করার পর থেকেই ঘরে একটার পর একটা অশান্তি লাগে আর সব কিছুর কারন ছিল ঐ তুহিন্না। জানোয়ার আমার জীবনটা নষ্ট করে দিছে নষ্ট করে দিছে আমার সোনার সংসার।

সেদিন যখন তুহিনের সাথে ফোনে কথা বলি তুখন আমার শ্বাশুড়ি সব শুনে ফেলে।
– লিমা তুমি কার সাথে কথা বল????

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,

( আসসালামু আলাইকুম কেমন হইছে জানাবেন। ভুলত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। বানান গুলো একটু বুঝে পড়ে নিবেন প্লিজ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে