#আলো_আঁধার
পর্ব ঃ- ১৩
~আঁখি দেব তৃপ্তি
“না না এরকম করা যাবে না। পরে ও আরও বেশী রাগ করে ফেলবে ভাইয়া।”- নিশু।
” পরের টা পরে দেখা যাবে তুই ঠিকানাটা দে তো।”-ঈশান।
হঠাৎ নিশুর মুখে হাসির রেখা ফুটতে দেখা গেল।
“কী রে নিশু কী হলো?”- ঈশান।
” ওইতো আলো এসে গেছে ভাইয়া। তোমাকে আর কষ্ট করতে হবে না।”
নিশুর কথায় পিছনে ফিরে থাকালো ঈশান।
হাল্কা আকাশী রংয়ের সাথে গোল্ডেন পাড়ের একটি শাড়ি পড়ে কালো রঙের একটি মেয়ে গেটের দিকে এগিয়ে আসছে। শাড়ির সাথে হালকা গহনাও পড়েছে সে কিন্তু সাজটা একদম ন্যাচারাল। কোনো রকম কৃত্রিমতা তার মধ্যে বুঝা যাচ্ছে না। আজকাল তো ফরসা মেয়েরাও কীসব ক্রিম পাউডার মেখে নিজেদের আরো ফরসা করার প্রতিযোগিতায় লেগে যায়। সেখানে এরকম কিছু সত্যিই আশ্চর্যজনক। মেয়েটি যত কাছে আসছে তার চেহারার লাবণ্যতা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে ঈশানের কাছে। চুলগুলো তার খোপা করা
সেই খোঁপায় বেশী ফুলের মালা জড়ানো। প্রথমে মনে হয়েছিল ফুলগুলো কৃত্রিম কিন্তু এখন চারিদিকের সুভাস বলে দিচ্ছে মেয়েটির মতো এগুলোও ন্যাচারাল। আরেকটু কাছে আসতেই মেয়েটির চোখদুটো স্পষ্ট হয়ে উঠছে। ঈশানের মনে হচ্ছে এতো সুন্দর চোখ এর আগে সে কখনো দেখে নি। গাঢ় কাজল সেই চোখের সৌন্দর্য আরও অনেকগুণ বাড়িয়ে তুলেছে। এরকম চোখে যেন ডুবে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে ঈশানের। নিজের ভাবনাগুলোয় নিজেই অবাক হচ্ছে ঈশান। তার আশেপাশে প্রতিনিয়ত কতো সুন্দরী মেয়ে ঘুরাঘুরি করে আর সে কিনা এই কালো মেয়েটাকে প্রথম দেখায়ই ওর প্রতি এতো অনুভূতি ভালোলাগা খুঁজে পাচ্ছে যার সন্ধান সে অনেকদিন ধরে করছিল।
“ভাইয়া এ হচ্ছে আলো আমার বান্ধবী আর আলো এই সেই ঈশান ভাইয়া যার কথা আমি প্রায়ই তোর সাথে গল্প করতাম।”- নিশুর কথায় ঘোর কাটলো ঈশানের। একদম সামনে দাঁড়িয়ে আছে এখন মেয়েটি তার। কীরকম একটা লাগছে ওর যেন তাও নিজেকে সামলে নিশুকে বললো-
” ও আচ্ছা ইনিই তিনি যার আমার মিষ্টি বোনটা এতোক্ষণ মন খারাপ করে ছিল।”- ঈশান।
“হুম।”- নিশু।
” আচ্ছা তুই একটু আগে বললি আমার কথা গল্প করতি মানে কী! ”
“মানে আর কী বুঝতেই তো পারছেন আশা করি। নিশু বলতে গেলে আপনার ভক্ত। আপনার সবকিছু সবকাজই ওর কাছে ঠিক মনে হয় আর এরকম সুপার হিরো টাইপ ভাই এর জন্য ওর গর্বের শেষ নেই। তাই আপনার কথা গল্প করতে ও পছন্দ করতো আর করে সবসময়ই। “- আলো।
” হা হা হা। আমি সুপার হিরো! হাসালেন আপনি। আর কী বললেন আমার সব কাজ ঠিক মনে করে তার মানে কী আমি ভুল কাজ করি আপনার ধারণা? “-ঈশান।
” আপনার কাজ ঠিক না ভুল তা বিচার করার আমি কেউ নই তাই আমার কোনো ধারণাও নেই।”- আলো।
“কী শুরু করলি তোরা? ঈশান ভাইয়া যাই করুক সে অনেক ভালো মানুষ বুঝলি আলো। তোর হয়তো এগুলো ঠিক মনে হয় না কিন্তু ভাইয়া খারাপ কিছু করতেই পারে না আমি জানি।”- নিশু।
” কোন কাজগুলোর কথা বলছিস রে নিশু? একটু ক্লিয়ার করে বল প্লিজ আমি তো কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি।”-ঈশান।
ইশান কথাটা শেষ করতে না করতেই নিশুর অন্য বান্ধবীরা এসে তাকে ঘিরে ফেললো। আর বলতে শুরু করলো – ” আপনি ঈশান ভাইয়া তাই না। ওয়াও আপনার সাথে দেখা করার কতো ইচ্ছে ছিল আজ পূরণ হলো। ” আরেকজন বলে উঠলো – “আমার সাথে একটি সেলফি উঠবে প্লিজ ওইদিকে চলো না একটু।”
এমন পরিস্থিতি ঈশানের সাথে নতুন ঘটছে এমন কিছু না। অন্য সময় সে এসব এনজয়ই করতো কিন্তু আজ তার খুব অস্বস্তি লাগছে। বার বার তাকাচ্ছে আলোর দিকে। আলো তখন বলে উঠলো –
“জানতে চাইছিলেন না কোন কাজ। এই কাজটার কথাই হচ্ছিল। যাইহোক এনজয় করুন আসি। চল নিশু।”- বলে আলো ভেতরের দিকে চলে গেল।
পরপর ৩ গ্লাস পানি খেয়েও ঝাল কমলো না নিলয়ের। দিয়ার মা দিয়া ও প্রমিকে এর জন্য বকাবকি করছেন এতে দিয়ার একটু খারাপ লাগলেও প্রমির এরকম কোনো অনুভূতি কাজ করলো না। নিলয়ের অবস্থা দেখে সে মজা পাচ্ছে খুব।
দিয়ার মা এক গ্লাস দুধ নিয়ে এসে নিলয়কে দিয়ে বললেন-” এটা খাও বাবা তাহলে ঝাল কমবে।”
“নে খেয়ে নে এটাই তোর জন্য পারফেক্ট হিহি।”- প্রমি বলে উঠলো।
” প্রমি এখন কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস যা ভেতরে যা।”- বলে উঠলো দিয়া।
“প্রমি কথাটা শুনেও না শুনার ভান করে দাঁড়িয়ে রইলো।”
দুধ খাবার পর আস্তে আস্তে ঝাল কমলো নিলয়ের। তারপর সে দিয়ার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে এলো বাসা থেকে। দিয়ার মাও এলেন ওর পিছন পিছন।
“তুমি রাগ করো না বাবা জানোই তো প্রমি এরকমই। কী আর বলবো ওকে বলো দিয়া নিজে থেকে করলে আমি ঠিক ওকে শাস্তি দিতাম।”- দিয়ার মা।
” না না আন্টি ওদের কিছু বলার প্রয়োজন নেই। আমরা বন্ধু তো তাই ওরা একটু বেশি বেশি করে ফেলে আমি কিছু মনে করি নি।”- নিলয়।
“আচ্ছা বাবা চলো আমি তোমাকে গেইট পর্যন্ত এগিয়ে দেই। নয়তো আবার কুকুর তাড়া করবে।”
নিলয় আর কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো।
একটা টিউশন শেষ করে পরেরটার উদ্দেশ্যে হাঁটছে শ্রাবণ। মাথায় তার ফটোগ্রাফির চিন্তা। আর সাথে সেই আলো আঁধার নামের মেয়েটির বিষয়ে কৌতূহল। শ্রাবণ ভেবেছিল মেয়েটাকে নিয়ে একটু ভিন্ন থিমের ফটোগ্রাফি করবে। কিন্তু কোনো কন্টাক্ট নাম্বারও তো সে দিয়ে গেল না। কোথায় পাবে আবার তাকে সে। এক্সিবিশনে গেলে পাওয়া যাবে কিন্তু সে কী রাজি হবে শ্রাবণের প্রস্তাবে। এসব চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছে শ্রাবণের মাথায়। কাল আরেকবার এক্সিবিশনে যাবে বলে ঠিক করলো শ্রাবণ। আগে মেয়েটার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে তারপর ফটোগ্রাফির প্রস্তাব ওকে দিতে হবে।
কোনোকরকম মেয়েগুলোর মধ্যে থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ভেতরে এলো ঈশান। তারপর উঠে গেল ছাদে। নিশু বাসার ছাদেই পার্টির ব্যবস্থা করেছে। ছাদটা ফুল আর রংবেরঙের বাতি দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। তারপর চারিদিকে খুঁজতে শুরু করলো আলোকে। মেয়েটার ওর সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই সেটা ও বুঝতে পেরেছে। কিন্তু ওর যা ধারণা তাও পুরোপুরি সঠিক নয়। নিশু যা বলেছিল তাই ঠিক ঈশান যাই করুক কারো ক্ষতি কখনো করে না। এটা কী বুঝবে মেয়েটা?
হঠাৎ ছাদের এক কর্ণারে আলোকে দেখতে পেলো সে। একাই বসে আছে মেয়েটা। আস্তে আস্তে সেদিকে এগুতে শুরু করলো ঈশান। কিন্তু তার খুব নার্ভাস লাগছে। একটা মেয়ের সাথে কথা বলতে যাওয়ায় এতো নার্ভাস লাগার কী আছে বুঝতে পারলো না ঈশান। কই আগে তো এমন কখনো হয় নি!