#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
১০.
বেশ কিছুক্ষণ হলো রাণী একটা কেবিনে বসে আছে।এই কেবিনের সবকিছুই একদম কালো।এমনকি রুমে থাকা বড় ঘড়িটাও কালো রঙের। রাণী অনেক বুঝার চেষ্টা করছিল এই কেবিন কার!যদি সে কেবিনের টেবিলে থাকা নেইম প্লেট পড়তে পারতো, তাহলে সে সহজেই বুঝে যেতো এটা কার কেবিন! সোফা থেকে টেবিলের দুরত্ব ভালোই।তাই সোফা থেকে এতো দূর থেকে নাম পড়া বেশ দুঃসাধ্য ব্যাপার।হ্যারি রাণীকে এইখানে বসতে বলেছিল।তাই রাণী সেখানেই বসে রইলো।সোফা থেকে উঠলো না আর।তবে সোফায় বসে চারদিকে চোখ ঘুরাতেই রাণী দেখতে পেলো, দেওয়ালে টাঙানো তূর্যয়ের বিশাল এক ছবি।এই ছবিটা দেখেই রাণী নিশ্চিত হয়ে নিলো,এই কেবিনটা তূর্যয়ের।বেশ বড় সাইজের একটা রুম। রুমের সব কিছুই কালো রঙ দ্বারা আবৃত থাকার কারণেই রুমটা বড্ড রহস্যময়ী লাগছে রাণীর কাছে।সোফায় আরেকটু গা এলিয়ে বসলো রাণী।হ্যারির সাথে যখন সে এইখানে আসছিল তখন সারা অফিসের মানুষগুলো রাণীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে ছিল। রাণীও তার ডাগর ডাগর চোখে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করেছিল তখন।এই অফিসের সব লোক একদম বড়সর,
যেমন একেকটা বাহুবালি।রাণী অবাক হয়ে ভাবে,”এটা অফিস নাকি একটা দামড়া লোকদের মিলন মেলা!” রাণী অবশ্য জানে, তূর্যয়ের ব্যবসা কালো বাজারির ব্যবসা।তাই, এইখানে কোন সুন্দরী নারী কলিগকে তো আর আশা করা যাবেনা! রাণী তার মনে নানান কিছু ভাবছে।বারবার সে ঘড়ির দিকে দেখছে।হ্যারি গেলো সেই অনেক আগে।এখনো ফেরার নাম নিচ্ছে না সে।রাণী নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে কিছুটা পানি খেলো।এরপর সে আবারও বোতল ব্যাগে রেখে সামনে তাকাতেই দেখেলো, হ্যারি দরজা খুলে ভেতরে ঢুকছে।হ্যারির মুখ হাস্যোজ্জ্বল।হ্যারির হাসি দেখে রাণী মুচকি হাসলো।রাণী আজ জানলো হ্যারি বাংলাদেশী না।আগে রাণী ভাবতো হ্যারি বাংলাদেশের, তবে তাকে লাগতো বিদেশিদের মতো।কিন্তু, আজ তার কথায় বাংলা আর ইংরেজি অনেক মিক্স থাকায় রাণী আজকে তাকে বলেছিল,”হয় বাংলা, নাহলে ইংরেজিতে কথা বলবেন আপনি।কেমন অদ্ভুত শোনায় আপনার কথাগুলো।” রাণীর এমন কথায় হ্যারি হেসে বলেছিল,
“বাংলা বলতে আমার ভালো লাগে, সিস।বাট, আই কান্ট সে ফুল বাংলা।কারণ আমি ভিনদেশী। আই লাভ বাংলা লেঙ্গুয়েজ। তাই তূর্যয় ব্রো থেকে হালকা পাতলা বাংলা শিখে সেটাই বলার ট্রাই করি।” হ্যারির এমন কথায় রাণী বোকার মতো হেসেছিল।এখন হ্যারি রুমে ঢুকে রাণীর পাশে সোফায় বসে পড়লো একটু দুরত্ব রেখে।হ্যারির হাতে থাকা কাগজ এগিয়ে দিল রাণীকে,”সাইন দিস পেপার।” রাণী সেই কাগজ হাতে নেওয়ার আগেই হ্যারিকে সে প্রশ্ন করলো,”কিসের কাগজ এইগুলো?” হ্যারি একটু ঘাবড়িয়ে বললো,”আরে,নাথিং সিরিয়াস।তূর্যয় ব্রোয়ের সাথে মিট করার আগে কিছু রুলস থাকে।সেই রুলস পড়ে সবাই সাইন করে।এরপরই তাদের মিটিং ফিক্সড করা হয়।তুমিও ব্রোয়ের সাথে কথা বলতে এসেছো,তাই তোমাকেও এটা পড়ে সাইন করতে হবে।” রাণী প্রথম পৃষ্ঠা ভালো করে পড়ে সাইন করে দিলো।এরপরের পেইজ পড়ে সাইন করার আগেই হ্যারি তাড়াহুড়ো করতে লাগলো। সে বেশ দ্রুত বলে উঠলো,
“ওহ শিট!আমার এখনই যেতে হবে।রাণী সিস,তুমি সাইন করে দাও ফাস্ট।” রাণী হ্যারির তাড়াহুড়ো দেখে ভাবলো, আসলেই হয়তো কোনো কাজ পড়লো এখন হ্যারির।তাও রাণী প্রথম কয়েকটা লাইন পড়লো।সে দেখলো লাইনগুলো, প্রথম কাগজের লাইনের সাথে মিল আছে।তাই রাণী পুরোটা না পড়েই সাইন করে দিলো। রাণীর সাইন করা দেখে হ্যারি জোরে নিঃশ্বাস ফেলে বললো,”থ্যাংকস, গড।” রাণী হ্যারির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,” আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে ভাইয়া?আমার আবার এতিম খানায় ফেরা লাগবে।” হ্যারি একটু মলিন হাসলো। সে ইনিয়ে বিনিয়ে রাণীকে বলতে লাগলো,” একচুয়ালি, তোমাকে কালকে থেকে এই অফিসে আসতে হবে। মানে আমি আর ব্রো যেসব মিশনে যাবো,সেখানে তোমাকেও থাকতে হবে জাস্ট আমাদের কিছু হেল্প করার জন্যে। আই মিন,তুমি এখন আমাদের একজন এমপ্লয়ি।” রাণীর মাথা ঘুরে উঠলো হ্যারির কথায়।সে চেঁচিয়ে উঠলো হ্যারিকে,”কি বলছেন এইসব?আমি কেনো আপনাদের সাথে মিশনে যাবো?আর আমি আপনাদের এমপ্লয়ি! এর মানেই বা কি?হ্যারি ভাই,আমি কিন্তু আপনাকে অনেক বিশ্বাস করেছি। আশা করি আপনি আমার সাথে কোন রকমের গেম খেলবেন না!” হ্যারির মুখ একেবারে আঁধারে ছেয়ে গেল রাণীর কথায়।হ্যারি বুঝতে পারছে রাণী বেশ কষ্ট পাবে সম্পূর্ণ ঘটনা শুনলে।কিন্তু হ্যারি চায় তূর্যয়ের জীবনে আলোর আগমন হোক।তাই সে বাধ্য হয়ে এই কাজ করলো।হ্যারি এইবার নিজের মুখ খুললো। সে মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,”আসলে,তূর্যয় ব্রো কখনো নিজের স্বার্থ ছাড়া ডিল করে না।তাই আমি কাগজ রেডি করিয়েছি তোমার জন্যে।তূর্যয় ব্রো উইল হেল্প ইউ বাট তোমাকেও আমার ব্রোকে হেল্প করতে হবে।” রাণী বেশ অবাক হলো হ্যারির কথায়।রাণী বসা থেকে উঠে হ্যারিকে চেঁচিয়ে বললো,”আমি কিভাবে সাহায্য করবো আপনার ব্রোকে?আর আপনার ব্রো!উনার কাছে শুধু শুধুই আমি সাহায্য নিতে এসেছিলাম।আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম উনি একটা সন্ত্রাসী।আর সন্ত্রাসী মানুষ কখনোই কারো সাহায্য করে না।আমার লাগবে না আপনার ব্রো এর সাহায্য ।আমি আমার জন্যে অন্য ব্যবস্থা করে নিবো।” রাণী বেশ রেগে কথাগুলো বলে চলে যেতে নিলেই দেখলো দরজা আবারও খুলছে।এমনটা দেখে রাণী দাঁড়িয়ে পড়লো।দরজা ঠেলে ঢুকলো তূর্যয়।
রাণীকে নিজের কেবিনে দেখতে পেয়ে বেশ অবাক হলো তূর্যয়।তার উপর রাণীর রাগী চেহারার কারণটাও মাথায় আসছে না তার।তূর্যয় নিজের শার্টের হাতা গুটিয়ে নিতে নিতে তার চেয়ারে গিয়ে বসে পড়লো।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে তূর্যয় হ্যারিকে প্রশ্ন করলো,”এই মেয়ে এইখানে কেনো?” হ্যারি তূর্যয়কে বলতে লাগলো,”আহমেদের কারণে বেচারীকে এতিম খানায় অনেক অপমানিত হতে হয়েছে।তোমার কাছেই এসেছিল হেল্প নিতে। বাকিটা তুমি কুইনের কাছ থেকে শুনে নাও।আম গোয়িং।”
হ্যারি হাতে কাগজ নিয়ে দ্রুত পায়ে চলে গেলো কেবিন থেকে।তূর্যয় এক নজর তাকালো রাণীর দিকে।রাণীকে বড্ড ক্লান্ত আর কেমন যেনো দেখাচ্ছে।রাণীর এমন রূপ মোটেও ভালো লাগছে না তূর্যয়ের। তূর্যয় কিছু না বলে নিজের সামনে থাকা ল্যাপটপ খুললো।
রাণী মনে মনে তূর্যয়কে হাজারটা গালি দিচ্ছে। রাণী ভেবে পায় না,এমন এক জোড়া মায়া মাখানো চোখের মালিক এতো নির্দয় কিভাবে হয়! সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,” সামান্য একটা সাহায্যই তো চেয়েছিলাম উনার কাছে।আর উনি কিনা প্ল্যান করে আমাকেই উনার কাজে নিয়োজিত করে নিয়েছেন!শয়তান সন্ত্রাসী একটা।এইযে উনি এখন চুপ করে ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছেন উনাকে দেখতে বড্ড বেশি মায়াময় লাগছে।কে বলবে এই লোক এতো হিংস্র?এতো স্বার্থপর? লাগবে না কোনো সাহায্য আমার।” রাণী মনে মনে কথাগুলো বলে সামনে এগিয়ে গিয়ে দরজায় হাত রাখলো।ঠিক তখনি সে তূর্যয়ের কথা শুনতে পেলো,”কি কাজে এসেছিলি?” তূর্যয়ের কথায় রাণী থেমে গেলো।পেছনে মাথা বাঁকিয়ে তাকিয়ে রাণী দেখলো,তূর্যয় এখনো তার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আছে।রাণী তূর্যয়ের কথায় কান না দিয়ে দরজা খুলতে গেলেই তূর্যয় এইবার রাগী গলায় বললো,
“কানে শুনতে পাস না?আমি একটা প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করি না।” রাণী দরজা থেকে হাত সরিয়ে নিলো।দ্রুত পায়ে সে তূর্যয়ের দিকে এগিয়ে গেলো।টেবিলের উপর জোরে নিজের ব্যাগ রাখলো রাণী। তূর্যয় মাথা উঠিয়ে তাকালো রাণীর দিকে।তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে রাণীকে বলে উঠলো,
“আমার অফিসে আমার চেয়ে বেশি শব্দ করা অন্যের জন্যে বারণ।” রাণী এইবার একটু ঝুঁকে গেল টেবিলের দিকে।রাণী নিজের দাঁত কটমট করে তূর্যয়কে বললো,
“ঠিক আছে করবো না শব্দ।আপনার অফিসে থাকার জন্যে আমি বসে নেই।তবে একটা কথা জেনে রাখুন,
আপনি একটা স্বার্থপর।আপনার কাছে ছোট একটা সাহায্য চেয়েছিলাম আর আপনি কিনা সেখানেও নিজের স্বার্থ খুঁজছেন?কি নিকৃষ্ট মানুষ আপনি! ভেবেছিলাম আপনার মধ্যে একটু হলেও ভালো মানুষ বেঁচে আছে।তবে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম,একজন সন্ত্রাসী কখনোই ভালো মানুষ হয় না।সেদিন আমাকে আপনার ভাইয়ের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন এর জন্যে অনেক ধন্যবাদ।বাদ বাকি,আপনার মতো সন্ত্রাসী থেকে কোনো সাহায্যর দরকার নেই আমার।যায়,আলবিদা।” রাণী নিজের ব্যাগ উঠে চলে যাওয়ার জন্যে পা বাড়ালো। যেই এক পা এগোতে যাবে রাণী অমনি তূর্যয়ের চিৎকার রাণীর কানে প্রবেশ করলো,” জাস্ট স্টপ!সাহস কি করে হয় উল্টো পাল্টা কথা বলে চলে যাওয়ার?মুখ থেকে যেই এক একটা কথা বের করেছিস,সবগুলো আমাকে বুঝিয়ে এরপরই এইখান থেকে যেতে পারবি।” তূর্যয়ের চিৎকারে রাণী নিজের ব্যাগ খামচে ধরলো।তূর্যয় উঠে এলো রাণীর সামনে।রাণী তার চোখ বন্ধ করে নিলো।কিছু সময় পর রাণী চোখ খুলতেই তূর্যয়কে নিজের সামনে দেখতে পেলো।তূর্যয়ের বুকের উপর ঝুলে থাকা চেইন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে রাণী।তূর্যয়কে দেখে দুই পা পিছিয়ে গেলো রাণী। তূর্যয় রাগী গলায় রাণীকে বলল,
“যেই কাজ আমি করিনি সেই কাজের দুর্নাম আমি সহ্য করতে পারি না।কি হয়েছে,সেই ব্যাপারটা আমাকে ঠিক করে বল।” রাণী নিজের বুকের সাথে ব্যাগ চেপে ধরেছে।সে আসলেই বুঝতে পারছে না,তূর্যয় আসলেই কিছু জানেনা নাকি সে রাণীকে আবারও কোনো গোলক ধাঁধায় ফেলানোর চেষ্টা করছে! তূর্যয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে রাণী আল্লাহ্ এর নাম নিয়ে দিলো এক দৌড়।তূর্যয় নিজেই হতবাক হয়ে গেলো রাণীর এমন কান্ডে।তূর্যয় হাত এগিয়ে দিতেই তূর্যয়ের হাতের সাথে লেগে রাণীর ওড়না মাথা থেকে ছুটে গেলো।এতে রাণী আবারও দাঁড়িয়ে পড়লো।রাণী হতবাক হয়ে পেছনের দিকে ফিরলে, তূর্যয়ের রাগী চোখ দেখে একটু ঘাবড়ে গেলো রাণী।রাণীর অজানা ভয় লাগতে শুরু করলো।কিন্তু তূর্যয়ের চোখজোড়া যখন রাণীর গলায় পড়লো, তখন তূর্যয়ের চোখের রং বদলাতে শুরু করলো। রাণী তূর্যয়ের চোখের দৃষ্টি অনুকরণ করে বুঝতে পারলো, তূর্যয়ের চোখের দৃষ্টি রাণীর গলায় পড়া মাত্রই তূর্যয়ের চোখ থেকে রাগী ভাব নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো।
তূর্যয় অবাক হয়ে দেখছে রাণীর গলা।কেমন কালচে হয়ে আছে সেদিকে।সেদিন রাণীর গলা ছিল রক্তমাখা, যা তূর্যয়কে রাতে ঘুমাতে দেয়নি।আর এখন সেইখানেই কেমন কালচে হয়ে আছে,তূর্যয়ের একটুও কষ্ট হলো না বুঝতে এই দাগগুলো কিসের!তূর্যয় নরম কণ্ঠে রাণীকে বললো,”ডাক্তার দেখাসনি গলার জন্যে?” রাণী তার প্রশ্নে মনে মনে বলতে লাগলো,”শালা গুন্ডা,আমি সামান্য সাহায্য কি চেয়েছি অমনি তার স্বার্থপরতা বেড়ে গেলো। আর এখন আমার উপর দরদ দেখানো হচ্ছে!” রাণী মনে মনে কথাগুলো বলে তূর্যয়ের দিকে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলো,”আপনাকে আর দরদ দেখাতে হবে না।সন্ত্রাসীদের দরদ দেখানো শোভা দেয় না।আমার মতো এতিমদের অল্পতে ডাক্তার দেখানো চলে না।টাকা কি গাছে ধরে?আপনার মায়ের মতোই হয়েছেন আপনি। একেবারে জল্লাদ!” রাণীর ঘাড়ত্যাড়ামি দেখে তূর্যয় চিল্লিয়ে উঠলো রাণীকে,”বড্ড ফাজিল মেয়ে তুই।আমি কি করেছি তোর সাথে? হ্যারি কিছু না বলে চলে গেলো।আর তুই!সেই কখন থেকেই বাজে বকে যাচ্ছিস।কথার মাঝে মাকে আনবি না।” রাণীকে কিছু বলতে না দিয়ে তূর্যয় হ্যারিকে ফোন করলো তার কেবিনে আসার জন্যে।একটু পরেই হ্যারি চলে এলো সেই কাগজ নিয়ে।হ্যারিকে দেখা মাত্রই রাণী তাকে বললো,”আপনি কাজটা মোটেও ভালো করলেন না, ভিনদেশী ভাই।আমি বেশ আশা নিয়ে এসেছিলাম আপনার ব্রো এর কাছে।কিন্তু আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আপনার ব্রো একটা সন্ত্রাসী।পাথর একটা।মোটেও ভালো লোক না আপনার ব্রো।আপনি অন্তত আমার সাহায্য করতেন!” হ্যারি রাণীকে চুপ করতে ইশারা করলো নিজের মুখে আঙ্গুল দেখিয়ে। কিন্তু রাণী বকবক করতেই লাগলো।তূর্যয় টেবিলের উপর খুব জোরেই হাত দিয়ে ঘুষি দিলো।সেই শব্দে রাণী চুপ হয়ে গেলো।রাণী হালকা ঢেঁকুর গিলে হ্যারির পেছনে গিয়ে লুকালো।তূর্যয় হ্যারিকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো আসল কাহিনী কি! হ্যারি গলগল করে সব বলে দিলো তূর্যয়কে।হ্যারির কাজে বেশ রেগে গেলো তূর্যয়।কিন্তু সেই রাগ হ্যারির উপর না দেখিয়ে সে রাগ দেখালো রাণীর উপর।কারণ একটু আগে রাণী না জেনে শুনেই তার মাকে কথার মাঝে এনেছিল।যা রাণীর প্রতি বাড়িয়ে দিলো তূর্যয়ের রাগ।তূর্যয় রাগ দেখিয়ে রাণীর দিকে আঙুল দেখিয়ে বললো,”কাল থেকে কাজে চলে আসবি।ঠিক বলেছিস আমি জল্লাদ,আমি সন্ত্রাসী।আমার সব কাজ আমি আমার স্বার্থ ছাড়া করি না।আমার জন্যে কাজ করবি তুই,আর আমি তোর জন্য প্রমাণ হিসেবে থাকবো। যা এইবার।যখন তখন যেনো বসের কেবিনে ঢুকে না পড়িস।হ্যারি, মেয়েটিকে সব নিয়ম শিখিয়ে দিবে।”
তূর্যয় এর কথায় রাণী তূর্যয়কে বলে উঠলো,”আমি করবো না কোনো কাজ।আসি আমি,খোদা হাফেজ।” তূর্যয় দাঁতে দাঁত চাপলো রাণীর কথায়।সে দাঁতে দাঁত চেপে রাণীকে বললো,”তূর্যয়ের নামের পাশে যে একবার সাইন করে, সে কখনোই তার কনট্র্যাক্ট শেষ না করে যেতে পারে না কোথাও।কনট্র্যাক্ট পূরণ না করলে, হয় তোর এতিম খানা যাবে নাহলে তুই যাবি এই দুনিয়া থেকে।এখন বল?” রাণী বেশ ভয় পেলো তূর্যয়ের কথায়।রাণী জোশে এসে ভুলেই গেলো তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোক তাশরীফ তূর্যয়।যে খুবই হিংস্র একজন লোক।রাণী বুঝতে পারলো তূর্যয়ের কথা মানাটাই তার শেষ পথ।সে মনে মনে ভাবতে লাগলো,”এই সন্ত্রাসীর কথা মেনে নিই।নাহলে এই তূর্যয় আমাকে কখনোই সাহায্য করবে না। আর না দিবে আমাকে বাঁচতে। এতিম খানায় সবার সামনে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে এই লোককেই আমার প্রয়োজন।তাই কষ্ট করে এই লোকের কাজ করতে হবে,রাণী তোকে।এক দিকে ভালই হলো। এই লোকের সাথে থাকলে উনার সাথে জড়িত রহস্য সম্পর্কে জানতে আমার বেশ সুবিধা হবে। যাহ, সন্ত্রাসী আমি রাজি হলাম তোর শর্তে!আমিও তোর চেয়ে কম না।” রাণী কথাগুলো ভেবে মিনমিন করে তূর্যয়কে বললো,”ঠিক আছে।তবে আমাকেও কিন্তু আপনার সাহায্য করতে হবে।নাহলে দেখবেন আল্লাহ্ আপনাকে শাস্তি দিবে।এখন আসি আমি;জল্লাদ, সন্ত্রাসী।আল্লাহ্ হাফেজ।” কথাগুলো বলে হনহন করে রাণী বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে। হ্যারি এতক্ষণ যাবত রাণী এবং তূর্যয় দুইজনকেই দেখছিল।হ্যারির এখন চিন্তা লাগছে।সে মনে মনে ভাবছে,”এই দুইজনের ভালো করতে গিয়ে, খারাপ যেনো আমি না করি; গড।প্লিজ হেল্প দেম বথ,
গড।” হ্যারি নিজের বুকের উপর হাত বুলালো।
রাণীর কথাবার্তায় তূর্যয়ের রাগ লাগলেও,এতো বড় অফিসে রাণী একা বেরুতে পারবে কিনা এই নিয়ে ভাবছে সে।তাছাড়া রাণীর গলার কথাটাও তাকে ভাবাচ্ছে।পরক্ষণে তূর্যয় নিজের পকেটে হাত ঢুকিয়ে হ্যারিকে বললো,”ঐ পাগল মেয়েটাকে অফিস থেকে বের হতে সাহায্য করো।বকবক করতে করতে কোথায় গিয়ে ঠেকে মেয়েটা আল্লাহ্ জানে।আর হ্যাঁ,মেয়েটার জন্যে একটা ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দিও।আহমেদ বেশ চোট দিয়েছে মেয়েটার গলায়,রাস্কেল একটা।গো ফাস্ট, হ্যারি।” হ্যারি অবাক হয়ে তূর্যয়ের কথা শুনলো।হ্যারি একটা হাসি দিয়ে তূর্যয়ের কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।সে উপরের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বললো,”থ্যাংকস গড।আমি কিছুটা ভালো ভাইব পাচ্ছি এখন।” হ্যারি তার পায়ের গতি বাড়িয়ে নিলো।
ধপ ধপ পা ফেলে রাণী হাঁটছে। কোথায় যাচ্ছে সে নিজেও জানে না।মনে মনে সে তূর্যয়কে গালি দিয়ে যাচ্ছে,”মাস্তান একটা!আমি তোর সব সত্যিটা জেনে তোকে ভালো মানুষ বানিয়ে ছাড়বো।এই কালা কালা রং সব বের করবো আমি তোর জীবন থেকে।আসছে একটা সন্ত্রাসী!”
আর তূর্যয়! সে তার সামনে ক্লাইন্টকে বসিয়ে রেখে সিসিটিভি ফুটেজ দেখছে।সেখানে সে দেখতে পেলো রাণী এলোমেলো হাঁটছে আর একটু পরে হ্যারি এসে রাণীর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটছে।তূর্যয় যেনো একটু স্বস্থি পেলো।সেদিক থেকে চোখ ফিরিয়ে তূর্যয় সামনে বসা ক্লাইন্টের সাথে কথা বলছে।এর মাঝেই তূর্যয় মনে মনে ভাবছে,”কি এক পাগল মেয়ে!তার উপর হ্যারি এই মেয়েকে কাজে রেখে দিয়েছে।আল্লাহ্ জানে,এই মেয়ে আমার মাথা আদৌ ঠিক রাখবে নাকি আমার মাথা চিবিয়ে খাবে?উফ তূর্যয়!তোর ভয়ে এতো মানুষ সর্বহারা হয়ে যায়,আর তুই কিনা সামান্য এক মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করছিস?এই পাগল মেয়ের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে তূর্যয়।কাজে মন দে।”তূর্যয় নিজের মনে কথাগুলো বলে সামনে থাকা ক্লাইন্টের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
চলবে…