আলো আঁধার পর্ব-০৮

0
947

#আলো-আঁধার🖤
#লেখিকা: সালসাবিল সারা
৮.

আহমেদ মাটিতে শুয়ে আছে। পেটে হাত রেখে কাতরাচ্ছে সে। তূর্যয়ের তিনটা লাথি আহমেদের পেটে পড়ার কারণে আহমেদ ব্যাথায় ছটফট করছে।আহমেদ নিজেও তূর্যয়কে আঘাত করতে চেয়েছিল,কিন্তু তূর্যয়ের দক্ষতার কারণে আহেমদ তূর্যয়কে আঘাত করতে পারেনি।রাণীর কোনো হেলদুল নেই।সে যেনো এক অন্যরকম দুনিয়ায় আছে।রাণী যে এখনো জড়িয়ে আছে তূর্যয়কে, এটা রাণী নিজেও বুঝতে পারছে না।আহমেদ মাটি থেকে উঠে নিজের পেট ধরে হালকা ঝুঁকে মুখে রাগ নিয়ে তূর্যয়ের উদ্দেশ্যে বললো,”শয়তানের বাচ্চা!আমার গায়ে হাত তোলার সাহস পেয়েছিস কিভাবে?তাও আবার ঐ এক এতিমের জন্যে?দিন রাত আমি মেয়েদের সাথে থাকি,তখন তো তুই আমাকে বাঁধা দেসনি কখনো।কে এই মেয়ে?এই মেয়ের জন্যে তোর এত দরদ কেনো? এই মেয়ে তোর কাছের কেউ, বুঝি?” কথাগুলো বলে আহমেদ তেড়ে এলো তূর্যয়ের দিকে।আহমেদের কথা শুনতেই তূর্যয় রাণীকে নিজ থেকে ছাড়িয়ে নিলো।আহমেদের কথা তার কানে বাজছে।আহমেদ তূর্যয়কে মারতে নিলে তূর্যয় আহমেদের হাত ধরে তার হাত বাঁকিয়ে ধরলো। আহমেদ চেঁচিয়ে উঠলো ব্যাথায়।তূর্যয়ের সেদিকে খেয়াল নেই।তার মাথায় ঘুরছে এখনো আহমেদের বলা কথাগুলো।তূর্যয় আহমেদের বলা কথায় নিজের মনে মনে ভাবতে লাগলো,”ঠিকই তো।আহমেদের চরিত্র সম্পর্কে অজানা নয় আমার।দিন রাত সে মেয়েদের সাথেই থাকে।কিন্তু,এই মেয়ের জন্যে আমি কেনো আহমেদের গায়ে হাত তুললাম?কেনো আমার সহ্য হয়নি তাদেরকে ঐ অবস্থায় দেখে?আমি হিংস্র মানুষের মনেও কি এখনো অন্য মানুষের জন্যে মায়া আছে?নাকি শুধু এই মেয়ের জন্যেই আমার অন্যরকম অনুভূতি সৃষ্টি হচ্ছে?উফ না, তূর্যয়।তুই হিংস্র।তুই কখনো অন্য মানুষের প্রতি দূর্বল হতে পারিস না।”আপন মনে কথাগুলো ভেবে রাণীর দিকে তাকালো তূর্যয়। রাণী তার বুকের উপর হাত গুটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রাণীর গলায় রক্তের দাগ দেখা যাচ্ছে।রাণীর নজর আপাতত নিচের দিকে।হঠাৎই তূর্যয়ের পিঠে আঘাত পাওয়াতে তূর্যয় একটু নড়ে উঠলো।রাণীর নজরটাও এখন মাটি থেকে সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকালো।পিঠে আগের ব্যাথার উপর এখন আবারও আঘাত পাওয়াতে তূর্যয়ের ভেতরটা যেনো জ্বলে উঠলো।কিন্তু সে মুখে কোনো অভিব্যক্তি দেয়নি।সাবিনাকে দেখে তূর্যয়ের একটুও নিজের কষ্টটা দেখাতে ইচ্ছে করলো না ।বরং সে আহমেদের হাত আরো জোরে চেপে ধরলো।এমন দৃশ্য দেখে সাবিনা চিল্লিয়ে উঠলো,” ছাড়,আমার ছেলেকে ছাড়। অনাথ ছেলেকে হাসান সাহেব এই বাড়িতে রেখে এই বাড়িরই পরিবেশ নষ্ট করেছে।এই আপদ, কেনো যাচ্ছিস না এই বাড়ি থেকে?আমার ছেলেকে কেনো মারছিস? ছাড়, আমার ছেলের হাত ছাড়।” সাবিনার এমন কথায় তূর্যয় আহমেদের হাত ছেড়ে দিল।রক্তচক্ষু নিয়ে তূর্যয় তাকালো সাবিনার দিকে।তূর্যয় দাঁতে দাঁত চেপে সাবিনাকে বলে উঠলো,”একটু আগে যেই নামে ডেকেছেন আমাকে, সেই নাম যেনো আর না শুনি আপনার মুখ থেকে। এই ঘরে যতটা অধিকার আছে আপনার,ততটাই অধিকার আছে আমার।আপনার ছেলের চরিত্র আগে থেকেই নষ্ট।তবে,কোনো নিরীহ মেয়ের চরিত্রের উপর আমার সামনে দাগ পড়বে,এটা আমি কখনোই মেনে নিবো না।আপনার ছেলের তৃষ্ণা মেটানোর জন্যে অন্য মেয়ের ব্যবস্থা করে দিবেন,যারা নিজ ইচ্ছায় নিজের ইজ্জত লুটিয়ে দেয়।” সাবিনা আর তূর্যয় নিজেরাই কথা কাটাকাটি করছে।তূর্যয়ের ব্যাপারে বলা সাবিনার কথায় রাণী বেশ অবাক হলো।তবে রাণী তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনায় নিজেই হতবাক।তাই সে অন্যদিকের চিন্তা না করে সেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।সামনে যেতেই সে দেখতে পেল রিয়াকে দারোয়ান ধরে রেখেছে।মনি দারোয়ানকে বকা দিচ্ছে,রিয়াকে এইভাবে ধরে রাখার জন্যে।রাণীকে দেখতে পেয়ে রিয়া নিজের হাত ছুটিয়ে নিয়ে দৌড় দিল রাণীর দিকে।রাণীর অবস্থা দেখতেই রিয়ার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।মনি নিজেও হতবাক রাণীর অবস্থা দেখে।রাণীকে রিয়া জড়িয়ে ধরতে নিলে রাণী হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেয়।ধীর কণ্ঠে রাণী রিয়াকে বললো,”বাড়ি যাবো।চল।” রাণী হাঁটতে শুরু করলো।রিয়া তাদের ব্যাগ আর জিনিস নিয়ে নিজেও রাণীর পিছে চললো।মনির অনেক কিছু জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হলেও, রাণীর অবস্থা দেখে সে কিছু বলল না।মনি নিজেই রেস্ট হাউজের দিকে যেতে লাগলো।সেখানে গিয়েই মনি আহমেদ,সাবিনা আর তূর্যয় একসাথে ঝগড়া করছে।এমনটা দেখে মনি জোর গলায় বললো,”ঐ মেয়েটার গলায় কি হয়েছে?মেয়েটা কান্না করছিলই বা কেনো?” মনির কথায় তূর্যয়ের হুঁশ ফিরলো।সে চারদিকে তাকালো রাণীকে দেখার আশায়।কিন্তু, রাণীকে দেখলো না সে।বুকে এক প্রকার তীব্রভাব অনুভব করলো তূর্যয়।সে বাহিরে যাওয়ার আগে মনিকে বলে উঠলো,” তোর মা আর ভাইকে বুঝিয়ে দিস,নিরীহ মেয়ের সাথে কোনো অত্যাচার করলে তূর্যয় তাদের নিজের নিয়মে শাস্তি দিবে।” মনি মাথা নাড়ালো তূর্যয়ের কথায়।মনির বুঝতে বাকি রইলো না কেনো তার ভাই এই কথা বললো তাকে। তূর্যয় চলে যাওয়ার পর সাবিনা আর আহমেদ মনির সামনেই তূর্যয়কে মেরে ফেলার নানান ফন্দি আটছে।মনি তাদের বিশ্রী প্ল্যানের বিপরীতে তাদের বলে উঠলো,” তূর্যয় ভাইয়ের ক্ষতি করতে গিয়ে দেখবে,
নিজেরাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছো।”

রাণী আর রিয়া একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে সেটিতে উঠে পড়লো।গলায় প্রচন্ড জ্বলছে রাণীর।মুখটা বারবার কুঁচকে আসছে তার।আহমেদের মুখটা মনে আসতেই রাণীর ভেতরটা বারবার নেড়ে উঠছে।তূর্যয় আজ ঠিক সময়ে না আসলে রাণীর জীবনটায় শেষ হয়ে যেতো। শান্তি মহলে এমন একটা পশু থাকে এটা রাণী কখনোই জানতো না।সাবিনার ছেলের নানান খারাপ কাজের কথা সে জানতো।কিন্তু সে এত খারাপ হবে, এটা রাণী কখনোই ভাবেনি।সাবিনার কথাগুলো ধীরে ধীর মনে আসছে রাণীর।সে স্পষ্ট ভাবে মনে করতে পারছে,
সাবিনা তূর্যয়কে অনাথ ডেকেছিলো।তূর্যয়ের সব কথা রাণীর কানে বাজছে।তবে আজকের ঘটনার জন্যে রাণী তার মন দিয়ে ভালো করে কিছুই ভাবতে পারছে না।রাণীর চোখ জোড়া বারবার ভরে আসছে আহমেদের চেহারা মনে আসতেই।রাণী নিজের মাথায় কাপড় দিয়ে দিলো ভালো করে।এতিম খানায় তাকে সবাই এই অবস্থায় দেখলে নিশ্চিত তাকে ছি ছি করবে সবাই।রাণীর ভাবতে অবাক লাগছে,যে ছেলেকে সে এতদিন সন্ত্রাসী ছাড়া অন্য কিছুই ভাবেনি,সেই ছেলের জন্যেই আজ রাণী নিজের ইজ্জত বাঁচাতে পেরেছে।তূর্যয়কে মনে মনে রাণী অনেক ধন্যবাদ জানাচ্ছে। এতিম খানার কেউ যেনো এই ঘটনা না জানে,এটাই রাণী রিয়াকে বলছে বারবার।সে রিয়ার হাত ধরে তাকে বললো,”আমি ঠিক আছি।তোর কাছে শুধু একটাই আবদার থাকবে আজকের এই ঘটনা যেনো কেউ না জানে।আমাদের বান্ধুবিরাও না।তারা শুনলে খুব কষ্ট পাবে।আমি চাই না আমার নামে কেউ বদনাম করুক।” রিয়া রাণীর হাতে হাত রেখে আশ্বাস দিয়ে বললো,”আমি কিছুই বলবো না কাউকে।তুই চিন্তা করিস না।” রাণী আলতো করে রিয়ার কাঁধে মাথা রাখলো।রাণীর মাথায় নানান কথা ঘুরপাক খাচ্ছে।আহমেদকে সে সামনে পেলে খুব খারাপ কিছু করবে রাণী আহমেদের সাথে,এমনটাই ভাবছে রাণী আপনমনে।

বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমেছে।তূর্যয় দাঁড়িয়ে আছে সাগর পাড়ে।তীব্র বাতাসে এলোমেলো করে দিচ্ছে তূর্যয়ের জেলমাখা শক্ত চুল আর তার শার্টের কলার।সারাদিনের এক এক কথা ভেসে আসছে তূর্যয়ের মাথায়।রাণীর কান্না মাখা চেহারাটাই আজ বেশি ভাসছে তূর্যয়ের মাথায়।রাণীর সেই চেহারার কারণেই তূর্যয় মন মতো কোনো কাজ করতে পারেনি।রাণী তার বুকের যেই পাশে আটকে ছিল, তূর্যয়ের সেই পাশ যেনো এখনো ভার হয়ে আছে।তূর্যয়ের আজ সবকিছু এলোমেলো লাগছে।তূর্যয় নিজের এলোমেলো চুলগুলো হাত দিয়ে বারবার ঠিক করে নিচ্ছে।এই সমুদ্রের ঠান্ডা বাতাসটা তূর্যয়ের বুকের সকল জ্বালা মেটাতে উঠে পড়ে লেগেছে।চারদিকে নজর বুলিয়ে দেখছে তূর্যয়।সে যে পাশে দাঁড়িয়ে আসছে সেদিকে মানুষ নেই।তবে একটু দূরে মানুষ দেখা যাচ্ছে।তূর্যয় নেশাযুক্ত চোখে সমুদ্র দেখছে আর রাণীর ব্যাপারে ভাবছে।রাণীকে তার বড্ড পরিচিত মনে হচ্ছে,তারপরও রাণীর ব্যাপারে স্পষ্ট কিছুই মনে আসছে না তূর্যয়ের।তার এইসব ভাবনার মধ্যেই হ্যারি তূর্যয়ের কাঁধে হাত রেখে বললো,”ব্রো,এই নাও বিয়ার। এখন বলো,আজ তোমার কি হয়েছে?হুয়াই ইউ আর সো আপসেট টুডে?” তূর্যয় হ্যারির হাত থেকে বিয়ার নিলো।বিয়ারের বোতলে এক চুমুক দিয়ে তূর্যয় হ্যারিকে বলে উঠলো,”আহমেদ।ছেলেটা বড্ড মেয়ে বাজ হয়েছে তারই মায়ের কারণে।আজ আমি ঠিক সময়ে না এলে একজন নিরীহ মেয়ের রেপুটেশন পুরাই বারবাদ হয়ে যেতো।” হ্যারি তূর্যয়ের কথায় নিজের ভ্রু কুঁচকে বললো,” হূ ওয়াজ দা গার্ল?তোমার পরিচিত?” হ্যারির কথা শুনে তূর্যয় বড় এক পাথরের উপর বসে পড়লো।এক পা বটে,অন্য পা লম্বা করে তূর্যয় হ্যারির দিকে তাকিয়ে বললো,” শুধু আমি না, তুমিও চেনো মেয়েটাকে।জঙ্গলে দেখা হয়েছিল আমাদের সাথে সেই মেয়েটির।আজ জানতে পারলাম মেয়েটির নাম, রাণী।মেয়েটি শান্তি মহলে এসেছিল মাটির কাজ করতে।বাট,এরপর আহমেদের সাথে কিভাবে কি হলো কিছুই বুঝতে পারলাম না।মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে কান্না করছিল,আমি নিজের মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। আহমেদকে বেদম পিটিয়েছি।আর তার মা এসে আমার ব্যাথা পাওয়া যায়গায় আবারও আঘাত করলো,দেন আমার সাথে ঝগড়া শুরু করলো।বাজে মহিলার বাজে ছেলে।শুধু মনি আমার বোন, মেয়েটা কিভাবে ভালো পড়লো তাদের ফ্যামিলিতে আল্লাহ্ জানেন।” তূর্যয় কথাগুলো বলে হ্যারির দিকে তাকালো।হ্যারি বিয়ারের বোতলে মুখ লাগিয়ে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তূর্যয়ের দিকে।তূর্যয় হ্যারিকে কিছু বলতে নিলে হ্যারি তূর্যয়কে বলে উঠলো,” মেয়েটি তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিল? ঐ মেয়ের জন্যে তুমি আহমেদকে পিটিয়েছো, ব্রো?হুয়াটস দা ম্যাটার,ব্রো?আজ পর্যন্ত তোমাকে কোনো মেয়ের সাথে দেখলাম না।আর আজ শুনছি,তুমি এক মেয়েকে হাগ করেছো?ওহ গড!” হ্যারি তূর্যয়ের সামনে বসে পড়লো।আবারও সে তূর্যয়কে বললো,” তোমার ডার্কনেসে ভরা জীবনে কেউ কি আলো জ্বালাতে এসেছে,ব্রো?রাণী কি সেই মেয়ে,যে তোমার জীবনের লাইট হবে? আই মিন,রাণী কি তোমার আঁধার ভরা জীবনে আলো জ্বালাবে?” হ্যারির কথায় মুহূর্তেই তূর্যয় ভ্রু কুঁচকে নিলো।তূর্যয় নিজের রাগের মাত্রা বাড়িয়ে হ্যারিকে বললো,”শাট আপ!মুখে যা আসে তা বলবে না।আমার আঁধার জগতে শুধু আমিই থাকবো।আমার কোনো আলোর দরকার নেই।আর ঐ মেয়েটাকে হেল্প করা দরকার ছিল তাই করেছি।এর বেশি কিছুই না।তূর্যয় সারাজীবন একাই থাকবে।তূর্যয়ের জীবনে কাউকে দরকার নেই।”তূর্যয়ের এমন কথায় হ্যারি মন খারাপ করে ফেললো।সে তূর্যয়ের সামনে থেকে উঠে পড়লো। বিয়ারের বোতল তূর্যয়ের পাশে রেখে হ্যারি তাকে বললো,”লেটস সি,যদি কোনোদিন ঐ মেয়ের সাথে তোমার লাভ লাইফ চালু হয়ে যায়;সেদিন কিন্তু ফার্স্টে আমার কথায় ভাববে তুমি।বাই দা ওয়ে,আমি যাচ্ছি। আই হেভ টু গো।” হ্যারি চলে যেতে লাগলো।তূর্যয় আবারও সামনের দিকে তাকালো সমুদ্রের দিকে।হ্যারির বলা কথাগুলো তূর্যয়ের মনে এক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছে।রাণীর ব্যাপারে সে যতোই কঠোর কথা বলুক না কেনো,এই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলেও তূর্যয়ের চোখে রাণীর চেহারা ভাসছে।এমনটা হওয়াতে তূর্যয় জোরে বিয়ারের বোতলে নিজের ঠোঁট চেপে ধরলো,
” নাহ্!আমার এই অনিশ্চিত আঁধারের জীবনে কারো প্রবেশ নিষেধ।আমার আঁধারের জীবনে যে আসবে যে নিজেই অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাবে।তূর্যয়ের জীবনে কাউকেই দরকার নেই।”

রাণী আজকের সম্পূর্ণ ঘটনা সবার থেকে লুকিয়ে নিলো।তার গলার চিহ্ন কেউ দেখতে পায়নি তার ঘোমটার জন্যে।রাতের খাবার খেয়ে সবাই নিজ নিজ জায়গায় শুয়ে পড়েছে।না চাওয়া সত্বেও রাণীর মনে বারবার আজকের চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। রাণীকে বাঁচানোর ঘটনায়, তূর্যয়কে ধন্যবাদ না জানানোয় রাণীর বড্ড অনুতপ্ত হচ্ছে মনে মনে।তাছাড়া, সাবিনা তূর্যয়কে অনাথ বলার কোনো মানেও খুঁজে পাচ্ছে না রাণী।তূর্যয়ের আসল পরিচয় আর সব কিছুই বড্ড ভাবাচ্ছে রাণীকে।রাণী আপনমনে ভাবতে লাগলো,” তূর্যয়কে অনাথ বলার কারণটা আমি বুঝলাম না।সবাই তো তূর্যয়কে শান্তি মহলের বড় সাহেব বলেই ডাকে।তাহলে,আজ সাবিনা ভুটকি কেনো তূর্যয়কে অনাথ ডেকেছে? আর ঐ ছেলেকে আমি সন্ত্রাসী ভাবতাম,কিন্তু ছেলেটার জন্যে আজ আমি নিজের সবকিছু রক্ষা করতে পেরেছি। ঐ সাবিনা ভুটকির মতো তার ছেলেটাও অধম। ঐ বেটাকে পেলেই আমি একেবারে মেরে ফেলবো।উফ,বড্ড রাগ লাগছে আমার!আর যতটুক আসছে তূর্যয়ের কথায়,উনার সাথে আর কখনো দেখা হলে আজকের জন্য একটা ধন্যবাদ দিয়ে দিবো।” রাণী উঠে পড়লো খাট থেকে।বাথরুমে গিয়ে নিজের গলার ক্ষতে মলম লাগিয়ে নিচ্ছে সে। ব্যথায় চোখের পানি টলমল করছে রাণীর।সবাই ঘুমিয়ে গেলে রাণী চলে এলো ছাদে।রাতটা গভীর হচ্ছে।সাথে কোলাহলও কমছে।আকাশের দিকে তাকাতেই রাণীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো।আকাশের দিকে মুখ করে রাণী বলতে লাগলো,”খুব বেশি কি অন্যায় হয়ে যেতো,যদি তোমরা আমাকে তোমাদের সাথেই রাখতে;মা – বাবা!জানো,জীবনে কখনোই তোমাদের অভাব অনুভব হয়নি।কিন্তু আজ হয়েছে।যদি তোমরা আমার সাথে থাকতে, তাহলে আমাকে এইসব দিন কখনোই দেখতে হতো না।যাক,কিছু করার নেই।আল্লাহ্ যা দিয়েছেন আমাকে এতেই আমি শোকরিয়া জানায়।” রাণী কথাগুলো বলে নিজের চোখের পানি মুছে নিলো।বেশ কিছুক্ষণ ছাদে হাঁটাহাঁটি করলো রাণী।তার মনে তার জীবনের নানা কথার সাথে সাথে তূর্যয়ের জীবন কাহিনীর ভাবনাটাও বারবার চলে আসছে।তূর্যয়ের সবকিছু জানতে রাণীর মনে ইচ্ছে জাগলো,এক কথায় যাকে বলে তীব্র ইচ্ছে।রাণী তার বুকে হাত রেখে বলে উঠলো,”আপনার জীবনের সবকিছুই বড্ড চাঞ্চল্যকর।আপনার ব্যাপারে সবকিছু জানতে বড্ড ইচ্ছে করছে আমার।সমস্যা নেই।এই রাণী সব খবর বের করে ফেলবে আপনার ব্যাপারে মিস্টার সন্ত্রাসী,উরফে তাশরীফ তূর্যয়।”

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে