আম সন্দেশ পর্ব-০৫

0
1400

#আম_সন্দেশ
#পর্ব_০৫
#রিমি_ইসলাম

কাজি বিয়ের জন্য সকল প্রস্তুতি নিয়ে কাগজ, কলম সামনে রেখে বললেন,

___’ আপনারা প্রস্তুত আছেন?’

প্রভাত ভাই বড়সড় এক ধমক দিয়ে বললেন,

___’ এই প্রশ্ন আমার করা উচিত কাজি মিয়া। আপনার পানি খাওয়া শেষ হলে এবার বিয়ে পড়ানো শুরু করবেন? এক ঘন্টা তো চুকচুক করে পানিই শুষে গেলেন।’

কাজি থতমত হয়ে হাসার চেষ্টা করে বললেন,

___’ তৈরী আছি বাবা। তাহলে শুরু করছি। বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম। ‘

একম সময় কোথা থেকে বাবা হন্তদন্ত হয়ে এসে পড়লেন। আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না সত্যিই সিনেমাটিক ব্যাপার রিয়েলে ঘটছে। বাবা এসেই কাজির সামনের টেবিলে রাখা গ্লাস এবং রেজিস্ট্রির খাতা সব ফেলে দিয়ে বললেন,

___’ আমার মেয়ের বিয়ে পড়াবে? জেলে ঢুকে পড়িও ভালো করে কেমন?’

বেচারা কাজি আজ বেমালুম ফেঁসেছে। এ যাত্রায় বাঁচলে বোধ হয় এ কম্মই ছেড়ে দিবেন। হাত জোর করে কেঁদে উঠে বললেন,

___’ সাহেব মাফ চাই। হামি এক সামান্য কাজি। কারো ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে পড়ানোর মতো দুঃসাহস আমার নেই। বড়ই বিপদে পড়ে এসেছি। সব এই ছেলের কারসাজি। ‘

___’ বটে!’

বাবা আমাকে হাত ধরে এক রকম টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে তুললো। প্রভাত ভাই কোনো টু শব্দ করলেন না। সারাদিনের তাঁর নাটকীয় ঢঙ আমার বাবাকে দেখে এক মুহূর্তে ফুস হয়ে গেল। গাড়ির সিটে বসেই পাশে মাকে উদ্ধার করলাম। মা এসেছে অথচ ভেতরে ঢোকেনি! ফুপির সাথে মায়ের গলাশ গলায় ভাব। এতকাল তো সেটাই দেখে এসেছি। অথচ তার ভাবের ননদের সাথে একদন্ত কথা বলার ইচ্ছা তার নেই!
বাবা সামনের ড্রাইভারের পাশে বসেই আমাকে এক ধমক ছাড়লেন।

___’ রাতভর বাইরে থেকে এই কান্ড ঘটানো হচ্ছিল? শেষ মুহূর্তে যদি যদি তোর দাদি না বলতো তাহলে সর্বনাশ হতো! ‘

বাবার কথায় প্রথম প্রশ্ন এলো দাদি কিভাবে জানলেন? এমনও হতে পারে ফুপিই তাঁর মাকে জানিয়েছেন। বাবার ধমকে কেঁদে দিলাম। এভাবে শাসন কখনো করে না। মা তো মুখ ঘুরিয়ে বসেছে। শাড়ির আঁচলের আড়ালে তারও ফুপিয়ে কান্নার দমক টের পাচ্ছি।
বাসার পরিস্থিতি খুব সহজ। দাদি আমাকে দেখেই হাত ধরে টেনে তাঁর ঘরে নিয়ে গেলেন। হয়তো এটাই মোক্ষম হাতিয়ার সবার অগ্নিক্রোশ থেকে আমাকে বাঁচানোর।
দাদি ফেলতে ঢুকে দরজা লাগিয়ে একগাল হেসে বললেন,

___’ এই বেটি, তুই রাত আমার নাতির সাথে থাকছিস,একবার আমারে খবর দিয়ে যেতে পারতিস না?’

দাদির এমন সোজা সাপ্টা প্রতিক্রিয়ায় আমি হতভম্ব।

___’ কি… মানে তোমরা আমাকে পেয়েছ কি? যে যার মতো করে একই লাইন বলে যাচ্ছে। সত্যিই আমি নিজ ইচ্ছায় গেছি না ঘটনা তার বিপরীত সে ব্যাপারে কারো জানার আগ্রহ নেই। বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো? খুশি হবে?’

___’ থাপ্পড় খাবি। কই যাবি? একটু সবির কর, যাবি তো কয়দিন বাদে একবারে শ্বশুর বাড়ি। ‘

____
জোৎস্না ভরা রাতের নীল আকাশে তারার হাট বসেছে। ছাদে এসে বসেছি অল্পক্ষণ। সাথে সঙ্গী হয়েছে তানিয়া আপু আর লিনা আপু। তারা প্রায় দুজন একই বয়সী হওয়ায় ওদের ভাব জমে খুব আর এদিকে আমি ছোট বলে তেমন কেউ পাত্তা দেয় না আমাকে। তাছাড়া এই দুইজনের সাথে ওই বিদেশি আপদের ভীষণ খাতির। একই বয়সী কিনা। তাই তানিয়া আর লিনা আপুর আমার সাথে গুরুতর কথার ধরন শুরু ওই প্রভাত ভাইকে নিয়ে এবং শেষ ও তাঁকে ঘিরে।

___’ এই তোমরা দুইজন যাওতো। কখন থেকে পকপক করছ। তোমাদের হৈহৈ এর জন্য চাঁদের চেহারা ম্লান হচ্ছে। ‘

লিনা আপু কপট রাগ দেখিয়ে বললো,

___’ খুব পেকেছ না? কথায় চাঁদের চেহারা ম্লান! তোর অসুবিধা হলে তুই ভাগ।’

অনেক আবদার করেও নড়লো না ওরা। বুঝলাম এদের থেকে পরিত্রাণ নেই। কেউ আপন না।বাড়িতেও কেউ আমার শোনে না। অসহায় হয়ে নেমে যেতে নিলে ওরা হঠাৎ ঝাঁঝ করে উঠলো।
তানিয়া আপু হাসিমুখে বললো,

___ ছোট বোন রাগ করেছ? আহা বস তো একটু, জমিয়ে গল্প করবো। বস, বস!’

আমি বসলাম। কেমন খটকা লাগছে। এদের আচরণে বন্ধুসুলভ ভাব মানেই ডাল ঘোলা আছে। লিনা আপু একটু আগে আমাকে খারাপ ব্যবহার করে খেদিয়ে দিলো। সেই লিনা আপু এখন আহ্লাদী গলায় বললো,

___’ আহা, কি সুন্দর চাঁদ নারে? বসে বসে শুধু চাঁদ দেখে কি পেট ভরবে! আমরা নিচে থেকে চা বানিয়ে আনি। তারপর চায়ের সাথে গল্পের আসর আর চাঁদের হাট জমবে। তুই ভয় করিস না। তোকে দেখে রাখার বহু লোক আছে। আসছি থাক।’

লিনা আপু ঝটপট তানিয়া আপুর হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়। এতক্ষণ ব্যাপারটা গোলমালে ঠেকছিল। এবার পুরো নিশ্চিত হলাম। কিছু একটা ঘাপলা আছে।
আমি আশেপাশে ভয়ের নজরে তাকালাম। কোথাও কেউ লুকিয়ে আমায় ভয় দেখানোর বদ ফন্দি এঁটেছে কিনা দেখতে। তবে তেমন কিছু চোখে পড়ল না দেখে হাল্কা আস্বস্ত হলাম।

___’ আমাকে খুজছিস হাবাটা?তোর চোখ ভালো থাকলে তো দেখতে পাবি! ওই কানা চোখ রেখে কি করবি? ফেলে দিস। আমি তোকে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলবো। ‘

এই গলার আওয়াজটা মারাত্মক এক ভাইরাস আমার জন্য। একটি নির্দিষ্ট ভাইরাস যা কেবল আমাকেই আক্রমণ করে। বারবার ভিন্ন পদ্ধতিতে। মারাত্মক! অসহ্য!

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে