আম্মার সংসার পর্ব-০৪

0
607

#আম্মার_সংসার
#পর্ব৪

ভাইয়া চিঠি টা টান দিয়ে নিয়ে গেছে। আমি চিল্লাচ্ছি লটকন ভাইয়া প্লিজ,লটকন ভাইয়া প্লিজ।
চিঠি রেখে রঙ্গন ভাইয়া আর তার বন্ধু আমার দিকে তাকিয়ে আছে। লটকন কে খোঁজার চেষ্টা করছে। ভাইয়া তো চিঠির ভাঁজ খোলে চিঠির ভেতরে লটকন কে খোঁজতে শুরু করেছে।

ভাইয়া চিঠির ইতি অংশের মধ্যে লটকন কে খুঁজে পায়নি পেয়েছে টুনি আপার ধ্রুব তারা কে।

কয়েক দিন আগে এক বান্ধবীর কাছ থেকে একটা উপন্যাস এনেছিলাম এর মধ্যে এমন এমন কিছু লেখা ছিলো। আমি তো এক হাতে নিজের এক চোখ ঢেকে আরেক চোখ দিয়ে কোন রকম পড়তে গিয়ে লজ্জায় মুচকি মুচকি হাসির জন্য উপন্যাস টা শেষ করতে পারিনি।

উপন্যাসের নায়ক অতি রোমান্টি ফোনে নায়িকা কে বলছিলো-

– এই মেয়ে তুমি আমার ডান গালে চুমু দাও।

– যা অসভ্য।

– ঠিক আছে,গালে চুমু দিবা না। এবার তাহলে দেখো তোমার কোথায় চুমু দেই। উম্মা,উম্মা,উম্মা…..

– কোথায় চুমু দিয়েছ?

– তোমরা ঠোঁটে, গালে, চোখে…..

এই উপন্যাস পড়ার সময় চোখ পিট পিট করে পড়েছি,লজ্জায় নিজের মুখ বালিশে গুঁজেছি। যার কারনে পড়ে শেষ করতে পারিনি।
এইসব অতি রোমান্টিক কিছু আমার জন্য না।
এর জন্য আমার প্রেম হবে না নিশ্চিত।

যাইহোক ভাইয়া আর তার বন্ধু লটকন কে খুঁজে পেলো না।
রঙ্গন ভাইয়া বললো-

– এইটা তোকে লটকন দিয়েছে? লটকন এই এলাকার কোন শালার নাম। লটকন কে?

আমি ঠোঁট উল্টো করে ভাইয়ার বন্ধু কে দেখিয়ে দিলাম।

ভাইয়া তো রেগে ধাম-

– শালা ঘরের শত্রু বিভিষন। তোর নাম লটকন কবে থেকে?

– আমার নাম লটকন হতে যাবে কেনো? আমি অরন্য, অরন্য-ই আছি। এই পিচ্চি সত্যি করে বলো ঘটনা কি। আমি তোমাকে এই টা দিলাম কখন?
এই বাচ্চা মেয়েদের কাজ-ই এমন। নিজের প্রেমিক কে বাঁচানোর জন্য অন্যের উপর দোষ দিয়ে দেয়। বাচ্চা মেয়েদের তো দোষ না,দোষ হচ্ছে বয়সের।

রঙ্গন ভাইয়া চিঠি টা আবার পড়ে দেখলো লেখা আমার টুনি পাখি।
তাই আমাকে বলতে হলো না এই টা ফয়সাল ভাইয়ের লেখা টুনি আপা কে।
ভাইয়া জিজ্ঞেস করলো-

– লটকন, লটকন করছিলি কেনো?

-অরন্য ভাইয়ার নাম জানতাম না। দাদি তাতে লটকন ডাকে। ভাইয়া কে বলতে চাচ্ছিলাম তোমার কাছ থেকে চিঠি টা নিয়ে নিতে।

অরন্য ভাইয়া চোখ বড় বড় করে বললো-

– আমি লটকন।

– হুম।

চিঠি টা নিয়ে দুইজন চলে গেছে। আমি তাকিয়ে আছি। অরন্য ভাইয়া চলে যাবার পথে একবার ফিরে দেখলো।
হাত ইশারা দিয়ে আমার কপালের টিপ টা দেখিয়ে দিলো। টিপের উপর হাত রেখে দোখলাম টিপ টা জায়গা থেকে সড়ে গেছ।
এই লম্বা শ্যামলা রং য়ের ছেলেটার চোখ অসম্ভব সুন্দর।

হ্যা অসম্ভব সুন্দর। কোন অজুহাতে তার চোখ জোড়া ছোঁয়ে দেখতে পারলেই হতো।

রাস্তার দুই পাশে সোনালু ফুল ঝাড়বাতির মতো ঝুলে আছে।
কৃষ্ণ চূড়া গাছের মাথায় আগুন ধরেছে। পিচ ঢালা রাস্তায় পরে থাকা কৃষ্ণ চূড়া ফুল কুঁড়িয়ে কানে গুঁজে রাখলাম।

রঙ্গন ভাইয়া টুনি আপা কে নিয়ে আলাদা রুমে কথা বলতে বসেছে। খুব বেশি সময় লাগেনি আপা আম্মা-আব্বার পছন্দে রাজি। ফয়সাল নাম টা আপা ভুলে গেছে। জানি না ভাইয়া কি এমন জ্ঞান দিয়েছে।

আপার সাথে যে লোকটার বিয়ে হবে, বয়স একটু বেশি মনে হচ্ছে। ৩৮ বছর তো হইবে দেখে মনে হয় চল্লিশ। খাটোখোট,মুটামুটি সাইজের ভুঁড়ি, মাথার তালুতো চুল নাই।
চোখে কাল সানগ্লাস, হাতে সোনালী রংয়ের ঘড়ি। আরেক ব্যাপার হচ্ছে তার দাঁত দুই টা স্বর্নের বাঁধানো।

হাসি-খুশি চটপটে স্বভাবের এই লোকটার নাম জমসেদ। তার টিকটিক, ফেইসবুক আইডির নাম জেমস। টিকটকে ভালোই ফলোয়ার আছ জমসেদ দুলাভাইয়ের।

দুলাভাই জিজ্ঞেস করলো-

– তোমার টিকটকে আইডি আছে?

– না।

– টিকটকে আইডি খুলবা।

– টুনি আপা আর আপনি কি বিয়ের পর টিকটিকে নাচ গান করবেন?

– অবশ্য-ই করবো। এতো সুন্দর একটা মেয়ে কে বিয়ে করতেছি।

টুনি আপা একহারা গড়নের শ্যামলা রং। বড় বড় চোখ,ঘন আইল্যাশ। আমি বুঝতে পারছি না আপার কপালে আসলে কি আছে।

আপা তার প্রেম কে পিছনে ফেলে জমসেদ ভাই কে বিয়ে করে ফেলেছে। বিয়ের দিন ফয়সাল ভাই ছটফট করেছে। বিয়েতে ঝামেলা করেনি।
আম্মা-আব্বার পায়ে ধরে কেঁদেছে। আমার কাছে বসে বসে কেঁদে কেঁদে বলেছে-

– ছোট বইন কেয়ামত হয়ে গেছে, ছোট বইন কেয়ামত হয়ে গেছে।

দুইটা মানুষের এতো ভালোবাসাবাসির পর কাহিনী অন্য দিকে মোড় নিয়েছে।
ছেড়ে যদি যাও তবে ভালোবাস কেন?
চলবে….

#তানজীনা_আফরিন_মেরিন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে