~আমি শুধু চেয়েছি তোমায়(শেষ পর্ব)
“আপনার সাহস তো কম নয় যে আমার হাত ধরেন?
-আমি ধরবো না তো কে ধরবে?একশ বার ধরবো,আল্লাহ আমার কথা শুনেছে তোমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন!
-কেন?আমাকে কেন লাগবে?বউয়ের ঝাড়ি খাচ্ছেন নাকি?
-বউ কিসের বউ?
বিন্দু হাল্কা হেসে-কেন আপনার না বিয়ে করার কথা?
শিশির একটু কেশে বলল-বউ তো চলে ই এসেছে চট্টগ্রাম,তো কেমনে বিয়ে করবো?
-হাত ছাড়ুন আমি যাব?
-নাহ তুমি আগে আমার সব কথা শুনবে তারপর যাবে,কত খুঁজেছি তোমাকে সেটা জানো?
তারপর শিশির একে একে সব বলল,ওর এখানে আসার কথা,সেদিনের কথা!
বিন্দু আড়চোখ এ তাকাতেই,শিশির বলে-এটুকু বিশ্বাস কি আমার প্রাপ্য ছিল না?বিশ্বাস না হলে আমার আম্মু থেকে জেনে নাও,আমরা পাশের গ্রামে থাকি!সীমা মানে সাকিবের ভালবাসা আমার কাজিন!
বিন্দুর মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে,সে এতই আবেগী হয়ে গেছে শিশির কে ঝাপটে জড়িয়ে ধরলো!পাচ ওয়াক্ত নামাজে সে চাইত শিশির ভাল থাকুক বেচে থাকুক সব কষ্ট আল্লাহ তাকে দিক!যদিও সে ভেবেছিল শিশির তাকে ছেড়ে দিয়েছে ভুলে গেছে,
আশেপাশের অনেক মানুষ ই তাদের আড়চোখ এ দেখছে শিশির সেটা খেয়াল করতেই বিন্দুকে ছেড়ে দিল,সে চায়না বিন্দুর নামে কেউ খারাপ কিছু বলুক,সাকিব দূর থেকে এদের কান্ড দেখে অবাক হয়ে গেলো!তার মাথায় কিছুই ডুকছে না!
শিশির বলে
-চলো তোমার আব্বুর সাথে আজই বিয়ের কথা বলবো,
বিন্দু ভয় পেয়ে যেতেই,শিশির বলে পিছিয়ে যাওয়ার ছেলে সে নয়!দরকার পরলে তার আম্মু আব্বু সহ নিয়ে আসবে!
সাকিব ভেবে এটুকু বুঝলো এটা বিন্দুর ভালবাসার মানুষ আর এটাও বুঝলো কেন বিন্দু এতদিন এমন করতো!অথচ সে কখনো জানতে ই চাইনি?নিজের গালে নিজেকে ই থাপ্পড় দিতে মন চাইছে,সে ও গিয়ে বলল-আমি ও আছি চল!
বিন্দু সাকিব শিশির তিনজনেই বিন্দু আর সাকিবের আম্মু আব্বুর সামনে দাড়িয়ে আছে,বিন্দু ভয় পেলেও শিশিরের একটু ও ভয় করছে না,বিন্দুর আব্বু শিশির কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে-কি যেন বলছিলে?
-আমি বিন্দু কে ভালবাসি,বিয়ে করতে চাই?
বিন্দুর আব্বু রেগে গিয়ে বলে-ওর এত বড় সাহস কিভাবে হয়,ভালবাসে সেটা আবার বুক ফুলিয়ে বলতে আসে,আজকাল ভালবাসা বলতে কিছু আছে?দুইদিনের ফুর্তি মাত্র!কেউ কাউকে সম্মান করেনা,দুইদিন পর সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়,আমি ভালবাসা বিশ্বাস করিনা!
শিশির মাথা নিচু করে বলে-
-সেটা আপনার ব্যপার কিন্তু আমি বিন্দুকে ভালবাসি,আমি তাকেই চাই?আপনি আমার ব্যপারে খুজ নিয়ে দেখেন,তাছাড়া আমি আমার আব্বু আম্মুকে ও আনতে রাজি,বিন্দুর জন্য যা বলবেন তাই করবো!
বিন্দুর বাবা বলে- ঠিকাছে তোমার বাবা মা কে আসতে বলো?
শিশির বিন্দুর দিকে একবার তাকিয়ে চলে যায়,বিন্দুর বাবা বিন্দুর দিকে একবার তাকিয়ে কিছুই বলেনা,রুমে চলে যায়,
তারপর সাকিবের বাবা খুজ নিয়ে বলে ছেলের পরিবার অসাধারণ,সাকিবের বাবার ও পরিবার টা পছন্দ হয়েছে!
বিন্দুর মা বিন্দুর বাবাকে বুঝায়-মেয়ে যদি ভালবেসে সুখী হয় তাহলে তার কেন আপত্তি?
তারপর ও বিন্দুর বাবার খুত থেকে যায়,মেয়ের সুখ সবার আগে!
সাকিব সীমার সাথে কথাগুলা শেয়ার করে সীমা খুব খুশি হয়,কিন্তু নিজের কথা ভেবে আবার কান্না পায় যদি তাদের সম্পর্ক না মানে?
সাকিব রাতে বিন্দুর সাথে দেখা করতে যায়,বিন্দু বারান্দায় বসে ছিল-
-মন খারাপ এখনো?
-হু একটু!টেনশন হচ্ছে!
-ধুর পাগলি,যার এত স্ট্রং ভালবাসার মানুষ আছে তার আবার কিসের ভয়?
বিন্দু হাসে,
-তা প্রেমের শুরু কিভাবে বল?
-তোমাদের মতো ই,একদিন ভার্সিটি তে দেখা হয়,সে তখন আমার অনেক সিনিয়র,ভয় পেতাম কিন্তু সবার থেকে জানলাম সে অনেক ভালো,পড়ালেখায় ভাল ছিল বলে সবাই তাকে চিনতো,আমি অন্যমেয়েদের মতো না! সোজা যেতাম আর আসতাম,একদিন উনার চোখে পড়ি,কোন ডিপার্টমেন্ট এসব জিজ্ঞেস করে,আমার কথাগুলা নাকি উনার ভাল লেগেছিল,তারপর যখনি দেখা হতো এসব অসব জিজ্ঞেস করতো,ব্যস প্রেমের শুরু!
সাকিব বলে
-এই কাহিনী!তুই আকাশ কে ও মানুষ করে দিলি!জানিস সে বিয়ে করেছে,আমাকে বলেছে বাট যেতে পারিনি ব্যস্ততার জন্য,এই পরশু ই বিয়ে করেছে মে বি তেমন ধুমধাম করে নয়,মেয়েটি নাকি তাকে ভালবাসত!সবচেয়ে মজা বিষয় সে খারাপ সব অভ্যাস ছেড়ে দিয়েছে!
বিন্দু শুনে হাসে,আর আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানায়,দুইভাইবোন কিছুক্ষণ কথা বলে রাতের খাবার খেতে চলে যায়!
এদিকে শিশির বাড়ি এসে বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে এমন অবস্থা,ওর খুশি দেখে কে?শিশিরের মা ও খুব খুশি অবশেষে বিন্দু কে পাওয়া গেছে,মাঝে শিশির সীমার কথা ও উল্লেখ করে,যেহেতু সীমা রা এই গ্রামে স্থায়ী তাই সীমার মা বাবা সাকিব কে চিনতে সময় লাগেনি,পরিবার ভাল হওয়ায় কেউ আপত্তি করেনি,অবশেষে ঠিক করে কালকে ই অই গ্রামে যাবে!
রাতে কারোর ই ঘুম হয়না,কিছুটা খুশি আর কিছুটা টেনশন এ,,
সকাল হলেই শিশির রেডি হয়ে সীমা কে ছাড়া সবাইকে নিয়ে যায় বিন্দুদের বাড়ি,নতুন যাচ্ছে বলে বেশি করে মিষ্টি সন্দেশ নিয়ে যায়!
বিন্দুর বাবা মা শিশিরের বাবার মার সাথে কথা বলে উনাদের ভালই লাগে,কিন্তু বিন্দুর বাবার শর্ত ভবিষ্যৎ এ মেয়ে যদি কষ্ট পায় তাহলে তিনি যেকোনো স্টেপ নিতে পারবেন,
শিশির মুচকি হেসে একটা লিখিত ডকুমেন্ট তৈরি করে সাইন করে দেয়,তারপর ও তার বিন্দু কে ই চাই!
বিন্দুর বাবা মনে মনে খুশি ই হয়,এমন ছেলে ই ত তিনি প্রতি নামাযে আল্লাহর কাজ থেকে চেয়েছেন,এই ছেলে সাকিবের মত ই,দেখলেই মায়া কাজ করে!
এদিকে সাকিব ভয়ে ভয়ে বলে সে ও একজন কে ভালবাসে!
তখন সাকিবের বাবা ভ্রু কুচকে তাকাতেই সীমার বাবা হু হু করে হেসে সব খুলে বলে!
প্রথমে সাকিবের বাবা গম্ভীর থাকলেও পরে হেসে উঠে,তার মানে তিনি রাজি!
একসাথে দুই টা বিয়ে হবে!সাকিবের আম্মু আব্বু সীমাকে দেখতে যায়,আর পছন্দ করে ফেলে,ছেলের সুখ ই তাদের সুখ!
অবশেষে ধুমধাম করে বিয়ে হয়!শিশির বলে সে ঢাকা চলে যাবে,কিন্তু বিন্দুর বাবা বলে বদলি হয়ে নিতে মেয়েকে তিনি এতদূর পাঠাবেন না,এতে শিশির সম্মতি দিতে পারেনা কারণ হুট করে এভাবে বদলি হওয়া যায় না!অবশেষে বিন্দুর বাবা রাজি হয়,তবে প্রতি ছুটিতে তাদের চট্টগ্রামে আসতে হবে এটাই বলে!
শিশিরের বাবা মা বিন্দুকে পেয়ে খুব খুশি,বিন্দু পুতুলের মতো ই সব দেখে যাচ্ছে,আর শুকরিয়া জানাচ্ছে সৃষ্টিকর্তার প্রতি,তিনি পাশে না থাকলে জিবন এত সুন্দর হতো না,ধর্য্যের ফল যে মিষ্টি সে সেটা বুঝেছে!
অবশেষে সব নিয়ম কানুন শেষে,চারজন ভালবাসার মানুষ এক হয়,সাকিব বিন্দুর কাছে গিয়ে বলে-এবার তুই খুশি তো!
বিন্দু সাকিবের দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথানিচু করে রাখে,
-কিরে কি হলো?
-তুমি খুশি হয়ছো?
-অবশ্যই ভালবাসার মানুষ কে নিজের করে পেলে কার খুশি না লাগে বল?
বিন্দু হাল্কা হাসে,
তারপর সীমা কে সাকিব নিয়ে আসে,আর বিন্দুকে শিশির নিয়ে যায়!
সাকিব আর সীমা সাকিবের বাবা মা কে সালাম করে,আর সীমাকে সাকিবের রুমে দিয়ে আসে,সাকিব আর সীমা মিলে একসাথে বসে রাজ্যের গল্প জুড়ে দেয়!
এদিকে শিশিরের মা বিন্দুকে শাসন করে ই যাচ্ছে-কখনো কিছু যাচাই না করে সীদ্ধান্ত নিতে নেই,মাঝে কত মানুষের কষ্ট হলো!
বিন্দু চুপ করে কাঁদছিল,তারপর বলল-সরি আম্মু,আর এমন হবেনা😔
শিশিরে মা হেসে বলে-হয়েছে অনেক কেঁদেছ এবার হাসির দিন!
শিশিরের বাবা এসে বলে-তুমি আমার বউমা কে বকছো কেন?খবরদার ও আমার আরেক মেয়ে,
বিন্দু কেঁদে শিশিরের বাবাকে জড়িয়ে ধরলো,তার যে বাবা মা কে ফেলে এসে কষ্ট লাগছে!
দুই পরিবার ই খুব খুশি যোগ্য ছেলেদের হাতে মেয়ে তুলে দিয়েছে,তাছাড়া তাদের ভালবাসার ও জয় হয়েছে যে!চার মা বাবা তাদের প্রাণ খুলে দোয়া করে দিলো!
বিন্দুকে শিশিরের রুমে দিয়ে আসলো তার মা!
এদিকে শিশির রুমে ডুকতে ই পারছেনা,এর কারণ বিন্দু দরজা আটকে রেখেছে,এত ঠুকা দিচ্ছে কিন্তু দরজা খুলছেনা শিশির মুচকি হেসে দরজার বাইরে গান গায় একটা!যেটা বিন্দুর পছন্দের,
“একা একলা মন খুঁজে ফিরে মন কেমন,আনমনা মন কেমন মনমরা মন কেমন,কিছু কথা বাকি ভালবাসা বাকি আরো কত কি যে ফিরে আসো কাছে কথা জমে আছে হাজার ইচ্ছের ভীড়ে(শিশির গান তেমন পারে না তাও বিন্দুর জন্য গাওয়ার চেষ্টা করছে)
সে গান থামিয়ে ভাবল হলো টা কি,অসুস্থ লাগছে নাকি,সে ভয় পেয়ে জোরে জোরে বিন্দু বিন্দু বলে ডাকতে ই বিন্দু দরজা খুলে দেয়,শিশির খুশি হয়ে ভিতরে ডুকে বিন্দুকে জড়িয়ে ধরতে ই বিন্দু বলে-এতদিন কাঁদিয়েছেন যে শাস্তি দিব না?
শিশির ভ্রু নাচিয়ে বলে-আবার কি?আমি কি কষ্ট পায়নি?
-কিন্তু আমি যে কেঁদেছি
-তা কি করতে হবে?
-কানে ধরেন?
কান!
-হ্যা
-শিশির ধরার অভিনয় করলে,
বিন্দু বলে -চালাকি চলবে না!ভাল করে ধরেন মি:?
শিশির হেসে কানে ধরে বলে সরি!
বিন্দু একগাল হেসে শিশিরকে জড়িয়ে ধরে,বিন্দু ও বলে সরি
,অনেক্ষন দুজনে চুপ ছিল,শিশির জানে বিন্দু কাঁদছে,অনেক সাধনার পর যে পেয়েছে!
-হয়েছে আর কাদতে হবেনা!
-আচ্ছা কখনো বদলে যাবে না তো!
শিশির বলে সব সুখ টাকা পয়সা একদিকে রেখে যদি কেউ বলে কাকে চাই,আমি তাও বলবো আমার এই সাধারণ বউকে ই চাই,আমি সারাজিবন তোমাকে ই চাই,
-যদি কখন ধমকা হাওয়া আসে,
-আমাদের দুজনের শক্ত হাত ধরে সব ঝড়ে পাশে থাকবো,একসাথে লড়বো আর আমরাই জিতবো!
বিন্দু জড়িয়ে ধরে থাকে,শিশির আবারো বলে-আমি শুধু চাই তোমায়,বিন্দু ও কেঁদে কেঁদে বলে-
“আর আমি শুধুই চেয়েছি তোমায়!”
(সমাপ্ত)
#তাহরীমা