~আমি শুধু চেয়েছি তোমায়(০৫)
সাকিব কিছুক্ষণ দম নিয়ে আবারো বলে-
-আমি তোকে ভালবাসি,তবে সেটা বোনের মতো বুঝলি,আমার তো আপন বোন নেই তুই আমার আপন বোনের মতো!তোর ভাল মন্দের ব্যাপার বড়ভাই হিসেবে দেখার দায়িত্ব আমার সো আমি ই তো দেখব?
বিন্দুর কেমন যেন ভাল লাগা শুরু হলো একটা ভাল বন্ধু পেয়েছে,একে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস করা যায়!
বিন্দুকে নিয়ে সাকিব চলে যায়,পিছন ফিরে আর তাকানোর সুযোগ কোথায়?যদি তাকাতো হয়ত অনাকাঙ্কিত কিছু ঘটলে ঘটতে ও পারতো!
এদিকে সীমা আশেপাশের খালি তাকাচ্ছে,শিশির সেটা খেয়াল করতেই-কিছু কি খুজছো?
সীমা ভীত কন্ঠে বলে না তো,
আই থিংক খুজছো আমায় বলতে পারো বড়ভাই হিসেবে,পাক্কা নিঃসন্দেহে!
সীমা কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বলল-
আসলে আমি একজন কে ভালবাসি,এখানেই তার বাড়ি কিন্তু আমি বাড়ি চিনিনা যদি তাকে দেখি তাই?
-অহ তাহলে তার নাম বলো,এখানের মানুষ চিনবে আমরা না হয় তার বাড়ি যাই?
-না আব্বু শুনলে রাগ করবে আজ না অন্য একদিন!
.
শিশির ও সীমার কথার গুরুত্ব দিয়ে চলে আসলো,
রাত হলে শিশির ছাদে যায়,সাথে সীমা ও যায়..
-গল্প করা যাবে ভাইয়া?তুমি করে বলি?
শিশিরের একা ই ভাল লাগে,কিন্তু বোনের আবদার!কয়দিন বা আছে গল্প করে নেয়া যাক.
-অবশ্যই আসো?
-আচ্ছা ভাইয়া তুমি কাউকে ভালবাসো অথবা বেসেছিলে?
-এ প্রশ্ন হঠাৎ?
-কারণ তুমি যদি কাউকে ভাল না বাস তাহলে আমার ফিলিংস টা বুঝবে না তাই?
-কি বলতে চাও?
-আমি মনে করি তুমি আমার বন্ধুর মতো আমায় হেল্প করতে পারবে?
-যেমন?
-আমি যাকে ভালবাসি তার বাবা বড়াব্বু নাকি অনেক রাগি,আমার খুব ভয় করে সে যদি আমাকে ছেড়ে দেয়?আমি তো বাচবো না?
শিশিরের বুকে কথাটা ছেত করে লাগে,তার বিন্দুর কথা মনে আসতে চোখের কোণে জল জমে আসে,বিন্দু এখন কোথায়?তবে শিশির চোখ আড়াল করে বলে-এমন কথা কেন বলছো,দুজনের মত ঠিক থাকলে এক হবে!
-তারপর ও আমার ভয় করে,আমার বাবা যদি আমায় বিয়ে দিয়ে দেন ওর চাকরি করার আগে তখন সে লড়বে?নাকি ছেড়েদিবে?
-অবশ্যই তুমি অযোগ্য কাউকে ভালবাসো নি?
-না
-তাহলে চিন্তা নেই,এসব বাদ দিয়ে মন দিয়ে পড়ালেখা করো,তা পরিচয় কেমনে হয়েছিল?
-অইযে আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি তো সেভাবে দেখাদেখি,হাল্কা কথাবার্তা ভাল লাগা,শেষে..
শিশির শব্দ করে হাসতেই সীমা লজ্জা পায়.
-ঠিকাছে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিও,
-আচ্ছা ভাইয়া…
——-
-এ। অসম্ভব আম্মু,আমি বিন্দু কে বোনের নজরে দেখি, এ হয় না!
-কিন্তু তোর বড়াব্বু যেখানে এ কথা বলেছে সেখানে আমি কি বলতে পারি?
-আমি একজনকে ভালবাসি আম্মু,তার নাম সীমা,পাশের গ্রামে থাকে,ভাল মেয়ে সে?তাছাড়া আমি আমার ভালবাসার অমর্যাদা করতে পারিনা!
এসব বলে সাকিব রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে নদীর ধারে বসে!
সাকিবের মা কথাটা বিন্দুর মায়ের কাছে শেয়ার করে,বিন্দুর মায়ের ও একই কথা বিন্দু বিয়েতে রাজি হবেনা,এখন কি হবে?
বিন্দু সাকিবের কথা শুনে কেঁদে উঠে,শিশির যদি সাকিবের মতো হতো বিন্দুকে ছেড়ে না দিতো কি এমন হতো?
কিন্তু বিন্দু কাউকে বুঝতে দেয় না যে সে ভাল নেই,সে শিশিরকে ছাড়া ভাল নেই!তারপর বিন্দুরা তাদের বাসায় চলে যায়,পাশাপাশি বাড়ি হওয়ায় তারা মাঝেমাঝে সাকিবদের এখানে চলে আসে!
সাকিব নদীর পাড়ে গিয়ে সীমা কে কল দেয়,সীমা শিশিরের সামনে ই কল রিসিভ করে,
-কেমন আছো?
-আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
-ভাল
-খেয়েছো?
-নাহ!
-কেন?
-মন ভাল লাগছেনা!
-কারণ?
সাকিব কিছুক্ষণ ভেবে বলে ই ফেলল-আমার কাজিনের সাথে ই আমার আব্বু বিয়ে ঠিক করতে চায়,অই যে আমার একটা কাজিনের কথা তোমাকে বলেছিলাম?
সীমা কিছুটা রেগে চিৎকার করে বলে-হোয়াট?
-শান্ত হও আগে আমার ব্যাপার বুঝার চেষ্টা করো?
কিছুক্ষণ চুপ থেকে সীমা বলে-তুমি কি বলেছো?
-আমি আব্বুকে কিছু বলিনি তবে আম্মুকে বলেছি,আব্বুকে কিভাবে বলব,যদি কষ্ট পান!
-অহ কি আর করবে তাহলে বিয়ে করে ই নিবে আরকি!
এই বলে সীমা কল কেটে ওখান থেকে চলে যেতে নিলে শিশির হাত ধরে আবার বসায়-ভাই থাকতে তোমার এত ভেঙ্গে পরলে কেমন হবে?
সীমা একটা বন্ধু পেয়ে শিশির কে জড়িয়ে ধরলো-ভাইয়া আমি তাকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারিনা,এখন কি হবে?
-ধুর পাগলি,বিয়ে তো আর হয়ে যায়নি,আমি আশা রাখছি কোনো বাবা ই তার মেয়ে কে বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেনা!
-তো?
-সাকিব কে চাকরি খুঁজতে বলো,তারপর দেখা যাক আমি তো আছি নাকি?
শিশির মনে মনে বলে বিন্দু কে খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আমি চট্টগ্রাম থেকে নড়ছি না”
শিশিরের কথা কিছুক্ষণ ভেবে সীমা আবার কল ব্যাক করলো,সাকিব কল রিসিভ করে বলে-এভাবে রাগ দেখালে কি সমস্যার সমাধান হবে?
-সমাধান হয়ে গেছে,তুমি একটা চাকরি জোগাড় করো,তারপর আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দিবে?
সাকিব হেসে বলল-ওকে ম্যাডাম!
দিন ভালই যাচ্ছে সাকিব সীমার!ভার্সিটি যায়,একসাথে বসে গল্প করে!সাকিবের মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ!সে হন্ন হয়ে চাকরি খুঁজে কোথাও পায়না!এদিকে সীমার চিন্তার শেষ নেই!সে ব্যাপার টা শিশির কে জানাতে সে আশ্বাস দেয় তার অফিসে চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে!
শিশির ওদের ভার্সিটি গিয়ে সাকিবের সাথে মিট করে ভালই লাগে!সাকিব বলে তাদের বাসায় বেড়াতে যেতে শিশির ও সায় দেয়!
কিছুদিন পর সাকিবের জুড়াজুড়িতে শিশির সাকিবদের বাসায় যায়!সবাইকে পরিচয় দেয় এটা সাকিবের ফ্রেন্ড!সাকিবের মা বাবা,ও খুব খুশি!
সাকিবদের গ্রামে কিছুদূর পর মেলা বসে প্রতিবছর ই একই সময়ে মেলা বসে,এই মেলায় ছেলে মেয়ে সবাই যায়!যদিও ছেলেরা কিছু কিনেনা শুধুমাত্র মেয়ে দেখতে যায় আরকি!কেউকেউ কিনে আবার কেউ কেউ কিনে না এমন!কিন্তু মেয়েদের প্রথম পছন্দ মেলায় যাওয়া,তাই মেয়েরা বেশ ভীড় করে!
সাকিব শিশির কে জোর করে মেলায় যাওয়ার জন্য!শিশির ও রাজি হয় গ্রামের মেলা সে কখনো দেখেনি,এদিকে সাকিব বিন্দুদের বাড়ি গিয়ে বিন্দুকে বলে রেডি হতে কিন্তু বিন্দু যেতে নারাজ এসব কিছু ওর ভাল লাগেনা!
সাকিব অগত্যা রাগ দেখালে বিন্দুর মা বলে ঘরে বসে বসে মন একদম চাদে চলে যাচ্ছে,যা বোরকা নেকাব করে যা!কেউ তোকে দেখবেনা,কাউকে তোর থেকে দেখতে ও হবে না!
বিন্দুকে ওর মা জোর করে মেলায় পাঠায়,উনি জানেন সবসময় বিন্দুর মন খারাপ থাকে,ক্ষণে ক্ষণে অতীতের স্মৃতি ভেসে উঠে,এমন হলে তো মেয়েটা পাগল ই হয়ে যাবে!
বিন্দু বোরকা নেকাব করে বের হয়,সাকিব বিন্দু কে নিয়ে শিশির কে আনতে যায়,বিন্দু নিচের দিকে চেয়ে হাটছে আর কিছুদূর শিশির আর সাকিব হাটছে,বিন্দু কে সাকিব আগেই বলেছে তার এক ফ্রেন্ড ও তার সাথে যাবে,বিন্দু ফ্রেন্ড এর কথা শুনাতে আগে ই হাটছিল,আকাশের মতো হয়ত আবার অন্য ফ্রেন্ডের পাল্লায় পরবে যে ঝামেলা তার পছন্দ নয়,সে চাই ও না তাকে কেউ পছন্দ করুক!
শিশির জিজ্ঞেস করে-তোমার বোন কি এরকম বোরকা পরে ই থাকে?
-নাহ মেলায় যাচ্ছে তাই!
-আচ্ছা,তা এভাবে আগে আগে হাটছে কেন?
-তোমার জন্য?
-মানে?
-আসলে ও এমন ই ছেলেদের একদম সহ্য করেনা,জানিনা কেন এমন করে?
-কখনো জিজ্ঞেস করোনি?
-জিজ্ঞেস করে দেখতে হবে?
এই বলে সাকিব মুচকি হাসে,মেলায় ডুকে শিশির একদিকে যায়,সাকিব আর বিন্দু একদিকে যায়,সাকিব সীমার জন্য চুড়ি পছন্দ করতে নিলে বিন্দু মনে করে তার জন্য,তখন সাকিব বলে-শুধু তোর জন্য না আরো একজন আছে আমার জিবনে!
বিন্দু অপ্রস্তুত হয়ে পরে,কান্না আসতে থাকে,কিন্তু বিন্দু বুঝতে দেয় না,সাকিব পছন্দ করে কিছু চুড়ি বিন্দুকে কিনে দেয় কিছু সীমার জন্য নেয়!
শিশির এদিক সেদিক দেখছে,চারদিকে মেয়ে,ইশ এরকম মেলায় যদি বিজ্ঞাপন দেয়া যেত “বিন্দু নামের যত মেয়ে চট্টগ্রামের এ মেলায় এসেছেন সবাই সামনে আসুন তাহলে খুঁজে পাওয়া যেত,অগত্যা পাগলামির কথা ভেবে সে নিজেও হাসে!
“বিশ্বাসে মিলে বস্তু”একথা বিশ্বাস করে শিশির বিন্দুর মত কাউকে দেখে কিনা খুঁজে,একটা চুড়ি আর কানের দুলের দোকানে ডুকে পছন্দ মতো কিছু কিনে,এদিকে সাকিব শিশিরের কাছে এসে বলে-আপনি মশাই কার জন্য কিনেছেন শুনি?
শিশিরের টাটকা জবাব-আমার বউয়ের জন্য?
সাকিব অবাক হয়ে বলে-তুমি বিবাহিত?
শিশির শব্দ করে হাসতেই,সাকিব বুঝে নেয় ভালবাসার মানুষ আছে,সে বেস্ট অব লাক বলে দুজনেই বিন্দুর পিছনে আসে,বিন্দু ঘুরে ফিরতেই শিশির কে দেখে নিঃশ্বাস আটকে যাওয়ার মতো করছে,
সাকিব এটা দেখে বলে-তুই ঠিক আছিস অসুস্থ লাগছে?
বিন্দু রেগে বলে-আমি এক্ষুনি বাড়ি যাব?
সে একপ্রকারসামনে থেকে চলে যেতে নিলেই সাকিব ডাক দেয়-বিন্দু দাড়া!
শিশিরের মাথায় আঘাত পরেছে এমন লাগছে,কে বিন্দু কোন বিন্দু,এই তার বিন্দু নয়তো,চোখ দুটো এত আপন কেন?যদিও একই চোখ অনেকের হয়ে থাকে,তার পর ও এত অস্বস্তি কিসের?আর মেয়েটা এভাবে রেগে গেলো কেন?এসব ভেবে সাকিবের আগে শিশির দৌড়ে যায়,আর বিন্দুর সামনে দাঁড়ায়,শিশির একপলক চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝে এ আর কেউ নয় তার ই বিন্দু অথচ এত কাছে থেকে ও চিনতে পারেনি,শিশির খপ করে হাত টা ধরে ফেলে,আর যাওয়া হচ্ছে না কোথাও…..
চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)
#তাহরীমা