আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব-০২

0
3661

~আমি শুধু চেয়েছি তোমায়(০২)

“শিশির মাটিতে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে,তার বিশ্বাস ই হচ্ছেনা যে বিন্দু হারিয়ে গেছে,শিশিরের মা ছেলের কাধে হাত রেখে বলে-চল বাসায় যাই?
-বিন্দু আমাকে বিশ্বাস করতে পারলো না?এতবছর ওর সাথে ছিলাম আমাকে চিনলো না ও?
-চল বাসায় গিয়ে এসব বলিস?
-ও কেন হারিয়ে গেলো?আমি তো শুধু সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য এমন টা বলেছি,তাই বলে সে বিশ্বাস করে নিবে?

শিশিরের মা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বলে-ও তোকে বিশ্বাস করেছিল বলে তোর অভিনয় ধরতে পারেনি,ওর ধারণা তুই মিথ্যা বলতে পারিস না,কিন্তু ওর ভুল ছিল হুট করে তো আর মানুষ বদলে যায় না,তাছাড়া যে তাকে ছাড়া বাচার কথা ভাবেনা সে অন্যকে কেন বিয়ে করবে?
-আমি বিন্দুকে চাই আম্মু?তাকে এনে দাও?
-পাগলামি করিস না আগে বাসায় চল,মানুষ আমাদের কিভাবে চেয়ে আছে দেখ?

শিশির চোখের কোণায় জমে থাকা জল মুছে উঠে দাঁড়াল!বাসায় গিয়ে সমস্ত গিফট যত্নে আলমারি তে রেখে দিলো,যেভাবে হোক বিন্দুকে সে খুঁজবে,
শিশির ফোনের গ্যালারি তে বিন্দুর ছবি গুলো একটার পর একটা দেখছে আর বলছে-তোমার হৃদয় কে প্রশ্ন করো কেন আমায় ভালবেসেছিলে?

শিশিরের মা এসে বলল-আসবো?
-আসো আম্মু!
-আমার কাছে বিন্দুর মায়ের নাম্বার ছিল যে ওটা তো খুঁজে পাচ্ছি না?
-আমি চট্টগ্রামে যাব?
-এত দূরে যাবি?নাহ আমি তোকে ছাড়া থাকতে,পারব না,এতদূর দিয়ে আমি শান্তি পাব না!
-কিন্তু আমি বিন্দু ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারছি না আম্মু

এ বলে শিশির মা কে জড়িয়ে ধরে থাকে,শিশিরের মা আশ্বাস দেয় যে বিন্দুকে ঠিকি একদিন খুঁজে পাবে,ভালবাসা প্রবিত্র হয়ে থাকলে একদিন এক হবেই…!
– হু
-আচ্ছা চল তোর দাদুর বাড়িতে কয়েকদিন ঘুরে আসি,ওরা এমনিতে সব সময় আমাদের যেতে বলে,তোর সময় হয়না বলে যাওয়া হয়না,অফিস থেকে কয়েকদিন এর ছুটি নে!
-সত্যি?আচ্ছা আম্মু আমি কি বিন্দু কে খুঁজে পাবো?ও কি আমাকে মনে রাখবে?
-আমার বিশ্বাস আমার ছেলে জিতবে!
……
বিন্দুর সারারাত ঘুম এলো না,ফজরের নামায পড়ে একটু শুতেই চোখ লেগে এলো,বিন্দু ঘুমাচ্ছে তাই তার মা আর বিরক্ত না করে ব্রেকফাস্ট রেডি করছিল,হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেলো,ফোন চেক করতে গেলো শিশির প্রতিদিন গুড মর্নিং জানায়,
কিন্তু ফোনে আজ কোনো মেসেজ নেই কেন?শিশির কি ব্যস্ত?
এসব ভাবতে ভাবতে মনে পরলো কাল ঘটে যাওয়া সব,মুহুর্তে বিন্দু কেঁদে উঠলো,কিভাবে শিশিরকে ভুলবে?যার স্থান মনজুড়ে তাকে ভুলা সম্ভব!না বিন্দু কখনো শিশির কে ভুলবে না!

চোখের জল মুছে বিন্দু ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে গেলো,
-শোন কিছু খেয়ে নে,আর তোর চাচাতো ভাই সাকিবের সাথে গ্রাম ঘুরতে যা?ভাল লাগবে!
-আমার কারো সাথে যাওয়ার ইচ্ছে নেই,
-তুই এখনো কিন্তু তুর চাচা চাচিদের কে সালাম করিসনি যা খেয়ে তাদের সাথে কথা বলে আয়!

বিন্দুর বাবা আর চাচা অনেক রাগিমানুষ,কিন্তু মন টা সরল,তারা মানুষ কে সম্মান দিয়ে চলে,তবে বিন্দু আর তার কাজিন রা মায়েদের যেমন বন্ধু ভাবে তেমনি বাবাদের ভীষণ ভয় পায়!

না চাওয়া সত্ত্বেও বিন্দু একটু খেয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পরে চাচিদের বাড়ি,পাশাপাশি বাড়ি তবে গ্রামে আবহাওয়া প্রকৃতি সব বিন্দুর ভাল ই লাগছে,চাচার বাসায় গিয়ে বিন্দু চাচা চাচিকে সালাম দেয়,তারা সকালেই বিন্দুকে দেখতে এসেছিল কিন্তু সে ঘুম ছিল বলে আর ডাকে নি,বিন্দুরা যখন ঢাকায় থাকত তখনি এরা মাঝেমাঝে বেড়াতে যেত!চাচি বলে-আসো মামনি কিছু নাস্তা করবে?
-না চাচিয়াম্মু আমি খেয়ে এসেছি?
-না তা বললে শুনবো না,আসো?

এত জোর করছে না খেয়ে কি উপায়,এখন শীতকাল,গ্রাম জুড়ে শীতের আবহাওয়া,বিন্দুদের বাড়ি হচ্ছে নদীর কাছাকাছি একটু হাটলেই বিশাল নদী চোখে পড়ে,মন খারাপ হলে নদীর ধারে বসলে মন খারাপ থাকার জো নেই,তেমনি একটা পরিবেশ!
-খেয়ে তুমি সাকিবের সাথে ঘুরতে যাও,ভাল লাগবে আশা করছি!
-সাবিক ভাইয়া কোথায়?

এই যে আমিইইই!

রুম থেকে সাকিব বের হয়ে অবাক হয়ে গেলো,ছোটবেলায় একবার বিন্দু কে দেখেছিল,
-এই বিন্দু নাকি?

সাকিবের আম্মু বলে উঠে-হ্যা!
-কি এত বড় হয়ে গেছে যে?

বিন্দু ভ্রু কুচকে তাকালো!
-তো ছোট থাকতাম?
-ভালই হতো তোকে কোলে নিয়ে বসে থাকতাম!

বিন্দু এবার রাগিচোখে তাকাতেই সাকিব,
-ওরে বাবারে খেয়ে ফেলবে মোরে!বাচাও বাচাও,
-চাচিয়াম্মু আমি যাচ্ছি,

এই বলে উঠতে নিলে,সাকিব হাত ধরে বলে-চল তোকে নিয়ে গ্রাম ঘুরে আসি?

চাচির জোর করাতে বিন্দু অগত্যা রাজি হলো,উড়না দিয়ে স্কার্ফ করে বের হলো গ্রামের পথে,পথগুলা এখন মাটির কিছু কিছু জায়গায়,তবে হাটতে অসুবিধা হচ্ছে না,সাকিব বলে উঠে-
-এভাবে হাটলে পথ ই পুরাবে না,তুই যে পিঁপড়ার মতো হাটছিস?

বিন্দু থেমে গিয়ে বলে-যাব না তোমার সাথে!
-আচ্ছা তুই এমন রাগিভাব নিয়ে বসে থাকিস কেন একটু তো হাসতে পারিস!

এটা বলতেই বিন্দুর মন বিষণ্ণতায় চেয়ে যায়,খুব করে শিশিরের কথা মনে পড়ে,চোখ ছলছল হয়ে আসে,
-আরে আরে তুই কাঁদছিস কেন?আচ্ছা সরি কাঁদিস না,চল নদীর পাড়ে বসি?

বিন্দু সাকিবের পিছুপিছু গিয়ে নদীরে পাড়ে বসে পড়লো,
-এবার বল ঢাকা কেমন,আর গ্রাম কেমন?
-জানিনা!

সাকিব মুখ অন্যদিকে ঘুরে কি যেন ভাবলো,
-আচ্ছা তোর কি আমাকে ভাল লাগছেনা,না লাগলে বল আমি আর কথা বলব না তোর সাথে?তারপর ও এভাবে মুখ অফ করে বসে থাকিস না,মেয়েদের কথায় মানায় চুপে নয়!

সাকিবের কথাগুলা একটু একটু শিশিরের মতো!শিশিরের জন্য যেমন বিন্দু মন খারাপ করে থাকতে পারতো না তেমন!

-আচ্ছা তুই কি নৌকায় চড়বি?

বিন্দুর মন খুশি হয়ে যায়,কত শখ নৌকা চড়ার,সে মাথায় নাড়িয়ে সায় দেয়,সাকিব একটা নৌকা কে ডাক দেয়,আর শক্ত করে বিন্দুর হাত ধরে রাখে যাতে সে পরে না যায়!

বিন্দু ও সাকিব কে ধরে রাখে,ওর ও প্রথম প্রথম ভয় লাগছে বিশাল নদী সাতার ও জানেনা যদি টুক করে পরে যায় সে ভেবে!

আরে যেভাবে ধরে রয়েছিস বাচ্চাদের মতো!ভয় করছে নাকি?
-হু!
-এতবড় মেয়ে তুই এত ভীতু কেন?
-জানিনা!
সাকিব একটু দুষ্টুমি করে বলল
-তোকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে ও দিতে পারি?

বিন্দু ভয়ে কেঁদে ফেললো
-আরে কাঁদিস কেন আমি আছি না,আমি থাকতে তোর কিসের ভয়,আগলে রাখবো তোকে!

বিন্দু হাত শক্ত ধরে সাকিবের দিকে তাকিয়ে আছে…..
-আমার দিকে না তাকিয়ে আশেপাশে তাকা?

তারপর বিন্দুর আস্তে আস্তে ভয় কেটে যেতে লাগলো,একটু একটু পানি ছুঁয়ে দেখলো,
-আচ্ছা ভাইয়া এখানে কি গোসাপ আছে?
-গোসাপ কেন,সব পাবি যেটা চাস আরকি?
-চাইতে যাব কেন এমনি বলছি এরি!

সাকিব মুচকি হেসে বিন্দুর দিকে তাকালো,

তারপর তারা আবার উঠে আসলো পাড়ে,
-চল তোকে খেজুরের গাছের রস খাওয়াবো!
-রস!
-কখনো খাস নি?
-না!

সাকিব একটা দোকানের সামনে গিয়ে কি যেন বলল,ওখানে ভাপা পিঠা ও কেনা পাওয়া যায়,সাকিব যত্ন করে একটা প্লেটে বিন্দুর জন্য নিয়ে আসে,তারা একটা বেঞ্চে বসে,তারপর বিন্দুকে খেতে বলে!

বিন্দু তাকিয়ে থাকে,
-কি খাবি নাকি খাইয়ে দিতে হয় বাচ্চাদের মতো?
-জানো ভাইয়া যদি শিশির থাকতো আমাকে এতক্ষন এ এগুলা ধরে মজার মজার গল্প বলে খাইয়ে দিতো!

-কি বললি?

বিন্দু বিড়বিড় করে বলায় সাকিব তেমন শুনতে পায়নি,তবে খাইয়ে দেয়ার ব্যপার টা বুঝেছে!তাই সে বিন্দুর মুখে এক টুকরো পিটা ধরলো,বিন্দু ছলছল চোখে তাকিয়ে মুখে নিয়ে নিলো,,

সাকিব হাসলো
-বাচ্চা কোথাকার,গায়ে বড় হয়েছে স্বভাবে না!

কিছুক্ষণ পর গ্রামের আরেকটা ছেলে আসলো,যদিও সে সাকিবের ফ্রেন্ড,তবে বখাটেদের দলে হওয়ায় সাকিব তেমন পছন্দ করেনা!

সাকিব খেয়াল করলো আকাশ এদিকে আসছে!তাই সে বিন্দুকে নিয়ে উঠতে নিলে ই আকাশ বলে উঠে,
-কিরে সাকিব যে!কে এই মেয়ে গার্লফ্রেন্ড নাকি!বাবারে আমি কিছুই জানিনা এত সুন্দর গার্লফ্রেন্ড আছে তোর!

বিন্দু রেগে বলে-ও আমার ভাই!যেটা জানেন না সেটা বলা উচিৎ ও না!
-বাহ সুন্দরী তোমার তো রাগ দেখছি হেব্বি!তবে আমি হচ্ছি সাকিবের বন্ধু আমাকে আবার ভাই ভাববে না,অন্যকিছু ও ভাবতে পারো যদি ও প্রথম দেখায় আমি ফিদা…….

আকাশের শেষের কথায় সাকিব রেগে লাল হয়ে গেলো,কিন্তু সিনক্রিয়েট করতে চায়না বলে,বিন্দুর হাত ধরে ওখান থেকে চলে আসলো!

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

#তাহরীমা

(গঠনমূলক মন্তব্যের আশা করছি)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে