আমি শুধু চেয়েছি তোমায় পর্ব-০১

0
6256

~আমি শুধু চেয়েছি তোমায়(০১)
#তাহরীমা

“ভালবাসার মানুষ টার মুখে বিয়ে করবে এটা শুনে মনে হলো পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো,আমার জিবনে এমন টা কেন হলো?আমি তো খুত রাখিনি কোনো?আমি কিছুই ভাবতে পারছিনা!মানুষ টা এখনো আমার উত্তরের আশায় বসে রয়েছে,কি বলবো আমি!
-বিন্দু!

আমি আবারো তার চোখের দিকে তাকালাম,মজা করছে হয়তো
-মজা করছো শিশির?আজ এত বছরের রিলেশন!সময় টা আট বছরের কিন্তু,খুব কম সময় নয়!
-সে তো আমি জানি!কিন্তু আমি বিয়ে করবোই,
-কেন?আমাদের তো পরিবারের বাধা নেই?কাকে বিয়ে করবে?

শিশির চুপ!

আজকে কি চুপ থাকার বিষয়?ভালবাসার মর্যাদা দিতে না পারলে কেন আমাকে স্বপ্ন দেখালো?এত প্রশ্ন মনে আসার পর ও তাকে কিছুই বলতে পারলাম না,চোখ থেকে টপটপ পানি পরছে,শিশির বদলে গেছে!
যে মানুষ আমাকে এই আট বছর ভালবেসে একফোটা কাদতে দেয়নি যদিও কেঁদেছি কিন্তু সেটা খুশির সময়,সে শিশির আজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে!

-আচ্ছা তুমি তাহলে বিচ্ছেদে খুশি থাকবে এইতো!আমি তোমার জিবন থেকে চলে যাই এইতো?

বিন্দু যেন ঘোরে আছে,আসলে শিশির কখনো এমনভাবে কথা বলেনি,বিন্দু আবেগী বেশি তাই সে বাস্তববাদী কিছুই মেনে নিতে পারছে না!তার ভিতরে ভালবাসার চেয়ে জেদ টা এখন বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে!

শিশির একটু থেমে বলল-
-আমার মা বাবার খুশি মানে আমি খুশি! যেমন টা তুমি তোমার মা বাবাকে ভালবাস,আমি ও ভাসি!
-তো?
-তারা যাকে পছন্দ করবে তাকেই আমি বিয়ে করবো,বিয়েতে তোমাকে ও থাকতে হবে কিন্তু!পারলে আজকের জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও?
-ক্ষমা!হি হি
বিন্দু একটু হেসে বললো-ক্ষমা করব কিনা জানিনা তবে দ্বিতীয়বার কাউকে বিশ্বাস করবো না!

এতদিন জানতাম শিশিরের পছন্দ তার মা বাবার পছন্দ আর আজ দুদিনে সেটা বদলে অন্য কথা বলছে?হায়রে জিবন?বিশ্বাস করে কি তবে ঠকেছি?যে বদলে যেতে চায় অথবা যায় তাকে আর ফিরিয়ে আনা যে সম্ভব না!
আমি শিশিরকে অনেক কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার সুখেই আমার সুখ ভেবে ভাল থেকো বলে চলে আসলাম। আর ফিরে তাকায়নি তার মিথ্যা অভিনয় করা মুখের দিকে!

আমি বিন্দু!মা বাবার একমাত্র সন্তান!আজ আমরা বদলি হয়ে চট্টগ্রাম চলে যাচ্ছি,আমরা ঢাকা তে থাকি,আজ চলে যাবো সে ঠিকানা শিশিরকে বলতে ই এসেছিলাম কিন্তু আর বলার প্রয়োজন মনে হয়নি,কারণ সে আমাকে চায়না,সে বিয়ে করবে!এত সহজ ভুলে যাওয়া?

শিশিরদের বাড়ি ও চট্টগ্রাম এ,যদিও আমরা ছোট বেলা থেকে এখানেই থাকি!একই ভার্সিটি তে পড়াতে ই পরিচয় হয়েছিল আমি তখন অনার্স ১ম বর্ষে,শিশির তখন লাস্ট ইয়ারে ছিল!

.
বাসায় এসে বিন্দু একপ্রকার জোরে কলিংবেল চাপ দিতেই তার মা দরজা খুলে দিলো।সে মা কে জড়িয়ে ধরে,বিন্দুর মা আর শিশিরের মা দুজনের মা ই তাদের সম্পর্কের কথা জানতো,কিন্তু কি ভেবে শিশির অন্যকাউকে বিয়ে করবে বুঝা আসলো না?মেয়ের থেকে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করতেই বিন্দু সব খুলে বলে-
-শিশির এমন ছেলে না!আর তাছাড়া সে কাকে বিয়ে করবে সেটা ও বলেনি!আমি এক্ষুনি শিশির কে কল দিচ্ছি!

বিন্দু মায়ের হাত ধরে বলল-আমি ওর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো,তুমি ওকে এসব বলা মানে আমাকে ছোট করা,সম্পর্কের দাম যদি থাকতো সে মা বাবার পছন্দে বিয়ে করবে বলতো না?আমার আত্মসম্মানবোধ আছে আমি ভালবাসি তাই বলে এই নয় জোর করে সম্পর্ক ঠিকিয়ে রাখতে হবে!আমি কাঁদছি যে পর্যন্ত সে ফিরে তাকায়নি,বাকি দশজনের মত সে ও বদলে গেছে,আজকাল মানুষ বদলে যায় আম্মু,কারণে অকারণে বদলায়!
-কিন্তু তুই ভুল করছিস,আমাদের তো যাচাই করা উচিৎ শিশির এমন টা কেন করবে?তোর ভুল হচ্ছে আর ভুল কিছু করা মানে তোর ই কষ্ট ভেবে দেখ?

বিন্দু কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না!সে সীম টা নষ্ট করে ফেললো,ফেইসবুক ডিলিট করে এক কোণায় গিয়ে বসে কাঁদছিল,আর ভুল কি ছিল তার সম্পর্কে সেটা ভাবতে বসলো!রাগের বশে সে পণ করে বসলো সে শিশিরকে আর বিরক্ত করবে না অনেক দূরে চলে যাবে!শিশিরের সাথে অন্যকাউকে সে সহ্য করতে পারবে না!চলে যাচ্ছে ভালই হচ্ছে!তবুও চাওয়া শিশির ভালো থাকুক!

এদিকে শিশিরের কষ্টে বুক ফেটে যাচ্ছে,আজ বিন্দু কেঁদেছে তাও কিছুই বলতে পারেনি,বিন্দু একবারো প্রশ্ন করেনি,অভিযোগ রাখেনি,কেন?বিন্দু তো তাকে মারতে পারতো!মেয়েটা ভালবাসার মানে ই বুঝেনা!নাকি এমন পরিস্থিতি তে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান ভুলে যায়?

আজকাল অহরহ ভালবাসা এভাবে পরিবারের দোহায় দিয়ে ভেঙ্গে যায়,তাই বলে বিন্দু সেটা বিশ্বাস করে নিবে?বিন্দু কে অনেক চালাক ভাবতাম সে আসলেই বোকা!

এসব ভাবতে ভাবতে শিশির বাসায় গিয়ে মা কে জড়িয়ে ধরলো,
– কি আমার বউমা কে সারপ্রাইজ দেয়া হয়েছে?
-অভিনয় করেছিলাম ধরতে পারেনি!
-কিন্তু আমার ভয় করছে বিন্দু যদি তোকে ভুল বুঝে উল্টাপাল্টা কিছু করে?
-আমি বিন্দুকে চিনি আম্মু,ও এমন কিছুই করবে না!
-আচ্ছা তাহলে কাল ওদের বাসায় যাচ্ছি?
-ফাইনাল!ওর পছন্দের সব নিয়ে যাবো!একের পর এক সারপ্রাইজ পেয়ে একদম খুশি হয়ে যাবে,যেটুকু কেঁদেছে সব ফিরিয়ে দিবো এত্ত এত্ত সরি বলবো!আমি না হয় সারপ্রাইজ টা এমনি দিলাম?
-পাগল ছেলে!


বিন্দু কিছুই ভাবতে পারছে না,একমনে মনে হচ্ছে শিশির মজা করেছে আবার মনে হচ্ছে না এমন অহরহ মানুষ দুনিয়াতে আছে যারা বদলে যায়!মানুষ চেনা যে খুব কঠিন!পরিবারের মানুষের মত থেকেও অনেক সম্পর্ক হারিয়ে যেতে দেখেছে বিন্দু!না অন্তত সম্মান টা তার টিকে থাকুক শিশির বিয়ে করে সুখী হোক অনেক দূরে চলে যাবো!

বিকেলের দিকে বিন্দুরা চট্টগ্রামে যাওয়ার জন্য রওনা হলো!বুকের ভিতর অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ার পর ও সে গাড়ির বাইরে চোখ রেখে তাকিয়ে রয়েছে!চোখে নেই কোনো জল!তবে খুব অভিমান জমে সে পাড়ি দিচ্ছে তার শহর!

শিশির বিন্দুকে কল করতেই নাম্বার বন্ধ,শিশির মুচকি হাসলো,ভেবেছে বিন্দু অভিমান রাগ করে এমন টা করেছে?রাতে আর ঘুম হলোনা তার!ফোনে ওয়েলপেপারে বিন্দুর ছবির দিকে চেয়ে থাকলো!
……….

সকাল থেকে শিশির মা কে তাড়া দিচ্ছে রান্না হয়েছে কিনা?শিশিরের আবার অফিস আছে ফিরে এসে অফিসে যেতে হবে,

বিন্দুর জন্য শাড়ি চুড়ি সব কিনে নিয়ে আসলো,এ কয়েকবছরে তেমন গিফট করা হয়নি,কি বা গিফট করবে মেয়েটা খালি না না স্বভাবের,কিছু দিতে চাইলে না জমা থাকুক বিয়ের পর নিবে?আজকাল এমন মেয়ে পাওয়া যায়!ভাগ্য করে পেয়েছি বটে,জিনিস গুলো ছুঁয়ে শিশির হাসছে,সামনে তাদের ভালবাসা পূর্ণতা পাবে এ ভেবে!

মনে মনে শিশির ভেবে নেয় বিন্দু তাকে দেখলে কেমন ভাব নিবে,বেশি রাগ,নাকি খুশি নাকি পাগলামি করবে?নাকি মারবে?ইশ কালকে মেয়েটা বেশ আঘাত পেয়েছে খুব তাড়াতাড়ি ওর কষ্ট দূর করতে হবে!

এই ভেবে শিশির আর তার মা বের হয়!পথে শিশির অনেক খুশি ছিলো!শিশিরের মা ও খুব খুশি,ছেলের পছন্দ মানে তার পছন্দ,তাছাড়া বিন্দুকে অনেকবার দেখেছে,মেয়েটা ভালো ই!

বাসার সামনে এসে শিশির দাঁড়িয়ে পরলো,কাউকে তেমন দেখা যাচ্ছে না কেমন নিরব নিরব ভুতুড়ে বাড়ির মতো!

দরজার সামনে গিয়ে এক ঝাটকি খেলো,দরজায় একটা বড় তালা ঝুলছে!শিশিরের মুখ টা নিমিষে কালো মেঘে ছেয়ে গেলো!তবে কি বিন্দু চলে গেছে তাকে ভুল বুঝে?বিন্দু কি একবার ও যাচাই করতে পারতো না যে মানুষ তাকে এত ভালবাসে সে কাকে বিয়ে করতে চাই?

শিশিরের মা শিশিরকে বলল-আশেপাশে কারো থেকে জেনে নিতে!

শিশির আশেপাশে লোক খুজলো,কিন্তু কাউকে চোখে পরলো না,কিছুক্ষণ পর এক লোক দেখতে পেলে শিশির জিজ্ঞেস করে?
-এখানে বিন্দু নামের কেউ থাকতো তারা কোথায় গেছে জানেন?
-তারা চলে গেছে কাল!
-কিন্তু কোথায়?
-চট্টগ্রামে!

শিশির জানে বিন্দুদের বাড়ি চট্টগ্রাম কিন্তু কোথায় সেটা তো জানার প্রয়োজন মনে করেনি কখনো,আজ নিজের গালে নিজেই থাপ্পড় দিতে মন চাইছে,কেন জেনে নিলো না?

-আচ্ছা চট্টগ্রামের কোথায় গেছে সেটা বলতে পারবেন?
-না তো!

শিশির এখন কোথায় খুঁজবে বিন্দুকে,না পাচ্ছে কলে না পাচ্ছে ফেইসবুক এ!শিশির জানে একমাত্র সব কথা বিন্দু শিশির কে ই শেয়ার করতো ওর ফ্রেন্ড রা সবাই ঢাকার,তাহলে কে তার বাসার সন্ধান দিবে?

শিশির ধপ করে মাটিতে বসে পরে,বিন্দুকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে সে নিজেই সারাজিবনের মতো সারপ্রাইজড হয়ে গেলো…

চলবে…
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখা উচিৎ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে