#আমি_শুধুই_তোমার?
#পর্বঃ০৩
#Arshi_Ayat
ইনান ফোন রেখেই আদ্রি আর আয়াশ কে বলল
“দোস্ত ইনশু হসপিটালে।”
আদ্রি চিন্তিত মুখে বলল
“তাড়াতাড়ি চল।”
তারপর আয়াশ আর ইনান একসাথে বসে আর আদ্রি পিছনের সিটে বসে।ইনানের হাত পা কাপছে তাই আয়াশ গাড়ি ড্রাইভ করছে।ইনান উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল
“বারবার বলছিলাম উল্টা পাল্টা কিছু করতে না। অনেক বুঝাইছি তারপর এটা করলো।আজকে যাই কষে দুইটা থাপ্পড় দিবো।সাহস কতো বড়ো স্লিপিং পিল খায়।”
“কয়টা খাইছে রে?” (আয়াশ)
“এটা জানি না।আন্টিতো বলল অনেকগুলো ই।”(ইনান)
আদ্রি ইনানকে উদ্দেশ্য করে বলল
” থাক চিন্তা করিস না।কিচ্ছু হবে না ওর।”
ইনান মাথা নাড়িয়ে বলল
“আয়াশ ভাই তাড়াতাড়ি ড্রাইভ কর।”
ওরা একঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলো।হসপিটালে ঢুকেই ইনান রিসেপশনের দিকে দৌড় দিলো পিছনে আয়াশ আর আদ্রি ও আছে।তারপর লিফটে তিনতলায় গেলো কারণ তিনতলায় ইনশিরা ভর্তি আছে।তারপর ওরা কেবিনের সামনে আসতেই ইনশিরার মা কান্না করতে করতে বলল
“দেখো না ও কি করছে।কেনো এমন করলো ও?ওর বাবা ও বাসায় নাই।মেয়েটা দিনদিন উগ্র হয়ে যাচ্ছে।ইনান তুমি ওকে বাসায় দিয়ে যাওয়ার পর আমার সাথে ছোট একটা বিষয় নিয়ে রাগারাগি করে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে। অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করছি খোলে নাই।তারপর দরজার ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খোলার পর দেখি এই অবস্থা। এই মেয়ে নিয়ে আমি কই যাবো।সামান্য কারণে যদি এমন করে বড় কিছু হলে কি করবে!!
আলেয়া বেগমের কথা শুনে ওরা হাফ ছেড়ে বাচলো যে সে এখনো কিছু যানে না। তাই ইনান আলেয়া বেগমকে শান্তনা দিয়ে আসল কাহিনি চেপে গিয়ে বলল
” আচ্ছা আন্টি আপনি কান্না কইরেন না।ওরে আমরা বুঝাবো।এখন কেমন আছে ও?”
“ডাক্তার ওয়াশ করছে।আমি গিয়ে দেখে এসেছি ঘুমাচ্ছে। তোমার যাও দেখে আসো।আমি ডাক্তারের চেম্বারে যাচ্ছি। ”
“আচ্ছা আন্টি। ”
এটা বলেই ওরা ইনশিরার কাছে চলে গেলো।তারপর ইনান ইনশিরার কাছে বসতেই ও চোখ খুললো।আর ইনান রাগী ফেস নিয়ে বলল
“এইজন্যই বাড়িতে যেতে চাইছিলি তাই না?আমি প্রথমেই সন্দেহ করছিলাম।কেনো এমন করলি তুই।কতো করে তোকে বোঝাইছি যে উল্টাপাল্টা কিছু করিস না।আরে তুই তো বেচে গেছিস এমন অনেকেই আছে যারা এটার শিকার হয়েও নিজেকে সামলে নেয়।তাহলে তুই কেনো পারবি না যেখানে তোর সাথে খারাপ কিছু হওয়ার আগেই আল্লাহ তোকে বাচাইছে। একবারও ভাবলি না তোর বাবা মায়ের কথা?ভাবলি না আমাদের কথা?আমাদের চারজনের শক্ত ফ্রেন্ডশিপের কথা।চারজন মিলে কতো দুষ্টামি করছি।কতো মজা করছি সব ভুলে গেলি ওই নোংরা তিয়াসের জন্য?তোর কাছে ও ই বড়ো হয়ে গেলো?যে ওর জন্য তুই নিজের জীবন দিতে যাচ্ছিলি।তোর কাছে আমি এটা আশা করি নি রে।তুই যদি এখন অসুস্থ না হতি তাহলে তোকে কষে দুইটা থাপ্পড় দিতাম।কিন্তু এ অবস্থায় দেখে দিলাম না।”
তারপর আদ্রি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
“আর কখনোই এমন করিস না।এটা করলে তুই জীবনের কাছে হেরে যাবি।আর যার জন্য করবি তার কিছুই আসবেও না যাবেও না তার চেয়ে ভালো যে মানুষগুলো তোকে ঘিরে আছে তাদের সাথে ভালোবাসা বিনিময় করে বেচে থাক। দেখবি জীবনে তুই অনেক সুখী হবি।তখন আর মরতে ইচ্ছে হবে না।”
আয়াশ উদাস ভঙ্গিতে বলল
“আমি এতো মোটিভেশনাল কথা কইতে পারি না তাই কিছু কইলাম না কিন্তু এরপর যদি এমন কিছু শুনছি তাইলে তুই মরা লাগবো না আমি তোরে ক্যাকটাস গাছের সাথে বেধে গায়ে লাল পিপড়া ছাইড়া দিমু।মনে রাখিস।”
ইনশিরা হাসিমুখে বলল
“না আর এমন করবো না।ভালো ভাবে বাচবো।আর তোরা তো আছিস ই আমাকে দেখে রাখার জন্য।”
ইনশিরার কথা শুনে তিনজনই তৃপ্তি নিয়ে হাসলো।আয়াশ মজা করে বলল
“তোর জন্য পাতলা খিচুড়ি নিয়ে আসি দাড়া।”
ইনশিরা জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বলল
“না না না না প্লিজ আনিস না।”
“না আমি শুনছি অসুস্থ হলে নাকি পাতলা খাবার খেতে হয়।”
আদ্রি মুখে হাত দিয়ে বমি করার ভঙ্গি করে বলল
“আয়াশের বাচ্চা চুপ কর।চুপ না করলে তোরে ড্রেনে চুবামু।”
ইনান হেসে বলল
“ড্রেনে চুবাইতে হলে কিন্তু তোরেও ড্রেনে নামতে হইবো।সো বুঝে শুনে কাজ করিস।”
ইনশিরা বিরক্তির স্বরে বলল
“একজন অসুস্থ রোগীর সামনে কি ড্রেন ড্রেন শুরু করছিস।ভদ্রতা আছে তোদের? ”
আদ্রি বলল
“ঠিক কথা এই ইনান আর আয়াশের মধ্যে কোনো ভদ্রতা না।অভদ্র পোলাপান।”
আয়াশ ঠোঁট বাকা করে বলল
“আর আপনি মনে হয় ভদ্রের আম্মা।”
ওরা কথা বলছিলো একটুপর একটা নার্স এসে ইনশিরাকে বলল
“এখন কি অবস্থা? ”
“জ্বি ভালো।”
“আচ্ছা রেস্ট করেন বিকেলের মধ্যে ছাড়া পাবেন।”
“ঠিকাছে। ”
নার্স যাওয়ার পর আয়াশ বলল
“নার্সটা বহুত সুন্দর। ”
আদ্রি খোচা মেরে বলল
“লুচ্চমি শুরু।লুচ্চমি না করলে হয় না?মহিলাটা তোর মায়ের বয়সী।”
আয়াশ ভ্রু কুচকে বলল
“আমি কি বলছি আমি তার সাথে প্রেম করমু বলছি সে সুন্দর এতে লুচ্চমির কি আছে?”
ইনান হাসতে হাসতে বলল
“বুঝলি আয়াশ মাইয়ারা সব হিংসুটে। কারো সৌন্দর্যের প্রশংসা করলে জ্বলে পুড়ে মরে যায়।”
ইনান আর আয়াশ দুজনেই হাসতে লাগলো।আদ্রি আর ইনশিরা ঠোঁট বাকা করে রইলো।তখনি আলেয়া বেগম এসে বলল
“ইনশু এমনটা করা উচিত হয় নি তোমার। ”
“সরি মা।”
“আচ্ছা মাফ করলাম আর যাতে এমন না হয়।তোমারা থাকো ওর কাছে আমি একটু বাসায় যাচ্ছি।”
আদ্রি বলল
“আচ্ছা আন্টি।”
তারপর আলেয়া বেগম চলে গেলেন।আলেয়া বেগম যেতেই আয়াশ বলল
“দোস্ত কালকের মিশনটার কথা মনে আছে?”
সবাই জোরে বলে উঠলো
“ইয়েস মিরাজ স্যারের পর্দা ফাস”
তারপর সব গগন বিদারী হাসি দিয়ে উঠলো আর চোখে মুখে শয়তানি।
ওরা সবাই বসে বসে গল্প করছিলো একটু পর আদ্রিকে বসিয়ে রেখে ইনান আর আয়াশ বাইরে এলো নাস্তা করতে আর কারণ সকাল থেকেই কিছু খাওয়া হয় নি।বের হয়েই ইনান আয়াশকে বলল
“তিয়াস হারামিটাকে আমার খুন করতে ইচ্ছা করছিলো কিন্তু তোর জন্য পারি নাই।”
“খুন করলে তোর নিজেরই ক্ষতি তারচেয়ে ভালো ওকে জেলে পঁচতে দে।আমি মামাকে বলে দিছি ওর ইচ্ছা মতো মারতে।”
“হুম আর একদিন ও আমার সামনে পড়লে ওরে জ্যান্ত পুতে ফেলবো।”
“শান্ত হ ভাই।একটু আগে ইনশুকে ই তো কত ভালো করে বোঝালি এখন নিজেই হাইপার হচ্ছিস।”
“শান্ত কিভাবে হবো বল আরেকটু হলে তো….”
ইনান আর কিছু বলে নি রাগে কটকট করতে করতে নাস্তা খেতে গেলো।ওরা খেয়ে তারপর হসপিটালে গেলো।আদ্রি তখনও বসে বসে ইনশিরার সাথে কথা বলছিলো।চারজন আবার বসে বসে মজা করছিলো।একটুপর আলেয়া বেগম এসে সবাইকে জোর করে পাঠিয়ে দিলেন।তাই যে যার যার বাড়ি চলে গেলো।আলেয়া বেগম মেয়ের পাশে বসে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে থাকেন। আর ইনশিরা তৃপ্তিতে চোখ বুঁজে। বিকেলে ইনশিরাকে হসপিটাল থেকে ছাড়া হলো।ও বাসায় চলে গেলো।
পরেরদিন…..
ইনান আর আয়াশ বসে বসে আদ্রি আর ইনশিরার জন্য অপেক্ষা করছে।একটুপর দুজনই আসলো।আদ্রি বসতে বসতে বলল
“কি রে মিরাজ স্যার আজকে আসছে?”
আয়াশ শয়তানি হাসি দিয়ে বলল
“শালার ব্যাটা আজকে আবার আসবে না?”
ইনান হাসতে হাসতে বলল
“ওর তো আজকে লেকের পাড়ে ডেটিং শিউলি ম্যাডামের সাথে।”
ইনশিরা আয়াশকে উদ্দেশ্য করে বলল
“তুই শিওর তো মিরাজ স্যার শিউলি ম্যাডামকে লেকের পাশে আসতে বলছে।”
“আবার জিগায়।আমি নিজের কানে শুনছি মিরাজ স্যার বলতেছিলো হ্যা শিউলি ম্যাডাম আপনি একটু লেকের পাড়ে আসবেন?আমি আপনাকে একটা গিফট দিবো।খুবই স্পেশাল।”
আয়াশের কথা শেষ হতেই চারজনের হাসির রোল পড়ে গেলো।ইনান হাসতে হাসতেই বলল
“স্পেশাল গিফট টা আমাদেরও দেখা উচিত।”
ওদেরকে থাকিয়ে ইনশিরা বলল
“কিন্তু লেকের পাড়ের গেইটে তো তালা দেওয়া থাকে আর চাবি থাকে ম্যাডাম স্যার দের কাছে।আমরা ঢুকবো কিভাবে?”
আয়াশ কলার উচু করে বলল
“এটা আমার উপর ছেড়ে দে।শুধু ক্লাসটা শেষ হলেই বেরিয়ে পড়বো।ওকে?”
সবাই একসাথে বলে উঠলো
“ডান।”
চলবে……?