আমি পথ হারিয়ে ফেলি পর্ব-০৪

0
316

#আমি_পথ_হারিয়ে_ফেলি
পর্ব-৪
Sidratul Muntaz

ইয়ামিন বেরিয়ে গেছে অনেকক্ষণ হবে। এখন গভীর রাত। এই সময় মানুষটা কোথায় যেতে পারে? সত্যিই কি স্ট্রিট বেঞ্চে শুয়ে আছে? উষসীর ইচ্ছে হলো একবার উঠে দেখে আসে। কিন্তু গেল না। ইয়ামিন যা ইচ্ছা করুক। তার কিছু যায়-আসা উচিৎ না। মানুষটি তাকে কম কষ্ট দেয়নি বিয়ের পর থেকে।

আজও পরিষ্কার মনে পড়ে, তাদের বিয়ের প্রথম রাতে যা ঘটেছিল__সারারাত উষসী একলা বিছানায় বসে বাচ্চা শিশুটির মতো কেঁ’দে ভাসিয়েছে। অথচ ইয়ামিন একবারের জন্যেও তার দিকে ফিরে তাকায়নি। নিষ্ঠুরের মতো বারান্দায় বসে বসে রাত্রী যাপন করেছে। একটার পর একটা সিগারেট শেষ করেছে। যেভাবে পুড়েছে সিগারেটের কাগজি দেহ, ঠিক সেভাবে পুড়েছে উষসীর কোমল মন। বিয়ের পর প্রথম এক সপ্তাহ ইয়ামিন উষসীর সঙ্গে কোনোরূপ ব্যাক্যালাপও করেনি। যা একজন নববধূর জন্য চূড়ান্ত অসম্মানজনক। তবুও তো কখনও কোনো অভিযোগ করেনি উষসী। ইয়ামিনকে ভালোবাসতে চেয়েছে। সব ভুলে তাকে আপন করতে চেয়েছে। তার সাড়া পাওয়ার অপেক্ষায় থেকেছে। কিন্তু দিনশেষে পেয়েছে শুধুই অবহেলা। কি দোষ ছিল তার?

আজও জানে না উষসী। কোন দোষে সে এতোবড় শাস্তি পেল। মন-প্রাণ উজাড় করে শৈশব থেকে যাকে ভালোবেসেছে সে কখনও উষসীর ভালোবাসার মূল্য দেয়নি। আর আজ যখন উষসী পুড়তে পুড়তে নিঃশেষ হয়ে গেছে তখন ইয়ামিনের টনক নড়ে উঠল। এতোদিনের কষ্ট সে কি করে ভুলে যাবে এক নিমেষে?

অতীতের বিষাদময় স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাবতে উষসীর চোখের কার্নিশ থেকে গড়িয়ে পড়া জল শুকিয়ে এলো!
______________________

(অতীত)

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে তখন। রেকর্ড মার্কস নিয়ে মাত্র ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে উষসী। এডমিশনের প্রিপারেশন ভালো থাকলেও পাবলিকে চান্স পায়নি। বাধ্য হয়ে প্রাইভেটে ভর্তি হয়েছে। ছোট থেকেই তার বাবা নেই। মা আর বড় আপু উষ্ণতার কাছে সে মানুষ। উষ্ণতার বিয়ের পরেও সে চাকরি করে সাবলম্বী হয়েছে। মা আর বোনকে নিজের কাছেই রাখে। উষ্ণতার স্বামী তৃষাণের টাকা-পয়সার কোনো কমতি নেই। তবুও নিজের মা আর বোনের ভরণপোষণের দায়িত্ব কাঁধে নিতে সে চাকরি করে। আবার ঘরও সামলায়। উষসীর অন্যতম ভালোবাসার জায়গা তার আপু।

একদিন সে খুব আবদার করে বলল,

” উষ্ণতা আপু, আমি কলকাতা যেতে চাই।”

উষ্ণতা ড্রেসিং টেবিলের কাছে বসে চুলে চিরুনি দিয়ে আঁচড় কাটছিল। উষসীর কথা শুনে সে থমকে গেল। অবাক হয়ে পেছনে ফিরে জানতে চাইল,” মানে? হঠাৎ কলকাতা কেন যাবি?”

উষসী লাজুক কণ্ঠে বলল,” ট্যুর। ফ্রেন্ডরা মিলে ঠিক করেছি।”

উষ্ণতা দূর্বোধ্য হাসল,” ট্যুরে যাওয়ার আর জায়গা পেলি না? একেবারে কলকাতা? তুই সাজেক যাওয়ার কথা বললেও তো মা হার্ট অ্যাটাক করবে।”

” উফ, এজন্যই তো তোমাকে বলছি। প্লিজ ব্যবস্থা করে দাও না। তোমার কথা তো সবাই শোনে।”

উষ্ণতা নির্বিকার গলায় বলল,” আমার কথা কেউই শুনবে না। এই বাড়ির বস হলো তোর তৃষাণ ভাই। সে যদি অনুমতি দেয় তাহলে লন্ডনে গেলেও মা কিছু বলবে না।”

” সত্যি আপু? উষসী উত্তেজিত হয়ে উঠল। উষ্ণতা হেসে বলল,” পাগল।”

কিন্তু উষসীর খুব ভয়। তৃষাণের সামনে কলকাতার কথা উচ্চারণ করলেই সে ধমক খাবে। কিন্তু কিছু করার নেই। ইয়ামিনের সাথে দেখা করার জন্য হলেও তাকে কলকাতায় যেতেই হবে। সে জন্য উষসী সব ধরণের রিস্ক নিতে প্রস্তুত।

উষসী একদিন দুরু দুরু বুক নিয়ে তৃষাণের কাছে গেল। তখন অফিসের জন্য তৈরী হচ্ছে তৃষাণ। উষসী তৃষাণের পেছন পেছন ঘুরঘুর করছে। তৃষাণ ডানে গেলে সে ডানে যায়, তৃষাণ বামে গেলে সেও বামে। একটা পর্যায় তৃষাণ বিরক্ত হয়ে বলল,” কি চাই?”

উষসী মনখারাপ করা দৃষ্টিতে তাকালো। অসহায় স্বরে বলল,” আগে প্রমিস করতে হবে। যা চাইবো তাই দিবে তো?”

তৃষাণ গম্ভীর হয়ে বলল,” আগে বলো। দেওয়ার মতো জিনিস হলে নিশ্চয়ই পাবে।”

এই কথা বলেই সে ড্রেসিংটেবিলের সামনে চলে গেল। হেয়ার ব্রাশ দিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগল। উষসী ধপ করে বিছানায় বসল। দুইহাতে কচলে বলল,” অনুমতি লাগবে।”

” কিসের অনুমতি?” তৃষাণ ভ্রু কুচকে তাকাল। তাই দেখেই উষসীর কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেল। অনেক সাহস যুগিয়ে বলল,” ফ্রেন্ডসরা সবাই মিলে ঠিক করেছি কলকাতায় যাবো।”

তৃষাণ থামল। বিস্ময় ভাব নিয়ে প্রশ্ন করল,” হঠাৎ কলকাতা কেন? বাংলাদেশে কি জায়গার অভাব আছে।”

” ফ্রেন্ডরা মিলে ঠিক করেছি। আমার পাসপোর্ট তো রেডিই আছে। তুমি অনুমতি দিলেই ভিসার জন্য এপ্লাই করবো।”

” আমি না হয় অনুমতি দিলাম। কিন্তু তোমার আপু এতোদূর যেতে দিতে রাজি হবে?”

” আপুই আমাকে বলেছে তোমার সাথে কথা বলতে।”

” সত্যি? তোমার আপু বলেছে?”

” একদম সত্যি। বিশ্বাস না হলে ডেকে জিজ্ঞেস করো!”

উষ্ণতার কথা শুনে তৃষাণ একটু নরম হলো। গায়ে ব্লেজার জড়াতে জড়াতে বলল,” কবে যাবে?”

” উমম, সামনের মাসের উনিশ তারিখ।”

” তাহলে দেরি আছে। ”

” তুমি কি অনুমতি দিচ্ছো?” উষসী সাবধানে প্রশ্ন করল। তৃষাণ বলল,” যদি অনুমতি দেই তাহলে আমি কি পাবো?”

” যা চাইবে তাই পাবে।”

” শিউর?”

” একদম শিউর।”

” তাহলে ঠিকাছে। তোমরা চাইলে আমি প্লেনের টিকিটও এরেঞ্জ করে দিতে পারি। সাথে আমার একজন বডিগার্ডও যাবে।”

” সত্যি বলছো? থ্যাঙ্কিউ ভাইয়া। ইউ আর দ্যা বেস্ট জিজু ইন দ্যা হোল ওয়ার্ল্ড!”উষসীর কণ্ঠে খুশির ঢেউ। সে দৌড়ে এসে তৃষাণকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল। তৃষাণ আলতো করে উষসীর মাথায় হাত রেখে বলল,” কিন্তু মনে থাকে যেন, আমি যা চাইবো তা।”

উষসী তৃষাণের দুইগাল টিপে বলল,
” অবশ্যই মনে থাকবে পেয়ারা জিজু। লাভ ইউ! এখনি সবাইকে ফোন করে গুড নিউজটা জানিয়ে দেই। সবাই অনেক খুশি হবে। আমারও ডিমান্ড বেড়ে যাবে। ভাবতেই মজা লাগছে।”

উষসী হৈহৈ করতে করতে বের হলো রুম থেকে। তৃষাণ সাথে সাথেই অনুপমাকে ডেকে পাঠালো। যতই সে উষসীর সামনে হাসুক। সন্দেহ মনে রয়েই যায়৷ উষসী কেন হঠাৎ কলকাতা যাওয়ার জন্য এতো হাংকিপাংকি শুরু করেছে? শুধুই কি ট্যুর নাকি অন্য কোনো গল্প আছে? অনুপমা রান্নাঘরে কাজ করছিল। তৃষাণের ডাক শুনে দ্রুত ছুটে এলো।

” কিছু লাগবে ভাইজান?”

” না, তুমি বসোতো। কথা আছে।”

অনুপমা বিছানায় বসল। শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ব্যস্ত স্বরে বলল,” বলেন ভাইজান।”

” উষসী হঠাৎ কলকাতা যেতে চাইছে কেন? তুমি জানো নিশ্চয়ই?”

অনুপমার মুখ শুকিয়ে গেল। চেহারায় নেমে এলো জড়তা। সে তৃষাণের সামনে একদম মিথ্যে বলতে পারে না। তৃষাণ গলার টিউন শুনেই বুঝে ফেলে কোনটা মিথ্যা আর কোনটা সত্যি। এর আগে অনেকবার তৃষাণের কাছে মিথ্যে বলে ধরা খেয়েছে সে। ডেঞ্জারাস মানুষ একটা! অনুপমাকে আকাশ-পাতাল ভাবতে দেখে তৃষাণ নিজে থেকেই বলল,” আমার কাছে লুকানোর কিছু নেই। একদম সত্যি কথা বলবে অনু। ঘটনা কি?”

অনুপমা মাথা নত করে বলল,” শুনেছিলাম সামনের মাসে নাকি কলকাতায় ইয়ামিন ইব্রাহীমের কনসার্ট আছে। আমার মনে হয় এজন্যই…”

অনুপমার আর কিছু বলতে হলো না। এর আগেই
তৃষাণের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। সে বুঝল উষসীকে কলকাতায় যাওয়ার অনুমতি দেওয়াটা বিরাট ভুল হয়েছে। তার উচিৎ ছিল রাজি হওয়ার আগেই অনুপমার সাথে কথা বলে নেওয়া। কিন্তু যা হওয়ার হয়ে গেছে। তৃষাণ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” বুঝেছি। তুমি যাও এখন।”

” ভাইজান, একটা কথা বলি?”

” বলো।”

অনুপমা উঠে তৃষাণের সামনে এসে দাঁড়ালো। কিছু বলার আগেই উষ্ণতাকে দেখে থেমে গেল সে। তৃষাণও খানিক অপ্রস্তুত হলো। উষ্ণতা সন্দেহী দৃষ্টিতে ওদের দু’জনকে দেখছিল। প্রায়ই অনুপমা আর তৃষাণকে এভাবে গুজুরগুজুর করতে দেখে সে। সন্দেহের বিষয় সেটা না, আসল সন্দেহের বিষয় হলো উষ্ণতাকে আসতে দেখলেই তারা থেমে যায়। কিন্তু কেন? তারা কি এমন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে যা উষ্ণতার সামনে বলা যাবে না?
________________
তখন মাঝরাত। ঘুমের ঘোরে উষ্ণতা অনুভব করল কারো নরম স্পর্শ তার কপালে,গালে,নাকে প্রবাহিত হচ্ছে৷ সে চোখ পিটপিট করে তাকাতেই তৃষাণকে আবিষ্কার করল। জড়ানো গলায় কিছু বলতে নিলেই তৃষাণ তার ঠোঁটে আঙুল ঠেঁকিয়ে ফিসফিস করে বলল,” শশশ! বারান্দায় চলো। একটা জিনিস দেখাবো।”

” এতোরাতে বারান্দায়?” উষ্ণতার ঘুমের ঘোর কাটেনি তখনও। তৃষাণ জবাব না দিয়ে রহস্যময় হাসল। তার ওই হাসিটা যে উষ্ণতার কি ভীষণ পছন্দ! উষ্ণতা উঠতে দেরি করছিল বলে তৃষাণ আচমকাই তাকে পাঁজাকোলায় তুলে নিল। উষ্ণতা হকচকিয়ে বলল,” কি করছো তৃষাণ?”

তৃষাণ আবারও ফিসফিসানি উত্তর দিল,” বললাম না একটা জিনিস দেখাবো?”

উষ্ণতাকে আস্তে-ধীরে বারান্দায় এনে দাঁড় করালো তৃষাণ। লোডশেডিং এর কারণে পুরো শহর অন্ধকারে ডুবে আছে। যেন এ কোনো আঁধার রাজ্য! কালো আকাশে ঘন মেঘের উপস্থিতি পুরো শহর আরও অন্ধকার করে দিয়েছে।

উষ্ণতাদের বারান্দাটা বেশ বড়। চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়া। ঝুলন্ত ফুলের টব আর রঙের-বেরঙের গাছ জায়গাটার সৌন্দর্য্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তৃষাণ হাঁটু গেঁড়ে বসেছে তার সামনে। ঘন পল্লবে আবৃত চোখ দু’টি চিকচিক করছে খুশির আমেজে। এলোমেলো চুলগুলো কপাল ঢেকে আছে, চাপদাড়ি ভরা গালে স্নিগ্ধ হাসি।

বিয়ের এতোবছর হয়ে গেল, তাও এই হাসি দেখলে উষ্ণতা তোলপাড় হয়ে যায়। তৃষাণ পরম আবেশ নিয়ে চুমু দিল উষ্ণতার হাতে। তারপর নরম কণ্ঠে বলল,” উপরে তাকাও।”

উষ্ণতা খোলা আকাশের দিকে তাকাতেই খেয়াল করল ফানুসে প্রজ্জলিত হয়ে উঠেছে নীল আকাশটা। শহরে এখন সোনালী আলোর রাজত্ব।কি অপূর্ব সেই দৃশ্য! উষ্ণতা তৃষাণের হাত ছেড়ে দৌড়ে কার্নিশ ঘেঁষে দাঁড়ালো। লম্বা করে শ্বাস টেনে দেখল ফানুসগুলো একে একে ভেসে যাচ্ছে আর দ্বীপশিখা দিয়ে সজ্জিত হচ্ছে কয়েকটি ইংরেজি অক্ষর,” Happy 8 years anniversary.”

উষ্ণতা দুইহাতে মুখ চেপে ধরল। তাদের বিয়ের আটবছর পেরিয়ে গেছে! সময় কত দ্রুত ধাবমান। অথচ চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় এই বুঝি কিছুদিন আগে বিয়েটা হলো তাদের। উষ্ণতা হসপিটাল থেকে ফুলসজ্জিত গাড়িতে বসে তৃষাণের সাথে বাড়ি এলো। এখনও স্মৃতিপটে স্পষ্টভাবে জ্বলজল করে সেইদিন। কি ভীষণ সুন্দর ছিল তাদের বিয়ের প্রথম রাত, প্রথম রাতের মায়া ঝরানো বৃষ্টি। কত-শত স্মৃতি জমা হয়েছে এ যাবৎকালে।

সবচেয়ে সুন্দর সময় ছিল যখন তৃষ্ণা পেটে এসেছিল। উষ্ণতা হসপিটালের বেডে শুয়ে মরণব্যথায় ছটফট করছিল। আর তৃষাণ শক্ত করে চেপে রেখেছিল তার হাত। তৃষানের ফরসা মুখ ভয়ে গোলাপী রঙ ধারণ করল। প্রতি মুহুর্তে উষ্ণতাকে হারানোর ভয় হানা দিচ্ছিল তার মস্তিষ্কে। তারপর যখন তৃষ্ণা এলো, তাকে কোলে নিয়ে তৃষাণের সে কি আনন্দ! এক নিমেষে সব দুঃখ ভুলে সে হাসতে লাগল। এলোপাতাড়ি শুধু চুমু দিচ্ছিল ছেলের চোখেমুখে। সেদিন প্রথমবারের মতো উষ্ণতা তৃষাণকে এতো আনন্দিত দেখল। আনন্দের বর্ষন নামছিল তার চোখ বেয়ে। সব স্মৃতি ভাবতে ভাবতে উষ্ণতারও চোখ ভিজে এলো। অতীত বড়ই সুন্দর!

তৃষাণ পেছন থেকে জাপটে-জড়িয়ে ধরল তাকে। উষ্ণতার ঘাড়ের চুল সরিয়ে পিঠে নাক ঘষতে ঘষতে লম্বা শ্বাস নিল। উষ্ণতা সামনে ঘুরেই তৃষানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। তার খুশিতে কান্না পাচ্ছে। তৃষাণ কিছুক্ষণ উষ্ণতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,” তোমার জন্য দু’টো গিফট আছে।”

উষ্ণতা মাথা তুলে তাকালো,” আজকের রাতটাই তো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর গিফট। তুমি কিভাবে এতোকিছু মনে রাখো বলোতো? আমি ভুলেই গেছিলাম আজকের ব্যাপারে। আই এম স্যরি। আর থ্যাঙ্কিউ!”

তৃষাণ তার হাস্যজ্জ্বল চেহারাটা অন্ধকারে আচ্ছন্ন বানিয়ে বলল,
” শুধুই থ্যাংকস? আর কিছু না?”

উষ্ণতা পা উঁচু করে তৃষাণের গলা জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু দিল। তৃষাণ অসন্তুষ্ট কণ্ঠে বলল,” এইটা হবে না। আমি কত কষ্ট করে সারারাত জেগে সব আয়োজন করেছি জানো? আর তুমি শুধু একটা চুমু দিয়েই খালাস?”

” তাহলে কি করবো?”

” অফিস থেকে ছুটি নাও সাতদিনের। আমরা কাশমীর যাচ্ছি।”

” ও, তাহলে এটাই এনিভারসেরি গিফট?”

” উহুম ফার্স্ট গিফট।”

” কিন্তু এতো ঘন ঘন ছুটি নিলে তো আমার চাকরি চলে যাবে ডিয়ার হাসব্যান্ড! তাছাড়া ছেলের সামনে পরীক্ষা। ওর এখন কিছুতেই স্কুল মিস করা ঠিক হবে না।”

” ডিয়ার ওয়াইফ, এটা আমাদের হানিমুন সিরিজের অষ্টম এপিসোড৷ এখানে ছেলেকে নেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। কিন্তু তুমি তো তাকে রেখেও যাবে না। তাই আমরা সবাই যাবো। হানিমুন ট্রিপ হয়ে যাবে ফ্যামিলি ট্রিপ।”

মিষ্টি করে হাসল উষ্ণতা। তৃষাণ তার কোমড় জড়িয়ে কাছে টেনে আনল। কপালে আলতোভাবে ঠোঁট ছুঁইয়ে একাধারে অনেকগুলো চুমু দিতে দিতে বলল,” বউয়ের আবদার বলে কথা। না রেখে পারি কিভাবে?”

উষ্ণতা হেসে বলল,” এবার বলো সেকেন্ড গিফট কি?”

” সেকেন্ড গিফট হচ্ছে…” তৃষাণ ট্রাউজারের পকেট থেকে একটা লম্বা খাম বের করল। খামটা উষ্ণতার হাতে তুলে দিয়ে বলল,” খুলে দেখো।”

উষ্ণতা মোবাইলের ফ্ল্যাশ অন করে খামটা খুলল। দেখল একটা ছেলের সিভি। ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করল,” কে এটা?”

” আমার ফ্রেন্ডের ছোটভাই। চমৎকার একটি ছেলে। পুলিশ অফিসার। উষসীর বিয়ে ঠিক করে ফেললাম।”

উষ্ণতা চরম অবাক হয়ে বলল,” মানে? ও তো এখনও ছোট তৃষাণ! ওর বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি?”
” আঠারো না হয়ে গেল?”

উষ্ণতা চোখমুখ শক্ত করে বলল,
” আঠারো হলেই বিয়ে দিতে হবে? আমার বোনকে কি তোমার বোঝা মনে হচ্ছে?”

” এভাবে কেন বলছো? তুমি চাইলে বিয়ে না হয় কয়েক বছর পরে হবে। এখন দেখাদেখি আর এংগেজমেন্ট হয়ে থাকুক। আমি কাল-পরশুই ভাবছি ওদের আসতে বলবো।”

উষ্ণতা বিস্মিত না হয়ে পারল না। তৃষাণ তাকে না জানিয়েই এতোবড় একটা সিদ্ধান্ত কিভাবে নিল? উষ্ণতা স্পষ্ট স্বরে বলল,” আগে উষসীর সাথে কথা বলে দেখি। ও বিয়ে করতে কতটুকু প্রস্তুত সেটাও জানা দরকার।”

” আমি কথা দিয়ে ফেলেছি উষ্ণ। উষুমণিকে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমার।”

উষ্ণতার বিশ্বাস হচ্ছে না। রুষ্টগলায় বলল,” আমাকে জিজ্ঞেস না করে তুমি কথা দিলে কিভাবে?”

তৃষাণ হাত থেকে সিভিটা নিয়ে ভাঁজ করতে করতে গম্ভীর স্বরে বলল,” আমার এটাই ঠিক মনে হয়েছে। আশা করি উষসীর জন্য এইটুকু করার অধিকার আমার আছে!”

অধিকারের প্রসঙ্গ আসতেই উষ্ণতা চুপ হয়ে গেল। তৃষাণের অবশ্যই উষসীর জীবনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু তৃষাণ যে এইভাবে সুযোগের সদ্ব্যবহার করবে এটা ভাবতে পারছে না উষ্ণতা। তৃষাণ তো আগে এমন ছিল না! আর উষসীর পাত্র হিসেবে এই ছেলেকে উষ্ণতার মোটেও পছন্দ হয়নি। পৃথিবীতে এমন সাধু পুলিশ খুব কমই আছে যে ঘুষ খায় না৷ এই ছেলেও যে ঘুষখোর না তার গ্যারান্টি কি? শুধু তৃষাণের মনখারাপ হবে ভেবে উষ্ণতা কিছু বলতে পারল না।

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে