আমি অর্ষা পর্ব-০২

0
606

#আমি_অর্ষা
#মেঘাদ্রিতা_মেঘা
#২য়_পর্ব
কলিং বেলের আওয়াজ আসলে আন্টি আমাকে বলেন,
_যাও তো মা দরজা টা খুলে দিয়ে এসো।
আমি গিয়ে দরজা টা খুলতেই আন্টি বলে একটা চিৎকার দিয়ে উঠি।
আন্টি দৌড়ে আসেন।

এসে বলেন,কি হয়েছে মা?

তখনই আন্টির ছেলে তার মুখ থেকে ভয়ংকর মুখোশ টা সরায়।
আর বলে,সরি সরি সরি।

আন্টি হেসে দিয়ে বলে,ওহ ওই মুখোশ দেখে তুমি ভয় পেয়েছো?
এটা তো অরন্যর ছোট বেলার অভ্যাস।অরন্য সব সময় মুখোশ পড়ে সবাইকে ভয় দেখায়।
ওর বোন মানে শিলাকে, আমাকে,আর সব থেকে বেশি প্রিয়াকে।

_আমি তো ভেবেছি আম্মু তুমি কাজে ব্যস্ত থাকবে।
প্রিয়া এসেই দরজা টা খুলবে।তাইতো আরো..

সরি হ্যাঁ,আপনি কিছু মনে করবেন না।
_হুম ঠিক আছে।

তারপর আন্টি আংকেল এবং শিলা আপু বাসায় ঢুকেন।
আন্টিকে শিলা আপু আর তার ছেলে দুজনই জড়িয়ে ধরেন।

এই মুহূর্ত টা কত সুন্দর তা বলে বোঝানো যাবেনা।
প্রিয়া আপু এসেও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়।

তারপর আন্টি আমাকে তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

প্রথমার মা ভাবীর সাথে হাসি দিয়ে দুজন কথা বলেন।
এত ধনী হয়েও তাদের মনে বিন্দু মাত্র অহংকার নেই।

যেমন আংকেল আন্টি তেমন তাদের ছেলে মেয়ে।

আমি আন্টিকে বললাম,আমি এখন তাহলে আসি আন্টি।
পরে আবার আসবো।

আন্টি আমাকে খাওয়া দাওয়া করে আসতে বলেন।
আমি,
অন্য এক সময় এসে খাবো বলে চলে আসি।
আমার সাথে প্রথমার মা ভাবীও চলে আসেন।

সন্ধ্যায় আন্টি আমাদের জন্য খাবার পাঠিয়ে দেন।

আমরা খাওয়া দাওয়া করে তিন বান্ধবী গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ি।

এরপর ক্লাস, ছাত্রী পড়ানো,নিজের পড়াশোনা,বাসার কাজ কর্ম নিয়ে একটু ব্যস্ত হয়ে যাই।

আন্টির ওখানেও আর যাইনা।
তার ছেলে মেয়ে এসেছে তাই আর যাইনা তেমন।
আগে আন্টি একা থাকতেন প্রায় সময়,তাই গিয়ে বসে থাকতাম মাঝেসাঝে।

আমরা যাই না বলে,আন্টি আসেন আমাদের খোঁজ খবর নিতে।
আর বলেন,

আগামী পরশুদিন শিলা আপুর জন্মদিন।
আমাদের সবার দাওয়াত তাদের বাসায়।
আত্মীয় স্বজন সবাইকে দাওয়াত দিয়েছেন তারা।
আর ভাড়াটিয়া সবাইকেই বলেছেন।
ধুমধাম করে জন্মদিন পালন করা হবে।

আমি কিছু বলার আগে আমার সাজনী বান্ধবী তো বলেই দিলো,আমরা অবশ্যই যাবো আন্টি।

আন্টি চলে যাবার পর আমি প্রেমাকে বললাম,
যাবি যে বললি দিবো কি আপুকে?
আর তারা এত ধনী মানুষ।
আমরা কিছু দিলে তাদের পছন্দ হবে?

ও বল্লো,
আরে চিন্তা করিস নাতো।
তিন বান্ধবী মিলে কিছু একটা কিনে দিবোনে।
আর বুঝিস না,কত্ত মজা হবে।
গান বাজনা হবে।
আমি তো সেই সাজ দিবো।

রুনা বলে উঠে,ইশ গান বাজনার জন্য আমি তো ঘুমাতেই পারবোনা।

_ধুর তুই আছিস তোর ঘুম নিয়ে।
দেখিস কত মজা হয়।
কিরে অর্ষা,তুই কিছু বল।

_কি বলবো,
_ধুর কিছু বলতে হবেনা তোর।

পরের দিন আমরা তিন বান্ধবী মিলে শিলা আপুর জন্য গিফ্ট কিনতে যাই।

শপিংমলে গিয়ে একটা একটা করে দেখছি কি দেয়া যায় আপুকে।
আমি আর রুনা এক পাশে,অপর পাশে প্রেমা।

কিছু ক্ষণ ঘুরাঘুরি করে প্রেমার চিল্লাচিল্লি শুনতে পাই।

দূরে তাকিয়ে দেখি কার সাথে যেন ঝগড়া করছে।

আমি আর রুনা দৌড়ে কাছে যাই।
যেতেই জিজ্ঞেস করি,

_আরে আরে কি হয়েছে?
এত চেঁচামেচি করছিস কেন?
_আর বলিস না,আমি এই গিফ্ট টা আপুর জন্য নিতে চাচ্ছি বলে ধরেছি।
আর সেও এটা ধরেছে।
ধরেছে যে ছাড়ছেই না।
আমি আগে ধরেছি এটা নিবো বলে।
উনি বলে উনি নাকি আগে ধরেছে।
_বিশ্বাস করুন আপু,আমিই এটা নিয়েছি।
কোত্থেকে এই মেয়ে এসে টানাটানি করছে আমাকে দিচ্ছেই না।
_আচ্ছা শোন প্রেমা,দিয়ে দে ভাইয়াকে এটা।
আমরা অন্য কিছু নিবোনে আপুর জন্য।
_ইশ তাকে কেন দিবো?
আমি নিয়েছি আমিই নিবো।
_না,আমি নিয়েছি আমিই নিবো এটা।

এই সময় নিচের ফ্ল্যাটের ছেলেটা এসে হাজির হয়।

_কিরে আদিব কি হয়েছে?
_আরে দেখ না দোস্ত।
আমি বাড়ীওয়ালা আংকেলের মেয়ের জন্য এটা নিতে চাচ্ছি।
এই মেয়ে এটা ছাড়ছেই না।
_আরে অর্ষা, আপনি এখানে?
_জ্বী,
_শপিং করতে এসেছেন।
_জ্বী।
_কি কেনাকাটা করলেন?
_কিছুই কিনিনি এখনো।
_কি নিতে এসেছেন?
_বাড়ীওয়ালা আংকেলের মেয়ের জন্য গিফট নিতে এসেছি।
_ওহ তাই?
আমরাও তো তাই নিতে এসেছি।
ওহ ওর সাথে আপনাদের কি দেখা হয়নি?
ও আমার বন্ধু আদিব।
নিচে আমার সাথে ও ই থাকে।
_ওহ তাই বুঝি।
না উনার সাথে এখনো দেখা হয়নি আমাদের।
_আদিব,দিয়ে দে ওটা।
তুই যার জন্য নিতে চাচ্ছিস,তার জন্যই নেয়া হচ্ছে।
তাছাড়া বাড়ীর মানুষের সাথে কিসের ঝগড়া।
আফটার অল,একই ছাদের নিচেই তো আমাদের বসবাস।

এই কথা শুনে প্রেমা সেটা ছেড়ে দেয়।
আর বলে চল অর্ষা আমরাই এটা ছেড়ে দিলাম।

_হুহ আমিও এটা আর নিবোনা দোস্ত।
চল যাই আমরা।

এভাবে আদিব আর প্রেমা দুজনই ওটা রেখে চলে যায়।
আমরাও অন্য একটা গিফট নিয়ে পরে বাসায় চলে আসি।

এরপর চলে আসে শিলা আপুর জন্মদিন।
প্রেমা রুনা আমি তিন জনই শাড়ি পরি।

প্রেমা আর রুনা আগেই আন্টির ওখানে চলে যায়।
আমি একটু লেইট করে প্রথমাদের পড়িয়ে তারপর যাই।

আমি শাড়ি পরে তেমন হাঁটতে পারিনা।
কোন রকম পরে সিঁড়ি দিয়ে যাচ্ছি আর সেই মুহূর্তে শাড়িতে পা বেঁধে পরে যেতে লাগছিলাম,আর তখনই কে যেন ঠিক নায়কের মত এসে আমাকে ধরে ফেলে।

তাকিয়ে দেখি বাড়ীওয়ালা আংকেলের ছেলে অরন্য।

হাসতে হাসতে আমাকে বলে,

_ভয় পান নি তো?
_নাহ
_শাড়ি পরে একটু সাবধানে হাঁটতে হয় বুঝলেন।
আমি যদি না থাকতাম,তখন তো পড়ে গিয়ে কোমড় টা ভাঙতেন।
ভাগ্যিস আমি সেভেন আপ আনতে নিচে যাচ্ছিলাম।
_হুম বুঝলাম
_যাইহোক শাড়িতে আপনাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
_থ্যাংক ইউ।
এবার হাত টা ছাঁড়ুন।
_ও হ্যাঁ,যান যান।
সাব্ধানে কিন্তু।
_জ্বী।

আমি আন্টির ওখানে চলে যাই।
সবাই মিলে অনেক আনন্দ করি।
নাচ গানের ও আয়োজন করা হয়।

প্রিয়া আর অরন্য জুটি বেঁধে নাচে।
সবাই মিলে নাচতে নাচতে প্রেমা আর আদিব ও নাচ শুরু করে দেয় কাপল হয়ে।
শিলা আপুও একা একা নাচছে।
শিলা আপুকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
আমি আর রুনা সবার নাচ দেখতে থাকি।
সেই মুহূর্তে আদিবের বন্ধু এসে হাজির,মানে নিচের সেই ভাড়াটিয়া।
আমাকে ডাকছে,চলুন না আমরাও নাচি একটু।

_না।আমি যাবোনা।
রুনা বলে,
আমি আসি?
_হুম চলুন।

এরপর সবাই মিলে নাচতে থাকে।
আমি আর প্রথমার মা এক পাশে বসে দেখতে থাকি।

অরন্য আমাকে ইশারায় বলে,
তুমিও আসো।

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বলি,
নাহ।

এক সময় প্রথমা এসে আমাকে আর ওর মাকে জোর করে নাচতে নিয়ে যায়।

আমি আর ওর মা ওর হাত ধরে নাচতে থাকি।
সেই সময় নিচের ফ্ল্যাটের ছেলেটা নাচতে নাচতে রুনার হাত ছেড়ে আমার হাত ধরে।
আমি সবার মধ্যে তাকে আর কিছু বলতে পারিনা।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই অরন্য আমার সামনে এসে বলে,

এই মেয়ে,আপনাকে..
নাহ তোমাকে আম্মু ডাকছে।
এই বলে সে আমাকে নিয়ে চলে আসে।

_কই?
আন্টি কোথায়?
_আন্টি ডাকেনি।
তোমার মুখ দেখে বুঝলাম তুমি ওই ছেলেটার সাথে আনইজি ফীল করছো তাই ডেকে নিয়ে আসলাম।
_ধন্যবাদ।
_আর শোনো,তুমি আমার অনেক ছোট তাই তোমাকে আমি তুমি করেই বলবো।
কেমন?
_জ্বী আচ্ছা।
_আচ্ছা যাও এবার।

সেদিনের মত প্রোগ্রাম শেষ হয়।
আমরা খাওয়া দাওয়া সেরে,কেক কেটে,নাচ গান করে চলে আসি।

_আজ অনেক মজা হয়েছে তাইনারে?(প্রেমা)
_হুম অনেক।(রুনা)
_হুম দেখলাম তো দুই জন কিভাবে নাচলি। (আমি)
_কিরে প্রেমা!কালই তো এত ঝগড়া করলি অই আদিবের সাথে,আজ ই এত হাত ধরে নাচানাচি?(রুনা)
_ইশ তুই বুঝি বসে ছিলি?তুই যে ওর বন্ধুর সাথে নাচলি।
তুই না নেচে এসে ঘুমাতে পারলিনা।(প্রেমা)

_হয়েছে হয়েছে।
এখন ফ্রেশ হয়ে দুজনই ঘুমাতে চলেন।
সকালে ক্লাস আছে।

সকাল বেলা নাস্তা করে আমরা রুম থেকে বেরুবো,আর তখনই দেখি দরজার সামনে একটা কাগজের প্যাকেট।
প্রেমা ওটা হাতে নিতেই দেখে,

প্যাকেট টাতে অর্ষা লিখা।

প্রেমা মুচকি হেসে বলে,বাহ!
অর্ষার জন্য।
কে রে এটা?
_আমি তো জানিনা।

_এই নে খুলে দেখ,

আমি প্রেমার হাত থেকে প্যাকেট টা নিয়ে খুলে দেখি প্যাকেট টার ভেতরে এক মুঠো কাচের চুড়ি,আর একটা কাজল।
আর তার সাথে এক টুকরো কাগজ।

যেখানে লিখা,
কালো শাড়িতে তোমাকে পরীর মত লাগছিলো।
কাজলে আর চুড়িতে আরো সুন্দর লাগবে।
আচ্ছা,তুমি সাজোনা কেন?

রুনা বলে উঠলো,কি লিখারে?

আমি রুনার হাতে কাগজের টুকরোটা দিয়ে বললাম,পড়ে দেখ।
রুনা আর প্রেমা এক্সাইটেড হয়ে পড়তে লাগলো।

আর ভাবতে লাগলাম,
কে দিলো এগুলো আমাকে।
আর কেনই বা দিলো।
মানুষ টা কে?

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে