আমার স্বামী পার্ট-০৫

0
2273

#আমার_স্বামী
#Rayhan_Naim
#পার্ট_৫

– আমি তোর কাছে উত্তম স্বামী হতে চাই (নাইম)

যখন ওনি কথা টা বললেন আমি অবাক হয়ে ওনার দিকে তাকিয়ে ছিলাম –
ওনি আবার ও বললেন –

– হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন –

– যে স্বামী‌ তার স্ত্রীর কাছে উত্তম সে আল্লাহর
কাছেও উত্তম ।

– তাই আমি চাই তোর কাছে একজন আর্দশ স্বামী হতে । (নাইম)

আমি ওনার বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম –

– আপনি আমার কাছে বরাবর ই‌ উত্তম তবে
আরো কিছু কাজ আপনাকে করতে হবে তাহলে
#আমার_স্বামী আমার কাছে সবার থেকে উত্তম হবে ! (আমি)

– বলনা কি করতে হবে (নাইম)

– নিয়মিত পাচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে হবে
এবং আমাকে প্রতিদিন পাচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আদেশ করবেন ? আর প্রতিদিন নামাজের
যাওয়ার সময় সালাম করতে ভুলবেন না যেনো
কেনোনা হাদিসে বর্নিত রয়েছে –

– যে স্বামী বাইরে যাওয়ার সময় স্ত্রী সন্তানদের
সালাম করে এবং বাইরে থেকে আসার সময় সালাম করে ঘরে ডুকে অথবা স্বামী‌ বাসায় আসলে বা বাইরে গেলে স্ত্রী তাকে সালাম করে
সে ঘরে কখনো শয়তান প্রবেশ করতে পারেনা

এবং সব সময় রহমত ও বরকত নাযিল হতে থাকে কখনো ঝগরা বিবাদ সৃষ্টি হয়না । (আবু দাউদ , তিরিমিযি )

– আচ্ছা ঠিক আছে কিন্ত একটা জিনিস তুই‌
ভুলে গেলি (নাইম).
– কিহ্ সেটা বলুন (আমি)
(লজ্জার কারনে যেটা বলিনি সেটা বুজে ফেলল মনে হয় )

– নামাজের যাওয়ার আগে স্ত্রী কে চুমু দেওয়া
সুন্নত সেটা বললি না কেন (নাইম)

– ইশ না বললে আপনি করবেন না বুজি (আমি)
– না বললেও করবো হিহি (নাইম)
– হ্যা জানি সেই জন্যই বলিনি (আমি)
– আচ্ছা আর কি করতে হবে ( নাইম )

– আর বেশি বেশি দান সদকা করতে হবে
কারন মৃত্যু যেকোনো সময় আসতে পারে
তাই সময় থাকতে এই কাজ টা করা অতি গুরুত্বপূর্ন এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে –

সূরা আল-মুনাফিকুন (المنافقون), আয়াত: ১০

وَاَنۡفِقُوۡا مِنۡ مَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ فَیَقُوۡلَ رَبِّ لَوۡلَاۤ اَخَّرۡتَنِیۡۤ اِلٰۤی اَجَلٍ قَرِیۡبٍ ۙ فَاَصَّدَّقَ وَاَکُنۡ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ

উচ্চারণঃ ওয়া আনফিকূমিম্মা-রাঝাকনা-কুম মিন কাবলি আইঁ ইয়া’তিয়া আহাদাকুমুল মাওতু ফাইয়াকূলা রাব্বি লাওলা আখখারতানী ইলা আজালিন কারীবিন ফাআসসাদ্দাকা ওয়া আকুম মিনাসসা-লিহীন।

অর্থঃ আমি তোমাদেরকে যা দিয়েছি, তা থেকে মৃত্যু আসার আগেই ব্যয় কর। অন্যথায় সে বলবেঃ হে আমার পালনকর্তা, আমাকে আরও কিছুকাল অবকাশ দিলে না কেন? তাহলে আমি সদকা করতাম এবং সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত হতাম ।
(সূরা আল-মুনাফিকুন (المنافقون), আয়াত: ১০).

– তাই‌ বেশি বেশি দান ,সদকা করবেন , যাকাত দিবেন এতিমদের কে সাহায্য করবেন । (আমি)

– ঠিক আছে তারপর (নাইম)
– আপাদত এগুলো করুন তাহলেই আপনি
আমার কাছে সব থেকে উত্তম হবেন এতে শুধু
আপনার সুখ নিহিত আছে তা নয় পুরো পরিবারে আল্লাহ্ তায়ালা রহমত বর্ষন করবেন ইনশাআল্লাহ্।

– ঠিক আছে তাই করবো ইনশাআল্লাহ্ এখন
ছাড় ফ্রেশ হয়ে আসি আমার খুব ই গরম লাগছে (নাইম)

-হমমম জান একটুপর আযান দিবে নামাজ পড়তে যেতে হবেতো (আমি).
– নিশ্চয়ই (নাইম)

ওনি আমার কপালে আলতো করে চুমু একে
দিলেন এবং ফ্রেশ হতে চলে গেলেন – হঠাৎ ওয়াশ রুম থেকে ওনি বললেন !

– জান্নাত আমার তোয়ালে টা নিয়া আয়তো (নাইম)
– জী আনছি (আমি)

– তোয়ালে নিয়ে ওনার কাছে গেলাম – ওমনি
ওনি আমার হাত ধরে ফেললেন – আর বললেন

– তুই ফ্রেশ হবি না (নাইম)
– হ্যা হবো তো আপনি ফ্রেশ হয়ে নেন (আমি)
– একসাথে হবো আয় – স্বামী স্ত্রী একসাথে গোসল করাও তো সুন্নত

– হযরত আয়শা (রাঃ) হতে বর্নিত .

তিনি বলেন : – আমি এবং রাসূল (সাঃ) একই পাত্র (কাদাহ্) হতে পানি নিয়ে গোসল করতাম
সেই‌ পাত্রকে ফারাক বলা তো (সহিহ্ বুখারি)

হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন –

– আমি এবং রাসূল(সাঃ) একই পাত্রের পানি দিয়ে এইভাবে গোসল করতাম যাতে আমাদের দুজনের হাত একের উপর এক পড়তে থাকতো ।

রাসূল (সাঃ) ওনার স্ত্রী গনের সাথে একই পাত্রে একই সাথে গোসল‌ করতেন এমন কি তার বিবিদের হায়েজ চলাকালীন ও তিনি এই সুন্নাহ্ পালন করেছেন ।

– তাই এখন আমার মিষ্টি বউটা আমাকে নিজ
হাতে গোসল করিয়ে দিবে কষ্ট হবে নাকি (নাইম)

– ছি ছি এসব বলবেন না – কষ্ট হবে কেনো
আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারলে‌ মৃত্যু‌ও আমার জন্য সহজ হয়ে উঠবে কারন

আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)
বলেছেন –

স্বামী খুশি থাকা অবস্থায় কোনো স্ত্রীলোক
যদি মারা যায় তাহলে সে জান্নাতী (তিরিমিযি শরীফ – ১১৬৯)

– তাই সর্বস্থায় আমি আপনার কথা মেনে চলবে (আমি)
– হয়েছে এখন চল (নাইম)

অতপর গোসল খায়ান গিয়ে যখন ওনার শরির মগ দিয়ে পানি দিচ্ছিলাম ওনি সেই পানি আমার মুখে ছুড়ে মারছিলেন আর হাসছিলেন ।

এর মধ্যে আযান এর‌ শব্দ শুনতে পেলাম ।
তাই‌ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে বের হলাম –

ওনি বললেন –
– টুপি টা পড়িয়ে দে তো (নাইম)
– জী (আমি)

যখন টুপি পড়াতে যাই তখন ই বুজি আমি ওনার হাইটে কত ছোট উচু হয়ে পড়াতে গেলে ওনি ও‌ পায়ের উপর ভর দিয়ে উচু হয়ে যান – কেমন ডা লাগে কতক্ষন ধরে দুষ্টুমি করেই চলেছেন –

– পড়াতে দিবেন তো আগে (আমি)
– আমার পায়ের পাতায় ভর করে পড়া (নাইম)
ওনি যেরকম টা বললেন সেরকম টাই করলাম
কিন্ত আমাকে আর ছাড়ছে না জড়িয়ে ধরে রয়েছে !

– কি হলো নামাজে যাবেন না (আমি)
– হমম একটা চুমু খেয়ে নেই (নাইম)
– আপনি ও না অনেক পাজি হয়ে গেছেন (আমি)

বলতে বলতে ওনি চুমু দিয়ে দিলেন আর আমাকে
বললেন তাড়াতাড়ি নামাজ টা যেনো পড়ে নেই ।
অতপর ওনি সালাম দিয়ে নামাজের জন্য চলে
গেলেন ।

আমি ও‌ নামাজ পড়তে গেলাম – নামাজ পড়ে কুরআন শরীফ‌ পড়তে লাগলাম -।

পড়া শেষে যখন মোনাজাত ধরলাম‌ লক্ষ্য করলাম ওনি‌ও আমার পাশে বসে মোনাজাত ধরে আছেন ।

মোনাজাতে শেষে ওনাকে জিজ্ঞেস করলাম‌
– কখন আসলেন (আমি)
– অনেক ক্ষন আগেই‌ এসেছি যাতে বউ টার কন্ঠে কুরআন তেলায়ত শুনতে পারি (নাইম)
– তখন পাশে বসলেই পারতেন – (আমি)
– তখন পাশে বসলে মনোযোগ টা আমার প্রতি আসতো বেশি । (নাইম)
তারপর ওনি উঠে আমার হাত কিছু প্যাকেট দিলেন – যাতে ছিলো কয়েকটা শাড়ি শার্ট প্যান্ট আর কিছু বই ।

– এত কিছু কার জন্য আনলেন (আমি)
– এগুলো তোমার – মা ভাই আর তোমার বাবার জন্য (নাইম)
– এগুলোর তো‌ প্রয়োজন কেনো আনলেন শুধু ওতগুলো টাকা খরচ করার কি দরকার ছিলো ।

– আমি শুধু ওনাদের জন্য খরচ করিনি আমি
আল্লাহর সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্য ব্যয় করেছি

-হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন

– আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য তুমি যে কোন ব্যয় করো না কেন, তোমাকে তার বিনিময়ে প্রদান করা হবে। এমনকি যা তুমি তোমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিবে (তারও প্রতিদান পাবে)।

– তাই এগুলো ওনাদের দিও (নাইম)

– তা ঠিক আছে কিন্ত আপনি তো চাকরি জয়েন করেন নি তার মধ্যে এত খরচ কেনো করছেন
আপনি জানেন না অতিরিক্ত ব্যয় করা আল্লাহ পছন্দ করেন না – এমন কি পবিত্র কুরআনেও
উল্লেখ রয়েছে যে –

সূরা আত-তালাক (الطّلاق), আয়াত: ৭

لِیُنۡفِقۡ ذُوۡ سَعَۃٍ مِّنۡ سَعَتِہٖ ؕ وَمَنۡ قُدِرَ عَلَیۡہِ رِزۡقُہٗ فَلۡیُنۡفِقۡ مِمَّاۤ اٰتٰىہُ اللّٰہُ ؕ لَا یُکَلِّفُ اللّٰہُ نَفۡسًا اِلَّا مَاۤ اٰتٰىہَا ؕ سَیَجۡعَلُ اللّٰہُ بَعۡدَ عُسۡرٍ یُّسۡرًا ٪

উচ্চারণঃ লিইয়ুনফিকযূছা‘আতিম মিন ছা‘আতিহী ওয়া মান কুদিরা ‘আলাইহি রিঝকুহূ ফালইউনফিকমিম্মাআ-তা-হুল্লা-হু লা-ইউকালিলফুল্লা-হু নাফছান ইল্লা-মাআ-তাহা- ছাইয়াজ‘আলুল্লা-হু বা‘দা ‘উছরিইঁ ইউছরা-।

অর্থঃ বিত্তশালী ব্যক্তি তার বিত্ত অনুযায়ী ব্যয় করবে। যে ব্যক্তি সীমিত পরিমাণে রিযিকপ্রাপ্ত, সে আল্লাহ যা দিয়েছেন, তা থেকে ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যা দিয়েছেন, তদপেক্ষা বেশী ব্যয় করার আদেশ কাউকে করেন না। আল্লাহ কষ্টের পর সুখ দেবেন।

(সূরা আত-তালাক (الطّلاق), আয়াত: ৭)

– তাই আপনি আর কখনো অতিরিক্ত ব্যয় করবেন না নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী দিবেন (আমি)
– আচ্ছা বাবা – আচ্ছা তাই করবো (নাইম)

– হমম আর এগুলো আপনি নিজ হাতে দিবেন ওনাদের এতেই ওনারা খুশি হবেন (আমি)

– আচ্ছা দিবোনে – হঠাৎ ই আম্মু নিচ থেকে
খেতে ডাকলো – আমি আর আমার স্বামী
নিচে আসলাম –

– উনি মা – বাবার জন্য যেগুলো এনেছেন সেগুলো ওনাদের নিজ হাতে দিলো – ওনারা খুব খুশি হয়েছে যদি ও বা মুখে বলেনি তবে কিছু অনূভুতির কথা মুখে না বললেও বুজতে কষ্ট হয়না ।ওনাদের হাসি ভরা মুখটা দেখলেই‌ বোজা
যায় ওনারা কতটা খুশি হয়েছে ।

রায়হান ও অনেকটা খুশি হয়েছে। সবাইকে আমি
আর আম্মু খাবার টা বেড়ে দিলাম ।

হঠাৎ করে আমার শয়তান ভাইটা বলতে লাগলো-

– এই পেত্নির বাচ্চার দুলাভাইকে নিজ হাতে তুলে খায়িয়ে দে – জানিস না হাজবেন্ড কে খায়িয়ে দিলে ছোয়াব হয় – কি দেখে যে দুলাভাই তোর মতো একটা পেত্নী কে বিয়ে করলো আল্লাহ্ জানে (রায়হান)

– রায়হানের কথা শুনে আম্মু – আব্বু সহ ওনি ও হাসতে লাগলেন – আমি রাগি চোখে রায়হানের
দিকে তাকাতেই আমাকে ঝারি মেরে বলল –

– ওমন করে কি দেখোস – চোখ খুলে বেরিয়ে আসবে – স্বামীর সেবাযত্ন করতে জানিস না এটাও কি শিখিয়ে দিতে হবে নাকি – তুই কি কচি খুকি নাকি (রায়হান).

– ভালো হচ্ছে না কিন্ত – তোকে কিন্ত এবার (আমি)

– হঠাৎ ই আব্বু বলে উঠলো –

– আবার শুরু করলি তোরা – তোরা কখনো ভালো হবি না – আর জান্নাত মা ! রায়হান তো ঠিকিই‌
বলছে স্বামীকে খায়িয়ে দিলে অনেক ছোয়াব হয়
তোমার আম্মুকে দেখোনাই আমাকে প্রায়ই সময় নিজ হাতে তুলে খায়িয়ে দেয় – তাই যাও নাইম কে খায়িয়ে দাও – আমাদের সামনে লজ্জা পেতে হবে না (আব্বু)

– জী আব্বু (আমি)

রায়হানের দিকে তাকিয়ে তাকে বিড় বিড় করে বললাম –

– তোর কপালে বউ জুটবে না কুত্তা (আমি)

অতপর ওনার পাশে বসলাম ওনি হাসছিলেন
ওনার দিকে রাগি লুক নিয়ে তাকালাম তবুও‌ হাসচ্ছেন – তারপর আর কি আব্বু আম্মুর সামনেই ওনাকে খায়িয়ে দিছিলাম – ওনি ও আমাকে তুলে খায়িয়ে দিলেন –

– আম্মু হঠাৎ ই বললো –

– তোরা যেনো সারাজীবন এইভাবেই হাসি খুশি থাকিস দোয়া করি ! (আম্মু)

#সমাপ্ত

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে