#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৫( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
চিত্রা গাঢ় হলুদ কালারের শাড়ি পড়ে স্টেজে বসে আছে। শরীরে তাজা ফুলের গহনা। রিয়াদ হা করে তাকিয়ে আছে চিত্রার পানে। চিত্রার ইচ্ছে করলো রিয়াদের চোখ দুটো গেলে দিতে। তৃষ্ণা একের পর এক সেলফি তুলছে চিত্রার সাথে। সেলফি তুলা শেষ হলে চিত্রার কয়েক টা সিঙ্গেল পিক তুলে।
ও বাড়ি থেকে তৃষ্ণা রাফি রাতুল আর তুর্য এসেছে। অধরা আসে নি,শরীর খারাপ বলে রুমে থেকে গেছে।
তৃষ্ণা ছবি তুলার শেষে খানিকটা দূরে গিয়ে কয়েক টা ছবি তুষারের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে পাঠায়।
তুর্য তৃষ্ণা কে একা দেখে তৃষ্ণার কাছে এগিয়ে আসে। দূর থেকে সেটা লক্ষ করে রাফি। মুহুর্তে চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায়। সাহেল আহমেদ আর চয়নিকা বেগম এসে চিত্রার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দেয়। হলুদ লাগানোর অনুষ্ঠান শেষ হলে হালকা পাতলা নাচ গান হয়। সিমি তৃষ্ণা নাচে। তুর্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে তৃষ্ণার নাচ দেখছিল। মুহূর্তে রাফির মেজাজ চটে গেলো নাচের মাঝখান থেকে তৃষ্ণার হাত টেনে সাইডে আনে। কাটকাট গলায় বলে-
-“ চুপচাপ আমার পাশে বসে থাকবে। আমার থেকে দূরে যাবে তো এই লোকসমাগমেই থাপ্পড় দিয়ে বসবো বলে রাখলাম।
তৃষ্ণা রাফির থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে বিরক্ত হয়ে বলে-
-“ আশ্চর্য আমার ভাই ফ্রেন্ডের বিয়ে আর আমি এনজয় করবো না? আপনার কথা আমার শুনতে হবে?
-“ শুনবে কি শুনবে না সেটা তোমার ব্যাপার। শুনলে ভালো আর না শুনলে আরো ভালো।
-“ অসহ্যকর একটা।
তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে বিরবির করে কথাটা বলে চুপচাপ বসে থাকে। রাফি শুনে ফেলে। গম্ভীর মুখখানায় এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।
চিত্রা চোখ জুড়ে ঘুমেরা এসে হানা দিচ্ছে। এই চাকচিক্যময় পরিবেশ অসহ্যকর হয়ে উঠছে। এমন থম মেরে বসে থাকলে কার না ঘুম পাবে? বসে থাকতে থাকতে মাজা ব্যাথা হয়ে আসছে। ইশারায় চয়নিকা বেগম কে ডাকলেন। চয়নিকা বেগম মেয়ের ইশারা পেয়ে কাছে এগিয়ে গেলেন। মেয়ের চোখ মুখে বিরক্তি ভাব দেখে বলে-
-“ কি হয়েছে?
-“ প্রচুর ঘুম পাচ্ছে মা। আমি রুমে যাব।
চয়নিকা বেগম আশেপাশে তাকালো। অনুষ্ঠান তো শেষের দিকেই তাই আর কিছু বললো না।
-“ আচ্ছা রুমে গিয়ে ঘুমাও।
চিত্রা সম্মতি পেয়ে ঢুলো ঢুলো শরীরে ছাঁদ থেকে নামে। সিঁড়ির কাছে এসে আকস্মিক হাতে টান পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যেতে নিলে কারো সুঠাম দেহের সাথে গিয়ে পিঠ ঠেকে যায়। মুহূর্তে ঘুম উবে যায়। পেছন ফিরে সুঠাম দেহের মানুষ টাকে দেখতেই রাগে চোখ মুখ জ্বলতে থাকে। ধাক্কা দিয়ে নিজের থেকে ঐ মানুষটার দুরত্ব তৈরি করে।
আকস্মিক ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে কয়েক কদম পিছিয়ে যায় রিয়াদ। চিত্রা হাতের আঙুল উঁচু করে চিৎকার করে বলে উঠলো-
-“ ব্লাডি রাসকেল,অসভ্য সমস্যা কি আপনার? নেক্সট টাইম এমন অশ্লীল কিছু দেখলে ঠ্যাং ভে’ঙে রাস্তায় ফেলে আসবো।
চিত্রা আর কিছু বললো না। ওর ঘুম দরকার। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে নিজের রুমে ঢুকে। মুহুর্তে রুমের লাইট গুলো নিভে যায়। পুরো বাসা ফাঁকা, সবাই ছাঁদে রয়েছে। হঠাৎ লাইট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ভরকে যায় চিত্রা। ফোন টাও হাতে নেই,বাহিরে কৃত্রিম আলোয় হালকা ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। শোবার খাট টা হালকা স্পষ্ট হলো। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় শুতেই হঠাৎ আকস্মিক দরজা লাগানোর শব্দে বুকটা ধক করে উঠে। তড়িৎ গতিতে পেছন ফিরে। সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত অস্পষ্ট এক পুরুষ অবয়ব দেখা গেলো।
স্বস্তির শ্বাস ফেললো। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। পুরুষ টি এগিয়ে এলো। চিত্রা মুখোমুখি বসলো। চাঁদের আলোর রশ্মি চিত্রার মুখশ্রী তে এসে পড়ছে। পুরুষ টি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। চিত্রা চোখ বন্ধ রেখেই বলল-
-“ এতো অধৈর্য্য আপনি আগে জানা ছিলো না। কালকের জন্য অপেক্ষা করতে পারলেন না? এই রাতে চলে আসলেন দেখতে।
অন্ধকার আর চোখ বন্ধ থাকায় চিত্রা বুঝতেই পারলো না তার প্রেমিক পুরুষের কতটা গাঢ় দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।
চিত্রা তুষারের নিরবতা দেখে ফট করে চোখ মেলে তাকায়। দ্রুত শাড়ি পাল্টাতে হবে,শরীর ভীষণ জ্বালা করছে। শোয়া থেকে উঠে বসলো। তুষার আগের ন্যায় তাকিয়ে আছে। চিত্রা এক এক করে ফুলের গহনা গুলো খুলে ফেললো। মাথার চুলে থাকা ফুলের টায়রা টা খুলতে গিয়ে ব্যার্থ হলো। তুষারের দিকে তাকিয়ে মিহি কন্ঠে বলল-
-“ এভাবে না তাকিয়ে একটু সাহায্য করুন টায়রা টা খুলতে।
চিত্রা তুষারের দিকে পিঠ দিয়ে ঘুরে বসলো। তুষার যত্ন সহকারে টায়রা টা খুলে দিলো। সেই সাথে মারাত্মক একটা কাজ করে বসলো। চিত্রার উন্মুক্ত ফর্সা পিঠে নিজের অধর ছুঁয়ে দিলো। মুহুর্তে চিত্রার শরীর কেঁপে উঠলো। হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলো। নড়ার শক্তি পাচ্ছে না। তুষার চিত্রার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে,ডান হাত টা চিত্রার পেটে শাড়ি ভেদ করে চলে যায়। চিত্রার পিঠ ঠেকে আছে তুষারের বুকে। চিত্রা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
-“ ক… কি করছেন…
তুষার চিত্রার গলায় চুমু খেয়ে নেশালো কন্ঠে বলে-
-“ এখনও কিছু করি নি।
-“ আ…..আমি ফ্রেশ হবো। ভীষণ জ্বালা করছে শরীর।
-“ কাল ও কি এটা বলবেন?
কথাটার মানে তৎক্ষনাৎ বুঝলো না চিত্রা। একটু সময় নিয়ে যখন বুঝলো তখন লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। তুষারের থেকে ছাড়া পাবার জন্য ছোটাছুটি করতে লাগলো। তুষার বিরক্ত হয়ে শুধালো-
-“ আহ এমন ছোটাছুটি করছেন কেনো?
-“ একটু ফোনের টর্চ টা জ্বালান না আমি ফ্রেশ হবো।
তুষার কিছুটা সময় নিয়ে চিত্রা কে ছেড়ে দিলো। পকেট থেকে ফোন টা বের করে টর্চ টা জ্বালালো। চিত্রা বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। পেটের দিকে থাকা সেফটিপিন গুলো খুলে নিলো। কিন্তু পেছনে থাকা আঁচল আঁটকে রাখা সেফটিপিন টা খুলতে পারলো না। ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে তুষার কে মৃদু স্বরে ডেকে বলল-
-“ একটু সেফটিপিন টা খুলে দিন না।
তুষার বিনাবাক্যে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। চিত্রার দিকে এগিয়ে এসে সেফটিপিন টা খুলে দিলো। চিত্রা আলমারির দিকে এগিয়ে গিয়ে শুভ রঙের একটা কুর্তি নিয়ে তুষারের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
তুষার বিছানায় আয়েশ করে বসে। মিনিট দশেক পর ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ শুনে তুষার ওয়াশরুমের দরজার দিকে তাকায়। সাদা পোষাক,চুল গুলো উষ্কখুষ্ক হয়ে কোমড় অব্দি ছাড়া,মুখে পানি লেগে আছে। ফোনের টর্চ আলোয় এক অন্য রকম স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে গেলো। চিত্রা বা হাতে থাকা শাড়ি ব্লাউজ পেটিকোট সোফার উপর ছুঁড়ে ফেললো। ওয়ারড্রবের উপরে থাকা টাওয়াল টা নিয়ে মুখ মুছে বিছানায় এসে বসলো। তুষার তখনও ঘোরলাগানো দৃষ্টি নিয়ে চিত্রার দিকে চেয়ে আছে। চিত্রা বিছানায় শুতে শুতে বলে-
-“ দেখা শেষ হলে এবার আসুন। একটু পর সবাই এক এক করে চলে আসবে।
তুষার নড়েচড়ে উঠলো। চিত্রার দিকে ঝুঁকে কপালে গাঢ় চুম্বন একে দেয়। কানের ললিতে হালকা ওষ্ঠ ছুঁয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ কালকের রাত টা খুব সুন্দর একটা রাত হবে আপনার আর আমার জন্য। আপনি প্রোপার তৈরি হয়ে থাকবেন। আমি মানুষ টা ভীষণ অধৈর্য্যশীল। মানিয়ে নিবেন এই অধৈর্য্যশীল পুরুষ টাকে।
চিত্রা চোখ বন্ধ ফেললো। তাকানোর সাহস হচ্ছে না। চোখ মেলে তাকালেই মনে হচ্ছে লজ্জায় কুঁকড়ে ম-রেই যাবে। তুষার কিছুক্ষণ স্থির চোখে তাকিয়ে দরজা খুলে চলে গেলো।
দরজা খোলার শব্দ শুনতেই চিত্রা চোখ মেলে তাকালো। ততক্ষণে তুষার আড়ালে চলে গেছে। তুষার চলে যাওয়ার মিনিট পাঁচেক পরই ঘরের বাতি জ্বলে উঠে। চিত্রা হেঁসে উঠলো। বুঝতে আর বাকি নেই তার এমপি মশাইয়ের কাজ এটা। চক্ষুলজ্জা থেকে বাঁচার দরুন এই পথ অবলম্বন তার। চিত্রা বিছানা থেকে উঠে সুইচ চেপে বাতি নিভিয়ে ঘুম দেয়।
তুষার নিচে নেমে গাড়িতে উঠতেই রাতুল তুষারের পিঠে কিল বসিয়ে বলে-
-“ শালা এতো অধৈর্য্যে কেনো তুই। দেখার জন্য সোজা চলে আসলি।
রাফি আর তৃষ্ণা গাড়িতে উঠতেই রাতুলের বলা কথা শুনে ফেলে। সহসা তৃষ্ণা হেঁসে ফেলে। রাফির মুখ গম্ভীর। পেছনে তুর্য কে আসতে দেখে আর গাড়ির ভেতর উঠলো না। তড়িৎ গতিতে গাড়ির অন্য পাশে এসে তৃষ্ণার কব্জি ধরে বলে-
-“ ব্রো তোমরা তিনজন এই গাড়িতে চলে যাও। আমি আর তৃষ্ণা অন্য গাড়িতে আসছি।
তুষার প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। তুর্য গাড়ির কাছে আসতেই রাফির কথা শুনে বলে-
-“ আমিও তোমাদের সাথে যাব।
রাফি মুখ খুলে কিছু বলবে তার আগেই তুষার বলে উঠে –
-“ তুমি তাহলে রাফির গাড়িতে যাও তুর্য।
কথাটা বলে তুষার গাড়ি স্টার্ট দেয়। রাফি বেশ বুঝলো তুষার ইচ্ছে করেই এটা করলো। তুষার জানে সে তুর্য কে খুব একটা পছন্দ করে না।
রাগান্বিত চেহারা নিয়েই তৃষ্ণার হাত চেপে গাড়ির কাছে গেলো। সামনের সিটের দরজা খুলে তৃষ্ণা কে ইশারা করলো বসার জন্য। তৃষ্ণা এক ঢোক গিলে চুপচাপ বসে পড়লো। রাফি দরজা টা আটকে দিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো। তুর্য এসে পেছনের সিটে বসতেই রাফি গাড়ি স্টার্ট দেয় সারা টা রাস্তা তৃষ্ণা চুপচাপ বসে আড়চোখে রাফিকে দেখে চলছিল। রাফি বিষয় টা খেয়াল করে মনে মনে হাসলেও মুখে গম্ভীরভাব এনে রেখেছিল।
সকাল সকাল রোদের মিষ্টি রশ্মি চোখে পড়তেই চিত্রার ঘুম ভেঙে যায়। আড়মোড়া ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসতেই পাশে তাকাতেই দেখে নুপুর গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। চিত্রা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে দেখতে লাগলো। আচমকা হাত দুটোর দিকে চোখ গেলো। মেহেদী তে রাঙা হাত। হাত দুটো মেলে ধরতেই ভেসে উঠলো ডান হাতে তুষারের নাম,আর বাম হাতে নিজের নাম। অনুভূতি টা দারুন। আজকের পর থেকে মানুষ টা সম্পূর্ণ রুপে হালাল হবে তারজন্য।
বেশকিছুক্ষন হাত দুটোর দিকে চেয়ে থেকে ওয়াশরুমে চলে গেলো শাওয়ার নিতে। প্রায় ত্রিশ মিনিট পর চিত্রা ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখে চয়নিকা বেগম খাবার নিয়ে এসেছেন। চিত্রা কে দেখামাত্রই তাড়া দিয়ে বলে-
-“ খাবার টা চটপট খেয়ে নাও। পার্লারের মেয়েগুলো চলে আসবে।
চিত্রা টাওয়াল দিয়ে চুল মুছে সেটা বেলকনিতে মেলে দিয়ে চয়নিকা বেগমের সামনে দাঁড়ায়। আচমকা চয়নিকা বেগম কে জড়িয়ে ধরে চিত্রা। আজকের পর থেকে মায়ের সাথে তর দুরত্ব বেড়ে যাবে৷ যখন খুশি তখন চাইলেই মা কে জড়িয়ে ধরতে পারবে না। খাবার বেড়ে কেউ মিনিটের পর মিনিট অপেক্ষা করে গলা ছেড়ে ডাক দিয়ে বলবে না,,কই রে খেতে আয়। মন খারাপ হলে মায়ের কোলে মাথা রেখে মন খারাপ হওয়ার কথা গুলো আর বলা হবে না।
চয়নিকা বেগম বুঝলেন মেয়ের জড়িয়ে ধরার মানে। মুচকি হেঁসে মেয়ের পিঠে হাত রেখে বলে-
-“ খাইয়ে দেই?
চিত্রা ধরা গলায় বলে-
-“ দাও।
চয়নিকা বেগম চিত্রা কে বিছানায় বসিয়ে নিজ হাতে মাংস দিয়ে ভাত মেখে খাইয়ে দিলো। চিত্রা তৃপ্তি নিয়ে খাবার খেলো।
খাওয়া শেষে মেয়ের এঁটো মুখ ধুয়ে কপালে চুমু একে চলে যায়।
দশটার দিকে পার্লারের মেয়ে গুলো আসে। ঘন্টা তিনেক সময় নিয়ে চিত্রা কে সাজায়। লেমন কালারের লেহেঙ্গা মুখে ব্রাইডাল সাজ,শরীরে ডায়মন্ডের জুয়েলার্স, নাকে নথ,মাথায় টায়রা। হাতে ডায়মন্ডের চিকন মোটা চুড়ি। শরীরে যা গহনা সব ডায়মন্ডের। লেমন কালারের লেহেঙ্গার সাথে গহনা গুলো একদম পারফেক্ট। পার্লারের একটা মেয়ে চিত্রার মুখের সামনে আয়না ধরে বলে-
-“ আপু দেখুন তো কেমন লাগছে?
চিত্রা আয়নায় নিজেকে দেখলো। এ যেনো অন্য এক চিত্রা। সাজ টা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে কিন্তু নিজের রিয়েল ফেসের সাথে একটু ও মিলছে না। মনে হচ্ছে ফেসটাকে এই সাজের মাধ্যমে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
সিমি এসেছিল দেখতে চিত্রার সাজ কতদূর। চিত্রার সাজ দেখে থমকে গিয়ে বলে-
-“ ওয়াও চিত্রা আপু তোমায় ভীষণ সুন্দর লাগছে। হায় আজ নির্ঘাত ভাইয়া হার্ট অ্যাটাক করে বসবে।
চিত্রা লজ্জা পেলো।
তুষার চিত্রার লেহেঙ্গার সাথে ম্যাচ করে লেমন কালারের শেরওয়ানি কিনেছে। শেরওয়ানি টা পড়ে মাথায় পাগড়ি নিলো। হাতে সিলভার কালারের ব্র্যান্ডের ঘড়ি। রাজকীয় রাজকীয় ভাব ফুটে উঠেছে। আয়নায় একবার নিজেকে দেখে ফোন টা হাতে নিয়ে চিত্রা কে তার আগমনের বার্তা পাঠালো।
চিত্রা সবেই ফোনটা হাতে নিয়ে লক খুলতে যাচ্ছিল ওমনি তুষারের মেসেজ আসলো।
-“ দেখা হচ্ছে মিস চিত্রা। মিস চিত্রা থেকে মিসেস খাঁন হওয়ার জন্য প্রস্তুতি কত দূর?
চিত্রা মুচকি হেঁসে মাথার ওড়না টা একটু নিচে টেনে নিজের একটা সেলফি তুলে তুষার কে সেন্ড করলো। তুষার নোটিফিকেশনের আওয়াজ পেয়ে ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে চিত্রার একটা পিক যেখানে চিত্রার মুখে ঘুমটা,ঢাকা চোখ,শুধু মুখশ্রীর নাক থেকে নিচের টুকু দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে একটা মেসেজ আসলো।
-“ মিসেস খাঁন হবার জন্য আমি পুরোপুরি প্রস্তুত এমপি মশাই। এবার শুধু আমার শহরে আপনার আগমনের অপেক্ষা ব্যাস।
তুষার হাসলো। ফোনটা পকেটে ভরে বের হলো রুম থেকে। বিয়ের সাজে সাজানো গাড়িটায়,তুষার,তামিম খাঁন,তৃষ্ণা আর তরিকুল খাঁন, তুষারের মামা মামুন বসেছে।
পরের গাড়িতে রাফি,তানিয়া বেগম,তাসলিমা খাঁন,সামির খাঁন,
আর শেষের গাড়িতে অধরা, রাতুল,আর তুষারের মামি সাইফা বেগম আর তার মেয়ে স্মৃতি।
তার আজ সকালে এসেছে।
অধরা একনজর দেখেছিল তুষার কে। তুষারের মুখে লেগে ছিল মাতাল করা এক হাসি। এতো সুন্দর হাসিটা। এত সুন্দর! সব ভুলিয়ে দেয় যেন।
বিষাক্ত একটা শ্বাস ছাড়লো অধরা। কষ্টগুলো কি বাতাসে ছড়িয়ে গেলো? বাতাসটাও কি বিষাক্ত হয়ে উঠলো? হ্যাঁ মনেহয়, শ্বাস নিতে পারছে না তো ঠিকমতো । হাসফাস লাগলো কে যেনো চাপাতি দিয়ে কুঁচি কুঁচি করে ফেললো হৃদপিন্ডটা। ভালবাসা নাকি? আহ্! সহ্য হচ্ছেনা কেনো? কাল রাতেই না কি সুন্দর নিজেকে বুঝালো নিজেই,বুঝেও তো গেলো। কিন্তু এখন এমন করছে কেনো? অধরা নড়েচড়ে বসলো খানিক টা। রাতুল খেয়াল করলো সেটা। আস্তে করে জিজ্ঞেস করলো –
-“ খারাপ লাগছে?
অধরা চমকে উঠলো। মনে ভয় হলো রাতুল বুঝে গেলো নাকি। অধরা কে স্বস্তি দিয়ে রাতুল বলে উঠলো-
-“ খারাপ লাগছে? এসির পাওয়া বাড়িয়ে দিব?
অধরা না সূচক জানালো। রাতুল দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। হালকা টিয়া রঙের লেহেঙ্গায় অসম্ভব সুন্দর লাগছে অধরা কে। কালকের তুলনায় আজকে মেকআপ বেশি করেছে। চুল গুলো খোলা। মেয়েটাকে সেদিন বলল চুল গুলো বেঁধে রাখতে মেয়েটা নির্ঘাত ভুলে গেছে। শারীরে হালকা অলংকার। চোখে আজ চশমা নেই। বেশ পরিবর্তন লাগছে অধরা কে। খুব শীগ্রই নিজের মনের কথা জানাবে সে অধরা কে। কথাটা ভেবেই নৈঃশব্দ্যে হাসলো।
অধরা জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালো। কাল রাতে কান্না করার ফলে চোখ মুখ ফুলে গিয়েছিল যার দরুন না চাইতেও তাকে গাঢ় মেকআপ করতে হয়েছে।
দুপুর দেড় টার নাগাত তুষারদের গাড়ি এসে পৌঁছায় চিত্রাদের বাসায়। বাড়ির ছোট সদস্য রা এসে গেট আটকে রেখেছে। পঞ্চাশ হাজার টাকা না দিলে তারা গেট ছাড়বে না। এর মধ্যে সিমি এসে বলে বসে এ লাখ টাকা না দিলে তারা বর ঢুকতে দিবে না।
রাফি ভ্রু কুঁচকে ফেলে। সিমির উদ্দেশ্যে বলে উঠে-
-“ টাকা কি মগের মুল্লুক নাকি যে আব্দার করলেন আর দিয়ে দেওয়া হলো। শখের বসে না হয় দশ বিশ হাজার টাকা চাইতে পারেন তাই বলে এক লাখ!
সিমি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে-
-“ সামান্য এক লাখ ই তো চাইছি এক কোটি তো আর চাই নি। এমপি দুলা ভাইয়ের কাছে এটা কোনো বিষয়ই না। যতো দেরি করবে ততই ভেতরে ঢুকতে দেরি হবে।
তুষার রাফির দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। এতো কথা বাড়ানোর কি আছে সেটা তার মাথায় আসছে না। সে চিত্রা কে দেখার জন্য মরিয়া হয়ে আছে আর রাফি তর্কবিতর্ক করছে। রাফির দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ টাকা টা চুপচাপ দিয়ে দে। তুই আর একটা তর্ক করবি তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
-“ তাই বলে ব্রো…..
-“ দিতে বলছি টাকা টা।
রাফি আর কথা না বাড়িয়ে টাকা টা দিয়ে দিলো। সিমি কেঁচি টা তুষারের হাতে দিলো। তুষার ফিতা টা কেটে ভেতরে ঢুকলো। তৃষ্ণা অধরা ভেতরে ঢুকতেই সিমি তাদের হাত চেপে বলল-
-“ আরে তোমরা কোথায় যাচ্ছ। এই টাকা কি পুরো টা আমরা নিবো নাকি। ৫০ হাজার তোমাদের আর ৫০ হাজার আমাদের।
তৃষ্ণা টাকা টা নিয়ে সিমির গাল টেনে বলে-
-“ হাউ সুইট। চলো এবার ভেতরে।
সিমি হেঁসে চলে যায় ওদের সাথে।
তুষার কে বসানো হয়েছে স্টেজে। চয়নিকা বেগম সিমি আর তৃষ্ণা কে পাঠিয়েছে চিত্রা কে নিয়ে আসার জন্য। চিত্রা রুম থেকেই শুনতে পেয়েছে তুষার দের আসার খবর। তৃষ্ণা সিমি কে নিজের রুমে আসতে দেখে স্মিত হাসলো। তৃষ্ণা এসেই চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে। কানে ফিসফিস করে বলে –
-“ আমার ভাই আজকে শেষ তোর রূপের ঝলকে।
চিত্রা হেঁসে উঠলো। তৃষ্ণা চিত্রা কে নিয়ে বের হলো। তুষার রাতুলের সাথে কথা বলছিলো। আকস্মিক চোখ ঘুরাতেই থমকে যায়। রাতুল তুষারের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকাতেই দেখলো চিত্রা আসছে। তুষার কে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে-
-“ কন্ট্রোল ইউর আইস।
তুষার মুচকি হাসে। তৃষ্ণা চিত্রা কে নিয়ে তুষারের কাছে আসতেই তুষার হাত বাড়িয়ে দেয়। চিত্রা তুষারের হাত টা ধরে পাশে বসে। ধরে রাখা হাতটায় হালকা করে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দেয়। রাতুল দূরে সরে যায়। তুষার চিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ আপনাকে বড্ড অচেনা লাগছে মিস চিত্রা।
চিত্রা ঘুরে তাকালো। বিষন্ন মনে বলল-
-“ বেশি মেক-আপ করা হয়েছে যে।
তুষার কিছু বললো না। কাজি এসেছে তুষার কে কবুল বলতেই তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে কবুল বলে উঠে। এবার চিত্রার পালা,চিত্রা কে কবুল বলতেই চিত্রা ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে গেলো। কবুল তিনটা শব্দ কিন্তু এই কবুল বলার মাধ্যমেই তো চিত্রা গোটা জীবন এক মিনিটেই বদলে যাবে। গলা শুকিয়ে আসলো। তুষার চিত্রার বা হাত টা চেপে ধরলো। ফিসফিস করে বলল-
-“ আগে লম্বা একটা শ্বাস নিন। নিজেকে শান্ত করুন তার পর বলুন।
চিত্রা তাই করলো। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করে কবুল বলে উঠলো।
সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো। তুষারের মুখে প্রাপ্তির হাসি।
অন্য দিকে এক ভেঙে যাওয়া নারীর চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো নোনা জল। প্রিয় মানুষটার খুশিতে এই জল গড়িয়ে পড়লো নাকি প্রিয় মানুষ টিকে এ জীবনে না পাওয়ার যন্ত্রণায়?
#চলবে?
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব২৬( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
রুমজুড়ে শীতলতা বিরাজমান। কেননা বাহিরে হালকা বৃষ্টি পড়ছে। পুরো কক্ষে ফুলের ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে। হরেক রকম ফুল দিয়ে আজ সাজানো রুমটা।ফুলে সজ্জিত বিছানায় বসে আছে চিত্রা ।একটু আগেই সকল নিয়ম রীতি শেষ করে তাকে রুমে এসে দিয়ে গিয়েছে তৃষ্ণা আর আর অধরা। অধরা পুরো ঘরটায় একবার চোখ বুলিয়েছিল। ফুলের গন্ধে শ্বাস আটকে আসছিল। ইচ্ছে করছিল সব ফুল গুলো ছিঁড়ে ফেলতে। রুম থেকে বের হবার আগে আরেক বার চিত্রা সহ পুরো রুম টায় অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকায়।
ভয়ে,লজ্জায়,উত্তেজনায় শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে চিত্রার। কিরকম যে এক অনুভূতি। বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ আসছে। তার মানে তুষার এসে পরেছে। বুকটা ধুকপুক করছে ।পরিহিত বিয়ের লেহেঙা খামছে ধরলো উত্তেজনায় বুক কাঁপছে। চিত্রার ভাবনার ঘোর কাটলো কক্ষের দরজা খোলার আওয়াজে। তুষার এসেছে গলা খাকারি দিলো।
ভয়ে আড়ষ্ট হলো চিত্রা । তুষার ধীরে পায়ে এসে চিত্রার পাশে বসে। একদৃষ্টিতে চিত্রার দিকেই তাকিয়ে থাকে। নিরবতা কাটিয়ে তুষার বলে উঠে-
-“আপনার হাত টা দিন তো চিত্রা।
চিত্রা কাঁপা কাঁপা হাত টা বাড়িয়ে দেয়।
চিত্রার বাম হাত টা তুষার তার ডান হাতের মুঠোয় নেয়। সারা শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ জাগে চিত্রার। তুষার তার মুখটা চিত্রার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,
-“আমাকে মা”রার প্ল্যান করেছেন আপনি মিসেস খাঁন ।
কথাটা শুনে কেঁপে উঠে চিত্রা । লোকটা কি বলছে এসব। তাকে কখন মা”রার প্ল্যান করলো।
-“এসব কি বলছেন আপনি,আমি কখন আপনায় মা”রার প্ল্যান করেছি?
তুষার আলতো হাতে চিত্রার ঘোমটা টা উঁচু করে সরিয়ে ফেলে। মূহুর্তে তুষারেরর মুখ থেকে ভেসে আসে মাশাল্লাহ শব্দটা। বৃষ্টি চোখ বন্ধ করে ফেলে । তার ভীষণ লজ্জা লাগছে চোখ মেলে তাকাতে। তুষার চিত্রার কপালে চুমু দিয়ে বলে-
-“ এই যে আপনার রূপ এটাই তো যথেষ্ট আমায় মা”রার জন্য। আপনার লেপ্টে যাওয়া কাজল কালো চোখে ভীষণ মায়াবী লাগছে। ইশ তখন কাঁদছিলেন কেনো ওভাবে। আপনি কি জানেন আপনার চোখের একফোঁটা অশ্রু আমাকে কতোটা পিড়া দেয়? আর কখনো আমার সামনে কাঁদবেন না আপনি। এখন যান ফ্রেশ হয়ে আসুন দু রাকাত নফল নামাজ পড়ব।
চিত্রা মাথা নাড়িয়ে বিছানা থেকে নামে। তুষার চিত্রার দিকে চেয়ে বলে-
-“আলমারি তে দেখো তোমার পোষাক আছে সেখান থেকে যেকোনো একটা পছন্দ করে পাল্টে আসো।
চিত্রা আলমারির কাছে গিয়ে আবার থেমে যায়। পেছন ফিরে ভ্রু কুঁচকে বলে-
-“ আপনি কি বললেন?
তুষার চিত্রার দিকে চেয়ে বলে-
-“ বলছি আলমারি তে তোমার পোষাক আছে,খুলে দেখো।
-“ আমি এটার কথা বলি নি।
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ তাহলে কিসের কথা?
-“ আপনি তুমি করে সম্বোধন করছেন।
তুষার মুচকি হাসলো। বসা থেকে উঠে চিত্রা দিকে এগিয়ে এসে চিত্রা কে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড় করালো। চিত্রার কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে আয়নায় চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তোমার আর আমার সম্পর্ক এখন কিসের?
-“ হাসবেন্ড ওয়াইফের।
-“ তো আপনি করে তাহলে আর কেনো ডাকবো? আজ থেকেই তুমি ডাকার প্র্যাকটিস করছি। তুমি ও তুমি করে ডাকবে।
চিত্রা তুষারের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি অনড়ভাবে রেখে বলে-
-“ সময় লাগবে।
-“ যত ইচ্ছে সময় নাও।
কথাটা বলে চিত্রার গলায় চুমু খেলো। তার পর এক এক করে সব গয়না খুলতে সাহায্য করলো। এখন শরীরে বাম হাতের অনামিকা আঙুলে আংটি ছাড়া আর একটা অলংকার ও নেই। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে চিত্রা কে। তুষার দৃষ্টি সংযত করলো।
-“ তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো কুইক।
চিত্রা আলমারির কাছে আসলো। আলমারি খুলে দেখে আলমারির এক পাশ শাড়ি আর সেলোয়ার-কামিজ দিয়ে ভরা। সেদিন করা সেই পোষাক গুলে। যেগুলো তুষার পরে দিবে বলেছিল। শাড়ি গুলোর মধ্যে থেকে একটা ব্লাক রঙের শাড়ি বের করে সেটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
মিনিট বিশেকের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে সুতি শাড়ি টা পড়ে ওজু করে বের হয়।
চিত্রা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখে তুষার পোষাক চেঞ্জ করে ব্লাক শার্ট আর টাওজার পড়ে আছে। চিত্রা কে আলমারি থেকে জায়নামাজ টা বের করতে বলে তুষার নিজে ওজু করার জন্য ওয়াশরুমে যায়।
তুষার ওজু করে বের হয়ে দেখে চিত্রা জায়নামাজে দাঁড়িয়ে আছে। তুষার গিয়ে চিত্রার ঠিক কিছুটা সামনপ গিয়ে দাঁড়ায়। দুজনে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নেয়।
নামাজ শেষে তুষার চিত্রা কে নিয়ে বিছানায় বসে। আলমারির ড্রয়ার খুলে একটা প্যাকেট এনে চিত্রার হাতে ধরিয়ে দেয়। হকচকিয়ে যায় চিত্রা ।
-“এটা কি?
-“ ইসলামের মোতাবেক এটা তোমার মোহরানা টাকা। দশলক্ষ এক টাকা।
চিত্রা টাকাগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে বলে-
-“এটা দিয়ে আমি কি করবো।
-“ যা খুশি করতে পারো। যেভাবে খুশি খরচ করতে পারো। এই টাকার মালিক তুমি।
চিত্রা প্যাকেট টা নিয়ে আলমারিতে তুলে রাখে। তুষারের পাশে বসতেই তুষার ইশারায় পাশে শুতে বলে। চিত্রা পাশে শুয়ে বলে-
-“ আমার যা প্রয়োজন সব তো আপনি এনেই দিবেন। ওটা খরচ করার প্রয়োজন হবে না।
তুষার মুচকি হেসে বা হাত দিয়ে চুল গুলো ব্রাশ করে। চোখ মুখে দুষ্ট হাসি এনে বলে-
-“ আজ কি আমাদের জানো তো?
চিত্রা তুষারের মুখের দিকে তাকায়। তার চোখ জোড়া নেশালো। চিত্রার ঠোঁট কাঁপছে। কিছু বলবে কিন্তু মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। তুষার চিত্রার মুখ টার দিকে তাকিয়ে নিজের মুখ টা চিত্রার গলার কাছে নিয়ে যায়। গলায় ওষ্ঠ ছুঁয়ে নাক দিয়ে ঘষতে থাকে। তুষারের গরম নিঃশ্বাস চিত্রার গলায় পরছে। বিছানার চাদর খামচে ধরলো। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম। তুষার এবার গলা থেকে মুখ সরিয়ে চিত্রার চোখ বন্ধ করে রাখা মুখশ্রীর দিকে তাকায়। এক হাত রাখে চিত্রার গালে। কিছুটা ধমক দিয়ে বলে-
-“ এই মেয়ে চোখ খুলো।
তুষারের ধমক শুনে চোখ মেলে তাকায়। তুষারের হঠাৎ এমন ধমক শুনে ভরকে যায় চিত্রা । ধিরে ধিরে মুখটা চিত্রার অধরের কাছে নিয়ে আসে তুষার। আস্তে আস্তে চিত্রার অধরে অধর ছোঁয়ায় তুষার। ইশ কি একটা অনুভূতি। চিত্রাকে তুষারের সাথে রেসপন্স করতে না দেখে তুষার ছোট্ট করে চিত্রার ঠোঁটে কামড় বসিয়ে দেয়। ব্যাথায় আহ শব্দ টাও করতে পারলো না চিত্রা। তুষারের বুকের শার্ট খামচে শক্ত করে ধরে। তুষার নিজের মত করে চিত্রার ঠোঁটে অত্যাচার করতে থাকে। হ্যাঁ এটা অত্যাচার চিত্রার ভাষ্যমতে। চিত্রা ঠিক মতো শ্বাস ও নিতে পারছে না। তুষারের থেকে নিজেকে ছাড়াতে গেলেই তুষার আরো জোরে চেপে ধরছে৷ চিত্রা মনে মনে শ’খানেক বকাবকি করলো তুষার কে।
মিনিট দশেক পর তুষার ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেতেই জোরে জোরে শ্বাস ফেলে চিত্রা। তুষারের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ বিয়ে হতে না হতেই মা-রার প্ল্যান করছেন আমাকে?
তুষার চিত্রার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ এখনও পুরোপুরি ভাবে মা-রি নি।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। তুষার চিত্রার শাড়ি ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে হাত রাখে। চিত্রা অসহায় চোখে তাকায়। তুষার সেটাকে গুরত্ব দিলো না। চিত্রা কে নিজের কাছে টেনে আনে। চিত্রা হুড়মুড়িয়ে তুষারের বুকের উপর এসে পড়ে। তুষার আলতো হাতে চিত্রার শাড়ির আঁচল টা সরিয়ে ফেলে। চিত্রা এবার লজ্জায় চোখ খিঁচে বন্ধ করে। তার এবার মাটি ফাঁক করে গর্তে ঢুকতে ইচ্ছে করছে। আস্তে আস্তে যখন তুষারের স্পষ্ট গাঢ় হতে লাগলো শাড়ির কুঁচি ধরে টান দিতেই চিত্রা তুষার কে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে-
-“ কেমন যেনো লাগছে।
-“ ভয় করছে?
চিত্রা হুম বলে। কন্ঠে মাদকতা নিয়ে বলল-
-“ ভয় কে জয় করতে শিখো মিসেস খাঁন। আমি বলেছিলাম আমি শুদ্ধ পুরুষ নই। এই অশুদ্ধ পুরুষ কে এবার সামলান।
কথাটা বলেই তুষার চিত্রার বুকের ভাঁজে চুমু খেলো। আস্তে আস্তে ডুব দিলো চিত্রার মাঝে। চিত্রা গ্রহণ করে নিলো তুষারের দেওয়া ভালোবাসা।
পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ নিরব। কেউ ঘুমাচ্ছে, কেউ ভালোবাসার উন্মাদনায় মেতে আছে,আর কেউ এই নির্জন রাতে একাকি বসে দুঃখবিলাস করছে। হ্যাঁ দুঃখবিলাস ই তো। এই দুঃখ না মোচন করা যায় আর না কাউকে বলে নিজেকে হালকা করা যায়। এতো কষ্ট কেনো হচ্ছে? বাস্তব টা মেনে নিতে কেনো পারছে না? এই চব্বিশ বছরের জীবনে কোনো সুখই তো পেলো না অধরা। এতো টাই দুর্ভাগ্য নিয়ে এসেছে সে?
বৃষ্টি থেমে গেছে অনেক আগেই। ছাঁদের ফ্লোর বৃষ্টির পানিতে ভিজতে একাকার। ছাঁদে থাকা দোলনা টায় বসে আছে অধরা। দৃষ্টি তার আকাশ পানে। এই দৃষ্টিতে আছে পৃথিবী কে নিয়ে একঝাঁক অভিযোগ। চোখের পলক বন্ধ করতেই টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো গাল বেয়ে। সাথে সাথে মুখ চেপে ডুকরে কেঁদে উঠলো । চোখের জল গুলোও বেহায়া । না চাইতেও কেনো বেরিয়ে আসে? ওরা বেরিয়ে আসলেই তো অধরা ভেঙে পড়ে এক যুদ্ধে হেরে যাওয়া সৈনিকের মতো।
চাইলেই কি এতো সহজে অনুভূতি মুছে ফেলা যায়? যায় না তো। এখন থেকে দুজন কে একই সাথে দেখতে হবে এই বাড়িতে। অধরা সহ্য করবে কি করে? অধরা তো দম বন্ধ হয়ে ম-রেই যাবে। অধরা কান্নারত গলায় বিরবির করে বলে-
-“ আল্লাহ ধৈর্য্য দিয়ো আমায়। আমি মানতেই পারছি না। এতোটা অবুঝ কেনো হচ্ছি আমি? আমার ভাগ্যে যখন তাকে রাখলেই না। তাহলে মন মস্তিষ্ক থেকে তাকে চিরতরে মুছে ফেলতে সাহায্য করো। এই টুকু সাহায্য করে একটু শান্তি দাও আমায়।
কথাটা বলে আবার ডুকরে কেঁদে উঠে অধরা।
-“ মিস অধরা আবার ও কাঁদছেন আপনি?
অধরা তড়িৎ গতিতে কান্না থামায়। কন্ঠের মালিক কে সে চিনে। তাই পেছনে ফিরলো না। রাতুল এগিয়ে এলো অধরার সামনে। নিজের রুম বিছানা ছাড়া রাতুলের ঘুম হয় না। আজও ব্যাতিক্রম না,ঘুম ধরছিলো না। সেজন্য ছাঁদে এসেছিল একটু পায়চারি করতে। কিন্তু হঠাৎ অধরার কান্নার আওয়াজ পেয়ে তাকায়। অধরার মাথা থেকে পা অব্দি দেখে আবার ও বলে উঠে –
-“ আজও কাঁদছেন কেনো?
অধরা হাসার চেষ্টা করে বলে-
-“ আ…আসলে আম্মুর কথা মনে পড়ছিলো তাই….
-“ মিথ্যা বলতে পারেন না আপনি, তাহলে কেনো মিথ্যা বলার চেষ্টা করছেন?
জহুরির চোখে অধরাকে দেখে কথাটা বলে রাতুল।
অধরা আমতা আমতা করে বলে-
-“ ন..না না মিথ্যা বলবো কেনো সত্যি বলছি।
-“ আপনি নিজেও জানেন আপনি মিথ্যা বলছেন অধরা।
অধরা আর কিছু বললো না। সত্যি টা তো বলা সম্ভব নয়। আর মিথ্যা টা যখন বিশ্বাস করছে না তার পরিবর্তে নিশ্চুপ থাকাই শ্রেয়। রাতুল অধরার পাশে বসে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে-
-“ তুষারের বিয়ে টা মানতে পারছেন না এখনও?
অধরা চমকে উঠলো। তড়িৎ গতিতে পাশ ফিরে তাকালো। অধরার চমকে উঠা মুখশ্রী দেখে রাতুল মুচকি হাসলো।
-“ আমি বিষয় টা আগেই আন্দাজ করতে পেরেছি অধরা যে আপনি তুষার কে পছন্দ করেন। আপনার চাহনি সব তাই বলে দিত। শিওর হলাম সেদিন যেদিন এই ছাঁদে আপনাকে একাকী বসে কাঁদতে দেখলাম। ট্রাস্ট মি সেদিন নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছিল। আপনার চোখে অন্য পুরুষের জন্য জল দেখে হৃদপিণ্ডটা কয়েকশো টুকরোয় বিভক্ত হচ্ছিল। আচ্ছা মিস অধরা আপনার তো তুষার কে পাওয়া অসম্ভব, আর আপনিই তো বলেছিলেন একা জীবন চলে না। আপনি কি আমায় আপনার সাথে পথ চলার সঙ্গী করবেন? আমি আপনার শখের পুরুষ কখনই হতে চাই না। শখের জিনিস গুলো সবসময় ধরাছোঁয়ার বাহিরে থাকে,আর আমি তো আপনার ধরাছোঁয়ার বাহিরে নই। আমি আপনার সখা হতে চাই। আপনি কি হবেন আমার সখী? ট্রাস্ট মি একটু ও কষ্ট পেতে দিব না।সবসময় আগলে রাখবো,বিনিময়ে আপনি না হয় সারাজীবন আমার পাশে থাকবেন,আর রোজ নিয়ম করে একটু খানি ভালোবাসবেন..ব্যাস পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ টা আমি।
অধরা নিশ্চুপ রইলো। রাতুলের এমন আকুতিভরা কন্ঠে বলে উঠা কথা গুলো ভীষণ পিড়া দিচ্ছে তাকে। রাতুলের ভালোবাসা গ্রহণ করার সাধ্যি তার নেই। একজনের মায়াই তো সে কাটিয়ে উঠতে পারছে না,দ্বিতীয় কারো মায়ায় কি করে পড়বে সে? রাতুল অধরার নিশ্চুপতা দেখে অসহায় চোখে তাকালো। অধরা আশেপাশে তাকিয়ে ধরা গলায় বলল-
-“ প্রেম ভালোবাসা আসলেই কঠিন জিনিস। বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সবচাইতে কঠিন জিনিস। আপনি দয়া করে আমাকে এই কঠিন জিনিস থেকে বের করুন। উনাকে ভুলতে আমায় সাহায্য করবেন? আমি উনাকে ভুলতে চাই। উনাকে যতবার মনে পড়ে ততবারই এক মরণব্যাধি যন্ত্রণায় বুকটা ছাড়খাড় হয়ে যায়। আমি এই ট্রমা থেকে বের হতে চাই। একটু কি করবেন সাহায্য আমায়?
রাতুলের মুখে হাসি ফুটলো আশ্বাস ভরা চোখে বলল-
-“ করবো সাহায্য বিনিময়ে কি আপনি আমাকে রাখবেন আপনার পাশে?
-“ খুব,ভীষণ ভাবে চেষ্টা করবো।
-“ আচ্ছা তাহলে এখন রুমে যান। কাঁদবেন না আর। আপনার ভেজা অশ্রু নয়ন জোড়া ভীষণ কষ্ট দেয় আমায়।
অধরা প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। মিনিট কয়েক চুপ থেকে বসা থেকে উঠে রাতুল কে “ আসি” বলে চলে যায়।
রাতুল অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে-
-“ অনুমতি পেয়ে গেছি,সব রকম চেষ্টা করবো আপনাকে নিজের করে পাওয়ার। আল্লাহ বলেছেন মন থেকে কিছু চাইলে আর সেটা আমার জন্য কল্যাণকর হলে সেটা আমায় তিনি নিজ দায়িত্বে দিয়ে দিবে। আই হোপ আল্লাহ আমার ভাগ্যে আপনাকে রাখবে।
মধ্যে গভীররাত্রী চিত্রা বারবার শিউরে শিউরে উঠছে। তুষারের উন্মুক্ত শরীর খামচে ধরে বলে-
-“ আপনিতো খুবই বাজে।
তুষার আরো বাজে হতে হতে বলে-
-“সত্যিই তো! আমার মতো বাজে একটা ছেলেকে মিসেস খাঁন কি করে সামলাচ্ছে এতক্ষণ ধরে?”
চলবে।