#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৪
#Raiha_Zubair_Ripte
রাস্তার ধারে ব্লাক কালারের হুডি পড়ে কানে ফোন নিয়ে ব্লাক কালারের গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে প্রেয়সীর বেলকনির দিকে তাকিয়ে আছে এক প্রেমিক পুরুষ। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় প্রেমিক পুরুষ তার প্রেয়সী কে তার দিকে পলকহীন চোখে চেয়ে থাকতে দেখে মুখের হাসি চওড়া হয়। জিহ্বা দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে নিয়ে শুধায়-
-“ কি হলো বললেন না তো রাগ কি ভেঙেছে?
-“ যদি বলি আপনার প্রেয়সীর রাগ এখনও ভাঙে নি তাহলে কি করবেন প্রেমিক পুরুষ?
-“ রাগ ভাঙানোর ব্রত করবো।
-“ তা এতো রাতে রাস্তার পাশে এভাবে দাঁড়ানো কেনো? বাসায় আসুন।
-“ বাসায় আসার অধিকার টা তো এখনও দেন নি। যখন হবে তখন আসতে বলবেন।
-“ বাসায় আসার জন্য অধিকার লাগে নাকি?
-“ অবশ্যই লাগে।
-“ শীত লাগছে না?
-“ না।
-“ বাসায় চলে যান,রাত অনেকটা হলো তো।
-” তৃষ্ণা তো মিটলো না,এখনই চলে যাব!
-“ কিসের?
-“ আপনাকে দেখে তৃষ্ণা মিটে নি আমার।
-“ তো প্রেমিক পুরুষ কি করলে তৃষ্ণা মিটবে?
-“ আপনার বেলকনি থেকে কিছু ভালোবাসা ছুঁড়ে দিন। আমি সেটা বুকপকেটে ভরে নিয়ে যাব।
মুহুর্তে ফোনের ওপাশ থেকে হাসির আওয়াজ ভেসে আসলো। চিত্রা হাসছে।
-“ হাসবেন না মিস চিত্রা।
চিত্রা হাসি থামিয়ে দিলো। কন্ঠে বিষণ্নতা এনে বলল-
-“ আমার হাসির আওয়াজ কি বাজে? নাকি হাসলে বাজে দেখায় কোনটা?
-“ আপনার হাসির শব্দ আমার বুকের বা পাশ টায় এসে বারি খায়। খুব যন্ত্রণা দেয় তখন।
-“ আচ্ছা বুঝে গেছি এখন বাসায় চলে যান কুয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে না থেকে।
-“ সত্যি চলে যাব?
-” হুমম।
তুষার মিনিট কয়েক ফোন ওভাবেই ধরে রেখে কেটে দেয়। চিত্রা তখনও ঠাই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে রয়। তুষার একবার চিত্রার দিকে তাকিয়ে পেছন ফিরে গাড়িতে উঠতে নিবে এমন সময় চিত্রা পেছন থেকে তুষার কে ডাক দেয়।
-“ বুকপকেট খালি করে বাসায় ফিরবেন?
কথাটা বলেই চিত্রা ফ্লায়িং কিস ছুঁড়ে দেয়। তুষার মৃদু হেসে ছুঁড়ে দেওয়া অদৃশ্য ফ্লায়িং কিস টা হাত বাড়িয়ে মুঠোয় বন্দী করে। মুঠো করা হাত টায় নিজের ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে সেটা হুডির পকেটে ভরে।
-“ সাবধানে যাবেন।
-“ এই মেয়ে তোমার বয়ফ্রেন্ড টা কে?
তৃষ্ণা পড়ার টেবিলে বসে মাথায় এক হাত ঠেকিয়ে বই পড়ছিলো। রাফির কথা শুনে বইয়ের থেকে মুখ সরিয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কাকে কি বলছেন?
-“ বাংলা কথা বুঝো না?
-“ বয় ফ্রেন্ড মানে ছেলে বন্ধু ?তো ছেলে বন্ধু বললেই পারতেন। বয়ফ্রেন্ড বলার দরকার কি? বাই দ্যা ওয়ে আমার ছেলে বন্ধু নেই।
-“ চুপ। চাচি যে বললো তুমি প্রেম করে বেড়াচ্ছো।
-“ তো আপনার চাচি কে গিয়ে জিজ্ঞেস করুন ছেলেটা কে।
-“ তুমিই বলো ছেলেটা কে?
-“ আমি তো জানি না।
-“ মিথ্যা বলছো কেনো?
তৃষ্ণার মুখ জুড়ে এবার রাগ উড়ে আসলো। কিসের প্যাচাল পারছে তখন থেকে। কথা বলার কোনো ওয়ে পাচ্ছে না দেখে কি এসব হযবরল বলে আমার মাথা হযবরল করতে চাচ্ছে?
-“ আপনার কাজ নেই ভাই?
-“ হুমম আছে। তোমার বয়ফ্রেন্ড কে খুঁজার কাজ এখন।
তৃষ্ণা বিরক্ত হয়ে শব্দ করে বইটা বন্ধ করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আমার শ্বাশুড়ির পেটে আছে সে। যান গিয়ে খুঁজে নিয়ে আসেন।
-“ হ্যাঁ তা না হয় খুঁজবো…. কথাটা বলার পরই রাফির টনক নড়ে। “ মজা করছো আমার সাথে?
-“ ওমা মজা কেনো করবো?
-“ রিলেশন করো না কারো সাথে?
-“ না।
তৃষ্ণার সোজাসাপ্টা জবাব শুনে রাফি ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কেনো?
-“ কেনো আবার কি?
-“ রিলেশন কেনো করো না?
-“ কারন আমি যারে পছন্দ করি সে অন্য কাউকে পছন্দ করে তাই।
-“ সত্যি?
-“ হ।
-“ কষ্ট হয় তখন?
তৃষ্ণা তপ্ত শ্বাস ফেলে। যারে ভালোবাসে তার কথাই তারে বলছে।
-“ কলিজা ফেটে যায় তখন।
রাফি বিরবির করে বলে –
-“ যাক ফেটে আমি জোরা লাগিয়ে নিব সমস্যা নাই।
-“ কিছু বললেন?
-“ না,পড়াশোনায় মনোযোগ দাও,ওসব হারাম ভালোবাসার জন্য কষ্ট পেয়ো না। তোমার জন্য হালাল অপেক্ষা করছে।
তৃষ্ণা সরু চোখে তাকায় রাফির দিকে। রাফি হাসি উপহার দিয়ে চলে যায়।
—————————-
ক্লাস রুমে মনমরা হয়ে বসে আছে তৃষ্ণা । পাশেই চিত্রা তৃষ্ণা কে পর্যবেক্ষণ করে চলছে।
-“ কিরে এমন মন মরা হয়ে বসে আছিস কেনো,কি হইছে?
-“ আমার জামাই ম’রছে তাই এমন মনমরা হয়ে বসে আছি। আর কোনো প্রশ্ন?
-“ আবার ছ্যাকা খাইছিস?
-“ না।
-“ তাইলে? বলিস নাই তোর কাজিন কে? আচ্ছা তোর কোন কাজিন রে তুই ভালোবাসিস? ছেলেটা আমার দেবর নাকি ভাসুর?
-“ দেবর হয় সম্পর্কে তোর। আমার চাচার ছেলে।
-“ তোর চাচি কে আনলি না কেনো সেদিন? তাহলে মহিলা টাকে পটিয়ে তোর আর ঐ ছেলের বিয়ে দিয়ে দিতাম।
-“ চাচি বেঁচে নেই। মা-রা গেছে বছর পাঁচেক হলো। ক্যান্সার হয়েছিল।
-“ ওহ্ সরি।
-“ তাড়াতাড়ি আমাদের বাড়িতে চলে আয় বোইন।
-“ গাধির ঘরে গাঁধি আমায় না বলে তোর ভাইকে বল।
-“ আচ্ছা আজ বলবো মাকে। আর কাল তো দাদান আসবে।
-“ কোথা থেকে?
-“ হজ্জ থেকে। তারা আসলেই মেবি বিয়ের ডেট ফিক্সড হবে তোদের।
-“ আচ্ছা চল এবার বাসায় যাওয়া যাক। ক্লাস করতে ইচ্ছে করছে না।
চিত্রার কথায় তৃষ্ণা সায় দেয়। দুই বান্ধবী ক্লাস পালিয়ে বেরিয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে থাকে। টুকটাক কথাও বলতে থাকে। কথা বলার একপর্যায়ে তৃষ্ণা সামনে তাকাতেই দেখে রিয়া আর অচেনা এক ছেলে হাত ধরে হাঁটছে। ছেলেটা কিছু একটা বলছে আর রিয়া হেঁসে চলছে তো কখনো ছেলেটার কাঁধে মাথা রাখছে। ফটাফট ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে তৃষ্ণা কয়েকটা ছবি তুলে রিয়ার।
রাফি কে সাবধান করা লাগবে। ভালোবাসার মানুষ টিকে না পাক জীবনে তাই বলে জেনেশুনে ক্ষতি তো হতে দিতে পারে না।
চিত্রা নিজের বাসার মোড়ের দিকে আসতেই তৃষ্ণার থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। তৃষ্ণা ফোনটার দিকে তাকায় বারবার। তার রাফি ভাই রিয়ার সত্যি টা জানলে কিভাবে রিয়াক্ট করবে? কষ্ট পাবে নিশ্চয়ই খুব যেভাবে সে পায়।
——————–
-“ ভাই ওর তো শ্বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে কি করবো এবার?
লিমনের কথা শুনে তুষার বলে উঠে –
-“ বাংলোর পেছনে কবর দিয়ে দাও। রাতুল কোথায়?
-“ ভাই তো নেই, আপনার বাসার উদ্দেশ্যে চলে গেছে।
-“ ওহ্ আচ্ছা, তোমাকে যে কাজ দেওয়া হয়েছে সেটা যেনো ফুলফিল হয়।
#চলবে?
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৫( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripte
-“ জ্বি কাকে চাই?
দরজায় কলিং বেল চেপে দাঁড়িয়ে ছিলো রাতুল। হঠাৎ দরজা খুলেই এমন প্রশ্ন শুনে ভেতর পানে তাকায়। মুহূর্তে দেখতে পায় অতি সাদামাটা শুভ্র এক রমণী কে। রমণী টাকে সে চিনে,একটু ভালো করেই চিনে। নিজের দৃষ্টি সংযত করে রাতুল জবাব দেয়-
-“ আমি রাতুল। তুষারের বন্ধু।
অধরা দরজা ছেড়ে তড়িঘড়ি করে সরে দাঁড়ায় রাতুল কে ভেতরে ঢুকতে দেওয়ার জন্য। রাতুল একপলক আবার অধরার দিকে চেয়ে ভেতরে ঢুকে। সোফায় বসে তুষারকে মেসেজ দেয়। অধরা ওড়নার কোনা হাতে প্যাচাতে প্যাচাতে বলে-
-“ চা আনবো নাকি কফি?
রাতুল নড়েচড়ে বসে। হালকা কেশে বলে-
– কফি উইদাউট সুগার।
অধরা রান্না ঘরে চলে যায়। সুগার ছাড়া কফি বানাতে শুরু করে। তুষার রাতুলের মেসেজ পেয়েই নিচে নেমে আসে। রাতুলের পাশে বসে বলে-
-“ কাজ কতদূর এতিমখানার?
-“ গাথনির কাজ ধরা হয়েছে।
-“ ইকবালের লোক বাঁধা দিয়েছিল?
-“ এখনও অব্দি দেয় নি।
-“ বাঁধা দেওয়ার মত দুঃসাহস আর দেখানোর মত ভুল সে করবে না।
-“ মাস কয়েক পর নির্বাচন মাথায় আছে তো?
-“ হুম।
-“ বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে। হুটহাট একে ওকে ধরে এনে ধুম ধাম মে’রে ফেলিস না।
-“ আমার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে ছেড়ে দিব না। আমি নিজে থেকে যাই না ওদের কাছে, ওরা নিজেই মৃ’ত্যুর কাছে আসে।
-“ আপনাদের কফি।
অধরার কথার আওয়াজে চুপ হয়ে যায় তুষার,রাতুল। তুষার কফির মগ টা হাতে নিয়ে বলে-
-“ রুমে যা এখন।
অধরা বাধ্য মেয়ের মতো চলে যায়। রাতুল কফি চুমুক দেওয়ার সময় একবার অধরার যাওয়ার পানে তাকায়।
-“ কাল তুই একবার এতিম খানার ওখানে যাস তুষার। রহমান চাচা যেতে বলেছেন।
-“ হ্যাঁ যাব। আজ রাতের ফ্লাইটে দাদাজান আর দাদিজান আসছে।
-“ ওহ্ ভালো খবর।
দুপুরে আজকাল শীতের মধ্যে ও তীব্র গরম পড়ে। হেঁটে আসা হলে শরীর ঘেমে যায়। গরম আসছে তার সিম্পল গরম ভাব এখনই দিয়ে দিচ্ছে সূর্য্যি মামা। তৃষ্ণা ঘামতে ঘামতে বাড়ি ফিরে। মাথায় রয়েছে হাজার ও চিন্তা ভাবনা। বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে ঢুকে পড়ে। কাঁধের ব্যাগ টা বিছানায় রেখে আলমারি থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বের হয়। বেলকনি তে গিয়ে ভেজা জামা কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে রুমে আসে।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে মনে মনে ভাবে-“ ভালোই হয়েছে, আমাকে ভালোবাসলে কি এখন তুই রাফি ছ্যাকা টা খেতি বল? খেতি না তো। কথায় বলে না ভালো জিনিস মানুষের চোখে পড়ে না,সেই অবস্থা হলো তোর। হে আমাকে ভালোবাসলে কোনো ছেলের হাত ধরে ঢলাঢলি করা তো দূর চেয়েও তাকাতাম না। কতটা লয়্যাল আমি জানিস? বেডা তুই ব্যাতিত আমি কোনো ছেলেকে কখনও ঐ নজরে দেখিই নি। আল্লাহ ছাড় দেয় ছেড়ে দেয় না।আমাকে কষ্ট দেওয়ার ফল এবার তুই পাবি।
কথাটা বলে নিজেকে প্রিপেয়ার্ড করে। যা সে দেখেনি সেটাও বানিয়ে বানিয়ে বলবে। মাথায় ওড়না টা দিয়ে সোজা রাফির ঘরের দিকে ছুটে তৃষ্ণা।
-“ রাফি ভাই আপনার তো সংসার ভাঙলো বলে।
রাফি বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছিল। তৃষ্ণার এমন কথা শুনে ফোনের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দরজার পানে দেয়। রাফি শোয়া থেকে উঠে বসে বলে-
-“ মানে?
তৃষ্ণা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে-
-“ মানে আপনার জন্য চমক আছে। আপনি জানেন আজ আমি কি দেখেছি?
রাফি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কি দেখছো?
– “ ওয়েট দেখাচ্ছি।
কথাটা বলে তৃষ্ণা ফোনের গ্যালারি থেকে রিয়া আর রায়ানের পিক টা বের করে বলে-
-“ জানি কষ্ট পাবেন ভাই,রাগ হবে কিন্তু সত্যি তো মানতেই হবে। আপনাকে ঠকানো হচ্ছে যা আপনি ডিজার্ভ করেন,
রাফি তৃষ্ণার পানে তাকায়। তৃষ্ণা দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে বলে-
-“ মিস্টেক আপনি মোটেও এটা ডিজার্ভ করেন না।
রাফি তৃষ্ণার হাত থেকে ফোন টা নেয়। তৃষ্ণা সেটা দেখে মনে মনে হেসে বাহিরে দুঃখি দুঃখি ভাব করে বলে-
-“ আমি মোটেও আপনাকে এটা দেখিয়ে হার্ট করতে চাই নি। কিন্তু কি করবো আপনার অগোচরে রিয়া আপু অন্য একটা ছেলের সাথে এমন মেলামেশা করছে ভাবা যায়?
রাফি পিক টা জুম করে দেখে বলে-
-“ আরে এটা তো রায়ান।
তৃষ্ণা রকেটের গতিতে জিজ্ঞেস করে-
-“ আপনি চিনেন এই ছেলেটাকে?
-“ হ্যাঁ।
,-“ দেখছেন ওরা দুজনই কিভাবে আপনায় ঠকালো। এরজন্য ই ফ্রেন্ডের সাথে রিলেশন করতে হয় না। আপনার সাথেও করছে আবার ঐ লোকের সাথেও করছে।
রাফি তৃষ্ণার কথার একটার ও মানে বুঝলো না। কি করে বেড়াচ্ছে, কে কাকে ঠকাচ্ছে?
-“ তখন থেকে কি ভুলভাল বকে যাচ্ছ?
-“ আমি একটুও ভুলভাল বলছি না ভাই। সত্যি টা তুলে ধরতে চাচ্ছি। চোখ কান খোলা রাখুন। পরে কিন্তু পস্তাবেন।
-“ এই মেয়ে চড়িয়ে গাল লাল করবো,কিসব বলছো। খুলে বলো আর তা না হলে আমার রুম থেকে বিদায় হও।
তৃষ্ণা রাফিকে ভেঙচি কেটে বলে-
-” আমি কি আপনার রুমে থাকতে আসছি নাকি। আপনার গার্লফ্রেন্ড যে অন্য বেডার লগে ভেগে যাচ্ছে সেদিকে কি খেয়াল রাখেন?
-“ আমার গার্লফ্রেন্ড কে?
-” আপনাকে আমি এখন কার পিক দেখালাম?
-” রিয়ার।
-“ তাহলে কি দাঁড়াল?
রাফি বিষয় টা বুঝার চেষ্টা করলো। বিষয়টা বুঝতেই তার মুখের ভাবভঙ্গি পরিবর্তন হল। মুখ থেকে সুস্পষ্ট হলো–“ হোয়াট…. ইডিয়ট রিয়া আমার গার্লফ্রেন্ড?
-“ আমি জানি তো আপনার গার্লফ্রেন্ড কিন্তু মেয়েটা আপনি থাকাকালীন ঐ ছেলের সাথে এমন ঢলাঢলি করে ক্যান?
রাফি দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ কারন ওর হবু হাসবেন্ড ও তাই।
কথাটা তৃষ্ণার কর্ণকুহর হতেই তৃষ্ণা বিস্ময়ের সাথে বলে-
-“ কিহ! আপনাকে ছেড়ে ঐ ছেলেকে বিয়ে করছে?
-“ বিয়েটা তো রায়ানের সাথেই হবার কথা।
-“ কেনো ভাই আপনি কি ঐ ছেলের থেকে কোনো অংশে কম নাকি? ঐ ছেলের থেকে তো আপনি বহুত সুন্দর।
-“ তাতে রিয়ার কি? ও ওর বয়ফ্রেন্ড কে বিয়ে করছে। সেখানে আমি সুন্দর নাকি অসুন্দর ও সেটা দেখবে কেনো?
-“ আপনি রিয়া আপুর বয়ফ্রেন্ড না?
-“ না জাস্ট ফ্রেন্ড।
তৃষ্ণা কথাটা শুনে রিয়াক্ট করা ভুলে গেছে। ওরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড না জাস্ট ফ্রেন্ড। আর আজকাল জাস্ট ফ্রেন্ড নিয়ে ও তো কতকিছু বের হয়। রাফি তৃষ্ণা কে চুপ থাকতে বলে উঠে-
-“ আর কিছু বলার বাকি আছে আমার মাথা খারাপ করার জন্য?
তৃষ্ণা রাফির হাত থেকে নিজের ফোন টা নিয়ে নেয়।
-“ আপনারা জাস্ট ফ্রেন্ড?
-“ হুম।
-“ কোনো কিছু নেই আপনাদের মধ্যে?
-“ থাকবে না কেনো আছে?
,-“ বন্ধুত্ব।
ওহ্ ভালো। কথাটা বলে তৃষ্ণা চলে আসে রাফির রুম থেকে। রাফি তৃষ্ণার যাওয়ার পানে তাকিয়ে ফোন টিপতে শুরু করে।
এয়ারপোর্টে বাহিরে মুখে মাক্স পড়ে ব্লাক হুডি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে তুষার। অপেক্ষা করছে তার দাদা-দাদির জন্য। তরিকুল খাঁন তার প্রানপ্রিয় স্ত্রী তাসলিমা খাঁনের হাত শক্ত করে ধরে এয়ারপোর্ট থেকে বের হচ্ছে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে তুষার দৃশ্য টা দেখলো। একদিন সে আর চিত্রা ও এভাবে হজ্জ করে ফিরবে। মুহুর্ত টা কল্পনা করতেই মুখে হাসিরা এসে হানা দিলো। ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে দাদা আর দাদির দিকে এগিয়ে গেলো। তরিকুল খাঁন কে জড়িয়ে ধরে সালাম দেয়। তরিকুল খাঁন সালামের জবাব দেয়। তুষার তরিকুল খাঁন কে ছেড়ে দিয়ে তাসলিমা খাঁন কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ কেমন আছেন দাদিজান? হজ্জ যাত্রা কেমন হলো?
-“ আলহামদুলিল্লাহ দাদু ভাই সব ভালো ছিলো।
-“ তো চলুন বাসায় যাওয়া যাক। সবাই অপেক্ষা করছে আপনাদের জন্য।
#চলবে?
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১৬( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ মিস চিত্রা দাদাজান আর দাদিজান এসেছে। আপনাকে আজ তারা দেখতে যাবে। হয়তো ডেট ও ফিক্সড করে ফেলবে। আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?
তুষারের বলা কথাটা ফোনের এপাশে থাকা রমণীর মনে অজানা এক অন্যরকম অনুভূতির বীজ বপন হলো। ডেট ফিক্সড করা মানেই তো বিয়ে। অতঃপর তাড়া পাশাপাশি এক সাথে মৃ’ত্যুর আগ অব্দি থাকবে। তুষার চিত্রার থেকে আশা স্বরূপ উত্তর না পেয়ে ফের শুধায়-
-“ আপনার কি আপত্তি থাকবে? তাহলে সবাই কে যেতে মানা করবো।
চিত্রা অনুভূতি গুলো সাইডে রেখে কম্পিত গলায় বলে-
-“ আমার আপত্তি নেই।
তুষার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
-“ তৈরি হয়ে থাকবেন।
-“ আপনি আসবেন?
-“ চেষ্টা করবো যাওয়ার।
-“ ইচ্ছে নেই বুঝি আসার?
-“ আছে ভীষণ, আপনাকে শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখার ভীষণ।
-“ তো প্রেমিক পুরুষ কাজকর্ম সব আজকের জন্য এক সাইডে ফেলে চলে আসুন,অপেক্ষা করাবেন না?
-“ তুষার রা অপেক্ষা করায় না মিস,অপেক্ষা করে।
-“ কিন্তু বিষয় টা তো বরাবরের ন্যায় উল্টোই হয়। আমি অপেক্ষা করি আপনার জন্য।
-“ বিয়ের পর থেকে বরাবরের ন্যায় আমিই করবো।
-“ কথা দিচ্ছেন?
-“ আস্ত আমি টাকেই তো দিয়ে দিয়েছি। সেখানে কথা দেওয়ার কথা বলছেন।
-“ শাড়ি পড়তেই হবে?
-“ পড়লে তো মন্দ হয় না।
-“ আচ্ছা বেশ পড়বো। আপনার জন্য শুধু। ভালো ভালো কমপ্লিমেন্ট করবেন।
-“ যথা আজ্ঞা বেগম সাহেবা।
-“ চিত্রা কই তুই এদিকে আয় তাড়াতাড়ি।
চয়নিকা বেগমের ডাক শুনে চিত্রা তুষার কে বলে বলে-
-“ আম্মু ডাকছে পরে কথা হবে সাথে দেখাও।
তুষার ফোন কান থেকে নামালো। তরিকুল খাঁন তুষারের রুমে ঢুকে।
-“ দাদাজান আপনারা আজ যেতে পারেন।
তরিকুল খাঁন তুষারের কাঁধে হাত দিয়ে বলে-
-“ ঠিক আছে,কথাবার্তা ফাইনাল করে আসবো?
-“ হুমম।
-“ নির্বাচনের আগেই নাতবউ ঘরে আনতে চাই। এবার বড়সড় হাঙ্গামা হতে চলছে।
-“ ভয় পাচ্ছেন?
-“ ভয় পাওয়াই কথা কিছুটা। হালিম সরকার আর আকবর এক জোট হয়েছে যে।
-“ রিলাক্স থাকুন।
-“ কি হয়েছে মা ডাকছো কেনো?
-“ ও বাড়ি থেকে ওরা আসবে আজ। কোনো রকম বাহানা না করে রেডি হবি সময় মতো।
-“ ঠিক আছে।
চয়নিকা বেগম তপ্ত শ্বাস ফেললেন। মেয়ের তার বাধ্য হয়ে গেছে। যখন যা বলছে সব শোনার চেষ্টা করছে। বিষয় টা মন্দ লাগছে না। সাহেল আহমেদ বাহির থেকে খাবার অর্ডার দিয়েছে। স্ত্রীর পক্ষে একার এতো জনের জন্য এতো আইটেমের খাবার বানানো পসিবল না। চয়নিকা বেগম আর কাজের বুয়া মিলে বসার ঘর টা পরিষ্কার করে।
চিত্রা রুমে এসে সবুজ কালারের একটা জামদানী শাড়ি বের করে। শাড়ি টা কিনেছিল বস্ত্র শিল্প মেলা থেকে। কেনার পর আর পড়া হয় নি,প্যাকেট সমেত আলমারি তে তুলে রেখেছিলো। আজ পড়বে পছন্দের শাড়ি টা পছন্দের মানুষের জন্য।
শাড়ি টা পড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে হালকা সেজে নেয়। চুল গুলো হাত খোপা করে তাদে বেলি ফুলের মালা গুঁজে দেয়। হাতে সবুজ আর কালো রঙের কাঁচের চুড়ি পড়ে। গলায় সবুজ কালারের একটা সীতা হার। চোখে কাজল, ঠোঁটে লিপস্টিক, কপালে টিপ। শেষ তার তৈরি হওয়া।
-“ অধরা আপু তুমি এখনও রেডি হওনি কেনো?
তৃষ্ণা অধরা কে ডাকতে এসে দেখে অধরা বিছানায় পূর্বের ন্যায় শুয়ে আছে।
-“ শরীর টা ভালো লাগছে না। তোরা চলে যা।
তৃষ্ণা তড়িঘড়ি করে অধরার সামনে দাঁড়ায় কপালে হাত বুলিয়ে বলে-
-“ জ্বর এসেছে নাকি?
-“ না আসে নি। মাথা ব্যাথা করছে।
-“ যেতে পারবে না?
-“ না বোন, তোরা চলে যা।
-“ মা তো তোমায় নিয়ে যেতে বলছে।
-“ মামি কে বলিস আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর তাছাড়া সেখানে বড়রা কথা বলবে আমি গিয়ে কি করবো।
-“ তবুও..
-“ তোরা যা বোন।
তৃষ্ণা আর কথা বাড়ালো না,অধরা কে দেখেই বুঝা যাচ্ছে ওর শরীর তেমন একটা ভালো না। নিচে নেমে তানিয়া বেগম কে জানালো বিষয় টা। তানিয়া বেগম আর জোর করে নি। তামিম খাঁন, রাফি,চয়নিকা বেগম,তৃষ্ণা, তরিকুল খাঁন,তাসলিমা খাঁন,সামির খাঁন, বেরিয়ে যায় চিত্রা দের বাড়ির উদ্দেশ্যে।
সাহেল আর চয়নিকা বেগম তুষারের বাড়ির লোকদের আপ্যায়ন করায় ব্যাস্ত। তৃষ্ণা সেই সুযোগে চিত্রার রুমে চলে যায়। চিত্রা খাটে বসে ফোন স্ক্রোল করছে। তৃষ্ণা কে রুমে ঢুকতে দেখে বলে-
-“ দেখতো আমায় কেমন লাগছে?
-“ বাহ মাশা-আল্লাহ ভাবিজান জোশ লাগছে।
চিত্রা হেসে বলে-
-“ তোর ভাই হার্ট অ্যাটাক করবে না?
তৃষ্ণা চিত্রার পাশে বসে বলে-
-“ ভাইয়া থাকলে তো হার্ট অ্যাটাক করবে।
হাসি গায়েব হয়ে গেলো চিত্রার।
-“ উনি আসেন নি?
-“ না।
-“ কেনো?
-“ আসার জন্য রেডি হয়েছিল কিন্তু পাকিজা এতিমখানার কাজ ধরেছে না? সেখানে কি একটা সমস্যা হয়েছে সেজন্য গেছে।
চিত্রার মুহূর্তে রাগ উঠলো। রাগ টা কমানোর চেষ্টা করে বলে-
-“ তোর ভাই কি বিয়ের পর ও এমন করবে?
-“ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি না৷ কতবড় দায়িত্ব আমার ভাইয়ের কাঁধে, ভাইয়ের কত জায়গায় ছুটাছুটি করতে হয়। আমার ভাইটার উপর রাগ দেখাবি না,সাপোর্ট দিবি।
-“ ঘর থেকে বের হতে দিব না তোর ভাই কে। ঠ্যাং ভে’ঙে রেখে দিব।
-“ চপ বজ্জাত মেয়ে।
-“ যতোই যাই বলিস না কেনো। তোর ভাইকে ফোন দিয়ে বল সে সামনে না থাকলে আমি তোর ফ্যামিলির কারোর সামনেই যাব না।
-“ মজা করিস না চল।
-“ আমি মজা করছি না সিরিয়াসলি বলছি তোর ভাই ওখানে না থাকলে আমি যাবো না।
-“ আরে ভাই কাজ শেষ হলেই চলে আসবে।
-“ তখনই যাব।
তৃষ্ণার ইচ্ছে করলে চিত্রা কে ঠাটিয়ে চড় দিতে। তার ভাইয়ের জীবনটা তচনচ করে ফেলবে এ মেয়ে। তৃষ্ণা সাইডে গিয়ে তুষারের নম্বরে কল করে। তুষার হসপিটালে বসে আছে। এতিমখানায় কাজ করা কালিন এক মিস্ত্রির হাতের উপর ইট পড়ে হাত থেঁতলে গেছে। খবর টা পেয়েই তুষার ছুটে আসে। লোকটাকে নিয়ে এনাম মেডিকেলে ভর্তি করায়। তুষার ফোনটা রিসিভ করে।
-“ ভাই তুমি না আসলে চিত্রা বাবা দাদাদের সামনে যাবে না বলে দিছে।
-“ আসছি আমি।
কথাটা বলেই তুষার ফোন কেটে দেয়। তৃষ্ণা চিত্রার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আসতেছে ভাই,এবার হ্যাপি?
চিত্রা গাল ভর্তি হাসি নিয়ে বলে-
-“ অননননেক হ্যাপি।
তুষার হসপিটালের বিল পে করে লিমন কে সব দায়িত্ব দিয়ে বেরিয়ে আসে হসপিটাল থেকে। গাড়িতে উঠে সোজা ড্রাইভ করে চিত্রা দের বাসায় আসে। মেয়েটাকে অলওয়েজ সে অপেক্ষা করায়। ভেতর বাহির দুটোকেই তার সমান ভাবে ম্যানেজ করা শিখতে হবে।
চিত্রা রুমের জানালা দিয়ে তুষার কে দেখলো। মূলত গাড়ির শব্দ পেয়েই জানালার সামনে দাঁড়িয়েছে। লোকটার শরীরে সাদা কালার পাঞ্জাবি। ফাস্ট টাইম লোকটাকে ব্লাকের বাহিরে অন্য রঙ পড়তে দেখলো। অসম্ভব হ্যান্ডসাম লাগছে। হাতে ব্লাক ঘড়ি ঘন চুল গুলো সুন্দর ভাবে পরিপাটি, চোখে সানগ্লাস। আহ একদম নজর কাড়া লুক। চিত্রার ইচ্ছে করলো চেয়ে থাকতে কিন্তু তৃষ্ণার জন্য পারলো না। তৃষ্ণা চিত্রা কে টেনে মাথায় ঘোমটা দিয়ে বাহিরে নিয়ে গেলো।
তুষার সবেই সোফায় বসেছে চোখ ঘুরাতেই সামনে তাকাতে থমকে যায়। সবুজ কালারের জামদানী শাড়িতে পরিহিত রমণী কে দেখে। রাফি তুষারের হাত চেপে ধরে বলে-
-“ আরে ব্রো এমন ভাবে তাকিয়ে আছো কেনো৷ একটু তো লজ্জা আনো।
তুষার রাগান্বিত হয়ে তাকালো রাফির পানে। রাফি চুপ হয়ে গেলো। চিত্রা কে সোফায় এনে বসায় তৃষ্ণা। চিত্রা সবাইকে সালাম দেয়। তাসলিমা খাঁন চিত্রার মুখের ঘোমটা সরিয়ে থুতনিতে হাত দিয়ে উঁচু করে বলে-
-“ বাহ মাশা-আল্লাহ আমার নাতবউ টা।
চিত্রা লজ্জা পেলো। তরিকুল খাঁন চিত্রার নাম ও কিসে পড়ে তা জিজ্ঞেস করলো। চিত্রা বিনয়ের সাথে সব বললো। তামিম খাঁন স্ত্রীর দিকে তাকালেন। তানিয়া বেগম হ্যান্ড ব্যাগ থেকে দুটো বক্স বের করেন। একটা বক্স তাসলিমা খাঁন নেয়। বক্স টা খুলে, বক্সে থাকা বালা দুটো নিয়ে চিত্রার সামনে ধরে বলে-
-“ দিদি ভাই হাত টা দাও তো।
চিত্রা হাত বাড়িয়ে দিলো। তাসলিমা খাঁন বালা দুটো চিত্রার হাতে পড়িয়ে দিলো।
-“ বাহ সুন্দর খাপেখাপে লেগেছে বালা দুটো।
তামিম খাঁন আংটির বক্স টা তুষারের হাতে দিয়ে বলে-
-“ পড়িয়ে দাও চিত্রার হাতে।
তুষার আংটি টা নিয়ে চিত্রার হাতে পড়িয়ে দেয়। চিত্রা ভেবেছিল তুষার হয়তো সবার অগোচরে তার প্রশংসা করবে, কিন্তু না চুপচাপ আংটি টা চিত্রার বা হাতের অনামিকা আঙুলে পড়িয়ে দিয়েই হাত ছেড়ে দিছে।
সাহেল আহমেদ চিত্রার হাতে একটা আংটি দিয়ে বলে তুষারের হাতে পড়িয়ে দিতে। চিত্রা আংটি টা হাতে নিয়ে তুষারের দিকে হাত বাড়ায়। তুষার তার হাত টা বাড়িয়ে দেয়। চিত্রা আংটি টা তুষারের হাতে পড়িয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ অর্ধেক নিজের নাম বসিয়ে দিলাম আপনার জীবনে। কয়েক দিন পর পাকাপোক্ত ভাবে বসিয়ে দিব।
তুষার নৈঃশব্দ্যে হাসলো। তরিকুল খাঁন তুষার আর চিত্রা কে একান্তে কথা বলার জন্য বলল। চিত্রা এটারই অপেক্ষায় ছিলো। তরিকুল খাঁন বলা মাত্রই চিত্রা তুষারের দিকে তাকায়। তুষার বসা থেকে উঠতেই নিজেও বসা থেকে উঠে। সাহেল আহমেদ মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ছাঁদে চলে যা।
চিত্রা আর তুষার ছাঁদে চলে আসে। ছাঁদে আসতেই চিত্রা কোমরে হাত গুঁজে বলে-
-“ এই তাকান আমার দিকে।
তুষার চিত্রার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ হুমম তাকালাম।
-“ কমপ্লিমেন্ট কই?
-“ উমমম আপনাকে নিয়ে কমপ্লিমেন্ট করার জন্য আমার ডিকশনারি তে কোনো ওয়ার্ড খুঁজে পাচ্ছি না, এটা কি আমার দোষ বলুন?
-“ মোটেও আপনার দোষ না আমারই দোষ,আপনার কাছে কমপ্লিমেন্ট আশা করা।
-“ আপনাকে এক বাক্যে বলি ❝ পূর্ণতা ❞
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো।
-“ এতো নাম থাকতে পূর্ণতা কেনো?
-“ কারণ আমার অপূর্ণতা গুলো আপনি পূর্ণতা করে নিয়ে আসছেন আমার জীবনে।
-“ মানে?
-“ বুঝবেন না। সময় হোক বুঝে যাবেন।
-“ ব্রো হলো কথা বলা?
রাফি ছাঁদে উঠতে উঠতে কথাটা বলে। চিত্রা রাফির দিকে তাকিয়ে তুষার কে ফিসফিস করে বলে-
-“ এই ছেলেটা আপনার কি হয়?
-“ আমার কাজিন। সামির চাচার ছেলে।
-“ আপনার বাবা রা কয় ভাই বোন?
-“ দুই ভাই এক বোন। ফুপি মা-রা গেছে অনেক আগেই। অধরা কে দেখেছেন না? ও ফুপির মেয়ে।
-“ তৃষ্ণা কাকে ভালোবাসে?
-“ রাফিকে।
রাফি এগিয়ে আসছিলো চিত্রা দের দিকে। চিত্রা তুষারের কথাটা শুনে রাফির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ এই আপনি এতো পঁচা কেনো?
রাফি চিত্রার কথা শুনে হতবিহ্বল হয়।
-“ কি করছি আমি ভাবি?
-“ কি করেন নি মানে কি? আপনাকে দেখে তো ভালোই মনে হয়,কিন্তু আপনি এতো বডের হাড্ডি কেনো?
-“ আমি বদের হাড্ডি? আমি কি আপনাদের রোমান্টিক মোমেন্টে এসে পড়েছি বিধায় এসব ট্যাগ দিচ্ছেন?
-“ না। আমাকে কি পাগল মনে হয়।
-“ কিছুটা তেমনই মনে হচ্ছে (বিরবির করে বলে) ভাবি করছি টা কি সেটা বলেন।
-“ আমার ফ্রেন্ড কে কাঁদান কেনো?
-“ আপনার কোন ফ্রেন্ড কে আমি কাঁদিয়েছি?
-“ যে আপনাকে ভালোবাসে। আর আপনি কি না তার ভালোবাসা না বুঝে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান।
-“ কে আমাকে ভালোবাসে। আর আমি কার ভালোবাসা না বুঝে অন্য মেয়ে নিয়ে ঘুরি।
-“ আমার ননদের।
-“ আবার ননদ বলছেন কেনো? আপনার ননদ তো তৃষ্ণা।
কথাটা বলেই রাফি নিশ্চুপ হয়ে যায়।
-“ হ্যাঁ তৃষ্ণাই,তৃষ্ণার কথাই বলছি।
#চলবে?