#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১০( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ)
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ দেখলেন তো হলো টা কি? ছুরি টা যদি হাতে না লেগে সোজা পেটে গিয়ে লাগতো তখন কি হতো? আর আপনাকে কে বলছে আমাকে বাঁচাতে? ছুরি টা এসে লাগলে আমার শরীরেই লাগতো, হিরো গিরি করার কি খুব দরকার ছিলো? যদি বড়সড় কিছু হত তখন কি হত?
তুষার হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। চিত্রা একাই বকবক করছে। তুষার সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস চিত্রার সামনে ধরে বলে-
-“ আগে দম নিন,ক্লান্ত হয়ে গেছেন পানি খান।
চিত্রা চুপ হয়ে যায়। পানির গ্লাস টা সাইড টেবিলে রেখে দেয়। তুষার কে ঐ সময় ওমন র’ক্তপাত অবস্থায় দেখে প্রচুর ভয় পেয়ে গিয়েছিলো। বুকের বা পাশটায় কেমন চিনচিনে ব্যথা করছিলো। নিজেকে কোনো রকম সামলে তুষারের কাছে দৌড়ে চলে আসে৷ তুষার হাত থেকে ছুরি টা ফেলে দিয়ে হাত চেপে র’ক্ত বন্ধ করতে ব্যাস্ত। চিত্রা পড়নের ওড়নার শেষ প্রান্ত থেকে অংশ টেনে ছিঁড়ে তুষারের হাত বেঁধে দেয়।
অতিরিক্ত ভয়ে চিত্রার মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছিলো না। শুধু সারা শরীর ভয়ে বারংবার কেঁপে উঠছিলো। ওড়নার অংশ টা তুষারের হাতে বেঁধে দিতেই তুষার চিত্রার ভয়ার্তক কাঁপা শরীর টা দেখে চিত্রার মাথা টা বুকের সাথে চেপে ধরে।
-“ ভয় পাচ্ছেন কেনো মিস চিত্রা? ভয় পাবেন না। আছি তো আমি,কিচ্ছু হবে না আপনার।
চিত্রার এবার ডুকরে কেঁদে ফেলতে ইচ্ছে করলো। সে তো নিজেকে নিয়ে কখনও ভয় পায় না। তার নিজের জন্য লোকটা আঘাতপ্রাপ্ত হলো। চিত্রা তুষারের বুক থেকে মাথা সরিয়ে আনে। চোখ থেকে বেয়ে পড়া জল টুকু আড়ালে মুছে নিয়ে বলে-
-“ এখানে আর এক মুহুর্ত ও নয়,চলুন হসপিটালে। ডক্টর দেখাতে হবে। খুব ব্যাথা করছে তাই না? ইশ কতখানি কে’টে গেছে, জ্বলছে খুব?
-“ হ্যাঁ জ্বলছে খুব। তবে হাতে নয় এই যে এইখান টায়।
চিত্রা তুষারের হাত থেকে মুখের দিকে তাকাতেই দেখে তুষার বুকের বা পাশে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে। চিত্রা বুকে হাত দিয়ে বলে-
-“ এখানেও কে’টেছে? দেখান না আমায়।
-“ এই কাটা দেখা যাবে না মিস। আপনার চোখের জলের কারনে জ্বলছে এখান টায়।
টুপ করে জল গড়িয়ে পড়লো চিত্রার গাল বেয়ে।
-“ ঐ যে দেখুন আবার টুপ করে পড়ছে আর যন্ত্রণা টা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
চিত্রা এবার কাঁদতে কাঁদতে বলল-
-“ আমার কান্না পাচ্ছে ভীষণ। কি করবো? আপনাকে এই অবস্থায় দেখে আমার দুনিয়া থমকে গিয়েছিল।
-“ তাই বলে কাঁদবেন মিস চিত্রা? এটা তো সামান্য আঘাত এতেই এমন নেতিয়ে পড়লেন! যদি বড় কিছু হয় তখন নিজেকে সামলাবেন কি করে?
-“ এর জন্যই আমি আপনায় বিয়ে করতে চাই নি। দেখুন প্রথম ঘুরতে এসেই কি হলো। বাকি জীবন কি করে নিশ্চিন্তে থাকবো আমি। আপনাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে ম’রেই যাব দেখে নিয়েন।
-“ হুঁশশ, বাজে কথা বলবেন না। আমার আগে আপনার মৃ’ত্যু নেই।
-“ আপনি সব জান্তা নাকি?
-“ উঁহু তবে ভরসা দিতে পারি, আপনার কোনো ক্ষতি আমি হতে দিব না।
-“ সেজন্যই আজ আমার জন্য নিজের প্রাণ দিতে বসেছিলেন।
তুষার স্মিত হেঁসে শুধালো-
-“ বেশি বুঝেন কেনো চলুন হসপিটালে যাই।
——————–
-“ ব্রো বাসায় চলো। আর ভাবি চলুন আপনায় বাসা ছেড়ে আসি।
রাফির কথা শুনে ঘোর ভাঙে চিত্রার। হসপিটালে এসে তুষার রাফিকে কল করেছিল।
-“ আপনি উনাকে ঠিকমতো বাসায় নিয়ে যাবেন। গাড়ি চালাতে দিবেন না। আর আমি অটো করে বাসায় চলে যেতে পারবো।
তুষার রুষ্ট হলো চিত্রার কথা শুনে।
-“ একদম না। আপনি আমাদের সাথেই যাবেন। অসুস্থ দেখতেই পাচ্ছেন। কথা বাড়াবেন না।
চিত্রা চুপ হয়ে যায়। রাফি আগে আগে হাটে আর পিছনে চিত্রা তুষার। চিত্রা বারবার আড়চোখে তুষারকে দেখে চলছে।
-“ এভাবে আড়চোখে বারবার কেনো দেখছেন? সামনে তাকিয়ে হাঁটুন তা না হলে পড়ে যাবেন তো।
চিত্রা দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। গাড়ির কাছে আসতেই চিত্রা পেছনের সিটে বসে পড়লো। তুষার রাফিকে ইশারায় গাড়ি স্টার্ট দিতে বলে নিজেও পেছনের সিটে বসলো। চিত্রার বাসার সামনে আসতেই চিত্রা গাড়ি থেকে নেমে যায়। গাড়ির জানালা দিয়ে তুষারকে বলে-
-“ বাসায় গিয়ে রেস্ট নিবেন। ডক্টরের দেওয়া মেডিসিন টাইম টু খাবেন। আর পৌঁছে আমাকে কল দিবেন। আমার ফোন নম্বর আছে? না থাকলে নোট করুন ০১৯৫০০*****। আর এই যে ড্রাইভার দেখেশুনে গাড়ি চালিয়ে বাসায় যাবেন। ভাইয়ের খেয়াল রাখবেন।
রাফি মাথা নাড়ায়। চিত্রা আরেকবার তুষারের দিকে চেয়ে বাসায় চলে যায়। তুষার গাড়ি থেকে নেমে রাফিকে নামতে বলে। রাফি গাড়ি থেকে নামতেই তুষার ড্রাইভিং সিটে বসে। ইশারায় পাশে বসতে বলে রাফিকে। রাফি বিনাবাক্যে পাশে বসতেই তুষার গাড়ি স্টার্ট দেয়।
ভার্সিটি থেকে ফিরেই থম মে’রে আছে সোফায়। মনে তার বিষাদের হাওয়া কোনো কিছুতেই মন বসছে না। বিরক্ত হয়ে পাশ ফিরতেই দেখে সদর দরজা দিয়ে রাফি আসছে আর পেছন পেছন তুষার। রাফিকে দেখেই বিষাদরা আরো প্রকোপ হয়ে জেঁকে বসলো। পরক্ষনেই তুষারের দিকে তাকিয়ে ব্যান্ডেজ করা হাতে চোখ পড়তেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে। বসা থেকে উঠে ভাইয়ের কাছে হন্তদন্ত হয়ে যায়।
-“ ভাই হাতে ব্যাথা পেলে কি করে?
তৃষ্ণার কথা শুনে রান্না ঘর থেকে তানিয়া বেগম বের হয়ে আসে। ছেলের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে থমকে যায়।
খুন্তি সমেত তুষারের দিকে এগিয়ে এসে বলে-
-” হাতে চোট পেলি কি করে তুষার?
মা বোন কে অস্থির হতে দেখে আস্বস্ত করে বলে-
-“ ঐ একটু অসাবধানতার জন্য কে’টে গেছে।
তানিয়া বেগম সন্দেহান দৃষ্টি নিয়ে বলে-
-“ মিথ্যা বলছিস না তো? ব্যান্ডিস খোল আমি দেখবো।
-“ আহ চাচি তুমিও না। ব্যান্ডেজ যদি খোলারই হতো তাহলে ব্যান্ডেজ কেনো করা হয়েছে?
-“ ব্যান্ডিজ যখন করা হয়েছে তারমানে আঘাত টা ঘুরতরই রাফি ভাইয়া। মা কে হযবরল বুঝিয়ো না। ভাই খুব লেগেছে?
তুষার তৃষ্ণার মাথায় হাত রেখে মৃদু হেসে বলে-
-“ না টুনুই বেশি লাগে নি। চিন্তা করিস না। আর মা তুমি রান্না চুলায় রেখে এসেছো বোধহয়। আমি ঠিক আছি,আমার জন্য এক কাপ কফি পাঠিয়ো।
কথাটা বলে তুষার আর রাফি উপরে চলে যায়।
-“ ব্রো অঘটন টা ঘটলো কি করে?
তুষারের সোজাসাপটা জবাব-
-“ জানি না।
-“ জানবে না? যতদূর চোখ যায় ততদূরই তো খোলা মাঠ ছিলো তাহলে ছুরি টা আসলো কোথায় থেকে? চিন্তার বিষয় তো।
-“ হুমম।
-“ তোমার অনুমতি ছাড়া তো ওখানে কেউ প্রবেশ করতে পারে না তাহলে কেউ ঢুকলো কি করে?
-“ দেখ ভাই রাফি এসব প্রশ্ন করে আর জ্বালাস না আমায়,প্রথমবার তোর ভাবি কে নিয়ে ঘুরতে গেছি আর কোথাকার কোন গোলামের পুত এসে আমার রোমান্টিক শীতল পরিবেশ টাকে গরম করে দিলো!
তুষারের রাগান্বিত কথা শুনে হতবিহ্বল হয়ে যায় রাফি। রোমান্টিক মুহূর্ত নষ্ট হওয়ায় সে রেগে আছে। অথচ একটুর জন্য যে প্রান যেতে বসেছিল সেটার জন্য ভাবছে না! ভালোবাসা এতো টা অন্ধ করে দিতে পারে?
-“ ব্রো পরিবেশ গরম হবার জন্য এতো রাগ করছো? অথচ প্রান টাই তো খোয়াতে বসেছিলে।
-“ তুই বুঝবি না এমন মুহুর্ত কারো জন্য নষ্ট হলে কতটা রাগ লাগে। আগে কাউকে ভালোবাস ভাই তারপর দেখিস কেমন লাগে।
-“ এই নাকি তুমি আমাদের ভাবি এমপি ব্রো? এমপিদের এতো ফিলিংস থাকতে নেই শুনেছি।
তুষার রাগী চোখে তাকালো।
-“ এমপিরা কি রক্তে মাংসে মানুষ না নাকি? ওদের ফিলিংস থাকতে মানা কে বলছে? যে বলছে তাকে সামনে আন।
-“ আরে ব্রো চেইতো না চেইতো না। মুড ঠিক করো,আমি বরং আসি।
রাফি যেতেই তুষার পকেট থেকে ফোন বের করে। একটা নম্বরে কল লাগিয়ে বলে-
-“ লাফাঙ্গার টার এ টু যেট হিস্ট্রি আমার চাই। ওর কলিজা টা জাস্ট দেখতে চাই কত বড় হয়েছে। ও চিনতে ভুল করেছে তুষার খাঁন কে। ওর মৃ’ত্যু অনিবার্য।
———–
-“ মা ঠিক আছিস তো তুই?
কথাটা বলতে বলতে হন্তদন্ত হয়ে মেয়ের রুমে ঢুকে সাহেল আহমেদ। চিত্রা তুষারের একটা ফোন কলের অপেক্ষায় বসে ছিলো। সাহেল আহমেদের কথা শুনে বসা থেকে উঠে বাবার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে-
-“ আমি একদম ঠিক আছি বাবা অস্থির হয়ো না।
সাহেল আহমেদ মেয়ের মাথায় হাত দিয়ে বলে-
-“ তামিমের থেকে শুনলাম তোদের উপর কেউ আক্রমণ করেছিলো।
-“ হ্যাঁ।
-“ কে দেখেছিস তাকে?
-“ না বাবা। কোথা থেকে যেনো ছুরি টা চলে আসলো। এমন খোলামেলা জায়গায় এটা ঘটলো বিষয় টা কত অদ্ভুত তাই না?
-“ হুম। বিরোধী দলেরই কাজ এটা। ওদের একটা শিক্ষা না দিলেই চলবে না। তুই বরং রেস্ট নে আমি আসছি।
চিত্রা ফোন হাতে নিয়েই অপেক্ষা করে। মাঝেমধ্যে মনে হচ্ছে নিজের নম্বর না দিয়ে লোকটার নম্বর আনলে তাকে এমন গলা কা’টা মুরগির মতো ছটফট করতে হতো না।
#আমার_শহরে_তোমার_আমন্ত্রণ_২
#পর্ব১১ ( অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ )
#Raiha_Zubair_Ripti
অন্ধকার রুমে হাত পা বেঁধে রাখা হয়েছে ২২ বছরের এক যুবক কে। শরীর জুড়ে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ফুটে আছে। যার দরুন ব্যাথায় শরীর নাড়াতে পারছে না। দরজা ঠেলে ব্যাথার্তক হাত নিয়ে প্রবেশ করে তুষার। পড়নে তার ব্লাক কালারের হুডি,মুখে রয়েছে পৃথিবীর সমস্ত রাগ,চোখ দিয়ে ভস্ম করে দিবে সামনে নেতিয়ে পড়ে থাকা আগন্তুক কে। তুষার ইশারা কিছু বললো,সাথে সাথে এক লোক ছোট বলতিতে রাখা ঠান্ডা জল লোকটার গায়ের উপর ছুড়ে মারলো। লোকটা ধরফরিয়ে উঠলো সাথে সাথে শরীরে ব্যাথার টান অনুভব করলো। মুখ দিয়ে আহ নামক শব্দ বের হলো। তুষার এগিয়ে গিয়ে আগন্তুক লোকটার চুল গুলো টেনে ধরলো। লোকটা ব্যাথা সইতে না পেরে চোখ মেলে তাকালো। হাত পা বাঁধা যার জন্য ইচ্ছে থাকলেও নিজেকে তুষারের থেকে ছাড়াতে পারলো না।
-“ তোর কলিজাটা আজ আমি দেখতে চাই ফারহান। কি ভেবেছিস আমি তোকে ধরতে পারবো না? তুষারের বা হাতের খেল তোকে খুঁজে বের করা মুর্খ ছেলে।
ফারহান ব্যাথার্তক শরীর নিয়েই বহুত কষ্টে মুখ থেকে আওয়াজ বের করে বলল-
-“ ভুল হয়ে গেছে আমার।
ফারহানের চুল ছেলে দিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে
-“ ভুল! এটাকে ভুল বলে? তোকে আমি লাস্ট একবার চান্স দিয়েছিলাম ভুলে গেছিস? মানুষ বারবার ভুল করে না, জেনেশুনে অন্যায় করে। আর তুই তো পাপ করেছিস। চিত্রা কে মা’রতে চেয়েছিস, আমার কলিজা আমার থেকে দূরে করতে চেয়েছিলি, আমি তোর কলিজা আজ তোর থেকে দূরে সরাবো।
কথাটা বলে পকেট থেকে ব্লে’ট বের ফারহানের হাতে একের পর এক আঘাত করতে থাকে। ফারহান গলা কা’টা মুরগির মত ছটফট করতে থাকে। চেয়ার থেকে এখন র’ক্ত গুলো ফ্লোরে টপটপ করে পড়তে শুরু করেছে।তুষারকে থামতে না দেখে রাতুল এগিয়ে আসে। তুষারের হাত ধরে টেনে সরিয়ে বলে-
-“ ম”রে যাবে তো ছেলেটা, ছেড়ে দে। আর তোর শরীর ও তো ভালো না।
তুষার ফারহানের দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে চিৎকার করে বলে-
-“ বন্ধুর জন্য প্রাণ উতলে উঠছে তোর? ও বিশ্বাস ঘাতক ভুলে যাস না।
রাতুল একবার ফারহানের দিকে তাকিয়ে নম্রস্বরে বলে-
-“ আমি কিচ্ছু ভুলি নি তুষার। সব মনে আছে।
তুষার মাথা ঘুরে একবার তাকালো ফারহানের দিকে । ব্লে’টের পোস দেওয়ার ফলে হাতের মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে পরছে। রুমের মধ্যে থাকা লিমন নামের এক ছেলের গা গুলিয়ে উঠলো। মুখ চেপে ওয়াও বলতেই তুষার সেদিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। ছেলেটা ভয়ে চুপসে গেলো।
এই কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ও তুষারের শরীর বেয়ে ঘাম বের হচ্ছে। প্রচন্ড আকারে খেপেছে এ ছেলে আজ। শান্তশিষ্ট থেকে সোজা সাইকো তে পরিনত হলো। তুষার এগিয়ে এসে চেয়ার টায় সজোরে লা’ত্থি মারে। চেয়ার সমেত ঠাস করে ফ্লোরে পড়ে যায় ফারহান।
তুষার রুমের মধ্যে থাকা লিমন রাতুলের দিকে তাকিয়ে হুংকার দিয়ে বলে-
-“ মরিচের গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মিক্সড করবি। একফোঁটা জল খাবার কিছু যেনো না পায়। আর ঐ হালিম সরকার কে খবর পাঠাবি তুষার একবার ওর দিকে তাকালে ওর কিন্তু বাঁচা বড় দায় হয়ে যাবে।
রাতুল তপ্ত শ্বাস ফেলে তুষারের যাওয়ার পানে তাকিয়ে। লিমনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে তুষার যা বললো তা করতে। লিমন এক ঢোক গিললো,হাতের অবস্থা দেখেই পেট মোচড় দিয়ে উঠছে আর তারা কি না ঐ হাতে মরিচের গুঁড়ো মেশাতে বলছে! কি মারাত্মক এরা।
লিমন কে এখনও নড়তে না দেখে রাতুল ফের তাড়া দিয়ে বলে-
-“ কি বলা হয়েছে কানে যায় নি? তাড়াতাড়ি কর।
লিমন ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বলে-
-” ভাই কাজ টা কি আমাকেই করতে হবে? আমার কেমন যেনো লাগছে,দেখেন গা শিউরে উঠছে। হাতের দিকে তাকাতেই পেট মোচড় দিচ্ছে। অন্য কাউকে বলুন না।
তুহিন ফারহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ মরিচের গুঁড়ো টা তো আনতে পারবে? নাকি সেটাও অন্য কাউকে দিয়ে আনাতে হবে?
লিমন তার হলদেটে দাঁত গুলো বের করে হেঁসে বলে-
-“ না ভাই আমিই আনতেছি।
লিমন মরিচের গুঁড়োর প্যাকেট এনে রাতুলের হাতে দেয়। রাতুল কেঁচি দিয়ে প্যাকেট টা কে’টে উপর থেকে ফারহানের মাংস খসে পড়া হাতে ঢালতে থাকে।
ফারহান গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে। আকুতি মিনতি করে মরিচের গুঁড়ো না ঢালতে। বারবার বলে-
-“ বন্ধুত্বের দোহাই লাগে এবারের মতো ছেড়ে দে রাতুল।
ফারহানের সম্পূর্ণ কথাকে অগ্রাহ্য করে মরিচের গুঁড়ো ঢালতে থাকে রাতুল। বন্ধুত্বের থেকেও কর্তব্য দামি রাতুলের কাছে। গুঁড়ো টা ঢালা শেষ হতেই রাতুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। লিমন এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে রাতুলের দিকে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না বন্ধুর সাথে কেউ কি করে এমন অমানবিক নিষ্ঠুর অত্যা”চার করতে পারে? লিমন আর কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে বলে-
-“ ভাই ও আপনার ফ্রেন্ড? স্যার এসব করতে বললো আর আপনি করলেন?
রাতুল একবার ফারহানের দিকে ঘৃণা ভরা দৃষ্টি নিয়ে কাটকাট গলায় বলে-
-“ বিশ্বাসঘাতক রা কখনও বন্ধু হয় না। বন্ধুত্বের শব্দ ওদের জন্য না।
-“ মানে?
-“ মানে টানে কিছু না। নতুন এসেছো এ জগতে এসব নিজ চোখে দেখার সহ্যক্ষমতা তৈরি কর ছেলে। আর ভুলেও বিশ্বাসঘাতকতা করো না তাহলে প্রাণ নিয়ে ফিরতে পারবে না।
———————-
-“ রেগে আছেন মিস চিত্রা? ভীষণ ভীষণ সরি বাসায় এসেই কল দিতে না পারায়।
ফোনের ওপাশ থেকে কোনো শব্দ আসলো না। প্রিয়তমা যে ভীষণ অভিমান করে কথা বলছে না এটা বুঝতে সময় লাগলো না।
-“ কথা বলবেন না মিস চিত্রা? খুব কি অভিমান হয়েছে আমার উপর? একটু কি দয়া বর্ষণ করা যায় না এই অধমের উপর? আপনার নিরবতা যে ভিষণ পিড়া দিচ্ছে।
চিত্রা তুষারের এমন আকুতি ভরা কথা শুনে অভিমান গুলো কে সযত্নে তুলে এক সাইডে রাখলো। সেই কখন থেকে ফোন হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছিলে তুষারের ফোনের। পাক্কা চারঘণ্টা পয়তাল্লিশ মিনিট তেরো সেকেন্ড পর ফোন করলো। প্রথম রিং হতেই ফোনটা রিসিভ করে, মন বলছিলো এটা তুষারের ফোন। ইচ্ছে ছিলো খুব বকে দিবে কিন্তু তুষারের ভয়েস শুনতেই মাথায় পাকিয়ে রাখা সব শব্দ রা নিখোঁজ হয়ে যায়
-“ আপনার কি উচিত ছিলো না আমাকে পৌঁছে জানানোর? আমি যে অপেক্ষা নিয়ে বসে আছি আপনার কলের।
অতিরিক্ত রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে তুষার। একটু ও মনে ছিলো না চিত্রা কে ফোন করার। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলে ফারহান কে হাতে পাওয়ার। তাই তো দুই ঘন্টার মধ্যে লোক দিয়ে ফারহান কে তুলে এনেছে। রাগ টা ফারহানের উপর ঝেড়ে বাসায় ফিরে ফ্রেশ হতেই মনে পড়ে প্রিয়তমা তার ফোন কলের অপেক্ষায় আছে। তাই তো তড়িঘড়ি করে ফোন করলো।
-“ সেজন্য বিগ সরি,প্লিজ রাগ করবেন না। আসলে বাসায় এসে একটু ঘুম পেয়েছিল (ডাহা মিথ্যে কথা) ঘুমানোর ফলে আপনায় ফোন করতে পারি নি।
চিত্রা বিষয় টা ভেবে দেখলো। সত্যিই তো তার শরীর অসুস্থ, তার বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন বেশি ফোনের থেকে।
-“ এখন শরীরের অবস্থা কেমন?
তুষার কে’টে যাওয়ার হাতের দিকে তাকালো। বা হাতের ব্যাথাটা আগের তুলনায় বেড়েছে। চিত্রা চিন্তিত হবে বলে শুধায়-
-“ আগের থেকে কিছুটা বেটার ফিল করছি। ডিনার করেছেন রাতে?
-“ না আপনি?
-“ তাড়াতাড়ি ডিনার করুন, রাত প্রায় অনেক হলো তো।
-“ দশ টা পনেরো বাজে মাত্র।
-“ এটা মাত্র না,,তাড়াতাড়ি ডিনার করে শুয়ে পড়ুন।
চিত্রা কথা বাড়াল না, বুঝে নিল তুষার অসুস্থ তাই আর কথা বলার চেষ্টা করলো না।
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে রাফি। আড়চোখে তৃষ্ণা কে দেখে চলছে।মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে টিভি দেখছে। পাশে যে কেউ তাকে বারংবার দেখছে সেটা যেনো তার মাথার আশেপাশে ও ভিড়ছে না। রাফি টিভির দিকে দৃষ্টি নিয়ে দেখলো মেয়েটা আমাদের রাণী নামের একটা নাটক দেখছে,স্টার জলসা নামের চ্যানেলে। রাফি এসবের দিকে চোখ বুলিয়ে তৃষ্ণার হাত থেকে টান মেরে রিমোট নিয়ে নেয়।
তৃষ্ণার ব্যাঘাত ঘটে। বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে রাফির দিকে তাকিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। রাফি ভীষণ অবাক হলো। সে ভেবেছিল রিমোট কেড়ে নেওয়ায় তৃষ্ণা রিয়াক্ট করবে। কিন্তু পুরোপুরি ধারনা বদলে দিয়ে নিরবে চলে গেলো। অধরাকে আসতে দেখে রাফি প্রশ্ন করে বসলো-
-“ তৃষ্ণার কি কিছু হয়েছে অধরা?
অধরা পানির জগটা নিয়ে বলে-
-“ মনে তো হলো কিছু হয়েছে। দুপুরে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাড়ি ফিরেছে। চোখ মুখ ফুলো ছিলো। মামি কারন জিজ্ঞেস করলে বলে নি।
অধরার কথা শুনে রাফির ভ্রু জোড়া আপনা-আপনি কুঁচকে এলো।
#চলব